কয়েক বছর আগে কিছু বিজ্ঞান ক্লাব, বিজ্ঞান সংস্থা ব্যাপক ভাবে মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান- মনস্কতা গড়ে তুলতে গড়ে তুলেছিল একটি সমন্বয় কেন্দ্র, ‘গণবিজ্ঞান সমন্বয় কেন্দ্র, পশ্চিমবঙ্গ’। কিন্তু তারপর এই সমন্বয় কেন্দ্রের নেতাদের কার্য-কলাপ রহস্যময় কোনও কারণে লক্ষ্যচ্যুত হলো। অসুস্থ সমাজ ব্যবস্থায় সুস্থ মানুষগুলো বিচ্ছিন্ন হতে বাধ্য- এই সত্য ভুলে থেকে সমাজের অসুস্থতার মধ্যেই দলে ভারি হওয়াকেই নিজেদের লক্ষ্য হিসেবে স্থির করল। তারই সূত্র ধরে গণবিজ্ঞান সমন্বয়কেন্দ্র, পশ্চিমবঙ্গ ২৫. ৩. ৯০ এক সার্কুলার জারি করেছেন, স্মারক নং ৮। ওই সার্কুলারটি পাঠান হয়েছে বেশ কিছু সাইন্স ক্লাবকে। সার্কুলারের শুরুতেই বলা হয়েছে কুসংস্কার ও অলৌকিকতার বিরুদ্ধে গণবিজ্ঞান আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘গণবিজ্ঞান সমন্বয়কেন্দ্ৰ এই বিষয়ে এতদিনকার কাজের মূল্যায়ন করার চেষ্টা করে কিছু সিদ্ধান্ত পৌঁচেছে।
কী সেই সিদ্ধান্ত ? তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কিছুটা এখানে তুলে দিলাম : “আন্দোলনের ক্ষেত্রে কুসংস্কারকে অন্ততঃ দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা অবশ্যই প্রয়োজন যথা, জীবনযাত্রা নির্বাহের পক্ষে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিকারক ও তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিকারক নয়। তাৎক্ষণিকভাবে যে-সব কুসংস্কার ক্ষতিকারক নয় সেগুলো মূলতঃ বস্তুনিরপেক্ষ-বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে আছে এর অনুশীলনমুখীতার চাইতে এগুলির তত্বমুখীনতা অপেক্ষাকৃত বেশী। কখনই বলা যায় না যে এগুলির বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হবে না। অবশ্যই করতে হবে, কিন্তু যেহেতু এগুলির বিরুদ্ধে আন্দোলন ও তার সাফল্য সামাজিক ব্যবস্থার পরিবর্তনের সাথে তথা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যাপক মানোন্নয়নের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত সেহেতু এ আন্দোলন এক দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। পক্ষান্তরে তাৎক্ষণিক ভাবে ক্ষতিকারক কুসংস্কার সমূহ প্রধানতঃ মানুষের স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক জীবনের উপর প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবশীল। বলতে বাধা নেই এগুলির বিরুদ্ধে আন্দোলন পূর্বোক্ত শ্রেণীর কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলন অপেক্ষা জরুরী। দ্বিতীয়ত : এই আন্দোলন সমাজে ব্যাপকভাবে বিকাশলাভ না করলে পূর্বোক্ত আন্দোলনও শক্তিশালী হতে পারে না।”
গণবিজ্ঞান-সমন্বয়কেন্দ্র তাদের নবমূল্যায়নে কী কী সিদ্ধান্তে পৌঁছল একটু দেখা যাক।
১। কুসংস্কার অবশ্যই দুই প্রকার। এক : তাৎক্ষণিক ক্ষতিকারক নয় যেমন অদৃষ্টবাদ, কর্মফলে বিশ্বাস, অলৌকিকত্বে বিশ্বাস, ঈশ্বর বিশ্বাস ইত্যাদি সংক্রান্ত কুসংস্কার। দুই : তাৎক্ষণিক ক্ষতিকারক যেমন স্বাস্থ্য বিষয়ক কুসংস্কার ।
২। স্বাস্থ্যবিষয়ক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই বেশি জবুরী।
৩। অদৃষ্টবাদ, কর্মফলে বিশ্বাস, অলৌকিত্বে বিশ্বাস, ভূত বা ঈশ্বর বিশ্বাসজাতীয় কুসংস্কার দূর করা যেহেতু দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার, তাই বঞ্চিত মানুষদের কুসংস্কারমুক্ত করার আন্দোলনের এখন প্রযোজন নেই।
