বহু রোগের কারণ উদ্বেগ
বর্তমান জটিল সমাজব্যবস্থায়, অনিশ্চিয়তার সমাজব্যবস্থায় উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা বা ‘অ্যাংজাইটি’র শিকার বহু মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগের মধ্যে থাকলে নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন—
১) বুক ধড়ফড় করে। হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়। একটুতেই হাঁপিয়ে
পড়েন।
২) শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হতে থাকে। অল্পতে ক্লান্তি আসে। গা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। ঘাম হয় ৷
৩) ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে। বারবার ঘুম ভাঙে অথবা অনিদ্রার শিকার হয় ।
৪) রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। মাঝে মাঝে বুকে ব্যথা অনুভূত হয় ।
৫) সবসময় একটা অস্থিরতা দেখা দেয়।
৬) হজমে গোলমাল দেখা দেয়। সে গোলমাল যেমন বারবার পায়খানায় যাওয়া হতে পারে। তেমনই হতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্য।
৭) মাথা ধরে। মনে হয় স্মৃতি ঠিকমতো কাজ করছে না।
৮) মাথায় যন্ত্রণা হয় ৷
এক্ষেত্রে সম্মোহিত করার আগে রোগীকে নিশ্চিত করা হয়, সম্মোহিত করার পর শরীর মন পরিপূর্ণভাবে বিশ্রাম পাবে। আপনার উদ্বেগ বা উৎকণ্ঠা কেটে যাবে ‘রিল্যাকস্’ করানোর পর। এই রিল্যাকসেশন বা শরীর ও মনের বিশ্রাম আপনার বুক ধড়ফড় ও ঘুমে ব্যাঘাতের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ সারিয়ে তুলবে। উদ্বেগ থেকে যেসব রোগ হয়েছে রোগীর, তা দূর করতে রিল্যাকসেশন দেওয়া খুবই কার্যকর।
এই রিল্যাকসেশনের পর রোগীর স্নায়ুকোষে নির্দেশ পাঠাতে পারেন, “আপনার ভালো লাগছে। এইভাবে শুয়ে থাকতে ভালো লাগছে। এই মুহূর্তে আপনার শরীর ও মন পরিপূর্ণভাবে বিশ্রাম নিচ্ছে। মন এই মুহূর্তে চিন্তা-শূন্য, উদ্বেগ-শূন্য, ভালো লাগছে। এইভাবে শুয়ে থাকতে ভালো লাগছে। আনন্দ। গোটা মন জুড়ে এই মুহূর্তে আনন্দের ছোঁয়া। আপনি ভালো আছেন, ভালো থাকবেন।”
ড্রাগ বা নেশায় আসক্তি বা ‘অ্যাডিকশন’
ড্রাগ বা নেশায় আসক্তি বা ‘অ্যাডিকশন’ বলতে বোঝায় কোন ওষুধ বা নেশা করার জিনিস বারবার গ্রহণ করার ফলে এমন একটা অবস্থায় পৌঁছানো, যখন ওই ওষুধ বা নেশা দ্রব্য ছাড়া ব্যক্তিটির জীবন অচল ও কষ্টময় হয়ে ওঠে।
একবার আসক্তি বা অ্যাডিকশন তৈরি হয়ে গেলে সময়মতো ওষুধ বা নেশার জিনিসটি না পেলে নানা ধরনের শারীরিক উপসর্গ হতে থাকে। যেমন— খিঁচুনি, কাঁপুনি, অনিদ্রা, মাথায় যন্ত্রণা ইত্যাদি।
এইক্ষেত্রে রোগীকে সম্মোহিত অবস্থায় নিয়ে গিয়ে যে ধরনের সাজেশন দেওয়া প্রয়োজন, তা হলঃ
