শলোমন মন্দির নির্মাণ করলেন
১. ইস্রায়েলের লোকেরা মিশর থেকে চলে আসার ৪৮০ বছর* পরে এবং তাঁর রাজত্বের চার বছরের মাথায়, রাজা শলোমন ঈশ্বরের মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু করেন। এটি ছিল ঐ বছরের দ্বিতীয় মাস বা সিব মাস।
২. মন্দিরটি দৈর্ঘ্যে ছিল ৬০ হাত, প্রস্থে ২০ হাত এবং উচ্চতায় ৩০ হাত।
৩. মন্দিরের সামনেই ২০ হাত দীর্ঘ ও ১০ হাত চওড়া একটি বারান্দা ছিল।
৪. মন্দিরের গায়ে কয়েকটা জানালা ছিল, যেগুলোর ভেতরের অংশ বাইরের অংশের তুলনায় চওড়া।
৫. অতঃপর শলোমন মূল মন্দিরের চারপাশ ঘিরে একটার ওপর আর একটা একসারি ঘর তৈরী করলেন। এগুলো প্রায় তিনতলা পর্যন্ত উঁচু ছিল।
৬. ঘরগুলো মন্দিরের দেওয়াল সংলগ্ন হলেও, ঘরের কড়ি-বরগাগুলো মন্দিরের দেওয়ালের থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। মন্দিরের দেওয়ালটি ওপরের দিকে ক্রমশঃ সরু হয়ে উঠেছিল, অতএব এই ঘরগুলোর একদিকের দেওয়াল ঠিক নীচের ঘরের দেওয়ালের থেকে সরু হয়ে গিয়েছিল। একদম নীচের তলার ঘরের প্রস্থ ছিল ৫ হাত, মাঝের ঘরের প্রস্থ ছিল প্রায় ৬ হাত এবং একেবারে ওপরের ঘরের প্রস্থ ছিল প্রায় ৭ হাত।
৭. দেওয়ালগুলো বানানোর জন্য মিস্ত্রিরা বড় পাথর ব্যবহার করেছিল। এইসব পাথর যেখান থেকে আনা, সেখানেই কেটে আনা হয়েছিল বলে মন্দির প্রাঙ্গণে হাতুড়ি, কুড়ুল বা কোনরকমের আওয়াজ পাওয়া যেতো না ।
৮. নীচের ঘরগুলোয় প্রবেশদ্বার ছিল মন্দিরের দক্ষিণ দিক থেকে। তারপর ভেতরে ঢোকার পর সিঁড়ি ওপরদিকে উঠে গিয়েছিল একতলা ও দোতলা পর্যন্ত এবং সেখান থেকে তিনতলা পর্যন্ত।
৯. শলোমনের মন্দির নির্মাণের কাজ শেষ হল। মন্দিরের প্রতিটি অংশ এরস গাছের তক্তা দিয়ে ঢাকা ছিল।
১০. মন্দিরের চারপাশের ঘর বানানোর কাজও শেষ হল। এই ঘরগুলে৷ প্রায় ৫ হাত উঁচু ছিল। এইসব ঘরের এরস কাঠের কড়ি মন্দিরকে ছুঁয়ে থাকত।
১১. প্রভু শলোমনকে বলেছিলেন,
১২. “যদি তুমি আমার বিধি এবং নির্দেশগুলি মেনে চলো তাহলে আমি তোমার যা যা করব বলে তোমার পিতা দায়ূদকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তা পালন করব।
১৩. এছাড়াও তুমি যে মন্দির তৈরী করছ সেখানে ইস্রায়েলের সন্তান সন্ততিদের মধ্যে বাস করব। ইস্রায়েলের বাসিন্দাদের কখনো ছেড়ে যাব না।”
মন্দিরের বিবরণ
১৪. শলোমন মন্দির নির্মাণের কাজ শেষ করলেন।
১৫. মন্দিরের ভেতরের পাথরের দেওয়াল ও ছাদ এরস কাঠে ঢেকে দেওয়া হয়েছিল। মন্দিরের মেঝে ঢাকা হয়েছিল দেবদারু গাছের তক্তা দিয়ে।
১৬. মন্দিরের পেছন দিকে ২০ হাত দীর্ঘ একটি ঘর বানানে৷ হয়েছিল। এই ঘরটি ছিল মন্দিরের পবিত্রতম স্থান। এই ঘরের দেওয়াল মেঝের থেকে ছাদ পর্যন্ত এরস কাঠে মুড়ে দেওয়া হয়েছিল।
১৭. পবিত্রতম স্থানের সামনে ছিল মন্দিরের মূল অংশ বা ঘরটি, যার দৈর্ঘ্য প্রায় পৌনে ৪০ হাত।