৪। সমাজের বহু মানুষের মধ্যে অদৃষ্টবাদ, কর্মফল, ঈশ্বরবাদ, অলৌকিকবিরোধী কুসংস্কার-মুক্তির আন্দোলন ছড়িয়ে না পড়লে আন্দোলন শক্তিশালী হতে পারবে না ; এই পরিপ্রেক্ষিতে এখন অলৌকিক-বিশ্বাসজাতীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রয়োজন নেই।
৫। আগে অলৌকিকতা বিরোধী, ঈশ্বরতত্ব, অদৃষ্টবাদ-বিরোধী ব্যাপক গণআন্দোলন গড়ে তুলে ভুল পথ নেওয়া হয়েছিল ।
গণবিজ্ঞান-সমন্বয়কেন্দ্র, পশ্চিমবঙ্গ-ব দ্বিতীয় সম্মেলনে (৬-৭ অক্টোবর ১৯৯১) সম্পাদকের যে ছাপান বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, “আজকের দিনে কোন পদ্ধতি রীতিনীতি বা ধারণাকে কুসংস্কার বললেও মনে রাখা প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট কুসংস্কারটির জন্মলগ্নে অবশ্যই থাকবে এক অনুকূল সামাজিক পরিস্থিতি, হতে পারে তা অবৈজ্ঞানিক। এই সামাজিক পরিস্থিতি থেকে আজকের সামাজিক পরিস্থিতির পার্থক্য মৌলিক। আজকের সমাজেব সব কিছুরই ধারক রক্ষক সংগঠিত রাষ্ট্রব্যবস্থা যা অতীতে ছিল না। অতএব আজকের দিনে সমস্যা সমাধানে রাষ্ট্রকে বাধ্য করতে হবে।”
বাঃ, বাঃ, সত্যিই বড় বিচিত্র এই প্রস্তাব। এত ঢাকঢোল পিটিয়ে বিজ্ঞান-আন্দোলন করতে নেমে শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের নেতারা আবিষ্কার করলেন, কুসংস্কারমুক্তিব জন্য, বিজ্ঞানমনষ্ক মানুষ গড়াব জন্য আন্দোলন গড়ে তোলার প্রয়োজন আমাদের আজকের সমাজে ‘শূন্য’। শোষিত মানুষদের চেতনাকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য আমাদের দাবী রাখতে হবে শোষকশ্রেণীর তল্পিবাহক রাষ্ট্রব্যবস্থা অর্থাৎ সরকারের কাছে। আমরা তেমন জোরালোভাবে দাবী রাখতে পারলে সরকার শোষিত মানুষগুলো হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে খোল করতাল বাজিয়ে শোষকদের সঙ্গে নিয়ে বানপ্রস্থে চলে যাবে।
এ কথা ভুলে থাকার কোনও অবকাশ নেই, যাঁরা নতুন সমাজ গড়াব স্বপ্ন দেখেন, সেই সমাজের উপযুক্ত মানুষ গড়ার দায়িত্বও তাঁদেবই। আদর্শ সমাজ গড়তে আদর্শ মানুষ গড়া দরকার। নতুবা যে আদর্শের জন্য বহু ত্যাগেব সংগ্রাম, তাই ব্যর্থ হয়ে যাবে। একদিন সংগ্রামী মানুষগুলোই ক্ষমতার অপব্যবহারে রপ্ত হয়ে উঠবে। শুরু হবে নয়া শোষণ। তখন মনে হবে এত রক্তক্ষয়ের পর যা হলো সে তো শুধুই ক্ষমতার হস্তান্তর, মহত্তর আদর্শ-সমাজ গড়ে উঠল কই ?
গণবিজ্ঞান-সমন্বয়কেন্দ্রের সম্পাদকের ঘোষিত সিদ্ধান্তগুলোতে সমাজ সম্পর্কে যে চূড়ান্ত অজ্ঞতা ও আনাড়িপনা ফুটে উঠেছে, তা কী না বোঝার মূর্খতা থেকে ? না কি গুলিয়ে দেবার শয়তানি ? এই সিদ্ধান্তগুলো যে শোষক ও রাষ্ট্রক্ষমতার স্বার্থ রক্ষাকারী এবং শোষিত মানুষদের শোষণমুক্তির চিন্তা ধারার বিরোধী এটুকু বুঝে নেওয়া যেহেতু শয়তান ও উন্মাদ ছাড়া আর কারও পক্ষেই সামান্যতম কঠিন নয়, তাই এই বিষয় নিয়ে আরও বিস্তৃত আলোচনায় যাওয়া একান্তই অপ্রয়োজনীয় বিবেচনায় বিরত বইলাম। গণবিজ্ঞান-সমন্বয়কেন্দ্রের নেতারা অনেকের দ্বারা নিশ্চয়ই অভিনন্দিত হয়েছেন বছরের সেরা ডিগবাজি খেয়ে ভারতীয় রেকর্ড দখল করে। একটি বিনীত অনুরোধ জানাই বৰ্ষশ্রেষ্ঠ চুকী প্রতিযোগিতায় সম্পাদক সিদ্ধান্তটি পাঠান, পুরস্কার অবধারিত। তিন নম্বর সিদ্ধান্তটি কী অসাধারণ রসিকতার নিদর্শন বলুন তো—কুসংস্কার দূর করা যেহেতু দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার, তাই এই প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত সবার আগের বদলে সবার পরে।