ড্রাগ বা নেশার জিনিসটির নাম উল্লেখ করে (উদাহরণ হিসেবে ধরলাম মদ) বলতে লাগলাম, “মদের প্রতি আপনি বেশিমাত্রায় আসক্ত হওয়ায় আপনার শরীর দ্রুত ভেঙে যাচ্ছে। অনিদ্রার শিকার হয়ে পড়ছেন। সমাজে আপনার সম্মান ছিল। কিন্তু নেশা সে সম্মান অনেকটাই নষ্ট করে দিয়েছে। নেশার জন্য আপনি যেটুকু পেয়েছেন ভাবছেন, হারিয়েছেন তার চেয়ে অনেক বেশি।”
“আপনি গভীর মনোযোগের সঙ্গে আমার কথাগুলো শুনতে থাকুন। আপনার সামনে একটা টেবিল। টেবিলে আপনার প্রিয় নেশার বস্তু ম্যাকডাওয়েলস রাম। টেবিলে কাচের গ্লাস রয়েছে। রয়েছে ‘ক্লাব’ সোডা, কাজু। আপনি বোতলটা হাতে তুলে নিয়ে মোচড় দিয়ে ছিপিটা খুললেন (এইক্ষেত্রে বাস্তবিকই কোনো শিশির ছিপির সিল খুললে আরো ভালো হয়)। গ্লাসে রাম ঢাললেন (গ্লাসে বোতল থেকে কোনো পানীয় ঢালুন। এই আওয়াজ সাজেশনকে আরো কার্যকর করতে বিশেষ ভূমিকা নেবে)। এবার গ্লাসটাকে নিয়ে এলেন ঠোটের কাছে। একটা বিচ্ছিরি পচা গন্ধ। উ-ফ্-1 গা গুলিয়ে উঠল। গা গুলোচ্ছে। গ্লাসটা নামিয়ে রাখলেন টেবিলে (গ্লাস নামিয়ে তার শব্দ তুলুন)। বমি আসছে।”
মিনিট খানেকের বিরতি দিয়ে আবার সাজেশন দেওয়া শুরু করুন—“আবার মদের গ্লাসটা ডান হাতে তুলে নিয়েছেন আপনি। ঠোটের কাছে আসতেই…ওঃ টিকতে পারা যাচ্ছে না। পচা দুর্গন্ধ। মদের গ্লাসটা নাকের কাছে এনে গন্ধটা শুঁকলেন। গা গুলিয়ে উঠল। বমি আসছে। তাড়াতাড়ি গ্লাসটা টেবিলে নামিয়ে রাখলেন (গ্লাস টেবিলে নামিয়ে শব্দ তুলুন)। বমি আসছে; গা গুলোচ্ছে; পেট গুলোচ্ছে।”
এরপর সম্মোহন থেকে রোগীকে তোলার পালা। এমন ব্যবস্থা রাখুন যাতে সম্মোহিত অবস্থা থেকে উঠে চোখ খুলে টেবিলের দিকে তাকালে দেখতে পান ম্যাকডাওয়েলস রামের বোতল আর গ্লাস ভর্তি রাম। রোগীকে এবার আপনি রাম পান করতে বলুন। দেখতে পাবেন রোগী গ্লাস তুলে ঠোঁটের কাছে এনে দ্রুত মাথা ঝাঁকিয়ে টেবিলে নামিয়ে রাখবেন গ্লাস।
এই সাজেশনের ক্যাসেট করে দিয়ে রোগীকে প্রতিদিন নেশা করার সময়টার একটু আগে ক্যাসেটটা শুনতে বলুন। শুনবেন অবশ্যই একলা এবং সম্মোহিত হওয়ার মতো পরিবেশে। দারুণ কাজ হবে।
ভয় বা ‘ফোবিয়া’
চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্রায় তিনশ রকমের ‘ভয়’ বা ‘ফোবিয়া’র উল্লেখ রয়েছে। কত মানুষ যে কত কিছুতে ভয় পায়, পুরো তালিকা হাজির করতে গেলে একটা গোটা বই হয়ে যাবে।
কেউ আরশোলায় ভয় পায়। কেউ টিকটিকিতে। কেউ বা কুকুর দেখলে সিঁটিয়ে যান। কারো বা ভয় বিড়ালে। কেউ উঁচু বাড়ির ছাতে উঠলে ভয় পায়। ভাবে—এক্ষুনি বোধহয় পড়ে যাবে বা লাফিয়ে পড়বে ছাদ থেকে। কারো রক্ত দেখলে ভয় হয়। এমনকি ভয়ে মূর্ছা যাওয়ার অবস্থা হয়। কারো ভয় খোলা জায়গায়, কারো বা অন্ধকারে। কেউ ভিড় দেখলে ভয় পায়। কেউ ধারালো কিছু দেখলে আঁতকে ওঠে।
ভয় কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাবার পক্ষে সম্মোহন দারুণ কার্যকর ভূীমকা নিতে পারে। কিন্তু ফোবিয়াগ্রস্ত রোগীকে কী সাজেশন দিতে হয়?
