শ্লোকঃ ২৫
যান্তি দেবব্ৰতা দেবান্ পিতৃন্ যান্তি পিতৃব্রতাঃ ।
ভূতানি যান্তি ভুতেজ্যা যান্তি মদযাজিনোঽপি মাম্ ॥ ২৫ ॥
যান্তি—প্রাপ্ত হন; দেবব্ৰতাঃ – দেবতাদের উপাসক, দেবান্—দেবতাদের; পিতৃর্— পূর্ব-পুরুষদের; যান্তি— লাভ করেন; পিতৃরতাঃ– পিতৃপুরুষদের উপাসকগণ; ভূতানি — ভূত-প্রেতদের, যান্তি লাভ করেন; ভূতেজ্যাঃ – ভূত-প্রেত আদির উপাসকগণ: যান্তি— লাভ করেন; মৎ—আমার; যাজিন :— ভক্তগণ; অপি – কিন্তু মাম্—আমাকে।
গীতার গান
ইতর দেবতা যাজী যায় দেবলোকে ৷
পিতৃলোক উপাসক যায় পিতৃলোকে ৷।
ভূতপ্রেত উপাসক ভূতলোকে যায় ৷
আমাকে ভজন করে আমাকেই পায় ॥
আমার পূজন হয় সকলে সম্ভব ।
দরিদ্র হলেও নহে অপেক্ষা বৈভব ৷।
অনুবাদঃ দেবতাদের উপাসকেরা দেবলোক প্রাপ্ত হবেন; পিতৃপুরুষদের উপাসকেরা পিতৃলোক লাভ করেন; ভূত-প্রেত আদির উপাসকেরা ভূতলোক লাভ করেন; এবং আমার উপাসকেরা আমাকেই লাভ করেন।
তাৎপর্যঃ যদি কোন মানুষ চন্দ্র, সূর্য আদি গ্রহলোকে যেতে চায়, তা হলে তার লক্ষ্য অনুসারে বিশেষ বৈদিক বিধান পালন করার ফলে সেখানে সে যেতে পারে। এই সমস্ত বিধান বেদের ‘দর্শ-পৌর্ণমাসী’ নামক কর্মকাণ্ডীয় বিভাগে বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে স্বর্গলোকের অধিপতি দেবতাদের উপাসনা করার বিধান দেওয়া হয়েছে। সেই রকম বিহিত যজ্ঞ অনুষ্ঠান করার ফলে পিতৃলোক প্রাপ্ত হওয়া যায়। তেমনই, আবার প্রেতলোকে গিয়ে যক্ষ, রক্ষ অথবা পিশাচ যোনি প্রাপ্ত হওয়া যায়। পিশাচ উপাসনাকে জাদুবিদ্যা বা তিমির ইন্দ্রজাল বলা হয়। অনেক মানুষ আছে, যারা এই জাদুবিদ্যার অনুষ্ঠান করে এবং তারা মনে করে যে, এটি পারমার্থিক অনুষ্ঠান, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেগুলি সম্পূর্ণ জড়-জাগতিক কার্যকলাপ। তেমনই, পরমেশ্বর ভগবানের উপাসক শুদ্ধ ভক্ত নিঃসন্দেহে বৈকুণ্ঠলোক বা কৃষ্ণলোক প্রাপ্ত হন। এই গুরুত্বপূর্ণ শ্লোকের মাধ্যমে এটি অত্যন্ত সরলভাবে হৃদয়ঙ্গম করা যায় যে, যদি দেব-উপাসনা করার ফলে স্বর্গলোক প্রাপ্ত হওয়া যায়, পিতাদের পূজা করার ফলে পিতৃলোক প্রাপ্ত হওয়া যায় এবং পিশাচ উপাসনা করার ফলে প্রেতলোক প্রাপ্ত হওয়া যায়, তা হলে ভগবানের শুদ্ধ ভক্ত কেন কৃষ্ণলোক বা বিষ্ণুলোক প্রাপ্ত হবেন না? দুর্ভাগ্যবশত, অধিকাংশ মানুষই শ্ৰীকৃষ্ণ এবং শ্রীবিষ্ণুর এই অলৌকিক ধাম সম্বন্ধে অবগত নয় এবং ধামতত্ত্ব সম্বন্ধে অনভিজ্ঞ হবার ফলে তারা বারবার সংসারে পতিত হয়। এমন কি নির্বিশেষবাদীরা ব্রহ্মজ্যোতি থেকেও অধঃপতিত হয়। তাই কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন সমস্ত মানব- সমাজে এই পরম কল্যাণকারী জ্ঞান মুক্ত হস্তে বিতরণ করছে যে, কেবল হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করার ফলে মানুষ এই জীবন সার্থক করে তার যথার্থ আবাস ভগবৎ-ধামে ফিরে যেতে পারে।
