১৯৮৫-র মে-জুনে আর এক ভারতীয় যোগী পত্র-পত্রিকায় যথেষ্ট আলোড়ন তুললেন। শিববাল যোগী। শিববাল যোগীর দাবী, তিনি যোগের দ্বারা প্রকৃতিকে (বৃষ্টিপাত, বন্যা, ভূমিকম্প ইতাদি ঘটনা) নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। তারই সবচেয়ে বড় প্রমাণ তিনি রাখলেন ৩০ মে বাঙ্গালরে। যোগের দ্বারা বৃষ্টি নামালেন। ঘটনাটার দিকে এবার একটু ফিরে তাকানো যাক।
বাঙ্গালোর শহরে জল সরবরাহ করা হয় শহরের কাছাকাছি পিথাগান্ডানাহালি জলাশয় থেকে। বৃষ্টিপাতের অভাবে জলাশয়ের জল খুবই কমে গিয়েছিল। বাঙ্গালোর ওয়াটার সাপ্লাই এ্যান্ড সিউয়্যারজ বোর্ড (Bangalore Water Supply and Swearage Board) কর্তৃপক্ষের মতে বৃষ্টি না হলে সঞ্চিত জলে আর মাত্র ১৫ দিনের মতো জল সরবরাহ সম্ভব। শেষ পর্যন্ত মুশকিল আসানের জন্য বোর্ড কর্তৃপক্ষ শিববাল যোগীকে অলৌকিক ক্ষমতাবলে বৃষ্টি আনার জন্য লিখিতভাবে আমন্ত্রণ জানান।
২৮ মে বাঙ্গালোরের এক দৈনিক পত্রে প্রথম খবরটি প্রকাশিত হয়। অতএব ৩০ মে জলাশয়ের কাছে অনুষ্ঠিত শিববাল যোগীর বৃষ্টি আনার ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উৎসুক দর্শকের অভাব হয়নি। অনুষ্ঠানে শিববাল যোগী এলেন শুভ্র ধুতি পরে, বিদেশি গাড়িতে সওয়ার হয়ে। যোগী ধ্যানে বসলেন, সঙ্গে-সঙ্গে শুরু হল ভক্ত-শিষ্যদের ভজন গান ও নাচ। কয়েকজন শিষ্য জ্বলন্ত কর্পূর জিভে রেখে আরতি করেন।
শিষ্যদের এই অলৌকিক কাজকর্ম দেখে দর্শকরা তুমুল জয়ধ্বনি দিলেন। ঘণ্টা দিতেন ধ্যানের পর দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে যোগীর ধ্যান ভাঙ্গল। এরপর যোগী ভক্তদের প্রণাম নিলেন, বিনিময়ে দিলেন বিভূতি। যেসব বিশিষ্ট ভক্তেরা পরম বিশ্বাসে ভক্তিভরে যোগীর পদধূলি নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ছিলেন অন্ধ্রের প্রাক্তন মন্ত্রী ও লোকসভার সদস্যা শ্রীমতী লক্ষ্মীকানথাম্মা, আকাশবাণীর স্টেশন ডিরেক্টর প্রমুখ অনেকেই।
শিববাল যোগী ঘোষণা করেছিলেন, ‘এক মাসের মধ্যে জলাশয়টি ভর্তি হয়ে যাবে।‘ খবরে আরও প্রকাশ, সে-দিনই বৃষ্টি হয়েছিল। বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ৫ মিলিমিটার।
পরবর্তীকালে অনেক পত্র-পত্রিকাতেই সংবাদটি যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে পরিবেশিত হয়েছে।
এবার একজন যুক্তিবাদী হিসেবে আমি সেই সঙ্গে আরও কয়েকটা খবর আপনাদের পরিবেশন করছি।