সেই প্রসঙ্গে আসার আগে শুধু বলে দিতে চাই, রোগীকে প্রথমে সম্মোহিত করে ‘রিল্যাকসেশন’-এর সাজেশন দিন।
এবার রোগীকে ভয় কাটানোর সাজেশন দেওয়া যেতে পারে অনেকটা এই গাইড- লাইন মেনে—
এখানে আমরা একটি ফোবিয়ার উদাহরণ টানছি। ধরে নিচ্ছি রোগী কুকুরে ভয় পান। সেক্ষেত্রে সম্মোহিত করার পর সাজেশন হবে এই ধরনেরঃ
কুকুর দেখে ভয়
“আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আপনার চেয়ে অনেক কম বয়েসি একটি ছেলে (মেয়েদের সাজেশন দেওয়ার সময় ছেলের বদলে মেয়ে বলুন)। বলতে পারেন নেহাতই বালক। ও শিস দিল (শিস দিন)। আবার শিস্ দিল। একটা কুকুর দৌড়ে এলো। ছেলেটি কুকুরটার গলা জড়িয়ে ধরল। কুকুরটার সঙ্গে খেলতে লাগল। কুকুরটা মহাআনন্দে খেলছে। ওদের খেলা দেখতে আপনার একটু একটু করে ভালো লাগছে। আপনার ভয় লাগছে না। কুকুরটাকে দেখে ভয় লাগছে না।”
এক্ষেত্রে রোগী ভয় পায় এমন একটা পরিস্থিতিতে হাজির করা হচ্ছে রোগীর চেয়ে শারীরিকভাবে দুর্বল অর্থাৎ বালক বা বৃদ্ধ কাউকে। সে ওই পরিস্থিতিতে ভয় পাচ্ছে না। বরং পরিস্থিতিকে উপভোগ করছে। বারবার এই ধরনের সাজেশন দিয়ে রোগীর ভয়কে দূর করা সম্ভব।
অবস্থা বুঝে তারপর একদিন রোগীকে সম্মোহিত করে তাঁর ভয়ের পরিস্থিতিতে হাজির করুন এবং পরিস্থিতিকে উপভোগ করার সাজেশন দিন বা ভয়হীন করার সাজেশন দিন।
রক্ত দেখে ভয়
রক্ত দেখে ভয় বা ‘হেমাটোফোবিয়া’র ক্ষেত্রে অবশ্য সাজেশনের মূলগত কিছু রকমফের হবে। কারণ রক্তপাত উপভোগ করার সাজেশন দিলে মানসিকভাবে ভিন্ন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে। এইক্ষেত্রে সাজেশন এই ধরনের হতে পারে :
“রক্ত মানুষের বেঁচে থাকার পক্ষে খুবই জরুরি। আবারও সত্যি যে একটি সুস্থ মানুষ যদি মাসে দুমাসে রক্ত দান করে আসে, তবে তার কোনোভাবেই অসুবিধে হওয়ার কারণ নেই। রক্ত তরল। আলতার মতো। লাল রঙের জলের মতো ৷ ”
“জল বেঁচে থাকার জন্য জরুরি। কিন্তু আপনি জল দেখলে ভয় পান না। থামআপ বা পেপসি দেখলে ভয়ের কথা মনেই আসে না। বরং পান করে এক ধরনের তৃপ্তি পান । ”
“আপনি লালেও নিশ্চয়ই ভয় পান না। ঠোটে লাল লিপস্টিক, কপালে লাল সিঁদুর বা গরদের লাল পাড় শাড়ি আপনার মনে কোনো ভয় সৃষ্টি তো করেই না, বরং ভালো লাগে। আপনার নিশ্চয়ই ভোরের আর গোধূলি বেলার লাল সূর্য দেখতে ভালো লাগে। ভালো লাগে লাল কৃষ্ণচূড়া, লাল টুকটুকে শিমূল। সুতরাং আপনার লালেও ভয় নেই।”
“আপনি ভাবতে থাকুন—ফুটবল খেলার একটি দৃশ্য। খেলা চলছে। একটি ছেলে বল নিয়ে এগুচ্ছে, অন্য দলের একজন তাকে ফাউল করল, বিশ্রী রকমের ফাউল। বুটের আঘাতে হাঁটু কেটে গেছে। যার কেটেছে তার কোনো ভয় বা কিছুই নেই। রক্ত পড়ছে দেখল। নির্বিকারভাবে খানিকটা দূর্বা ঘাস ক্ষতে লাগিয়ে আবার খেলায় মেতে গেল…” এইভাবে সাজেশন দিয়ে ভয় কাটানো সম্ভব।
বাসে যেতে ভয়
