হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্ন মুগাফ্ফাল (রাঃ) হইতে ধারাবাহিকভাবে আবূ আইয়াস, শু‘বা, হাজ্জাজ ও ইমাম বুখারী বর্ণনা করিয়াছেনঃ হযরত আবদুল্লাহ্ ইব্ন মুগাফ্ফাল বলেন- মক্কা বিজয়ের দিনে আমি নবী করীম (সাঃ)-কে স্বীয় উষ্ট্রের পৃষ্ঠে আরূঢ় অবস্থায় সূরা ফাতহ তিলাওয়াত করিতে শুনিয়াছি। ইমাম ইব্ন মাজাহ ছাড়া সিহাহ সিত্তার সকল সংকলকই উপরোক্ত হাদীস পূর্বোক্ত রাবী শু’বা হইতে উপরোক্ত অভিন্ন ঊর্ধ্বতন সনদাংশে এবং বিভিন্ন অধস্তন সনদাংশে বর্ণনা করিয়াছেন। উক্ত হাদীসের অন্যতম রাবী আবূ আইয়াসের অন্য নাম হইতেছে মুআবিয়াহ ইব্ন কুররাহ। উক্ত হাদীস দ্বারাও গৃহে অবস্থান কিংবা বিদেশ ভ্রমণ, যে কোন অবস্থায় কুরআন মজীদ পুনঃ পুনঃ তিলাওয়াত করিবার প্রয়োজনীয়তা প্রমাণিত হয়। অধিকাংশ ফকীহ বলেন- যানবাহনে আরূঢ় অবস্থায় কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করায় কোন দোষ নাই। তবে চলন্ত অবস্থায় কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করা কোন কোন ফকীর নিকট মাকরূহ৷
হযরত আবূ দারদা (রাঃ) সম্পর্কে ইব্ন আবূ দাউদ বর্ণনা করিয়াছেন যে, তিনি রাস্তায় চলন্ত অবস্থায় কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করিতেন। হযরত উমর ইব্ন আব্দুল আযীয (রঃ) সম্বন্ধে বর্ণিত হইয়াছে যে, তিনি ঐরূপ তিলাওয়াতের অনুমতি দিয়াছেন। পক্ষান্তরে মালিক (রঃ) সম্বন্ধে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি তদ্রূপ তিলাওয়াতকে মাকরূহ মনে করিতেন। ইবন ওহাব হইতে ধারাবাহিকভাবে আবূ রবী’ ও ইব্ন আবূ দাউদ বর্ণনা করিয়াছেন যে, ইব্ন ওহাব বলেনঃ একদা আমি ইমাম মালিকের নিকট জিজ্ঞাসা করিলাম- ‘একটি লোক শেষ রাত্রিতে নামায আদায় করিতেছিল । নামাযে সে যে সূরা তিলাওয়াত করেছিল, উহা শেষ হইবার পূর্বেই সে মসজিদে রওয়ানা হইল। পথিমধ্যে সে অসমাপ্ত সূরাটির অবশিষ্টাংশ তিলাওয়াত করিতে পারিবে কি? ইমাম মালিক বলিলেন- রাস্তায় চলমান অবস্থায় কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করা যায় বলিয়া আমার জানা নাই ৷
শা’বী বলেন- তিনটি স্থানে কুরআন তিলাওয়াত করা মাকরূহ। (১) গোসলখানায় (২) পায়খানা (৩) চক্র দ্বারা নির্মিত ঘুর্ণায়মান ঘর। পূর্বসূরি বিপুলসংখ্যক ফকীহ বলেন- গোসলখানায় কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করা মাকরূহ নহে। ইমাম মালিক, ইমাম শাফেঈ, ইবরাহীম নাখঈ (রঃ) প্রমুখ ফকীণ অনুরূপ অভিমত প্রকাশ করিয়াছেন। হযরত আলী (রাঃ) সম্বন্ধে ইব্ন আবূ দাউদ বর্ণনা করিয়াছেন যে, তিনি উহা মাকরূহ মনে করিতেন। আবূ ওয়ায়েল শাকীক ইব্ন সালমাহ, হাসান বসরী মাকহুল এবং কুবায়সাহ ইব্ন জুআয়েব সম্বন্ধে ইব্ন মুনযির বর্ণনা করিয়াছেন যে, তাহারা উহাকে মাকরূহ (অপছন্দনীয়) বলিয়াছেন। ইবরাহীম নাখঈ হইতেও অনুরূপ একটি অভিমত বর্ণিত হইয়াছে। ইমাম আবূ হানীফা (রঃ) সম্বন্ধে বর্ণিত হইয়াছে যে, তিনি গোসলখানায় কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করাকে মাকরূহ মনে করিতেন I
পায়খানায় কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করা কেন মাকরূহ তাহা বলা নিষ্প্রয়োজন। উহার কারণ স্পষ্ট। কুরআন মজীদের ইয়্যাত ও সম্মান রক্ষা করিবার নিমিত্ত কেহ যদি পায়খানায় কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করাকে হারাম বলেন, তবে উহাও একটি উল্লেখযোগ্য অভিমত হিসাবে পরিগণিত হইবে। চক্র দ্বারা নির্মিত ঘুর্ণায়মান চড়কে কুরআন মজীদ তিলাওয়াত করা এই কারণে মাকরূহ যে, উহাতে কুরআন তিলাওয়াতকারীর অন্য কোন ব্যক্তির নীচে নামিতে হয় ও অন্য ব্যক্তি তিলাওয়াতকারীর উপরে উঠিতে পারে। আর সত্য সর্বদা উপরে থাকে ও উহার উপর কিছু থাকিতে পারে না, থাকা শোভা পায় না। আল্লাহ্ই সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী।