ক. ট্রাস্টনামা

রে. তাং …………………                                                         দলিল নং………………………

(১) লিখিতং       ১। আরজ আলী মাতুব্বর, পিতা মৃত এন্তাজ আলী মাতুব্বর, সাকিন লামচরি, ষ্টেশন কোতয়ালী, জিলা বরিশাল, ধর্ম ইসলাম, পেশা জমা জমি ইত্যাদি।

কস্য ট্রাস্টনামা পত্রমিদং কার্যঞ্চাগে জিলা বরিশালের কোতয়ালী থানাধীন লামচরি গ্রাম নিবাসী আমি একজন সামান্য কৃষক। জন্ম আমার ৩রা পৌষ, ১৩০৭ সালে। আমার তিন পুত্র, চারি কন্যা ও এক স্ত্রী বর্তমান।

আমার ঊর্ধ্বতন ৫ (পাঁচ) পুরুষের দশ ব্যক্তির বয়সের গড় হিসাব করিয়া আমি জানিতে পারিয়াছিলাম যে, তাহাঁদের প্রত্যেকের গড় পরমায়ু ছিল ৬০ (ষাট) বৎসর, তাই আমার বংশের রেওয়াজ মোতাবেক আমিও আমার পরমায়ু ৬০ (ষাট) বৎসর বলিয়া কল্পনা করিয়াছিলাম। উক্ত কল্পনার ভিত্তিতে ১৩৬৭ সালে আমার বয়স ৬০ (ষাট) বৎসর পূর্ণ হইলে আমি আমার কর্ম জীবনের সমাপ্তি ঘোষণাপূর্বক আমার যাবতীয় সম্পত্তি আমার ওয়ারিশগণের মধ্যে (ফারায়েজ বিধান মতে) দান-বন্টন করিয়া দিয়া কৃষিকাজ তথা সংসারী কাজ পরিত্যাগপূর্বক আমি আমার পুত্রদের পোষ্য হইয়া জীবন যাপন করিতেছি।

সম্পত্তিদান ও বন্টনকালে আমি আমার ওয়ারিশগণকে বলিয়া রাখিয়াছি, “এখন ১৩৬৭ সাল হইতে আমি মৃত্যুপথের যাত্রী। নিজ দেহটি ভিন্ন এখন আমার হাতে কোন সম্পদই নাই। সুতরাং ইহার পরবর্তী জীবনে শুধু আমার দেহটি খাটাইয়া যদি কিছু উপার্জন করিতে পারি, তবে তাহা সমস্তই দেশের জনকল্যাণমূলক কোন কাজে দান করিব। তাহাতে তোমাদের কাহারো কোন দাবী-দাওয়া থাকিবে না।”

দারিদ্রনিবন্ধন আমি শৈশবে কোন বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শিখিবার সুযোগ পাই নাই। পেটের দায়ে আমাকে কৃষিকাজ শুরু করিতে হইয়াছে অল্প বয়সেই। মাঠের কাজের ফাঁকে ফাঁকে সামান্য পাঠের কাজও করিয়াছি আমি ঘরে বসিয়াই। ইদানিং কৃষিকাজে ইস্তফা দিলেও মাঠের কাজে লিপ্ত আছি আমি আজও। কেননা কৃষিকাজের সাথে সাথে জরিপ কাজেরও সামান্য চর্চা করিয়াছিলাম ১৩৩২ সাল হইতে। সেই জরিপ কাজের মাধ্যমে আমার অবসর জীবনে অদ্যাবধি যে বিত্ত ও অর্থ উপার্জন করিয়াছি, তাহার আনুমানিক মূল্য মং ৬০,০০০.০০ ষাট হাজার টাকা। মৃত্যুকে আসন্ন জানিয়া আমার পূর্বঘোষনা মোতাবেক এখন আমি তাহা সমস্তই দেশের জনকল্যাণমূলক কাজে দান করিবার অভিলাষী হইয়াছি, তাই ক-ঝ নং তফসীলে লিখিত যাবতীয় সম্পত্তি নিম্নে বর্ণিত পরিকল্পনা সাপেক্ষে অত্র ট্রাস্টনামা দলিল সম্পাদন করিয়া দিলাম। ইতি সন ১৩৮৮ সনের ১৯শে অগ্রহায়ণ, ইং তাং ৫-১২-৮১ (পাঁচ, বার, একাশি)।

পরিকল্পনাসমূহ

১. লাইব্রেরী স্থাপন

শহরে বন্দরে থাকিলেও এই দেশের পল্লী অঞ্চলে বিশেষত আমদের অঞ্চলে ‘পাবলিক লাইব্রেরী’ দেখিতে পাওয়া যায় না। তাই আমি আমার নিজ গ্রামে একটি ‘পাবলিক লাইব্রেরী স্থাপনে প্রয়াসী হইয়া একটি লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করিয়াছি বিগত ১৩৮৬ সালে। আমি আশা করি যে, ইহাতে আমাদের পল্লী অঞ্চলের জ্ঞানপিপাসু জনগণের জ্ঞানপিপাসা মিটাইবার কিঞ্চিৎ সুবিধা হইবে এবং এই লাইব্রেরীটির অনুকরণে হয়তো দেশের সর্বত্র পল্লী অঞ্চলে পাবলিক লাইব্রেরী গড়িয়া উঠিবে। লাইব্রেরীটির পরিকল্পনাকালে ইহার নাম রাখা হয়েছিল ‘আরজ মঞ্জিল লাইব্রেরী’। অতঃপর ইহাকে আরজ মঞ্জিল পাবলিক লাইব্রেরী বলা যাইবে।

লাইব্রেরী ভবনটি পাকা, ইহার পরিসর ১৬”X১৪” ফুট, ইহার মধ্যে ১৪”X৬” ফুট একটি বারান্দা, এইখানে বসিয়া পাঠকবৃন্দ পুস্তকাদি অধ্যয়ন করিতে পারিবেন। ১০”X৪” ফুট একটি প্রকোষ্ঠ, এইখানে আমার ব্যবহার্য কিছু কিছু জিনিসপত্র (স্মৃতিমালা) রক্ষিত থাকিবে। অবশিষ্ট অংশ ১০”X১০” ফুট পুস্তকাগার,

লাইব্রেরী ভবনটি যে পরিমাণ জমির উপর অবস্থিত তাহার পরিমাণ ০.০৫ শতাংশ। ইহার মধ্যে ১/২ শতাংশ লাইব্রেরী ভবন, ৩/৪ শতাংশ সমাধিস্থান, ৩/৪ শতাংশ ফুলবাগান, ১X১/২ শতাংশ প্রাঙ্গণ এবং ১X১/২ শতাংশ ফল ও সবজি আবাদী জমি।

২. লাইব্রেরীর কার্যক্রম

কৃষক ও শ্রমিক অধ্যুষিত এই লামচরি গ্রামের অধিবাসীদের শিক্ষা-দীক্ষা ও আর্থিক সঙ্গতির যেমন অভাব, তেমন অভাব সময়েরও। এইসবের প্রতি লক্ষ্য রাখিয়া ও স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিগণের অভিপ্রেত অনুসারে স্থির করা হইয়াছে যে, কেবলমাত্র রবিবার বেলা ২টা হইতে রাত ১০টা পর্যন্ত লাইব্রেরীটি খোলা রাখিতে হইবে। লাইব্রেরীতে সাধাণত দুই শ্রেণীর পাঠক থাকিবে – সাধারণ পাঠক ও সদস্য পাঠক। সাধারণ পাঠকগণ বেলা ২টা হইতে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত লাইব্রেরী ভবনে বসিয়া পুস্তকাদি পড়িতে পারিবেন। ইহাদের কোন চাঁদা দিতে হইবে না। সদস্য পাঠকগণ পুস্তকাদি নিজ বাড়িতে নিয়া পড়িতে পারিবেন। এবং লাইব্রেরীর পরিচালক কমিটির নির্ধারিত হারে মাসিক চাঁদা দিতে হইবে। (বর্তমানে ইহাদের মাসিক চাঁদা তিন টাকা হারে ধার্য আছে।)

