(চার)

রাতেই খবর নিয়ে জানা যায় কয়েকটি লোক মোঃ হামিদ মিয়ার বাসায় বেশ কয়েকবার তার খোঁজ করেছে; তাদের চোখমুখ দেখে ও কথা শুনে ভালো লাগে নি। হামিদ মিয়ার স্ত্রী ছমিরন বেগমের, তাদের ফিসফিস কথাও তার কানে এসেছে; এবং তিনি খুব উদ্বেগে আছেন। হামিদ মিয়া কোথায় আছেন, তা দেখার জন্যে ছেলেকে নিয়ে তিনি নিজেই চলে এসেছেন স্পাইদের সাথে। তিনি এখন একজন নেতার স্ত্রী, তার উদ্বেগ আর রাজনীতিবোধও নেতার স্ত্রীর মতোই তাঁর কিশোর ছেলেটি ও তিনি এই প্রথম পাজেরোতে উঠেছেন, তাঁদের বাসা পর্যন্ত পাজেরো যেতে পারে নি বলে কষ্ট পেয়েছেন ছমিরন বেগম ও তার ছেলেটি–লোকরা দেকতে পাইল না তারা কোন গাড়িতে চরছে; কিন্তু পাজেরোতে বসে রাস্তা দেখতে তাদের ভালো লাগে, পথের মানুষগুলোকে ময়লা পোকামাকড় মনে হয়, এবং নিজামউদ্দিন আহমদের বাড়িতে ঢোকার সময় তাদের মনে একরকম অলৌকিক আবেগ জন্মে, যার ভার বহন করা তাদের পক্ষে বেশ কঠিন হয়, তাঁদের বক্ষে বেদনা অপার হয়ে ওঠে।

নিজামউদ্দিন আহমদ ও মোহাম্মদ আবদুল হাই খুব সম্মানের সাথে মোঃ হামিদ মিয়ার স্ত্রী ছমিরন বেগম ও তাদের পুত্রটিকে ড্রয়িংরুমে এনে বসান, বডিগার্ডরা তাঁদের ঘিরে থাকে, বডিগার্ডদের দেখতে ভালো লাগে ছমিরন বেগমের ভেতর থেকে তাদের। জন্যে প্রচুর খাবার আসে। আবার অলৌকিক আনন্দের আর কোন স্বর্গ থেকে ভেসে এসে যেনো তাদের শরীরে ভর করে।

নিজামউদ্দিন আহমদ বলেন, ভাবী সাহেব, ভাল মন্দ খবরাদি কন; আপনেরা ক্যামুন আছেন? আপনেগো লিগা আমরা চিন্তায় আছি।

ছমিরন বেগম বেশ সপ্রতিভ রাজনীতিবিদের স্ত্রী, আয়তনে মোঃ হামিদ মিয়ার দ্বিগুণ, তিনিই আমলাপ্লীর নেত্রী হলে ভালো মানাতো।

ছমিরন বেগম বলেন, উনি ন্যাতা হওনের পর থিকা ত দিনরাইত চিন্তার মইদ্যেই আছি, ভাইজান, অহন আবার নতুন চিন্তা বাড়ছে।

আবদুল হাই জিজ্ঞেস করেন, বুঝাইয়া কন, ভাবীসাব, নতুন চিন্তার কী হইল?

ছমিরন বেগম বলেন, লোকজন ওনারে মাজেমইদ্যেই বিচরাইতে আইতাছে, তাগো চোখমোখ দেইখ্যা ভাল ঠ্যাকতাছে না, হেরা আবার ফিসফিস কইর‍্যাও কতা কয়, ক্যামুন কইর‍্যা চায়।

স্ত্রীর বর্ণনা শুনে মোঃ হামিদ মিয়া বিচলিত বোধ করেন।

নিজামউদ্দিন আহমদ বলেন, ভাবীসাব, সেইজইন্যেই ত হামিদ মিয়াভাইরে আমরা লইয়া আসলাম, তারে অরা সরাই দিতে চায়।

শুনে চিৎকার করে ওঠেন ছমিরন বেগম।

আবদুল হাই বলেন, ভাবীসাব, চিন্তা করবেন না, পলিটিক্সে অনেক রিক্স আবার অনেক মজা, হামিদ ভাই এখন থেকে আমাগো লগেই থাকবো, বডিগার্ড ছাড়া বাইর হইবো না, হামিদ ভাই কই আছে ভুলেও কারে কইবেন না।

ছমিরন বেগম বলেন, না, ভাইজান, সেই কথা কি কইতে পারি, তয় একটু দেইখ্যা শুইন্যা রাইখেন।

নিজামউদ্দিন আহমদ দশ হাজার টাকার একটি বান্ডিল তুলে দেন ছমিরন বেগমের হাতে, এবং বলেন, ভাবীসাব, এইটা রাখেন, কখন কী লাগবো বলন ত যায় না, দুই এক দিন আরেকটা বান্ডিল পাঠামু।

আবদুল হাই বলেন, ভাবীসাব, হামিদ ভাই ন্যাশনাল লিডার হইয়া গ্যাছেন, তার গলার আওয়াজে তোপখানায় আগুন ধইরা যায়, আমরা পাওয়ারে আসলে হামিদ ভাই মন্ত্রী নাইলে অ্যামবাসাডার হইবো।

ছমিরন বেগম জিজ্ঞেস করেন, এই দুইবার মইদ্যে কোন বড়, ভাইজান?

মোঃ হামিদ মিয়া বলেন, দুইডাই বড়, দাকতে পাইবা।

নিজামউদ্দিন বলেন, তয় অ্যামব্যাসাডার হইলে ভাবীরে ইংরাজি কইতে হইব।

ছমিরন বেগম বলেন, না, ভাইজান, এই বয়সে আর ইংরাজি কইতে পারুম না, শরম লাগবো, তয় হিন্দি কইতে পারি দুই একটা।

অধ্যক্ষ রুস্তম আলি পন্টুর পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় নি বলেই সব ভণ্ডুল হয়ে গেছে; কিন্তু তিনি রুখে দাঁড়িয়ে টিকিয়ে দিয়েছেন রাজবংশটিকে, না রুখে না দাঁড়ালে নিজেকে টেকানো যায় না, ভেঙে পড়তে দেন নি মহাদেশনেত্রীকে, তাই তিনি এখনো নিজেকে ভাবছেন দেশের প্রধান মন্ত্রী–ভেবে সুখে আছেন, এটা রাজবংশের জন্যে একটি প্লাস পয়েন্ট; তিনি ভেঙে পড়লেই সব কিছু মাইনাস হয়ে যেতো। তার একটু অসুবিধা হচ্ছে যে তিনি জেগেই সিংহাসনে বসতে পারছেন না, বেরোলেই একশোটা যানবাহন আর সেপাই তাঁকে ঘিরে থাকছে না, নামলেই দুশোটি মাথা তার পদধূলি নিচ্ছে না। কয়েক মাস এটা তাকে সহ্য করতে হবে, উপায় নেই। বংশের রাজপুরুষদের নিয়ে অধ্যক্ষ রুস্তম আলি পন্টু সব কিছু গুছিয়ে তুলছেন; যেমন অন্যান্য বংশের রাজপুরুষরাও দিনরাত গোছাচ্ছেন; গোছাতে গোছাতে তারা সময় পাচ্ছেন না; পত্নীদের সাথে দেখা করার দরকার তো অনেক আগেই ফুরিয়ে গেছে, এমনকি উপপত্নীদের সাথেও দেখা করার মতো সময় করে উঠতে পারছেন না (এটা শুধু ভাগ্যবানদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য)। নিষ্পাপ দেবদূতরা দেশ শাসন করছেন, সব কিছু অবাধ নিরপেক্ষ জাতিসংঘভাবে হবে; ওই অফসেটে ছাপা ব্যাপারগুলো দেখবেন সোনালি ডানার দেবদূতরা, নির্বাচন কমিশনের পাকপবিত্র অপাপবিদ্ধ ফেরেশতারা, আন্তর্জাতিক সত্যদর্শীরা; কিন্তু ওই সবে রাজনীতিবিদদের চলে না, তাদের দেখতে হবে তাদের ব্যাপার।

নিম্নলিখিত জিনিশগুলিন তাগো দ্যাখতে হইবো, নাইলে চলবে না :

(১) ক্যাডারভাইরা ঠিক আছে কি না, তাগো যন্ত্রপাতি ঠিক আছে কি না, তাগো আরো যন্ত্রপাতি লাগবে কি না, আরো নতুন ক্যাডারভাই লাগবে কি না; ক্যাডারভাইরা অন্য রাজবংশে চইল্যা যাইতে চাইছে কি না–এইটা খারাপ লক্ষণ, এমুন হইলে বোঝতে হইবো ওই রাজবংশই ক্ষ্যামতায় আসবো; খালি ঢাকা শহরের ক্যাডারভাইদের ঠিক রাখলে চলবো না, দ্যাশের প্রত্যেইক গ্রাম, প্রত্যেইক ইউনিয়ন, প্রত্যেইক থানার ক্যাডারভাইদের ঠিক রাকতে হইবো; ক্যাডারভাইরা হইল দলের মূলশক্তি;

(২) ইনভারসিটির হলগুলি দখলে আছে কি না; ইনভারসিটি দখলে থাকলে আল্লার রহমতে দ্যাশ দখল করনে অসুবিধা হইবো না; ইনভারসিটিই বাংলাদ্যাশ, এইটা দখলে রাখতে হইবো; এইজইেন্যে দুই চাইরটা লাশ পড়লেও ক্ষ্যাতি নাই;

(৩) নিজেগো রাজবংশ হইতে সুবিধাবাদী রাজপুরুষরা অন্য রাজবংশে চলে যাইতেছে কি না, চলে যাওনের পথ খোঁজতেছে কি না এইটা দাকতে হইবো;

