শলোমনের রাজত্ব

১. সমগ্র ইস্রায়েলের লোকের শাসনকর্তা ছিলেন রাজা শলোমন।

২. শাসনকার্য পরিচালনা করতে যে সমস্ত রাজকর্মচারী তাঁকে সাহায্য করতেন তারা হলঃ সাদোকের পুত্র যাজক অসরিয়।

৩. শীশার দুই পুত্র ইলীহোরফ ও অহিয়। এঁরা দুজনে রাজদরবারের সমস্ত ঘটনার বিবরণ নথিভুক্ত করতেন। অহীলুদের পুত্র যিহোশাফট লোকেদের ইতিহাস বিষয়ক টীকা রচনা করতেন।

৪. যিহোয়াদার পুত্র বনায় ছিল সেনাবাহিনীর প্ৰধান। সাদোক ও অবিয়াথর যাজকের কাজ করতেন।

৫. নাথনের পুত্র অসরিয় জেল৷ শাসকদের তত্ত্বাবধান করতেন। নাথনের আরেক পুত্র যাজক সাবূদ রাজা শলোমনের পরামর্শদাতা ছিলেন।

৬. অহীশারের ওপর রাজ প্রাসাদের সব কিছুর তত্ত্বাবধান করবার দায়িত্ব ছিল। অব্দের পুত্র অদোনীরামের কাজ ছিল শ্রমিকদের খবরদারি করা।

৭. সমগ্র ইস্রায়েলকে 12টি জেলায় ভাগ করা হয়েছিল। এই জেলাগুলির প্রত্যেকটির শাসন কাজ পরিচালনার জন্য শলোমন নিজে প্রাদেশিক শাসনকর্তা। বা জেলাশাসকদের বেছে নিয়েছিলেন। এই সমস্ত প্রাদেশিক শাসনকর্তাদের ওপর তাদের নিজেদের প্রদেশ থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে রাজা ও তাঁর পরিবারকে সেই খাদ্য সরবরাহ করার নির্দেশ ছিল। বছরের 12 মাসের

৮. এই একটিতে এই 12 জন প্রদেশকর্তার এক এক জনের দায়িত্ব ছিল রাজাকে খাবার পাঠানো। এই 12 জন প্রাদেশিক শাসনকর্তার নাম নীচে দেওয়া হলঃ

ইফ্রয়িমের পার্বত্য প্রদেশের শাসক ছিলেন বি-হুর।

৯. মাকস, শালবীম, বৈৎ-শেমশ ও এলোন- বৈৎ-হাননের শাসক ছিলেন বিন্-দেকর।

১০. বিন-হেষদ ছিলেন অরুব্বোত, সোখো ও হেফর প্রদেশের শাসনকর্তা।

১১. দোর উপগিরি অঞ্চলের শাসনভার ছিল বিন-অবীনাদবের ওপর। তিনি রাজা শলোমনের কন্যা টাফৎকে বিয়ে করেছিলেন।

১২. যিষিয়েলের নিম্নবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত অঞ্চল অর্থাৎ বৈৎ-শান থেকে আবেল-মহোল৷ হয়ে যক্‌মিয়াম পর্যন্ত বিস্তৃত তানক, মগিদ্দোর শাসক ছিলেন অহীলূদের পুত্র বানা।

১৩. বিন্-গেবর ছিলেন রামোৎ-গিলিয়দের শাসক। গিলিয়দের মনঃশির পুত্র যায়ীর সমস্ত শহর ও গ্রামগুলির শাসন কার্য্য পরিচালন৷ করতেন। তিনি অর্গোব জেলার বাশন অঞ্চলেরও শাসনকর্তা ছিলেন। এই অঞ্চলে বড় দেওয়ালে ঘেরা 60 টি শহর ছিল। শহরের দরজা ব করার জন্য পিতলের কব্জ। ব্যবহার হোত।

১৪. ইদ্দোরের পুত্র অহীনাদব ছিলেন মহনয়িমের শাসক।

১৫. নপ্তালির প্রাদেশিক কর্ত৷ অহীমাস বিয়ে করেছিলেন শলোমনের আরেক কন্যা বাসমৎকে।

১৬. হুশয়ের পুত্র বানা ছিলেন আশের ও বালোতের শাসক।

১৭. ইষাখরের প্রদেশকর্তা ছিলেন পারূহের পুত্র যিহোশাফট।

১৮. এলার পুত্র শিমিয়ির ওপর বিন্যামীন প্রদেশের দায়িত্ব ছিল।

১৯. উরির পুত্র গেবর গিলিয়দের রাজ্যপাল ছিল। গিলিয়দে যেখানে ইমোরীয়দের রাজ৷ সীহোন ও বাশনের রাজা ওগ বাস করতেন। কিন্তু একমাত্র গেবর ছিল ঐ দেশের রাজ্যপাল ।

