যিহোশূয় বিদায় জানালেন
১. ইস্রায়েলের সমস্ত পরিবারগোষ্ঠীকে যিহোশূয় একসঙ্গে শিখিমে জড়ো করলেন। প্রবীণ নেতাদের, পরিবারের কর্তাদের, বিচারকদের এবং পদস্থ কর্মচারীদের তিনি ডাকলেন। তারা সকলেই ঈশ্বরের সামনে দাঁড়ালো।
২. তারপর যিহোশূয় সকলকে বললেন, “ প্ৰভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর তোমাদের যা-যা বলছেন আমি সেসব বলছিঃ বহুকাল আগে তোমাদের পূর্বপুরুষরা থাকতেন ফরাৎ নদীর ওপারে। আমি অব্রাহামের পিতা, নাহোরের পিতা এবং তেরহ এদের মতো লোকেদের কথাই বলছি। তখন তারা অন্যান্য দেবতাদের আরাধনা করত।
৩. কিন্তু আমি প্রভু স্বয়ং তোমাদের পূর্বপুরুষ অব্রাহামকে ফরাৎ নদীর ওপারের দেশ থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলাম এবং তাকে কনানের ভেতর দিয়ে নিয়ে এসেছিলাম এবং তার বংশবৃদ্ধি করেছিলাম। তারপর তাকে দিলাম অসংখ্য সন্তান। অব্রাহামকে আমি একটি সন্তান দিলাম। তার নাম ইস্হাক।
৪. “ইস্হাককে আমি একটির নাম যাকোব এবং এষৌ নামে দুটী সন্তান দিলাম। এষৌকে দিলাম সেয়ীর পর্বতের চারিদিকের জমি। সেখানে যাকোব আর তার পুত্রেরা থাকত না। তারা চলে গিয়েছিল মিশরে।
৫. তারপর আমি মোশি আর হারোণকে মিশরে পাঠালাম। পাঠানোর উদ্দেশ্য মিশর থেকে আমার লোকেদের বের করে আনা। আমি মিশরের লোকেদের ভয়ঙ্কর কষ্টের মুখে ফেলেছিলাম। আর এইভাবেই আমি তোমাদের লোকেদের মিশর থেকে বের করে আনলাম।
৬. এভাবেই তোমাদের পূর্বপুরুষদের আমি মিশর থেকে নিয়ে এসেছিলাম। লোহিত সাগরের দিকে তারা চলে এসেছিল আর তাদের পিছু নিয়েছিল মিশরীয়রা। তাদের ছিল কত রথ, কত ঘোড়া আর কত লোক।
৭. তাই লোকেরা আমার কাছে অর্থাৎ প্রভুর কাছে সাহায্য ভিক্ষা করল। আমি মিশরের লোকেদের ঘোর কষ্টের মধ্যে ফেললাম। আমি প্রভু সমুদ্র দিয়ে তাদের আড়াল করলাম। তোমরা তো নিজেরাই দেখেছিলে মিশরের সৈন্যবাহিনীর কি অবস্থা আমি করেছিলাম। তারপর তোমর৷ বহুদিন মরুভূমিতে কাটিয়েছিলে।
৮. এরপর আমি তোমাদের নিয়ে এসেছিলাম ইমোরীয়দের দেশে। দেশটা ছিল যদনের পূর্বতীরে। ওরা তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিল বটে, কিন্তু আমি তাদের হারাবার জন্য তোমাদের শক্তি দিয়েছিলাম। তাদের বিনাশ করার মতো ক্ষমতা আমি তোমাদের দিয়েছিলাম। তারপর তোমরা সেই দেশের দখল নিলে।
৯. তারপর মোয়াবের রাজা বালাক সিপ্পোরের পুত্র ইস্রায়েলবাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্যে তোড়জোড় করতে লাগল। সে ডেকে পাঠাল বালামকে। বালাম হচ্ছে বিয়োরের পুত্র। সে বালামকে তোমাদের অভিশাপ দিতে বলল।
১০. কিন্তু আমি প্রভু, বালামের অভিশাপ শুনতে সম্মত হলাম না। অভিশাপের বদলে সে তোমাদের করল আশীর্বাদ। একবার নয়, বারবার। এভাবেই আমি তোমাদের বাঁচিয়েছিলাম। আমি তোমাদের বিপদ থেকে রক্ষা করেছিলাম।
