(পাঁচ)
আমরা জনগণরা ড্যামোক্র্যাসি আর গণতন্ত্রের কলকাঠি বুঝতে পারি না, ভোট দিয়েই কাম শেষ করি; তবে শুনতে পাই শহরে নানা রকম পলিটিকেল পণ্ডিত দেখা দিয়েছেন, ওই পণ্ডিতরা অঙ্ক শিখে এসেছেন বিলাত আর আমরিকা থেকে, তারা নাকি পাঁচশোজন আর হাজারজন মানুষের সাথে কথা বলেই অঙ্ক করেই বলে দিতে পারেন এবার ইলেকশনে কোন রাজবংশ ক্ষমতায় আসবেন। আমাদের খবরের কাগজগুলি ওই সব রাজনৈতিক জ্যোতিষীদের হস্তগণনা ছাপতে শুরু করেছে, আর আমরা একেক দিন একেকদল জ্যোতিষীর হস্তগণনার অঙ্ক পড়ে মাথায় গোলমাল বাধিয়ে তুলছি। ইলেকশন আসলে সবাই দোকান খোলে, একটু ব্যবসা করে নিতে চায়; পানবিড়িআলারা ঘুমানোর সময় পায় না, টানবাজার আর কান্দুপট্টির মেয়েগুলোর পিঠ আর মাজা লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়; এখন দেখছি নতুন এই ব্যবসাটি সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে–দিনরাত ব্যবসা করছে।
নিরপেক্ষ রাজনৈতিক জ্যোতিষীসংঘ ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন :
উচ্চবিত্তের মতে প্রাপ্ত আসন | মধ্যবিত্তের মতে প্রাপ্ত আসন | নিম্নবিত্তের মতে প্রাপ্ত আসন | গড়ে প্রাপ্ত আসন | |
---|---|---|---|---|
জনগণমনবংশ | ১৪০ | ১৫০ | ১৬০ | ১৫০ |
শক্তির উৎসবংশ | ১০০ | ৯০ | ৭০ | ৮৬.৬ |
খোজাবংশ | ২০ | ২৫ | ২০ | ২১.৬ |
রাজাকারবংশ | ৫ | ৩ | ১৫ | ৭.৬ |
অন্যান্য বংশ | ৫ | ২ | ৫ | ৪ |
মোট আসন | ২৭০ | ২৭০ | ২৭০ | ২৭১ |
দ্রষ্টব্য : প্রত্যেক শ্রেণীতে অংশ নিয়েছেন ৫০০ ভোটার।
এবার হচ্ছে বাঁচনমরনের নির্বাচন, সারভাইভালের ইলেকশন; কারোই মাথা ঠিক নেই–জিতলে বাঁচুম হারলে মরুম। এই ধরনের হস্তরেখাপাঠ পাওয়া গেলে ভোটারদের মাথা ঠিক থাকে না, যারা ভোট চায় তাদের মগজ ঠিক থাকে না, খুলি ভেঙে মগজ চারদিক দিয়ে বেরিয়ে পড়তে চায়; বিশেষ করে মগজ আর মাথা নষ্ট ভ্রষ্ট দ্রষ্ট প্ৰষ্ট ঘ্রষ্ট হয়ে যায় তাদের, সিংহাসন যাদের অবশ্যই চাই–সেই শক্তির উৎসবাদী আর জনগণমন রাজবংশের মহাদেশনেত্রী মহাজননেত্রী রাজপুরুষ ক্যাডার, এমনকি চিকামারাদের।
একদিন সকালবেলা আমরা জনগণরা দেখতে পাই দেশখানা পলিটিকেল প্যান্ডিট আর অ্যাস্ট্রোলোজারে উপচে পড়ছে; হার্ভার্ড শিকাগো ইউসিএলএ হনুলুলুর সাথে আরো : অজস্র ধনুলুলু ভনুলুলু চনুলুলুর রাজনৈতিক জ্যোতিষের ভবিষ্যদ্বাণীতে কাগজের পাতা ভরে উঠতে থাকে। তাগো লগে পরতিজোগিতা লাগায় আমাগো রাস্তার গলাকাইট্যা জোড়ালাগাইনা ফালফারা বাকবাকম ম্যাজিশিয়ানটা (সে কয়েক ডিগ্রি এগিয়ে যায়, তার হস্তগণনা পত্রিকায় না দিয়া বাক্সের ভেতরে বাক্স তার মইধ্যে আরো বাক্স তার মইধ্যে আরো বাক্স তার মধ্যে আটকাইয়া রেখে আসে ইংরাজি খবরের কাগজের অফিসের লোহার সিন্দুকে), আমলিগোলার পানিপড়ানি বুড়ীটা, ধলেশ্বরীর ফেরিঘাটের দাঁতের মাজনের ক্যানভাসারটা, এমনকি টানবাজারের তিনচারটা দেহশিল্পীও ভবিষ্যদ্বাণী করে। ওপরের পূর্বাভাসটি অত্যান্ত খুবই আপত্তিকর লাগে শক্তির উৎসবাদীদের কাছে, লাগনেরই কথা, তাঁরা এর তীব্র নিন্দা করেন; পরের দিনই আমরা খবরের কাগজে আরেকখানা বিজ্ঞানসম্মত পূর্বাভাস পাই, যাতে হস্তরেখা আরো বৈজ্ঞানিকভাবে গণনা করা হয়েছে। এই পূর্বাভাসটির খুবই উচ্চ প্রশংসা করেন উৎসবাদীরা, আর খুবই নিচ্চ নিন্দা করেন জনগণমন গণতন্ত্রবাদীরা।
বিশুদ্ধগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জ্যোতিষীসংঘের অধিকতর বিজ্ঞানসম্মত (শক্তির উৎসবাদীদের মতে) পূর্বাভাসটি নিম্নরূপ :
উচ্চবিত্তের মতে প্রাপ্ত আসন | মধ্যবিত্তের মতে প্রাপ্ত আসন | নিম্নবিত্তের মতে প্রাপ্ত আসন | গড়ে প্রাপ্ত আসন | |
---|---|---|---|---|
জনগণমনবংশ | ১৫০ | ১৬০ | ১৬৬ | ১৫৮ |
শক্তির উৎসবংশ | ৯০ | ৮০ | ৮৫ | ৮৫ |
খোজাবংশ | ২০ | ২৫ | ২০ | ২১.৬ |
রাজাকারবংশ | ১৫ | ২০ | ১২ | ১৫.৬ |
অন্যান্য বংশ | ৫ | ২ | ২ | ৩ |
মোট আসন | ২৭০ | ২৭০ | ২৭০ | ২৭০ |
দ্রষ্টব্য : প্রত্যেক শ্রেণীতে অংশ নিয়েছেন ৮০০ ভোটার।
এরকম স্তম্ভিত ভবিষ্যদ্বাণীতে, হস্তগণনায়, সংখ্যাতত্ত্বে, ময়না টিয়া শালিক টুনটুনির পোস্টকার্ড পাঠে, ঝাঁটা খড়ম বাটি সিঁড়ি বঠি চালানে আমরা বাহ্যজ্ঞান হারিয়ে ফেলতে থাকি।
সব ধরনের রাজনৈতিক জ্যোতিষীদের মধ্যে প্রচণ্ডতম সাড়া জাগান এক অভিনব ধারার রাষ্ট্রবিজ্ঞান জ্যোতিষীরা, যাঁরা নিজেদের পরিচয় দেন নন্দনতাত্ত্বিক নির্বাচনবিজ্ঞানী। এই ধারার রাষ্ট্র ও নির্বাচনবিজ্ঞান নাকি এখন খুবই প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে উন্নত সেক্সি গণতন্ত্রগুলোতে; আমরা এখনো তার খবর পাই নি, কয়টা ভালো খবরই আর আমরা পাই একশো দুইশো বছর কাটনের আগে; তাঁদের তত্ত্ব হচ্ছে ভোটাররা আর শুধু ইশতেহার ও গলাবাজি শুনে ভোট দেয় না, ওই সব পচা ইশতেহার পড়া আর গলাবাজি শোনার থেকে তারা এক্সএক্সএক্স দেখতে বেশি পছন্দ করে; তারা ভোট দেয় (অন্তত ৪০%) ক্যান্ডিডেটদের পোশাকের রঙ, চিবুকের ভাঁজ, বক্ষের উচ্চতা, চুলের বিন্যাস, কণ্ঠস্বরের মাদকতা, ঠোঁটের বিস্তার, হাসির ঝিলিক–এককথায় তাদের যৌনাবেদন অনুসারে। যার যৌনাবেদন যতো বেশি তিনি ততো ভোট পান। তাঁরা ডিগ্রি দিয়ে সেক্স অ্যাপিল (এসএ) পরিমাপের পদ্ধতিও বের করেছেন; যাঁদের এসএ ৭৫ ডিগ্রির ওপরে, তাঁরা স্টারমার্কপ্রাপ্ত, তাদের জয় নিশ্চিত, ভোটাররা তাঁদের ভোট দেয়ার জন্যে ভোরের আগেই ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়; যাদের এসএ ৫০ ডিগ্রির নিচে, তারা শুধু ফেল নয় তাঁদের জামানত বাজেয়াপ্তি অবধারিত, আগামী নির্বাচনেও তাদের কোনো সম্ভাবনা নেই। ওই সব দেশে সেক্স অ্যাপিল না থাকলে হ্যামবার্গারের মতো আকর্ষণীয় খাদ্যও বিক্রি হয় না, আর রাজনীতিবিদরা তো পচা বাসি খাদ্য, তাঁদের কে খায়? তারা আরো জানান যে সারা দুনিয়াতেই রাজনীতিবিদদের এসএ কমে যাচ্ছে, জনগণ তাই রাজনীতিতে ভোটে নির্বাচনে আস্থা হারিয়ে ফেলছে; পৃথিবীতে শিগগিরই রাজনীতিক সংকট দেখা দেবে। তাদের কাছ থেকে আমরা আরো জানতে পারি এখন সবচেয়ে কম এসএ আছে আরব আর ইউরোপের রাজা রানী রাজপুত্র রাজকন্যাদের, এবং আফ্রিকা ও অন্যান্য দেশের লৌহমানবদের। তাদের এসএ .