যিরীহোয় গুপ্তচরবাহিনী

১. নূনের পুত্র যিহোশুয় শহরে শিবির স্থাপন করলেন। তারপর যিহোশয় সকলের নূনের পুত্র যিহোশূয় এবং অন্য সকলে শিটীম শহরে অজ্ঞাতে দুজন গুপ্তচরকে পাঠালেন। তিনি তাদের বললেন, “দেশট৷ ভাল করে ঘুরে দেখে এসো, বিশেষ করে যিরীহো শহরটার দিকে নজর রেখো।’ তার৷ যিরীহোর দিকে রওনা দিল। সেখানে তার৷ এক গণিকাগৃহে উঠল। তার নাম রাহব।

২. কোন একজন গিয়ে যিরীহোর রাজার কাছে বলল, “কাল রাত্রে ইস্রায়েল থেকে কিছু লোক আমাদের দেশের কোথায় কি দুর্বলতা আছে দেখবার জন্যই এসেছে।”

৩. তখন যিরীহোর রাজা রাহবের কাছে বার্তা পাঠালেন, “যারা তোমার বাড়ীতে রয়েছে তাদের লুকিয়ে রেখো না। তাদের বের করে দাও। তারা তোমাদের দেশে গুপ্তচরবৃত্তি করতে এসেছে।”

৪. রাহব দুজনকে লুকিয়েই রেখেছিল। সে বলল, “এরা এসেছিল ঠিকই, কিন্তু কোথা থেকে এসেছিল তা জানি না।

৫. সন্ধ্যাবেলা নগরের ফটক বন্ধ হবার সময় তারা দুজন চলে গেল। কোথায় গেল তাও জানি না। তাড়াতাড়ি তাদের পেছনে পেছনে যাও, হয়তো তুমি তাদের ধরে ফেলতেও পারো।”

৬. (আসলে রাহব ওদের কাছে যাই বলুক, ঐ দুজনকে সে ছাদের উপর মসিনার ডাঁটার মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিল।)

৭. রাজার লোকেরা নগরের বাইরে বেরিয়ে গেল। নগরের সমস্ত ফটক বন্ধ করে দেওয়া হল। তারা ইস্রায়েল থেকে আসা ঐ দুজনের খোঁজে বেরিয়ে যৰ্দ্দন নদীর ধারে এসে পৌঁছাল আর নদীর যেখানে যেখানে লোক পারাপার করে সেসব জায়গায় খোঁজ করতে লাগল।

৮. এদিকে ওরা দুজন যখন ঘুমাবার আয়োজন করছে রাহব ছাদে উঠে এলো।

৯. সে তাদের বলল, “আমি জানি প্রভু তোমাদের লোকেদের এই দেশ দিয়েছেন। তোমরা আমাদের ভয় পাইয়ে দিয়েছ। এদেশের সমস্ত মানুষ তোমাদের ভয় করে।’

১০. আমরা ভয় পেয়েছি কারণ আমরা শুনেছি যে কিভাবে প্রভু তোমাদের সহায় হয়েছিলেন। আমরা শুনেছি মিশর থেকে আসার সময় তিনি লোহিত সাগরের জল শুকিয়ে দিয়েছিলেন। আমরা এও শুনেছি সীহোন আর ওগ নামের দুজন ইমোরীয় রাজাকে তোমরা কি করেছিলে। আমরা জানি যদ্দনের পূর্বতীরে ঐ রাজাদের তোমরা কিভাবে ধ্বংস করেছিলে।

১১. “এইসব বৃত্তান্ত শুনে আমরা আতঙ্কিত হয়ে আছি। আমাদের মধ্যে এমন বীর কেউ নেই যে তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে। এর কারণ তোমাদের প্রভু ঈশ্বর ওপরে স্বর্গ আর নীচে এই বিশ্বলোকের শাসনকর্তা।

১২. আমি তো তোমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, সাহায্য করেছি, তাই তোমাদের কাছে আমি একট৷ কথা দিতে অনুরোধ করছি। প্রভুর সামনে শপথ করে বলো তোমরা আমার পরিবারের প্রতি দয়া করবে। বলো করবে তো?