১১. তারপর তোমর৷ যদন নদী পেরিয়ে যিরীহোয় এলে। যিরীহোর লোকেরা তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করল। তাছাড়া ইমোরীয়, পরিষীয়, কনানীয়, হিত্তীয়, গিগাশীয়, হিব্বীয় আর যিবুষীয় লোকেরাও তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল। কিন্তু সমস্ত যুদ্ধেই আমি তোমাদের জিতিয়ে দিলাম।
১২. তোমাদের সৈন্যরা যখন এগিয়ে যাচ্ছিল তখন আমি তাদের আগে আগে ভীমরুল পাঠালাম। ভীমরুলের ভয়েই লোকেরা পালিয়ে গেল। তাই তরবারি, তীরধনুক ছাড়া তোমরা সেই দেশ জয় করে নিলে।
১৩. আমি প্রভু তোমাদের সেই জমিজায়গা দিয়েছিলাম। তোমরা ঐসব শহর তৈরী কর নি, আমিই সেসব তোমাদের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। আজ তোমরা সেইসব জায়গায় আর শহরে বসবাস করছ। দ্রাক্ষার বাগান, জলপাইগাছ সবই তোমাদের আছে। কিন্তু একটা গাছের চারাও তোমাদের পুঁতে দিতে হয় নি।”
১৪. তখন যিহোশূয় লোকদের বললেন, “এখন শুনলে তো প্রভুর বাণী। তাই বলছি তোমরা অবশ্যই প্রভুকে শ্রদ্ধাভক্তি করবে এবং আন্তরিকভাবে তাঁর সেবা করবে। তোমাদের পূর্বপুরুষেরা যে সব মূর্তির পূজা করেছিল, তাদের তোমরা ছুঁড়ে ফেলে দাও। বহুকাল আগে এইসব ঘটনা ঘটেছিল ফরাৎ নদীর ওপারে আর মিশরে। এখন থেকে তোমরা শুধু প্রভুরই সেবা করবে।
১৫. “কিন্তু এমনও তো হতে পারে যে, তোমরা চাও না এই প্রভুর সেবা করতে। তাহলে আজই তোমরা নিজেরাই ঠিক করো কাকে তোমরা সেবা করবে। ফরাৎ নদীর অন্যপারে তোমাদের পূর্বপুরুষের৷ যেসব দেবতাদের পূজা করত তোমরা কি তাদের সেবা করবে, নাকি এদেশের ইমোরীয়রা যেসব দেবতাদের উপাসনা করত তাদের সেবা করবে? নিজেরাই সেটা ঠিক করো। কিন্তু আমি আর আমার পরিবার সম্পর্কে বলতে পারি, আমরা প্রভুরই সেবা করব।”
১৬. তখন লোকেরা উত্তর দিল, “আমরা প্রভুর সেবা থেকে কখনই বিরত হবো না। আমরা কখনই অন্য দেবতাদের পূজা করবো না।
১৭. আমরা জানি প্রভু আমাদের ঈশ্বরই মিশর থেকে আমাদের বের করে এনেছিলেন। সে দেশে আমরা ছিলাম ক্রীতদাস। কিন্তু প্রভু সেখানে আমাদের জন্য মহাকার্য সাধন করেছিলেন। সে দেশ থেকে তিনিই আমাদের উদ্ধার করেছিলেন। অন্যান্য দেশে যাবার সময় তিনিই আমাদের রক্ষা করেছিলেন।
১৮. সেইসব দেশে বসবাসকারী লোকেদের পরাজিত করতে প্রভুই আমাদের সাহায্য করেছিলেন। আমরা আজ যেখানে রয়েছি সেখানে ইমোরীয়দের পরাজিত করতে তিনিই আমাদের সাহায্য করেছিলেন। তাই আমরা তাঁর সেবা করতে থাকব। কেন? কারণ তিনিই আমাদের ঈশ্বর।”
১৯. “যিহোশূয় বললেন, “মিথ্যা কথা। তোমরা প্রভুর সেবা চিরকাল করতে পারবে না। প্রভু ঈশ্বর পরম পবিত্র। প্রভুর লোকেরা যদি অন্য দেবতার পূজা করে ঈশ্বর তাদের ঘৃণা করেন। এইভাবে তোমরা যদি ঈশ্বরের ইচ্ছের বিরূদ্ধে যাও তাহলে তিনি তোমাদের ক্ষমা করবেন না।
২০. কিন্তু তোমরা তো প্রভুকে ছেড়ে অন্যান্য দেবতাদেরই আরাধনা করবে। তাহলে প্রভু তোমাদের সাংঘাতিক দুর্ভোগ দেবেন এবং তিনি তোমাদের বিনাশ করবেন। প্রভু তোমাদের মঙ্গল সাধন করেছেন, কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করলে তিনি তোমাদের ধ্বংস করবেন।”