০০৫°। নন্দনতাত্ত্বিকদের তত্ত্ব ও বিশ্লেষণপ্রণালি হৈচৈ বাঁধিয়ে দেয় এজন্যে যে আমাদের ইসলামি রাষ্ট্রে, যার ছেঁড়াফাড়া সংবিধানের শুরুতে আল্লাতাল্লার নামে সব কাম করনের কথা বলা হয়েছে, যাকে আমরা ফজরে জোহরে মাগরেবে আসরে আফগানিস্থান সৌদি আরব করে তোলার জন্যে পাগল হয়ে উঠেছি, সেই পবিত্র ভূমিতে ক্যান্ডিডেটদের যৌনাবেদন বিচার ধর্মসম্মত কি না। একদল ফতোয়াবাজ ওই বিজ্ঞানীদের পাছায় ৪০টা দোররা লাগানোর ফতোয়া দেয়, আরেকদল তাদের ফাঁসিতে ঝোলানোর সিদ্ধান্ত জানায়। তবে নন্দনতাত্ত্বিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা সীমা পেরিয়ে যান না তারা শয়তানের ভাই নন, বুদ্ধিজীবী হলেও তারা বেশ বুদ্ধিমান, তাঁরা বলেন বাঙলাদেশের মতো দেশে, যেখানে যৌনাবেদন সম্পর্কে কথা বলা কপট ট্যাবো (ধর্ম রাখতে হইলে এইটা অত্যান্ত দরকার), সেখানে ওই আবেদন (এসএ) বিচার বা পরিমাপ না করলেও চলে; এখানে বিচারবিশ্লেষণ করা দরকার সৌন্দর্য; আর ধর্মে সৌন্দর্য খুবই প্রশংসিত জিনিশ। তাঁরা অজস্র কেতাব থেকে পাতার পর পাতা হাজির করে দেখান এই মহান ধর্ম সৌন্দর্যের প্রশংসায় মুখর, ভাতের পরই আমাদের ফুল। খাওনের কথা (গোলাপ ফুল? শাপলাফুল? কদুফুল? গন্ধরাজ? রজনীগন্ধা?); এই ধর্ম খ্রিস্টধর্ম নয়, যাতে নোংরা উকুনভরা ছালাপরা সন্তরা সৌন্দর্যের একনম্বর শত্রু। তারা দেখান যারা আচরণে স্বভাবে কথায় (অনিবার্যকারণে শরীরের কথা তারা উল্লেখ করেন না) সুন্দর নন তাঁরা হৃদয়েও সুন্দর নন; আর তারা ক্ষমতায় আরোহণ (আরোহণ শব্দটি লক্ষণীয়) করলে সব কিছুকে অসুন্দর করে তুলবেন। একেই দেশে সুন্দরের অত্যন্ত অভাব, আগামীতে বাকিটুকুও আর থাকবে না।
নন্দনতাত্ত্বিক নির্বাচনবিজ্ঞানীরা তাদের পাহাড়ের সমান তথ্যের, এইভাবে সেইভাবে চিকাৎ করে উপস্থাপিত উপাত্তের, ওপরে নিচে ডানে বায়ে কোণাকোণি কম্পিউটারকৃত স্তম্ভ ও সারির, যে-ব্যাখ্যা দেন, তাতে আমরা জনগণরা ভয় পেয়ে যাই। আমাদের মনে হইতে থাকে তারা আমাদের মনের কথা বলতেছেন।
তাঁদের স্তম্ভ আর সারিগুলো সরলভাবে আমরা নিচে তুলে ধরছি :
নোংড়া | বেশি নোংড়া | অতিশয় নোংড়া | |
---|---|---|---|
আমাদের রাজনীতিবিদদের আকৃতি (পেট ইত্যাদি) | ৮০.২% | ৭০.৪% | ৫০.৭% |
মুখের গঠন | ৮৫.৫% | ৭২.৩% | ৬৫.৩% |
মুখভঙ্গি (বক্তৃতার সময়) | ৯০.৫% | ৭৬.৮% | ৭৭.৫% |
হাঁটার ভঙ্গি | ৮৯% | ৮৭.৮% | ৭৮% |
থুথু ফেলা (বক্তৃতার সময়) | ৯৫% | ৮৮.৬% | ৭৯.৬% |
বক্তৃতা (কমপক্ষে ৩৪০ জনের জন সভায়) | ৯৯.৯৯% | ৮৯.৯% | ৮০.৬% |
ভাষা (সব সময়) | ৯৮.৮৮% | ৯২.৬% | ৮৫.৬% |
দ্রষ্টব্য : ৪০, ৬৯০জন ভোটারের মত বিশ্লেষিত হয়েছে।
ওপরে সামান্য একটু নমুনা দেয়া হলো মাত্র।
তাঁরা পাঁচ বছর আগের সাথে পাঁচ বছর পরের এই অবস্থার ফালাফালা ছিড়াফাড়া তুলনা করেন, রাজবংশগুলোর মহাদেশনেত্রী মহাজননেত্রী রাজপুরুষ এবং আর যা যা যা আছে, তা তা তা তুলনা করে দেখান এই বছরের ইলেকশন হচ্ছে অসুন্দরের সাথে অসুন্দরের, নোংরার সাথে নোংরার, আবর্জনার সাথে আবর্জনার, কুৎসিতের সাথে কুৎসিতের কম্পিটিশন। তারা দেখান পাঁচ বছর আগে তাঁদের চোখেমুখে সৌন্দর্য ছিলো, ঠোঁটে গ্রীবায় হাসিতে উদ্যত ও উদ্ধত মুষ্টিতে সৌন্দর্য ছিলো; বছরের পর বছর একটা লোমশ দৈত্যের সাথে লড়াই করে তাঁরা সৌন্দর্য অর্জন করেছিলেন; কিন্তু গত পাঁচ বছরে তাঁদের সেই সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেছে, পচে গেছে। তাঁদের নিজেদের মুখে এসে ভর করেছে দৈত্যের মুখের অসৌন্দর্য, বেহায়া বেহায়া ভাব তাদের মুখ জুড়ে, পচন বেয়ে বেয়ে পড়ছে তাদের অবয়বে। তাদের কারো মুখে নির্মল হাসি নেই, তাদের হাসি এখন উঁচু চোয়ালের বিকৃতি মাত্র; তাঁদের প্রত্যেকের চিবুক ভেঙে পড়েছে, গাল থেবড়ে পড়েছে, গলকম্বল ঘেঁড়া ছালার মতো ঝুলে পড়েছে, চোখের নিচে বস্তির ঘরের ধুলকালি জমেছে; তাদের হঠাৎ দেখলে সাধারণ মানুষ ভয় পেয়ে যায়, তাদের ছোটা ছোটো দৈত্য মনে হয়। নন্দনতাত্ত্বিক নির্বাচনবিজ্ঞানীরা দেখান মহাদেশনেত্রী মহাজননেত্রী রাজপুরুষরা অব্যবস্থিত (শব্দটির অর্থ বুঝতে আমাদের রাজপুরুষদের পাঁচ দিন সময় লাগে) হয়ে পড়েছেন; পাজেরো থেকে নামতে তাদের জামাকাপড়শাড়িসায়া পাজেরোর দরোজায় আটকে যাচ্ছে, উঠতে গিয়েও আটকে যাচ্ছে, মঞ্চেও আটকে যাচ্ছে। তাদের ভাষাও বদলে গেছে, গলগল করে ঝরছে তাদের মুখ থেকে অপভাষা, বলা যেতে পারে তারা একটি অভিনব রাজনৈতিক অবহট্ঠ রাষ্ট্রভাষা জন্ম দিয়েছেন, যা ৮৫০ সালের পর এই প্রথম ঘটলো; তারা এবার কথা বলার থেকে চিৎকার বেশি করেন, নিজেদের কর্মসূচির থেকে অন্যের নিন্দে বেশি করেন; তাঁদের ভাষায় চলতি বাঙলা অশ্লীল শব্দ ১০%, আঞ্চলিক অশ্লীল শব্দ ২৮%, ইংরেজি অশ্লীল শব্দ ১৭%, আরবিফার্সি গালাগাল ১৫%। তাঁরা দেখান যে আমাদের রাজপুরুষদের বক্তৃতায় কোনো বক্তব্য নেই, সেগুলো নিরর্থক চিৎকার।
নন্দনতাত্ত্বিক নির্বাচনবিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেন এবারের নির্বাচন হবে কদর্যের সাথে কদর্যের প্রতিযোগিতা, লোভের সাথে লোভের প্রতিযোগিতা; আর জনগণকে ভোট দিতে হবে ওই কদর্যের বাক্সে ওই লোভের বাক্সে।
আমরা জনগণরা ভয় পেয়ে যাই, ডরে কাঁপতে থাকি।
এদিকে আবার কতকগুলো আজেবাজে সমাজবিরোধী গাঁজাখোর মাদকসেবী বিকারগ্রস্ত বেকার, যারা এমএ এমএসসি এমএজি এমবিবিএস ইঞ্জিনিয়ারিং আর আর হাবিজাবি পাশ করেও বছরের পর বেকার পড়ে আছে (বেকার থাকবে না ক্যান এইসব না পইড়া সৌদি গিয়া চাকর থাকলেই পারতো, মুসলমান ভাইগো গুতা খাইলেই পারতো, সোয়াব হইতে), তারা একটা কাগজ ছাপিয়ে দিয়েছে। বেকাররা সৌন্দর্যের কী বোঝে, তাই তারা সৌন্দর্য নিয়ে মাথা ঘামায় নি; তারা পুরোনো কালের টোলের পণ্ডিতদের মতো রাজপুরুষদের নীতি আদর্শ সততা অসততা শিক্ষা অশিক্ষা এই সব অপলিটিকেল ব্যাপার সম্পর্কে জনগণের মত নিয়ে গবেষণা করে ফলাফল আমাগো মতো গরিব জনগণরে জানাই দিয়েছে। আজকাল গবেষণায় বড়োই ছকাছকি, বড়োই স্তম্ভান্তম্ভি; দেখতে পাই আমাগো বেকাররাও হনুলুলু না গিয়াও ওই সবে কম যায় না। তয় এইসব শিক্ষা অশিক্ষা সততা অসততা নিয়ে বাড়াবাড়ি ঠিক হয় নাই, শত হইলেও তারা রাজপুরুষ, তারাই ছিলো তারাই থাকবো; শিক্ষা না থাকলেও তাঁরা শিক্ষিত, মানতে হইবো; সততা না থাকলেও তারা সৎ, এইটা মেনে লইতে হইবো। এমন কোন দেশ আছে, যেখানে পলিটিক্সের জন্যে শিইক্ষ্যা দরকার হয়? পটেটো শব্দের বানান, করতে পারে, এমন কয়টা প্রেছিডেন্ট ভাইছপ্রেডিডেন্ট আছে আমরিকায়? দুনিয়ায় এমন কোন রাষ্ট্র আছে, যেখানে পলিটিক্সের জইন্যে সৎ হইতে হয়? এইগুলি তো পুরানো কালের পণ্ডিতগো কথা। বেকার বাজানরাও অনেকগুলো স্তম্ভ আর সারি ছেপে দিয়েছে; সেইগুলিরে আবার ভাজাভাজা করে ব্যাখ্যাও করেছে। তাদের স্তম্ভ আর সারিতে এই রকম জিনিশ পাওয়া যায় :
