‘যোগ’ ব্যাপারটা নিয়ে আমি ধন্ধে ছিলাম দীর্ঘকাল। যোগ কি আসলে যন্ত্রপাতি ছাড়া আসনের সাহায্যে কিছু ব্যায়াম পদ্ধতি? শরীরকে সুস্থ রাখার কিছু আসন ও মুদ্রার পদ্ধতি মাত্র? নাকি এর বাড়তি কিছু? পতাঞ্জলির যোগের বইতে বা হঠযোগের বইতে যা লেখা আছে—সব-ই সত্য? যোগী হলে কি জলের উপর দিয়ে সত্যিই হেঁটে যাওয়া যায়? আকাশে ওড়া যায়? কয়েক’শো বছর নীরোগ অবস্থায় বেঁচে থাকা যায়? যৌবনকে ধরে রাখা যায় আমরণ? অমর থাকা যায় ?
“হ্যাঁ, যায়।” কথাটা জোরের সঙ্গে আমাকে বলেছিলেন ‘সিদ্ধ-যোগী’ বালক ব্রহ্মচারী। আরও বলেছিলেন, “তোরা যেসব ঘটনাকে অলৌকিক বলে মনে করিস, সে’সবই করতে পারেন একজন সিদ্ধ-যোগী। জলে হাঁটা কীরে, স্বর্গ-মর্ত-পাতাল ত্রিভুবন ঘুরে আসতে পারেন তাঁরা।”
“এখনকার যোগ-ব্যায়াম আর ঋষিদের নির্দেশিত ‘যোগ’ কি একই ব্যাপার?” জিজ্ঞেস করেছিলাম যোগ-ব্যায়ামের জাতীয় বিচারক ডাঃ শান্তিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়কে। ডাঃ চট্টোপাধ্যায় সোজা-সাপটা জানালেন, “এ যুগের যোগ আর ঋষিদের আমলের যোগ একই ব্যাপার। যোগ হল সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে জীবাত্মার সঙ্গে পরমাত্মার যোগ সাধন করা যায়। এখন সবারই সময়ের অভাব। তাই শরীরকে সুস্থ রাখার মত কয়েকটা সোজা যোগ আমরা শেখাই। আমার ‘যোগ-বিজ্ঞান ও রোগ-মুক্তি’ বইতে লিখেছি, পতঞ্জলির আমলের যোগ হল এ যুগের যোগেরই একটা বিস্তৃত রূপ। যোগ মৃত্যু ও জরাকে জয় করতে পারে। এই যে আমার কোনও অসুখ হয় না, তার কারণ যোগ।”
ডাঃ শাস্তিরঞ্জন একবার খুবই অসুস্থ হলেন। ডাক্তার -হাসপাতাল করলেন। শান্তির কথাগুলো আমার কাছে জোলো হয়ে গেল। ‘কথার কথা’ হয়ে গেল।
কমল ভাণ্ডারী এক সময়ের ভারতের সেরা বডি বিল্ডার’ ছিলেন। যোগে আকৃষ্ট হলেন। ‘যোগ ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া’র সম্পাদক হলেন। তাঁর কথায়, “সব শাস্ত্রের সার যোগ শাস্ত্র।”
যোগ নিয়ে কথা বলেছিলাম চিত্ত গড়াই-এর সঙ্গে। তিনি তখন যোগ ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ার নির্বাচিত জাতীয় বিচারক। কথা বলেছি যোগ সাধক ও বঙ্গীয় ব্যায়াম সমিতির সহ-সভাপতি ডাঃ সৌমেন্দ্রনাথ দাসের সঙ্গে। দেখলাম যোগের কয়েকটা বিষয়ে ডাঃ চট্টোপাধ্যায়, কমল ভাণ্ডারী, চিত্ত গড়াই ও ডাঃ দাস একমত। ওঁরা মনে করেন (১) ভারতীয় মুনি-ঋষিরাই যোগের আসন, মুদ্রা ও প্রাণায়মের প্রবর্তক। (২) মহাদেব, পশুপতিনাথ বা শিব-ই যোগের আদি