২১. লোকেরা যিহোশূয়কে বলল, “না ! আমরা তাঁর বিরুদ্ধে যাব না। আমরা প্রভুরই সেবা করব।”
২২. যিহোশূয় বললেন, “তোমরা নিজেদের দিকে তাকাও। এখানে যারা এসেছে তাদের দিকে তাকাও। তোমরা কি সব জেনে শুনে সম্মত আছ যে তোমরা প্রভুর সেবা করবে? তোমর৷ সকলে এই ঘোষণার সাক্ষী আছ তো?” তারা বলল, “হ্যা আমরা সাক্ষী হলাম। আমরা প্রভুর সেবা করব বলে যে কথ৷ দিলাম, তা যাতে পালন করতে পারি সে বিষয়ে আমরা লক্ষ্য রাখব।”
২৩. তখন যিহোশূয় বললেন, “সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে মূর্ত্তিগুলো আছে তা তোমরা ছুঁড়ে ফেলে দাও। ইস্রায়েলের প্রভু ঈশ্বরকে তোমাদের সমস্ত অন্তঃকরণ দিয়ে ভালোবাস।”
২৪. তারা যিহোশূয়কে বলল, “আমরা আমাদের প্রভু ঈশ্বরের সেবা করব। আমরা তাঁর আদেশ পালন করব।”
২৫. তাই সেদিন যিহোশূয় শিখিম শহরে তাদের সঙ্গে এক চুক্তি করলেন। শিখিম শহরে এই চুক্তি হ’ল তাদের কাছে নিয়মের মতো, যে নিয়ম তারা পালন করবে।
২৬. “যিহোশূয় সেসব ঈশ্বরের বিধির পুস্তকে লিখে রাখলেন। তারপর যিহোশূয় একটা বিরাট পাথর দেখতে পেলেন। সেই পাথরটাই হচ্ছে চুক্তির সাক্ষ্য প্রমাণ। প্রভুর পবিত্র তাঁবুর কাছে ওক গাছের নীচে সেই পাথরটিকে তিনি স্থাপন করলেন।
২৭. ”তখন যিহোশূয় সমস্ত লোকেদের বললেন, “আজ আমরা তোমাদের যা বললাম এই পাথর সে সব তোমাদের মনে করিয়ে দেবে। এই পাথরটি হবে সেই বস্তু যা তোমাদের মনে করিয়ে দেবে আজ কি হল এবং এটি তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভু, ঈশ্বরের বিরুদ্ধাচরণ করতে বিরত করবার জন্য একটি সাক্ষী হয়ে থাকবে।”
২৮. তারপর যিহোশূয় সকলকে বাড়ী চলে যেতে বললেন। সকলে যে যার জায়গায় ফিরে গেল।
যিহোশূয়র মৃত্যু
২৯. এরপর নূনের পুত্র যিহোশূয় মারা গেলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ১১০ বছর।
৩০. তাঁর নিজের জায়গা তিন্নৎ-সেরহে তাঁকে কবর দেওয়া হয়েছিল। গাশ পর্বতের উত্তরে পাহাড়ী শহর ইফ্রয়িমে এই তিন্নৎ- সেরহ অবস্থিত।
৩১. “যিহোশূয় যতদিন বেঁচে ছিলেন ইস্রায়েলবাসীরা প্রভুর সেবা করেছিল। এমনকি যিহোশূয়র মৃত্যুর পরও তারা প্রভুর সেবা চালিয়ে গেল। যতদিন তাদের নেতারা বেঁচেছিলেন লোকেরা প্রভুর সেবা করেছিল। এই নেতারা ইস্রায়েলের জন্য প্রভুর সমস্ত কর্মকাণ্ড সচক্ষে দেখেছিলেন।
যোষেফের গৃহে প্রত্যাবর্তন
৩২. মিশর ছেড়ে চলে আসার সময় ইস্রায়েলবাসীরা সঙ্গে করে এনেছিল যোষেফের অস্থি। তারা শিখিমে তাঁর অস্থিগুলি সমাহিত করল। তারা সেই জায়গায় কবর দিল যে জায়গাটি যাকোব ১০০টি খাঁটি রূপোর মুদ্রা দিয়ে শিখিমের পিতা হমোরের কাছ থেকে কিনেছিলেন। এই জায়গাটিতে যোষেফের সন্তান সন্ততিরা বাস করছে।
৩৩. হারোণের পুত্র ইলিয়াসর মারা গেলে গিবিয়ায় তাঁকে কবর দেওয়া হয়েছিল। গিবিয়া ইফ্রয়িমের পাহাড়ী অঞ্চলে অবস্থিত। ইলিয়াসরের পুত্র পীনহসকে গিবিয়া দান করা হয়েছিল।