১৩. কথা দাওআমার পরিবারের সকলকে বাঁচিয়ে রাখবে। আমার মাতা, পিতা, ভাই-বোন আর তাদের সংসারের সকলকে বাঁচিয়ে রেখো। প্রতিশ্রুতি দাও মৃত্যুর হাত থেকে তোমর৷ আমাদের রক্ষা করবে।”

১৪. ওরা দুজন সম্মত হল। তারা বলল, “জীবন দিয়ে আমরা তোমাদের রক্ষ৷ করব। কিন্তু কাউকে বলবে না। আমরা কি করছি। প্রভু যখন আমাদের নিজস্ব দেশ আমাদের দেবেন তখন তোমাদের তে৷ কৃপা করবই। তোমরা আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখতে পারো।”

১৫. স্ত্রীলোকটির বাড়ী নগর প্রাচীরের গায়ে তৈরী করা হয়েছিল। এটা প্রাচীরেরই এক অংশ ছিল। সে জানালা দিয়ে একটা মোটা দড়ি ঝুলিয়ে দিল যাতে সেট৷ বেয়ে বেয়ে ওরা বেরিয়ে যেতে পারে।

১৬. “স্ত্রীলোকটি বলল, “পশ্চিমে পাহাড়ের দিকে তোমরা চলে যাও। তাহলে হঠাৎ করে রাজার সৈন্যরা তোমাদের খুঁজে পাবে না। ওখানে তিনদিন তোমরা আত্মগোপন করে থাকো। সৈন্যরা ফিরে এলে তোমরা তোমাদের পথে ফিরে যেও।”

১৭. তার৷ বলল, “আমরা তোমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। কিন্তু তোমাকে যে একট৷ কাজ করতে হবে, নইলে কথা রাখতে না পারলে আমরা দায়ী হব না।

১৮. আমাদের পালানোর জন্য তুমি এই লাল দড়িটা কাজে লাগিয়েছ। আমরা তো অবশ্যই এখানে ফিরে আসছি। তখন কিন্তু এই দড়িটা আবার জানালায় ঝুলিয়ে রাখবে। তোমরা অবশ্যই তোমার বাড়ীতে তোমার মাতা, পিতা, ভাই- বোনদের এবং তোমার সমস্ত পরিবারবর্গকে নিয়ে আসবে।

১৯. এই বাড়ীতে যারাই থাকবে তাদের প্রত্যেককে আমরা রক্ষা করব। কেউ যদি আহত হয় তার জন্য আমরা দায়ী থাকব। কিন্তু কেউ যদি বাড়ীর বাইরে থাকে তাহলে সে হত হতে পারে, সেক্ষেত্রে আমরা দায়ী হব না। সেক্ষেত্রে দোষ তার নিজের।

২০. তোমার সঙ্গে এই আমাদের চুক্তি হয়ে রইল। কিন্তু তুমি যদি কাউকে এসব ফাস করে দাও তাহলে এই চুক্তি আর চুক্তি থাকবে না।”

২১. স্ত্রীলোকটি বলল, “তুমি যা যা বলেছ সব আমি করব।” সে তাদের বিদায় জানাল। তারা তার বাড়ী থেকে বেরিয়ে গেল। লাল দড়িটা সে জানালায় বেঁধে দিল।

২২. তারা বাড়ী থেকে বেরিয়ে পাহাড়ের দিকে যাত্র৷ করল। তারা সেখানে তিনদিন রইল। রাজপ্রহরীরা সমস্ত রাস্তায় নজরদারি করতে লাগল। তিনদিন এভাবে কেটে যাবার পর তারা আশা ছেড়ে দিয়ে নগরে ফিরে এলো।

২৩. তারপর লোক দুটি পাহাড় পেরিয়ে, নদী পেরিয়ে নূনের পুত্র যিহোশূয়র কাছে ফিরে এলো। তারা যা-যা দেখেছে সব তাকে জানাল। “যিহোশূয়কে তারা বলল, “প্রভু যথার্থই সমস্ত দেশট৷ আমাদের দিয়ে গেছেন। ওদেশের সমস্ত লোক আমাদের ভয়ে ভীত হয়ে আছে।”

error: Content is protected !!