যাঁরা গণবিজ্ঞান-সমন্বয়কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে একটি বিছিন্ন ঘটনা বলে মনে করছেন, তাঁদের আরো একটু সতর্ক ও সচেষ্ট হতে অনুরোধ করব। তাহলেই দেখতে পাবেন সবের মধ্যেই এক যোগসূত্র। এই সমন্বয় কেন্দ্র সেই CSICOP র দালাল পত্রিকাগোষ্ঠির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেই কাজে নেমেছে।
ভাবতে খুবই ভাল লাগছে যুক্তিবাদী আন্দোলন, সাংস্কৃতিক পরিবেশ পাল্টে দেওয়ার আন্দোলন সত্যিই সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীকেই আন্দোলিত করেছে। গ্রামগঞ্জের নিপীড়িত মানুষরা যেভাবে আন্দোলনের শরিক হচ্ছে, নেতৃত্ব দিচ্ছে, এবং যে দ্রুততার সঙ্গে এই আন্দোলন ব্যাপকতা পাচ্ছে অতে আন্দোলিত হুজুর শ্রেণী ও তাদের তল্পিবাহকরাও। হুজুরদের থাবার ভেতর যেসব পত্র পত্রিকা ও প্রচার মাধ্যম রয়েছে তার সবগুলোকেই কাজে লাগানো হয়েছে আন্দোলন রুখতে, সংস্কারের শিকল ভাঙার অভিযান রুখতে, নতুন সাংস্কৃতিক পরিবেশকে রুখতে। এই সমস্ত পত্রপত্রিকা ও প্রচার মাধ্যম ‘মুক্তচিন্তা’, ‘গণতন্ত্র’, এবং ‘সামাজিক ন্যায়বিচার’-এর কোনটিতেই বিশ্বাস করে না। এবং বিশ্বাস করে না বলেই এ তিনটি শব্দই তারা বেশি করে বলে।
আমাদের দেশের হুজুরের দল ও তাদের অর্থপুষ্টরা সাধারণ মানুষের চেতনা-মুক্তির এই আন্দোলনে দেখতে পেয়েছে অশনি সংকেত। তাইতেই তারা সাধারণ মানুষদের চিন্তাকে নিজেদের পছন্দ মত ছাঁচে ঢালতে চাইছে। চাইছে বিভিন্নভাবে আক্রমণে আক্রমণে দানা বেঁধে ওঠা আন্দোলনকে ধ্বংস করতে। চাইছে মেকি বিজ্ঞান আন্দোলন গড়ে তুলে বিজ্ঞান আন্দোলনকর্মীদের বিভ্রান্ত করে আন্দোলনের পাল থেকে হাওয়া কেড়ে নিতে। আর তাই নানাভাবে কাজে নেমে পড়েছে আমাদের রাষ্ট্রশক্তি, ধনকুবের গোষ্ঠি, নানা প্রচার মাধ্যম এবং বিদেশী রাষ্ট্রশক্তি। আমাদের মত শোষণযুক্ত একটা বিশাল দেশের পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া আন্তর্জাতিক হতে বাধ্য। তাই ভারতের আভ্যন্তরীন ব্যাপার ভেবে বসে থাকতে রাজি নয় পৃথিবীর কিছু কিছু মোড়ল দেশ।
এইসব ধারণা যে কোনও সন্দেহপ্রবণ মানুষের চিন্তার ফসল নয়, তারই উদাহরণ ছড়িয়ে আছে আপনার আমার দৃষ্টির সামনেই। একটু সজাগ থাকুন, অনেক-অনেক উদাহরণ নজরে পড়বে ।
C.SI.CO.P.র দোসর আমেরিকার The Nature পত্রিকার সক্রিয় সহযোগিতায় ভারতবর্ষে পৃথিবীর সর্বকালের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান জাঠা বা Science mission অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এই বিজ্ঞান জাঠা বিষয়ে পৃথিবীব্যাপী প্রচারের দায়িত্বও গ্রহণ করেছে ‘নেচার’ পত্রিকা। এই বিজ্ঞান জাঠার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য প্রস্তুতি কমিটির আহ্বানে ১৬ নভেম্বর ‘৯১ কিছু সাইন্স ক্লাবকে নিয়ে এক কনভেনশন অনুষ্ঠিত হলো কলকাতার বিড়লার শিল্প ও কারিগরী সংগ্রহশালায়। স্বপ্নময় প্রাসাদে এয়ারকণ্ডিশনের মিঠে ঠাণ্ডা খেতে খেতে রাজ্য সরকারের একটি অতি স্নেহধন্য বিজ্ঞান আন্দোলনকারী সংস্থার কিছু নেতা ও গণবিজ্ঞান সমন্বয় কেন্দ্রের কিছু নেতা বিজ্ঞান আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা ও ২০ কোটি টাকা বাজেটের সর্বকালের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান জাঠার মহৎ তাৎপর্য বুঝিয়ে বললেন। রাজ্য প্রস্তুতি কমিটির নেতারা জাঠা কমিটির একটি তালিকা