আমাদের রাজনীতিবিদগণ | নারীদের মতে | পুরুষদের মতে | ছাত্রদের মতে |
---|---|---|---|
অশিক্ষিত | ৯০.২% | ৮৮.৪% | ৯৯.৯% |
মিথ্যেবাদী | ৯৫.৭% | ৮৬.৩% | ৯৯.৯% |
কপট বা ভন্ড | ৯৭.৫% | ৮৬.৮% | ৯৯.৯% |
ঘুষখোর | ৯৭% | ৯৬.৬% | ৯৯.৬% |
অনৈতিক | ৯৭.৯৯% | ৭৮.৯% | ৯৯.৬% |
ক্যাডারদের গডফাদার | ৭০.৮৮% | ৭৩.৬% | ৯০.৬% |
ধর্মভিনেতা | ৯৯.৯% | ৯৭.২% | ১০০% |
দ্রষ্টব্য : ৩৩,৪২৬ জন ভোটারের মত বিশ্লেষিত।
তারা এমন আরো অনেক স্তম্ভ ও সারি করে; এবং করে নিম্নরূপ একটি বিশেষ ছক, যা দেখে আমরা পাগল হয়ে যাই :
প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলের নেতা/নেত্রীর যোগ্যতা | হ্যাঁ | না |
---|---|---|
অশিক্ষিত হবেন | ১০০% | ০০% |
ফোর ফেল হবেন | ৯৫% | ৫% |
এইট ফেল হবেন | ৯২% | ৮% |
বিএ পাশ হবেন | ১০% | ৯০% |
মাথায় ঘিলু থাকবে | ৫% | ৯৫% |
গণতন্ত্র বানান করতে পারবেন | ০০% | ১০০% |
যা ইচ্ছে তাই করতে পারবেন | ১০০% | ০০% |
Xআত্মীয়দের মন্ত্রী শিল্পপতি বানাতে পারবেন | ১০০% | ০০% |
সংসদে আসতে হবে | ০০% | ১০০% |
দ্রষ্টব্য :৩৩, ৪২৬ জন ভোটারের মত বিশ্লেষিত। Xচিহ্নিত সারিটি শুধু প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
আমরা তাদের স্তম্ভ ও সারির একটা ছোট্ট টুকরো মাত্র এখানে দিলাম, এতেই বোঝা যায় আমরা কতোখানি পাগল আর কততখানি সুস্থ আছি।
জঙ্গলের গাছপালা শুকনো নদীনালা খাল বিল পাটক্ষেত ভাঙা ব্রিজ আকাশবাতাস ডুমুরফল তেতইল শাদা বাইগন কলমিলতা কচুর লতি শাপলাফুল বিশতলা টাওয়ার সিনেমাহলের কাছে, গরুবলদ নৌকোবৈঠা ধানক্ষেত খালবিল সুপারমার্কেট রুমকুলার বস্তি প্রেসক্লাবের কাছে, ময়মুরুব্বি ক্যাডার ভোটার ডিফল্টার শিল্পপতি স্মাগলার পলিটিশিয়ানদের কাছে মাফ চেয়ে, আর বগা পানি কালা পানি আকাশের মেঘ পুকুরের মরা শোলগজার ইরিধান পাজেরো এনজিও বস্ত্রবালিকা ট্যাক্সফি গাড়ি কাটারাইফেল ককটেল জর্দার কৌটারে সাক্ষী রেখে কিছু কথা বলতে হচ্ছে আমাদের, কিন্তু কারা ওই কথাগুলো বললো, কাদের বললো, তাদের নাম আমরা বলতে পারবো না। আমরা আরো কিছুকাল বেঁচে থেকে বাজারের চায়ের দোকানে বসে ক্যান্ডিডেটগো খরচে চা খেতে চাই, নেতাগো বাক্সে ভোট দিতে চাই, নেতাগো নামে শ্লোগান দিতে চাই, গেইট সাজাতে চাই; এতো তড়াতড়ি ভেস্তে যেতে চাই না, সেইখানে যতোগুলি হুরিই নাচুক আর মিঠাপানির ঝরনাই কলকল করে বহুক আর খাজুরের বাগানে খাজুরই পাকুক। পশ্চিমে আমরা পাঁচবার মাথা ঠুকি, তাতে কোনো কাজ হয় না; আর পশ্চিমারা আমাদের পথ দেখায়, তাতে কাজ হয়–আর কতোকাল যে দেখাইবো; এইখানে আমাদের পশ্চিমাদের দেখানো পথেই চলতে হবে আরো কতোকাল যে চলতে হইবো। এবিসি বিবিসি সিএনএনে মাঝেমাঝেই দেখি খুনি মাফিয়া ধর্ষণকারীর সাক্ষা কার নেয়া হচ্ছে, খুব ভোলামেলা কথাবার্তা, খুনিরা মাফিয়ারা ধর্ষকারীরা মন খুলে একের পর এক সত্য কথা বলছে (আমাগো রাজনীতিবিদেরাও এতোটা মন খুইল্যা কথা বলেন না), কেনো খুন করলো একটার পর একটা ধর্ষণ করলো বলিভিয়া। নিকারাগুয়া থেকে ড্রাগ চালান দিতে গিয়ে কতোজনকে সরিয়ে দিতে হলো, সব বলছে; কিন্তু টিভির পর্দায় তাদের মুখ দেখানো হচ্ছে না, মুখের ওপরে একটা শাদা বা কালো। চলন্ত ঢাকনা সব সময় ছড়িয়ে রাখা হচ্ছে–এটা সাংবাদিক নৈতিকতা, তারা সত্য বের করবেন, কিন্তু সত্যবাদীদের ধরিয়ে দেবেন না, সত্য বের করা তাদের কাজ, ধরিয়ে দেয়া তাদের কাজ না। এইসব বুদ্ধি পশ্চিমা ইহুদি কাফেরদের মগজেই আসে; আমরা এতে সত্যটা জানতে পারি, সত্যগুলো যারা ঘটায় শুধু তাদের মুখ দেখতে পাই না। মুখ দেখার দরকার নেই; মুখ দেখা আসল কথা না, আসল কথা হচ্ছে সত্য; সত্য দেখা, সত্য জানা।
এই পদ্ধতিতে কিছু সত্য আমরা প্রকাশ করতে চাই।
এক রাজবংশের কখ (এটা হচ্ছে নামের ওপর শাদা ঢাকনা, এর পরেও এমন ঢাকনা আরো ব্যবহার করা হবে) মোল্লা (এই বংশপরিচয়ও ঢাকনা, এর পরেও এমন ঢাকনা আরো ব্যবহার করা হবে), গঘ চাকলাদার, গুচ মিয়া ও আরো কয়েক নেতা তাঁদের প্রধান ক্যাডারদের সাথে বসেছেন, দেশের পাঁচ বিভাগের পাঁচতারা ক্যাডাররা তাতে যোগ দিয়েছে, তারা তাদের কর্মপদ্ধতি বুঝিয়ে দিচ্ছেন।
কখ মোল্লা বলেন, এইবার কি স্ট্র্যাটেজি নিতে হইবো, তা তোমরা নিচ্চয়ই বুঝতে পারতেছে; উইপন থাকবো, কিন্তু উইপনের ইউজ হইবো না।
এক ক্যাডার জিজ্ঞেস করে, কিন্তু যদি ফেইল্লা দেওনের একশো পার্ঘেন্ট দরকার হইয়া পড়ে, তখন কি করুম, স্যার?
গঘ চাকলাদার বলেন, তখন বুইজ্যাশুইন্যা কারবার করবা; তবে মনে রাখবা এইবার ফেইল্লা দিলে ইমেজ নষ্ট হইয়া যাইবো।
এক ক্যাডার বলে, আমার জামার তলে যখন কাটারাইফেল থাকে, তখন আমার বুইজ্যাশুইন্যা করনের কিছু থাকে না; ওই রাইফেল নিজেই বুইজ্যাশুইন্যা কাম করে।
কখ মোল্লা বলেন, মাথাডাও একটু খাটাইতে হইবো, খালি উইপন দিয়া ত পলিটিক্স হয় না, মাথাডাই হইলো আসল উইপন।
ঙচ মিয়া বলেন, তোমরা হইলা আর্মির মতোন, আর্মি যেমুন ডিসিপ্লিন মাইন্যা চলে তোমরাও তেমুন ডিসিপ্লিন মাইন্যা চলবা; যখন তোমাগো ফেইল্লা দিতে বলা হইবো। তখন ফেইল্লা দিবা, আবার যখন জনগণরে স্যাবা করতে বলা হইবো, জনগণের পায়ে হাত দিয়া তাগো মন জয় করতে বলা হইবো, তখন পায়ে হাত দিয়া মন জয় করবা। এইবার হাতেপায়ে ধরতে হইবো, দেখতে পাইতেছে না আমরা দিনরাইত হাতে পায়ে ধরতেছি।
এক ক্যাডার জানতে চায়, ইনভার্সিটির হলগুলিতেও কি আমরা হাতেপায়ে ধইর্যা চলুম, ছাইড়া দিতে বললে ছাইড়া দিমু?
