এক তরুণ বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলাম। সীমা উকি মেরে বললো, “আমি কিন্তু রেডি।”

ইতিমধ্যে আমরা দু’দফায় চা আর কফি খেয়েছি। বন্ধুটি কাছেই থাকেন। সায়েন্স কলেজে পড়ান। বেশ মুক্ত মনের মানুষ বলে জানি। ওঁর সঙ্গে আড্ডা দিতে ভালো-ই লাগে। কিন্তু এখন উঠতে-ই হবে। ডাক্তার আর এন মুখার্জির সঙ্গে অ্যাপয়েনমেন্ট করা আছে।

বললাম, “একটু উঠতে হবে। তোমার বউদিকে নিয়ে একটু ডাক্তারের কাছে যাবো।”

—“ওঁর কী হয়েছে।”

—“বাতে কষ্ট পাচ্ছে। সঙ্গে ডায়াবেটিস। কত মোটা হয়ে গেছে দেখেছো? ৮২ কেজি।”

—“এর জন্য ডাক্তার দেখাবার কোনও দরকার নেই। তুমি ‘আস্থা’ চ্যানেল দেখো না? সকালে ‘ইন্ডিয়া’ চ্যানেল। আরে, আজকাল প্রচুর চ্যানেলেই দেখতে পাবে স্বামী রামদেবকে। লক্ষ লক্ষ লোক স্রেফ টিভি দেখে যোগ করে রোগ সারিয়ে ফেলছে। পৃথিবীতে যত রোগ আছে, সব-ই সারান যায় যোগে। এই তো আমার কাকার গ্লুকোমা হয়েছিল। শংকর নেত্রালয়’ থেকে দেখিয়ে এলেন। ওঁরা বললেন, আর বছর দেড়েকের মধ্যে অন্ধ হয়ে যাবেন। কিছু করার নেই ওদের। স্বামী রামদেবের প্রোগ্রাম দেখতাম। খুব ভালো লাগতো। আমি-ই তারপর রামদেবের লেখা ‘যোগ সাধনা এবং যোগ চিকিৎসা রহস্য’ বইটা কিনলাম। পড়লাম। কাকাকে দিলাম। বিশ্বাস করবে না প্রবীর দা, শুধুমাত্র দু’মাস হাতের আঙুলে ‘প্রাণ’ মুদ্রা করে চোখ একদম ঠিক। তুমি বইটা দেখে যদি সীমা বউদিকে দিয়ে আঙুলে ‘বায়ু’ মুদ্রা করাও। দু’মাসে বাত সারবে-ই। হাই সুগারে চোখের পাওয়ার নিশ্চয়ই বেড়েছে, এমনকী গ্লুকোমা হওয়াও আশ্চর্যের নয়। যে কোনও চোখের অসুখ সারাতে ‘প্রাণ’ মুদ্রার জবাব নেই।”

–“তা তোমার স্বামী রামদেব নিজের চোখের ব্যামোটা সারাচ্ছেন না কেন?” —“বাঁ চোখটা ছোট, ডান চোখটা বড়? ওটা তো চোখের রোগ নয়। ওটা থাইরয়েডের জন্যে হয়েছে।”

বললাম, “কিন্তু তোমার বইতে-ই তো রয়েছে, ‘শূন্য’ মুদ্রা করলে থাইরয়েড সারবে। নিজের অসুখ সারাতে পারছে না। বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেলে শুধু বুনি ঝেড়ে যাচ্ছে, পৃথিবীর যে কোনও রোগকে যোগে সারিয়ে দেবে। রামদেবকে আমাদের চ্যালেঞ্জটা অ্যাকসেপ্ট করতে বলো না। আমরা তিনজন রোগী দেবো। তিনি হরিদ্বারে তাঁর দিব্য যোগ মন্দিরে রেখে যোগ করিয়ে এক বছরে সারিয়ে দিন, দেবো প্রণামী হিসেবে ২০ লক্ষ টাকা। যুক্তিবাদী সমিতি ভেঙে দেবো । কোনও অজুহাত না দিয়ে নিজের খরচায় রোগীকে যোগ মন্দিরে রেখে সারাবার চ্যালেঞ্জ নেবেন? কখন-ই নেবেন না। যে নিজের চোখের রোগ সারাতে পারলো না, সে সারাবে সব রোগ? অল বোগাস। এমন কোনও যোগী নেই যে সব রোগ সারাতে পারে।

