বৈথেলের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের কথন
১-২. প্রভু যিহূদার ঈশ্বরের প্রেরিত একজনকে বৈথেলে যাবার জন্য এবং বেদীর ওপরে পূজো করবার বিরুদ্ধে কথা বলবার জন্য ডেকে পাঠালেন। যখন সেই ভাববাদী বৈথেলে পৌঁছলেন তখন রাজ৷ যারবিয়াম বেদীর সামনে দাঁড়িয়ে ধুপধুনো দিচ্ছিলেন।
তিনি গিয়ে ঐ যজ্ঞবেদীকে সম্বোধন করে বললেন, “দায়ূদের পরিবারে যোশিয় নামে এক বালক জন্মাবে। যাজকরা এখন যজ্ঞবেদীতে পূজো দিচ্ছ, কিন্তু যোশিয় একদিন এই সমস্ত যাজকদের যজ্ঞবেদীর ওপরেই হত্যা করবে। এখন যাজকরা যে বেদীতে ধুপধুনো জ্বালাচ্ছে, সেই বেদীতেই মানুষের হাড় পুড়িয়ে যোশিয় তা ব্যবহারের অযোগ্য করে তুলবে।”
৩. এসমস্ত ঘটনা যে সত্যি সত্যি ঘটতে চলেছে সে বিষয়ে ঈশ্বরের লোক উপস্থিত সবাইকে প্রমাণ দিলেন। তিনি বললেন, “আমি যা বললাম তা যে সত্যি সত্যি ঘটবে সেকথা প্রমাণের জন্য প্রভু আমাকে বলেছেন, ‘এই বেদী ভেঙ্গে দুটুকরো হয়ে সমস্ত ছাই মাটিতে ছড়িয়ে পড়বে।””
৪. রাজা যারবিয়াম ঈশ্বরের লোকের কাছ থেকে বৈথেলের বেদীর কথা শুনে বেদী থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে সেই লোককে দেখিয়ে বলল, “ওকে গ্রেপ্তার করো।” কিন্তু একথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই তার হাত পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে গেল, সে আর হাত নাড়াতে পারল না।
৫. একই সঙ্গে বেদীটি টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙ্গে সমস্ত ছাই মাটিতে ছড়িয়ে পড়ল। এর থেকেই ঈশ্বরের লোকের কথার সত্যতা প্রমাণ হল।
৬. তখন রাজা যারবিয়াম ঈশ্বরের লোককে বললো, “দয়া করে আপনার প্রভুর ঈশ্বরের কাছে আমার এই হাতটি আবার ঠিক করে দেবার জন্য প্রার্থনা করুন।” লোকটি তখন প্রভুর কাছে সেই প্রার্থনা করায় রাজার হাত ঠিক হয়ে গেল।
৭. তখন রাজা ঈশ্বর প্রেরিত সেই লোকটিকে বলল, “অনুগ্রহ করে আপনি আমার সঙ্গে বাড়িতে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করবেন চলুন। আমি আপনাকে একটি উপহার দিতে চাই।”
৮. কিন্তু সেই লোকটি রাজাকে বলল, “তোমার অর্ধেক রাজত্ব আমাকে দিলেও আমি তোমার সঙ্গে যাবো না বা এখানে কোন পানাহার করব না।
৯. প্রভু আমাকে এখানে কিছু খেতে বা পান করতে বারণ করেছেন। প্রভু আমাকে আরে৷ নির্দেশ দিয়েছেন যে, যে রাস্তা দিয়ে আমি এখানে এসেছি, সেই রাস্তা দিয়ে যেন না ফিরি।”
১০. একথা বলে তিনি বৈথেলে আসার সময় যে রাস্তা দিয়ে এসেছিলেন, সেটাতে না গিয়ে অন্য একটা রাস্তা দিয়ে ফিরে গেলেন।
১১. বৈথেল শহরে সেসময় একজন বৃদ্ধ ভাববাদী বাস করতেন। তাঁর ছেলেরা এসে তাঁকে বৈথেলের এই ঈশ্বর প্রেরিত ব্যক্তির কার্যকলাপের কথা জানালো।
১২. সেই বৃদ্ধ ভাববাদী সব শুনে জিজ্ঞেস করলেন, “তিনি কোন রাস্তা দিয়ে ফিরে গেল?” ছেলেরা তখন যিহুদা থেকে আসা সেই ভাববাদী যে পথে ফিরে গিয়েছেন পিতাকে দেখালে।
১৩. বৃদ্ধ ভাববাদী তার পুরদের তার গাধায় লাগাম লাগিয়ে দিতে বললেন এবং সেই গাধায় চড়ে বেরিয়ে পড়লেন।
১৪. বৃদ্ধ ভাববাদী ঈশ্বর প্রেরিত লোকটিকে খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে দেখলেন একট৷ মস্ত বড় গাছের তলায় একজন বসে আছেন। তিনি প্রশ্ন করলেন, “আপনি কি ঈশ্বরের লোক যিনি যিহুদা থেকে এসেছেন?” ভাববাদী উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ।”