আমাদের পাড়ার এক চল্লিশ ঊর্ধ্বের প্রবীণের কথা বলছি। চাকরি করতেন কলকাতার কয়লাঘাটা রেল অফিসে। এক ছেলে, এক মেয়ে ও বউ। চারজনের সংসার। চারজনই শান্তশিষ্ট মানুষ।
কিছু মাস ধরে ভদ্রলোক অফিসে যাচ্ছেন না। বাড়ি থেকে অফিসের উদ্দেশ্যে বের হচ্ছেন। কিছুক্ষণ পরে বাড়ি ফিরে আসছেন। এটাই চলছিল নিত্যদিনের ঘটনা, দীর্ঘ সময় কাজে না যাওয়ার জন্যে একসময় মাইনে দেওয়া বন্ধ করল অফিস।
সমস্যা সমাধানের জন্য শেষ পর্যন্ত আমার সাহায্য চাইলেন। মূল সমস্যা—বাসে উঠলেই ভয়। দুর্ঘটনার ভয়। ভিড়ের মধ্যে শ্বাস নিতে কষ্ট। যতক্ষণ বাস চলে ততক্ষণ উদ্বেগ চলে। বাস থেকে নেমে গেলে উদ্বেগ থেকে মুক্তি মেলে।
বার চব্বিশেক রিল্যাকসেশন দেওয়ায় অবস্থার অনেকটা উন্নতি ঘটে এবং বাসেই অফিস যাওয়া শুরু করেন।
লেখার আঙুল শক্ত হয়ে যাওয়া (Writer’s Cramp )
পরীক্ষার সময় কিছু পরীক্ষার্থীর লেখার আঙুলে খিঁচুনি (Cramp) হয়। পরীক্ষা দিতে না চাওয়ার অবচেতন ইচ্ছে থেকে বা পরীক্ষার প্রস্তুতি ঠিকমতো না হওয়ায় অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে নিজের অজান্তে এই শারীরিক উপসর্গ তৈরি হয়।
মেরিন ইঞ্জিনিয়ার অচিন্ত্য দাশগুপ্ত বিদেশি কোম্পানিতে কাজ করেন। ঝকঝকে ছেলে। সম্প্রতি বিয়ে করেছেন এক সুন্দরীকে। মেয়েটি অত্যন্ত নিম্নমেধার এক সুন্দরী।
অচিন্ত্যর ফোন পেলাম। জাহাজ থেকেই ফোনে জানালেন, তার স্ত্রীর কাল থেকে বিএ পার্ট ওয়ানের পরীক্ষা। একটু আগে খবর পেল, ওর তর্জনিতে ক্রাম্প হয়েছে। “তুমি ওর মোবাইলে ফোন করে সাজেশন দিয়ে ঠিক করে দাও প্লিজ,” অনুরোধ করলেন।
ওর স্ত্রী উর্মিকে ফোনে ধরলাম। সমস্যার কথা ওর মুখ থেকে শুনলাম। ভরসা দিলাম, কোনো চিন্তা নেই। উর্মি রিলাক্স মুডে হালকা পোশাকে শুয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে আমার সাজেশন শুনতে লাগল ৷
আধঘণ্টা রিল্যাকসেশন দিলাম। তারপর সাজেশন বা নির্দেশ পাঠালাম। ডান হাতের তর্জনির ক্রাম্প সেরে যাচ্ছে। ঠিক হয়ে যাচ্ছে। আঙুলের খিঁচুনি সেরে গেছে। আঙুল ইচ্ছেমতো নাড়াচাড়া করা যাচ্ছে।
পরের দিন পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে আরো একবার রিল্যাকসেশন দিয়ে তারপর নির্দেশ পাঠালাম, আঙুল নরম হয়ে গেছে। ক্রাম্প সেরে গেছে।
অ্যাজমা (Asthma) বা হাঁপানি
হাঁপানি অনেক সময়ই মানসিক কারণে হয়। আমাদের মনের মধ্যে অনেকেরই এমন একটা ধারণা আছে যে—হাঁপানি বংশগত রোগ, হাঁপানি রোগীর সঙ্গে প্রায়ই চুমু-টুমু খেলে হাঁপানি হয়। এই মানসিক ধারণার কারণে হাঁপানি হতে পারে।
হাঁপানির প্রধান লক্ষণ শ্বাস-কষ্ট। সাধারণত বর্ষায় ও শীতে রাতে এই কষ্ট শুরু হয় শ্বাসকষ্টের সঙ্গে কাশি থাকে। বুকে সাঁই সাঁই শব্দ হয়। কাশির সঙ্গে প্রচুর কফও বের হয়। এই রোগের বিষয়ে সঠিক ধারণা এখনো চিকিৎসকদের নেই। তবে রক্তে যাদের ইমুনোগ্লোবিউলিন (Immunoglobulin) আইজিই (IGE) বেশি থাকে তাদের হাঁপানির সম্ভাবনা বেশি।