প্রকাশ থাকে যে –

ক. যদি কোন মহৎ ব্যক্তি এই লাইব্রেরীর তহবিলে এককালীন অন্যূন পাঁচশত টাকা বা তাহার সমমূল্যের কোন বস্তু দান করেন, তবে তিনি এই লাইব্রেরীর একজন ‘সদস্য পাঠক’ হইতে পারিবেন। কিন্তু তাঁহার মাসিক চাঁদা দিতে হইবে না। তবে লিখিত আবেদন করিতে হইবে।

খ. যদি কোন ব্যক্তি ‘আমার স্ববংশ’ বলিয়া পরিচিত হয়, বা সুদূর ভবিষ্যতে আমার বংশের পরিচয়পত্র অর্থাৎ ‘বংশতালিকা’ দেখাইতে সক্ষম হয়, তবে সে এই লাইব্রেরীর একজন ‘সদস্য পাঠক’ হইতে পারিবে। কিন্তু তাঁহার কোন চাঁদা দিতে হইবে না। তবে উভয়ত আবেদনপত্রসহ যথারীতি ‘সদস্য তালিকা’ ভুক্ত হইতে হইবে।

গ. কোন বিদ্যালয়ের স্থানীয় ছাত্র-ছাত্রীগণ সদস্য পাঠকদের অনুরূপ নিজ বাড়িতে নিয়া বই পড়িতে পারিবে, অথচ তাহাদের মাসিক চাঁদা দিতে হইবে না। কিন্তু তাহাদের অভিভাবকদের লিখিত আবেদনপত্র দ্বারা পুস্তকাদির দায়িত্ব গ্রহণ করিতে হইবে।

লাইব্রেরী ভবনটির সামনে একটি বারান্দা নির্মাণের ব্যবস্থা রাখা হইয়াছে। তাহা নির্মিত হইলে সেখানে একটি নৈশ বিদ্যালয় খোলার পরিকল্পনা আছে।

৩. লাইব্রেরীর পরিচালক ও পরিচারক

আমার অবর্তমানে লাইব্রেরীটির একজন পরিচালক ও একজন পরিচারক আবশ্যক হইবে, পরিচালক লাইব্রেরীর পুস্তকাদি রক্ষণাবেক্ষণ, আদান-প্রদান, শৃঙ্খলারক্ষা ও আয়-ব্যয়ের হিসাবপত্র রক্ষা করিবেন, এবং পরিচালক লাইব্রেরীর সরহদ্দের প্রত্যেকটি অংশের সৌন্দর্য রক্ষণ ও তাহা বৃদ্ধির জন্য সচেষ্ট থাকিবেন। তাহারা উভয়ে একযোগে লাইব্রেরী সংলগ্ন যে ১X১/২ শতাংশ ফল ও সবজি আবাদী জমি আছে, তাহাতে কোন ফল বা সবজি জন্মাইয়া তাহা ভোগ করিতে পারিবেন। ইহা ছাড়া আপাতত আমি তাহাদের উভয়ের জন্য বার্ষিক মং ৪৫০.০০ চারিশত পঞ্চাশ টাকা ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করিয়া যাইতেছি, তবে আমি কর্মক্ষম থাকা পর্যন্ত উক্ত পরিচালক ও পরিচারকের কাজ আমিই করিব।

এখানে উল্লেখ্য, লাইব্রেরী কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ভাতা গ্রহণে কাজ করিতে ইচ্ছুক, এইরূপ সম-যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীগণের মধ্যে আমার বংশের লোকের দাবী অগ্রগণ্য হইবে।

৪. লাইব্রেরী স্থানান্তর

এইরূপ কোন ঘটনা না ঘটুক – যদি কোন নৈসর্গিক কারণে (নদী সিকস্তী বা অন্য কিছু) আমার প্রতিষ্ঠানটি স্থানান্তর করিবার আবশ্যক হইয়া পড়ে, তবে তাহা পার্শ্ববর্তী মৌজা বা এই (চরবাড়িয়া) ইউনিয়নের অন্য কোন সুবিধামত স্থানে স্থানান্তরিত করিবার জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাহায্য প্রার্থনা করিতে হইবে (হয়ত তখন ইউনিয়ন পরিষদের স্থলে মিউনিসিপ্যাল কমিটিও হইতে পারে)। কিন্তু সেই কাজে ইউনিয়ন পরিষদ বা মিউনিসিপ্যাল কমিটি যদি অপারগ হয় বা অসম্মতি জানায়, তবে আমার লাইব্রেরীর পুস্তকাদি বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরীর অধিকারে ছাড়িয়া দিতে হইবে। কেননা বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরী আমার জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

উপরোক্ত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে লাইব্রেরীর পরিচালক ও সেরেস্তাদি না থাকার দরুন সাধারণ তহবিলের ব্যয় সাশ্রয়ের ফলে ‘উদ্ধৃত তহবিল’-এ অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পাইবে। তখন উদ্ধৃত তহবিলের সেই অর্থ দ্বারা নির্ধারিত নিয়মে বৃত্তিদানযোগ্য বিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়াইতে হইবে এবং তখন ‘সংরক্ষিত তহবিল’-এর লভ্যাংশের টাকাও এই কাজে ব্যয়িত হইবে।

আলোচ্য অবস্থায় লাইব্রেরীর ‘পরিচালক কমিটি ভুক্ত একমাত্র সভাপতি (জেলা প্রশাসক) ভিন্ন অন্য কোনো সদস্য বহাল থাকিবেন না। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ বা মিউনিসিপ্যাল কমিটি তখন জেলা প্রশাসকের কর্তৃত্বাধীনে বিদ্যালয়সমূহে যথানিয়মে বৃত্তিদান করিবেন।

পরিশেষে উক্ত অবস্থায় আমার সমাধিস্থ মৃত-অঙ্গপূর্ণ কাঁচের বৈয়মটি এবং লাইব্রেরীর প্রকোষ্ঠে রক্ষিত ‘বস্তুমালা’ (যথাসম্ভব) দেশের কোনও যাদুঘরে রক্ষা করা কাম্য।

৫. বৃত্তিদান

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশুনার আনন্দ ও উৎসাহ বর্ধনের উদ্দেশ্যে ‘প্রতিযোগিতামূলক বৃত্তি’ প্রদানের একটি নিয়ম প্রবর্তন ও প্রদান করিয়াছিলাম আমি ১৩৮৬ সালে, দুইটি বিদ্যালয়ের জন্য। কিন্তু ১৩৮৭ সালে বৃত্তি প্রদান করা হইয়াছে তিনটিতে। যথা- (ক) উত্তর লামচরি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, (খ) দক্ষিন লামচরি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, (গ) চরমোনাই (মাদ্রাসা) সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। ইহা ছাড়া বর্তমান (১৩৮৮) সালে অন্য আর একটি বিদ্যালয়ে বৃত্তিদানের আশা পোষণ করি এবং সেইটি হইবে চরবাড়িয়া লামচরি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। সুতরাং বর্তমানে আমার বরাদ্দকৃত বৃত্তিদানযোগ্য বিদ্যালয়ের সংখ্যা চারটি।

প্রত্যেক শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে যে ছাত্র বা ছাত্রীটি বার্ষিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করিবে, সে-ই উক্ত পুরস্কার পাইবে। প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ে বার্ষিক এককালীন বৃত্তি প্রদানের অর্থের পরিমাণ হইবে নিম্নরূপ –

প্রথম শ্রেণী = ১০.০০ টাকা

দ্বিতীয় শ্রেণী = ১৫.০০ টাকা

তৃতীয় শ্রেণী = ২০.00 টাকা

চতুর্থ শ্রেণী = ২৫.০০ টাকা

পঞ্চম শ্রেণী = ৩০.০০ টাকা


মোট =  ১০০.০০ টাকা

(চারি বিদ্যালয়ে মোট ৪০০.০০ টাকা)

বৃত্তিদানের নির্দিষ্ট তারিখের পূর্বে প্রত্যেকটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে তাঁহার বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারী ছাত্র বা ছাত্রীদের নামের তালিকা পাঠাইতে অনুরোধ জানাইতে হইবে।

বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষার অব্যবহিত পরেই বৃত্তিদান করা সমীচীন। কিন্তু অনিবার্য কারণে ১৩৮৬-১৩৮৭ সালের বৃত্তিদান করা হইয়াছে যথাক্রমে ১১ই মাঘ ১৩৮৭ ও ২০শে বৈশাখ ১৩৮৮ তারিখে। ভবিষ্যৎ বৎসরগুলিতে প্রত্যেক ‘পৌষ মাসের শেষ রবিবার’- এ বৃত্তিদানের তারিখ ধার্য হওয়া কাম্য, কেননা ‘জন্মদিন’ না হইলেও পৌষ আমার ‘জন্মমাস’ বটে। পরিচালক কর্তৃপক্ষ সেইদিকে লক্ষ্য রাখিবেন।

প্রকাশ থাকে যে, বর্তমানে বৃত্তিদানযোগ্য বিদ্যালয়ের সংখ্যা মাত্র চারিটি। কিন্তু অনুকূল অবস্থার দরুন আর্থিক স্বচ্ছলতা দেখা দিলে ভবিষ্যতে বৃত্তিদানযোগ্য বিদ্যালয়ের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে আরও বাড়ানো যাইবে এবং তাহা যদি সম্ভব হয়, তবে এই লাইব্রেরীটি হইতে অপেক্ষাকৃত অল্প দূরত্বের বিদ্যালয়সমূহকে অগ্রে নির্বাচিত করিতে হইবে, পরে যথাক্রমে দূর হইতে দূরতর বিদ্যালয় নির্বাচিত হইতে পারিবে। বৃত্তিটির নাম হইবে ‘আরজ বৃত্তি’।

[এতদ্ভিন্ন ট্রাস্টনামা সম্পাদনের পরের পরিকল্পনা মোতাবেক ঘোষণা করছি যে, লামচরি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে প্রত্যেক শ্রেণীর প্রথম স্থান অধিকারী ছাত্র বা ছাত্রীকে এককালীন মং ১৫০.০০ টাকা বৃত্তিদান করতে হবে। বৃত্তিদানের তারিখ থাকবে প্রতিবছর পৌষ মাসের শেষ রবিবারে অর্থাৎ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃত্তিদানের একই দিনে। বৃত্তিদানের তারিখের পূর্বে যথাযোগ্য ছাত্র বা ছাত্রীর পরিচয়পত্রসহ (নির্ধারিত তারিখে বৃত্তি গ্রহণের উদ্দেশ্যে) লাইব্রেরী ভবনে তাদেরকে পাঠানোর জন্য বিদ্যালয়ের প্রথম শিক্ষককে অনুরোধ জানাতে হবে। বৃত্তিদানের পরিমাণ হবে নিম্নরূপ –

৬ষ্ঠ শ্রেণী = ২০.০০ টাকা

৭ম শ্রেণী = ২৫.০০ টাকা

৮ম শ্রেণী = ৩০.০০ টাকা

৯ম শ্রেণী = ৩৫.০০ টাকা

১০ম শ্রেণী = ৪০.০০ টাকা


মোট = ১৫০.০০ টাকা

এমন না হোক, যদি কোন কারণে উক্ত বিদ্যালয়টি বর্তমান বা চালু না থাকে, তবে অপেক্ষাকৃত নিকটতম কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে নির্ধারিত নিয়মে বৃত্তিদান করতে হবে এবং তা অনন্তকাল চলবে।]

৬. পুরস্কার প্রদান

মানবকল্যাণের উদ্দেশ্যে ‘বিশ্বমানবতা’ বনাম ‘মানবধর্ম’-এর উৎকর্ষজনক একটি উৎকৃষ্ট প্রবন্ধ রচনার জন্য রচয়িতাকে বার্ষিক মং ১০০.০০ টাকা (প্রতিযোগিতামূলক) পুরস্কার প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীগণের মধ্যে এই পুরস্কার বিতরণ করা যাইবে। এই মর্মে প্রবন্ধ সংগ্রহ ও পুরস্কার প্রদানানুষ্ঠান সম্পাদনার জন্য উক্ত বিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাইতে হইবে। আমি আশা করি যে, বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ আমার এই কাজে সহযোগিতা দান করিবেন। কর্তৃপক্ষের নির্দেশিত তারিখে বা তৎপূর্বে বিভাগীয় প্রধানের কাছে উক্ত টাকা পাঠাইতে হইবে এবং এই পুরস্কার আবহমানকাল চলিতে থাকিবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ যদি আমার প্রদত্ত অর্থের ন্যূনতা বা এই কাজটিকে ‘বাহুল্য ঝামেলা’ মনে করিয়া অথবা অন্য কোন কারণে আমার ঈপ্সিত পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানটি সম্পাদনায় অসম্মতি জানান, তবে উক্ত টাকার দ্বারা অতিরিক্ত একটি স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যথানিয়মে বৃত্তি প্রদান করিতে হইবে।

৭. সমাধি ভবন

লাইব্রেরী ভবনের সরহদ্দের মধ্যে আমি আমার জন্য একটি পাকা সমাধি ভবন নির্মাণ করিয়াছি এবং আমার ৮০ তম জন্মদিনে (৩রা পৌষ ১৩৮৬) আমার দেহের মৃত অংশসমূহ যথা – চুল, দাঁড়ি, নখ ও কিছুসংখ্যক দাঁত আনুষ্ঠানিকভাবে তন্মধ্যে সমাধিস্থ করিয়াছি। আমার মনে হয় যে, আমার শবদেহটি সমাধিস্থ করিবার চরম অনুষ্ঠান ইহাই। কেননা লঞ্চডুবি, ট্রেন দুর্ঘটনা ইত্যাদি কারণে এমনভাবে আমার মৃত্যু ঘটিতে পারে, যাহাতে ওয়ারিশগণ আমার মৃতদেহ দাফন করিবার জন্য সুযোগ নাও পাইতে পারে; সর্বোপরি – কোনরূপ বাধার সম্মুখীন না হইলে, মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের মঙ্গল ও দেশের তথা জাতির মঙ্গল কামনায় আমি আমার শবদেহটি বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজে দান করিবার জন্য আশা পোষণ করি।

আমার সমাধি ভবনটি আমি পরম আনন্দের সহিত লাইব্রেরী ভবনটির সঙ্গে সম্পর্কিত করিয়া নির্মাণ করিয়াছি এবং আশা করিতেছি যে, ঐটি সুরক্ষিত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত রাখিবার দায়িত্বভার লাইব্রেরী কর্তৃপক্ষ বহন করিবেন। ইহার মেরামতাদি কাজের ব্যয়ভার বহন করা হইবে আমার ‘সংরক্ষিত তহবিল’- এর মুনাফার টাকা হইতে।

৮. জন্মদিবস উদযাপন

প্রথমেই বলা হইয়াছে যে, জন্ম আমার ৩রা পৌষ, ১৩০৭ সালে। সুতরাং আমার বর্তমান (১৩৮৮) বয়স প্রায় ৮১ বৎসর। আমি আমার ৬০ বৎসর বয়স হইতে ‘জন্মদিবস’ অনুষ্ঠান পালন করিয়া আসিতেছি। এবং আমি আশা করি যে, তাহা আমরণ পালন করিব। আর ইহাও আশা করি যে, মৃত্যুর পরেও আমার ‘জন্মদিবস’টি যথারীতি প্রতিপালিত হইবে। তবে সে জন্য বিশেষ কোন আড়ম্বর আবশ্যক হইবে না। শুধু ঐ দিনটির সার্থকতা রক্ষার উদ্দেশ্যে লাইব্রেরীর পরিচালক কমিটির বার্ষিক অধিবেশন প্রতি বৎসর ৩রা পৌষ তারিখে (আমার জন্মদিনটিতে) হওয়া বাঞ্ছনীয়।