(৪) অন্য রাজবংশ হইতে ভাল ক্যান্ডিডেট ভাগাইয়া আনন যায় কি না, কারে কারে ভাগাইয়া আনলে লাব হইবো; কয়টা জেনারেল ব্রিগেডিয়ার মেজর কর্নেল দলে যোগ দিতে চাইছে, কয়টা সেক্রেটারি দলে আসতে চাইছে, কয়টা ব্যাংক ডিফলটার যোগ দিতে চাইছে, অন্য দলের কয়টা প্রাক্তন মন্ত্রী এমপি মেয়র দলে যোগ দিতে চাইছে, কয়টা নামকরা রাজাকার দলে যোগ দিতে চাইছে, কয়টা রজাকার ভাগাইয়া আনন যাইবো, রাজাকারগো অবস্থা আইজকাইল ভাল;

(৫) কন্ট্রিবিউটাররা ঠিক মতো চান্দা দিতেছে কি না; কে কে চান্দা দেওন বন্ধ করছে, আর কে কে নতুন চান্দা দিতেছে; নতুন কন্ট্রিবিউটার আসলে বোঝতে হইবো দল এইবার জিতবো; চান্দা বেশি কইর‍্যা তোলতে হইবো, বেশি চান্দা পাইলে বোঝতে হইবো দল জিতবো;

 (৬) দ্যাকতে হইবো ব্যাংক ডিফলটারগুলিন ঠিক আছে কি না; তারা মোটা টাকা দিতেছে কি না, আর কয় কোটি কইর‍্যা তাগো থিকা তোলন যাইব; তারা কোন বংশের দিকে ঝোঁকছে সেইটা দ্যাকতে হইবো, তারা যেই দিকে ঝোঁকবো সেই দিকই ক্ষ্যামতায় আসবো; দাকতে হইব তাগো কারখানায় ক্যাডারভাই পাঠাইতে হইব কি না;

(৭) ক্যান্ডিডেটরা কে কয় কোটি টাকা দিতে পারবো সেইটা দ্যাকতে হইবো, স্মাগলার পাইলে বোঝতে হইব ভাল মালপানি হাতে আছে, পাঁচদশ কোটি খসাইতে কষ্ট হইব না, তাগো ক্যান্ডিডেট করনই ভাল হইব; আর দাকতে হইব তারা নির্বাচনরে অবাধ নিরপেক্ষ রাইখ্যা ভোটার ভাগাইতে পারবো কি না;

(৮) ডিছি, ওছি, এছপি, টিএনওগুলিরে ঠিক রাকতে হইবে; অরা ঠিক থাকলে অবাধে ভোটের বাক্স বোঝাই হইবো, নিরপেক্ষতা রক্ষা পাইবো;

(৯) আরও বিবিধ রকম জিনিশ দ্যাকতে হইবো, সময় বুইঝ্যা কাম করতে হইবো।

আমরা জনগণরা যা শুনতে পাই, খবরের কাগজে মুখের যে-চেহারা দেখতে পাই–আগে তাদের চেহারা কী সুন্দর লাগতো, মনে হতো ফুলবনে রাজকুমাররা গান গাইতেছেন–তাতে বুঝতে পারি, আমাদের বোঝায় ভুলও হতে পারে, যে অধ্যক্ষ রুস্তম আলি পন্টু, জেনারেল কেরামতউদ্দিন, সোলায়মান হাওলাদার, মোহাম্মদ কুদ্দুস চৌধুরী, লিয়াকত আলি মিয়া, ব্যারিস্টার কুদরতে খুদা, ছয়ফুর চাকলাদার, ডঃ কদম রসুল এবং শক্তির উৎসবাদী রাজবংশের আর আর অনেক রাজপুরুষের মাংসে আর রক্তে একটু একটু জ্বালা ধরে আছে, ওই জ্বালাকে তারা পাত্তা দিচ্ছেন না, কিন্তু জ্বালায় একটু একটু মাথা ধরছে; জ্বালাটা হচ্ছে ওই জনগণমন রাজবংশের শয়তানগুলো, যেগুলো তিনশো বছরেও ক্ষমতায় যেতে পারবে না, তাদের বিচার চায়; তারা না কি কোটি কোটি টাকা চুরি করেছেন তার জন্যে জেলে পাঠাতে চায়। ওইগুলো বেশি বেড়ে গেছে, দেখে নিতে হবে ওইগুলোকে; ওরা শুধু রাজপুরুষদেরই বিচার চাচ্ছে না, এমনকি মহাদেশনেত্রীরও বিচার চাচ্ছে, কী বেয়াদবি, ওইগুলোকে দেখে নিতে হবে, বড়ো বেশি বেড়ে গেছে, মহাদেশনেত্রী সকল আইনের ওপরে, সকল বিধানের ওপরে, সকল সংবিধানের ওপরে, তার আবার বিচার কী। শুধু ওইগুলো নয়, জ্বালাটা আরো বেড়ে যায় যখন দেখেন খোজারাজবংশ আর রাজাকার রাজবংশও ওইগুলির সঙ্গে গলা মিলিয়েছে; সব শয়তান সুযোগ বুঝে ফেরেশতা হয়ে উঠেছে, এক রা ধরেছে। তবে এসব চুলরে পাত্তা দিলে রাজনীতিবিদদের চলে না, এই সব চুলে কবে পেটের পোলা আটকে রাখতে পেরেছে; এই সব পাত্তা না দেয়াও রাজনীতি, আবার দুর্নীতি নিয়ে দিনরাত গলাবাজি করাও রাজনীতি। রাজনীতি করতে গেলে একটা ইশু দরকার। জ্বলন্ত ইশু লইয়া হট্টগোল ভাঙ্গনচোরন জ্বালানপোড়ান করলে জনগণ পাগল হইয়া ভোট দেয়, মনে করে। ইশুআলারা দুই হাতে টাইন্যা দুনিয়াতে ভেস্ত নামাইতে যাইতেছে। তারাও কি কয়েক বছর আগে ই করেন নি খোজারাজবংশের দুর্নীতিকে, সম্রাট বাবরের লাম্পট্যকে গলা ফুলিয়ে দুর্নীতি, দুর্নীতি, লাম্পট্য, লাম্পট্য গর্জনে দেশরে তোলপাড় করেন নি, দ্যাশরে মাতাইয়া তোলেন নাই? খোজারাজবংশের বাবর মুঘলকে কি সাভারের কাদায় ডোবা মইষের মতো ধাক্কাইয়া ধাক্কাইয়া ঢোকান নাই খোয়াড়ে? দুর্নীতিবাজদের লম্বা লম্বা তালিকা কি তারা ছেপে দেন নি; খবরের কাগজে তারা বড়ো বড়ো করে কি ব্যাংক ডিফলটারদের নাম ঝুলাইয়া দ্যান নাই? কারো নামে ৫০০ কোটি, কারো নামে ৬৭৫ কোটি, কারো নামে ৯০০ কোটি, কারো নামে ২৫ কোটি? ঘোষণা কি দেন নি যে ওই ডিফলটারদের খোয়াড়ে পাঠানো হবে, টাকাগুলো উঠিয়ে দেশটিকে আমেরিকা করে তোলা হবে? তারপর তারা কয়টারে জ্যালে পাঠাইছেন? বরং ডিফলটাররা যাতে খোয়াড়ে না যায়, তাদের চর্বি যাতে আরো বাড়ে, চামড়া মসৃণ থাকে, ব্যাংকে ঢুইক্যা আরো ধান খাইতে পারে, ক্ষেতে ক্ষেতে গাভী পাইলেই পাল দিতে পারে, সেটা কি তাঁদের দেখতে হয় নি? এর জন্যে তারা বেশ পেয়েছেন কোটি কোটি টাকা ঢুকেছে তাগো স্ত্রীগো বিদেশি অ্যাকাউন্টে, আল্লা যখন চান তখন তাঁর বান্দাগো এভাবেই দেন এইজইন্যেই পরম করুণাময় আল্লাতালায় ইমান দরকার; আল্লা তাঁদের দিয়েছেন, না নিয়ে তারা কী করতে পারেন?

ডঃ কদম রসুল ভাইর জন্যে আমরা জনগণরা কাঁদবো না হাসবো, বুঝতে পারি না। অতো বড়ো একটা অইধ্যাপক আছিলেন, তারপর অ্যাতনা বড়ো একটা পলিটিশিয়ান হইলেন, দ্যাশরে ধইন্য করলেন। ওই ডঃ কদম রসুল সাহেবকে হারামজাদারা শ্লোগান দিয়ে তিন দিনের জন্যে হাজতে ঢুকিয়ে দিলো, কিন্তু আটকে রাখতে পারে নি; পারবে কেননা, সব ঠিকঠাক করে রাখেন নি? প্রাইমারি ইস্কুল হইতে চোখবান্ধা মাইয়ালোকটা পর্যন্ত? ওই কানা মাইয়ালোকটা কাগো? সব ঠিকঠাক আছে, তাগো আটকাইয়া রাখনের কোনো উপায় নাই। পাঁচ মিনিটে বের হওয়ার ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে বাট্রাকসমিতির প্রেডিডেন্ট, ইটের ভাটার মালিক, টাউটগুলিরে বসাই দিছেন; এখন সবাই আগাম নিয়ে রাখছেন, তাগো আটকায় কে? আর সেই জাগায় তো বইসা আছেন তাগোই লোক, আলহজ আলফাজ মাঝিরে তো সেইখানেই বসাই রাখা হইছে, এত দিন পর তরে রাজা কইর‍্যা দেয়া হয়েছে, খামখা রাখন হয় নাই, তিনি কলকাঠি লাড়বেন। দরকার হইলে এমন কলকাঠি লাড়াইবেন যে সব কিছু পইড়া যাইবো, নাদিরশারা দলে দলে দেখা দিবো, মঙ্গোলিয়ার ক্যাডাররা ছুটে আসবো।