২৮ মে বাঙ্গালোরের যে দৈনিক সংবাদ পত্রটিতে শিববাল যোগী দু’দিন অলৌকিক ক্ষমতার দ্বারা বৃষ্টি নামাবেন বলে খবর সরবরাহ করেছিলেন, সেই পত্রিকাটির ‘আবহাওয়া বার্তায়’ বলা হয়েছিল, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু কয়েক দিনের মধ্যেই কর্ণাটকে এসে পৌঁছবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আবহাওয়া বার্তাতেই আরও বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পশিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে কোচিনে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। দীর্ঘ তাপদাহের পর ২৭ তারিখে বাঙ্গালোরে কিছু বৃষ্টি হয়েছে, যদিও এই বৃষ্টিপাত ঠিক বর্ষার আগমনবার্তা নয়। অর্থাৎ এই বৃষ্টি মৌসুমী বায়ুর ফলে হয়নি।
বাঙ্গালোর আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে যে সময়ে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিপাত অবশ্যম্ভাবী, সেই সময়টিতে বৃষ্টি নামাকে কি করে শিববাল যোগীর অলৌকিক কাজ হয়। আমি নিজে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় জিভে জ্বলন্ত কর্পূর রেখে দেখিয়েছি। কর্পূরের আগুনের শিখা দাউ দাউ করে জ্বলে বলে সাধারণ মানুষের চোখে ঘটনাটা রহস্যময় ও অলৌকিক বলে মনে হয়। কর্পূর একটি Volatole বা উদ্বায়ী বস্তু। অতিমাত্রায় জ্বলনশীল। ফলে অতি দ্রুত জ্বলে শেষ হয়ে যায়। আগুনের তাপ জিভে ততটা অনুভূত হয় না। জিভ ভাল করে লালা দিয়ে ভিজিয়ে নিলে কয়েক মুহূর্তের জন্য জ্বলন্ত কর্পূরের তাপ আদৌ অসহ্য নয়। এই খেলা দেখাতে যে বিষয়ে খুবই সচেতন থাকা প্রয়োজন তা হল, কর্পূরের আগুন যেন গলায় না প্রবেশ করে। প্রবেশ করলে মৃত্যুও ঘটতে পারে। খেলাটা কঠিন হতে পারে, কিন্তু অসম্ভব বা অলৌকিক নয়। আমরা বিভিন্ন অলৌকিক বিরোধী অনুষ্ঠানে জিভে কর্পূর জ্বেলে দেখাই।
“অলৌকিক নয়,লৌকিক- ১ম খন্ড ” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ
১. অধ্যায়ঃ এক
১.৩ যুক্তিবাদী, মুক্তচিন্তার সেইসব মানুষ
২. অধ্যায়ঃ দুই
২.১ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিজ্ঞান
২.২ শাসক শ্রেণির স্বার্থে কুসংস্কার পুষ্ট হচ্ছে
৩. অধ্যায়ঃ তিন
৩.২ বিখ্যাত মহারাজের শূন্যে ভাসা
৩.৩ ব্ল্যাক আর্ট ছাড়া সাধিকার শূন্যে ভাসা
৩.৪ লাঠিতে হাতকে বিশ্রাম দিয়ে শূন্যে ভাসা
৩.৫ বেদে-বেদেনীদের শূন্যে ভাসা
৩.৭ সাঁই বাবাঃ সাঁইবাবার অলৌকিক ঘড়ি-রহস্য
৩.১১ শূন্য থেকে হার আনলেন ও হার মানলেন সাঁই
৩.১২ সাঁইবাবার চ্যালেঞ্জঃ পেটে হবে মোহর!
৩.১৬ যে সাধকরা একই সময়ে একাধিক স্থানে হাজির ছিলেন
৩.১৭ অতিন্দ্রীয় ক্ষমতার তান্ত্রিক ও সন্ন্যাসীরা
৩.২০ অবতারদের নিজদেহে রোগ গ্রহণ
৩.২৬ বকনা গরুর অলৌকিক দুধ ও মেহবেব আলি
৩.২৭ বাবা তারক ভোলার মন্দির ও শ্রীশ্রীবাসুদেব
৩.২৮ যোগে বৃষ্টি আনলেন শিববাল যোগী
৩.২৯ চন্দননগরে সাধুর মৃতকে প্রাণ-দান
৩.৩০ ভগবান শ্রীসদানন্দ দেবঠাকুর
৪. অধ্যায়ঃ চার
৫. অধ্যায় পাঁচ