৯. মৃত্যুদিবস উদযাপন

আমি আশা করি যে, জন্মদিনটির মত আমার মৃত্যুদিনটিও প্রতিপালিত হইবে। সেই দিনটিতে থাকিবে স্থানীয় এতিম, মিসকিন ও দীন-দুঃখীদের কিঞ্চিৎ  দান-খয়রাতের ব্যবস্থা। সেই উদ্দেশ্যে আমি বার্ষিক মং ১০০.০০ টাকা করিয়া ব্যয় বরাদ্দ করিয়াছি। এবং দানের নিয়মাবলী আমার ‘অছিয়তনামা’-এ (আমার ওয়ারিশগণের প্রতি) লিপিবদ্ধ করিয়াছি। আমার মৃত্যুর পূর্বে উক্ত ১০০.০০ টাকা আমার জন্মদিনে দান করা হইবে।

১০. অতিথি সেবা

বার্ষিক অধিবেশনে কিংবা আমার প্রতিষ্ঠানসমূহ দর্শনাভিলাষে যদি কোন দূরাঞ্চলের পর্যটক অতিথি আসেন, তবে তাহাদের সাদর অভ্যর্থনার জন্য বার্ষিক মং ৩০০.০০ টাকা করিয়া ব্যয় বরাদ্দ করিয়াছি। আবশ্যক ও সম্ভব হইলে কার্যকরী কমিটি ইহার পরিবর্তন ও পরিবর্ধন  করিতে পারিবেন।

১১. আরজ ফান্ড

আমার প্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যয়ভার বহনের উদ্দেশ্যে ‘আরজ ফান্ড’ নামে একটি ফান্ড গঠন করিয়াছি এবং তাহাতে চার শ্রেণীর তহবিল থাকিবে। যথা – (ক) বিশেষ তহবিল, (খ) সাধারণ তহবিল, (গ) উদ্ধৃত তহবিল, (ঘ) সংরক্ষিত তহবিল। উল্লেখ্য যে, উদ্ধৃত তহবিলের টাকা বিশেষ তহবিলের সঙ্গে একত্রে ব্যাংকে মজুত থাকিবে।

ক. বিশেষ তহবিল – এই তহবিলটি গঠনের উদ্দেশ্যে আপাতত মং ১০,০০০.০০ (দশ হাজার) টাকা বরিশাল জনতা ব্যাংকে (চেক নং এফ.ডি. ৩৬৬১১২/১০৮ তাং ৩-৪-৭৯) মজুত রাখা হইয়াছে। বর্তমান রেওয়াজ মোতাবেক উক্ত টাকার সুদ বাবদ বার্ষিক মং ১৫০০.০০ টাকা মুনাফা পাওয়া যাইবে। উক্ত মুনাফার টাকা হইতে বার্ষিক মং ১৪৫০.০০ টাকা সাধারণ তহবিলে জমা হইবে। অবশিষ্ট ৫০.০০ টাকা (সুদ ও তস্য সুদ সমস্তই) ব্যাংকের তহবিলে মজুত থাকিবে। সেই মজুত তহবিলের টাকাকে (প্রাথমিক মজুত দশ হাজার বাদে) উদ্ধৃত তহবিল বলা যাইবে। ‘বিশেষ তহবিল’ ভুক্ত টাকা কখনো তোলা যাইবে না।

[এতদ্ভিন্ন ট্রাস্টনামা সম্পাদনের পরের পরিকল্পনা মোতাবেক ঘোষিত হচ্ছে যে, লামচরি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রথম স্থান অধিকারী ছাত্র বা ছাত্রীকে বৃত্তিদানের উদ্দেশ্যে জনতা ব্যাংকে (বরিশাল চকবাজার শাখা, হিং নং এফ.ডি. ০৬২০২৪/২১৪, তাং ২৮-৬-৮২) মং ৩৩৫.০০ টাকা স্থায়ী আমানত রাখা হয়েছে এবং অচিরেই আরও ৬৬৫.০০ টাকা আমানত রাখা হবে। তখন এর মোট তহবিল দাঁড়াবে মং ১০০০.০০ টাকা এবং বর্তমান রেওয়াজ (শতকরা ১৫ টাকা) মোতাবেক তাতে বার্ষিক মং ১৫০.০০ টাকা সুদ পাওয়া যাবে। সেই সুদের টাকা দ্বারা সম্পাদিত ট্রাস্টনামার ৫নং দফের শেষভাবে বন্ধনীর মধ্যে লিখিত নিয়ম মতে বৃত্তি প্রদান করতে হবে। সুদের হার বৃদ্ধির দরুন ভবিষতে কখনো বিশেষ তহবিলের টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে তা সাধারণ তহবিলে (১১-খ নং দফে) ভুক্ত হবে।

মূল তহবিলের ১০০০.০০ টাকা কখনো তোলা যাবে না।]

খ. সাধারণ তহবিল – সাধারণ তহবিলের আয়ের প্রধান উৎস হইবে বিশেষ তহবিল হইতে প্রাপ্ত বার্ষিক মং ১৪৫০.০০ টাকা করিয়া। ইহা ছাড়া অন্যান্য বাবদ প্রাপ্ত টাকা, যথা- সরকারী বা আধা সরকারী, অথবা অন্য কোন মহৎ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দান-অনুদান, এবং আমার লেখা ‘সত্যের সন্ধান’ বই (২০০ কপি)-এর বিক্রয়লব্ধ অর্থ, সাধারণ তহবিলের এই সমস্ত টাকা বর্তমানে নিম্নলিখিত রূপ ব্যয় করা যাইবে এবং অবশিষ্ট টাকা যথাযোগ্য স্থানে ব্যয়িত হইবে।

(i). বিদ্যালয়সমূহে বৃত্তিদান — ৪০০.০০ টাকা

(ii). পুরস্কার প্রদান (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের মারফতে) — ১০০.০০ টাকা

(iii). অতিথি সেবা — ৩০০.০০ টাকা

(iv). পরিচালক ও পরিচারক ভাতা — ৪৫০.০০ টাকা

(v). মৃত্যুদিনে দান — ১০০.০০ টাকা

(vi). সেরেস্তা খরচ — ১০০.০০ টাকা


মোট = ১৪৫০.০০ টাকা

প্রকাশ থাকে যে, আমার অবর্তমানে সাধারণ তহবিলের তাবৎ টাকাই লাইব্রেরী কর্তৃপক্ষের অধিকারে থাকিবে, তবে ১০০.০০ টাকার অধিক হাতে রাখা যাইবে না, হইলে তাহা কোন ব্যাংকে মজুত রাখিতে হইবে এবং লাইব্রেরী পরিচালক কমিটির মঞ্জুরী অথবা কমিটির সভাপতি সাহেবের অনুমোদন ছাড়া ৫০.০০ টাকার অধিক কোন কাজে ব্যয় করা যাইবে না।

গ. উদ্ধৃত তহবিল – উদ্ধৃত তহবিলের টাকার পরিমাণ আপাতত বার্ষিক মাত্র ৫০.০০ টাকা। এই তহবিলের টাকার পরিমাণ (মায় সুদ ও আসল) যখনই কিঞ্চিতাধিক ৭০০.০০ টাকা হইবে, তখনই তাহা হইতে মং ৭০০.০০ টাকা বিশেষ থবিলেভুক্ত হইবে এবং বিশেষ তহবিলের টাকার পরিমাণ তখন ১০,০০০.০০ টাকার স্থলে ১০,৭০০.০০ টাকা হইবে।  তাই ইহার পরের বৎসর বিশেষ তহবিল হইতে মং ১৪৫০.০০ টাকার স্থলে ১৫৫০.০০ টাকা সাধারণ তহবিলে ভুক্ত হইবে। তখন সাধারণ তহবিলের সেই বর্ধিত মং ১০০.00 টাকা দ্বারা নিয়মমাফিক একটি নূতন বিদ্যালয় মনোনীত করিয়া তাহাতে যথারীতি বৃত্তিদান করা যাইবে।

উদ্ধৃত তহবিলের টাকার দ্বারা উপরোক্ত নিয়মে আবহমানকাল বৃত্তিদানযোগ্য বিদ্যালয়ের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাইতে থাকিবে।