২০. সমুদ্রতীরে ছড়িয়ে থাক৷ রাশি রাশি বালির মতোই যিহুদ৷ ও ইস্রায়েলে অসংখ্য মানুষ বাস করত। খেয়ে পরে, মহাফূর্তিতে ও আনন্দে তারা সকলে দিন কাটাতো।

২১.  রাজ। শলোমন ফরাৎ নদী থেকে পলেষ্টীয়দের দেশ ও মিশরের সীম৷ পর্যন্ত সমস্ত অঞ্চলে তাঁর রাজ্য বিস্তার করেছিলেন। শলোমন যতদিন বেঁচেছিলেন ততদিন এই অঞ্চলের সমস্ত রাজ্যগুলি বশ্যত৷ স্বীকার করেছিল এবং তারা শলোমনের জন্য উপহার পাঠাত।

২২-২৩.  প্রতিদিন শলোমনের নিজের জন্য ও তাঁর সঙ্গে যার৷ একসঙ্গে বসে খাওয়া দাওয়া করতো তাদের সকলের জন্য সব মিলিয়ে প্রায়ঃ

১৫০ কেজি ময়দা,

৩০০ কেজি আটা,

১০টি হৃষ্টপুষ্ট গরু, ২০ টি সাধারণ গরু,

১০০টি মেষ, হরিণ, খরগোশ, নানান পাখপাখালির মাংস প্রয়োজন হত।

২৪. ঘসা থেকে তিসহ পর্যন্ত ফরাৎ নদীর পশ্চিমভাগের সমস্ত অঞ্চল শলোমনের অধীনস্থ ছিল। পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গেও রাজা শলোমনের মৈত্রী ও শান্তির সম্পর্ক বজায় ছিল।

২৫. শলোমনের রাজত্বকালে দান থেকে বের্-শেবা পর্যন্ত, যিহুদা ও ইস্রায়েলের সমস্ত বাসিন্দা সুখে ও শান্তিতে জীবনযাপন করতো। তারা নিশ্চিন্ত মনে নিজেদের দ্রাক্ষাক্ষেত বা ডুমুর বাগানে বসে সময় কাটাতে পারত।

২৬. শলোমনের আস্তাবলে রথ টানার জন্য ৪,০০০ ঘোড়া রাখার ব্যবস্থা তো ছিলই, এছাড়াও তাঁর অধীনে ছিল ১২,০০০ অশ্বারোহী সৈনিক।

২৭. বছরের প্রত্যেকটি মাসে ১২ জন প্রাদেশিক শাসনকর্তার এক জন শলোমন এবং রাজার টেবিলে ভোজনকারী প্রত্যেকের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রী পাঠাতেন। তাদের সকলের জন্য তা প্রচুর পরিমাণ হত।

২৮. এই সমস্ত প্রাদেশিক শাসনকর্তারা রাজা শলোমনের ঘোড়াগুলির জন্য প্রচুর পরিমাণে খড় ও বার্লি পাঠাতেন। লোকেরা এই সমস্ত খড় ব৷ বার্লি আনত।

শলোমনের প্রজ্ঞা

২৯. ঈশ্বর শলোমনকে প্রভূত জ্ঞানী করে তুলেছিলেন। শলোমনের বুদ্ধিমত্তা সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা প্রায় অসম্ভব ছিল। তিনি বহু বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন ও অনেক কিছু গভীরভাবে বুঝতে পারতেন।

৩০. প্রাচ্যের সমস্ত মানুষদের জ্ঞানের চেয়েও শলোমনের জ্ঞান বেশী ছিল। এমনকি তা মিশরের সমস্ত বাসিন্দাদের চেয়েও বেশী ছিল।

৩১. পৃথিবীর যে কোন ব্যক্তির চেয়েও তিনি বেশী জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান ছিলেন। ইম্রাহীর এথন বা মাহোলের পুত্র হেমন, কলকোল ও দর্দার চেয়েও তাঁর বুদ্ধি ও বিচক্ষণতা বেশী ছিল। ইস্রায়েল ও যিহূদার চারিদিকের সমস্ত দেশগুলিতে রাজা শলোমনের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল।

৩২. তাঁর জীবদ্দশায় তিনি ১,০০৫টি গান ও ৩,০০০ প্রবাদ বাক্য লিপিবদ্ধ করেছিলেন।

৩৩. প্রকৃতি সম্পর্কেও মহারাজ শলোমনের গভীর জ্ঞান ছিল। শলোমন বিভিন্ন গাছপালা থেকে শুরু করে লিবানোনের সুবিশাল মহীরূহ, দ্রাক্ষাকুঞ্জ, পশু, পাখী, সাপখোপ, সব বিষয়েই শিক্ষাদান করেন।

৩৪. সমস্ত দেশের লোকেরা রাজা শলোমনের জ্ঞানের কথা শুনতে আসত। সমস্ত দেশের রাজারা তাঁদের রাজ্যের জ্ঞানী ব্যক্তিদের শলোমনের কাছে তাঁর জ্ঞানগর্ভ কথা শোনবার জন্য পাঠাতেন।

error: Content is protected !!