পেশ করলেন ও পাশ করালেন। সভাপতি করা হলো এক বিজ্ঞান পেশার অধ্যাত্মবাদে পরম বিশ্বাসীকে, যিনি একই সঙ্গে ধর্মগুরুর জন্মদিনে প্রণাম জানিয়ে বক্তৃতা দেন, গীতা, ভগবৎ পাঠের আসর মাতিয়ে রাখেন এবং বিজ্ঞান আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। কার্য-নির্বাহী সভাপতি করা হয়েছে এমন এক ব্যক্তিকে, যিনি, দুর্গা পুজো কমিটির সভাপতির আসনেও জাঁকিয়ে বসেন। সম্পাদক করা হলো বিড়লা শিল্প ও কারিগরী সংগ্রহশালার জনৈক প্রাক্তন ডিরেকটরকে। ইতিপূর্বে উনি বিজ্ঞান আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবার মত সময় দিতে পারেন নি বিড়লার চাপান গুরুদায়িত্ব পালন করতে গিয়ে। চাকরি থেকে অবসর নেবার পর উনি নাকি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এবার থেকে বিজ্ঞান আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবেন। জানি না, তাঁর এমন এক জনদরদী অসাধারণ সিদ্ধান্তের জন্যই প্রস্তুতি কমিটি তাঁর হাতে সম্পাদকের দায়িত্ব অর্পণ করে কৃতার্থ হয়েছিলেন কিনা ; না, বিড়লা গোষ্ঠির নির্দেশেই সম্পাদকের দায়িত্ব তুলে দিতে বাধ্য হয়েছেন ? এমনটা ভাবার পেছনে অবশ্যই যুক্তি আছে। কারণ, ১৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত কনভেনশনের সভাপতি ডাঃ জ্ঞানব্রত শীল আমাকে সে রাতেই জানিয়েছিলেন জাঠার টাকার একটা মোটা অংশ জোগাচ্ছেন বিড়লা, টাটারা। (আশা রাখি ডাঃ শীল ভবিষ্যতে কারো চাপে পড়ে এমন কথা বলবেন না- “যা বলেছি, তা বলিনি । ” তেমন চাপে যদিও বা বলেন, অবশ্যই প্রমাণ করতে সক্ষম হবো-তিনি একথা বলেছিলেনই)। অবশ্য এ-সব টাকা নাকি ওঁরা যোগাচ্ছেন যথেষ্ট গোপনীয়তার সঙ্গে। নির্বাচনসর্বস্য রাজনৈতিকদলগুলোর নির্বাচনী তহবিলের কায়দায় জনগণের কাছ থেকে অবশ্য দু-পাঁচ টাকা করে চাঁদা নেওয়া হবে দেখাতে-মোরা তোমাদেরই লোক, বড়লোকদের দালাল নই।” সভাপতি ও সম্পাদক-পদ ছাড়া বাকি পদগুলোর সাম্রাজ্য প্রায় সমান দুভাগে ভাগ করে নিয়েছেন গণবিজ্ঞান – সমন্বয কেন্দ্রের কিছু নেতা এবং রাজ্য সরকারের অতি স্নেনধন্য বিজ্ঞান সংস্থার নেতারা। তবে ওই সংস্থার নেতারা সকলে এবার ওই সংস্থার নাম করে কমিটিতে ঢোকেন নি, ঢুকেছেন অন্যান্য সংস্থার নাম করে। এমনটা করার কারণ প্রথম বিজ্ঞান জাঠার দায়িত্ব গতবার ওই স্নেহধন্য সংস্থাটি পেয়েছিল। এবং ওদের বিরুদ্ধে ভারতের একাধিক প্রদেশের বিজ্ঞান—প্রতিনিধিরা এমন কী পশ্চিমবাংলার কিছু বিজ্ঞান ক্লাবও বহু অনিয়ম ও দাদাগিরির অভিযোগ এনেছিলেন দ্বিতীয় বিজ্ঞান-জাঠা বিষয়ক কনভেনশনে
একবার সুস্থ মাথায় যুক্তি দিয়ে ভাবুন তো, বাস্তবিকই কী এমন ঘটতে পারে, বিড়লা টাটার মত ধনীক গোষ্ঠি ও ধনীক গোষ্ঠির অর্থে নির্বাচনে জিতে শাসন ক্ষমতায় বসা সরকার এবং আমেরিকার সুবিখ্যাত পত্রিকাগোষ্ঠি বিপুল অর্থ ব্যয়ে বিজ্ঞান-জাঠার মধ্য দিয়ে শোষিত জনগণের ঘুম ভাঙাবার গান শোনাবেন, সংস্কারমুক্তি ঘটাবেন, জাতপাতের পাঁচিল ভেঙে ফেলবেন, বোঝাবেন; “তোমাদের বঞ্চনার কারণ অদৃষ্ট নয়, পূর্বজন্মের কর্মফল নয়, ঈশ্বরের কোপ নয়, একদল অতিস্বার্থপর লোভি, দুর্নীতিপরায়ণ মানুষের শোষণের কারণেই তোমাদের জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে বঞ্চনা, বঞ্চনা, এবং বঞ্চনা ।”
হুজুরের দল ও তাঁদেব তল্পিবাহকরা কী বাস্তবিকই পাগল হয়ে গেছে যে, নিজ অর্থ ব্যয়ে বঞ্চিত মানুষদের বিজ্ঞানমনষ্ক ও যুক্তিবাদী করে নিজেদের কবর নিজেরা খুঁড়বে ?
