যোগের সংজ্ঞা

‘যোগ কাকে বলে? এই নিয়ে হিন্দু উপাসনা ধর্মে নানা মুণির নানা মত। অর্থাৎ ‘যোগ’ নিয়ে সর্বযোগী-গ্রাহ্য কোনও মত হিন্দু ধর্মে নেই।

পতঞ্জলির মতে, ‘যোগ’ কথার অর্থ বৃত্তিনিরোধ। সহজাত প্রবৃত্তির নিরোধ। মহর্ষি ব্যাস–এর কথায়, ‘যোগ’ শব্দের অর্থ সমাধি, ধ্যান। কর্মময় জীবন থেকে কর্মশূন্য হতে পারা, হলো ধ্যান। সমস্ত কাজ থেকে ছুটি নিয়ে পরিপূর্ণ বিশ্রাম নিতে পারাটাই হচ্ছে ধ্যান, অর্থাৎ যোগ। গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, সফলতা-বিফলতা, দুঃখ-আনন্দ, অনুকূল-প্রতিকূল, জয়-পরাজয় ইত্যাদি প্রতিটি পরিস্থিতিতেই চিত্তকে শান্ত রাখাই যোগ কুলকুন্ডলিনী-তে বিশ্বাসীরা মনে করেন কুলকুণ্ডলিনী জাগ্রত করে আত্মার সঙ্গে পরামাত্মার মিলন-ই যোগ। এই তত্ত্বে তান্ত্রিকরা বিশ্বাসী। জৈন মতে মোক্ষ বা সিদ্ধি-ই যোগ।

এই পাঁচটি সংজ্ঞার কোটি ঠিক, আর কোন্ চারটি বে-ঠিক, কে পথ দেখাবেন? বিভ্রান্ত যোগীরা? ঝোলে-ঝালে-অম্বলে থাকা যোগীরা?

কোন্ যুক্তিতে একটি সংজ্ঞা গ্রহণ করা হবে এবং বাকি চারটিকে কোন্ যুক্তিতে বাতিল করা হবে?

 

যোগের নানা বিভাজন

যোগ দর্শনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে পতঞ্জলি নামের এক জাদু পুরোহিত। তিনি ১৯৪টি সূত্রে যোগধারাকে সংগ্রহ করে তুলে ধরেছিলেন । পতঞ্জলি তাঁর রচনার বহু পরিভাষিক শব্দার্থ বৌদ্ধতন্ত্র থেকে নিয়েছিলেন। যোগ দর্শনের সঙ্গে সাংখ্য দর্শনের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। যোগ দর্শনকে ‘সাংখ্য-পরিশিষ্ট’ বলা হয়। যোগ দর্শনের স্রষ্টা ও টীকাকাররা মনে করেন, যোগ দর্শনই সাংখ্য দর্শনকে পরিপূর্ণতা দিয়েছে।

যোগীশ্বর যাজ্ঞবাল্ক্য যোগের আটটি অঙ্গের কথা বলেছেন, যা ‘যোগাঙ্গ’ নামে খ্যাত। এগুলো হল (১) ‘যম’ অর্থাৎ কতকগুলো নিষেধ, (২) ‘নিয়ম’ অর্থাৎ পালনীয় বিধান, (৩) ‘আসন’ অর্থাৎ কিছু দৈহিক ব্যায়াম পদ্ধতি, (৪) ‘প্রাণায়াম’ অর্থাৎ শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি, (৫) ‘প্রত্যাহার’ বিষয় চিন্তা থেকে ইন্দ্রিয়কে তুলে নেওয়া, (৬) ‘ধারণা’ অর্থে একাগ্রতা, (৭) ‘ধ্যান’ বা কোনও একটি বিষয়ে চিন্তাকে গভীরভাবে স্থাপন করা, (৮) ‘সমাধি’ বাহ্যজ্ঞানহীন ধ্যান।

যোগ বিশ্বাস করে, যোগাঙ্গের আসন, প্রাণায়াম, ধ্যান, সমাধি ইত্যাদি দ্বারা বহু অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী হওয়া যায়। আর অষ্টাঙ্গ সিদ্ধ হলে তো কথাই নেই । যোগ সিদ্ধ হলে কী কী হয় বলার চেয়ে বলা ভালো, কী না হয় ?

‘খেচরী মুদ্রা’ একটি যোগাসন পদ্ধতি। বলা হয়েছে খেচরী

সাধনের দ্বারা ব্যাধি, জরা, নিদ্রা, ক্ষুধা, তৃষ্ণাকে জয়

করা যায়। মৃত্যুকে জয় করে অমর হওয়া যায়।

‘যায়’ তো দৃষ্টান্ত কোথায় ?

