যেদিন সূর্য স্থির হয়ে দাঁড়াল
১. সেইসময় জেরুশালেমের রাজা ছিল অদোনী- ষেদক। রাজা জানতে পেরেছিল যে, যিহোশূয় অয় শহরকে পরাস্ত করেছিলেন এবং ধ্বংস করে দিয়েছেন। সে জানতে পারল যিরীহো আর সে দেশের রাজারও একই হাল করেছিলেন যিহোশূয়। সে এটাও জেনেছিল, গিবিয়োনের লোকেরা ইস্রায়েলের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করেছে। তারা জেরুশালেমের খুব কাছাকাছিই রয়েছে।
২. এসব জেনে অদোনী-ষেদক এবং তার প্রজারা বেশ ভয় পেয়ে গেল। অয়ের মতো গিবিয়োন তো ছোটখাট শহর নয়। গিবিয়োন খুব বড় শহর, একে মহানগরী বলা যায়। সেই নগরের সকলেই ছিল বেশ ভালো যোদ্ধা। সেই নগরেরও এরকম অবস্থা শুনে রাজা তো বেশ ঘাবড়ে গেল।
৩. জেরুশালেমের রাজ৷ অদোনী-ষেদক হিব্রোণের রাজা হোহমের সঙ্গে কথা বলল। তাছাড়া যমূর্তের রাজা পিরাম, লাখীশের রাজ৷ যাফিয় এবং ইগ্লোনের রাজা দবীর – এদের সঙ্গে ও সে কথা বলল। জেরুশালেমের রাজা এদের কাছে অনুনয় করে বলল,
৪. “তোমরা আমার সঙ্গে চলো। গিবিয়োনদের আক্রমণ করতে তোমরা আমাকে সাহায্য করো। গিবিয়োনের লোকেরা যিহোশূয় ও ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করেছে।”
৫. ‘সেইজন্য পাঁচজন ইমোরীয় রাজার সৈন্যবাহিনী এক হলো। (এই পাঁচজন হলো জেরুশালেম, হিরোণ, যমূত, লাখীশ এবং ইগ্লোনের রাজা।) সৈন্যদল গিবিয়োনের দিকে যাত্রা করল। তারা শহর ঘিরে ফেলল এবং যুদ্ধ শুরু করল।
৬. ‘গিবিয়োনবাসীরা যিহোশূয়র কাছে খবর পাঠাল। সেই সময় যিহোশূয় গিলে তাঁর শিবিরে ছিলেন। খবরটা এইঃ “আমরা আপনার ভৃত্য। আপনি আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন না। আমাদের বাঁচান। তাড়াতাড়ি আসুন। পাহাড়ী দেশ থেকে সমস্ত ইমোরীয় জাতির রাজ। সৈন্যসামন্ত নিয়ে আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে আসছে।”
৭. খবর পেয়ে যিহোশূয় সসৈন্যে গিল থেকে বেরিয়ে পড়লেন। তাঁর সঙ্গে ছিল সেরা সৈনিকের দল।
৮. প্রভু যিহোশূয়কে বললেন, “ওদের সৈন্যসামন্ত দেখে ভয় পেও না। আমি তোমাদের জিতিয়ে দেব। ওরা কেউ তোমাদের পরাজিত করতে পারবে না।”
৯. সৈন্যদল নিয়ে যিহোশূয় সারারাত গিবিয়োনে অভিযান চালালেন। শত্রুরা জানতে পারল না, যিহোশূয় আসছেন। তাই যিহোশূয় এবং তাঁর সৈন্যরা হঠাৎ তাদের আক্রমণ করল।
১০. যখন ইস্রায়েল আক্রমণ করল তখন প্রভু সেই সৈন্যদের হতবাক করে দিলেন। তারা পরাজিত হল। ইস্রায়েলীয়দের কাছে এটা একটা মস্ত বড় জয়। তারা শত্রুদের গিবিয়োন থেকে বৈৎ-হোরোণের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে গেল। ইস্রায়েলীয় সৈন্যরা অসেকা এবং মক্কেদ পর্যন্ত যাবার পথে যত লোকজন ছিল সবাইকে হত্যা করল।
১১. তারপর তারা বৈৎ-হোরোণ থেকে অসেক পর্যন্ত লম্বা রাস্তাটি বরাবর শত্রুদের পেছনে-পেছনে ধাওয়া করতে করতে গেল। তাদের এভাবে তাড়া করার সময় প্রভু আকাশ থেকে শিলাবৃষ্টি ঝরালেন। বড় বড় শিলার ঘায়ে অনেক শত্রুই মারা গেল। ইস্রায়েলীয় সৈন্যদের তরবারির ঘায়ে যত না মারা পড়ল, তার চেয়ে ঢের বেশী মারা পড়ল শিলাবৃষ্টিতেই।