দেবতা ও স্রষ্টা। (৩) প্রাচীন মুনি-ঋষিরা মানুষের শরীর বিজ্ঞানের খুঁটি-নাটি সব কিছু জানতেন। বিভিন্ন স্নায়ুতন্ত্র, শিরা-উপশিরার কার্যকারিতা জানতেন। (৪) যোগশাস্ত্র ও তন্ত্রশাস্ত্র দুই-ই বুঝেছিল, মস্তিষ্ক থেকে সুষুম্মার মধ্যে (মেরুদণ্ডের মধ্যে) অবস্থিত স্নায়ুতন্ত্রের সব কেন্দ্র ও মর্মস্থানে একটি শক্তিনাড়ী বা ব্রহ্মনাড়ীর আশ্রয়ে আত্মা থাকে। (৫) মানুষের দেহের ভিতর ছটি চক্র থাকে, যাকে বলে ‘ষটচক্র’। এই ছটি চক্র ভেদ করে চিত্তকে মস্তিষ্কে নিয়ে যেতে পারলে মহাশক্তি অর্জন করা যায়, যোগ সিদ্ধ হওয়া যায়।
এইসব শুনে বেশ শঙ্কিত হয়েছিলাম। এই চার বিশিষ্ট যোগবিদদের দু’জন ডাক্তার। তারপরও তাঁরা বুঝতে চাইছেন না—
যোগ দর্শনটাই দাঁড়িয়ে আছে ভুল ‘অ্যানাটমি’ জ্ঞানের
ওপর ভিত্তি করে। এই ভুল শারীর বিদ্যে দিয়ে
রোগ সারাবার চেষ্টা করলে তার পরিণতি
কী হবে ভেবে শঙ্কিত হয়েছিলাম।
‘অবমানব’ পত্রিকার সম্পাদক সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। হিজড়েদের নানা অধিকার নিয়ে কথা-টথা বলেন। একটি কলেজে অধ্যাপনা করেন। একদিন আমাদের যুক্তিবাদী সমিতির বেলেঘাটার অফিসে এলেন এক ‘অবমানব’কে নিয়ে। সেখানে তখন এক ঘর লোকের কথায় কথায় জানালেন, হিজড়েদের শতকরা প্রায় ১০০ ভাগ-ই পুরুষ। কিন্তু কেউ পরীক্ষা করতে গেলে ধরতে পারবে না। আমরা একটা গুহ্য যোগাসনের সাহায্যে লিঙ্গকে শরীরের ভিতরে ঢুকিয়ে নিতে পারি ।
হটযোগে এমন একটা আসনের কথা পড়েছি, কিন্তু বিশ্বাস করিনি। হটযোগের ক্ষমতার পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ পেয়ে বললাম, “করে দেখাও।” দেখাতে পারেননি সোমনাথ ।
আসলে যোগের নানা ফল লাভের যে’ সব কথা প্রাচীন মুনি-ঋষি অর্থাৎ জাদু-পুরোহিতরা বলে গিয়েছিলেন, তা ঠিক নয়। কিছু কিছু আসন শরীরকে সুস্থ রাখার পক্ষে যথেষ্ট কার্যকর হতেই পারে। কিন্তু আসন করে অদৃশ্য হওয়া যায়, জরা ও মৃত্যুকে ঠেকিয়ে রাখা যায়, এমন আজগুবিতে বিশ্বাস করার মত কিছু বাল্যখিল্য মানুষ এখনও আছেন, দুঃখ ও শঙ্কার কথা এটাই।
“ধুর…ধুর…. এসব কথা ডাহা মিথ্যে। যোগাসনে, বা যোগব্যায়ামে শরীর সুস্থ-সবল থাকে। শরীর ভালো থাকলে এবং অন্য কোনও সমস্যা না থাকলে মন-ও ভালো থাকে। যে কোনও অসুখ যোগে সারিয়ে দেবো—এমনটা কেউ দাবি করলে বা বললে সে লোকেদের প্রতারিত করছে। হার্ট-প্রবলেম বা চোখের প্রবলেম নিয়ে কেউ যদি আমার কাছে আসেন, তো বলবো, ডাক্তার দেখান । যোগে ও সব কিছু সারে