ডঃ কদম রসুল মুক্তি পাওয়ার পর গাঁদাফুলে ঢেকে তাকে ছোড়োখালো শেক মজিবের মতো বের করে নিয়ে এলাম আমরা (এই দ্যাশে জাল থেকে যে-ই বাইর হয় সে-ই ছোডোখাডো শেক মজিবের মতো বাইর হয়, সে-ই সবার মডেল), অর্থাৎ আমরা যারা শক্তির উৎসবাদী রাজবংশের; শহরের দশটা না বিশটা রাস্তা বন্ধ করে। দিলাম, এর পর শহরের আর থাকে কী, মহাদেশনেত্রী আর তাঁর অমর সেনাপতি আর কদম রসুল আর অধ্যক্ষ রুস্তম আলি পল্টর নামে শ্লোগান দিয়ে আমরা শহর ফাটিয়ে। জানিয়ে দিলাম যে তাদের আটকে রাখার মতো কোনো খোয়াড় নেই; আর এমন বেয়াদবি করলে সব কিছু উল্টেপাল্টে দেয়া হবে। তাঁহাদের গায়ে একটা ফুলের টোকাও দেয়া চলবে না।

ডঃ কদম রসুল তাঁর মন্ত্রণালয়ে পরিণত হয়েছিলেন কিংবদন্তিতে (তবে তিনি একা কিংবদন্তি নন, বাঙলাদেশি গিনিজ রেকর্ডসে আরো বহু সোনার নাম সোনার কালিতে ছাপা আছে)।

তিনি ছিলেন মাঝারি আর নিম্ন আমলাগুলোর নিরন্তর আলাপের আনন্দ।

স্যারেরা খান, খাওনের জন্যইতো স্যারেরা আসেন, কিন্তু এই বাস্টার্ডের পোর খাওন দেইখ্যা তাজ্জব হইয়া যাই, বোয়াল মাছের মতো খালি গিলে।

বাস্টার্ডটা বিশ বচ্ছর কলেজের মাস্টার আছিলো, কিন্তু খাওনে গিলনে চোরা পলিটিশিয়ানগুলিরে ছারাইয়া গেছে। মাস্টারগুলির খিদা বেশি, আগে তো খাওনের সুযোগ পায় নাই, পরেও পাইবো না।

বউর নামে তিনশো কোটি, মাইয়ার নামে একশো কোটি, পোলাগো নামে দুইশো কোটি; দুইটা মিস্ট্রেসের নামে দুই কোটি। গাজিপুরে দুইশো একর, সাভারে একশো একর। আর কয় দিন সময় পাইলে সবগুলি রেলগাড়ি, ইস্টিশন আর জংশনই খাইয়া ফেলবো।

ডঃ কদম রসুল সব খাওয়ার আগেই জনগণ তাদের ফেলে দেয়; অনেকের মতো কদম রসুল কয়েক দিন পালিয়ে থাকেন।

ডঃ কদম রসুলের মুক্তি উপলক্ষে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাস্তাভাঙা সংবর্ধনার পর জেনারেল। কেরামতউদ্দিন বিশেষ পার্টির আয়োজন করেছেন গাজিপুর রেস্টহাউজে। এখান থেকে তিনি তাঁর কলকারখানা ব্যবসাবাণিজ্য গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজগুলো দেখেন, এবং আরো অনেক কিছু দেখেন নিবিড় অন্তরঙ্গ উন্মুক্তভাবে; এবং বিশেষ রাজনীতি আলোচনা হয় এখানেই। পার্টিতে এসেছেন প্রধান রাজপুরুষেরা।

একটু পানাহার একটু নৃত্যগীত আর প্রচুর রাজনীতি পার্টির উদ্দেশ্য। বিবেচনা আলোচনার প্রধান বিষয় টাকাপয়সাগুলো–ওই যে পাঁচ বছরে সামান্য কয়টা পয়সা তারা করেছেন, যতোটা ইচ্ছে ছিলো ততোটা পারেন নি, ওই ময়লা সিকি আধলি আর ছেঁড়া এক টাকার নোটের ওপর শকুনের মতো চোখ পড়ে আছে শয়তানগো, তাগো মাঝেমইধ্যে খোয়াড়ে ঢোকানোর চেষ্টা চলছে, এই ব্যাপারটি ক্যামনে ট্যাকেল করা যায়, কীভাবে ওগুলোকে দেখিয়ে আর শিখিয়ে দেয়া যায়, তার ফর্মুলা বের করার জন্যেই এই পার্টি। ফর্মুলাটা বের করতে না পারলে দেশে গণতন্ত্র বিপন্ন হয়ে পড়বে, আসলে বিপন্ন হইয়া পড়ছে, দেশ বিক্রি হইয়া যাইবো হিন্দুগো কাছে; অবশ্য পাকিস্থানি মুসলমান ভাইগো কাছে হইলে অন্য কথা, তবে সেই বেচাকেনাটা তারা করবেন।

বাগানের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে লতা আর পুষ্পঘেরা একটি কুঞ্জের নাম লাইলি। তাঁরা শীততাপনিয়ন্ত্রণ যেমন পছন্দ করেন, লতাপুষ্পও পছন্দ করেন; এই কালে নেচারকে যারা ভালোবাসে না, তারা মানুষ না, তারা পৃথিবীর ওজনলেয়ার ফাটাইয়া দিতে চায়। জেনারেল কেরামতই লাইলি নামটি রেখেছেন; এবং গুল্মের অক্ষরে কুঞ্জের প্রবেশ পথেই নামটিকে পুষ্পিত গুস্মিত করে রেখেছেন তিনি। এটি জেনারেল কেরামতের কুঞ্জপানশালা।

সবাই অল্প অল্প পানাচ্ছেন, আর গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করছেন।

ডঃ কদম রসুলের শরীরটা র‍্যাদনা করছে, একটু জ্বরজ্বরও লাগছে; সংবর্ধনার ফলে জ্বরটা একটু কমেছে, গাঁদা ফুলের রসে ব্যথাটাও একটু কমেছে, স্কচে আরেকটু কমছে; তবু তিনি জ্বরটা আর ব্যাদনাটা ভুলতে পারছেন না। তাঁর ভয় লাগছে রাত বাড়লেই হয়তো কেউ তাকে গুতোতে পিষতে ডলতে আসবে।

ডঃ কদম রসুল প্রথম মুখ খোলেন, বলেন, আমার শ্রদ্ধেয় ন্যাতারা, রেসপেক্টেবল ভাইরা, আপনেগো কাছে আমি এভার গ্রেটফুল অল্প সময়ের মইধ্যে আমারে বাইর কইর‍্যা আনছেন বইল্যা, কবর যাওন পর্যন্ত গ্রেটফুল থাকবো; দেরি হইলে আমার অসুবিধা হইতো, মইরা যাইতাম।

অধ্যক্ষ রুস্তম আলি পন্টু বলেন, ডাক্তার রসুল ভাই, সব আমাগো খুইল্যা বলেন; আপনের শরিলটা খারাপ দেখাইতেছে, অমন দ্যাহটা তিন দিনেই কাহিল হইয়া পড়ছে।

ডঃ কদম রসুল বলেন, বলতে শরম লাগতেছে, কিন্তু না বইল্যাও পারতেছি না, আপনেগো কাছে বলনই লাগবে।

জেনারেল কেরামতউদ্দিন চিৎকার করে ওঠেন, আই আন্ডারস্ট্যান্ড ডক্টর কদম রসুল, দি বাস্টার্ডস মাস্ট হ্যাভ বিটেন ইউ ইন কাস্টডি, দি বাস্টার্ডস্ আর দি অ্যাজেন্টস অফ দি নগনআলাজ, উই মাস্ট টিচ দেম এ গুড লেসন হোয়েন উই গো ব্যাক টু পাওয়ার। উই মাস্ট গো টু পাওয়ার।

ডঃ কদম রসুল বলেন, রাইত হইলেই দুই তিনটা পুলিশ আইসা ল্যাংটা করাইয়া আমারে ছ্যাচতো, ডলতো, পাথর দিয়া গুতাইতো; রক্ত বাইর হইত না, হাড়ি ভাঙতো কিন্তু ব্যাদনায় ফাঁইট্যা যাইতাম। এতো দিন মন্ত্রী আছিলাম, তার জইন্যো একটু মাইন্যগইন্যও করে নাই। তার বদলে গালি দিয়া বলতো, আয় শালা, মন্ত্রী হওন দ্যাখাই।

ব্যারিস্টার কুদরতে খুদা বলেন, বাট উই আর ভিআইপিজ।

মোহাম্মদ কুদ্দুস চৌধুরী বলেন, দি পুলিস ফোর্স ইজ এ প্যাক অব ব্যান্ডিটস, হার্টলেস কিলার্স অ্যান্ড রেপিস্ট, কয় দিন আগেও আমাদের সালামের পর সালাম দিতো, স্যালুট করতো, কয় দিন পর আবারও দিবে, কিন্তু এখন পাইলেই দে উইল বিট আস লাইক এনিথিং, দে আর সেডিস্ট।

পানির মতো পান করে চলছেন তাঁরা।

ডঃ কদম রসুল বলেন, আমারে গুতাইয়া, ডইল্যা, আর ছেইচ্যাই ছাড়ে নাই, অছিটা আমার থিকা পঞ্চাশ লাখ নগদ আদায় করছে, আইজ বাইর হইতে না পারলে আরও পঞ্চাশ লাখ দিতে হইত। আমাগো আর অ্যারেস্ট হওন চলবো না, আমাগো ধরনের উদ্দেইশ্য হইছে গুতাইয়া ডইল্যা ট্যাকা বাইর কইর‍্যা নেওন। এই কয় বছরে কয়টাই ট্যাকা করছি, তা লইয়া গ্যালে পলিটিক্স করুম কি দিয়া।

ব্যারিস্টার কুদরতে খুদা বলেন, উই হ্যাভ অলরেডি আন্ডারস্ট্রড ইট অ্যান্ড টেকেন নেসেসারি মিজার, সেইজইন্য আইনগত ব্যবস্থা নিয়াছি, দি কন্সটিটিউশন ইজ ইন আওয়ার ফেভার, সকলের আগাম নিয়া রেখেছি, নোবডি ক্যান টাচ আস অ্যানি মোর।

ছয়ফুর চাকলাদার বলেন, এর পর ধরতে আসলে হাত ছিইর‍্যা ফালামু, আমাগো চিনে নাই। শুয়ারবাচ্চাগো পাছা ফাডাই দিমু, আর আল্লায় মুখ তুইল্যা চাইলে মনে যা আছে তা কইর‍্যা ছারুম।

অধ্যক্ষ রুস্তম আলি পন্টু বলেন, আমাগো দুর্নীতি লইয়া বাড়াবাড়ি করন আর সইজ্য করুম না; কী আর দুর্নীতি করছি আমরা, কয় ট্যাকা বানাইছি? পলিটিক্স করবো আর ট্যাকাপয়সা বানাইবো না এইটা কোন দ্যাশে হয়? আমেরিকায় পলিটিশিয়ান ভাইরা ট্যাকাপয়সা বানায় না? ক্লিনটন ট্যাকা বানায় নাই? নাইলে তাগো চলে ক্যামনে? ইংলন্ডের ভাইরা বানায় না? বিনা পয়সায় ধনীগো ফাইভ ইস্টার হোটেলে থাকে না মাইয়ালোক লইয়া? জাপানের ভাইরা বানায় না? কোরিয়ার ভাইরা বানায় না? পাকিস্থানের ভাইরা বানায় না? ইন্ডিয়ার ভাইরা বানায় না? ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ইটালি, জার্মানির ভাইরা বানায় না? বানাইলে রাজনীতি করুম কি কেলা চুইষ্যা?