উত্তর : না, না এবং না।
বিজ্ঞান-জাঠার অর্থ বিনিয়োগকারীরা চাইছেন ব্যাপক
প্রচারের ঝড় তুলে, যুক্তিবাদী আন্দোলন ও বিজ্ঞান
আন্দোলনের যে মূললক্ষ্য বিজ্ঞানমনষ্ক, যুক্তিবাদী মানুষ
গড়ার আন্দোলন, সেই লক্ষ্যকে বিপথে পরিচালিত করতে
ব্যাপক পাল্টা প্রচার রাখবেন, “বিজ্ঞান আন্দোলনের মূল
লক্ষ্য বিজ্ঞানের সবচেয়ে বেশি সুযোগ সুবিধে সাধারণের
মধ্যে পৌঁছে দেওয়া।”
জাঠার চালিকাশক্তি চাইছে, আন্দোলনকর্মীদের একটা বিশাল অংশকে জনসেবার কাজে আটকে রেখে আন্দোলনকে ব্যহত করতে। বিজ্ঞান-জাঠা কুসংস্কার-বিরোধিতায় নামবে কুসংস্কারকে জিইয়ে রাখার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়েই। অদৃষ্টবাদ, আত্মা, পূর্বজন্ম, প্রতিষ্ঠানিক ধর্ম, ইত্যাদি শোষক দলের শ্রেষ্ঠ হাতিযারগুলোর বিরুদ্ধে ‘জাঠার মাঠা খাওয়া’ নেতারা কখনই সামান্যতম আঘাত হানার চেষ্টা করবে না, করতে পারে না, যেমন হুজুরের অর্থে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া রাজনৈতিক দলগুলি প্রকৃত অর্থে কখনই হুজুরের স্বার্থবিরোধী কোনও কাজ করতে পারে না। যা পারে, সেটা হলো, শোষিত মানুষদের বিভ্রান্ত করতে, শোষিত মানুষদের বন্ধুর অভিনয় করতে। বিজ্ঞান- জাঠাও এর বাড়তি কিছুই করতে পারবে না। ওদের কুসংস্কারবিরোধীতা সীমাবদ্ধ থাকবে গুটিকতক ম্যাজিক ও অলৌকিক রহস্য ফাঁসের মধ্যেই। এই কলমচীর প্রতিটি কথার সত্যতা আপনারা মিলিয়ে নেবেন আপনাদের অভিজ্ঞতার নিরিখে। জানি এ- লেখা বিজ্ঞান-জাঠার ঠিকা পাওয়া নেতারা অনেকেই পড়বেন বার বার পড়বেন, ওঁদের বুদ্ধিজীবীরা আবার মানুষের মগজ ধোলাই করে নিজেদের কার্যক্রমের মহত্বতা সাধারণকে বোঝাতে সচেষ্ট হবেন। কিন্তু যুক্তির কূট কচকচালি যতই সৃষ্টি করার চেষ্টা করুন, বাস্তবে শাসক, শোষক ও বিদেশী শক্তির সক্রিয় সহযোগিতার ভিত্তিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন কখনই তাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হতে পারে না, হবে না। পরিচালিত হবে অবশ্যই তাদেরই স্বার্থ রক্ষার্থে।
বিশাল অর্থ ও বিশাল প্রচারের সাহায্য নিয়ে বিজ্ঞান-জাঠার ঝড় তুলে এইসব বিজ্ঞান আন্দোলনের মুখোশধারী বিশ্বাসঘাতক মিরজাফরের দল শোষিত মানুষদের চেতনা-মুক্তির গতিকে হয়তো সামান্য সময়ের জন্য স্তিমিত করতে পারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত জয় আমাদের হবেই; জয় শোষিত মানুষদের হবেই। সেদিনের বিজ্ঞান-জাঠা কনভেনশনে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান আন্দোলনের নেতা বিপ্লব বসু দ্বিধাহীন ভাষায় জাঠায় টাকার উৎস জানতে চেয়ে বলেছিলেন, “টাকা খরচ না করলে আজকাল স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী জোটে না।” অর্থের বিনিময়ে কর্মী হয়তো জোটে, কিন্তু এইসব ভাড়াটে সেনা দিয়ে আদর্শ-সচেতন মানুষদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ-জেতা যায় না ।
নিপীড়িত ভারতবাসীদের দিকে দিকে জেগে ওঠাব খবরে শোষক ও শাসকরাও আজ উদ্বেল। তাই বিপুল অর্থের বিনিময়ে নেতা কিনতে নেমে পড়েছে। বিক্রি হয়ে যাওয়া এইসব নেতাদের প্রত্যেককেই কলটেপা পুতুলের মতই ব্যবহার করা শুরু করেছে ধনকুবের গোষ্ঠি ও রাষ্ট্রশক্তি। একদা সংগ্রামী এইসব নেতাদের কৃতদাসের হাটে বিক্রি হতে দেখে হৃদয় ব্যথিত হয়। এঁদের সঙ্গে নিয়ে আমাদের আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য যাঁরা অনুরোধ জানান, তাদের জানাই এমন মুখোশধারী বন্ধুদের নিয়ে আন্দোলন গড়তে চাইলে আন্দোলন ধ্বংসের জন্য শত্রুর প্রয়োজন হয় না ।
এমন অবক্ষয়, এমন দুর্নীতি, এমন নিলামের হাটে বিবেক কেনা-বেচা দেখার পরও আমরা ভবিষ্যতের উজ্জ্বল স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি। আমরা স্বপ্ন দেখি তরতাজা আদর্শবাদী জীবন-পণ করা সাংস্কৃতিক আন্দোলনকর্মীরা গোত্রান্তরিত তৃণভোজি এইসব নেতাদের হাত থেকে নেতৃত্ব ছিনিয়ে নিয়ে সংগঠনকে আবার করে তুলবে বঞ্চিত মানুষদের সংগ্রামের সাথী ।
জানি এত দীর্ঘ আলোচনার পরও কিছু কিছু সাংস্কৃতিক আন্দোলন কর্মীদের মনে হবে যে সব বিজ্ঞান ক্লাব ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের ত্রুটি, চ্যুতি ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করা হলো, তাদের ভালো কী কিছুই নেই ? সবই খারাপ ? তারাও তো সীমাবদ্ধ ক্ষমতার মধ্যে সমাজের জন্যে কিছু না কিছু করছে, তবে কেন তাদের সঙ্গে যৌথভাবে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে না ?