১৮. এখানকার দেওয়াল এবং ছাদও একইভাবে এরস কাঠে ঢাকা ছিল। দেওয়ালের কোন পাথরই দেখা যেত না। দেওয়ালে এরস কাঠের নানা ধরণের ফুল ও লতাপাতার ছবি খোদাই করা ছিল।
১৯. প্রভুর সাক্ষ্যসিন্দুকটি রাখার জন্য শলোমন মন্দিরের একেবারে পেছনদিকে বিশেষভাবে ঘরটি নির্মাণ করেছিলেন।
২০. এই ঘরের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চত৷ ছিল ২০ হাত।
২১. শলোমন ঘরটি আগাগোড়৷ বিশুদ্ধ সোনার পাত দিয়ে মুড়ে দিয়েছিলেন। তিনি ঘরের সামনে ধুপধুনো দেবার জন্য একটি বেদী তৈরী করেছিলেন। তিনি বেদীটি সোনা দিয়ে মুড়ে দিয়েছিলেন এবং তার চারপাশে সোনার হার জড়িয়ে দিয়েছিলেন। এছাড়াও ঘরটিতে সোনায় মোড়া দুই করূব দূতের মূর্ত্তি ছিল।
২২. বস্তুত গোটা মন্দিরটাই সোনায় মোড়া ছিল। পবিত্রতম স্থানের সামনের বেদীটিও ছিল সোনায় ঢাকা
২৩. মন্দির নির্মাতারা ১০ হাত দীর্ঘ করব দূতের ডানাওয়ালা মূৰ্ত্তি দুটে৷ প্রথমে বিশেষ এক ধরণের গাছের কাঠে বানিয়ে তারপর সোনা দিয়ে মুড়ে দিয়েছিল।
২৪-২৭. মূর্ত্তি দুটোর প্রত্যেকটি ডানার দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ হাত করে, অর্থাৎ ডানার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত মূৰ্ত্তিদুটো ছিল প্রায় ১০ হাত চওড়া। গর্ভগৃহের পাশাপাশি, সম দৈর্ঘ্যের এই মূর্ত্তি দুটে৷ দাঁড় করানো থাকত।
২৮. দুটো করুব দূত সোনা দিয়ে মুড়ে দিয়েছিল।
২৯. মন্দিরের মূল ঘরটির দেওয়ালের ওপর এবং মন্দিরের অন্তবর্ত্তী ঘরটির দেওয়ালের তালগাছ, বিভিন্ন ফুল, লতাপাতা ও করূব দূতের ছবি খোদাই করা ছিল।
৩০. দুটো ঘরের মেঝেই সোনায় ঢাকা ছিল।
৩১. কর্মীরা জিতগাছের কাঠ দিয়ে দুটো দরজা বানিয়েছিল এবং সে দুটি পবিত্রতম স্থানের প্রবেশ পথে বসিয়ে দিয়েছিল। দরজার পথে চারপাশের কাঠামো ১/৫ হাত চওড়া ছিল।
৩২. তারা জৈতুন গাছের কাঠ থেকে দুটো দরজা তৈরী করল। মিস্ত্রীর সোনার পাতে মোড়া দরজা দুটোয় খোদাই করা ছিল তালগাছ, বিভিন্ন লতাপাতা ও করব দূতের ছবি।
৩৩. মুল ঘরটিতে প্রবেশ করবার জন্যও তারা দরজা বানিয়েছিল। একটি চারকোণা দরজার কাঠামো বানানোর জন্য তারা জিতগাছের কাঠ ব্যবহার করেছিল। যা চওড়ায় ছিল চারভাগের একভাগ।
৩৪-৩৫. সেই কাঠামোয় দেবদারু কাঠের দুটি দরজা বসানো হয়। এই প্রত্যেকটি দরজা আবার দুভাগে মুড়ে ভাঁজ হতো। এগুলোর ওপরেও একইরকম করূব দূতের ছবি খোদাই করে সোনায় মোড়া ছিল।
৩৬. এরপর তিনসারি কাটা পাথরের দেওয়াল ও একসারি এরস কাঠের দেওয়াল দিয়ে ঘিরে মন্দিরের ভেতরের অংশ তৈরী করা হল।
৩৭. সিব মাসে শলোমনের চতুর্থ বছরের রাজত্বের দ্বিতীয় মাসে শুরু করে বুল মাসে,
৩৮. অর্থাৎ তাঁর একাদশ বছরের অষ্টম মাসের রাজত্বের সময় মন্দিরটির নির্মাণ কাৰ্য্য শেষ হয়। যেভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল সাত বছর সময় নিয়ে ঠিক সেভাবে মন্দিরটি বানানো হয়েছিল।