যিরীহো অধিকৃত
১. যিরীহো শহরের সমস্ত প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কাছেই ইস্রায়েলের লোকেরা, সেইজন্য শহরের লোকেরা ভয় পেয়ে গিয়েছিল। শহর থেকে তারা শহর প্রদক্ষিণ করেছিল, কিন্তু সেদিন তার৷ সাতবার কেউ বেরোত না, শহরে কেউ আসতও না।
২. তখন প্রভু যিহোশূয়কে বললেন, “শোনো, আমি তোমাদের যিরীহো দখল করতে দিচ্ছি। তোমরা রাজা আর শহরের সমস্ত যোদ্ধাকে পরাজিত করবে।
৩. দিনে একবার করে সমস্ত শহরের চারিদিকে সৈন্যদের টহল দেওয়াবে। এরকম ছয় দিন করবে।
৪. পবিত্র সিন্দুকটি যাজকদের বহন করতে বলবে। সাতজন যাজককে মেষের তৈরী শিঙা নিতে বলবে। সেই সিন্দুকটির সামনে দিয়ে যাজকদের যেতে বলবে। সপ্তম দিনে শহরটিকে সাতবার প্রদক্ষিণ করবে। ঐ দিন যাজকদের যাবার সময় শিঙা বাজাতে বলবে।
৫. তারা একবার খুব জোরে শিঙা বাজাবে। সেই শিঙার শব্দ শুনতে পেলেই লোকেদের চিৎকার করতে বলবে। তোমরা এই কাজ করলে শহরের প্রাচীরগুলো ভেঙ্গে পড়বে, আর তোমার লোকেরাও সোজা শহরে ঢুকে পড়তে পারবে।”
৬. নূনের পুত্র যিহোশূয় সেইমত যাজকদের সকলকে একত্র ডেকে বললেন, “প্রভুর পবিত্র সিন্দুক আপনারা বহন করুন। আপনাদের মধ্যে সাতজনকে শিঙা নিয়ে সিন্দুকের সামনে দিয়ে এগিয়ে যেতে বলুন।”
৭. তারপর যিহোশূয় লোকেদের আদেশ দিলেন, “এবার যাও। শহরকে প্রদক্ষিণ করো। সশস্ত্র সৈন্যরা প্রভুর পবিত্র সিন্দুকের সামনে থেকে অভিযান করবে।”
৮. যিহোশূয়র কথা শেষ হলে সাতজন যাজক প্রভুর সমক্ষে যাত্রা শুরু করলেন। তাঁরা সাতটি শিঙা বহন করলেন এবং চলতে চলতে বাজাতে লাগলেন। যাজকেরা তাদের পিছনে পিছনে প্রভুর পবিত্র সিন্দুক বয়ে নিয়ে চললেন।
৯. যে সমস্ত যাজকরা শিঙা বাজাচ্ছিলেন সশস্ত্র সৈন্যরা তাঁদের সামনে চলে গেল। বাকী লোকেরা পবিত্র সিন্দুকের পেছনে হাঁটছিল। তাঁরা শিঙা বাজাতে বাজাতে শহর পরিক্রমা করল।
১০. যিহোশূয় তাদের যুদ্ধধ্বনি দিতে বারণ করলেন। তিনি বললেন, “এখন চিৎকার কোরো না। আমি তোমাদের না বলা পর্যন্ত একটা কথাও বলবে না। যেদিন বলব সেদিন চেঁচিয়ো”
১১. “যিহোশূয়র কথামত যাজকরা প্রভুর পবিত্র সিন্দুক নিয়ে একবার শহর প্রদক্ষিণ করলেন। তারপর তাঁরা তাঁবুতে ফিরে গিয়ে রাত্রি কাটালেন।
১২. পরদিন খুব ভোরে যিহোশূয় ঘুম থেকে উঠলেন। যাজকরা আবার প্রভুর পবিত্র সিন্দুক কাঁধে তুলে নিলেন।
১৩. সাতজন যাজক সাতটি শিঙা নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। তাঁরা প্রভুর পবিত্র সিন্দুকের সামনে শিঙা বাজাতে বাজাতে এগিয়ে চললেন। তাঁদের আগে আগে চলেছে সশস্ত্র সৈন্যরা। বাকী লোকেরা প্রভুর পবিত্র সিন্দুকের পেছনে পেছনে চলছিল এবং প্রতিবার প্রদক্ষিণের পর তাদের শিঙা বাজাচ্ছিল।
১৪. দ্বিতীয় দিন তারা সকলে একবার শহর পরিক্রমা করল। তারপর শিবিরে ফিরে এলো। দুদিন ধরে তারা প্রতিদিন এইভাবেই কাটাল।
