গৃহযুদ্ধ

১-২. নবাটের পুত্র যারবিয়াম তখনও মিশরে লুকিয়ে ছিল। যখন সে শলোমনের মৃত্যু সংবাদ পেল, তার জন্মভূমি ইফ্রয়িমে পার্বত্য অঞ্চলের সেরেদতে ফিরে এল। এদিকে রাজা শলোমনের মৃত্যুর পর তাঁকে তাঁর পূর্বপুরুষদের সঙ্গে সমাধিস্থ করা হলে নতুন রাজা হলেন তার পুত্র রহবিয়াম।

৩. ইস্রায়েলের সমস্ত বাসিন্দা রহবিয়ামকে রাজপদে অধিষ্ঠিত করতে শিখিমে গিয়েছিল। কারণ রহবিয়াম তখন সেখানেই ছিল। সকলে রহবিয়ামকে বলল,

৪. আপনার পিতা আমাদের খাটিয়ে খাটিয়ে জীবন দুর্বিসহ করে তুলেছিলেন। আপনি দয়া করে আমাদের কাজের বোঝা একটু হালকা করে দিলেই আমরা আপনার হয়ে কাজ করব।”

৫. রহবিয়াম তাদের উত্তর দিলেন, “তোমরা তিনদিন পরে আমার কাছে এস। তখন আমি আমার সিদ্ধান্ত তোমাদের জানাব।” একথা শুনে সবাই ফিরে গেল।

৬. শলোমনের যে সমস্ত প্রবীণ পরামর্শদাতা তখনও জীবিত ছিলেন, রাজা রহবিয়াম তাদের তাঁর কর্তব্য কর্ম সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন, “আমার এক্ষেত্রে কি করা উচিৎ? আমি এদের কি বলব?”

৭. প্রবীণরা তাঁকে বললেন, “তুমি যদি আজ ওদের কাছে দাসের মতো হও, ওরা সত্যি তোমার সেবা করবে। তুমি যদি ওদের সঙ্গে দয়াপরবশ হয়ে কথা বলো, তাহলে ওরা চিরদিনই তোমার হয়ে কাজ করবে।”

৮. কিন্তু রহবিয়াম এই পরামর্শে কর্ণপাত করলো না। তিনি তাঁর বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে পরামর্শ করলেন।

৯. সে তাদের বলল, “লোকেরা বলছে, ‘আপনার পিতা যা কাজ দিতেন তার চেয়েও আমাদের হালকা কাজ দিন।’ কি করা যায় বলো তো? আমি এখন ওদের কি বলি?”

১০. রাজার বন্ধুরা রহবিয়ামকে বলল, “শোন কথা ! ওরা নাকি বলছে তোমার পিতা ওদের বেশি খাটাতেন। তুমি কেবলমাত্র ওদের ডেকে বলে দাও, ‘দেখ হে, আমার কড়ে আঙ্গুল আমার পিতার পুরো দেহের চেয়েও শক্তিশালী।

১১. আমার পিতার জন্য তোমরা যে কাজ করেছ তার চেয়েও অনেক কঠিন কাজ আমি তোমাদের দিয়ে করাব। কাজ আদায় করার জন্য আমার পিতা তোমাদের শুধু চাবকাতেন, আমি ধারালো লোহা বসানো চাবুক দিয়ে চাবকাবো।

১২. রহবিয়াম লোকেদের তিনদিন পরে আসতে বলেছিলেন তাই ঠিক তিন দিন পরে ইস্রায়েলের লোকেরা আবার রহবিয়ামের কাছে ফিরে এল।

১৩. রহবিয়াম তখন প্রবীণদের কথা না শুনে

১৪. তার বন্ধু-বান্ধবদের পরামর্শ অনুযায়ী বললেন, “আমার পিতা তোমাদের জোর করে বেশি খাটিয়েছিল বলছো , এখন আমি আরো বেশি খাটাবো। আমার পিতা তোমাদের শুধু চাবকেছেন, আমি লোহা বসানো চাবুক দিয়ে চাবকাবো।

১৫. অর্থাৎ রাজা লোকেদের আবেদনে সাড়া দিলেন না। প্রভুর অভিপ্রায়েই এই ঘটনা ঘটল। প্রভু নবাটের পুত্র যারবিয়ামের কাছে তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখার জন্যই এই ঘটনা ঘটালেন। শীলনীয় ভাববাদী অহিয়ের মাধ্যমে প্রভু যারবিয়ামের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিলেন।

১৬. ইস্রায়েলের সমস্ত লোক দেখল নতুন রাজা তাদের আবেদনে কর্ণপাত পর্যন্ত করল না। তখন তারা রাজাকে এসে বলল, “আমরা কি দায়ূদের পরিবারভুক্ত? মোটেই না। আমরা কি যিশয়ের জমির কোনো ভাগ পাই? না ! তাহলে দেশবাসীর৷ চলো আমরা আমাদের নিজের বাড়িতে ফিরে যাই। দায়ূদের পুত্র তার নিজের লোকেদের ওপর রাজত্ব করুক।” একথা বলে ইস্রায়েলের লোকেরা যে যার বাড়িতে ফিরে গেল। 

১৭. ইস্রায়েলের যে সমস্ত লোক যিহুদার শহরগুলিতে থাকত রহবিয়াম শুধুমাত্র তাদের ওপর রাজত্ব করেছিলেন।