ঘ. সংরক্ষিত তহবিল – এই তহবিলটি গঠনের উদ্দেশ্যে জনতা ব্যাংকে (বরিশাল চকবাজার শাখা এফ.ডি. নং ৩৬৬১৬৭/৬০, তাং ১৪-৭-৮১) মবলগ ৫০০.০০ টাকা স্থায়ী আমানত রাখা হইয়াছে।

কোনও আকস্মিক দুর্ঘটনা বা স্বাভাবিক ক্ষয়ের দরুন লাইব্রেরী ভবন বা আমার সামধি ভবনটি মেরামত করিবার আবশ্যক হইলে তাহাতে এই তহবিলের লভ্যাংশের টাকা ব্যয় করা হইবে, অন্য কোন কাজে কখনো ব্য্য করা যাইবে না এবং উহার আসল টাকা কখনো তোলা যাইবে না।

১২. আরজ মঞ্জিল লাইব্রেরী কমিটি

আমার উৎসর্গিত প্রতিষ্ঠানটির রক্ষনাবেক্ষণ ও পরিচালনা সংক্রান্ত সার্বিক ক্ষমতা, অধিকার ও উপর ন্যস্ত থাকিবে।

তাহার নাম হইবে – (১) পরিচালন কমিটি ও (২) কার্য নির্বাহক কমিটি, সংক্ষেপে ‘নির্বাহী কমিটি।

(১). পরিচালন কমিটি – প্রতিষ্ঠান পরিচালনার সার্বিক ক্ষমতা ও অধিকার এই কমিটির উপর ন্যস্ত থাকিবে এবং তিন শ্রেণীর ১১ জন সদস্য লইয়া পরিচালন কমিটি গঠিত হইবে।

(ক).  সরকারী পর্যায়ে সদস্য ৩ জন – ইহার মধ্যে (পদাধিকার বলে সভাপতি) জেলা প্রশাসক বা তাঁহার মনোনীত সদস্য ১ জন, শিক্ষাবিদ (জেলা প্রশাসক মনোনীত) ১ জন এবং ইউনিয়ন পরিষদের সভাপতি (পদাধিকার বলে) ১ জন, মোট ৩ জন।

(খ). লাইব্রেরীর পাঠকদের মধ্য হইতে নির্বাচিত সদস্য ৪ জন।

(গ). লাইব্রেরীর প্রতিষ্ঠাতা বা তাহার স্ববংশীয়দের মনোনীত বা নির্বাচিত সদস্য ৪ জন। মোট ১১ জন।

প্রকাশ থাকে যে, যদি কোন মহৎ ব্যক্তি এই লাইব্রেরীটির উন্নয়নকল্পে এককালীন নগদ মং ১০০০.০০ টাকা বা তাহার সমমূল্যের কোন বস্তু দান করেন, তবে তিনি এই লাইব্রেরীর পরিচালন কমিটির একজন স্থায়ী সদস্য হইতে পারিবেন (নং ‘ঘ’) এবং তাঁহাকে ‘সহযোগী সদস্য’ বলা যাইবে। সে ক্ষেত্রে পরিচালন কমিটির সদস্য ১১ জনের অধিক হইতে পারিবে।

কমিটির সদস্যগণের মধ্যে জেলা প্রশাসক, ইউনিয়ন পরিষদের সভাপতি ও সহযোগী সদস্যের কার্যকালের কোন মেয়াদ থাকিবে না, অন্যান্য সদস্যগণের কার্যকালের মেয়াদ থাকিবে। লাইব্রেরী স্থাপনের বছর (১৩৮৬ সাল) সহ পাঁচ বছর এবং তৎপরে প্রত্যেক কমিটি গঠনের তারিখ হইতে পাঁচ বৎসর করিয়া অতঃপর নির্ধারিত নিয়মে কমিটি পুনর্গঠিত হইবে। তবে নিম্নোক্ত যেকোন সময়ে নিয়ম মাফিক উপনির্বাচন বা মনোনয়ন হইতে পারিবে।

কারণসমূহ

(ক). কোন সদস্য মারা গেলে বা কার্যে অক্ষম হইলে।

(খ). কোন সদস্য তাঁহার কর্তব্য পালনে অযোগ্য হইলে।

(গ). কোন সদস্য তাঁহার কর্তব্যকর্মে অবহেলা কিংবা প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিজনক কোন কাজ করিবার দরুন কমিটি কর্তৃক ‘সদস্য থাকার অযোগ্য’ বলিয়া ঘোষিত হইলে ইত্যাদি।

উক্ত কারণসমূহে কোন সদস্যের কোন ‘বিশেষ পদ’ শূন্য হইলে তাহা কমিটি কর্তৃক নির্বাচিত হইবে। একই ব্যক্তি সদস্যপদে পুনঃ নির্বাচিত বা মনোনীত হইতে পারিবেন।

(২). নির্বাহী কমিটি – পরিচালন কমিটির সদস্যগণের মধ্য হইতে অন্যূন ৫ জন সদস্য লইয়া ‘নির্বাহী কমিটি’ গঠিত হইবে এবং পরিচালন কমিটি কর্তৃক এই কমিটির সদস্যগণ মনোনীত বা নির্বাচিত হইবেন। তবে নির্বাহী কমিটির সম্পাদক ও লাইব্রেরী পরিচালক (লাইব্রেরিয়ান) একই ব্যক্তি থাকা সমীচীন বলিয়া মনে করি। নির্বাহী কমিটির যাবতীয় কর্তব্য নির্ধারিত হইবে এবং এই কমিটির সদস্যগণ আমার প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত যাবতীয় কর্তব্য সম্পাদন করিবেন।

১৩. পরিচালন কমিটি গঠন

১২/১ নং দফের নির্দেশ মোতাবেক নিম্নলিখিত রূপ নবগঠিত ‘পরিচালন কমিটি’ গঠিত হইতে পারে।

ক. সরকারী পর্যায়ে সদস্য ৩ জন

(১). মাননীয় বাকেরগঞ্জ জেলা প্রশাসক (পদাধিকার বলে) – সভাপতি।

(২). শিক্ষাবিদ (মাননীয় জেলা প্রশাসক মনোনীত)

জনাব মোহাম্মদ হানিফ

অধ্যক্ষ, সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ, বরিশাল – সদস্য।

(৩). মাননীয় সভাপতি, ৩ নং চরবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ, পদাধিকার বলে – সদস্য।

খ. পাঠকদের নির্বাচিত সদস্য ৪ জন

(৪). মৌ. ফজলুর রহমান বি. এ., লামচরি – সদস্য।

(৫). মৌ. মোসলেম উদ্দিন মাতুব্বর বি. এ., লামচরি – সদস্য।

(৬). মৌ. ইয়াছিন আলী সিকদার, লামচরি – সদস্য।

(৭) ডা. আব্দুল আলী সিকদার, লামচরি – সদস্য।

গ. প্রতিষ্ঠাতা বা তাঁহার মনোনীত বা নির্বাচিত সদস্য ৪ জন

(৮). অধ্যাপক কাজী গোলাম কাদির

প্রাক্তন অধ্যাপক, সরকারী ব্রজমোহন কলেজ, বরিশাল – সদস্য।

(৯) আরজ আলী মাতুব্বর (প্রতিষ্ঠাতা), লামচরি – লাওব্রেরীয়ান।

(১০) মৌ. গোলাম রসূল মোল্লা, লামচরি – সদস্য।

(১১) আব্দুল খালেক মাতুব্বর, আই. এ., লামচরি – সদস্য।

ঘ. সহযোগী সদস্য ১ জন

(১২). মৌ. মোশাররফ হোসেন মাতুব্বর, আই. এ., বরিশাল – সদস্য।

১৪. অধিবেশন

প্রতিষ্ঠানসমূহের সুষ্ঠু পরিচালনা  ও উন্নয়ন বিধানকল্পে উহার পরিচালক কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবৃন্দ সাধারণত তিন ধরনের অধিবেশনে মিলিত হইবেন। যথা – (ক) সাপ্তাহিক, (খ) মাসিক ও (গ) বার্ষিক অধিবেশন।