না।” একথা বলেছিলেন ভারত ও জাপানের কিংবদন্তী যোগ-গুরু বিশ্বনাথ ঘোষ। শুধু জাপানেই তাঁর পরিবার পরিচালিত যোগ-শিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে ৪২ টি। টোকিওতে-ই ৪টি। ভারতে তাঁর শিক্ষাকেন্দ্রের শাখা-প্রশাখা ১৬টি। এ’সব কথা তিনি আমাকে বলেছেন ২০০৬-এর জানুয়ারিতে। আরও শুনলাম কোনও এক যোগী বলেছেন, নখে নখ ঘষলে চুল গজায় ? সত্যি-ই বলেছেন? অল ভোগাস।’
বিশ্বনাথ ঘোষের বাবা বিষ্ণু ঘোষ ছিলেন ব্যায়াম ও যোগের এক কিংবদন্তী শিক্ষক। তাঁর বহু ছাত্র মিস্টার ইন্ডিয়া, মিস্টার এশিয়া, এমনকী মিস্টার ইউনিভার্স (মনোতোষ রায়) পর্যন্ত হয়েছেন। ১৯৬৮ সালে বিষ্ণু ঘোষ জাপানে যোগ শিক্ষাকেন্দ্র খুলে প্রচন্ড আলোড়ন তুলেছিলেন। ১৯৬৬-তে যোগ বিষয়ে আমার প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছিলেন। “প্রাচীনকালে ইনস্ট্রুমেন্ট নিয়ে যখন ব্যায়ামচর্চা শুরু হয়নি, তখন শুধুমাত্র শরীরকে সুস্থ-সবল রাখতে যোগচর্চার শুরু। যোগচর্চা নিয়ে অনেক অবৈজ্ঞানিক ধারণা প্রাচীন যোগীদের ছিল। আসলে তখন অ্যানাটামি বিষয়ে প্রায় সব-ই ছিল অজানা। ফলে ভুল ছিল। ভুলকে ঠিক করতে করতে আমরা এই জায়গায় পৌঁছেছি। যোগ নিয়ে যে সব অলৌকিক ক্ষমতার কথা বইতে থাকে, সে সবই মিথ্যে।”
পাশ্চাত্যের স্পোর্টস মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা অবশ্য মনে করেন, শরীরকে সবল ও স্বাস্থ্যবান করে তুলতে ইনস্ট্রুমেন্ট নিয়ে ব্যায়ামের কোনও তুলনা নেই। এতে শরীরে অনেক বেশী শ্রম হয়, এবং যোগাসনে যা আদৌ হয় না। ফলে স্বাস্থ্যের জন্য যোগের চেয়ে ইনস্ট্রুমেন্ট-ব্যায়াম অনেক বেশি কার্যকর।
যোগ ও তন্ত্র
আমাকে পাকিয়েছিলেন স্কুলের ভৌমিক স্যার। ফর্সা গোলগাল রসগোল্লা-মার্কা চেহারা। একেবারে রসে টইটম্বুর। তিনিই শুনিয়েছিলেন রামী চণ্ডীদাসের গল্প। বুঝিয়েছিলেন, চণ্ডীদাস ও রামী রজকিনীর মধ্যে কোনও প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। ছিল বিশুদ্ধ কামের সম্পর্ক। চণ্ডীদাস শৈব মতে রামীকে বিয়ে করেছিলেন।
অনেক যোগী-তান্ত্রিক রমণের জন্য রমণী রাখতেন। তাকেই শোভন আকার দিতে বলা হত ‘শৈব-বিবাহ’। একসময় অনেক বাঙালি জমিদার ও বাবুরা যোগ ও তন্ত্র নিয়ে মেতেছিলেন। তাঁদের সাধনার ভৈরবী ছিল নিচুজাতের মেয়েরা। এইসব সাধন-সঙ্গিনীদের যোগাড় করে দিত এক শ্রেণির দূত বা দূতি। যোগ ও তন্ত্র মতে এমন পবিত্র কাজে সাহায্য করার জন্য পুণ্য লাভের কথা বলা হয়েছে। এইসব সাধন সঙ্গিনী নারীদের যোগাড় করা হত সাধারণভাবে ধোপা, গোয়ালা, নাপিত, চণ্ডাল, বেশ্যা—এইসব সম্প্রদায় থেকে।