গঘ চাকলাদার শিউরে ওঠেন, থরথর করে কেঁপে চিৎকার করে ওঠেন, না, না,; তা করবা না; ইনভার্সিটি হইলো আসল বাঙলাদ্যাশ, ওইটা দখলে থাকলে বাঙলাদ্যাশও দখলে থাকবো। হলের একটা কোণাও ছাড়বা না।
কখ মোল্লা বলেন, ইনভার্সিটি আর সারাদ্যাশের মধ্যে ফারাক আছে; দ্যাশে গ্যারামে লাশ ফেলনে বিপদ আছে; ইনভার্সিটিতে লাশ ফ্যাল্লে ক্ষতি নাই, ওইটা হইলো আউট অব বাউন্ড, দারোগা পুলিশ জজ ম্যাজিস্ট্রেটের বাইরে, ওইখানে আমাগো ছাত্ররা শহীদ হয় অমর ইয়, মরে না, মামলামকদ্দমা হয় না। ওতে ইলেকশনের শান্তিশৃঙ্খলা নষ্ট হয় না, ইলেকশনের নিরপেক্ষতা নষ্ট হয় না।
ঙচ মিয়া বলেন, মালাউনগুলিরে ডরের মইধ্যে রাকতে হইবো, অইগুলিই আমাদের পার্মানেন্ট এনিমি; এমন করব যাতে ভোটের দিনে তারা খুশি হইয়া নিজেগো বাড়িতে বইস্যা থাকে, ভোট দিতে না যায়। জানই ত মালাউনগুলিরে বিশ্বাস নাই। অইগুলি ট্যাকাপয়সা ইন্ডিয়া পাঠাইয়া দ্যায়, দ্যাশটারে ইন্ডিয়া বানাইতে চায়। পাকিস্থান অরাই ভাঙছে, এই দ্যাশটারেও ভাঙতে চায়।
কখ মোল্লা বলেন, তাগো বাড়িতে বসাই রাখনের জইন্যে একটা বাজেট করবা, বিনা পয়সায় বাড়িতে বসাই রাখন যাইব না, যদি কিছু মালপানি হাতে পড়ে তয় খুশি হইয়াই বাড়িতে বইস্যা থাকবো।
এক ক্যাডার বলে, অইগুলি খুব ঠ্যাডা, মালপানি নিতে চায় না।
গঘ চাকলাদার বলেন, দুই একটা মালাউনরে দলে টাইন্যা আনবা, তাগো ন্যাতা বানাইয়া ফেলবা, আমাগো পক্ষে বকতিতা দেওয়াইবা। দ্যাশে নিশ্চই দুই চাইরটা ছাগেশ্বর পাঠেশ্বর কালিপদ খালিপদ পাইবা।
এক ক্যাডার বলে, মালপানি ছাড়াও তাগো বাড়িতে বসাই রাখন যায়; অইগুলিরে মালপানি দেওন ট্যাকাকড়ি গাঙে ফেলন।
ঙচ মিয়া জিজ্ঞেস করেন, সেইটা কিভাবে?
ওই ক্যাডার বলে, পাঁচ বিভাগ থিকা পাঁচ দশটা মাইয়ারে ধইর্যা নিয়া রেপ কইর্যা ছাইরা দিলেই হয়, তাইলে ডরেও তারা ঘর থিকা বাইর হইবো না।
কখ মোল্লা বলেন, না, না, এখন রেপটেপে যাইবা না, বাবারা; আমাগো দারোগা পুলিশ বাবারাই সেই কাম কইর্যা চলছে, তোমাগো করনের কাম নাই।
কখ মোল্লা একটু উত্তেজনা বোধ করেন।
এক ক্যাডার বলে, কিন্তু ছার, ক্যাডাররা সব সময় টেনশনে থাকে, টেনশন রিলিজ করনের লিগা যেমুন মাঝেমইদ্যে কাটারাইফেল খালাশ করতে হয়, তেমুনই মাঝেমইদ্যে রেপ করনের দরকার হয়।
গুচ মিয়া বলেন, ক্যান বাবারা, আইজকাইল হোটেলে পার্কে এতো হাই ক্লাশ কলগার্ল সিনেমার অ্যাকস্ট্রা পাওয়া যায়, ইনভার্সিটি কলেজের এডুকেটেড মাইয়াও পাওয়া যায় শুনি, রেপ করনের কি দরকার।
আরেক ক্যাডার বলে, রেপ ছারা, ছার, টেনশন রিলিজ হয় না, এই বয়সে আপনে তা বোঝাতে পারবেন না।
তারা কয়েক ঘণ্টা ধরে তাদের কর্মপদ্ধতি বিস্তৃতভাবে আলোচনা করেন, এবং সমগ্র কর্মপ্রণালি গ্রহণ করেন।
আরেক রাজবংশের চছ শিকদার, জঝ আহমদ, ঞট শেখ, ঠড খা ও কয়েক প্রধান নেতা কর্মসূচি গ্রহণের জন্যে বসেন তাদের পাঁচ বিভাগের পাঁচতারা ক্যাডারদের নিয়ে।
চছ শিকদার বলেন, বাবারা তোমরা জানই যে এইবারের ইলেকশন আমাগো মরনবাচনের ইলেকশন, আমরা মইরা আছি এইবার বাঁচতে হইবো, উইন আমাগো করতে হইবোই; এইবার কোনো ভুল করন চলবো না।
এক ক্যাডার বলে, আমাগো যেই কাম দিবেন, আমরা জান দিয়াও তা কইরা দিমু জানের আর কোনো দাম নাই। পাওয়ারে যাইতে চাই, পাওয়ারের বাইরে থাকতে থাকতে ঘুম ভুইল্যা গেছি।
ঠড খাঁ বলেন, প্রথম দরকার হইলো তোমাগো মইধ্যে ঐক্য, ইউনিটি; তোমরা নিজেরা খুনাখুনি করলে আমাগো সব শ্যাষ হইয়া যাইবো। তোমাগো ইউনিটি ছাড়া দলের ভবিষ্যৎ নাই।
প্রধান ক্যাডার বলে, আমরা ইউনিটি ইস্টাবলিশ করছি, আর নিজেগো মইধ্যে ফাইটিং হইবো না। ইলেকশনই এখন আমাগো আসল কাম।
জঝ আহমদ বলেন, পাওয়ারে না থাকলে কিছুই করন যায় না দ্যাখতেই পাইতেছ; অরা রাইফেল দিয়া দ্যাশ দখল কইর্যা পাওয়ারে বসলো, ভোটের বাক্স চুরি কইর্যা পাওয়ারে রইলো; ন্যাতারা লাল হইয়া গেলো, ক্যাডাররা লাল হইয়া গেলো। অগো ন্যাতাগো ইস্পেইন ফ্রান্স সুইজারল্যান্ডে ওয়াশিংটনে প্যালেস আছে, ক্যাডাররা লম্বা লম্বা নিশান পাজেরো চালায়, বনানীতে দুই বিঘার উপর প্যালেস বানায়, টাওয়ারে টাওয়ারে তিন চাইরটা কইর্যা ফ্ল্যাট কিনে দুই তিনটা বউ আর মিস্ট্রেস রাখে, চাইয়া দেখ তোমাগো কি আছে আমাগো কি আছে? কিছু নাই।
এক ক্যাডার বলে, পাওয়ারই আসল কথা; কাটা রাইফেল দেখাইয়া আর কতটা করন যায়, পাওয়ার হইল হাজারটা কাটা রাইফেলের সমান। চাইর দিক থিকা ট্যাকা আসতে থাকে।
আরেক ক্যাডার বলে, যতজনরে ফালাই দিতে কইবেন ফালাই দিমু।
হাহাকার করে ওঠেন গ্রুট শেখ, বলল কি বলো কি, এমন কথা বলার সময় এইটা না; গেরিলা ফ্রিডম ফাঁইটারের স্পিরিট তোমাগো এখনো গ্যালো না; যাইবো কেমনে, তোমরা হইলা ফ্রিডম ফাঁইটার, তবে তোমাগো মনে রাকতে হইবো এইটা নাইন্টিন সেভেনটি ওয়ান না, এইবারের যুদ্ধ অন্যরকম। না মাইর্যা যুদ্ধু করতে হইবো, বাঁচাইয়া যুদ্ধু করতে হইবো, হাতেপায়ে ধইর্যা যুদ্ধ করতে হইবো। এইটা ভোটের যুদ্ধু।
চছ শিকদার বলেন, এইবারের পলিটিকেল ক্লাইমেটটা দেখতে পাইতেছ, বাতাস আমাগো দিকে। অনেক হাতেপায়ে ধইর্যা কাইন্দা কাইট্যা বাতাসরে আমাগো দিকে আনছি, তোমাগো দেকতে হইবো যাতে বাতাস অন্য দিকে না যায়, বাতাসরে গার্ড দিয়া রাখতে হইবো।
ঠড খাঁ বলেন, ইনভার্সিটির হলগুলিরে দখলে রাকতেই হইবো, একটুও ছারন যাইবো না, ইনভার্সিটিই হইলো দ্যাশের পাওয়ার সেন্টার, সারাদ্যাশ এই দিকে তাকাইয়া থাকে, যাগো ইনভার্সিটি তাগোই দ্যাশ।
এক ক্যাডার বলে, অগো আর হলে ওটতে দিমু না, একবার বাইর করছি ত করছিই, ওটতে চাইলে লাছ পরবো।
চছ শিকদার বলেন, শুনতে পাইছি অরা এইবার আমাগো ভোটব্যাংক হিন্দুভাইগো বাড়ি থিকা বাইর হইতে দিবো না, এইবার ট্যাকা পয়সা দিয়া তাগো আটকাইয়া রাখবো, তাতে না পারলে কাটারাইফেলের ভয় দেখাইবো। তোমাগো কাম হইবো তাগো ঠিক মতো পলিং ইস্টিশনে লইয়া যাওন। তাগো বুঝাইতে হইবো তোমরা আছো, হিন্দুভাইগো কোনো ভয় নাই। একটা ভোটও নষ্ট করন যাইবো না; একটা ভোটের দাম কোটি টাকা।
জঝ আহমদ বলেন, সাবধানে কাজ করবা; অগো দল থিকা যেই ক্যাডাররা আসছে তাদের উপর চোখ রাখবা; য্যান্ স্যাবোটেজ না করতে পারে।
কয়েক ঘণ্টা ধরে এরকম আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক আলোচনা হয়; তারা নির্বাচনকে অবাধ নিরপেক্ষ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করেন।