শ্লোকঃ ২৬
পত্রং পুষ্পং ফলং তোয়ং যো মে ভক্ত্যা প্রযচ্ছতি ।
তদহং ভভ্ক্ত্যুপহৃতমশ্নামি প্ৰযতাত্মনঃ ।৷ ২৬ ॥
পত্রম—পত্র: পুষ্পম্—ফুল; ফলম্ – ফল, তোয়ম্ — জল; — মনি, মে আমাকে; ভক্ত্যা— ভক্তি সহকারে প্রযচ্ছতি — প্রদান করেন; তৎ-তাঃ অহম– আমি, ত্যুপহৃতম্ — ভক্তি সহকারে নিবেদিত, অশ্বামি গ্রহণ করি; প্রযতাত্মনঃ —আমার ভক্তি প্রভাবে বিশুদ্ধচিত্ত সেই বাক্তির।
গীতার গান
পত্র পুষ্প ফল জল ভক্ত মোরে দেয়।
ভক্তির কারণ সেই গ্রহণীয় হয় ৷।
যত্ন করি মোর ভক্ত যাহা কিছু দেয় ।
সন্তুষ্ট হইয়া লই ভক্তির প্রভায় ॥
নিরপেক্ষ ভক্ত তুমি এ মোর নিশ্চয় ৷
তোমার যে কার্যক্রম সব ভক্তি হয় ॥
অনুবাদঃ যে বিশুদ্ধচিত্ত নিষ্কাম ভক্ত ভক্তি সহকারে আমাকে পত্র, পুষ্প, ফল ও জল অর্পণ করেন, আমি তাঁর সেই ভক্তিপ্লুত উপহার প্রীতি সহকারে গ্রহণ করি।
তাৎপর্যঃ বুদ্ধিমান মানুষের পক্ষে ভগবানের অপ্রাকৃত প্রেমময় সেবায় নিয়োজিত হয়ে কৃষ্ণভাবনাময় হওয়া আবশ্যক। তার ফলে শাশ্বত সুখের জন্য চিরস্থায়ী আনন্দময় ভগবৎ-ধাম লাভ করা যায়। এই প্রকার বিস্ময়কর ফল লাভ করার পদ্ধতি অত্যন্ত সহজ এবং এমন কি অত্যন্ত দরিদ্রতম ব্যক্তিও কোন রকম যোগ্যতা ছাড়াই এর অনুশীলন করতে পারে। এটি লাভ করার পক্ষে একমাত্র যোগ্যতা হচ্ছে ভগবানের শুদ্ধ ভক্ত হওয়া। কার কি পদমর্যাদা অথবা তার স্থিতি কি, তাতে কিছু আসে যায় না। পন্থাটি এতই সহজ যে, অকৃত্রিম প্রেমভক্তি সহকারে এমন কি একটি পত্র অথবা একটু জল অথবা ফল পরমেশ্বর ভগবানকে অর্পণ করা যেতে পারে এবং ভগবান তা গ্রহণ করে সন্তুষ্ট হবেন। তাই কৃষ্ণভাবনামৃত থেকে কেউই বাদ পড়তে পারে না, কারণ এটি অতি সহজসাধ্য ও সর্বজনীন। অত্যন্ত এই সরল পন্থার দ্বারা সচ্চিদানন্দময় জীবনের পরম পূর্ণতা লাভ করতে এমন কোন মূঢ় আছে যে, সে কৃষ্ণভাবনামৃত লাভ করতে চায় না? কৃষ্ণ কেবল প্রেমভক্তি চান, অন্য কিছু নয়। কৃষ্ণ তাঁর শুদ্ধ ভক্ত থেকে এমন কি একটি পতাত গ্রহণ করেন। তিনি অভক্তের কাছ থেকে কোন রকমের নৈবেদ্য গ্রহণ করেন না। তাঁর কারও কাছ থেকে কোন কিছুর প্রয়োজন নেই, কারণ তিনি