(ক). সাপ্তাহিক অধিবেশন – লাইব্রেরীর পাঠকগণ তাঁহাদের পাঠোন্নতি ও জ্ঞানোন্নয়নমূলক নানাবিধ আলোচনার উদ্দেশ্যে লাইব্রেরী ভবনে প্রতি রবিবার (সন্ধ্যা ৬টা হইতে অনুর্ধ রাত ১০টা) সাপ্তাহিক অধিবেশনে মিলিত হইবেন। জ্ঞাতব্য যে, পাঠক-পাঠিকা ছাড়া যে কোন জ্ঞানপিপাসু ব্যক্তি এই অধিবেশনে যোগদান করিতে ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়া বিবিধ বিষয় আলোচনা করিতে পারিবেন। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করিবেন লাইব্রেরীয়ান, তদভাবে প্রস্তাবে সমর্থিত কোন সুযোগ্য ব্যক্তি।

(খ). মাসিক অধিবেশন – নির্বাহী কমিটির সদস্যবৃন্দ সাধারণত প্রতিমাসে একবার লাইব্রেরী ভবনে অধিবেশনে মিলিত হইবেন এবং আবশ্যকীয় সব রকম আলোচনান্তে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিবেন, তবে জরুরী অধিবেশন যে কোন সময় হইতে পারিবে।

(গ). বার্ষিক অধিবেশন – পরিচালন কমিটির সদস্যবৃন্দ, সদস্য পাঠক ও সাধারণ পাঠকগণ অন্তত বৎসরে একবার (লাইব্রেরী ভবনে) অধিবেশনে মিলিত হইবেন। তবে জরুরী অধিবেশন যে কোন সময় ও যে কোন স্থানে হইতে পারিবে। উক্ত সভা প্রিতিষ্ঠানমসূহের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিকাশ, পরিচালনা পদ্ধতি ও উন্নয়ন সম্বন্ধে আলোচনা করিবে। উক্ত অধিবেশনের নির্ধারিত তারিখ থাকিবে (প্রতি বৎসর) ৩রা পৌষ। উক্ত তারিখটি আমার ‘জন্মদিন’। তাই আলোচ্য সভায় আমার জীবনের বিভিন্ন দিক ও লক্ষ্য সম্বন্ধে আলোচনা হওয়া বাঞ্ছনীয়। উক্ত অধিবেশনের খরচ বাবদ (১০ নং দফের ‘অতিথি সেবা’ খাতে) আমি আপাতত বার্ষিক মং ৩০০.০০ টাকা ব্যয় বরাদ্দ করিয়াছি। কিন্তু প্রয়োজন ও আয়োজন বোধে উহার ব্যতিক্রম হইতে পারিবে।

১৫. লিপিমালা ও স্মৃতিমালা

ক. লিপিমালা – আমার লিখিত অপ্রকাশিত পুস্তক ও অন্যান্য হস্তলিপি (খাতা) সমূহকে কালের স্বাভাবিক ক্ষয় হইতে রক্ষা করিতে হইবে। হস্তলিপি খাতাসমূহের লেখা, কাগজ ও বাঁধাই নষ্ট হইবার পূর্বে তাহা নকল (Copy) করাইতে হইবে। সেজন্য যে কাগজপত্র ও নকলকারকের মজুরী ইত্যাদি বাবদ অর্থের আবশ্যক হইবে, তাহা আমার ;সাধারণ তহবিল’ হইতে বহন করা হইবে। হস্তলিপিসমূহের একটি তালিকা নিম্নে দেওয়া গেল।

(১). সীজের ফুল (কবিতা পুস্তক) – ১ খানা

(২). সরল ক্ষেত্রফল (গণিত পুস্তক) – ১ খানা

(৩). জীবন বাণী (সংক্ষিপ্ত আত্মজীবনী) – ১ খানা

(৪). ভিখারীর আত্মকাহিনী (আত্মজীবনী) – ১ খানা

(৫). কৃষকের ভাগ্য ‘গ্রহ’ (প্রবন্ধ) – ১ খানা

(৬). বেদের অবদান (প্রবন্ধ) – ১ খানা

(৭). ঘটনাবলী (খাতা) (১ম ও ২য় খন্ড) – ২ খানা

(৮). জন্ম-মৃত্যু (খাতা) – ১ খানা

(৯). বংশাবলী (খাতা) – ১ খানা

(১০). বংশ পরিচয় (খাতা) – ১ খানা

(১১). অধ্যয়ন সার (খাতা) (১-৪ নম্বর) – ৪ খানা

(১২). ডাইরী (খাতা) (১৩৪৪ ) ১৩৫৮ – ১৩৮৭ সাল) – ৩১ খানা

(১৩). জমা-খরচ (খাতা) (১৩৩২ – ১৩৪১ সাল) – ১০ খানা

(১৪). জমা-খরচ (খাতা) ১৩৪৩ – ১৩৪৭ সাল) – ৫ খানা

(১৫). জমা-খরচ (খাতা) (১৩৫০ – ১৩৫১ সাল) – ২ খানা

(১৬). জমা-খরচ (খাতা) (১৩৫৮ – ১৩৮৭ সাল) – ৩০ খানা

খ. স্মৃতিমালা – লাইব্রেরী ভবনটির উত্তরাংশে একটি ক্ষুদ্র প্রকোষ্ঠ নির্মাণ করা হইয়াছে। আমার জীবনের বিভিন্ন স্তরের নির্মিত ও ব্যবহার্য কিছু কিছু বস্তু সেখানে আমার ‘স্মৃতিচিহ্নস্বরূপ’ মজুত থাকিবে। তবে কোন কোন বস্তু মজুদ থাকিবে, তাহা এখনো বলা যাইতেছে না, পরে রক্ষিত বস্তুসমূহের একটি তালিকা তৎসঙ্গে রাখা হইবে। ‘স্মৃতিমালা’ রক্ষার জন্য বিশেষ কোন অর্থব্যয়ের আবশ্যক হইবে না, কিন্তু আবশ্যক হইবে লাইব্রেরী পরিচালক মহোদয় ও সদস্যবৃন্দের আন্তরিকতাপূর্ণ সহানুভূতির।

প্রকাশ থাকে যে, ‘স্মৃতিমালা’-এর তালিকাভুক্ত কোনো বস্তু কোনো কাজে কাহাকেও ব্যবহার করিতে বা কোনো বস্তু প্রকোষ্ঠের বাহিরে নিতে দেওয়া যাইবে না। ‘স্মৃতিমালা’র বস্তুসমূহ জনগণের শুধু দর্শনীয় মাত্র, স্পর্শযোগ্য নহে।

১৬. ক্ষমতা

এতদ্বারা আমার প্রতিষ্ঠানসমূহের পরিচালনা সংক্রান্ত যাবতীয় ক্ষমতা লাইব্রেরীর পরিচালন কমিটির উপর সোপর্দ করা হইল। কিন্তু অতঃপর লাইব্রেরী পরিচালনা সংক্রান্ত কোন ‘নিয়মাবলী’ প্রণয়নের ক্ষমতা আমার অধিকারে থাকিল।

তপছিল সম্পত্তি

ক. জিলা বরিশাল সাবরেজিষ্টার কোতয়ালী থানা ২৫ নং তৌজির মালিক বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে C. O. (Rev.) কোতয়ালী অধীন জে. এল. ৯৪ নং চরবাড়িয়া লামচরি মৌজায় S. A – ২৭৭ (দুইশত সাতাত্তর) নং খতিয়ানে কর্সা বার্ষিক জমা মং ১৯/৩১ পয়সা। মোট জমি ৩ – ১৮ শতাংশ। ইহার হিং ৩ (তিন) গণ্ডা অংশ অত্র দলিলের স্বত্ব। রসদ জমা .১০ পয়সা জমির হাল ১৫৯৩ (পনের শত তিরানব্বই) নং দাগের জমি হইতে রসদীয় জমি – .৩ (তিন) শতাংশ দলিলের স্বত্ব। মূল্য ১৫০০.০০ টাকা।

