অয়ের বিনাশ প্রাপ্তি

১. প্রভু যিহোশূয়কে বললেন, “ভয় পেও না। আশা ছেড়ো না। তোমার সমস্ত যোদ্ধাকে নিয়ে অয়ে চলে যাও। অয়ের রাজাকে পরাজিত করার জন্য আমি তোমাদের সাহায্য করব। আমি তোমাদের কাছে রাজা, রাজার লোকেদের, তার শহর এবং তার দেশ সবকিছু দিচ্ছি।

২. তোমরা যিরীহো আর সে দেশের রাজার প্রতি যা করেছিলে ঠিক সেইরকমই তোমরা অয় এবং সেই শহরের রাজার প্রতি করবে। শুধু এইবার তোমরা সব ধনসম্পদ এবং পশুসমূহ নিয়ে যাবে এবং ওগুলো তোমাদের জন্যই রাখবে। এখন তোমাদের কয়েকজন সৈন্যকে শহরের পিছনে লুকিয়ে থাকতে বলো।”

৩. তাই যিহোশূয় সমস্ত সৈন্যবাহিনীকে অয়ের দিকে নিয়ে গেলেন। তিনি তাঁর সেরা ৩০,০০০ যোদ্ধাকে বেছে নিলেন। রাত্রে তিনি তাদের পাঠালেন।

৪. “যিহোশূয় তাদের এই আদেশ দিলেনঃ “তোমাদের যা বলছি তা মন দিয়ে শোন। শহরের পেছন দিকে তোমরা লুকিয়ে থাকবে। আক্রমণের জন্য অপেক্ষা করবে। শহর থেকে বেশী দূরে যাবে না। সবসময় লক্ষ্য রাখবে আর তৈরী থাকবে।

৫. আমি সকলকে নিয়ে শহরের দিকে যাত্রা করব। শহরের লোকেরা আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে বেরিয়ে আসবে। ঠিক আগের মতোই আমরা ছুটে পালিয়ে আসব।

৬. “তারা আমাদের শহর থেকে তাড়িয়ে দেবে। তারা ভাববে যে আমরা ঠিক আগের মতোই ওদের কাছ থেকে পালিয়ে যাচ্ছি। সেইভাবে আমরা পালিয়ে যাব।

৭. তারপর তোমরা গুপ্তস্থান থেকে বেরিয়ে আসবে আর শহর অধিকার করবে। প্রভু, তোমাদের ঈশ্বর স্বয়ং তোমাদের জয় করার শক্তি দান করবেন।

৮. “প্রভু যা যা বলেন সেই অনুসারে কাজ করবে। আমার দিকে লক্ষ্য রেখো। আমি তোমাদের শহর দখলের আদেশ দেব। শহরের দখল নিয়ে একে তোমরা জ্বালিয়ে দেবে।”

৯. তারপর যিহোশূয় তাদের লুকোনোর জায়গায় পাঠিয়ে দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন। তারা বৈথেল এবং অয়ের মধ্যবর্তী একটি জায়গায় গেল। জায়গাটি অয়ের পশ্চিম দিকে। যিহোশূয় তাঁর লোকেদের সঙ্গে রাত কাটালেন।

১০. পরদিন খুব সকালে যিহোশূয় সব লোকেদের একসঙ্গে জড়ো করলেন। তারপর যিহোশূয় এবং ইস্রায়েলের দলপতিরা তাদের অয়ের দিকে নিয়ে গেলেন।

১১. যিহোশূয়ের সঙ্গে যে সব সৈন্য ছিল, তারা অয় অভিযান করল। শহরের সামনে এসে তারা দাঁড়াল। সৈন্যরা শহরের উত্তরে তাঁবু খাটাল। অয় এবং সৈন্যবাহিনীর মধ্যে ছিল একটি উপত্যকা।

১২. তারপর যিহোশূয় প্রায় ৫,০০০ সৈন্য বেছে নিলেন। তিনি তাদের শহরের পশ্চিমে বৈথেল এবং অয়ের মাঝখানে লুকিয়ে থাকার জন্য পাঠিয়ে দিলেন।

১৩. এইভাবে যিহোশূয় যুদ্ধের জন্য তাদের প্রস্তুত করলেন। শহরের উত্তরে তাদের প্রধান ঘাঁটি। অন্যান্যরা লুকোল পশ্চিম দিকে। সেইরাত্রে যিহোশূয় উপত্যকায় গেলেন।