সাংখ্য যোগ থেকে তন্ত্র, যেখানেই গভীরে ঢুকবেন, দেখবেন
ওদের মূল কথা এক-ই—মানুষের দেহ-ই বিশ্বপ্রকৃতির সব
রহস্যের আধার। সৃষ্টির মূলে রয়েছে পুরুষ ও প্রকৃতির
মিলন। প্রকৃতিই হল নারী-শক্তি। নারী-পুরুষের
মিলন-ই সাধনা। মিলনের চরম আনন্দ-ই
পরম-ব্রহ্ম। মিলনেই সৃষ্টি। যোগ ও
তন্ত্রে কামজ আরাধনা ছাড়া
সিদ্ধির কোনও
উপায় নেই।
দেহের আত্মাই ঈশ্বর। নিজের আত্মাকে সুখী করাই ঈশ্বরকে সুখী করা। মিলনে যে সুখ, তার তুল্য সুখ আর কিছুতে নেই ।
যোগ আর তন্ত্র হল ‘গুহ্য তত্ত্ব’। মানে, গোপন তত্ত্ব। এ’সব নিয়ে আলোচনা গোপনে করতে হয়। এর সাধনাও গোপনে করতে হয়। এ’নির্দেশ যোগ ও তন্ত্রের।
আমার কলেজে-সহপাঠী ছিল বিমল। পদবি—মনে নেই। একদিন আমাকে ও আর এক সহপাঠী তপনকে শোনালো পরিবারের এক গভীর সমস্যার কথা। পরিবার বলতে-বিমল, মা-বাবা আর এক বোন। বোন ক্লাশ টেনের ছাত্রী। বাবা তান্ত্রিক। সমস্যাটা বাবা আর বোনকে নিয়ে। বাবা ভৈরবতন্ত্র মতে বোনকে ভৈরবী করে সাধনা করেন।
তপন অবাক? বাবা-মেয়েতে তন্ত্র-সাধনা করে, এতে সমস্যা কোথায় ? ভৌমিক স্যারের কল্যাণে আমি আগেই পেকেছি। তাই ব্যাপারটা বুঝতে পেরে গা গুলিয়ে উঠলো। ইতিমধ্যে তপন সমস্যার কদর্যতা ও গভীরতা বুঝতে পেরেছে। শুনলাম, বিমল আর ওর মা বাধা দেওয়ার সমস্ত রকম চেষ্টা করে ব্যর্থ। শেষ ভরসা হিসেবে লজ্জার মাথা খেয়ে পড়শিদের সাহায্য চেয়েছেন। তারপরও পড়শিরা কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি। কেচ্ছা শুনতে ওঁদের যতটা উৎসাহ দেখা গেছে, সাহায্য চাইতেই ততটাই কুঁচকে গেছেন। বিমলের কথায় — আসলে বাবার তন্ত্রক্ষমতার ভয়ে ওঁরা কেউ বাবার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে সাহস করেন না। ওঁরা বাবাকে ঘৃণা করেন, আবার ভয়ও করেন।
তন্ত্রের নামে অজাচার চলছে প্রায় প্রকাশ্যে।
বীরভূম আমাকে টানে। এই টানের অনেকটাই বাউল গান আর বাউলদের জীবনচর্যার কারণে। বীরভূমের মাটির গন্ধ যে সাহিত্যিকের কলমে পেয়েছি, তিনি তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়। একদিন তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর জামাতা ডাঃ বিশ্বনাথ রায় ও আমি গল্প করছিলাম তারাশংকরের পাকপাড়ার বাড়িতে। কথায় কথায় এক সময় এলো আউল-বাউল ও সহজিয়াদের প্রসঙ্গ। তারাশঙ্করবাবুর কাছেই সেদিন প্রথম