সোলায়মান হাওলাদার বলেন, সব মাছেই গু খায় নাম হয় পাংগাশ মাছের; দ্যাশের কোন শালা ট্যাকা বানায় না? দোষ খালি আমাদের, পলিটিশিয়ানগো, য্যান খালি আমরাই শয়তান, অন্যেরা ফ্যারেশতা।

এমন সময় চারটি গায়িকা ও নর্তকী দেখা দেয়। তারা পাতাঘেরা মঞ্চে ওঠে; গায়িকাটি গান গাইতে শুরু করে, নর্তকী তিনটি নাচতে শুরু করে। তাদের কণ্ঠ ও শরীর থেকে রক্তিম সুর ঝরে পড়তে থাকে।

জেনারেল কেরামত বলেন, টেন্ডার ইজ দি নাইট, অ্যান্ড হ্যাঁপলি দি কুইন মুন ইজ অন হার থ্রোন, ইউ গো অন ড্যান্সিং অ্যান্ড সিংগিং বিউটিফুল রোউজেজ।

গায়িকা ও নর্তকীরা মধুর হাসে।

লিয়াকত আলি মিয়া বলেন, দ্যাশটা গরিব, আমাগো চলতে হয় লোনের ট্যাকায়, তাও কয় ট্যাকাই আমরা লোন পাই, চাইর পাঁচ বচ্ছরে আর কয় ট্যাকাই আমরা বানাইতে পারি? রাজীব গান্ধিটারে দ্যাখেন, চ্যাহারা আর হাসিখান দ্যাখলে মনে হয় গীতাপাঠ ছাড়া আর কিছু জানে না; কিন্তু এক বেফোর্স কম্পানির থিকাই খাইছে দুই শো কোটি ডলার, যেই ফাঁইটার বিমান কোনো কামে লাগবো না তাঅই কিনছে পাশশোটা।

সোলায়মান হাওলাদার বলেন, আমাগো চৈদ্দপুরুষেও ওই ট্যাকা স্বপ্নেও দ্যাকতে পারে না; ইন্ডিয়ানরা খায় ইন্ডিয়ানগো মতন।

ছয়ফুর চাকলাদার বলেন, আমাগো পাকিস্থানি ভাইগো আর বইনগোই ধরেন না ক্যান; বেনজির আফা অক্সফোর্ডে না কোন জায়গায় পইর‍্যা আইলেন, বিশ পঁচিশটা বয়ফ্রেন্ডের লগে ঘোমাইলেন, কয়বার প্যাট খালাশ করলেন, কত আন্দোলন করলেন, খাঁটি মুসলমান হইলেন, প্রধান মন্ত্রী হইলেন, তারপর দুই তিনটা বউআলা জারদারিরে বিয়া কইর‍্যা হাজার কোটি বানাইলেন। আমাগো মহাদেশনেত্রী আর কয় ট্যাকা বানাইছেন?

জেনারেল কেরামতউদ্দিন বলেন, ব্যুরোক্র্যাটগুলোর কথাই ধরেন না ভাই, দে আর করাপ্ট টু দি ব্যাক বোউন, অ্যাসিসটেন্ট কমিশনার হয়ে ঢোকার পর থেকে খাইতে থাকে, হোয়েরেভার দে গো দে ডিস্কভার গোল্ড মাইস্, দি ডিসিজ, জয়েন্ট অ্যান্ড এডিশনাল সেক্রেটারিজ, চেয়ারমেন অফ করপোরেশন্স, রাষ্ট্রদূতগুলি, অ্যান্ড সেক্রেটারিজ টাকার পাহাড় বানায়, কিন্তু দোষ হয় পলিটিশিয়ানদের। পলিটিশিয়ানরা কয় বছরই আর চান্স পায়?

কুদ্দুস চৌধুরী, তিন চারটা মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন সচিব, গেলাশ ভরে নিতে নিতে বলেন, কতোটা বলবেন গেলাশে চুমুক দিতে দিতে তা ঠিক করেন, এবং বলেন, জেনারেল কেরামত ভাই যা বলেছেন দ্যাট ইজ ট্র, বাট হি হ্যাঁজ মিস্ড় সাম ভেরি ইমপরটেন্ট পয়েন্ট; আওয়ার ব্রাদার্স ইন দি আর্মড় ফোর্সেস অলসো মেক মাচ মানি, দে মেইক টু মাচ আই শু্যড সে, আমরা তা অডিটও করি না; ব্যুরোক্র্যাটরা কেনো টাকা বানায় তার কজগুলি দেখতে হবে। নাউ এ ডেইজ অল আওয়ার কোটিপতিজ আর স্মাগলারস, অ্যান্ড দি সোকন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টস্ আর থিভস্; অ্যান্ড দে আর অল ইলিটারেট আনএডুকেটেড পিম্প। দে ইভেন ক্যানট স্পেল দি ওয়ার্ড ‘মিলিয়ন’, ইয়েট দে আর মিলিয়নিয়ার্স।

লিয়াকত আলি মিয়া বলেন, আমার কতা কইলেন না ত কুদ্দুস ভাই? স্মাগলিং না। করলে ত আপনেগো কাছে আসতে পারতাম না, পাঁচ দশ কোটি দিতে পারতাম না। স্মাগলিং কামটা অত্যান্ত কঠিন; সবাই পারবো না। ইংরাজি সব বোঝতে পারি নাই, তয় কতাগুলিন ভালই লাগছিলো; মদ খাইয়া ইংরাজি শোনতে আর কইতে ভালই লাগে, মনে হয় নতুন মাইয়ামানুষ লইয়া ফাইভ স্টারে শুইয়া, আছি কুদ্দুস ভাই, আরো কন।

তারপর গায়িকা ও নর্তকীদের দিকে তাকিয়ে বলেন, ও সিংগার ড্যাঞ্চার সিস্টাররা, আমাগো কুলকার্নি হ্যাঁমামালিনি বইনরা একটু চুলি কা নিচে কাহে চুরাকে দিল মেরা ড্যাঞ্চ ধরেন।

নর্তকী তিনটি হেসে কয়েকবার শিনা ঝাঁকুনি দেয়, কয়েকবার পাছা দোলায়।

কুদ্দুস চৌধুরী বলেন, দেশের সোসিও-ইকনমিক ফেনোমেননগুলি দেখতে হবে; উই মাস্ট ফেস রিয়েলিটি। সারা জীবন ফার্স্ট সেকন্ডে হয়ে, ইউনিভার্সিটিতে ফার্স্ট ক্লাশ সেকেন্ড কাশ ফার্স্ট সেকেন্ড হয়ে বিসিএস পাশ করে যে-ছেলেটি ব্যুরোক্র্যাট হলো, তার বেতন কতত? বিশ বছর চাকুরি করার পর সে ক-টাকা জমাতে পারে? একটাকাও না। অথচ সে দেখতে পায় তার সাথে যে-ছেলেটা ফেল করতো, থার্ড ডিভিশন পেয়েছিলো সে মস্তানি করে, ঠিকাদারি করে, স্মাগলিং করে কোটিপতি হয়ে গেছে; আর কোটিপতিটি স্যার, স্যার’ করে কাজগুলি বাগিয়ে নিচ্ছে তারই কাছ থেকে। তখন হি ক্যানট রিমেইন এ সেইন্ট, হি শুড নট রিমেইন অনেস্ট। রাস্তার পাজেরোগুলি কারা দৌড়ায়? গুড স্টুডেন্টস্ ক্যান নেভার ড্রিম অফ এ পাজেরো; নাউ এ ডেইজ অল বিউটিফুল বাক্সম সেক্সি উইমেন অ্যান্ড পাজেরোজ বিলং টু ইলিটারেট রাঙ্কেলস্।

অধ্যক্ষ রুস্তম আলি পন্টু বলেন, সবাই খাইতেছে, কিন্তু স্কেপগোট হইতেছি আমরা। পলিটিশিয়ানরা, আমাগো বদনামে দুনিয়া ছাইয়া যাইতেছে, আমরা পলিটিশিয়ানরা মাইর খাইতেছি, জ্যালে পচতেছি, পোলামাইয়া ইস্ত্রীগো কাছে মোখ দ্যাখাইতে পারতেছি না, আর অন্যরা তখন ফাইভ স্টার হোটেলে ছেমরি লইয়া ডিস্কো নাচতেছে, অন্যের বউরে লইয়া ব্যাংকক সিঙ্গাপুর যাইতেছে।

ছয়ফুর চাকলাদার একটু বেশি পান করেছেন, বা বেশি পান করেন নি, অল্প পান করলেই তার ঠোঁটে গান আসে দেহে নাচ আসে, অধিকাংশই হিন্দি গান হিন্দি নাচ; তিনি একটু নাচ আর গান শুরু করেন; এবং নাচতে নাচতে বলেন, এইর জইন্যে দোষ আমরাগোই, কাউয়ার গোস্ত কাউয়ায় খায় না শোনছি কিন্তু পলিটিশিয়ানরা পলিটিশিয়ানগো গোস্ত দিনরাইত খায়। পাওয়ারে যাওনের লিগা আমরা লাফাইয়া লাফাইয়া অন্যেগো চোর কই; এখন অরা আমরাগো চোর বলছে; এইটা হইছে পলিটিক্স। যদ্দিন পলিটিক্স থাকবো তদ্দিন এইটা থাকবো, নাইলে আমরা পলিটিশিয়ানরা খামু কী কইর‍্যা?