না, কোথাও নেই ।

‘খেচরী মুদ্রা’ শেখানো হয়েছে যোগের আকর গ্রন্থগুলোতে। জিভকে ভিতর দিক দিয়ে ঠেলে দুই ভ্রু’র ভিতরে দিকে দু’দণ্ড রাখতে পারলেই সিদ্ধি লাভ। না, সঙ্গে কোনও মন্ত্র মনে মনেও আওড়াতে হবে না।

মহামুদ্রা সাধনে যক্ষা ও কুষ্ঠ রোগের বিনাশ হয়। শীতল কুম্ভক আসন করলে প্লীহা ও উদররোগ, জ্বর, পিত্তবিকার বিনাশ হয়। এই আসনের বাড়তি গুণ — ক্ষুধা, তৃষ্ণা থাকে না। বিষাক্ত সাপ শরীরে বিষ ঢাললেও তা কাজ করে না। কোনও যোগী রাজি হবেন নাকি এমন একটা পরীক্ষা দিতে? বাবা রামদেব কী বলেন? আসলে এইসব যোগীরা যা বলেন, তাতে নিজেরাই বিশ্বাস করেন না। তাই পরীক্ষা দেবার মত একজন যোগীও এগিয়ে আসবেন না, জানি। শীতল কুম্ভক অবশ্য খুবই সোজা আসন। জিভকে দু’ঠোটের মাঝে রেখে ঠোট ও জিভ পাখির ঠোটের মত করতে হবে। এবার জিভের ফাঁক দিয়ে বায়ু টানতে হবে। বায়ু ছাড়তে হবে নাক দিয়ে ধীরে ধীরে।

কামদেব তুল্য রূপলাবণ্য লাভের উপায়ও আছে যোগের আকরগ্রন্থে। আসনটার নাম ‘সীৎকারী কুম্ভক’। সব কিছুই শীতল কুম্ভকের মতো। শুধু বায়ু টানার সময় ‘সীৎ’ ধরনের শব্দ করতে হবে। সীৎকারী কুম্ভকের বাড়তি গুণ—আলস্য, ক্ষুধা, তৃষ্ণা থাকে না। ভারতের কিছু যোগী যে ভাবে যোগ শেখাতে উঠে পড়ে লেগেছেন তাতে ভারতের খাদ্য ও পানীয় সমস্যা মিটলো বলে।

অষ্টাঙ্গ সিদ্ধ হলে ত্রিলোক ভ্রমণ করা যায়। অর্থাৎ

স্বর্গ-মর্ত-পাতাল, বাবা রামদেব যে ভাবে অষ্টাঙ্গ

যোগ গাদা-গুচ্ছের টিভি চ্যানেলে শেখাচ্ছেন,

তাতে প্লেন কোম্পানীগুলো

লালবাতি জ্বাললো বলে।

মহাদেবের নির্দেশিত দশটি মুদ্রা আয়ত্ত করলে পারলে ইচ্ছে মতো শরীরকে পরমাণুর মতো সূক্ষ্ম আকারে নিয়ে যাওয়া যায়। আকাশে ভ্রমণ করা যায়। ইচ্ছে মতো যে কোনও ক্ষমতা লাভ করা যায়। উ……. ভাবা যায় না !

শিব বা আদিনাথ অর্থাৎ মহাদেব চুরাশি রকমের আসনের কথা বলেছেন। তার মধ্যে চারটি আসন ‘সারস্বরূপ’ অর্থাৎ প্রধান। আসনগুলো হল—সিদ্ধাসন, পদ্মাসন, সিংহাসন ও ভদ্রাসন।

মুদ্রার মধ্যে খেচরী ও শব্দ উৎপাদনের মধ্যে ‘নাদ’ বা নাভী থেকে তুলে আনা শব্দকে শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে।

নাসনং সিদ্ধসদৃশ্যং কুম্ভ কেবলোপমঃ।

না খেচরীসমা মুদ্রা না নাদসদৃশো তনয়ঃ ৷৷ ৪০

নাদধ্বনি নিয়ে একটি প্রচলিত ধারণা শিকড় গেড়ে রয়েছে বিশেষ করে নায়ক, অভিনেতা ও হিন্দু উপাসনা-ধর্মের ‘পণ্ডিত’দের মধ্যে। নাদধ্বনি অর্থাৎ নাভি থেকে ধ্বনিকে তুলে আনতে পারলে তা গভীর ও লা-জবাব হয়। ‘ওঁ’ ধ্বনিকে নাভি থেকে তুলে এনে উচ্চারণ করলে ব্রহ্ম লাভ হয়। শব্দ থেকে ব্রহ্ম লাভ হয় বলেই শব্দ পরম ব্রহ্ম’ বলা হয়।