১২. সেইদিন প্রভু ইস্রায়েলের কাছে ইমোরীয়দের পরাজয় ঘটালেন। সেইদিন যিহোশূয় প্রভুর কাছে প্রার্থনা করলেন এবং তারপর সমস্ত ইস্রায়েলবাসীদের সামনে আদেশ করলেনঃ “হে সূর্য, তুমি গিবিয়োনের উপরে থামো। আর হে চন্দ্র, তুমি অয়ালোন উপত্যকায় চুপ করে থাকো।”
১৩. তাই সূর্য সরল না। চন্দ্রও নড়ল না যতক্ষণ না লোকেরা শত্রুদের হারায়। এই কাহিনী যাশের গ্রন্থে লেখা আছে। সূর্য মধ্যগগনে স্থির হয়ে গিয়েছিল, গোট। দিনটা সে আর ঘুরল না।
১৪. এরকম আগে কখনো হয়নি। পরেও কখনো হয়নি। সেদিন প্রভু একটি লোকের বাধ্য হয়েছিলেন। সত্যিই, প্রভু সেদিন ইস্রায়েলের পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন।
১৫. এরপর যিহোশূয় সৈন্যদের নিয়ে গিলের শিবিরে ফিরে এলেন।
১৬. কিন্তু যুদ্ধের সময় ঐ পাঁচজন রাজা পালিয়ে গিয়েছিল। মক্কেদার কাছে একটা গুহার মধ্যে তারা লুকিয়েছিল।
১৭. তবে একজন তাদের গুহায় লুকোতে দেখতে পেয়ে গিয়েছিল। যিহোশূয় সব জানতে পারলেন।
১৮. যিহোশূয় বললেন, “বড় বড় পাথর দিয়ে গুহামুখ বন্ধ করে দাও। কিছু লোককে গুহা পাহারায় রেখে দাও।
১৯. কিন্তু তোমরা সেখানেই যেন থেমে থেকো না। শত্রুদের তাড়া করতেই থাকো। পেছন থেকে তাদের আক্রমণ করতেই থাকো। তোমরা শত্রুদের কিছুতেই তাদের শহরে ফিরে যেতে দেবে না। প্রভু, তোমাদের ঈশ্বর তাদের উপর তোমাদের জয়ী হতে দিয়েছেন।”
২০. তারপর যিহোশূয় আর ইস্রায়েলবাসীরা শত্রুদের হত্যা করলেন। কিন্তু কয়েকজন শত্রু উঁচু প্রাচীর ঘেরা কয়েকটি শহরে গেল এবং সেইখানেই নিজেদের লুকিয়ে রাখল। তাদের আর হত্যা করা গেল না।
২১. যুদ্ধের পর যিহোশূয়ের লোকেরা তাঁর কাছে মক্কেদায় ফিরে এল। সেই দেশের কোন লোকই ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে একটা কথাও বলতে সাহস করে নি।
২২. ”যিহোশূয় বললেন, “গুহামুখ থেকে পাথরগুলো সরিয়ে দাও। ঐ পাঁচজন রাজাকে আমার কাছে আনো।
২৩. তাই যিহোশূয়ের লোকেরা পাঁচজন রাজাকে গুহার ভেতর থেকে বের করে আনল। তারা ছিল জেরুশালেম, হিরোণ, যমূর্ত, লাখীশ এবং ইগ্লোনের রাজা।
২৪. “তারা পাঁচজন রাজাকে যিহোশূয়ের সামনে হাজির করল। যিহোশূয় তাঁর লোকেদের সেখানে আসতে বললেন। সৈন্যদলের প্রধানদের তিনি বললেন, “তোমর৷ এদিকে এসো। এই রাজাদের গলায় তোমাদের পা দাও।” তাই সৈন্যদলের প্রধানেরা কাছে সরে এলো এবং তাদের পা এইসব রাজাদের গলায় রাখল।
২৫. তারপর যিহোশূয় তাঁর লোকেদের বললেন, “তোমরা শক্ত হও, সাহসী হও। ভয় পেও না। ভবিষ্যতে শত্রুদের সঙ্গে যখন তোমরা যুদ্ধ করবে তখন তাদের প্রতি প্ৰভু কি করবেন তা আমি তোমাদের দেখাচ্ছি।”
২৬. তারপর যিহোশূয় পাঁচ জন রাজাকে হত্যা করলেন। পাঁচট৷ গাছে পাঁচ জনকে ঝুলিয়ে দিলেন। সন্ধ্যে পর্যন্ত এইভাবেই তিনি তাদের রেখে দিলেন।
২৭. “সূর্যাস্তের সময় যিহোশূয় তাঁর লোকেদের গাছ থেকে দেহগুলোকে নামাতে বললেন। তাই তারা সেইগুলো ঐ গুহার ভেতরেই ছুঁড়ে দিল। যে গুহাতে রাজারা লুকিয়েছিল তার মুখটা বড় বড় পাথরে ঢেকে দিল। সেই দেহগুলো আজ পর্যন্ত গুহার ভেতরে আছে।
২৮. সেদিন যিহোশূয় মক্কেদা শহর জয় করলেন। শহরের রাজা ও লোকেদের যিহোশয় বধ করলেন। একজনও বেঁচে রইল না। যিহোশূয় যিরীহোর রাজার যে দশা করেছিলেন, মক্কেদার রাজারও সেরকম দশা করলেন।
দক্ষিণের শহরগুলি দখল হল
২৯. তারপর লোকেদের নিয়ে যিহোশূয় মক্কেদা থেকে বেরিয়ে পড়লেন। তারা লিনাতে গিয়ে সেই শহর আক্রমণ করল।
৩০. প্রভু ইস্রায়েলীয়দের সেই শহর ও শহরের রাজাকে পরাজিত করতে দিলেন। সেই শহরের প্রত্যেকটা লোককে ইস্রায়েলীয়রা হত্যা করেছিল। কোন লোকই বেঁচে রইল না। আর লোকেরা যিরীহোর রাজার যে দশা করেছিল, সেই শহরের রাজারও সেই দশা করল।
৩১. তারপর ইস্রায়েলের লোকদের নিয়ে যিহোশূয় লিবনা ছেড়ে লাখীশের দিকে গেলেন। লিনার কাছে তাঁবু খাটিয়ে তারা শহর আক্রমণ করল।
৩২. প্রভু তাদের লাখীশ জয় করতে দিলেন। দ্বিতীয় দিনে তারা শহর অধিকার করল। ইস্রায়েলের লোকেরা শহরের প্রত্যেকটা লোককে হত্যা করল। লিনার মতে৷ এখানেও তারা একই কাজ করেছিল।
৩৩. গেষরের রাজা হোরম লাখীশকে রক্ষার জন্য এসেছিল। কিন্তু যিহোশূয় তাকেও সৈন্যসামন্ত সমেত হারিয়ে দিলেন। তাদের একজনও বেঁচে রইল না।
৩৪. তারপর যিহোশূয় ইস্রায়েলবাসীদের নিয়ে লাখীশ থেকে ইগ্লোনের দিকে যাত্রা করলেন। ইগ্লোনের কাছে তাঁবু গেড়ে তারা ইগ্লোন আক্রমণ করল।
৩৫. সেদিন তারা শহর দখল করে সেখানকার সব লোককে মেরে ফেলল। ঠিক লাখীশের মতো এখানেও সেই একই ঘটনা ঘটল।
৩৬. “তারপর যিহোশূয় ইস্রায়েলবাসীদের নিয়ে ইগ্লোন থেকে হিরোণের দিকে চললেন। সকলে হিরোণ আক্রমণ করল।”
৩৭. এই শহরটা ছাড়াও হিরোণের লাগোয়া কয়েকটা ছোটখাট শহরও তারা অধিকার করল। শহরের প্রত্যেকট৷ লোককে তারা হত্যা করল। কেউ সেখানে বেঁচে রইল না। ইগ্লোনের মতো এখানেও সেই একই ঘটনা ঘটল। তারা শহর ধ্বংস করে সেখানকার সব লোককে হত্যা করেছিল।
৩৮. তারপর যিহোশূয় ও ইস্রায়েলবাসীরা দবীরে ফিরে এসে সেই শহরটি আক্রমণ করল।
৩৯. তারা সেই শহর, শহরের রাজা আর দবীরের লাগোয়া সমস্ত ছোটখাট শহর সব কিছু দখল করে নিল। শহরের সব লোককে তারা হত্যা করল। কেউ বেঁচে রইল না। হিরোণ আর তার রাজাকে নিয়ে তারা যা করেছিল দবীর ও তার রাজাকে নিয়েও তারা সেই একই কাণ্ড করল। লিনা ও সে শহরের রাজার ব্যাপারেও তারা একই কাজ করেছিল।
৪০. এইভাবে যিহোশূয় পাহাড়ি দেশ নেগেভের এবং পশ্চিম ও পূর্ব পাহাড়তলীর সমস্ত শহরের সব রাজাদের পরাজিত করল। ইস্রায়েলের প্রভু ঈশ্বর যিহোশূয়কে নির্দেশ দিয়েছিলেন সমস্ত লোককে হত্যা করার জন্য। তাই যিহোশূয় ঐ সব অঞ্চলের কোনো লোককেই বাঁচতে দেন নি।
৪১. যিহোশূয় কাদেশ-বর্ণেয় থেকে ঘসা পর্যন্ত সমস্ত শহর অধিকার করেছিলেন। মিশরের গোশন থেকে গিবিয়োন পর্যন্ত সমস্ত শহর তিনি অধিকার করেছিলেন।
৪২. একবারের অভিযানেই যিহোশূয় ঐসব শহর ও তাদের রাজাদের অধিকার করতে পেরেছিলেন। যিহোশূয় এমনটি করতে পেরেছিলেন কারণ ইস্রায়েলের প্রভু ঈশ্বর স্বয়ং ইস্রায়েলের পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন।
৪৩. এরপর যিহোশূয় ইস্রায়েলবাসীদের নিয়ে গিলে তাদের শিবিরে ফিরে এলেন।