জেনারেল কেরামত বলেন, ঠিকই বলছে ছয়ফুরভাই, উই ডু নট হ্যাভ মেনি ইস ফর পলিটিক্স, সো উই হ্যাভ টু ডিপেন্ড অন আদার্স করাপশন অ্যান্ড রিলিজিয়ন ফর গোয়িং টু পাওয়ার। আমরাও ক্ষমতায় আসনের আগে খোজাবংশের করাপশন নিয়ে শাউট করছি, ব্যাংক ডিফলটারদের নাম পাবলিশ করছি; লেটার অন দে বিকেইম আওয়ার ফ্রেইন্ডস অ্যান্ড মাস্টার্স। আমাদের মহাদেশনেত্রী হ্যাঁজ টোল্ড দি ফাঁইন্যাল টুথ দ্যাট ইন পলিটিক্স নাথিং ইজ ফাঁইন্যাল, ইন পলিটিক্স দ্যায়ার ইজ নো পারম্যানেন্ট ফ্রেইন্ড অর ফো।

আমরা জনগণরাও এইটা বুঝতে পারতেছি। অন্যের করাপশন লইয়া কে চিল্লাপাল্লা করে নাই? পাওয়ারে আইসা কে করাপশন করে নাই? চিল্লাপাল্লা হচ্ছে পলিটিক্স, রাজনীতি। যারা অন্যের করাপশন লইয়া চিল্লাপাল্লা করেন, নিজেদের করাপশন লইয়া অন্যেরা চিল্লাপাল্লা করলে বলেন গণতন্ত্র বিপন্ন, দেশ বেচে দেয়া হচ্ছে, একেবারে বিনা পয়সায় একেবারে পানির দরে ছাইড়া দেয়া হচ্ছে, তারা রাজনীতিবিদ, পলিটিশিয়ান। বহু বচ্ছর আগে জনগণমনবংশ ক্ষমতায় এসেছিলেন, তাঁরা তখন ছিলেন রাজার রাজা, রাজাধিরাজ, সম্রাটের সম্রাট, তখন সদ্য স্বাধীন হইছি, কিন্তু স্বাধীনতার স্বাদ পাইতেছিলাম না, বা এমনভাবে পাচ্ছিলাম যে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিলাম, রগে রগে টান লাগতেছিলো, ছুঁইল্যা যাইতেছিলাম, তাঁরা স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন বলে মানতে বাধ্য করেছিলেন, আমরা মেনে নিয়েছিলাম (পরে অন্যরা মানতে বাধ্য করেছিলেন যে জনগণমনবংশ স্বাধীনতা আনে নি, তারা কলকাতা গিয়ে শুধু তিনতারা হোটেলে ঘুমিয়েছে, সোনাগাছিতে মজা করেছে, হিন্দুমাইয়াগো লইয়া ঢলাঢলি করেছে, মাঝেমইধ্যে রবীন্দ্রনাথের বই খুইল্যা গান গাইছে, আর একজন তো পাকিস্থানে গিয়া পায়ের ওপর পা রাইখ্যা খালি অ্যারিয়োর তামুক টানছে পাইপ ভইর‍্যা, আর চোখে কালা চশমা দিয়া দিনরাইত ইশঠাশ ঠুশঠাশ যুদ্ধ করছে খালি তাগো একনম্বর ফ্রিডম ফাইটার একনম্বর মেজর একটা ঘোষণা দিয়াই সে দ্যাশ স্বাধীন কইর‍্যা ফেলছে, আমরা তাও মেনে নিয়েছিলাম : মানা ছাড়া আমরা জনগণরা কী করতে পারি?), আমরা তাদের দেখলেই মাথা নিচু করে নিজেদের অপরাধ স্বীকার করতাম, আমরা সবাই দল বেঁধে কইলকাতা যাইতে পারি নাই, তাদের আমরা সব ক্ষমতা দিয়ে দিয়েছিলাম; কিন্তু ক্ষমতায় তাদের পেট ভরে নাই।

আমরা আধুরা জনগণ, বেশি কথা বলা আমাদের উচিত না, আমাদের গলায় বেশি কথা সাজে না, গলা আমাদের দড়ি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে রাখা উচিত, আল্লাতাল্লা গফুরের রাহিম সব কথা বলার ক্ষমতা দিছেন শুধু রাজাগো। আমরা তো তারে সব ক্ষমতা দিছিলাম, বাঙলায় ক্যাপিটাল লেটার থাকলে সেটা দিয়েই আমরা জনগণরা ‘তাঁরে’ লিখতাম, যতোটা দেওনের আছিল বাকি রাখি নাই, আরো থাকলে আরো দিতাম, দিনরাইত তাঁর গুণগান গাইতে গলারে অবসর দেই নাই, তিনি বিদেশ থিকা বিদেশির মতো দেশে এসেছিলেন, বিমান থেকে নেমে ট্র্যাকে উঠে তিনি দ্যাশটা দেখে চিনতে পারতেছিলেন না, তার চোখমুখের দিকে তাকিয়ে তা-ই মনে হচ্ছিলো; তিনি কোন ক্ষমতা পেলে সুখ পাবেন বুঝতে পারছিলেন না, রাষ্ট্রপতি হবেন না রাজা হবেন না আবার রাষ্ট্রপতি হবেন না বাদশাহ্ হবেন না সুলতান হবেন না মহারাজ হবেন না সম্রাট হবেন না একলাই সব হবেন না ভাইগ্না ভাইস্তা শালা বোনের জামাই পোলামাইয়ারে দেশটা দিয়ে দেবেন, দেশটারে কয় ভাগে ভাগ করবেন, কয়টা সুবাদার লাগাইবেন, তা ঠিক করতে পারতেছিলেন না; তখন বড়ো ক্যাডাররা দেখা দিলো, শক্তির উত্সবাদী রাজবংশের উৎপত্তি হলো; নতুন কালিতে সব নতুন ইতিহাস লেখা হলো। আমরা ইতিহাস লেখালেখি বড়ো পছন্দ করি, কয়েক বছর পর পর আমরা নতুন কালিতে সব নতুন ইতিহাস লিখি, নতুন নতুন ইতিহাস মুখস্থ করি।

পাওয়ার হচ্ছে আসল কথা; পাওয়ার পেলে করাপশন করতেই হয়। পাওয়ার হচ্ছে দামড়া পুরুষপোলা, সব সময় খাড়া হইয়া আছে, আর করাপশন হইছে পাটক্ষেতে ডেকড়ি মাইয়ালোক; তাই করতেই হয়। হাজার বচ্ছর ধরে করাপশনে থাকতে থাকতে করাপশনরে আমরা খারাপ মনে করি না, পলিটিশিয়ানরা যতোই চিৎকার করুক, আমরা জানি ওইটা হইছে খালি আওয়াজ; যারা করাপশন করে, করতে পারে তাদের আমরা ভক্তিশ্রদ্ধাই করি। আমরা যাগো ছবি বঙ্গভবনে ভঙ্গভবনে বান্ধাইয়া রাখছি তাগো মইধ্যে কে করাপশন করেন নাই? তাই বলে কি আমরা তাগো মায়ের পেট হইতে খালাশ হওনের দিনে আর দুনিয়া থেকে আমাগো কান্দাইয়া যাওনের দিনে ইস্কুলের। পোলাপানরে ছুটি দিয়া খুশি করি না?

পাওয়ার? তা কে চায় না? আমরা হাজার বচ্ছরে পাওয়ার পাই নাই, তাই আমরা সবাই পাওয়ার চাই; আমরা একদল লর্ড ক্লাইভ হইতে চাই, আরেকদল আইউব খা হ’তে চাই; পাওয়ার পাওয়ার পর তাদের ছাড়িয়ে যেতে চাই। ছাড়াবাড়ির খুদির মায় পাওয়ার চায়, ঢালারপাড়ের রকমান পাওয়ার চায়। পাওয়ার পেলে খুদির মার মস্তক ঠিক থাকে না, দিনে পাঁচসাতবার পাগল হয়; রকমানের অণ্ড ফুলে ওঠে, কোষ ফুলে ওঠে, সব জায়গায় পাওয়ার বোধ করে।

ওই যখন বড়ো ক্যাডাররা প্রথমবার আসলো। ক্যাডাররা এসে চাষাভুষাগো বিধিবিধান খোঁচা দিয়ে লাথি মেরে বাতিল করে ক্যাডারগো ধরো মারো ঝোলাও গুতাওগুলি চালু করলো, চাষাভুষার নিয়ম চিৎ হয়ে পড়লো খাড়া হয়ে দেখা দিলো ক্যাডারগোগুলি; চালু করার জন্যে তারা চাষাগো মানুষগোই কামে লাগাইলো। আমরা চাষা চামারকামাররা না খেয়ে পাছা উদলা রেখে তাগো মোটামোটা বেতন দেই, গাড়িবাড়ি ফ্লাগ দেই, তারা আমাগো নিয়ম বাঁচাইবো ব’লে; কিন্তু আমরা কী দেখতে পাইলাম? যা দেখতে পাইলাম, তা বলন যায় না। ক্যাডাররা এসে আমাগো তাগো গোমস্তা বানাইলো, তারা খুশি হয়ে গোমস্তা হইলো। আমি কান্দি মাইয়ার লিগা মাইয়া কান্দে নাঙ্গের লিগা। এইটা আমরা আগেও দেখছি; ক্যাডাররা আইসাই খোঁজে তাগো, আর তাঁরা ফজরবেল ক্যাডারদের ট্রাকের আওয়াজ পাওয়ার পর থেকেই অজু গোশল কুলুপ ও অন্যান্য ক্রিয়াকর্ম সম্পন্ন করে সেলাত আদায় করে কাজের মেয়ের হাতে (বৃদ্ধা স্ত্রী নিদ্রিত) আখের গুড়ের মুড়ির মোয়া আর চা খেয়ে স্যুটকোটটাই পরে নিজের হাতে জুতো পালিশ করে অপেক্ষা করতে থাকেন, কখন ক্যাডাররা নিতে আসবে। কখন জিপের শব্দ পাওয়া যাবে। কখন পাওয়ারে বসাবে, মহামান্য প্রেছিডেন্ট করবে, সর্বশক্তিমান ছিএমএলএ করবে। আমি কান্দি মাইয়ার লিগা মাইয়া কান্দে নাঙ্গের লিগা।