একটা দেশে কতগুলো গণতান্ত্রিক রাজবংশ আছে, তা দেখেই বোঝা যায় ওই দ্যাশে পলিটিক্স আর ড্যামোক্রেসির কন্ডিশন কতোখানি সুপারফাইন। আমরা মূর্খ মানুষ, ইতর মানুষ, গরিব জনগণ, চড়ালের চাঁড়াল, বেশি কিছু জানি না, তবে এই কথাটা আমাদের মনে হইতেছে।
যেই দ্যাশে যতো বেশি রাজবংশ সেই দ্যাশে ততো বেশি ড্যামোক্রেসি। এই কথাটাও আমাদের মনে হইতেছে। এই কথাটা আগে অন্য কোনো মানুষজনের মনে হয়েছে কি না আমরা জানি না; তবে আমাদের মনে হচ্ছে।
যেই দ্যাশে রাজবংশগুলি যতো বেশি একে অন্যরে পুঙ্গির ভাই হৌরের পো সমন্ধির পুত আর আর প্রিয় আদরের নামে ডাকে, সেই দ্যাশে গণতন্ত্র তত বেশি বিশুদ্ধ ততো বেশি পারফেক্ট।
আমাগো দ্যাশে ড্যামোক্রেসি যেমন বেশি তেমনি পারফেক্ট।
আমাদের দেশে খালি চারখানা রাজবংশ নাই; দেশে আরো অনেক ছেঁড়াফাড়া ভাঙাচোরা চ্যাপ্টা ছ্যাচালাগা কানা আতুর লুলা ধ্বজভঙ্গ রাজবংশ আছে।
দেশ ছোটো হইতে পারে, কিন্তু রাজবংশের অভাব নাই। দ্যাশ গরিব হইতে পারে, কিন্তু ড্যামোক্রেসির ঘাটতি নেই।
সেই সব রাজবংশের কথা বলা হয় নাই।
আমরা গরিব মানুষ, সাধারণ জনগণ, ইতর সাধারণ, দিন আনি দিন খাই, কোনো কোনো দিন আনতে পারি না খাইতেও পাই না, আমাদের গায়েগতরে গোস্ত নাই, মাথায় ঘিলু নাই; কতো রাজবংশের নাম মুখস্থ রাখবো? কত রাজপুরুষের নাম মাথায় রাখুম? রাজপুরুষরা তো চারদিকে পায়খানার পোকার মতো কিলবিল করেন। এমন হইতে পারে তাগো কথা একেবারেই মনেই আসে নাই, আবার এমনও হতে পারে যে তাদের কথা খুবই মনে পড়ছে, মিনিটের জন্যেও ভুলি নাই, কিন্তু বলনের দরকার বোধ করি নাই। বলে কী লাভ, সময় নষ্ট হইতো। আমাগো চোখে ওইগুলি আজকাল পকেটমাইর ছিচকা চোরের সমান হয়ে গেছে, আমরা দেশের মানুষজন ওইগুলিরে আর গণায় ধরি না।
ওইগুলি টিকে আছে মাঝেমইধ্যে ছোটোখাটো চুরিচামারি ছিনতাই করার জইন্যে। দেশে একটু আধটু চুরিচামারি ছিনতাই না থাকলে কোনো মজা থাকে না। ওইগুলি আমাদের মনে মজা দেয়।
অনেকগুলি রাজবংশ আছে, যেগুলির অফিসই নাই, ওই বংশের রাজপুরুষ তার বেডরুমে বসেই স্ত্রী (একবচনবিহুবচন) আর দুই চারজন গোমস্তা নিয়ে বংশ চালান। ব্যবসা মন্দ হয় না।
অনেকগুলি রাজবংশ আছে, যেগুলির অফিসে কবর, আর কবরে মাজার তৈরি হয়েছে। দেশে কবর মাজারের দাম অনেক। কবর আর মাজার দেখলে লোকজন দাঁড়ায়, জিয়ারত করে, দুইচারটা পয়সা দেয়। ওই রাজবংশগুলির রাজপুরুষেরা কবরে মাজারে দাঁড়িয়ে দোয়াদরুদ পড়েন। ব্যবসা মন্দ হয় না।
মহান আল্লাতাল্লার রাজত্ব স্থাপনের জন্যে এখন দ্যাশে তিন চাইর শো রাজবংশ আছে। আল্লাতাল্লা আর তোক পাইল না। তাগো কাম শুক্রুবারে শুক্রুবারে শহরগুলিরে ময়লা করা। তাগো পায়খানা প্যাশাব কুলুপে শহর ভইর্যা যায়। মনে হয় আল্লাতাল্লাও তাগো চায় না। আমরা তো চাই-ই না।
এই আলমক্কিমদিনি আলবাগদাদি আলতেহেরানি রাজবংশগুলির ইবনে সৌদ ইবনে ফয়সল ইবনে পুটিমারা ইবনে কুচিয়ামারা বায়েতুল্লা রুহুল্লাদের প্রত্যেকের জীবন জবজবে ইতিহাসে ভরা, তাতে পরিচ্ছেদের পর পরিচ্ছেদ, তাতে অনেক চুরিচামারি বাটপারি, বলে শেষ করা যায় না; মানুষরে ঠকাইতে ঠকাইতে তারা আল্লারেও ঠকাইতেছেন বলে মনে হচ্ছে। আমরা মানুষরা ঠকি, তিনিও যে ঠকেন এইটাই আমাদের কেমন কেমন ধান্ধা ধান্ধা লাগে।
ইবনে পুঁটিমারা রাজবংশের কথাই একটু বলি।
এই মহারাজ একদা এক শহরে এক অফিসে এক রকমের পিয়ন আছিলেন। স্বভাবটা তাঁর ভালো ছিলো না–এগো স্বভাব কোনোদিনই ভালো না; সিকি আধুলির ওপর তার চোখ পড়ে থাকতো; একবার পিয়ন সাহেব অফিসের দশ হাজার টাকা (দশ হাজার! এখন মাসে আয় তাঁর দশ কোটি) মেরে পুঁটিমারা পালিয়ে যান, তারপর তারে গুতিয়ে গুতিয়ে জেলে ঢুকোনো হয়। জেল থেকে বেরোনোর দশ বারো বছর পর তিনি ইবনে পুঁটিমারারূপে দেখা দেন।
সমস্ত প্রশংসা তারই প্রাপ্য।
এই মক্কিমদিনি তেহেরানি বাগদাদি পলিটিশিয়ানদের চলতি নাম পির (আমরা শুনতে পাই এই বিরাট কথাটার আসল অর্থ নাকি বুড়া; তাহলে কেমন হইলো?); তারা ইহকাল পরকাল সবকাল জুড়ে পলিটিক্স করেন, পরকাল দেখিয়ে ইহকালে পাজেরো টাওয়ার নারী আর আর জিনিশ করেন। পুঁটিমারা এখন এক প্রকাণ্ড পির, তার মেষ আছে কয়েক লাখ। মেষ আর কি, আমরাই; মেষ আর আমাদের মধ্যে পার্থক্য কী। আমাগো কোটি কোটি ভেড়ার দ্যাশে কয়েক লাখ অবশ্য বেশি না, তবে শুনতে বেশি লাগে। মেষেরও বুদ্ধিবিচার আছে, আমাগো নাই; যদি থাকতো তাহলে কি ওই পিয়নের পাল্লায় পড়ি? পাজেরো হাঁকাই তাঁর বাড়ির দিকে? না, তিনি আর পিয়ন নন; তিনি ইবনে পুঁটিমারা, আলমব্ধি পলিটিশিয়ান।
মেষদের নিকট থেকে তিনি লাউডগা কচুর লতি শাপলা মুরগি মোরগ ছাগল গরু বাছুর বলদ দশ বিশ একশো পাঁচশো টাকার নোট গুণে গুণে নিচ্ছিলেন, তাদের পানসে খিচুড়ি খাওয়াচ্ছিলেন; ব্যবসা বেশ জমে উঠছিলো। আমাদের দেশে পাঁচ দশ বছর পর পর (বিশেষ করে যখন কোনো বড়ো ক্যাডার দেশ দখল করে) এমন একটা দেখা দেয়, জমিয়ে ব্যবসা করে, তারপর আরেকটা দেখা দেয়, আগেরটার ব্যবসা কমে, নতুনটার ব্যবসা জমে।
এমন সময় খোজারাজবংশের সম্রাট বাবর দেখা দেন। বড়ো ক্যাডাররা ধর্মের ঝান্ডা উড়াতে পছন্দ করেন, বাবর ধর্মের ঝান্ডায় দেশের সব ছাদ ভরে ফেলেন। বাবর খুঁজে পান পুঁটিমারাকে; এবং তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করেন একনম্বর রিলিজিয়াস পলিটিশিয়ান হিশেবে। বাবরের এইটা এক বড়ো কীর্তি।
বাবর তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, হুজুর, আমি আপনার দোয়া চাই। কীভাবে আপনার দোয়া আমি পাইতে পারি? আপনার দোয়া নিয়া আমি আগাইতে চাই।
পুঁটিমারা বলেন, নিয়মিত আমার দরগায় আসিবেন।
বাবর বলেন, আমি আসবো, হেলিকপ্টারে উড়ে আসবো; আমরা সঙ্গে জেনারেলরা সেক্রেটারিরা এডিশনাল সেক্রেটারিরা ব্যাংকের চেয়ারম্যানরা মেয়ররা পলিটিশিয়ানরা স্মাগলাররা আর যা যা আছে তারা পাজেরো নিশান টয়োটা মার্সিডিস চালিয়ে আসবে। আপনি দোয়া করবেন।
পুঁটিমারা বলেন, তাহলে অবশ্যই আমি দোয়া করিব।
বাবর বলেন, আমি এর থেকেও বেশি সেবা করতে চাই, তা কীভাবে করতে পারি? আপনার দোয়া নিয়া আমি মরন পর্যন্ত রুল করতে চাই।
পুঁটিমারা বলেন, আমার পুত্ররা তাহা আপনাকে বলিবে।
পুঁটিমারার চার বিবি আর অজস্র পুত্র; পুত্ররা সবাই বুদ্ধিমান।
একপুত্র বলে, পিতা স্বপ্নে দেখেছেন তিনি এইখানে একটি পবিত্র প্যালেস বানাইতেছেন। এই প্যালেস ইসলামের প্যালেস, এইটা বানাইলে সওয়াবের শেষ থাকবে না।