হচ্ছেন স্বয়ংসম্পূর্ণ । কিন্তু তবুও প্রীতি ও ভালবাসার বিনিময়ে তিনি তাঁর ভক্তের নৈবেদ্য গ্রহণ করেন। কৃষ্ণভাবনায় বিকাশ সাধন করাই হচ্ছে জীবনের পরম সিদ্ধি। কৃষ্ণের সান্নিধ্য লাভ করার একমাত্র উপায় যে ভক্তি, সেই কথাটিকে জোর দিয়ে ঘোষণা করবার জন্য ভক্তি শব্দটি এই শ্লোকে দুইবার উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য কোন উপায়ে, যেমন কেউ যদি ব্রাহ্মণ হয়, শিক্ষিত পণ্ডিত হয়, ধন-বিত্তশালী হয় অথবা বড় দার্শনিক হয়, তবুও তারা কৃষ্ণকে কোন কিছু নৈবেদ্য গ্রহণ করাতে অনুপ্রাণিত করতে পারে না। ভক্তির মৌলিক বিধান বাতীত কারও কাছ থেকে কোন কিছুই গ্রহণ করাতে ভগবানকে কেউই অনুপ্রাণিত করতে পারে না। ভক্তি হচ্ছে অহৈতুকী। পন্থাটি হচ্ছে শাশ্বত। এটি পরম তত্ত্বের প্রতি প্রত্যক্ষ সেবা সম্পাদন।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পূর্বেই প্রতিপন্ন করেছেন যে, তিনিই হচ্ছেন একমাত্র ভোক্তা, আদিপুরুষ ও সমস্ত যজ্ঞের পরম লক্ষ্য। এই শ্লোকে তিনি বলেছেন, কি ধরনের যজ্ঞ তার প্রীতি উৎপাদন করে। যদি কেউ হৃদয়কে নির্মল করার জন্য এবং জীবনের পরম প্রয়োজন— প্রেমময়ী ভগবৎ-সেবা প্রাপ্ত হবার জন্য ভক্তিযোগে নিয়োজিত হবার অভিলাষী হয়, তা হলে তাকে জানতে হবে ভগবান তার কাছ থেকে কি প্রত্যাশা করেন। যিনি শ্রীকৃষ্ণকে ভালবাসেন, তিনি তাঁকে কেবল সেই জিনিসগুলিই অর্পণ করেন, যা তাঁর প্রিয়। তিনি কখনও অবাঞ্ছিত অথবা প্রতিকূল বস্তু শ্রীকৃষ্ণকে নিবেদন করেন না। তাই মাছ, মাংস, ডিম আদি কখনই শ্রীকৃষ্ণের ভোগের যোগ্য নয়। যদি শ্রীকৃষ্ণ চাইতেন যে, এই সমস্ত দ্রবাগুলি তাঁকে অর্পণ করা হোক, তা হলে তিনি সেই কথা বলতেন। কিন্তু তার পরিবর্তে তিনি বলেছেন যে, পাতা, ফল, ফুল ও জল আদি দ্রব্যই যেন কেবল তাঁকে অর্পণ করা হয়। এই প্রকার ভোগ সম্বন্ধে তিনি বলেছেন যে, “আমি সেগুলি গ্রহণ করব।” তাই, আমাদের বুঝা উচিত যে, তিনি মাছ, মাংস, ডিম আদি কখনই গ্রহণ করেন না। শাক-সবজি, অন্ন, ফল, দুধ ও জল মানুষের উপযুক্ত আহার। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজে সেই বিধান দিয়ে গেছেন। এই সমস্ত সাত্বিক সামগ্ৰী বাতীত আমরা যদি অন্য কিছু আহার করি, তবে তা কখনই শ্রীকৃষ্ণকে নিবেদন করে তাঁর প্রসাদরূপে গ্রহণ করা যায় না। কারণ, তিনি কখনই তা গ্রহণ করেন না। অতএব, যদি আমরা মাছ, মাংস আদি নিষিদ্ধ পদার্থ ভগবানকে অর্পণ করি, তা হলে তা প্রেমময়ী ভগবদ্ভক্তির প্রতিকূল আচরণ করা হবে।