খ. জিলা থানা সাব রেজিষ্টার তৌজি মৌজা ঐ মধ্যে S. A – ২৮০ (দুই শত আশি) নং খতিয়ানে কর্সা বার্ষিক জমা মং ১২/৯৪ পয়সা। মোট জমি ২ – ৪৪ শতাংশ। ইহার হিং ২.৭৫ (পৌণে তিন) গণ্ডা অংশ দলিলের স্বত্ব। জমির হাল ১৭২৪ (সতের শত চব্বিশ) নং দাগের জমি হইতে – .২ দুই শতাংশ অত্র দলিলের স্বত্ব। মূল্য মং ১০০০.০০ টাকা। উল্লিখিত ১৭২৪ নং দাগের উপরে পাকা লাইব্রেরী ভবনটি অবস্থিত।

গ. লাইব্রেরীর ভবনময় আসবাবপত্র – মং ৩০,০০০.০০ টাকা

ঘ. দেওয়াল নির্মাণ – মং ১০০০.০০ টাকা

ঙ. সমাধি নির্মাণ – মং ১৫০০.০০ টাকা

চ. কপিরাইট  (১) সত্যের সন্ধান – মং ২০০০.০০ টাকা

                       (২) স্রিষ্টিও-রহস্য – মং ৩০০০.০০০ টাকা

ছ. সত্যের সন্ধান পুস্তক দুইশত কপি – মং ৩০০০.০০ টাকা

জ. পুস্তকাদি – মং ৭০০০.০০ টাকা

ঝ. স্থায়ী আমানত – মং ১০,০০০.০০ টাকা


মোট = মং ৬০,০০০.০০ টাকা

কৈফিয়ত – অত্র দলিলের ১৩ পাতায় ১০ ছত্রে ‘সরকারী’ শব্দ তোলা লিখা এবং ২৮ পাতায় ১৩ ছত্রে ‘বা মনোনীত’ শব্দ তোলা লিখা ও ৩২ পাতায় ২য় ছত্রে ‘করিবেন’ শব্দ তোলা লিখা ও ৩৩ স্ট্যাম্প মোট – ৪০ ফর্দ।

লিখকসহ ইসাদি ৪ জন।

(স্বা. আরজ আলী মাতুব্বর)

লিখক

মোহাম্মদ হোসেন

সাং – চরবাড়িয়া ম – ১৩৫০

রে নং – ৩১৭

ইসাদি ইসাদি ও পরিচিত ইসাদি
মো. ইয়াছিন আলী সিকদার
সাং – লামচরি
আব্দুল মালেক মাতুব্বর
পিং আরজ আলী মাতুব্বর
সাং – লামচরি
মো. গোলাম রসূল মোল্লা
সাং – লামচরি

খ. মৃতদেহ দানপত্র

রে. তাং ………                   দলিল নং ………

গ্রহীতা –

১। বাংলাদেশ সরকার পক্ষে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজের মাননীয় অধ্যক্ষ।

দাতা –

১। আরজ আলী মাতুব্বর, পিতা মৃত এন্তাজ আলী মাতুব্বর, সাকিন – লামচরি, থানা – কোতয়ালী, জিলা – বরিশাল, জাতি – মুসলমান, পেশা – হালুটী।

কস্য মৃতদেহ দান পত্রমিদং কার্যঞ্চাগে আমি মানব কল্যাণের উদ্দেশ্যে মৃত্যুর পর আমার মৃতদেহটি বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজে দান করিলাম। কলেজ কর্তৃপক্ষ আমার মৃতদেহটি দ্বারা উক্ত কলেজের উন্নয়ন ও জনকল্যাণমূলক যে কোন কাজ করিতে পারিবেন। আমার মৃত্যুর পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমার ওয়ারিসগন আমার মৃতদেহটি কলেজ কর্তৃপক্ষের নিকট পৌঁছাইয়া দিবে। কিন্তু কোন কারণে যদি আমার এমন কোন স্থানে মৃত্যু ঘটে, যাহাতে আমার মৃতদেহটি আমার ওয়ারিসগণের আয়ত্বে না থাকে, তবে তাহারা আমার মৃত্যুর সঠিক তারিখ ও মৃত্যুর নির্দিষ্ট স্থানের নাম অবিলম্বে কলেজ কর্তৃপক্ষকে জ্ঞাত করাইবে। কলেজ কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করিলে এবং সম্ভব হইলে তাঁহাদের দায়িত্বে কলেজের কাজে ব্যবহারের জন্য আমার মৃতদেহটি আনাইয়া লইতে পারিবেন। তাহাতে আমার ওয়ারিসদের কোন ওজরাপত্তি থাকিবেনা।

প্রকাশ থাকে যে, আমার চক্ষুদ্বয় চক্ষু ব্যাংকে দান করা বাঞ্ছনীয়।

এতদার্থে আমি আমার সরল মনে, সুস্থ শরীরে, স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে অত্র দানপত্র দলিল লিখিয়া সম্পাদন করিয়া দিলাম। ইতি সন ১৩৮৮ সনের ১৯শে অগ্রহায়ণ, ইং তাং ৫-১২-৮১।

কৈফিয়ত – অত্র দলিলের প্রথম পাতায় আট ছত্রে ‘মেডিক্যাল’ শব্দ তোলা লিখা।

রেফ – ২ ফর্দ।

লিখকসহ ইসাদি ৪ জন।

(স্বা. আরজ আলী মাতুব্বর)

লিখক

মোহাম্মদ হোসেন

সাং – চরবাড়িয়া L. 1350

ইসাদি ইসাদি ও পরিচিত ইসাদি
মো. ইয়াছিন আলী সিকদার
সাং – লামচরি
আব্দুল মালেক মাতুব্বর
পিং আরজ আলী মাতুব্বর
সাং – লামচরি
মো. গোলাম রসূল মোল্লা
সাং – লামচরি

গ. অছিয়তনামা

রে তাং …………           দলিল নং ………

লিখিতাং আরজ আলী মাতুব্বর, পিতা মৃত এন্তাজ আলী মাতুব্বর, সাং – লামচরি, থাকা – কোতয়ালী, জিলা – বরিশাল, জাতি – মুসলমান, পেশা – হালুটী।

কস্য অছিয়তনামা পত্রমিদং কার্যঞ্চাগে (১) আব্দুল মালেক মাতুব্বর (পুত্র), (২) আব্দুল খালেক মাতুব্বর (পুত্র), (৩) আব্দুল বারেক মাতুব্বর (পুত্র), (৪) মোসাম্মৎ ফয়জরন নেছা (কন্যা), (৫) মোসাম্মৎ নুরজাহান বেগম (কন্যা), (৬) মোসাম্মৎ মনোয়ারা বেগম (কন্যা), (৭) মোসাম্মৎ বিয়াম্মা বেগম (কন্যা), (৮) মোসাম্মৎ সুফিয়া খাতুন (স্ত্রী); সাকিন – লামচরি, থানা – কোতয়ালী, জিলা – বরিশাল, জাতি – মুসলমান, পেশা – হালুটী। এতদ্বারা তোমাদিগকে অছিয়ত করা যাইতেছে যে, তোমরা আমার উত্তরাধিকারী বটে। আমার স্থাবরাস্থাবর যাবতীয় সম্পত্তির ন্যায় আমার মৃত দেহটিরও উত্তরাধিকারী তোমরাই। তোমরা জান যে, মানবকল্যাণের উদ্দেশ্যে আমার মৃতদেহটি বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কেলেজে দান করিয়া যাইতেছি, তাই আমার মৃত্যুর পর তোমাদের এই বিষয়ে ও অন্যান্য বিষয়ে কর্তব্য সম্বন্ধে লিখিত অছিয়ত করিয়া যাইতেছি। আমি আশা করি, তোমরা আমার অছিয়ত সমূহ পালন করিবা, কিন্তু যদি আমি এমন কোন স্থানে মারা যাই যাহাতে আমার মৃতদেহটি তোমাদের আওতাধীন না থাকে, তবে সেই ক্ষেত্রে আমার এই বিষয়ের অছিয়ত পালনের কোন দায়িত্ব তোমাদের থাকিবে না। তবে অন্যান্য সম্বন্ধে থাকিবে।