জানলাম, আউল-বাউল ও সহজিয়া-বৈষ্ণবরা দেহতত্ত্ববাদী। তারা মনে করে-যাহা আছে ব্রহ্মাণ্ডে, তাহা আছে দেহভাণ্ডে। পরম ব্রহ্মকে, পরম সত্যকে জানার জন্য ধর্মীয় নানা আচার-অনুষ্ঠান তাদের কাছে মূল্যহীন। দেহকে জানা, সৃষ্টি তত্ত্বকে জানার জন্যে নারী-পুরুষের মিলন হল স্বাভাবিক উপায়। মিলন থেকেই সৃষ্টি। মিলনেই আনন্দ। মিলনেই পূর্ণ জ্ঞান। আউল-বাউল-সহজিয়াদের উৎপত্তি সহজযানী বৌদ্ধ ধর্ম থেকে। সহজযানী বৌদ্ধরা বজ্রযান বৌদ্ধদের নিয়ম-কানুন-আচার-অনুষ্ঠান বর্জন করে দেহকেই সব সাধনার উৎস, লক্ষ ও মাধ্যম বলে গ্রহণ করেছিল।
বঙ্গদেশে পাল রাজাদের আমলে সহজযান বৌদ্ধদের প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়। পাল রাজাদের আমলেই অতীশ দীপঙ্কর ‘বজ্রযান সাধন’ গ্রন্থ লিখেছিলেন। তান্ত্রিক গ্রন্থের টীকাকার প্রজ্ঞাবর্মনের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন পাল রাজারা। রাজা ধর্মপাল পঞ্চাশটা বৌদ্ধ মঠ তৈরি করে দিয়েছিলেন। রাজা দেবপালও কিছু বৌদ্ধবিহার তৈরি করেছিলেন। পাল রাজারাই বৌদ্ধ ধর্মের একটা সহজ-সরল চেহারা দিতে চেয়েছিলেন। তাঁরা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী হলেও হিন্দুদের মূর্তি পুজোর দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং বুদ্ধদেবের মূর্তি পুজোর প্রচলন করেছিলেন। সহজযান ও দেহতত্ত্ববাদ বঙ্গদেশে জনপ্রিয় হওয়ার পিছনে পাল রাজাদের অবদান সবচেয়ে বেশি। দেহতত্ত্ববাদীরা শেষ পর্যন্ত তান্ত্রিক।
আউল-বাউল-সহজিয়া-বৈষ্ণবদের দেখলে আমার কিশোর মনেও কোনও ভয় বা বীভৎস রসের উদয় হত না। বরং বাউলরা সেদিন থেকে আজও আমার মন টানে সমান ভাবে। আমার মনের মতো অনেক মানুষই আজও বাউল গানের টানে, বাউল মনের টানে কেন্দুলি মেলায় ভিড় জমান।
পরে জেনেছি, রামকৃষ্ণও তন্ত্র-সাধক ছিলেন। তন্ত্র-সাধনার মাধ্যমেই
তাঁর ‘সিদ্ধি’ লাভ বা ‘ব্রহ্ম’ লাভ। তন্ত্র-সাধকের ভৈরবী চাই।
তন্ত্র-সাধিকার চাই তান্ত্রিক। তন্ত্রে দীক্ষাগুরুর কোনও
জাত-বিচার নেই, নারী-পুরুষ ভেদ নেই।
রামকৃষ্ণের দীক্ষাগুরুও যোগ সঙ্গী
ভৈরবী ছিলেন যোগেশ্বরী।
এ’সবই লেখা আছে রামকৃষ্ণ মিশনের নিজস্ব প্রকাশন বিভাগ ‘শ্রীরামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠ’ থেকে প্রকাশিত স্বামী প্রজ্ঞানন্দর লেখা ‘তন্ত্রে তত্ত্ব ও সাধনা’ বইটিতে।