“হটযোগপ্রদীপিকা’ হটযোগের আকরগ্রন্থ। তাতে বলা আছে যোগে জরা রোধ করা যায়। খেচরী মুদ্রায় অমরত্বলাভ করা যায়। গত একশো বছরের মধ্যে সবচেয়ে নামী যোগী ওশো রজনীশ-ও মারা গেলেন। খেচরী মুদ্রা জেনেও মারা গেলেন। জরাকেও আটকাতে পারেননি। তুলনায় রামদেব তো ‘দো-দিনকা যোগী’। ওকে স্পনসর করতে এগিয়ে এসেছে বড় বড় কোম্পানী। গড়ে তুলেছে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা ও ট্রাস্টি। রামদেবের স্পনসররা গত দু’বছরে রামদেবকে জনপ্রিয় করেছে। এখন বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে দেখা যায় রামদেবকে। বিশাল অংকের বিনিয়োগ করে টাইম স্লট নিয়ে রামদেব নিজের মুখ অনবরত দেখিয়ে দেখিয়ে মানুষকে প্রভাবিত করে চলেছে। নতুন কোনও প্রোডাক্ট লঞ্চ করার সময় প্রোডাক্টটার সঙ্গে সম্ভাব্য কাস্টমারদের পরিচয় ঘটাতে যেমন বার-বার এদের বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে দেখান হয়।

প্রচারের যুগে তরমজের শাম্পু থেকে কুমড়োর বিউটি সোপ

সব’ই হৈ-হৈ করে চলে বিজ্ঞাপনে হুলুস্থুল ফেলে দিতে

পারলে। একই নিয়মে বিজ্ঞাপনে বাজার মাত করেছে

নতুন প্রোডাক্ট ‘রামদেবের যোগ’।

প্রথম পর্বঃ মনের নিয়ন্ত্রণ

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ বুদ্ধি, স্মৃতি, প্রতিভা নিয়ে বিভ্রান্তি বেচে খাচ্ছে অনেকে

অধ্যায়ঃ দুই

♦ প্রচুর পড়েন মানে-ই মস্তিষ্কচর্চা করেন?

অধ্যায়ঃ তিন

♦ স্মৃতি-শক্তি ও প্রতিভা এক নয়

অধ্যায়ঃ চার

♦ জ্ঞান (wisdom) ও শিক্ষা (education) এক নয়

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ মস্তিষ্ক ও তার কিছু বৈশিষ্ট্য

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ পাভলভ-তত্ত্বে মস্তিষ্কের ‘ছক’ বা type

অধ্যায়ঃ সাত

♦ আচরণগত সমস্যা

অধ্যায়ঃ আট

♦ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কত কিছু পাল্টে যায়

অধ্যায়ঃ নয়

♦ অলজাইমারস সৃষ্টিশীল মেধায় ভয়ঙ্কর অসুখ

অধ্যায়ঃ দশ

♦ ‘আই কিউ’ কি বাড়ানো যায়?

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ জিন বা বংশগতি-ই ঠিক করে মেধা-বুদ্ধি?

অধ্যায়ঃ বারো

♦ বংশগতি গবেষণা ও স্নায়ুবিজ্ঞানের অগ্রগতি

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ মানবগুণ বিকাশে পরিবেশের প্রভাব

অধ্যায়ঃ চোদ্দ

♦ মগজ কম্পিউটারে প্রোগ্রামিং

অধ্যায়ঃ পনেরো

♦ মগজধোলাই-এর প্রয়োজনীয়তা বেড়েই চলেছে

দ্বিতীয় পর্বঃ ধ্যাণ-যোগ-সমাধি মেডিটেশন

অধ্যায়ঃ এক

♦ যোগ নিয়ে যোগ বিয়োগ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ যোগ কি? যোগ নিয়ে গুলগপ্পো

অধ্যায়ঃ তিন

♦ যোগ

অধ্যায়ঃ চার

♦ যোগের সে’কাল এ’কাল

অধ্যায়ঃ পাঁচ

‘রজনীশ’ এক শিক্ষিত যোগী, বিতর্কিত নাম

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !

অধ্যায়ঃ সাত

♦ শ্রীমাতাজী নির্মলা দেবীর সহজযোগ

অধ্যায়ঃ আট

♦ রিল্যাক্সেশন, মেডিটেশন নিয়ে বাংলাদেশের যোগী মহাজাতক

অধ্যায়ঃ নয়

♦ ‘যোগ’ মস্তিষ্ক-চর্চা বিরোধী এক স্থবীর তত্ত্ব

অধ্যায়ঃ দশ

♦ ‘মেডিটেশন’, ‘রিলাক্সেশন’, বা ‘স্বসম্মোহন’

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ বিশ লক্ষ টাকার চ্যালেঞ্জ

“মনের নিয়ন্ত্রণ যোগ-মেডিটেশন” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ

⇒ মন্তব্য করুন⇐

error: Content is protected !!