১৪. পরে অয়ের রাজা ইস্রায়েলীয় সৈন্যবাহিনীকে দেখতে পেলেন। ইস্রায়েলীয় সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে রাজা এবং তার লোকেরা বেরিয়ে পড়ল। অয়ের রাজ৷ যদ্দন উপত্যকার কাছে শহরের পূর্বদিকে গেলেন। তাই তিনি শহরের পেছনদিকে লুকিয়ে থাকা ইস্রায়েলীয় সৈন্যদের দেখতে পেলেন না ৷

১৫. অয়ের সৈন্যবাহিনী যিহোশূয় এবং ইস্রায়েলের সমস্ত মানুষকে তাড়িয়ে দিল। তার৷ যেখানে মরুভূমি সেই পূর্বদিকে ছুট লাগাল। 

১৬. শহরের সকলে হৈ-হৈ করে যিহোশূয় ও তাঁর সৈন্যবাহিনীকে তাড়া করতে লাগল। সব লোক শহর ছেড়ে চলে গেল।

১৭. অয় এবং বৈথেলের সব লোক ইস্রায়েলীয় সৈন্যবাহিনীকে তাড়িয়ে দিল। শহর ফাঁকা পড়ে রইল। শহর রক্ষা করার জন্য কেউ রইল না।

১৮. তারপর প্রভু যিহোশূয়কে বললেন, “অয় শহরের দিকে বর্শা উঁচিয়ে ধরো। এই শহর আমি তোমাদের হাতে তুলে দেব।” তাঁর কথামতো যিহোশূয় অয় শহরের দিকে বর্শা উঁচিয়ে ধরলেন।

১৯. ইস্রায়েলের যে সব লোকেরা লুকিয়েছিল তারা তা দেখল। তারা তাদের লুকোবার জায়গা থেকে দ্রুত বেরিয়ে শহরের দিকে ছুটে গেল, শহরে ঢুকে পড়ল আর শহরটা দখল করে নিল। তারপর সৈন্যরা শহর পুড়িয়ে দেবার জন্য আগুন লাগিয়ে দিল।

২০. অয়ের লোকেরা পেছনে তাকিয়ে দেখল তাদের শহর জ্বলছে। তারা দেখল শহর থেকে আকাশের দিকে ধোঁয়া উঠছে। এই দেখে তারা দুর্বল হয়ে পড়ল, সাহস হারিয়ে ফেলল। তার৷ ইস্রায়েলীয়দের তাড়াবার প্রচেষ্ট৷ ছেড়ে দিল। ইস্রায়েলীয়রাও আর ছোটাছুটি না করে ফিরে দাঁড়াল আর অয়ের লোকেদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে লাগল। অয়ের লোকেদের পালাবার মতো কোন নিরাপদ জায়গা ছিল না।

২১. যিহোশূয় এবং তাঁর লোকেরা দেখল যে ঐ সৈন্যরা শহর দখল করে নিয়েছে। তারা দেখল শহর থেকে ধোঁয়া ওপরে উঠছে। এই সময় তারা পালিয়ে না গিয়ে ঘুরে দাঁড়াল, অয়ের লোকেদের দিকে ছুটে গিয়ে যুদ্ধ করল।

২২. তারপর যারা লুকিয়েছিল তারাও ফিরে এসে যুদ্ধে সাহায্য করল। অয়ের লোকেদের সামনে পিছনে সব দিকেই ইস্রায়েলীয় সৈন্যবাহিনী। তারা ফাঁদে আটকা পড়ল। ইস্রায়েলীয়রা তাদের পরাজিত করল। অয়ের সমস্ত লোক নিশ্চিহ্ন না হওয়৷ পর্যন্ত তারা যুদ্ধ করতে লাগল। শত্রু পক্ষের একট৷ লোকও পালাতে পারল না।

২৩. কিন্তু অয়ের রাজাকে বাঁচিয়ে রাখা হল। যিহোশূয়ের লোকেরা তাকে যিহোশূয়ের কাছে নিয়ে এল।

যুদ্ধের সমীক্ষা

২৪. যুদ্ধের সময় ইস্রায়েলীয় সৈন্যবাহিনী অয়ের লোকেদের মাঠেঘাটে মরুভূমির মধ্যে তাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল। তারপর তারা সেইসব জায়গায় তাদের হত্যা করেছিল। তারপর তারা অয়ে ফিরে গিয়ে সেখানে যেসব লোক তখনও বেঁচেছিল তাদের হত্যা করল।

২৫. সেদিন অয়ের সমস্ত লোক মারা গেল। ১২,০০০ পুরুষ ও স্ত্রীলোক মারা গিয়েছিল।

২৬. যিহোশূয় তাঁর লোকেদের শহর ধ্বংস করার সংকেত দিতেই অয় শহরের দিকে বল্লম উঁচু করে ধরেছিলেন। শহরের সমস্ত লোক বিনষ্ট না হওয়া পর্যন্ত যিহোশূয় এভাবেই দাঁড়িয়েছিলেন।