ধর্মশালা, দাতব্য চিকিৎসালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান— এমনি কত প্রতিষ্ঠানই তো চালায় অনেক ভেজালদার, মুনাফাখোর শোষকরা। সমাজের জন্য ওরাও তো কিছু করেছে। তাই বলে আপনি আমি কী ওদের সঙ্গে নিয়ে ওদেরই বিরুদ্ধে (ওরাই শোষণের স্বার্থে সংস্কারগুলো চাপিয়ে রেখেছে) সংগ্রামে নামার কথা চিন্তা করব পাগলের মত ? একই কারণে রাষ্ট্রশক্তির দালাল মুখোশধারী এই সব আন্দোলনকারীদের সঙ্গে নিযে সংগ্রামের চিন্তা একেবারেই পাগলামী। এইসব মুখোশধারীরা অলৌকিক ক্ষমতার দাবীদার বা জ্যোতিষীদের চেয়েও অনেক বেশি ক্ষতিকর। কারণ অন্তর্ঘাতের জন্যেই এইসব বিক্রি হযে যাওয়া নেতারা তাদের সংস্থাগুলোকে কাজে লাগায়। নিরপেক্ষতার নামাবলী চাপিয়ে যাঁরা শোষকশ্রেণীর মুখোশধারী দালালদের এবং শোষিত শ্রেণীর সংস্কারমুক্তি আন্দোলনে সংগ্রামরতদের একই পর্যায়ে ফেলেন, তাঁরা প্রকারান্তরে ওইসব দালালদেরই উৎসাহিত করেন। দালালরা উল্লসিত হয় এই ভেবে, কী অনায়াসে পঙ্গু করে দিয়েছি কিছু সম্ভাব্য সংস্কার-মুক্তির যোদ্ধাকে। ওইসব সংস্থার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সে- দিনই সংগ্রামে নামা সম্ভব যে-দিন ওরা হুজুরের শিবির পরিত্যাগ করবে। আর এ- সবই নেতৃত্ব বদলের আগে কখনই সম্ভব নয়—মানুষের বক্তের স্বাদ পাওয়া বাঘ কী কখনইও মানুষ মারা ছাড়ে, না মরা পর্যন্ত? ওইসব শোষকদের দালালদের সঙ্গে যাঁরা শোষিত মানুষদের জন্য মিলিজুলি আন্দোলন চালাতে বলেন, তাঁদের অনেকেরই অজানা, ওইসব দালালরাই ধনতন্ত্রের স্পর্ধিত পদচারণার প্রধান ভিত্তিমূল। অনেকে জানেন, তবু বলেন—আন্দোলনে ক্যানসারের বীজ ঢোকাতেই এমনটা বলেন।
আর একটা দিকে আপনাদের মনযোগ আকর্ষণ করতে চাইছি। হুজুরের দল ও তাদের সহায়ক শক্তি মেকি আন্দোলন গড়ে তুলে সাধারণ মানুষদের বিভ্রান্ত করার প্রয়াসের পাশাপাশি যুক্তিবাদী আন্দোলনের নেতৃত্বকেও নানাভাবে আঘাত হানতে সচেষ্ট হয়েছে। সেই আঘাত অতি পরিকল্পিত। স্লো-পয়জনের মতই নেতার মৃত্যু ঘটাতে ধীরে অথচ নিশ্চিতভাবে কার্যকর। গত দেড় বছর ধবে একটা ঘটনার প্রতি অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে, সেটা হলো বেশ কিছু সুপরিচিত ও জনপ্রিয় ও পত্র-পত্রিকায় গল্পে, উপন্যাসে, ধারবাহিক উপন্যাসে এমন একটি করে চরিত্র আমদানী করা হয়েছে এবং হচ্ছে, যেখানে চরিত্রটি আমাকে লক্ষ্য করেই সৃষ্টি বলে অনেক পাঠক-পাঠিকাই অনুমান করছেন এবং সন্দেহ প্রকাশ করছেন। এমনটা হলে আমার এবং আমাদের সমিতির ভাললাগারই কথা, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভালভাগছেও। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভালোলাগার পরিবর্তে শঙ্কার উদয় হচ্ছে, কারণ সে-সব ক্ষেত্রে চরিত্রটিকে করা হচ্ছে একজন যুক্তিহীন, অক্ষম যুক্তির, বোকা, হাসির খোরাক হিসেবে ; সেই সঙ্গে নানাভাবে চরিত্রহননের চেষ্টা তো আছেই। শঙ্ককার কারণ, এই পরিকল্পিত প্রয়াশের পিছনে রযেছে যুক্তিবাদী আন্দোলন সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করাব অতি চতুর প্রয়াশ, সাধারণ মানুষকে আন্দোলন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা। শোষণ ব্যবস্থা কায়েম রাখতে, জনজাগরণ রুখতে জনআন্দোলনের নেতাদের প্রতি মনকে বিষিয়ে তোলার জন্য লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং প্রচার যন্ত্রগুলোকে কাজে লাগানর এই ব্যাপক ও নীরব প্রয়াশকেই বলা হয় ‘অপারেশন আমেরিকান স্টাইল’। যথেষ্ট কার্যকর এই স্টাইলেই আক্রমণ হানা শুরু হয়েছে আন্দোলন রুখতে ।
সম্প্রতি একটি মফস্বল শহরের এক ‘গল্পপাঠের মেলা’য় জনৈক প্রগতিশীল হিসেবে পরিচিত এক লেখক তার স্বরচিত একটি গল্প পড়তে গিয়ে শ্রোতাদের তীব্র প্রতিবাদের মুখে পড়ে বানের জলে খড় খুটোর মতই ভেসে যান। শ্রোতাদের ক্ষোভের কারণ, গল্পটির কেন্দ্রীয় চরিত্রটির সঙ্গে আমার এমন কিছু স্কুল মিল রাখা হয়েছে যাতে চরিত্রটি আমাকে চিন্তা করেই আঁকা বলে অনেকেই মনে করবেন এবং লেখক, চরিত্রটির চরিত্রহনন করেছেন পাকা খেলুড়ের মতই। ওই লেখক একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকায় অনেকে এমন সন্দেহও প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক দলের নির্দেশেই লেখক এমন একটা গল্প লিখে মফশ্বল শহরের এই গল্প মেলায় সেটি পড়ে জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া দেখতে চেয়েছিলেন। প্রতিক্রিয়া ওরা দেখেছেন, এবং সেটা তাদের পক্ষে মোটেই সুখকর হয়নি, বরং যথেষ্ট শিক্ষা পেয়েছেন। এমনটা ভাবার কারণ, বছরখানেক আগে ওই লেখকের সঙ্গে সম্পর্কিত রাজনৈতিক দলের নিজস্ব দৈনিক পত্রিকার তরফ থেকে চেষ্টা করা হয়েছিল আমার চরিত্রহনন করে জনগণ থেকে আমাকে বিচ্ছিন্ন করতে ; সমিতির সাধারণ কর্মীদের থেকে, সাংস্কৃতিক আন্দোলন কর্মীদের থেকে আমাকে বিচ্ছিন্ন করতে। আর সেই জন্যে বেশ কয়েকটি দিন প্রচুর গুরুত্ব সহকারে, প্রচুর নিউজপ্রিন্ট খরচ করে তারা চূড়ান্ত মিথ্যাচারিতা বা ‘ইয়েলোজর্নালিজম’ চালিয়ে গিয়েছিল। এ-সবই করা হয়েছিল রাজনৈতিক দলটির মুষ্ঠিমেয় কিছু নেতৃত্বের চাপে। সেবার ওদের সেই নোংরা প্রচেষ্টা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছিল সাধারণ মানুষদের সোচ্চার প্রতিবাদের ঝড়ে। একই সঙ্গে তীব্র ভাষায় ক্ষোভ ও ধিক্কার জানিয়েছিলেন ওই রাজনৈতিক দলেরই বহু সুস্থ-চিন্তার কর্মীরা-নেতারা ও দলের সঙ্গে সম্পর্কীত শ্রমিক, কৃষক, সরকারী কর্মচারী ইত্যাদি বিভিন্ন সংগঠন। সে এক ইতিহাস।
হুজুরের দল ও তার উচ্ছিষ্টভোগীরা আমাকে তথ্য যুক্তিবাদী আন্দোলনকে এত বেশি গুরুত্ব দিয়ে আক্রমণ চালান যে এটুকু অবশ্যই বুঝেছি, আমরা সুস্পষ্টভাবে সঠিক পথেই এগুচ্ছি।
এও জানি আন্দোলনকে আঘাত হানা এখানেই বন্ধ হবে
না, হতে পারে না। আঘাত আসবেই, তবে সফদার হাসমি
বা শংকর গুহ নিয়োগীকে হত্যা করে যে ভুল ওরা করেছে,
সে ভুলের ফাঁদে আবার পা ফেলবে না। হয়তো আচমকা
গ্রেপ্তার করা হবে আমাকে। দুরাত্মার কখনও ছলের অভাব
হয় না। এক্ষেত্রেও হবে না। আনিত হবে চুরি, ছেনতাই