নাদধ্বনি নিয়ে অনেক ভাল ভাল কথা চালু রয়েছে, সঙ্গে রয়েছে

গোড়ার গলদ। আসলে নাভি বা পেটে যে বায়ু থাকে, তাকে

কখনই স্বর-নালিতে আনা যায় না। পেটের বায়ু

পায়ু দিয়েই বের হতে পারে, যাকে

আমরা বলি ‘পাদ’। আর বের

হতে পারে উদ্‌গার হয়ে ।

এটাই শরীর বিজ্ঞানের কথা। আমরা কথা বলার সময় স্বরযন্ত্র দিয়ে যে বায়ু বের হয়, তা আসে ফুসফুস থেকে। উদ্‌গার উঠে আসে কণ্ঠনালি দিয়ে। স্বরনালি ও কণ্ঠনালি এক নয়। নাদধ্বনির মিথ্যে কতদিন যে সত্যিকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে আমাদের মাথায় চেপে থাকবে কে জানে? আমরা কবে যে ‘সবজান্তার ভণ্ডামী ছেড়ে সত্যি জানতে আগ্রহী হবো, কে জানে?

 

শুক্র বা বীর্য সম্পর্কে যোগ

“চিত্তায়ত্তং নৃণাঃ শুক্র শুক্রায়ত্তং চ জীবিতম্ ।

তস্মাচ্ছুক্রং মনশ্চৈব রক্ষণীয়ং প্রযত্নতঃ।।”

অর্থাৎ, “মানুষের জীবন শুক্রের অধীন। শুক্র ক্ষয় হলেই জীবন

ক্ষয়। অতএব সাধক যত্ন সহকারে শুক্র রক্ষা করবে।”

শুক্র সম্পর্কে এমন যোগ-শিক্ষা বিজ্ঞান

বিরোধী এবং অবশ্যই অশিক্ষা।

এইসব ভুল শিক্ষা থেকে বহু পুরুষ বিয়ের পর মিলনের সময় অনুভব করে সে পুরুষত্বহীন। দুটি জীবন অশান্তিময় হয়ে ওঠে প্রথম রাত থেকে-ই। আসলে স্বামীজীদের ব্রহ্মচর্য পালন নিয়ে বই-পত্তর পরে জেনেছে—বীর্যক্ষয়ে শরীর-স্বাস্থ্য-শক্তি-স্মৃতি নষ্ট হয়। বীর্য সঞ্চয় ও ব্রহ্মচর্য পালনই মনুষ্য জীবনের আদর্শ ও লক্ষ হওয়া উচিত।

এইসব হিজিবিজি বিজ্ঞান-বিরোধী বইপত্তর পড়ার ফলে-ই অবচেতন মন নববিবাহিত ছেলেটির বীর্যপাতের পক্ষে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে সাময়িকভাবে পুরুষত্বহীন হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক যৌন প্রবৃত্তি স্ফুরিত হতে দেয়নি যোগের কুশিক্ষা ।

 

যোগ ও কুলকুণ্ডলিনী

‘যোগ’ হল তন্ত্র সাধনার এক রহস্যময় পথ। যোগী পতঞ্জলি যোগের প্রণেতা। ঋষি বেদব্যাস এই যোগের ভাষ্যকার। এইসব যোগীরা অনাদিনাথ বা শিবকেই যোগ বিদ্যায় উপদেশ দানকারী বলে উল্লেখ করেছেন। শিবই চুরাশি রকমের আসনের শিক্ষা দিয়েছিলেন। শ্রীমদ্ভাগবতের একাদশ স্কন্ধে শ্রীভগবান যোগসাধনের গুণগান গেয়েছেন। গীতায় যোগ মাহাত্ম আছে। অতএব, হিন্দু-‘উপাসনা’ ধর্মে বিশ্বাসীদের কাছে প্রশ্নাতীত পরম সত্য হল ‘যোগ’।

মানবাত্মার সঙ্গে পরমাত্মার সংযোগের উপায়ের নাম যোগ। এইজন্য কুলকুণ্ডলিনী জাগ্রত করার কথা বলা হয়েছে যোগে।

যোগ মতে ‘কুণ্ডলিনী’ শক্তিকে জাগ্রত করতে যোগীকে ‘ষটচক্র’ ভেদ করতে হয়। যোগ বা তন্ত্রশাস্ত্র বিশ্বাস করে, প্রতিটি মানব দেহে ছটি চক্র আছে। চক্ৰ ছটির অবস্থান গুহ্যে, লিঙ্গমূলে, নাভিতে, হৃদয়ে, কণ্ঠে ও ভ্রদ্বয়ের মাঝখানে । ছ’টি চক্রের নাম গুহ্যে মূলাধারচক্র থেকে পর্যায়ক্রমে স্বাধিষ্ঠান, মণিপুর, অনাহত, বিশুদ্ধ ও জ্ঞানচক্র। মস্তিষ্কে আছে সহস্রদল পদ্ম। যোগের বিশেষ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মূলাধারচক্র কে একের পর এক ছটি চক্র ভেদ করে কুণ্ডলিনী শক্তিকে মস্তিষ্কে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মাথার খুলির নীচে রয়েছে সহস্রদল পদ্ম কুঁড়ি। কুঁড়ির ওপর ফণা মেলে থাকে সাপ। যার লেজ রয়েছে গুহ্যে। যোগ প্রক্রিয়ার সাহায্যে, বা বলতে পারি তন্ত্র প্রক্রিয়ার সাহায্যে ফণাটি সরিয়ে দিতে সক্ষম হলেই মস্তিষ্কে হাজারটা রঙিন পাপড়ি মেলে ফুটে উঠবে পদ্ম। এই যে সাপ বা মহাশঙ্খিনীশক্তি, ইনিই মহামায়া, মহাশক্তি। পদ্মের কর্ণিকা বা বীজকোষে রয়েছেন ব্রহ্মস্বরূপ শিব।

ষট্চক্র ভেদ করে সাপের ফণা সরিয়ে মস্তিষ্কের সহস্রদল পদ্মকে ফুটিয়ে তুলতে পারলেই নাকি ঘটবে ব্রহ্মদর্শন, মিলবে চির আনন্দ, মিলবে মোক্ষ।

প্রাক্-আর্য বা প্রাক্-বৈদিক যুগে হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো ছিল, তা বোঝা যায় ৷ বৈদিক যুগে প্রথম দিকে যোগের প্রতি বিরূপতা থাকলেও পরবর্তীকালে যোগসাধনা বা যোগদর্শন বৈদিক শাস্ত্রে গৃহীত হয়। পতঞ্জলির ‘যোগসূত্র’ ষড়দর্শনের অন্যতম দর্শন হিসেবে গণ্য হয়। পতঞ্জলি তাঁর সূত্রে যোগ শক্তির

মহিমা কীর্তন করেছেন। পতঞ্জলির মতে, যোগ সিদ্ধিতে বা যোগ বিভূতিতে নাকি পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর ভাষা-জ্ঞান লাভ হয়, নিজেকে অদৃশ্য করা যায়, খিদে ও তৃষ্ণা নিবারণ করা, আকাশে ভ্রমণ করা যায়, অন্যের দেহে প্রবিষ্ট হওয়া যায়, ইষ্ট-দেবতার সঙ্গে মিলিত হওয়া যায়। পতঞ্জলির যোগে বৌদ্ধতন্ত্রের যে প্রভাব দেখা যায়, সে কথা আগেই বলেছি। হিন্দু তন্ত্রশাস্ত্রই হোক, হিন্দু যোগশাস্ত্রই হোক অথবা বৌদ্ধ তন্ত্রশাস্ত্রই হোক—এরা প্রত্যেকেই যোগ সাধনায় মানবদেহের উপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব আরোপ করেছে।

 

‘যা আছে দেহভাণ্ডে, তাই আছে ব্ৰহ্মাণ্ডে’

হিন্দু তন্ত্রশাস্ত্র, বৌদ্ধ তন্ত্রশাস্ত্র ও যোগশস্ত্র মনে করতো যে, ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোম নিয়ে ব্রহ্মাণ্ড। এবং তাই নিয়েই এই দেহভাণ্ড। দেহরহস্যের মধ্যেই রয়েছে ব্রহ্মাণ্ড রহস্যের মূল সূত্র। ব্রহ্মাণ্ডের তাবৎ সৃষ্টির মধ্যে খুঁজে পেলো পুরুষ ও প্রকৃতির মিলনকে। পুরুষ ও নারীর মিলনের মধ্যে ওঁরা পেলেন সৃষ্টি রহস্যের মূল সূত্র। ফলে ‘দেহ’ ও ‘মৈথুন’ তন্ত্র-শাস্ত্রে বিশেষ গুরুত্ব পেলো ।