১৫. তখন বৃদ্ধ ভাববাদী বললেন, “দয়৷ করে আমার সঙ্গে বাড়িতে চলুন, কিছু মুখে দেবেন।”
১৬. কিন্তু ঈশ্বরের লোকটি এতে রাজি হলেন না। তিনি বললেন, “আমি আপনার সঙ্গে বাড়িতে যেতে বা এখানে কোনে৷ পানাহার করতে পারব না।
১৭. কারণ প্রভু আমায় নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন, ‘তুমি যে রাস্তা দিয়ে যাবে সেই রাস্তা দিয়ে ফিরবে না।
১৮. তখন বৃদ্ধ ভাববাদী বললেন, “আমিও আপনারই মতো একজন ভাববাদী।” উপরন্তু তিনি বানিয়ে বললেন, “প্রভুর কাছ থেকে দূত এসে আমায় আপনাকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে আপনার পানাহারের ব্যবস্থা করতে বলেছেন।”
১৯. তখন ঈশ্বর প্রেরিত সেই লোকটি বৃদ্ধ ভাববাদীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে পানাহার করলেন।
২০. যখন তাঁর৷ টেবিলে বসে খাওয়া-দাওয়া করছেন তখন প্ৰভু বৃদ্ধ ভাববাদীর সামনে আবির্ভূত হলেন।
২১. বৃদ্ধ ভাববাদী যিহুদা থেকে আসা ঈশ্বরের লোকটিকে বললেন, “প্রভু বললেন আপনি প্রভুর নির্দেশ অমান্য করেছেন।”
২২. আপনাকে প্রভু এখানে কিছু খেতে বা পান করতে বারণ করেছিলেন, কিন্তু আপনি সেই নির্দেশ লঙ্ঘন করে এখানে পানাহার করলেন। শাস্তিস্বরূপ আপনার মৃত্যুর পর আপনার দেহ আপনার বংশের সমাধিস্থলে সমাধিস্থ হতে পারবে না।”
২৩. ইতিমধ্যে ঈশ্বরের লোকটির পানাহার শেষ হলে বৃদ্ধ ভাববাদী তাঁর জন্য গাধায় লাগাম ও জিন চড়িয়ে দিলেন এবং সেই ব্যক্তি রওনা হল।
২৪. পথে এক সিংহের আক্রমণে ঈশ্বর প্রেরিত ব্যক্তির মৃত্যু হল।
২৫. কিছু পথচারী যাবার সময়ে পথে পড়ে থাকা সেই মৃতদেহটি আর তার পাশে দাঁড়িয়ে থাক৷ গাধা ও সিংহটাকে দেখতে পেল। তারা ফিরে এসে শহরে বৃদ্ধ ভাববাদীকে এই খবর দিল।
২৬. যদিও বৃদ্ধ ভাববাদীর পাল্লায় পড়েই ঈশ্বরের পাঠানো এই ব্যক্তি ফিরে এসে খাওয়া দাওয়া করেছিলেন, বৃদ্ধ ভাববাদী তারা যা বলল সব শুনলেন এবং বললেন, “প্রভুর আদেশ অমান্য করায় প্রভু সিংহ পাঠিয়ে তাঁর পাঠানো ব্যক্তির জীবন নিলেন। প্রভু বলেছিলেন যে তিনি এরকম করবেন।”
২৭. এই বলে তিনি তাঁর পুত্রদের গাধায় জিন চাপাতে বলে,
২৮. গাধা নিয়ে বেরিয়ে সেই মৃতদেহের কাছে পৌঁছে দেখতে পেলেন যে গাধা আর সিংহ দুটোই সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। সিংহটা সেই দেহে মুখ দেয়নি, এমনকি গাধাটাকেও কিছু করেনি।
২৯. বৃদ্ধ ভাববাদী শোকপ্রকাশ করবার জন্য ও কবর দেবার জন্য গাধায় চাপিয়ে মৃতদেহটাকে শহরে নিয়ে চললেন।
৩০-৩১. তিনি সেই ব্যক্তিকে তাঁর নিজের পরিবারের সমাধিস্থলে কবর দিলেন। তারপর তিনি কাঁদতে কাঁদতে বললেন, “ভাই আমার, তোমার জন্য আমি দুঃখিত।” তিনি কবর দেওয়ার পর তাঁর পুত্রদের নির্দেশ দিলেন, “আমি মরলে আমাকেও এই কবরে ওঁর পাশে কবর দিস। আমার হাড় ক’খানাকে ওঁর পাশেই রাখিস।
৩২. প্রভু ওঁর মুখ দিয়ে যে কথা বলিয়েছেন, তা একদিন সত্যি সত্যিই ঘটবে। বৈথেলের বেদী ও শমরিয়ায় অন্যান্য উচ্চস্থানে পূজা করার বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য প্রভু ওঁকে ব্যবহার করেছেন।”
৩৩. রাজা যারবিয়ামের কোনোই পরিবর্তন হল না। সে আগের মতোই পাপাচরণ করে যেতে লাগল। বিভিন্ন পরিবারগোষ্ঠী থেকে যাজক বেছে নিয়ে তাদের দিয়ে উচ্চস্থানে সেবা করাতে লাগল। যে কেউ ইচ্ছ৷ হলেই যাজক হয়ে যেতে পারত।
৩৪. এই পাপের ফলেই তার সাম্রাজ্যের পতন হয় এবং তা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।