হাঁপানির প্রধান কারণ অ্যালার্জি। ধুলো-ময়লা, ফুলের রেণু, পশুলোম ।
খাবার ইত্যাদি থেকে অ্যালার্জি এবং এই অ্যালার্জি থেকে হাঁপানি হয় ৷
হাঁপনি কখনই ছোঁয়াছে নয়। ডায়াবেটিসের মতো বংশগত নয়। এই দুটি সত্যিকে বিশ্বাস করলে মানসিক কারণে হাঁপানি তাদের হবে না।
হাঁপানির চিকিৎসায় নানা ব্র্যান্ডের ইনহেলার বেরিয়েছে। ভালোই ফল পাওয়া যায়। উদ্বেগ বা ভয় থেকে অ্যাজমা হয়। ভুল জানা থেকেও ভয় আসতে পারে ।
আমার ছেলে তখন ফাইভ-সিক্সের ছাত্র। আমাকে ‘অলৌকিক নয়, লৌকিক’ অনুষ্ঠানের জন্য, বুজরুকি ধরার জন্য মাঝে-মাঝে বাইরে যেতে হত। বাড়িতে তখন স্ত্রী সীমা ও ছেলে পিনাকী থাকত। আমি রাতে বাইরে গেলে উদ্বেগ সীমার তখন ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমার সিম্পটম দেখা দিত। পাশের বাড়ির মল্লিকদাকে দৌড়তে হত ডাক্তার ডাকতে।
ডাক্তার থরো চেক্ করে জানিয়ে দিলেন সীমা সাইকোসোমটিক রোগের পেশেন্ট অর্থাৎ মানসিকভাবে হাঁপানি রোগের শিকার হচ্ছেন ।
আমার এক বান্ধবী হাঁপানি রোগে ভোগেন। তাঁর হাজবেন্ড হাঁপানি রোগী। সেখান থেকেই ওর হয়েছে, এটা ধরে নিয়ে ইনহেলারকে নিত্যসঙ্গী করেছেন। এক, দুই, তিন। তিনজন ডাক্তারই পরীক্ষা করে জানালেন, হাঁপানিটা তাঁর মানসিক কারণে হচ্ছে।
চিকিৎসার দুটি ভাগ। (এক) রোগীকে হাঁপানি রোগ বিষয়ে জানানো। তারপর বিশ্বাস উৎপাদন করা তাঁর হাঁপানি হয়নি। (দুই) এরই পাশাপাশি তাঁকে সেলফ রিল্যাকসেশন করতে শেখান। ভালো ফল পাওয়া যাবে।
উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension)
উচ্চ রক্তচাপ বর্তমানের দ্রুততার যুগের একটি অন্যতম প্রধান অসুখ। হৃৎপিণ্ডের (Ventricle) যন্ত্রের সাহায্যে মাপা হয়। হৃৎপিণ্ড সংকোচন ও প্রসারণের সাহায্যে রক্ত পাম্প করে শরীরের নানা অংশে পাঠায়। যন্ত্রে সংকোচনকালীন রক্তচাপ ( Systolic Blood Pressure) এবং প্রসারণকালীন রক্তচাপ (Diastolic Blood Pressure) ধরা পড়ে। সংকোচনকালীন রক্তচাপ কম এবং প্রসারণকালীন রক্তচাপ বেশি হয়।
তবে প্রধানত ধমনীতে স্নেহপদার্থ জমে ধমনী সরু ও শক্ত হয়ে গেলে সংকোচনশীল রক্তচাপ বেড়ে যায় ।
যে যে কারণে রক্তচাপ বাড়ে
১) টেনশন, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ
২) ক্রোধ
৩) কিডনির অসুখ
৪) হরমনের অসুখ
৫) স্টেরয়েড ব্যবহার, জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি খাওয়া
৬) মহাধমনীর সংকোচন
লক্ষণ
উচ্চ রক্তচাপে ঘাড়ে ব্যথা, ঘাড় শক্ত হওয়া, মাথা ব্যথা, বুক ধড়ফড়, ক্লান্তি, নিশ্বাসের অসুবিধা, নাক দিয়ে রক্তপাত, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদি হয়। উচ্চ রক্তচাপ থেকে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।