বাবর বলেন, তা অবশ্যই বানানো হবে, ছয় মাসেই হবে। প্যালেস ছাড়া দেশের উন্নতি নাই, ধর্মের উন্নতি নাই।
আরেক পুত্র বলে, বেহেস্তের আদলে আমরা একটি হাউজিং সোসাইটি করেছি, ওই হাউজিং সোসাইটির নাম জান্নাতুল ফেরদৌস। তার জন্যে ঢাকা শহরে দশ বিঘা জমি লাগবে।
বাবর বলেন, জমি পাবেন, আমরা জান্নাত চাই।
তার পাশেই মেয়র দাঁড়িয়ে ছিলেন; তিনি বলেন, স্যার, একটাকা দাম দিলে আইন রক্ষা পাবে।
বাবর বলেন, ওই টাকাটা অফিসে বাঁধিয়ে রাখবেন।
আরেক পুত্র বলেন, পিতা স্বপ্ন দেখেছেন আল্লার রহমতে দেশে অনেক তেল পাওয়া যাবে, তাই দশটি অয়েল ট্যাংকার কেনার জন্যে লোন চাই। বেহেস্তেও ট্যাংকার লাগবে।
বাবর দুইটা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দিকে তাকান।
চেয়ারম্যান দুটি বলেন, এই সপ্তায়ই একশো কোটি টাকা দেয়া হবে।
এইভাবে তারা ধর্ম রাজনীতি অর্থনীতির সমন্বয় সাধন করেন। আমাদের ধর্ম কোনো সংকীর্ণ জিনিশ নয়, তা সর্বাঙ্গীন জীবনব্যবস্থা।
কিন্তু বাবরকে খোঁয়াড়ে ঢোকানোর পর ইবনে পুঁটিমারা বলেন, বাবর একটা খবিশ আছিলো, জেনাখোর আছিলো, সে হাবিয়া দোজগে যাইবে।
বাবর খোয়াড় থেকে বেরিয়ে বলে, পুঁটিমারা একটা শয়তান, আস্ত ইলিশ, সে আমার থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়েছিলো, সে ব্ল্যাকমার্কেট স্মাগলিং করতো; মদের ব্যবসা করতো। তারে আমি ছেড়ে দিলাম। এইবার আমি আসল পির ধরলাম, এইবার থেকে আমার পির ইবনে কুচিয়ামারা।
এই ধর্মীয় রাজনীতি দেখতে আমাদের বেশ লাগে।
এক সময় কাচিহাতুড়ির রাজবংশে আমাগো দ্যাশ ভরে গিয়েছিলো; আমরা গরিবরা মনে করেছিলাম আমাদের দিন আসলো। কিন্তু আমাগো দিন আর আসলো না, মনে হয় আমাদের দিন চিরকালের জইন্যে শ্যাষ হলো। কাচি দিয়ে অবশেষে পুচিয়ে পুচিয়ে নিজেদের গলা কাটলাম, হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে পিটিয়ে নিজেদের মাথা আর কপাল ভাঙলাম। অথচ কতো স্বপ্ন ছিলো আমাদের; কত স্বপ্ন দেখিয়েছিলো আমাদের সেই সব রাজবংশ–মার্ক্সীয় রাজবংশ, লেনিনীয় রাজবংশ, মাওরাজবংশ; সেগুলো ভেঙেচুরে হলো মার্ক্সীয়-আব্দুল রাজবংশ, মার্ক্সীয়-করিম রাজবংশ, মার্ক্সীয়-জব্বর রাজবংশ, লেনিনীয়-মোল্লা রাজবংশ, লেনিনীয়-খা রাজবংশ, লেনিনীয়-শেখ রাজবংশ, মাও-চৌধুরী রাজবংশ, মাও–কাজি রাজবংশ, মাও-সলিমদ্দি রাজবংশ; এইরূপ গণ্ডায় গণ্ডায় কুড়িতে কুড়িতে রাজবংশ। তারা গলা কাটতে কাটতে, ছেলেপেলেদের মরনের দিকে ঠেলে দিতে দিতে, তারপর ভাঙতে ভাঙতে, তারপর আরো ভাঙতে ভাঙতে, চুরমার হ’তে হ’তে তারপর বড়ো ক্যাডারদের পা ধরতে ধরতে এখন তারা বড়ো ক্যাডারদের নোংরা বুটে পরিণত হয়েছেন। কিছু রাজপুরুষ অবশ্য পেরিয়ে গেছেন সবাইকে; তারা ছেলেপেলেদের শিখিয়েছিলেন সমাধান করো ধনীগুলোকে, একবারে সমাধান করে ফেলল, দেশে বিপ্লব ঘইটা যাইবে, দেশে চাষাগরিবের রাজত্ব আসবে, চাষা রাজা হবে কামলা রাজা হবে। তাদের কথায় ছেলেপেলেগুলো সমাধান হয়ে গেলো, শূন্য হয়ে গেলো লাশ হয়ে গেলো হাড় হয়ে গেলো, হাজার হাজার ছেলেকে আমরা খুঁজে পেলাম না, কিন্তু রাজবংশের বড়ো বড়ো রাজপুরুষেরা ধনী হয়ে গেলেন।
তাগো সব গল্প আর বলতে চাই না, দুই একটা ছোটগল্প এইখানে বলা যায়।
লেনিনীয়-খাঁ রাজবংশের বড়ো কাজ ছিলো মস্কো গিয়ে রোগের ফ্রি ট্রিটমেন্ট করানো। তাঁদের সর্দিকাশি হইলে, ছেলেমেয়েবউদের জ্বরজারি হলে অ্যারোফ্লোট জাহাজে উঠে তারা মস্কো চলে যেতেন, তাগো পয়সা লাগতো না; বিনাপয়সায় চিকিৎসা কইর্যা সুস্থ হয়ে ফিরে আসতেন। তারা ভালো ক্লিনিক পাইছিলেন, কিন্তু আমরা গরিবরা তা পাই নাই।
মস্কোর ক্লিনিকে শ্যাষ ট্রিটমেন্ট করতে যান ওই রাজবংশের একনম্বর পুরুষ কমরেড আলি আহাম্মদ।
অ্যারোফ্লোট জাহাজে উঠেই তিনি ঘুমিয়ে পড়েন; ঘুমের ভেতরে স্বপ্ন দেখেন যে এক অলি আউলিয়া তারে বলতেছেন তিরিশ বছর ধইর্যা আল্লারে না মাননের জইন্যেই তাঁর এই রোগ হইছে। এই রোগের নাম কাফেরি রোগ। আল্লারে না মানলে রোগ হইবোই। তার কাম হইবো মস্কো নাইম্যাই তোবা করন, আল্লার কাছে কান্দন; তাহলে তিনি মাফ কইরা দিবেন, তিনি বেঁচে যাবেন, ট্রিটমেন্ট লাগবে না, এইভাবেই ভালো হয়ে যাবেন।
ঘুম থেকে জেগে কমরেড আলি আহাম্মদ দোয়াদরুদ পড়তে থাকেন। তিরিশ বচ্ছরেও তিনি এইসব ভোলেন নাই।
মস্কোতে হাসপাতালে নেয়ার পর কমরেড আলি আহাম্মদ প্রথম যে-কথা বলেন, তা হচ্ছে, আমি তোবা করুম, মাফ চামু।
ডাক্তার তাকে কাটাছিড়ার জইন্যে নিতে চায়, কিন্তু তিনি বলেন, আমি তোবা করুম, মাফ চামু।
ডাক্তার কিছু বুঝতে পারে না; তার সঙ্গীরা খুব অবাক হন।
তাঁর এক সঙ্গী বলেন, কমরেড আলি আহাম্মদ ভাই, আপনের এখন অপারেশন দরকার; নাইলে বাচবেন না।
কমরেড আলি আহাম্মদ বলেন, আমি তোবা করুম। আল্লারে না মাইন্যা পাপ করছি, আমি মাফ চামু।
তাঁর সঙ্গী বলেন, কমরেড আলি আহাম্মদ ভাই, ক্লাসস্ট্রাগেল শ্যাষ হয় নাই, আপনাকে বাঁচতে হইবো, কার্ল মার্ক্স বলছেন আল্লা হচ্ছে গরিবগো জইন্যে তৈরি করা আফিম, ধনীরা ওইটা তৈরি কইর্যা গরিবগো খাওয়াইতেছে। আমরা গরিবগো একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
কমরেড আলি আহাম্মদ বলেন, আমি তোবা করুম, আল্লার কাছে মাফ চামু। আমারে আর ক্লাসস্ট্রাগল শুনাইও না, আমি তোবা করুম।
তিনি অপারেশন থিয়েটারে যেতে রাজি হন না।
কিন্তু কে তোবা করাইবো? একজন মওলানা দরকার তোবা করানোর জইন্যে। মস্কো শহর মওলানা কই? তবে একেবারে নাই, তা না; শহর ঘেঁটে একজন মওলানা নিয়ে আসা হয় তার জন্যে।
ওই মওলানার কাছে কমরেড আলি আহাম্মদ তোবা করেন। তোবা করনের পর তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহে…রাজেউন)।
কমরেড আলি আহাম্মদ যখন অ্যারোফ্লেটে করে ফিরছিলেন তখন আমরা খবর পাই ওই দেশে আর সাম্যবাদ নাই; ওই দেশের রাজারা মাফ চেয়ে সাম্যবাদ ছেড়ে আবার। ধনীবাদ গ্রহণ করেছেন।
কমরেড আলি আহাম্মদের সঙ্গে ওই দ্যাশও তোবা করছে; মার্ক্স লেনিন স্ট্যালিনও তোবা করছে। জয়, ধনীদের জয়; দুনিয়ার ধনী এক হইছে।
শক্তির উৎসবাদীদের যখন আমরা ফালাই দিলাম, তখন আমরা যখন ঘরে ফিরে আসছিলাম, খুব একটা আন্দোলন করছি বলে যখন খুব সুখ পাইতেছিলাম, তখন শুনতে পাইলাম ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট ডিফল্টার পাঁচ হাজার কোটি টাকার মালিক আবদুল মালেকের দালানে খুব গোলমাল হইতেছে।
গোলমাল হইতেছে হোক, তাতে আমাগো কি? এতো বড়ো একটা ফালানের ঘটনার পর ছোটোখাটো এক-আধটা গোলমাল তো হবেই।