তৃতীয় অধ্যায়ের ত্রয়োদশ শ্লোকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বর্ণনা করেছেন যে, কেবলমাত্র যজ্ঞাবশিষ্ট অল্পই হচ্ছে শুদ্ধ, তাই যে সমস্ত মানুষ পারমার্থিক উন্নতি এবং মায়া বন্ধন থেকে মুক্তির অভিলাসী, তাদের পক্ষে এই অন্নই হচ্ছে আহার্য। ভগবানকে উৎসর্গ না করে যারা খাদা আহার করে, ভগবান সেই একই শোকে বলেছেন যে, তারা তাদের পাপ ভক্ষণ করে। পক্ষান্তরে, তাদের প্রতিটি গ্লাস তাদেরকে মায়াজালের বন্ধনে আবদ্ধ করে। কিন্তু কেউ যদি শাক-সবজির বাঞ্জন বানিয়ে শ্রীকৃষ্ণের প্রতিকৃতি অথবা অর্ডা-বিগ্রহকে তা নিবেদন করে বদনাপূর্বক সেই সামান্য নৈবেদ্য গ্রহণ করার প্রার্থনা করে, তার তার জীবনে উত্তরোত্তর উন্নতি সাধিত হয়, দেহ শুদ্ধ হয় এবং মস্তিষ্কের কোষগুলি সূক্ষ্ম হয়, যার ফলে পবিত্র নির্মল চিত্র করা সম্ভব হয়। তবে সব সময় আমাদের মনে রাখতে হবে যে, এই সমস্ত ভোগ ফো প্রেমভক্তি সহকারে নিবেদন করা হয়। শ্রীকৃষ্ণ যেহেতু সমস্ত সৃষ্টির সব কিছুর একমাত্র অধিকারী, তাই আমাদের উৎসর্গীকৃত ভোগ গ্রহণ করার কোন আবশ্যকতা তার নেই, কিন্তু তবুও আমরা যখন তাঁর প্রীতি উৎপাদন করবার জন্য তাঁকে নৈবেদ্য অর্পণ করি, তখন তিনি তা গ্রহণ করেন। আর ভোগ তৈরি করা এবং নিবেদন করার গুরুত্বপূর্ণ বিচার হচ্ছে, তা করা উচিত শ্রীকৃষ্ণের প্রতি প্রেমভক্তি সহকারে।
নির্বিশেষবাদী দার্শনিকেরা যারা মোহাচ্ছন্ন হয়ে মনে করে যে, পরমতত্ত্ব ইন্দ্রিয়বিহীন, ভগবদ্গীতার এই শ্লোকটি তাদের বোধগম্য হয় না। তাদের কাছে এটি কেবল রূপক অলঙ্কার মাত্র, অথবা তারা এটিকে গীতার প্রবক্তা শ্রীকৃষ্ণ যে একজন সাধারণ মানুষ, তার প্রমাণ বলে মনে করে। কিন্তু যথার্থ সত্য হচ্ছে যে, পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দিবা ইন্দ্রিয়সম্পন্ন। শাস্ত্রে বলা হয়েছে যে, তাঁর প্রতিটি ইন্দ্রিয় অন্য সমস্ত ইন্দ্রিয়ের কাজ করতে সক্ষম। সেটিই হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণকে অদ্বয় পরমতত্ত্ব বলার অর্থ। তিনি যদি ইন্দ্রিয়বিহীন হতেন, তা হলে তাঁকে ষড়ৈশ্বর্যপূর্ণ বলা হত না। সপ্তম অধ্যায়ে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যে, তিনি দৃষ্টিপাত করার মাধ্যমে জড়া প্রকৃতির গর্ভে জীবদের প্রেরণ করেন। তেমনই ভোগ অর্পণ করে ভক্ত যখন প্রেমময়ী প্রার্থনার দ্বারা ভগবানকে তা নিবেদন করেন, ভগবান তখন তা শুনতে পান এবং তিনি তখন তা গ্রহণ করেন। আমাদের মনে রাখা উচিত যে, তিনি হচ্ছেন পরমতত্ত্ব, তাই তাঁর শ্রবণ করা, ভোজন করা এবং স্বাদ আস্বাদন করার মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। ভতই কেবল ভগবান শ্রীকৃষ্ণের বর্ণনা অনুসারে ভগবানের স্বরূপ উপলব্ধি করে থাকেন। অর্থাৎ, তিনি ভগবানের বর্ণনার কদর্থ করেন না, তাই তিনি জানেন যে, অদ্বয় পরমতত্ত্ব ভোগ আহার করেন এবং তার ফলে তিনি আনন্দ উপভোগ করেন।
শ্লোকঃ ২৭
যৎকরোষি যদশ্নাসি যজ্জহোষি দদাসি যৎ।
যত্তপস্যসি কৌন্তেয় তৎকুরুষ মদৰ্পণম্ ॥ ২৭ ॥
যৎ—যা; করোনি — তুমি কর; যৎ – যা, অশ্বাসি — তুমি খাও, য—যা জুহোষি— হোম কর; দদাসি— দান কর; যৎ- যা যৎ – যা, তপস্যসি – তপস্যা কর; কৌন্তেয়—হে কুন্তীপুত্র; তৎ- তা; কুরু কর; মং – আমাকে, অপর্ণ, সমৰ্পণ।
গীতার গান
অতএব কর যাহা ভোগ যজ্ঞ তপ ৷
অর্পণ করহ তুমি আমাকে সে সব।।
অনুবাদঃ হে কৌন্তেয় । তুমি যা অনুষ্ঠান কর, যা আহার কর, যা হোম কর, যা দান কর এবং যে তপস্যা কর, সেই সমস্তই আমাকে সমর্পণ কর।
তাৎপর্যঃ প্রতিটি মানুষেরই প্রধান কর্তব্য হচ্ছে, তার জীবনকে এমনভাবে গড়ে তোলা যাতে কোন অবস্থাতেই সে শ্রীকৃষ্ণকে ভুলে না যায়। দেহ ও আত্মাকে একই সঙ্গে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার জন্য সকলকেই কর্ম করতে হয়। তাই শ্রীকৃষ্ণ এখানে আদেশ দিয়েছেন, সমস্ত কর্ম যেন কেবল তার জন্যই করা হয়। জীবন ধারণের জন্য সকলকেই কিছু আহার করতে হয়, অতএব সমস্ত খাদ্যদ্রব্য শ্রীকৃষ্ণকে নিবেদন করে তাঁর প্রসাদ গ্রহণ করা উচিত। প্রত্যেক সভ্য মানুষেরই কিছু ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান করতে হয়; অতএব শ্রীকৃষ্ণ আদেশ দিয়েছেন, “এই সব কিছুই আমার জন্য কর,” এবং একে বলা হয় অর্জন। সকলেরই কিছু না কিছু দান করার প্রবৃত্তি আছে, শ্ৰীকৃষ্ণ তাই বলেছেন, “আমাকে দান কর।” এর তাৎপর্য হচ্ছে যে, সমস্ত সঞ্চিত ধন কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনের প্রসারের জন্য উৎসর্গ করা উচিত। আজকাল ধ্যানযোগ পদ্ধতির প্রতি মানুষের অভিরুচি উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। কিন্তু এই যুগের পক্ষে তা বাস্তবসম্মত নয়। কিন্তু যে মানুষ জপমালায় হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করতে করতে চব্বিশ ঘণ্টা শ্রীকৃষ্ণের ধ্যানে নিমগ্ন থাকার অভ্যাস করেন, তিনি নিশ্চিতরূপে পরম যোগী। সেই কথা ভগবদ্গীতার ষষ্ঠ অধ্যায়ে প্রতিপন্ন করা হয়েছে।