১৫. সপ্তম দিনে ঊষাকালে তারা উঠে পড়ল। তারা সাতবার শহর প্রদক্ষিণ করল। এর আগে এভাবেই তারা শহর প্রদক্ষিণ করল।
১৬. “সপ্তমবার তারা শহর পরিক্রমা করলে যাজক শিঙা বাজালেন। তখন যিহোশূয় আদেশ দিলেন, “এবার চিৎকার করো। প্রভু তোমাদের এই শহর দান করেছেন।
১৭. এই শহর এবং শহরের সবকিছু প্রভুর। শুধু গণিকা রাহব এবং তার বাড়ীর লোকেরা বেঁচে থাকবে। এদের তোমরা হত্যা কোরো না, কারণ সে আমাদের দুজন গুপ্তচরকে সাহায্য করেছিল।
১৮. “আর একথাও মনে রেখো, আর যা সব আছে আমরা ধ্বংস তো করবই, কিন্তু তোমরা কোন কিছুই নিয়ে যেতে পারবে না। যদি তোমরা ঐসব জিনিস সঙ্গে নিয়ে আমাদের শিবিরে আসো, তবে তোমরাও ধ্বংস হয়ে যাবে। সেইসঙ্গে তোমরা ইস্রায়েলের লোকেদেরও বিপদ ডেকে আনবে ।
১৯. “যত সোনা, রূপা আর পিতল ও লোহার তৈরী জিনিসপত্র আছে সবই প্রভুর সম্পদ। সেইসব সম্পদ প্রভুর কোষাগারেই থাকবে।”
২০. যাজকরা শিঙা বাজালেন। লোকেরা শিঙার শব্দ শুনে চিৎকার করে উঠল। প্রাচীরগুলো ভেঙ্গে পড়ল। তারা সকলে দৌড়ে শহরের মধ্যে ঢুকে পড়ল। এইভাবে ইস্রায়েলের লোকেরা শহর দখল করে নিল।
২১. শহরে যা কিছু ছিল সব তারা ধ্বংস করে ফেলল। জীবিত সব কিছুকেই তারা মেরে ফেলল। যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা কাউকেই বাদ দিল না। গরু, মেষ, গাধা সকলকে তারা মেরে ফেলল।
২২. ”যিহোশূয় গুপ্তচর দুজনের সঙ্গে কথা বললেন। তিনি বললেন, “সেই গণিকার গৃহে তোমরা যাও। তাকে এবং তার সঙ্গে যারা আছে তাদের বের করে নিয়ে এসো। তোমরা তাকে যেমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে, সেই প্রতিশ্রুতি অনুসারে কাজ করো।”
২৩. সেইমত দুজন বাড়ীতে ঢুকে রাহবকে বের করে আনল। তারা তার মাতা, পিতা, ভাই, পরিবারের সকলকেই বের করে আনল। তাছাড়া আর যারা রাহবের সঙ্গে ছিল তাদেরও উদ্ধার করল। এদের সবাইকে তারা ইস্রায়েলের শিবিরের বাইরে একটা নিরাপদ জায়গায় রেখে দিল।
২৪. তারপর ইস্রায়েলবাসীরা সমস্ত শহর জ্বালিয়ে দিল। সোনা, রূপো, পিতল আর লোহার তৈরী জিনিস ছাড়া আর সব কিছুই তারা জ্বালিয়ে দিল। তারা ঐ জিনিষগুলি প্রভুর কোষাগারে রাখল।
২৫. গণিকা রাহব তার পরিবারের সকলকে এবং তার সঙ্গে আর যারা ছিল যিহোশূয় তাদের সবাইকে রক্ষা করেছিলেন। তিনি তাদের বাঁচিয়েছিলেন, কারণ রাহব যিহোশূয়র পাঠানো গুপ্তচরদের যারা যিরীহোতে এসেছিল তাদের সাহায্য করেছিলেন। আজও ইস্রায়েলবাসীদের মধ্যে রাহব বাস করছে।
২৬. “সেই সময় যিহোশূয় একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেনঃ “যে গড়িবে পুনরায় যিরীহো নগর, প্রভুর রোষানল পড়িবে তাহার উপর। নগরের ভিত্তি যে করিবে স্থাপন, জ্যেষ্ঠতম সন্তান সে খোয়াবে আপন। যে জন নির্মাণ করে নগরের দ্বার, কনিষ্ঠ সন্তান তার হইবে সংহার।”
২৭. প্রভু যিহোশুয়র সঙ্গে রইলেন। আর যিহোশুয় সারা দেশে বিখ্যাত হয়ে গেলেন।