একটা সময় মানুষের কাছে মানুষের দেহ ছিল এক পরম-বিস্ময়। এক অজানা বিস্ময়। শুরুতে বৈদিক যুগের মানুষ শব দেহকে অপবিত্র, অস্পৃশ্য মনে করতো। শব কবর দিত। পরবর্তী কালে শব দাহ করার পর বা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হতো। শবদেহের সংস্পর্শে আসা মানব শরীরকে পবিত্র ও শুদ্ধ করার নানা পদ্ধতি, প্রকরণ, সংস্কার ছিল। এখনও যার তলানি হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসীদের মধ্যে বহমান। সে সময় শবদেহ দাহ করত অস্পৃশ্য শ্রেণির মানুষ। শব ব্যবচ্ছেদ করে মানব শরীরের গঠনতন্ত্র বা anatomy জানার কথা মানুষ কল্পনাতেই আনতে পারত না। মানবদেহের ‘অ্যানাটমি’ বর্ণনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন ঋষি ও যোগীরা। তাঁরা নাকি যোগবলে মানব শরীরের ভিতরে ঢুকে ‘অ্যানাটমি’ দেখে এসে, শরীরে ছটি চক্রের অবস্থান ও সেই চক্রগুলির মধ্যে নানা দেব-দেবীদের অবস্থান, মাথার খুলির নীচে হাজার পাপড়ির পদ্মফুল এবং একটা সাপের অবস্থান বর্ণনা করেছিলেন। কেউ এই ‘অ্যানাটমি’ বর্ণনার মধ্যে রূপক আবিষ্কারের চেষ্টা করলে তাকে আমরা অবশ্যই যোগের অ-আ-ক-খ না জানা মূর্খ বলে চিহ্নিত করে করুণা প্রদর্শন করতে পারি মাত্র। কারণ তন্ত্রশাস্ত্রের যে কোনও বই গভীরভাবে পড়লেই দেখা যাবে মানব শরীরে অ্যানাটমি বলে তাঁরা যা বলে গেছেন সেগুলো সত্যি বলেই বিশ্বাস করতেন এর মধ্যে রূপক সৃষ্টির কোনও চেষ্টা আদৌ ছিল না। তাঁদের এই বিশ্বাস এসেছিল অসম্পূর্ণ জ্ঞান বা অজ্ঞতা থেকে। তাঁরা হয়তো বা কোনওভাবে মানুষের মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষ বা ঘিলু দেখেছিলুম এবং ঘিলু দেখে হাজার পাপড়ির পদ্মের ‘অস্তিত্ব’ খুঁজে পেয়েছিলেন। তাঁরা হয়তো মৃত মানুষের অস্ত্র নিয়ে কুকুর বা শিয়ালের টানাটানি দেখেছিলেন। অন্ত্রের সঙ্গে সাপের চেহারাগত মিল থাকায় মানব দেহে সাপের অবস্থান আছে—এমনটাই বিশ্বাস করেছিলেন।

‘যোগ’ দর্শনটাই দাঁড়িয়ে আছে মানবদেহের সম্পূর্ণ ভুল গঠনতন্ত্র বা

‘অ্যানাটামি’ জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে। নারী-পুরুষের দীর্ঘ দেহ

মিলনের মধ্য দিয়ে মোক্ষ বা সাধনসিদ্ধি ঘটার কল্পনা

মানুষকে চূড়ান্ত যৌনভোগের নেশা ধরাতে

পারে, কিন্তু কোনও অলৌকিক ক্ষমতার

অধিকারী করতে পারে না ।

যোগদর্শনে নারী পুরুষের দীর্ঘ মিলনের নানা উদ্ভট তত্ত্ব দেওয়া আছে। বলা আছে—

“পুংসো বিন্দুং সমাকুঞ্চ্য সম্যগভ্যাসপাটবৎ ।

যদি নারী রজো রক্ষেদ্ বজ্রোল্যা সাপি যোগিনী ৷৷’

(‘নারীনাং, ব্রজাসাধনফলম্‌’, হটযোগ) অর্থাৎ কোনও নারী যদি ঠিকঠাক পটুতার সঙ্গে বজ্রোলীর (বিশেষ একটি মুদ্রা বা আসন) সাহায্যে পুরুষের বিন্দুকে (বীর্যকে) টেনে নিয়ে নিজের রজঃ রক্ষা করতে পারেন, তবে তিনি যোগিনী (বলে গণ্যা) হন।

সেই বৈদিক যুগে মনে করা হত শুক্রের সঙ্গে রজঃ মিলিত হলে সন্তান হয়। শুক্রকীটের সঙ্গে ডিম্বকোষের মিলন থেকে জন্ম—এই বিজ্ঞান ছিল অজানা । ওই সূত্রের পরবর্তীতে আছে—

“স বিন্দুস্তদ্রজশ্চৈব একীভূয় স্বদেহগৌ।

বজ্রোল্যভাসযোগেন সৰ্ব্বসিদ্ধিং প্রযচ্ছতঃ।।”