অছিয়তসমূহ

১. মৃত্যুর পর আমার শবদেহটি জলে ধৌত পূর্বক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করিয়া (নতুন বা পুরাতন) বস্ত্রাবৃত করিবা। হয়ত খোশবু ব্যবহার করিবা। ইহাছাড়া অন্যকোন রূপ চিরাচরিত প্রথা রক্ষার জন্য উদ্বিগ্ন হইবা না।

২. আমার বিদেহী আত্মার কল্যাণের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করার জন্য কাহাকেও পীড়াপীড়ি বা সেই জন্য অর্থ ব্যয় করিবা না। তবে কাহারও স্বেচ্ছাকৃত প্রার্থনা বা আশীর্বাদ আমার অবাঞ্ছিত নহে।

৩. কোনরূপ প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটিলে ২৪ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে আমার মরদেহটি বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সাহেবের কাছে পৌঁছাইয়া দিবা।

৪. মেডিক্যাল কলেজের কর্তৃপক্ষের কাছে সোপর্দ করিবার পূর্বে তোমাদের সুবিধামত সময়ে মৃতদেহটির ফটো তুলিবা, এবং তাহার কপি এনলার্জ ও বাঁধাই করিয়া আমার লাইব্রেরী ভবনে রাখিবা।

৫. মৃত্যুর পরে বরিশাল মেডিক্যাল কলেজে আমার শবদেহটি পৌঁছাইবার ও অন্যান্য খরচ নির্বাহের উদ্দেশ্যে আমি বরিশাল জনতা ব্যাংক (চকবাজার শাখা একাউন্ট নং ৪১৫৮ তাং ২০-৭-৮২)-এ একটি সেভিংস একাউন্ট ফান্ড করিয়াছি এবং এতদুদ্দেশ্যে সেই ফান্ডে অন্যূন ৫০০.০০ টাকা সতত মজুত থাকিবে। আমার মৃতদেহটি লইয়া তোমাদের মেডিক্যাল কলেজে যাতায়াত খরচ ও ফটো তোলা ইত্যাদি যাবতীয় খরচ তোমরা সেই ফান্ড হইতে বহন করিবা এবং তোমাদের ইচ্ছা হইলে কাফন, সমাগতদের অভ্যর্থনা ইত্যাদি খরচও সেই ফান্ড হইতে বহন করিতে পারিবা।

আমার মৃতদেহটির স্মৃতি রক্ষার উদ্দেশ্যে পরবর্তী বৎসরগুলিতে আমার ‘মৃত্যুদিবস’ অনুষ্ঠান পালনের জন্য আমি বার্ষিক মং ১০০.০০ টাকা করিয়া ব্যয় বরাদ্দ করিয়া যাইতেছি এবং তাহা বহন করিতে হইবে লাইব্রেরীর সাধারণ তহবিলের টাকা হইতে, কিন্তু আমার সদ্ব্যমৃত দিনটিতে মং ১০০.০০ টাকা দান করিতে হইবে উপরোক্ত সেভিংস ফান্ডের টাকা হইতে।

৬. উপরোক্ত যাবতীয় খরচ বহনের পর যদি আমার সেভিং একাউন্টে অর্থ মজুত থাকে, তবে তাহা হইতে তোমাদের  মধ্যে যেই যেই ব্যক্তি মেডিক্যালে আমার দেহদান ব্যাপারেও সক্রিয় অংশগ্রহণ করিবা, সেই সেই ব্যক্তি তাঁহাদের পারিশ্রমিক বাবদ মোট মং ৫০.০০ টাকা গ্রহণ করিতে পারিবা। তদ্বাদে যদি উক্ত ফান্ডে কোন টাকা মজুত থাকে, তবে তাহা উক্ত ব্যাংকে আমার স্থায়ী আমানত তহবিলে (একাউন্ট নং ৩৬৬১২/১০৮ তাং ৩-৪-৭৯) জমা হইবে এবং সেই টাকার মুনাফার দ্বারা আমার মৃত্যু অনুষ্ঠানে কাঙ্গালের সংখ্যা বাড়াইয়া তাহাদের যথানিয়মে সাহায্যদান করা যাইবে। এমতাবস্থায় তখন আমার সেভিংস তহবিলে টাকা থাকিবে না।

৭. প্রতি বৎসর আমার মৃত্যু অনুষ্ঠান দিনটির পূর্বে লাইব্রেরীর নির্বাহী কমিটির স্থানীয় সদস্যদের যে কোন তিনজনের পরামর্শ লইয়া আমার নিকটতম প্রতিবেশি কাঙ্গাল হইতে ক্রমশ দূরবর্তী ২০ জন কাঙ্গাল-কাঙ্গালীকে মনোনীত ও আমন্ত্রণ করিয়া তাহাদের প্রত্যেককে মং ৫.০০ টাকা করিয়া (মোট ১০০ টাকা) সাহায্যদান করিতে হইবে। তবে সেভিংস একাউন্টের টাকার দ্বারা তহবিল বৃদ্ধি পাইলে তদ্বারা কাঙ্গাল-কাঙ্গালীর সংখ্যা বাড়াইতে পারা যাইবে।

৮. আমার বংশাবলীর মধ্যে (পুরুষ বা নারী) বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির দ্বারা কাঙ্গাল-কাঙ্গালীদের হাতে সাহায্যদান করিতে হইবে। তদভাবে নির্বাহী কমিটির সম্পাদক উক্ত সাহায্যদান করিবেন।

৯. এমন কখনো না হউক – যদি আমার বংশাবলীর মধ্যে (পুরুষ বা নারী) কেহ জীবিত না থাকে, তখনও লাইব্রেরীর নির্বাহী কমিটির সম্পাদকের দ্বারা আমার মৃত্যুদিনে নির্ধারিত মং ১০০.০০ টাকা সাহায্যদান করিতে হইবে।

১০. তোমরা আমার (পুত্রগণ) লাইব্রেরীতে রক্ষিত ১৩/ক/৫ নং খাতাটির (বংশাবলী বা বংশলতা নামীয়) অনুকরণে আমার উর্ধতন পুরুষ হইতে তোমাদের নিজ নিজ ‘বংশাবলী’ বা ‘বংশলতা’ লিখিয়া রাখিবা এবং তোমাদের অধস্তন পুরুষগণকে পুরুষানুক্রমে তাহাদের নিজ নিজ বংশাবলী বা বংশলতা রাখিতে উপদেশ দিয়া যাইবে। যেহেতু আমার বংশ পরিচয় না থাকিলে লাইব্রেরী সংক্রান্ত কোনো বিশেষ সুবিধা ভোগ করা যাইবে না।

প্রকাশ থাকে যে, আমার বংশাবলীর মধ্যে যেই ব্যক্তি আমার অছিয়তের বাক্য পালন করিবে না, সেই ব্যক্তি আমার ত্যাজ্য স্থাবরাস্থাবর কোন সম্পত্তির ‘উত্তরাধিকারী’ বলিয়া দাবী করিতে পারিবে না। দাবী করিলে তাহা সর্বাদালতে বাতিল হইবে।

এতদ্বারা আমি আমার সরল মনে, সুস্থ শরীরে, সজ্ঞানে অত্র অছিয়তনামা সম্পাদন করিয়া দিলাম। ইতি সন ১৩৮৮ সালের ১৯শে অগ্রহায়ণ, ইং তাং ৫-১২-৮১।

কৈফিয়ত – অত্র দলিলের ৩য় পাতায় ১২ ছত্রে ‘আমার’ শব্দ তোলা লিখা।

রেফ মোট ৬ ফর্দ।

লিখকসহ ইসাদি ৪ জন।

(স্বা. আরজ আলী মাতুব্বর)

লিখক

মো. হোসেন

সাং – চরবাড়িয়া

L. 1350.

ইসাদি ইসাদি ও পরিচিত ইসাদি
মো. ইয়াছিন আলী সিকদার
সাং – লামচরি
আব্দুল মালেক মাতুব্বর
পিং আরজ আলী মাতুব্বর
সাং – লামচরি
মো. গোলাম রসূল মোল্লা
সাং – লামচরি
error: Content is protected !!
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x