৬. অধ্যায়ঃ ছয়
৬.১ হিস্টিরিয়া, গণ-হিস্টিরিয়া, আত্ম-সম্মোহন, নির্দেশ
৭. অধ্যায়ঃ সাত
৭.২ সম্মোহনে আত্মা এলো ‘সানন্দা’য়
৭.৩ সম্মোহন নিয়ে নানা ভুল ধারণা
৮. অধ্যায়ঃ আট
৮.১ Illusion (ভ্রান্ত অনুভূতি)
৮.২ Hallucination (অলীক বিশ্বাস)
৮.৩ Delusion মোহ, অন্ধ ভ্রান্ত ধারণা
৯. অধ্যায়ঃ নয়
৯.২ ধর্মের নামে লোক ঠকাবার উপদেশ কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে
৯.৩ সোমনাথ মন্দিরের অলৌকিক রহস্য
৯.৪ প্রাচীন মিশরের ধর্মস্থান রহস্য
৯.৫ কলকাতায় জীবন্ত শীতলাদেবী ও মা দুর্গা
৯.৭ খেজুরতলার মাটি সারায় যত রোগ
৯.১৩ বার্মুডা ট্র্যাঙ্গেল রহস্য
১০. অধ্যায়ঃ দশ
১১. অধ্যায়ঃ এগারো
১১.২ ডুবোজাহাজে টেলিপ্যাথির পরীক্ষা
১১.৩ টেলিপ্যাথির সাহায্যে নোটের নম্বর বলা
১১.৪ টেলিফোনে টেলিপ্যাথিঃ আয়োজক লন্ডনের ‘সানডে মিরর’
১১.৭ টেলিফোন টেলিপ্যাথির আর এক আকর্ষণীয় ঘটনা
১১.৮ এমিল উদ্যা ও রবেয়ার উদ্যা’র টেলিপ্যাথি
১১.৯ অতীন্দ্রিয় ইউরি গেলারকে নিয়ে ‘নেচার’ (Nature)-এর রিপোর্ট
১১.১০ আই আই টি-তে টেলিপ্যাথি দেখালেন দীপক রাও
১১.১১ তবু প্রমাণ করা যায় তেলিপ্যাথি আছে
১২. অধ্যায়ঃ বার
১২.২ নায়াগ্রা জলপ্রপাত ভেঙ্গে পড়ার ভবিষ্যদ্বাণী
১৩. অধ্যায়ঃ তের
১৩.২ সাধু-সন্ন্যাসীদের অতীন্দ্রিয় দৃষ্টি
১৩.৩ ইউরি গেলারের অতীন্দ্রিয় দৃষ্টি
১৪. অধ্যায়ঃ চোদ্দ
১৪.২ মানসিক শক্তিতে রেলগাড়ি থামানো
১৪.৪ স্টীমার বন্ধ করেছিলেন পি.সি. সরকার
১৪.৬ লিফট ও কেবল-কার দাঁড় করিয়েছিলেন ইউরি গেলার
১৪.৭ মানসিক শক্তি দিয়ে গেলারের চামচ বাঁকানো
১৪.৯ ‘নিউ সায়েন্টিস্ট’ –এর পরীক্ষায় ইউরি এলেন না
১৫. অধ্যায়ঃ পনের
১৬. অধ্যায়ঃ ষোল
১৬.১ অধ্যায়ঃ ভাববাদ বনাম যুক্তিবাদ বা বস্তুবাদ
১৬.২ মুক্ত চিন্তার বিরোধী ‘মনু সংহিতা’
১৬.৩ আধ্যাত্মবাদ ও যুক্তিবাদের চোখের আত্মা
১৬.৪ আত্মা, পরলোক ও জন্মান্তর বিষয়ে স্বামী অভেদানন্দ
১৬.৫ স্বামী বিবেকানন্দের চোখে আত্মা
১৬.৬ আত্মা নিয়ে আরও কিছু বিশিষ্ট ভাববাদীর মত
১৬.৭ আত্মা প্রসঙ্গে চার্বাক বা লোকায়ত দর্শন
১৭. অধ্যায়ঃ সতের
১৭.১ জাতিস্মররা হয় মানসিক রোগী, নয় প্রতারক
১৮. অধ্যায়ঃ আঠারো
১৮.১ জাতিস্মর তদন্ত-১: দোলনচাঁপা
১৮.২ জাতিস্মর তদন্ত ২: জ্ঞানতিলক
১৮.৩ জাতিস্মর তদন্ত ৩: ফ্রান্সিস পুনর্জন্ম
১৮.৪ জাতিস্মর তদন্ত ৪: সুনীল দত্ত সাক্সেনা
১৮.৬ জাতিস্মর তদন্ত ৬: কলকাতায় জাতিস্মর
১৯. অধ্যায়ঃ ঊনিশ
১৯.২ উনিশ শতকের দুই সেরা মিডিয়া ও দুই জাদুকর
১৯.৩ প্ল্যানচেটের ওপর আঘাত হেনেছিল যে বই
১৯.৪ স্বামী অভেদানন্দ ও প্রেত-বৈঠক
১৯.৫ বন্ধনমুক্তির খেলায় ভারতীয় জাদুকর
১৯.৬ রবীন্দ্রনাথের প্ল্যানচেট-চর্চা
২০. অধ্যায়ঃ বিশ