অর্থাৎ বিন্দু ও রজঃ এক হয়ে সর্বপ্রকার সিদ্ধি দান করে।

পরবর্তী শ্লোকে বলা হয়ে পুরুষের সঙ্গে দীর্ঘ-মিলন দ্বারা পুরুষের বীর্য ধারণ করে একজন যোগিনী যে কোনও মানুষের ভূত-ভবিষ্যৎ দর্শনমাত্র জানতে পারেন। কুণ্ডলিনী আয়ত্ত করার আরও একটি পদ্ধতির উল্লেখ আমরা পাচ্ছি। সেখানে বলা হয়েছে-

“কুণ্ডলিনীপ্রবোধাৎ জীবপ্রকৃত্যোঃ সঙ্গমঃ। গঙ্গাযমুনয়োমধ্যে বালরণ্ডাং তপস্বিনীম্। বলাৎকারেণ গৃহ্নীয়াত্তদ্বিষ্ণোঃ পরমং বদম্ ইড়া ভগবতী গঙ্গা পিঙ্গলা যমুনা দনী। ইরাপিঙ্গলয়োমধ্যে বালরণ্ডাং চ কুণ্ডলী।

(হটযোগ-প্রদীপিকা, পৃষ্ঠা ১৩১)

অর্থাৎ গঙ্গা যমুনার মধ্যে এক কুমারী রয়েছেন। তিনি কুমারী স্বভাবসুলভ সঙ্কোচবশত পুরুষ সহবাসে কুণ্ঠিতা। সঙ্গম প্রয়াসী হয়ে তাকে বলাৎকার দ্বারা গ্রহণ করলে কুণ্ডলিনী জাগ্রতা হবে। শেষ দুটি লাইনে বলা হয়েছে ইড়-ই ভগবতী গঙ্গা এবং পিঙ্গলা-ই যমুনা। এই দুয়ের সংযোগস্থলে (মূলধারস্থ সুষুম্নাদ্বারে) রয়েছেন সেই কুমারী, যাকে ধর্ষণ করতে হবে। অর্থাৎ সোজা বাংলায় লিঙ্গ মূলে কুমারী কল্পনা করে, ধর্ষণ করতে হবে। যাকে বলে, ধর্ষণ কল্পনায় হস্তমৈথুন। হস্তমৈথুন করার কথা অবশ্য সোজাসুজি ভাবে তন্ত্রে আছে। নারীকে পাওয়া না গেলে বিকল্প হিসেবে নারীকে সঙ্গম করছে কল্পনা করে হস্তমৈথুনের কথা বলা হয়েছে।

উ-ফ ! কী ভয়ংকর ! ধর্মে ধর্ষণ-সমর্থন? এ’জন্যেই এদেশে এত ধর্ষণ হয়।

 

উপনিষদ মতে যোগের চারটি বিভাগ

উপনিষদ যোগকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। (১) লয়যোগ, (২) রাজযোগ, (৩) হঠযোগ (৪) মন্ত্রযোগ।

লয়যোগ

ব্যাসদেব লয়যোগের প্রথম সাধক। লয়যোগীরা মনে করেন মাথার খুলির নীচে রয়েছে সহস্রদলপদ্ম। এই সহস্রদলপদ্মে চিত্তের লয় বা মিলন ঘটিয়ে মোক্ষলাভ বা ব্রহ্মলাভ হয়। অর্থাৎ, মনে মনে নারীর সঙ্গে মিলন কল্পনা করে ব্রহ্মজ্ঞান লাভ। ‘ব্যাস’ বেদ বিভাগকর্তা। পুরাণে বলা হয়েছে, পুরাণসকল “ব্যাসাদিমুনিভিঃ রচিতম্”। অর্থাৎ পুরাণ সকল ব্যাসমুণিগণের দ্বারা রচিত। পুরাণে আঠাশ জন ব্যাস-এর পরিচয় পাই। তাতে মনে হয় আঠাশজন মুনি ও ঋষি ‘ব্যাস’ উপাধি পেয়েছিলেন। এবং এই ব্যাসগণ শ্রীকৃষ্ণের অংশ বলে পরিচিত ।

রাজযোগ

ভগবান পতঞ্জলি, মহর্ষি দত্তাত্রেয় প্রভৃতি যোগীরা রাজযোগের প্রথম সাধক। এঁরা নানা আসন ও মুদ্রার সাহায্যে বায়ু গ্রহণ না করে থাকতে পারতেন। এই যোগসিদ্ধরা ইচ্ছেমতো আকাশে উড়তে পারতেন, অদৃশ্য হতে পারতেন, যে কোনও পশু-পাখির ভাষা বুঝতে পারতেন। যে কোনও অলৌকিক ঘটনা ছিল করায়ত্ত। রাজযোগ করলে নাকি এইসব অলৌকিক এইসব অলৌকিক ক্ষমতা লাভ করা যায়।