এইটা কি রাজনীতি না? রাজনীতি কি হয় খালি শ্লোগান দিলে আগুন লাগাইলে ভাঙলে চুরলে মিছিল করলে ভোট চাইলে ভোট ডাকাতি করলে? ছৈজদ্দি ব্যাপারী বলে শ্লোগান দিয়ে আগুন লাগিয়ে মিছিল করে ভেঙেচুরে রাজনীতি করতে হলে পোতার ওপর সেইটা থাকতে হয় খাড়াইতে হয় দাঁড়াইতে হয়; আর বড়ো ক্যাডার আসার পর স্যুটকোট ফিলে প্রেছিডেন্ট ছিএমএলএ হওয়ার জন্যে দরকার হচ্ছে–দরকার হচ্ছে পোতা না থাকন সেইটা না থাকন। ইসহাক মওলানা সাব বলেন তাগো সেইটা কাইট্যা নুন ভইর‍্যা দেওয়া হইছে। ছৈজদ্দি ব্যাপারী বলে এগো নাম পোতাছাড়া পলিটিশিয়ান, করনের ইচ্ছা আছে ষোলো আনা কিন্তু খাড়ায় না; ক্যাডাররা বুটের লাখি দিয়ে এগো সিংগাসনে বসিয়ে দেয়, আবার পাছায় লাথি মেরে নামিয়ে দেয়। এতেই তাদের আনন্দ।

দালানের ওপরের আন্ধা মেয়েলোকটা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না, পাগলির মতো খলখল করে হাসে কলকল করে কাঁদে রাস্তায় পড়ে গড়াগড়ি খায় চুল ঘেঁড়ে। পাটের দড়িতে বান্ধা বেতের দাঁড়িপাল্লা এদের মাথার ওপর ঠাশ ঠাশ করে ছিঁড়ে পড়ে; তারা বুঝতে পারে না।

সেই প্রথম বড়ো ক্যাডাররা এসে বড়ো সেইটাছাড়ার বাড়ি জিপ পাঠায়।

সেইটাছাড়া স্যুটকোট পরে প্রস্তুত হয়েই বসে ছিলেন, কয়েক দিন ধরেই বসে ছিলেন, ডাক আসতে একটু সময় লাগে, তারা তখনো খুনাখুনি শেষ করে উঠতে পারে নি, বসে থাকতে থাকতে তার পাছায় বাত ধরে যায়; হঠাৎ একঝক ক্যাডার দরোজা ভেঙে ঢুকছে দেখে তিনি ভয় পেয়ে যান, দৌড়ে গিয়ে বাথরুমে ঢোকেন; কমোডের ওপর বসে পড়েন, কিন্তু কমোডে বসে কী করতে হয় ভুলে যান; এবং উল্টোপাল্টা কাজ করতে থাকেন। একবার লাফিয়ে কমোডের ভেতরে ঢুকে পড়তে চান, কিন্তু মাথায় বাড়ি লেগে আবার কমোডে বসেন; আবার কমোডের ঢাকনার ওপর বসে পড়েন যেমন ছেলেবেলায় পিঁড়িতে বসতেন। ব’সে জীবনে এতো আরাম আর কখনো তিনি পান নি।

তিনি বলেন, কমোড, আমারে রক্ষা করিও, জীবন দান করিও।

কমোড থপথপ শব্দ করতে থাকে।

এক ক্যাডার দরোজায় লাথি মেরে বলে, স্যার, প্লিজ কাম আউট, ডোন্ট বি অ্যাফ্রেইড; আওয়ার লিডার হ্যাঁজ অর্ডার্ড আস টু মেইক ইউ অ্যাভেইলেবল অ্যাট বঙ্গভবন ইন টেন মিনিটস টাইম; হি উইল মেইক ইউ দি প্রেছিডেন্ট অ্যান্ড দি ছিএমএলএ। দ্যাশে ইম্মেডিয়েটলি ড্যামোক্রেসি দরকার, প্লিজ কাম আউট উইদাউট মাচ ডিলে; দি বাথরুম ইজ নট ইয়োর প্রপার প্লেস, বঙ্গভবন কস্ ইউ; আওয়ার ড্যামোক্রেসি ওয়ান্টস্ ইউ।

সেইটাছাড়া বাথরুম থেকে বেরিয়ে ক্যাডারদের স্যালুট দেন।

ক্যাডাররা তাকে কোলে করে জিপে তোলে। সান্ধ্য আইন বুঝে নভেম্বরের হাল্কা কুয়াশা তখন বিব্রতভাবে ছড়িয়ে আছে চারদিকে, পথে কোনো মানুষ নেই, কয়েকটি কুকুর রাজত্ব করছে রাজপথে, ক্যাডাররা তাঁকে জিপে তুলে দেখে বসার জায়গা নেই। তারা তাকে কোলেই তুলে রাখে–বেশ হাল্কাপাতলা জিনিশ, দেশি মুরগির মতো; এবং বঙ্গভবনের ভেতরে ঢুকে প্রধান ক্যাডারের সামনে বাজারের থলের মতো ছুঁড়ে দেয়।

সেইটাছাড়া কোনো মতে দাঁড়িয়ে প্রধান ক্যাডারকে স্যালুট দেন।

প্রধান ক্যাডার বলেন, ইউ শুড নট স্যালুট মি, ইনস্টেড আই শ্যাল স্যালুট ইউ; আই অ্যাম গোয়িং টু মেক ইউ দি প্রেছিডেন্ট অ্যান্ড দি ছিএমএলএ রাইট নাউ। দ্যাশে ড্যামোক্রেসি দরকার, পিপল আর হাংরি ফর ড্যামোক্রেসি, ড্যামোক্রেসি নিড়স্ ইউ ফর দি টাইম বিয়িং।

প্রধান ক্যাডার একটা মারাত্মক স্যালুট মারেন, তাঁর বুটের আঘাতে বঙ্গভবন ভেঙে পড়তে চায়; সেইটাছাড়া স্যালুটের শব্দে ভয় পেয়ে যান।

প্রধান ক্যাডার বলেন, নাউ, ইউ আর দি প্রেছিডেন্ট অ্যান্ড দি ছিএমএলএ। আমি যেভাবে বলবো, সেভাবে আপনি কান্ট্রি রুল করবেন; তাহলে ড্যামোক্রেসি আসতে দেরি হবে না; উই অল বিলিভ ইন ড্যামোক্রেসি, আমরা দ্যাশে ড্যামোক্রেসি এনে ছাড়বো, ড্যামোক্রেসি ছাড়া কান্ট্রি চলতে পারে না।

প্রেসিডিএমএলএ প্রধান ক্যাডারের গোঁফ দেখতে পান, কিন্তু চোখ দেখতে পান না; তার চোখ দেখতে ইচ্ছে করে, কিন্তু সানগ্লাসের সামরিক বেরিয়ার পেরিয়ে ওই অসূর্যম্পশ্য চোখ দুটি তিনি দেখতে পান না।

প্রধান ক্যাডারের কথায় চমকে উঠে তিনি বলেন, ইয়েস, স্যার।

প্রধান ক্যাডার বলেন, ইউ আর দি প্রেছিডেন্ট অ্যান্ড দি ছিএমএলএ, ডোন্ট অ্যাড্রেস মি অ্যাজ স্যার; আই অ্যান্ড উই অল উইল অ্যাড্রেস ইউ অ্যাজ স্যার। ইউ মাস্ট আন্ডারস্ট্যান্ড ড্যামোক্রেসিতে দি প্রেছিডেন্ট অ্যান্ড দি ছিএমএলএ ইজ অ্যাবাভ অল।

প্রেসিছিএমএলএ বলেন, ইয়েস, মাই প্রভু, জি, আমার মনিব।

প্রধান ক্যাডার বলেন, ইউ আর দি প্রেছিডেন্ট অ্যান্ড ছিএমএলএ; আই অ্যাম দি ডিজিএমএলএ নাম্বার ওয়ান, দ্যায়ার আর টু মোর ডিছিএমএলএস; অ্যান্ড দিজ গাইজ আর ইওর অ্যাডভাইজারস্। হিয়ার ইজ এ রিটায়ার্ড জাস্টিস অফ দি সুপ্রিম কোর্ট, হি উইল অ্যাক্ট অ্যাজ ইউর স্পেশাল অ্যাসিস্টেন্ট, বাট ইন ফ্যাক্ট হি উইল অ্যাক্ট অ্যাজ মাই ব্যাটম্যান। উই অল আর ওয়েটিং ফর ড্যামোক্রেসি।

প্রেছিছিএমএলএ ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করেন, আমার কী কাজ হইবে, আপনি আমাকে কী কাজ দিবেন দয়া করিয়া?

