সালটা ঠিক মনে নেই, বোধহয় ১৯৬৩-৬৪ হবে। তখন ভি.আই.পি. রোড তৈরির কাজ হচ্ছে, এখন যার নাম নজরুল সরণি। বাগুইহাটি ও কেষ্টপুরের মাঝামাঝি জায়গায় রাস্তা তৈরির কাজে বাধা দেখা দিল। শুনলাম রাস্তার মাঝখানে পড়ে যাওয়া একটা গাছ কাটতে গিয়ে নাকি কেউ গাছটাকে কাটতে পারছে না। কুড়ুল তুললে তা আর নেমে এসে গাছে পড়ছে না। এও শুনলাম, বুলডোজারও নাকি ওপড়াতে এসে ফেল মেরে গেছে। গাছের কাছাকাছি এসে থেমে পড়ছে, আর এগোতে পারছে না। এই অলৌকিক গাছকে পুজো দিতে আশপাশের অঞ্চল থেকে নাকি ঝেটিয়ে লোক আসছে।
অনেকে মত প্রকাশ করলেন, একেই বলে স্থান-মাহাত্ম্য। গাছটা হল দেবস্থান, তাই বিজ্ঞানও এখানে অচল হয়ে যাচ্ছে।
যখন অন্ধ ভক্তদের সমর্থন নিয়ে গাছতলায় একটা মন্দির গড়ে তোলার পরিকল্পনা কার্যকর হতে চলেছে, সেই সময় কোন এক অধার্মিক, বেরসিক গাছটা কাটতে এগিয়ে এলো। সাহসী ওই লোকটিকে ধর্মান্ধ ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট লোকদের হাত থেকে বাঁচাতে রাস্তা নির্মাণ কর্তৃপক্ষ পুলিশের সাহায্য নিল। পুলিশি সাহায্যের প্রয়োজন ছিল, দেখা গেল বেশ কিছু লোক লাঠিসোটা নিয়ে গাছ কাটা প্রতিরোধ করতে এসে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু গাছের অলৌকিকত্বে বিশ্বাসী লোকদের গাছের অলৌকিক শক্তিকে অবিশ্বাস করে লৌকিক সাহায্যে হাত বাড়ানোর কোনও প্রয়োজন ছিল কি? এ তো তাদের জানা থাকাই উচিৎ যে, এই লোকটিও গাছ কাটতে ব্যর্থ হবে। লোকটি কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়নি, গাছটি কাটাতে সমর্থ হয়েছিল। বুঝতে অসুবিধা হয় না অলৌকিকত্ব আরোপ করে মন্দির গড়তে পারলে বিনা শ্রমে লোক ঠকিয়ে টাকা রোজগার করা যাবে ভেবেই সমস্ত ব্যাপারটা সাজানো হয়েছিল। গাছ কাটতে এসে যার কুড়ুল থেমে গিয়েছিল, গাছের উপর দিয়ে বুলডোজার চালাতে গিয়ে যে ব্যর্থ হয়েছে, তারা ছিল সাজানো লোক, স্রেফ অভিনয় করেছে।