হটযোগ

গোরক্ষ মুনি, মার্কণ্ডেয় মুনি হটযোগের সাহায্যে যে কোনও অলৌকিক ঘটনা ঘটাতে পারতেন। গোরক্ষ মুনির মতে যোগাঙ্গ ছয় প্রকারের। (১) আসন, (২) প্রাণায়ম, (৩) প্রত্যাহার, (৪) ধারণা, (৫) ধ্যান, (৬) সমাধি

মার্কণ্ডেয় মুনির মতে যোগাঙ্গ অষ্টবিধ। যোগী যাজ্ঞবাল্ক্য মুনি অষ্টাঙ্গ যোগবিধির কথা বলেছেন। ছয়টি যোগাঙ্গের সঙ্গে আরও দুটি যোগবিধি তাঁরা যুক্ত করেছিলেন। বিধি দুটি হলো (১) যম, (২) নিয়ম।

মন্ত্রযোগ

মন্ত্রযোগের প্রণেতা ভৃগু, কাশ্যপ, প্রচেতা, মহাত্যাগী, প্রবর, দধীচি, জমদগ্নি ইত্যাদি ঋষিরা প্রধান। এরা যোগ ও মুদ্রার সঙ্গে মন্ত্র-প্রয়োগের কথা বলেছেন । বৈদিক যুগে যাগযজ্ঞে যোগমুদ্রার পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্র উচ্চারণ করা হত। দু’য়ের ফলে শত্রু-দমন, মারণ-উচ্চাটন, রোগ নিবারণ ইত্যাদি অনেক কিছুই করা যেত বলে মনে করা হত।

গীতায় ভগবান কৃষ্ণ বলেছেন—পাপী, তাপী, বিলাসী, সন্ন্যাসী, ভোগী, ত্যাগী, সকলেই যোগের অধিকারী।

 

গীতা—মতে যোগের চারটি ভাগ

উপনিষদের যোগ-বিভাজনের সঙ্গে গীতা-র যোগ-বিভাজনের সামান্যতম মিল নেই। গীতাতে যোগের চারটি বিভাগের কথা বলা হলেও সেগুলো উপনিষদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ।

গীতার যোগ-বিভাজন এই ধরণের : – (১) ধ্যানযোগ (২) সংখ্যাযোগ (৩) কর্মযোগ (৪) সন্ন্যাসযোগ ।

পতঞ্জলি মতে যোগ আট রকমের

পতঞ্জলির মত অনুসারে যোগ আট রকমের। (১) যম (২) নিয়ম (৩) আসন (৪) প্রাণায়াম, (৫) প্রত্যাহার (৬) ধারণা (৭) ধ্যান (৮) সমাধি।

(১) ‘যম’ হল নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখার পাঁচটি উপায়। যথা:–অহিংসা, সত্য, চুরি না করা, ব্রহ্মচর্য পালন ও বেঁচে থাকার ন্যূনতম প্রয়োজন মিটিয়ে বাকি সময় ঈশ্বর আরাধণা ৷

(২) নিয়ম’ পাঁচটি। যথা:-দেহ ও আত্মাকে শুদ্ধ রাখা, যা পেয়েছ তাতেই যন্তুষ্ট থাকা, নিজের কর্তব্য পালনে যে কোনও কষ্টকে সহ্য করা, প্রণব ওঁ-কার এর জব করা, নিজের সমস্ত কাজকে পরমাত্মার কাছে সমর্পণ করা।

(৩) ‘আসন’ পদ্মাসন, ভদ্রাসন, সুখাসন, সিদ্ধাসন ইত্যাদি আসনে বসাকে বলা হয় ‘আসন’। সাধক বা যোগী আসনে বসে জপ বা উপাসনা করেন।

(৪) ‘প্রাণায়াম’ হল শ্বাস-প্রশ্বাসকে নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি। প্রাণায়মের আবার চারটি ভাস আছে। বাহ্যবৃত্তি, আভ্যন্তরবৃত্তি, স্তম্ভবৃত্তি এবং বাহ্যাভ্যন্তর বিষয়াক্ষেপী। (৫) ‘প্রত্যাহার’ হল বিষয় থেকে ইন্দ্রিয়কে নিবৃত্ত করা।

(৬) ‘ধারণা’ হল একাগ্র মনঃসংযোগ। নাভিচক্রে। ভ্রুমধ্যে, নাকের জগায় ইত্যাদি কোনও শরীরের অংশে একগ্র মনঃসংযোগ করাকে ধারণা বলে। (৭) ‘ধ্যান’ হল মন কে চিন্তাশূন্য স্তরে নিয়ে যাওয়া।