প্রেছিছিএমএলএ অভ্যাসবশত একটি সম্বোধন করতে গিয়ে সানগ্লাসের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে থেমে যান। সানগ্লাসে তিনি কালো আগুন জ্বল জ্বল করে জ্বলে উঠতে দেখেন।

প্রধান ক্যাডার বলেন, আপনার কিছুই করতে হবে না, আমরাই সব কাজ করবো; আপনি শুধু অনারেবল প্রেছিডেন্ট অ্যান্ড ছিএমএলএ থাকবেন, আপনি বঙ্গভবনে ঘুমাইবেন খাইবেন অ্যাচ মাচ অ্যাজ ইউ নিড, আর না দেখে সাইন করবেন, আমরা তখন ইলেকশন আর ড্যামোক্রেসির রাস্তা পাকা করবো। দি কান্ট্রি নিস্ ড্যামোক্রেসি অ্যাজ আর্লি অ্যাজ পসিবল।

কোনো কাজ করতে হবে না শুনে খুব খুশি হন প্রেছিছিএমএলএ।

প্রধান ক্যাডার বলেন, ইউ ওয়্যার এ ফেসলেস নেমলেস আননৌন টপ লিগাল ব্যুরোক্র্যাট; ন্যাশন আপনাকে চিনে না, এইবার আপনাকে ন্যাশন চিনতে পারবে, এভরি নাউ অ্যান্ড দেন যখন উই উইল ফিল নিড আপনাকে টেলিভিশনে ন্যাশনাল ফ্ল্যাগের নিচে বসে ড্যামোক্রেসি আর আমাদের মহৎ পারপাস সম্পর্কে ন্যাশনকে অ্যাড্রেস করতে হবে। আই শ্যাল ডিক্টেট দি অ্যাড্রেস হুইচ ইউ উইল রিড। ঠিক মতো রিডিং পড়া শিখতে হবে, যেমন ক্লাশ ফোর ফাইভে পড়তেন। ভেরি সুন ইউ উইল বি এ নৌন ফিগার ইন দি কান্ট্রি। আই অ্যাম শিউর ইউ উইল এনজয় ইট।

প্রেছিছিএমএলএ বলেন, আমি রিডিং পড়িতে পারিব, চিরকাল আমি রিডিংই পাঠ করিয়া আসিয়াছি; ইহা করিতে আমি অতিশয় আনন্দিত হইব, আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাইতেছি।

প্রধান ক্যাডার বলেন, আপনাকে বেশি দিন কষ্ট দেবো না, স্যার, ইউ আর অ্যান আেল্ড হ্যাঁগার্ড, বছরখানের মধ্যেই আই শ্যাল বি দি ছিএমএলএ, তখন আমরা ড্যামোক্রেসির দিকে কয়েক স্টেপ প্রসিড করবো, উই নিড ড্যামোক্রেসি অ্যাজ আর্লি অ্যাজ পসিবল; তখন আপনার কাজ কমবে, কম সাইন করতে হবে, কম অ্যাড্রেস করতে হবে।

প্রেছিছিএমএলএ বলেন, দ্যাট উইল বি ভেরি কাইভ অফ ইউ, বৃদ্ধ মানুষ আমি বেশি পরিশ্রম করিতে কষ্ট হইবে।

প্রধান ক্যাডার বলেন, বছর দেড়েকের মধ্যে ইউ উইল বি টু জৌল্ড অ্যান্ড ইউজলেস, বাই দিস টাইম দি কান্ট্রি উইল বি রেডি ফর ড্যামোক্রেসি, আই শ্যাল গিভ বার্থ টু এ ন্যাশনালিস্ট পলিটিক্যাল পার্টি; দেন ইউ উইল রিজাইন ইন মাই ফেভার। মেনশনিং দি রিজন ফর রেলিনকুইশমেন্ট অফ দি অফিস অ্যাজ অফ ইল হেলথ অ্যান্ড ইন ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট। ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট মিস্ ড্যামোক্রেসি।

প্রেছিছিএমএলএ বলেন, দ্যাট উইল বি মাই কন্ট্রিবিউশন টু ড্যামোক্রেসি, দেশে ড্যামোক্রেসি আনিয়া আমি ধন্য বোধ করিব, চিরকাল আপনার নিকট কৃতজ্ঞ রহিব, আপনি জাতিকে পুণ্যপন্থা দেখাইবেন।

প্রধান ক্যাডার বলেন, দেন উই উইল হ্যাং ইউর ফটোগ্রাফ ইন বঙ্গভবন।

হ্যাং শব্দটি শুনে কেঁপে ওঠেন প্রেছিছিএমএলএ; পরে বুঝতে পারেন তাঁকে নয়, তার ছবি লটকানো হবে বঙ্গভবনে। তিনি স্বস্তি বোধ করেন।

বছর দেড়েক পর নুনভরাকে সেইটাছাড়াকে পাঁজাকোলে করে একদল ক্যাডার ফেলে দিয়ে আসে তার বাড়ির ডাস্টবিনের পাশে। সেদিন দেশে নতুন গণতন্ত্র দেখা দেয়। এমন সেইটাছাড়া পলিটিশিয়ান আরো অনেক জন্ম নিয়েছে দেশে, তবে সকলের কথা বলার দরকার নেই, বলতে ঘেন্নাও লাগে।

পার্টি বেশ গভীর ঘন নিবিড় হয়ে জমেছে।

অধ্যক্ষ রুস্তম আলি পন্টু বলেন, অরা চাইর বছর যা পাইছিলো খাইছিলো, অনেক বচ্ছর খায় নাই, এইবার খাইতে চায়। খাওয়াইয়া দিমু অগো।

ডঃ কদম রসুলের বেশ লাগছে; ওই তিন রাতের পর এই রাতটিকে জান্নাতুল ফেরদৌসের রাত মনে হচ্ছে। তার কয়েক রেকাত সালাত আদায়ের ইচ্ছে হয়।

তিনি বলেন, অগো ভয় পাওয়াইয়া দিতে হইবো, আমলাগুলিরেও ভয় পাওয়াইতে হইবো, পুলিশগুলিরেও ডর লাগাইতে হইবো। আমাদের ভয় পাইলে চলবে না, সকলকে ভয় লাগাইয়া দিতে হইবো।

অধ্যক্ষ রুস্তম আলি পন্টু বলেন, ডর অনেক আগেই লাগাই দিছি; অরা চাইছিলো আমাগো ঢাকা থিকা দ্যাশ থিকা খ্যাদাইয়া দিয়া পাওয়ারে আসতে; শুরুতেই অই যে ধমক দিলাম, ডর লাগাইয়া দিলাম, তাই আইজকাইল মিনমিন কইর‍্যা খালি করাপশনের পাচালি গায়। অরা কবিয়ালা, অগো পাচালি গাওন ছাড়া আর কাম নাই।

জেনারেল কেরামতের একটি অন্তরঙ্গ প্রব্লেম তাঁকে মাঝেমাঝে খোঁচা দিচ্ছে। তিনি সেটা অধ্যক্ষ রুস্তম আলি পন্টুর সাথে একটু আলোচনা করতে চান, কেননা অধ্যক্ষই তাঁকে উদ্ধার করতে পারেন, কেননা অধ্যক্ষই সেটি বিশদভাবে জানেন। তবে অধ্যক্ষ যা জানেন, তা মধুর; তাতে কোনো খোঁচাখুঁচি নেই, বা থাকতেও পারে, এখন খোঁচাখুঁচিটা বেড়েছে।

জেনারেল অধ্যক্ষের কাছে এসে বলে, অধ্যক্ষ ভাই, আই হ্যাভ সাম ভেরি পারসোন্যাল অ্যান্ড ইন্টিমেট ডিসকাশন উইথ ইউ।

অধ্যক্ষ উঠে দাঁড়ান; তারা লাইলি পুষ্পকুঞ্জ থেকে বেরিয়ে আরেকটি কুঞ্জে ঢোকেন, যেটির কোনো নাম নেই; পরে কখনো নাম দেয়া হতে পারে, হয়তো পরে কোনো শিরিন পুষ্পকুঞ্জ বিকশিত হতে পারে।

জেনারেল বলেন, ভাই, একটা প্রব্লেম অ্যারাইজ করেছে; আপনেই শুধু তা সত্ করতে পারেন, অনলি ইউ ক্যান সলভ ইট ফর মি।

অধ্যক্ষ বলেন, আমি ত অল টাইম আপনের সার্ভিসে আছিই। তাছাড়া জ্যানারেলগো কোনো প্রব্লেম থাকা ঠিক না, তাইলে কান্ট্রির ডিফেন্স পাওয়ার নষ্ট হইয়া যায়, কান্ট্রি উইক হইয়া পড়ে।

জেনারেল বলেন, লাইলি।

অধ্যক্ষ হাসতে হাসতে বলেন, অহ, নতুন ভাবীসাব অ্যাটাক করছে বুঝি? তাইলে ত এনিমি ইজ ভেরি স্ট্রং, ইন্ডিয়া পাকিস্থান না, আপনে সুপার পাওয়ারের অ্যাটাকে পড়ছেন; ডিফেন্স নষ্ট কইরা ফেলছে নি?

জেনারেল বলেন, লাইলি আর গোপন ওয়াইফের লাইফ লিড করতে চায় না, ওপেনলি সে আমার সঙ্গে থাকতে চায়, ওয়ান্ট টু বি হেভিলি প্র্যাগনেন্ট, সে সব কনডম আর পিল ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। সে ওয়াইফের ফুল স্ট্যাটাস চায়, মিস্ট্রেসের মতন থাকতে চায় না।

অধ্যক্ষ বলেন, বেশ মেজর প্রব্লেম মনে হইতেছে।

জেনারেল বলেন, নট অনলি দ্যাট, লাইলি ইলেকশনেও দারাতে চায়, সে নমিনেশন চায়।

অধ্যক্ষ একটু চিন্তিত হন; এবং বলেন, জ্যানারেলভাই, আপনের প্রব্লেম দুইটা; প্রথমটা লাইলিভাবী ওপেন স্বীকৃতি চায়, তারপর ইলেকশনে দারাইতে চায়। দুইটা প্রব্লেমই সল্‌ভ করতে হবে।

জেনারেল বলেন, হ্যাঁ, ভাই; আপনেই এইটা সলভ করতে পারেন।

অধ্যক্ষ বলেন, কোনো প্রব্লেমই কঠিন না, সব প্রব্লেমই সলভ করন যায়। তবে এই কাজে আপনের পাঁচ দশ কোটি টাকা খসাইতে হইবে।

জেনারেল বলেন, মানি ইজ নো প্রব্লেম, টাকা আমি খরচ করতে রাজি, আই হ্যাভ ইনফ মানি টু কিপ সেভারেল ওয়াইভস্ অ্যান্ড মিস্ট্রেসেস; আপনি শুধু প্রব্লেম দুইটা সভ করে দেন ভাই।

অধ্যক্ষ বলেন, প্রথম প্রব্লেম বড়ভাবী, তারে কি আপনে ডাইভোর্স করে লাইলি ভাবীর সঙ্গে সংসার করতে চান?