২৭. ‘ইস্রায়েলের লোকেরা শহরের সমস্ত জীবজন্তু এবং অন্যান্য জিনিসপত্র নিজেদের ব্যবহারের জন্য রেখে দিয়েছিল। প্রভু যিহোশূয়কে নির্দেশ দেবার সময় তাদের এইসব রেখে দিতেই বলেছিলেন।

২৮. যিহোশূয় অয় শহরকে জ্বালিয়ে দিলেন। শহরটা কতগুলি পাথরের স্তূপে পরিণত হল। আর কিছুই সেখানে ছিল না। আজও শহরটা সেইরকমই পড়ে আছে।

২৯. যিহোশূয় অয়ের রাজাকে একটা গাছে ফাঁসি দিলেন। সন্ধ্যে পর্যন্ত তাকে ঝুলিয়ে রাখলেন। সূর্য অস্ত গেলে যিহোশূয় তাদের গাছ থেকে দেহটাকে নামাতে বললেন। শহরের ফটকের কাছে তারা দেহটাকে ছুঁড়ে দিল। তারপর প্রচুর পাথর দিয়ে তারা দেহটাকে চাপা দিল। সেই পাথরের স্তূপ আজও দেখা যাবে।

আশীর্বাদ আর অভিশাপ পঠন

৩০. তারপর যিহোশূয় ইস্রায়েলের প্রভু, ঈশ্বরের স্মরণে একটি বেদী নির্মাণ করলেন। এবল পর্বতের চূড়ায় তিনি এই বেদী তৈরী করেছিলেন।

৩১. প্রভুর দাস মোশি ইস্রায়েলের লোকেদের জানিয়েছিলেন কিভাবে বেদী তৈরী করতে হবে। মোশির বিধিপস্তকে পরিষ্কার করে লেখা ছিল বেদীর প্রস্তুত প্রণালী। সেইভাবেই যিহোশূয় বেদী তৈরী করলেন। কাটা হয়নি এমন পাথর দিয়েই বেদী তৈরী হয়েছিল। ঐ পাথরগুলির ওপর কোন লৌহযন্ত্র কখনও ব্যবহার করা হয়নি। সেই বেদীতে তারা প্রভুর উদ্দেশ্যে হোমবলি উৎসর্গ করল। তারা মঙ্গল নৈবেদ্যও উৎসর্গ করল।

৩২. ঐখানে যিহোশূয় পাথরগুলোর ওপরে মোশির বিধিগুলো লিখে দিলেন। ইস্রায়েলের সমস্ত লোক যাতে সেগুলো পড়ে সেইজন্যই তিনি লিখে দিয়েছিলেন।

৩৩. প্রবীণরা, উচ্চপদস্থ কর্মীর৷, বিচারকরা এবং সমস্ত মানুষ পবিত্র সিন্দুকটিকে ঘিরে দাঁড়াল। প্রভুর পবিত্র সাক্ষ্যসিন্দুক বহনকারী লেবীয় যাজকদের সামনে তারা দাঁড়িয়েছিল। ইস্রায়েলের সমস্ত লোক এবং অন্যান্যরাও সেখানে দাঁড়িয়েছিল। অর্ধেক লোক দাঁড়িয়েছিল এবল পর্বতের চূড়ার সামনে আর বাকী অর্ধেক দাঁড়িয়েছিল গরিষীম পর্বতের চূড়ার সামনে। প্রভুর দাস মোশি তাদের এভাবেই দাঁড়াতে বলেছিলেন। তারা যাতে প্রভুর আশীর্বাদ পায় সেইজন্য তিনি তাদের এই নির্দেশ দিয়েছিলেন।

৩৪. তারপর যিহোশূয় বিধির প্রতিটি কথা পড়ে শোনালেন। তিনি সমস্ত আশীর্বাদ আর সমস্ত অভিশাপ “বিধিপুস্তকে” যেভাবে লেখা আছে সেইভাবেই পড়ে শোনালেন।

৩৫. ইস্রায়েলের সমস্ত লোক সেখানে জড়ো হয়েছিল। সমস্ত স্ত্রীলোক, শিশু আর তাদের সঙ্গে বাস করত যেসব বিদেশী মানুষ তারাও সেখানে ছিল। মোশির প্রতিটি নির্দেশ যিহোশূয় পড়ে শোনালেন।

error: Content is protected !!