খুব গোলমাল হইতেছে, বোমা ফাটতেছে, গুলি হইতেছে। ব্যাপারটা কি? আমরা কি একটু খবর লইতে পারি না? খবর লইয়া জানলাম মাও-সলিমদ্দি রাজবংশ অ্যাকশন করছে; ছোটোখাটো একটা বিপ্লব শুরু কইরা দিছে। আমরা খুশি হইলাম, আবদুল মালেকের শিক্ষা দরকার। ব্যাংক থিকা ট্যাকা নিয়া আর ফিরত দেয় নাই, খালি ট্যাকা বানাইতেছে।
পরে শুনলাম সলিমদ্দি আবদুল মালেককে সেলুলারে বলেছেন, অইটা কিছু না, ভয় পাইয়েন না।
মালেক বলেন, আমার ত ভয় লাগতেছে।
সলিমদ্দি বলেন, আপনের আরো বিপদ আছিলো, আরেক গ্রুপ আপনেরে সরাই দিতে চাইছিলো, আমি বাঁচাই দিলাম। ইউ আর নাউ ওয়ান হান্ড্রেড পার্সেন্ট সেফ, ডোন্ট বি অ্যাফ্রেইড; উই আর উইথ ইউ।
মালেক বলেন, আমি আপনের কাছে গ্রেটফুল, আপনে আমারে বাঁচান, আপনের যা লাগবো আমি দিমু।
সলিমদ্দি বলেন, ক্লাসস্ট্রাগেলের জইন্যে উই নিড সাম মানি, আপনের পাঁচ হাজার কোটি আছে বইল্যা শোনতেছি, কোটি দশেক পাঁচটার মইধ্যে পাঠাই দেন। আপনের কোনো ভয় নাই।
মালেক বলেন, আমি নিজেই নিয়া আসতেছি।
সলিমদ্দি বলেন, একটা নতুন পাজেরোও আমাদের দরকার ক্লাসস্ট্রাগেলের জইন্যে, নতুন একটা নিশান পাজেরো নিয়ে আসবেন।
সলিমদ্দি এখন নিশান পাজেরোতে চড়ে ক্লাসস্ট্রাগেল করছেন। ক্লাসস্ট্রাগেল অনেকেই করতেছেন, তাদের উন্নতি হইতেছে।
এইবার সব দলের মুখেই রাহুর গ্রাসের দাগ; মনে হচ্ছে সকলের মুখই রাহু চুষে চুষে কালো করে দিয়েছে।
জনগণমন রাজবংশের মহাজননেত্রী খুবই চেষ্টা করছেন হাসি হাসি থাকতে, কিন্তু আমরা তার হাসির ভেতরে কী যেনো দেখতে পাই।
শক্তির উৎসবাদী রাজবংশের মহাদেশনেত্রী হাসতেই ভুলে গেছেন, তাঁর বিউটিশিয়ানরা দেশে ফিরে গেছে বলে হয়তো, হাসতে গিয়ে তিনি রেগে উঠছেন।
রাজাকার রাজবংশের আলি গোলাম কোনো দিন হাসেন না, হাসলে তার ভেতরের হায়েনাটি বেরিয়ে পড়ে, তাই এইবারও হাসেন না।
খোজাগণতান্ত্রিক রাজবংশের মহাজননেতা খোঁয়াড়ে, তার হাসার কথা না; শুনি তিনি মাঝেমাঝে খোঁয়াড় ভিজিয়ে কাঁদেন, আল্লারে ডাকেন।
আমাদের রাজবংশগুলি সভার পর সভা করছে, বৈঠকের পর বৈঠক করছে, দেশের গরিব মানুষদের ঘুমাতে দিচ্ছে না।
মহাজননেত্রীর সাথে বৈঠকে বসেছেন জনগণমন রাজবংশের প্রধান পুরুষেরা আবদুর রহমান, কলিমউদ্দিন মৃধা, নিজামউদ্দিন আহমদ, রজ্জব আলি, আবদুল হাই, হাজেরা আলি। তাদের মুখে একই সাথে আশা ও উদ্বেগ থমকে আছে; শরীরে ক্লান্তিও প্রচুর, খুবই খাটছেন তাঁরা, দৌড়োদৌড়ি করছেন দেশ জুড়ে, থামার সময় পাচ্ছেন না, ঘুমানোর সময় পাচ্ছেন না। যেনো তারা সবাই দড়ির ওপর দিয়ে হাটছেন, আগেরবার হাঁটতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন, এইবার পার হতেই হবে, পা চেপে হাঁটছেন, নইলে পড়ে যাবেন গভীর অতল গিরিখাতে যেখানে বাঘ হায়েনার পাল অপেক্ষা করে আছে। দাঁতনখ খিঁচিয়ে, তলিয়ে যাবেন ভয়ঙ্কর খরস্রোতা নদীতে যেখানে বিকট হাঁ করে অপেক্ষা করে আছে ঝাঁকে ঝাঁকে কুমির হাঙ্গর। জনগণ কি তাদের দিকে এইবার একটু মুখ তুলে চাইবে না? জনগণ, প্রিয় জনগণ, কি এতো নিষ্ঠুর হবে? মনে হচ্ছে এইবার জনগণ মুখ তুলে চাইবে, তারা ওইগুলিরে দেখেছে, অনেক বছর ধরে দেখেছে; এইবার কি একবারের জন্যেও দয়া করে তাঁদের দিকে চাইবে না?
জনগণের কী আছে দেখা ছাড়া, তারা তো দেখার জন্যেই জনগণ হয়েছে, পামরজনতা হয়েছে; তাদের তো দেখতেই হবে–একবার এদের, আরেকবার তাদের, আরেকবার ওদের। কিন্তু জনগণ থাকবে জনগণ।
মহাজননেত্রী বলেন, আল্লার রহমতে কি এইবার আমাদের অবস্থা আগের থিকা ভাল না? কি মনে হইতেছে আপনেগো, কতোখানি আগাইলেন?
তিনি সকলের মুখের দিকে তাকান; মুখগুলো দেখে তার ভালোই মনে হয়।
রাজপুরুষ আবদুর রহমান বলেন, আমরা ত যা করনের কিছুই বাকি রাখতেছি না, এখন সব আল্লা আর জনগণের হাতে, আল্লায় যদি মুখ তুইল্যা চায়, জনগণ যদি মুখ তুইল্যা চায় তাইলে আমরা পাওয়ারে আসবো।
মহাজননেত্রী জিজ্ঞেস করেন, যেইগুলির সঙ্গে প্যাক্ট করতেছি সেইগুলি আবার বিট্রে করবো না ত?
নিজামউদ্দিন আহমদ বলেন, বিট্রে করনের পসিবিলিটি ত সব সময়ই আছে, আমাগো দ্যাশে বিট্রে করনই অনেকটা পলিটিক্স, তবে এইবার বিট্রে কইর্যা তাগো কোনো সুবিধা হইবো না।
মহাজননেত্রী জিজ্ঞেস করেন, মনোয়ার হোসেন মোল্লারে আপনাদের কি মনে হয়, সে কি শক্তির উৎসআলাগো সঙ্গে হাত মিলাইতে পারে?
রজ্জব আলি বলেন, তার কোনো উপায় নাই, তাগো ন্যাতারে যারা চাইর পাঁচ বছর আটকাইয়া রাখছে তাগো লগে মনোয়ার হোসেন মোল্লার যাওনের উপায় নাই, খালি আমরা পাওয়ারে আসলেই ওগো ন্যাতার বাইরে আসনের একটা উপায় হইতে পারে এইটা সে বোঝে।
কলিমউদ্দিন মৃধা বলেন, আমরা পাওয়ারে আসলে মনোয়ার হোসেন মোল্লারে প্রথম দিনেই মিনিস্টার করুম, এইটা ত তারে আপনে নিজেই বইল্যাই দিছেন, শক্তির উৎসআলারা তারে মন্ত্রী করবো না। তারে যারা মন্ত্রী করবো তাগো সঙ্গে সে থাকবোই। আমরা ছাড়া তার মন্ত্রী হওনের উপায় নাই।
নিজামউদ্দিন আহমদ বলেন, মনোয়ার হোসেন মোল্লা সঙ্গে আমার সব সময়ই কথা হয়, মহাজননেত্রীর সঙ্গেও হয়, তারে আর অবিশ্বাস করতে পারি না। অবশ্য পলিটিক্সে বিশ্বাস বইল্যা কোনো কথা নাই, এইটা বুঝি আমরা জিতলে সে আমাগো সঙ্গেই থাকবো।
মহাজননেত্রী বলেন, এইবার জিততেই হইবো, চাচা।
নিজামউদ্দিন আহমদ বলেন, এইবার না জিতলে বোঝতে হইবো আল্লাতাল্লা আমাগো ছাইরা দিছে, জনগণ আমাগো ছাইরা দিছে; বঙ্গভবন আমাগো লিগা নাই।
তিনি বড়ো একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, সারা ঘর শীতে জমে উঠতে চায়।
মহাজননেত্রী কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে চুপ করে থেকে বলেন, খোজাবংশের জননেতার স্ত্রী গুলবদন বেগমরে ধইরা রাখতে পারা যাইবো তো?
রাজপুরুষ আবদুল হাইয়ের দায়িত্ব হচ্ছে ওই ডাইনিকে ধরে রাখা; ডাইনিকে ধরে রাখতে রাখতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন আবদুল হাই, মাথা প্রায় খারাপ হওয়ার উপক্রম হয়েছে তার।
আবদুল হাই বলেন, অই মাইয়ালোকটার উপর তার স্বামীই ভরসা করতে পারে না, অন্যের কথা না বলাই ভাল। আমি তারে ধইরা রাখনের চ্যাষ্টা চালাই যাইতেছি। এইটা ত সবাই জানে তাগো জননেতা স্ত্রীরে বিশ্বাস করে না, বিশ্বাস করে বেগম মর্জিনা আবদুল্লা আর মনোয়াররে। তার স্বামী যেদিকে যাইবো অই মাইয়ালোকটা তার উল্টা দিকে যাইব।
মহাজননেত্রী জানতে চান, রাজাকারবংশের খবর কি?