যোগ ও তন্ত্রের একই অঙ্গে এত রূপ! যতই জেনেছি ও দেখেছি ততই অবাক হয়েছি। হরপ্পা যুগ, বৈদিক যুগ ঘুরে আধুনিক যুগ পর্যন্ত তন্ত্রের নানা রূপ ছিল ও বহাল তবিয়তে আছে। এখনও যোগ ও তন্ত্রের বই-পত্তর প্রচুর বিক্রি হয়। যাঁরা কেনন, তাঁদের প্রায় সকলেই ওসব বইয়ের ধোঁয়াশায় ভরা কথা পড়তে পড়তে, হোঁচোট খেতে খেতে বুকসেল্ফে সাজিয়ে রেখে বাঁচেন। যাদের কিছু করে খাওয়ার ক্ষমতা নেই, তাঁরা তান্ত্রিক-জ্যোতিষী সেজে বসেন। বিজ্ঞাপন দেন। মাস গেলে চার লাখ থেকে চল্লিশ লাখ যা খুশি রোজগার করেন লাইন দেওয়া ‘শিক্ষিতদের’ পকেট কেটে।
মানব সমাজের ক্রমবিবর্তনের ইতিহাস শেষ পর্যন্ত এগিয়ে যাওয়ার ই ইতিহাস। সাময়িকভাবে বার বার পিছু হাঁটার কুচেষ্টাকে নিষ্ফল করে দিয়ে সমাজ শেষ পর্যন্ত এগিয়েই চলেছে—এটাই ইতিহাস। যোগ ও তন্ত্রের অর্বাচিন ও বিকৃত ধারণা একদিন মানুষ বর্জন করবেই। এটাই মানব সমাজের ক্রমবিবর্তনের পরিণতি।
প্রথম পর্বঃ মনের নিয়ন্ত্রণ
অধ্যায়ঃ এক
♦ বুদ্ধি, স্মৃতি, প্রতিভা নিয়ে বিভ্রান্তি বেচে খাচ্ছে অনেকে
অধ্যায়ঃ দুই
♦ প্রচুর পড়েন মানে-ই মস্তিষ্কচর্চা করেন?
অধ্যায়ঃ তিন
♦ স্মৃতি-শক্তি ও প্রতিভা এক নয়
অধ্যায়ঃ চার
♦ জ্ঞান (wisdom) ও শিক্ষা (education) এক নয়
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦ মস্তিষ্ক ও তার কিছু বৈশিষ্ট্য
অধ্যায়ঃ ছয়
♦ পাভলভ-তত্ত্বে মস্তিষ্কের ‘ছক’ বা type
অধ্যায়ঃ সাত
অধ্যায়ঃ আট
♦ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কত কিছু পাল্টে যায়
অধ্যায়ঃ নয়
♦ অলজাইমারস সৃষ্টিশীল মেধায় ভয়ঙ্কর অসুখ
অধ্যায়ঃ দশ
অধ্যায়ঃ এগারো
♦ জিন বা বংশগতি-ই ঠিক করে মেধা-বুদ্ধি?
অধ্যায়ঃ বারো
♦ বংশগতি গবেষণা ও স্নায়ুবিজ্ঞানের অগ্রগতি
অধ্যায়ঃ তেরো
♦ মানবগুণ বিকাশে পরিবেশের প্রভাব
অধ্যায়ঃ চোদ্দ
অধ্যায়ঃ পনেরো
♦ মগজধোলাই-এর প্রয়োজনীয়তা বেড়েই চলেছে
দ্বিতীয় পর্বঃ ধ্যাণ-যোগ-সমাধি মেডিটেশন
অধ্যায়ঃ এক
অধ্যায়ঃ দুই
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦ ‘রজনীশ’ এক শিক্ষিত যোগী, বিতর্কিত নাম
অধ্যায়ঃ ছয়
♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !
অধ্যায়ঃ সাত
♦ শ্রীমাতাজী নির্মলা দেবীর সহজযোগ
অধ্যায়ঃ আট
♦ রিল্যাক্সেশন, মেডিটেশন নিয়ে বাংলাদেশের যোগী মহাজাতক
অধ্যায়ঃ নয়
♦ ‘যোগ’ মস্তিষ্ক-চর্চা বিরোধী এক স্থবীর তত্ত্ব
অধ্যায়ঃ দশ
♦ ‘মেডিটেশন’, ‘রিলাক্সেশন’, বা ‘স্বসম্মোহন’
অধ্যায়ঃ এগারো
“মনের নিয়ন্ত্রণ যোগ-মেডিটেশন” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