চিকিৎসা
টেনশন, দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ থেকে রক্তচাপ বৃদ্ধি হলে দেখতে হবে সমস্যার উৎপত্তি। আর্থিক কারণে, ঋণগ্রস্ততার কারণে দুশ্চিন্তা হলে তা চিকিৎসকের হাতের বাইরে। নতুবা রিল্যাকসেশন ও সেলফ রিল্যাকসেশন থেকে অবশ্যই উচ্চ রক্তচাপ কমান যায়।
তোতলামি
কথা বলার সময় মাঝে মাঝেই কোনো একটি শব্দে এসে শব্দের প্রথম অক্ষরই বেশ কয়েকবার বলতে থাকে তোতলারা।
তোতলামো শতকরা ৯৯ ভাগ নিউরো সাইকোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার। মোদ্দা কথায় মানসিক রোগ। অল্প বয়সে কারো সঙ্গে কথা বলতে ভয় পেলে, অস্বস্তি পেলে তোতলামো দেখা যায়।
তোতলামো সারাতে রোগীকে রিল্যাকসেশন দিন এবং শেখান। কবিতা আবৃত্তি করান, গান করান, ধীরে ধীরে কথা বলতে অভ্যাস করান। দেখবেন কয়েক মাসের মধ্যেই তোতলামো সেরে গেছে।
তোতলাদের তোতলামোর জন্যে বকাবকি করবেন না। এতে আত্মবিশ্বাস আরো কমে যায় কথা বলার ব্যাপারে।
পরিবারের মধ্যে সুস্থ সম্পর্ক না থাকলে শিশুর তোতলামি দেখা যেতে পারে। তোতলাকে ভেঙাতে ভেঙাতে তোতলামি দেখা যেতে পারে। এ বিষয়ে মা-বাবাকে সচেতন থাকতে হবে।
পর্ব- একঃ উঠে আসা নানা প্রশ্ন
অধ্যায়ঃ এক
অধ্যায়ঃ দুই
♦ জন্তুদের সম্মোহন করা ব্যাপারটা কি?
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
♦ গণ-সম্মোহনের সাহায্যে কি ট্রেন ভ্যানিশ করা যায়?
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦ সম্মোহন করে পূর্বজন্মে নিয়ে যাওয়া যায়?
অধ্যায়ঃ ছয়
অধ্যায়ঃ সাত
অধ্যায়ঃ আট
অধ্যায়ঃ নয়
♦ প্ল্যানচেটে যে আত্মা আনা হয়, তা কি স্বসম্মোহন বা সম্মোহনের প্রতিক্রিয়া ?
পর্ব- দুইঃ সম্মোহনের ইতিহাস ও নানা মানসিক রোগ
অধ্যায়ঃ এক
♦ সম্মোহনের বিজ্ঞান হয়ে ওঠার ইতিহাস
অধ্যায়ঃ দুই
♦ মনোরোগ, সম্মোহন জানতে মগজের কাজ জানা জরুরি
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
♦ Hysterical neurosis – Conversion type
অধ্যায়ঃ চার
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦ দেহ-মনজনিত অসুখ (Psycho-somatic disorder)
পর্ব- তিনঃ মনোবিদ ও মনোরোগ চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি
অধ্যায়ঃ এক
♦ মনোবিদ (Psychologist) ) মনোরোগ চিকিৎসক (Phychiatrist)
অধ্যায়ঃ দুই
♦ প্রধান কয়েকটি সাইকোথেরাপি নিয়ে আলোচনায় যাব
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
অধ্যায়ঃ পাঁচ
অধ্যায়ঃ ছয়
♦ ‘যোগ’ মস্তিষ্ক-চর্চা বিরোধী এক স্থবীর তত্ত্ব
পর্ব- চারঃ বিভিন্ন রোগের সম্মোহনের সাজেশন পদ্ধতি
অধ্যায়ঃ এক
অধ্যায়ঃ দুই
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
“সম্মোহনের A to Z” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