জেনারেল বলেন, নো, নো; ডাইভোর্স করতে চাই না। তাতে আমার ইমেজ টোটালি নষ্ট হয়ে যাবে, মাই পলিটিক্যাল কেরিয়ার উইল বি শ্যাটার্ড।

অধ্যক্ষ বলেন, এইটা পলিটিশিয়ানের মতন কথা। পলিটিশিয়ানরা মিস্ট্রেস রাখতে পারে, গোপনে দুই একটা ওয়াইফ রাখতে পারে, কিন্তু বড় স্ত্রীরে ডাইভোর্স করতে পারে না। পলিটিশিয়ানগো ফ্যামিলি ভ্যালুজ ঠিক রাখতে হয়, ফ্যামিলি ভ্যালুজ সম্পর্কে লেকচার দিতে হয়; এমনকি আমেরিকায়ও ক্লিন্টনভাই দুই তিন শো মাইয়ালোকের লগে ঘুমাইলেন সাক করাইলেন, কিন্তু ফ্যামিলি ভ্যালুজ তিনি নষ্ট করতে পারেন না।

জেনারেল বলেন, আমি ফ্যামিলি ভ্যালুজ ঠিক রাখতে চাই, ফ্যামিলি ভ্যালুজ ঠিক না রইলে সমাজে রইলো কী।

অধ্যক্ষ বলেন, তার মানে বড়ভাবীরে রাজি করাইতে হবে। আমার মনে হয় লাইলিভাবীর কথা বড়ভাবী জানে, বুড়াকালে সেও বেশি গোলমালে যাইতে চায় না, তার স্বার্থটা ঠিক থাকলেই হইল। তারে এইটা মানাইতে হইলে দুই চাইর কোটি তারে দিতে হইবো, বারিধারার বাড়িটাও লেইখ্যা দিতে হইবো মনে লইতেছে, আরো কিছু খরচ লাগবো। মাসে দুই এক রাইত তার লগে থাকলেই চলবো, তার বেশি লাগবে না।

জেনারেল বলেন, এইটা কোনো সমস্যা না, এই সব আমি দিবো, আই হ্যাভ ইনাফ মানি, মানি ইজ নো প্রব্লেম।

অধ্যক্ষ বলেন, আর ভাই, আপনের এলডেস্ট সানকেও কন্সিডার করতে হইবে, সে আমাগো বড়ো ক্যাডার; সেও পিস্তল ঠ্যাকাইতে পারে।

জেনারেল বলেন, দ্যাট ইজ ভেরি মাচ পসিবল, আই অ্যাম মাচ অ্যাফ্রেইড হি উইল ক্রিয়েট ট্রাবলস্, অলদো হি হ্যাঁজ সেভারেল মিস্ট্রেসেস, ইয়ং অ্যান্ড আৌল্ড।

অধ্যক্ষ বলেন, তারে থামাইতে কোটি দুই লাগবো, বেশিও লাগতে পারে।

জেনারেল বলেন, টাকা প্রব্লেম না প্রিন্সিপালভাই, টাকা আই হ্যাভ ইনাফ, আপনি এটা ট্যাকল করে দিবেন।

অধ্যক্ষ বলেন, দ্বিতীয় প্রব্লেম হইলো লাইলিভাবীর ইলেকশনে দারান, নমিনেশন পাওন। কথা হচ্ছে আমাগো দল থিকা কোনো মাইয়ালোক দারাইলে পাশ করতে পারবো না। মহাদেশনেত্রী মাইয়ালোকের মধ্যে পড়েন না, তিনি হইতেছেন মহাদেশনেত্রী, আমাদের মহান ফাদার অফ দি পার্টির মহীয়সী স্ত্রী, তিনি আমাদের পূজনীয়া মাদার অফ দি পার্টি, কুইন ভিক্টরিয়া। তিনি থাকলে আমরা আছি, নাইলে নাই।

জেনারেল বলেন, কিন্তু ভাই, আমি একটা সলিউশন বাইর করছি, আপনি ওইটা মাইন্যা নিলে কোনো প্রব্লেম থাকবো না, অন্যেরা আপনের কথা ফেলতে পারবে না।

অধ্যক্ষ বলেন, আপনের সলুশনটা বলেন ভাই।

জেনারেল বলেন, আমি দুইটা কন্সটিটিউয়েন্সি থিকা দারাইতে চাই; দুইটা কন্সটিটিউয়েন্সিই আমি তিন বছর ধরে ঠিক করে রাখছি, আই স্পেন্ট মিলিয়ন্স, আমি দুইটা থিকাই পাশ করবো। দি ভোটারস অফ বোথ দি কন্সটিটিউয়েন্সিস ওয়ান্ট মি, অ্যাজ দ্যায়ার এমপি বিকজ দে নো আই শ্যাল বি এ মিনিস্টার, দ্যায়ার ইজ নান টু চ্যালেঞ্জ মি।

অধ্যক্ষ বলেন, আপনে দলের লিডার, দুইটা কন্সটিটিউয়েন্সি থিকা নমিনেশন আপনে পাইবেন, আমি আপনের কথা আগেই ভাইব্যা রাখছি। এই বছর আমরা লিডাররা প্রত্যেকে দুই তিনটা কইর‍্যা কন্সটিটিউয়েন্সি থিকাই কন্টেস্ট করবো, মহাদেশনেত্রী করবেন চাইরটা থিকা। তবে ভাই এখন থিকাই একটু দেইখ্যাইনা রাখবেন, যাতে ওইখান থিকা আর কেহ দারাইতে না চায়।

জেনারেল বলেন, ওইখান থিকা যারা ক্যান্ডিডেট হইতে পারে, তাদের আমি লাখ পঞ্চাশেক দিয়ে রেখেছি, কেউ ক্যান্ডিডেট হবে না, দে হ্যাভ গিভেন মি হান্ড্রেড পার্সেন্ট গ্যারেন্টি, দে আর মাই পেইড পিপল, অলমোস্ট স্লেভস্‌।

অধ্যক্ষ জিজ্ঞেস করেন, আপনে কি তাগো বিশ্বাস করেন, তাগো কথার কোনো দাম আছে?

জেনারেল বলেন, পলিটিক্সে বিশ্বাস করা বলে কিছু নাই, আছে ট্রিক্স; তার ব্যবস্থা আই হ্যাভ টেকেন, এখন থেকেই তাদের দুইজনরে দশজন কইর‍্যা ক্যাডার পাহারা দিতেছে, নমিনেশন পেপার জমা দেয়া পর্যন্ত পাহারা দিতে থাকবে।

অধ্যক্ষ বলেন, আপনাকে দুইটা কন্সটিটিউয়েন্সি থিকাই পাশ করতে হইবো, একটায়ও ফেল করলে চলবে না।

জেনারেল বলেন, সেই ব্যবস্থা আমি নিয়েছি, পাশ আমি করবোই। আই হ্যাভ মানি অ্যান্ড ক্যাডাস্; আমার বাক্সে ছাড়া অন্য বাক্সে ভোট দিতে নান উইল ড্যায়ার, ভোটারস্ আর নট দি ডিসাইডিং ফ্যাক্টরস্ ইন পলিটিক্স।

অধ্যক্ষ বলেন, মানি আর ক্যাডার থাকলে দুইটায়ই আপনে পাশ করবেন, যদি দুইটায়ই পাশ করতে পারেন, আপনেরে পায় কে? আপনে একটা সিট ছাইরা দিবেন, ওই খালি সিটে লাইলিভাবী দারাইবো; তখন তার নমিনেশন পাওন পানির মতন সোজা হবে। আমি তো আছিই আপনের পক্ষে, চিন্তার কোনো কারণ নাই। লাইলিভাবীও পাশ করবো, তখন দুইজনেই পার্লামেন্টে বসবেন। ড্যামোক্রেসিতে এক ফ্যামিলি থিকা যতো মেম্বার হয় ততই ভাল।

জেনারেল বলেন, অধ্যক্ষভাই, আপনি কিছু মনে না করলে আপনার ইলেকশন ক্যাম্পেইনের ব্যয়ের ফিফটি পার্সেন্ট আমিই বিয়ার করবো।

অধ্যক্ষ জেনারেলকে জড়িয়ে ধরে বলেন, চলেন ভাই, আর দুই চাইর গেলাশ খাই, মাইয়াগুলিরে একটু কাছে থিকা দেখি। বুড়া হইছি বইল্যা শরীরের কাঁপন যায় নাই।

শক্তির উৎসবাদী গণতান্ত্রিক রাজবংশের মহাদেশনেত্রী, কুইন ভিক্টোরিয়া, বেশ ভেঙে পড়েছেন, সিংহাসনে বসা ছাড়া রাজনীতি তিনি বোঝেন না, তার চেয়ে বেশি বোঝেন থাই আর চিনা বিউটিশিয়ানদের, তবু তার মনে হচ্ছে সিংহাসন সরে যাচ্ছে; বেশ উৎফুল্ল আছেন জনগণমন গণতান্ত্রিক রাজবংশের মহাজননেত্রী, রাজকন্যা, সুলতানা রাজিয়া গতবারের কোনো ভুলই তিনি আর করতে চান না, এবার সিংহাসনে বসতেই হবে তাকে; তার রাজপুরুষদের কড়া নির্দেশ দিয়েছেন এবারের সম্ভাবনাকে নষ্ট করা চলবে না। এবার যদি ক্ষমতায় যাওয়া না যায়, তাহলে তাদের আর ভবিষ্যৎ নেই। তাই তার রাজপুরুষেরা খুবই ব্যস্ত, দিনরাত তারা করে চলছেন পরিকল্পনার পর পরিকল্পনা।

error: Content is protected !!
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x