রজ্জব আলি বলেন, অরা আমাগো লগেই আছে, তবে গোপনে গোপনে অগো দুই একজন উৎসআলাগো লগেও প্যাক্ট করনের চ্যাষ্টা করতেছে। আসলে অগো ওই দিকেই ত টান বেশি, ঠেইক্যা আমাগো লগে আন্দোলন করছে।
মহাজননেত্রী জানতে চান, অরা কি এইবার আগের থিকাও বেশি সিট পাইবো মন হয়?
আবদুর রহমান বলেন, পবিত্র ইসলাম ধর্ম যেমন কইর্যা আবার জাইগ্যা ওঠছে, দ্যাশ ভইর্যা যত মসজিদ ওঠতেছে, রোজা নামাজ পড়া হইতেছে, তাতে ত মনে হয় অগো অবস্থা আগের থিকা ভালই হইবো। অরা তাই ভাবে।
মহাজননেত্রী বলেন, আমরাও ত ইসলামের কিছু বাকি রাখি নাই, বিসমিল্লা আলহামদুলিল্লা আমরাও ত কম বলতেছি না, আমরাও ত নামাজ রোজা করতেছি, কয়দিন আগে ওমরা কইর্যা আসলাম, আবার ওমরা করতে যাবো। মুসলমান ভাইরা কি এইটা খেয়াল করতেছে না?
হাজেরা আলি বলেন, আমাদের অসুবিধা হইছে আমরা মাথায় কাপড় দিলে নামাজ পড়লে হজে গেলে ইন্টেলেকচুয়াল ভাইরা বলে আমরা ফ্যানাটিক হইয়া যাইতেছি, রিএকশনারি হইয়া যাইতেছি, আবার মাথায় কাপড় না দিলে নামাজ না পড়লে হজে না গেলে জনগণ কয় আমরা কাফের। এই দুইটারে মিলাইতে আমাদের জান শ্যাষ হইয়া যাইতেছে।
মহাজননেত্রী বলেন, ইন্টেলেকচুয়ালগো কথা ছাইরা দ্যান, দ্যাশ তাগো চিনে না, তাগো কথা শোনে না, ইন্টেলেকচুয়ালগো কথায় বাক্সে ভোট পড়ে না। তারা যা কয় কউক, তারা আমাগো লগেই থাকবো, তাগো যাওনের জায়গা নাই। শহীদ মিনার ঘুইরা তাগো এইখানে আসতে হবেই।
নিজামউদ্দিন আহমদ বলেন, শক্তির উত্সআলার যদি আবার আসে, তাইলে দ্যাশে থাকন যাইবো না; পাওয়ারে আইসাই আমাগো জ্যালে ঢুকাইবো, জামিনও পাওন যাইবো না।
এইরূপ আরো আলোচনা হয় তাঁদের মধ্যে।
শক্তির উৎসবাদী রাজবংশ তীব্র চেষ্টা করে চলছে রাজাকার রাজবংশকে সাথে আনার চেষ্টা চালাচ্ছে খোজারাজবংশের রাজপুরুষদের নিজেদের দলে ভাগিয়ে আনতে। বেশ কয়েকটি এসে গেছে, তাদের ভাগাতে হয় নি, এমনিই আইসা গেছে বলে আমরা শোনতেছি, তবে সেইগুলির পায়ের নিচে কাদা ছাড়া মাটি নেই; উৎসবাদীরা খুবই উদ্বিগ্ন, তাদের পায়ের নিচেও তারা পিছল পিছল বোধ করছে। মহাদেশনেত্রী শুনতে পাচ্ছি ঘুমাতে পারছেন না, তাঁর কাছেও কেউ যেতে পারছে না; তিনি আদেশ দিয়ে দিয়েছেন রাজপুরুষদের যেভাবেই হোক পাওয়ারে যাওয়ার ব্যবস্থা করার। অধ্যক্ষ রুস্তম আলি পন্টু ও অন্যান্য রাজপুরুষেরা খেটে খেটে আর গোপন গোপন আলাপে বসতে বসতে পাগল হয়ে যাইতেছেন। অধ্যক্ষ রুস্তম আলি পন্টু বেশ কয়েকবার মহাদেশনেত্রীর সাথে বৈঠকে বসার আবেদন জানিয়েছেন, মহাদেশনেত্রী সময় দিতে পারেন নি; অবেশেষে সাত দিন পর মহাদেশনেত্রী একদিন বৈঠকে আসার সময় দিতে পারেন। আমরা লোকের মুখে শুনতে পাই সেইখানে নানা রকম গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়।
মহাদেশনেত্রী বেঠকে বসে চারদিকে তাকান; রাজপুরুষেরা তখন মাথা নিচু করে থাকেন; তাঁর সামনে মাথা উঁচু করে বসা রাজবংশে নেই।
অধ্যক্ষ রুস্তম আলি পন্টু বলেন, হে মাননীয়া মহাদেশনেত্রী, আমরা প্রায় সব কিছুই গোছই আনছি, আমরা পাওয়ারে যাবো।
মহাদেশনেত্রী গম্ভীরভাবে বলেন, পাওয়ারে যেতেই হইবে, আর কারও হাতে পাওয়ার দেওয়া যাবে না। অগো হাতে গেলে দ্যাশটারে অরা বেইচ্যা দিবে।
অবজেনারেল কেরামতউদ্দিন উত্তেজিত হয়ে উঠতে চান; তিনি বলেন, অরা অলরেডি কান্ট্রি সেল করার কন্সপিরেসি শুরু করেছে, উই মাস্ট ফয়েল দেয়ার। কন্সপিরেসি, জনগণরে এইটা জানাই দিতে হবে।
সোলায়মান হাওলাদার বলেন, জনগণ এইটা ভালোভাবেই জানে, এইজন্যেই জনগণ অগো এতো বছর চায় নাই, এই বছর অরা জনগণরে ব্লাফ দিতেছে, জনগণরে এইটা বুঝাই দিতে হবে।
মহাদেশনেত্রী জিজ্ঞেস করেন, কততখানি প্রসিড করলেন সেই কথা বলেন। পাওয়ার আমাদের, অরা পাওয়ারে বসবে সেইটা সহজ করবো না।
রুস্তম আলি পন্টু বলেন, অনেকখানি প্রসিড করছি ম্যাডাম, আমাগো কন্ডিশন দিন দিন ভাল হইতেছে, নানা রাজবংশের সঙ্গে প্যাক্ট হইতেছে। পাওয়ারে আমরা যাবই, সব ব্যবস্থা করে আনছি।
মহাদেশনেত্রী বলেন, সব কিছু স্পষ্ট করে বলেন।
রুস্তম আলি পন্টু বলেন, মওলানা রহমত আলি ভিস্তির সঙ্গে ভালোই কথা হইতেছে, অগো আমরা বুঝাইতে পারতেছি যে অরাও ইসলাম চায় আমরাও ইসলাম চাই, অরা আর আমরা একই, ভাইয়ে ভাইয়ে অবনিবনা হইতে পারে, তবে ভাই ভাইর থিকা দূরে যাইতে পারে না, আমাগো এক লগে থাকন দরকার; কাফেরগো লগে তাগো যাওন ঠিক না।
মহাদেশনেত্রী বলেন, তারে আমি নিজেই ফোন করছিলাম, পাই নাই; মনে হয় আমার সঙ্গে কথা বলতে চায় না।
রেগে ওঠেন জেনারেল কেরামত, এইটা বেয়াদবি, এইটা টলারেট করা যায় না, তাকে শিক্ষা দিতে হবে। অগো উঠাইলো কারা, আমরা না থাকলে অরা থাকতো কই? দেশেই থাকতে পারতো না। অরা বেইমানি করতেছে।
রুস্তম আলি পল্ট বলেন, রহমত আলি ভিস্তি আইজকাইল বেয়াদবি করতেছে, তাকে শিখাই দিমু সময় আসুক; এখন সইজ্য করা ছাড়া উপায় নাই। পলিটিক্সে বেইমানি ত নতুন কিছু না, আর অরা ত দ্যাশের সঙ্গেই বেইমানি করেছিল।
ডঃ কদম রসুল বলেন, এইবার সবাই আল্লাতাল্লার নাম বেশি লইছে, এতে অগো মনে হচ্ছে অগোই ভোট দিবো। আমরাও অগো থিকা আল্লার নাম কম লই না, আমিও আমার কন্সটিটিয়েন্সিতে কয়টা ওয়াজ মাহফিল কইরা আসলাম, দুইটা মসজিদ তুইল্যা আসলাম। আল্লারসুল খালি অগো না।
মোহাম্মদ কুদ্দুস চৌধুরী বলেন, পিপল অগো ফ্যানাটিক মনে করে, অগো চেহারা দেখলেই ভয় পায়, আমাদের মনে করে খাঁটি ইসলামি, পিপল ফ্যানাটিক পছন্দ করে না, ধার্মিক পছন্দ করে।
সোলায়মান হাওলাদার বলেন, খোজাবংশের একটা ফ্যাকশন আমাদের সঙ্গে আছে, সব সময়ই কথা হইতেছে, আর গুলবদন বেগম সাহেবার টান আমাদের দিকেই; আমার আগের ফ্রেইন্ডদের সাথেও কথা চলছে, মাও-লেনিনঅলাদের অনেকেই গোপনে আমাদের সঙ্গে থাকবে।
মহাদেশনেত্রী বলেন, আরও ভাল করে কাজ করেন, আমার কি করতে হবে বলেন, ম্যাজরিটি আসন আমাদের পাইতেই হবে, অগো পাওয়ার দেওয়া যায় না; অরা দেশটা বেইচা দিবে।
ব্যারিস্টার কুদরতে খুদা বলেন, ম্যাজরিটি আসন আমরাই পাবো, অরা যতই নাচুক পিপল অগো ভোট দিবে না। পিপল অগো চিনে, পিপল জানে দে আর ইন্ডিয়ান এজেন্ট, পিপল ভেরি মাচ ইন্ডিয়ার অ্যাগেইনস্টে।
তাঁরা অনেক সময় ধরে এইরূপ গণতান্ত্রিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক আলোচনা করেন, এবং নানা রকম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
“রাজনীতিবিদগণ” উপন্যাস বা কাব্যগ্রন্থ সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