(৮) ‘সমাধি’-তে সঠিক পরমব্রহ্মের সঙ্গে লীন হয়ে যান।

ছেলেবেলায় পথের পাঁচালীতে দেখেছি, অপু শূন্যে ওড়ার ক্ষমতা পেতে শকুনের ডিম, পারদ আর কীসব হিজিবিজি যোগাড় করেছিল অনেক কষ্ট করে। আমার বালক মনও অপুর সঙ্গী হয়েছিল। ভাবতাম যদি অদৃশ্য হওয়ার বা ওড়ার ক্ষমতা এমনি করে আমিও পেয়ে যাই…। ও সব ছেলেমানুষী ভাবনা আজ আর আমাকে রোমাঞ্চিত করে না, বরং এমন শিশুসুলভ ভাবনার কথা ভাবলে হাসি পায়। আমাদের সমাজে এমন অনেক মানসিকভাবে নাবালক রয়েছেন, যাঁরা এখনও ছোট্ট অপুর বিশ্বাসকে ‘পরম সত্য’ বলে আঁকড়ে ধরে রয়েছেন। বিশ্বাস করেন যোগের হিজিবিজি পাগলামিতে।

যোগে যে সব অলৌকিক ক্ষমতা পাওয়ার গপ্পো আছে; সেগুলো গপ্পোই, যোগ বলে অমর হওয়া যায় না, বয়সকে আটকে রাখা যায় না, ওড়ার ক্ষমতা লাভ করা যায় না, অদৃশ্যও হওয়া যায় না। সব রোগ সারিয়ে দেওয়ার দাবি একটা ধাপ্পা। তারপরও যে সব ‘যোগী’রা এমন সব এমন সব অদ্ভুত দাবি করে, তারা নিসন্দেহে পাক্কা প্রতারক।

প্রথম পর্বঃ মনের নিয়ন্ত্রণ

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ বুদ্ধি, স্মৃতি, প্রতিভা নিয়ে বিভ্রান্তি বেচে খাচ্ছে অনেকে

অধ্যায়ঃ দুই

♦ প্রচুর পড়েন মানে-ই মস্তিষ্কচর্চা করেন?

অধ্যায়ঃ তিন

♦ স্মৃতি-শক্তি ও প্রতিভা এক নয়

অধ্যায়ঃ চার

♦ জ্ঞান (wisdom) ও শিক্ষা (education) এক নয়

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ মস্তিষ্ক ও তার কিছু বৈশিষ্ট্য

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ পাভলভ-তত্ত্বে মস্তিষ্কের ‘ছক’ বা type

অধ্যায়ঃ সাত

♦ আচরণগত সমস্যা

অধ্যায়ঃ আট

♦ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কত কিছু পাল্টে যায়

অধ্যায়ঃ নয়

♦ অলজাইমারস সৃষ্টিশীল মেধায় ভয়ঙ্কর অসুখ

অধ্যায়ঃ দশ

♦ ‘আই কিউ’ কি বাড়ানো যায়?

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ জিন বা বংশগতি-ই ঠিক করে মেধা-বুদ্ধি?

অধ্যায়ঃ বারো

♦ বংশগতি গবেষণা ও স্নায়ুবিজ্ঞানের অগ্রগতি

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ মানবগুণ বিকাশে পরিবেশের প্রভাব

অধ্যায়ঃ চোদ্দ

♦ মগজ কম্পিউটারে প্রোগ্রামিং

অধ্যায়ঃ পনেরো

♦ মগজধোলাই-এর প্রয়োজনীয়তা বেড়েই চলেছে

দ্বিতীয় পর্বঃ ধ্যাণ-যোগ-সমাধি মেডিটেশন

অধ্যায়ঃ এক

♦ যোগ নিয়ে যোগ বিয়োগ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ যোগ কি? যোগ নিয়ে গুলগপ্পো

অধ্যায়ঃ তিন

♦ যোগ

অধ্যায়ঃ চার

♦ যোগের সে’কাল এ’কাল

অধ্যায়ঃ পাঁচ

‘রজনীশ’ এক শিক্ষিত যোগী, বিতর্কিত নাম

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !

অধ্যায়ঃ সাত

♦ শ্রীমাতাজী নির্মলা দেবীর সহজযোগ

অধ্যায়ঃ আট

♦ রিল্যাক্সেশন, মেডিটেশন নিয়ে বাংলাদেশের যোগী মহাজাতক

অধ্যায়ঃ নয়

♦ ‘যোগ’ মস্তিষ্ক-চর্চা বিরোধী এক স্থবীর তত্ত্ব

অধ্যায়ঃ দশ

♦ ‘মেডিটেশন’, ‘রিলাক্সেশন’, বা ‘স্বসম্মোহন’

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ বিশ লক্ষ টাকার চ্যালেঞ্জ

“মনের নিয়ন্ত্রণ যোগ-মেডিটেশন” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ

⇒ মন্তব্য করুন⇐

error: Content is protected !!