রাহাজানী, হত্যা, স্মাগলিং, শ্লীলতাহনী ইত্যাদি নিদেন পক্ষে
গোটাপঞ্চাশেক অভিযোগ— যেমনটি পশ্চিমবাংলার আর
সব রাজনৈতিক বন্দীদের ক্ষেত্রেও আনা হয়েছে ।
কিন্তু যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, এ-ভাবে তাকে কিছুতেই শেষ করা যাবে না। নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে এসেছে আজ বহু মানুষ, ধান্ধাহীন নিবেদিত প্রাণ, লড়াকু বহু মানুষ। কারাগারের গারদের চেয়ে অনেক বেশি শক্তি ধরে মানুষের তীব্র ইচ্ছে। তাই বার বার প্রতিবার আন্দোলনের নেতাদের কারাগরে বন্দী করার শাসক-চক্রান্ত ব্যর্থ হয়েছে দেশে দেশে। জনরোষে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছে ওরা। ইতিহাস থেকে এই শিক্ষা যদি রাষ্ট্রশক্তি এখনও না নিয়ে থাকে, তবে চরম মূল্যে আবার সেই শিক্ষা নিতে বাধ্য করবে জনশক্তি।
কিছু কথা
♦ শোষণ ব্যবস্থাকে কায়েম রাখতেই মগজ ধোলাই চলছে
♦ দেশপ্রেম নিয়ে ভুল ধারনা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে
♦ গণতন্ত্র যেখানে বর্বর রসিকতা
♦ জনসেবা নিয়ে স্বচ্ছতা থাকা অতি প্রয়োজনীয়
♦ যুক্তিবাদের আগ্রাসন প্রতিরোধে কাগুজে যুক্তিবাদীর সৃষ্টি
♦ যুক্তিবাদবিরোধী অমোঘ অস্ত্র ‘ধর্ম’
♦ যুক্তিবাদী আন্দোলন নিয়ে প্রহসন কতদিন চলবে?
♦ আন্দোলনে জোয়ার আনতে একটু সচেতনতা, আন্তরিকতা
অধ্যায়ঃ এক
♦ পত্র-পত্রিকায় সাড়া জাগানো কিছু ভবিষ্যদ্বাণী প্রসঙ্গে
অধ্যায়ঃ দুই- অশিক্ষা, পদে পদে অনিশ্চয়তা এবং পরিবেশ মানুষকে ভাগ্য নির্ভর করে
♦ অদৃষ্টবাদ যেখানে অশিক্ষা থেকে উঠে আসে
♦ অনিশ্চয়তা আনে ভাগ্য নির্ভরতা
♦ পরিবেশ আমাদের জ্যোতিষ বিশ্বাসী করেছে
♦ মানব জীবনে দোষ-গুণ প্রকাশে পরিবেশের প্রভাব
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
♦ জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিষশাস্ত্রের পার্থক্য
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦জ্যোতিষশাস্ত্রের বিচার পদ্ধতি
অধ্যায়ঃ ছয়
অধ্যায়ঃ সাত
♦ জ্যোতিষীরা জ্যোতিষশাস্ত্রের পক্ষে যে-সব যুক্তি হাজির করেন
অধ্যায়ঃ আট
♦ জ্যোতিষশাস্ত্রের বিরুদ্ধে বিজ্ঞানের যুক্তি
অধ্যায়ঃ নয়
♦ মানব শরীরে রত্ন ও ধাতুর প্রভাব
অধ্যায়ঃ দশ
♦ জ্যোতিষচর্চা প্রথম যেদিন নাড়া খেল
অধ্যায়ঃ এগারো
♦ কিভাবে বার-বার মেলান যায় জ্যোতিষ না পড়েই
অধ্যায়ঃ বারো
♦ জ্যোতিষী ও অলৌকিক ক্ষমতার দাবিদারদের প্রতি চ্যালেঞ্জ
২য় পর্বঃ কিছু কথা
অধ্যায়- একঃ নস্ট্রাডামুসের সঙ্গে পরিচয়
♦ নস্ট্রাডামুসের ‘আশ্চর্য’ ভবিষ্যদ্বাণী কতটা ‘আশ্চর্যজনক’?
অধ্যায়ঃ দুই
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
অধ্যায়ঃ পাঁচ
অধ্যায়ঃ ছয়
অধ্যায়ঃ সাত
অধ্যায়ঃ আট
অধ্যায়ঃ নয়
অধ্যায়ঃ দশ
অধ্যায়ঃ এগারো
অধ্যায়ঃ বারো
♦ এ-দেশের পত্র-পত্রিকায় নস্ট্রাডামুস নিয়ে গাল-গপ্পো বা গুল-গপ্পো
“অলৌকিক নয়,লৌকিক- ৩য় খন্ড ” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