১৮. অদোরাম নামে একজন লোক কর্মচারীদের তত্ত্বাবধান করত। রাজা তাকে ডেকে পাঠিয়ে লোকেদের সঙ্গে কথা বলতে বললেন। কিন্তু ইস্রায়েলের লোকেরা পাথর ছুঁড়ে তাকে মেরে ফেলল। রহবিয়াম তখন কোনমতে তাঁর রথে চড়ে জেরুশালেমে পালিয়ে গেলেন।

১৯. অতএব ইস্রায়েলের লোকেরা দায়ূদের পরিবারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল এবং এখনও পর্যন্ত তারা দায়ূদ পরিবারবিরোধী।

২০. ইস্রায়েলের সমস্ত লোক যখন যারবিয়ামের ফিরে আসার কথা জানতে পারল, তারা একটি সমাবেশের আয়োজন করে তার সঙ্গে দেখা করে তাকেই সমগ্র ইস্রায়েলের রাজা হিসেবে ঘোষণা করল। একমাত্র যিহুদার পরিবারগোষ্ঠী দায়ূদের পরিবারের অনুসরণ করতে লাগল ।

২১. রহবিয়াম জেরুশালেমে ফিরে গেল এবং যিহুদ ও বিন্যামীনের পরিবারগোষ্ঠীকে একত্রে জড়ো করলেন। এই দুই গোষ্ঠী মিলিয়ে মোট ১,৮০,০০০ জনের একটি সেনাবাহিনী গঠিত হল। রহবিয়াম ইস্রায়েলের লোকেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে তার রাজত্ব উদ্ধার করতে চেয়েছিলেন।

২২. কিন্তু প্রভু শময়িয় নামে এক ঈশ্বরের লোকের সঙ্গে কথা বললেন। তিনি বললেন, “যাও যিহুদার রাজা শলোমনের পুত্র রহবিয়াম আর যিহুদার লোকেরা ও বিন্যামীনকে গিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে যুদ্ধ করতে বারণ করো।

২৪. ওদের সকলকে ঘরে ফিরে যেতে বলো কারণ আমিই এইসব ঘটিয়েছি।” রহবিয়ামের সেনাবাহিনী প্রভুর আদেশ মেনে বাড়ি চলে গেল।

২৫. শিখিম হল ইফ্রয়িমের পার্বত্য অঞ্চলের একটি শহর। যারবিয়াম শিখিমকে সুরক্ষিত ও শক্তিশালী করে সেখানেই বসবাস করতে লাগল। পরে সে পনূয়েল নামে একটি শহরে গিয়ে সেটিকে সুরক্ষিত ও শক্তিশালী করেছিলো।

২৬-২৭. বযারবিয়াম মনে মনে ভাবলেন, “যদি লোকেরা জেরুশালেমে প্রভুর মন্দিরে নিয়মিত যাতায়াত চালিয়ে যেতে থাকে তাহলে তারা শেষ পর্যন্ত দায়ূদের উত্তরপুরুষদের দ্বারাই শাসিত হতে চাইবে। তারা আবার যিহুদার রাজ৷ রহবিয়ামকে অনুসরণ করবে আর আমাকে হত্যা করবে।”

২৮. তাই রাজা তার পরামর্শদাতাদের কাছে তার করণীয় কর্তব্য সম্পর্কে উপদেশ চাইলেন। তারা রাজাকে তাদের পরামর্শ দিলেন। তখন যারবিয়াম দুটো সোনার বাছুর বানিয়ে লোকেদের বললেন, “তোমরা কেউ আরাধনা করতে জেরুশালেমে যাবে না। ইস্রায়েলের অধিবাসীরা শোনো, এই দেবতারাই তোমাদের মিশর থেকে উদ্ধার করেছিলেন।”

২৯. একথা বলে যারবিয়াম একটা সোনার বাছুর বৈথেলে রাখলেন। অন্য বাছুরটাকে রাখলো দান শহরে। 

৩০. ইস্রায়েলের লোকেরা তখন বৈথেলে ও দানে বাছুর দুটোকে আরাধনা করতে গেল। কিন্তু এটি অত্যন্ত গর্হিত ও পাপের কাজ হল।

৩১. এছাড়াও যারবিয়াম উচ্চ স্থানে মন্দির বানিয়েছিল। শুধুমাত্র লেবীয়দের পরিবারগোষ্ঠী থেকে যাজক বেছে নেওয়ার পরিবর্তে সে ইস্রায়েলের বিভিন্ন পরিবারগোষ্ঠী থেকে যাজকদের বেছে নিয়েছিল।

৩২. এরপর রাজা যারবিয়াম ইস্রায়েলে উৎসবের মতো একটি নতুন ছুটির দিনের প্রবর্তন করল। অষ্টম মাসের ১৫ দিনে এই ছুটি পালিত হত। এসময়ে রাজা বৈথেল শহরের বেদীতে বলিদান করত। সে তার বানানো বাছুর দুটোর সামনে বলি দিত। রাজা যারবিয়াম বৈথেলে ও উঁচু জায়গায় তার বানানো পূজোর জায়গাগুলোর জন্য যাজকদের বেছে নিয়েছিল।

৩৩. অর্থাৎ রাজা যারবিয়াম তার সুবিধা মতো ইস্রায়েলীয়দের জন্য উৎসবের সময় বেছে নিয়েছিল। অষ্টম মাসের ১৫ দিনের মাথায় ঐ ছুটির দিনটিতে বৈথেল শহরে তার বানানো বেদীতে বলিদান ছাড়াও ধুপধূনো দেওয়া হতো।

error: Content is protected !!