১. প্রভু তখন মোশির উদ্দেশ্যে বললেন, “ফরৌণকে গিয়ে বলো যে প্রভু বলেছেন, ‘আমার লোকেদের আমাকে উপাসনার জন্য ছেড়ে দাও!

২. যদি তুমি ওদের ছেড়ে না দাও তাহলে আমি মিশর দেশ ব্যাঙে ভর্তি করে দেব।

৩. নীল নদ ব্যাঙে ভর্তি হয়ে উঠবে। নদী থেকে ব্যাঙরা উঠে এসে তোমার ঘরে শয্যাকক্ষে প্রবেশ করে বিছানায় উঠে বসবে। তোমার উনুনের চুল্লি, জলের পাত্র ব্যাঙে ভরে যাবে। তোমার সভাসদগণের ঘরও ব্যাঙে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে।

৪. তোমাদের চারিদিকে ব্যাঙরা ঘুরে বেড়াবে। তোমার সভাসদগণ, তোমার লোকদের এবং তোমার গায়েও ব্যাঙ ছেঁকে ধরবে।”

৫. প্রভু এরপর মোশিকে বললেন, “তুমি হারোণকে বলো সে যেন তার হাতের পথ চলার লাঠি নদী, খালবিল ও হ্রদের ওপর বিস্তার করে মিশর দেশে ব্যাঙ এনে ভরিয়ে দেয়।”

৬. হারোণ মিশরের জলের ওপর তার লাঠি সমেত হাত বিস্তার করতেই নদী, খালবিল ও হ্রদ থেকে রাশি রাশি ব্যাঙ উঠে মিশরের মাটি ঢেকে ফেলল।

৭. হারোণের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে রাজার যাদুকররাও তাদের মায়াজাল বিস্তার করে একই কাণ্ড ঘটিযে দেখাল। ফলে মিশরের মাটিতে আরও অসংখ্য ব্যাঙ উঠে এলো।

৮. ফরৌণ এবার বাধ্য হয়ে মোশি এবং হারোণকে ডেকে পাঠিয়ে তাদের বললেন, “প্রভুকে বলো তিনি যেন আমাকে এবং আমার লোকদের এই ব্যাঙের উপদ্রব থেকে রেহাই দেন। আমি প্রভুকে নৈবেদ্য উৎসর্গ করার জন্য লোকদের যাবার ছাড়পত্র দেব।”

৯. মোশি ফরৌণকে বলল, “বলুন, আপনি কখন চান যে এই ব্যাঙরা ফিরে যাক। আমি আপনার জন্য, আপনার সভাসদগণ ও প্রজাদের জন্য তাহলে প্রার্থনা করব। তারপরই ব্যাঙরা আপনাকে এবং আপনার ঘর ছেড়ে নদীতে ফিরে যাবে। ব্যাঙরা নদীতেই থাকে। বলুন আপনি কবে এই ব্যাঙদের উপদ্রব থেকে অব্যাহতি চান?”

১০. উত্তরে ফরৌণ জানালেন, “আগামীকাল।”মোশি বলল, “বেশ আপনার কথা মতো তাই হবে। তবে এবার নিশ্চয়ই আপনি বুঝতে পেরেছেন যে আমাদের প্রভু ঈশ্বরের মতো আর কোন ঈশ্বর এখানে নেই।

১১. ব্যাঙরা আপনাকে, আপনার ঘর এবং আপনার সভাসদগণ ও প্রজাদের সবাইকে ছেড়ে ফিরে যাবে। কেবলমাত্র নদীতেই তারা এবার থেকে বাস করবে।”

১২. এরপর মোশি এবং হারোণ ফরৌণের কাছ থেকে ফিরে এলো। ফরৌণের বিরুদ্ধে পাঠানো সমস্ত ব্যাঙদের সরিয়ে নেবার জন্য মোশি প্রভুর কাছে প্রার্থনা করল।

১৩. মোশির প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে প্রভু ঘরে, বাইরে, মাঠে ঘাটের সমস্ত ব্যাঙকে মেরে ফেললেন।

১৪. কিন্তু মৃত ব্যাঙের স্তূপ পচতে শুরু করল এবং সারা দেশ দুর্গন্ধে ভরে উঠল।

১৫. ব্যাঙদের উপদ্রব থেকে মুক্তি পাওয়ার পরই ফরৌণ আবার একগুঁয়ে ও জেদী হয়ে উঠলেন। প্রভুর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী মোশি ও হারোণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাজা পালন করলেন না।

উকুন

১৬. প্রভু তখন মোশিকে বললেন, “হারোণকে বলো তার হাতের লাঠি দিয়ে মাটির ধূলোয় আঘাত করতে, এবং তারপর সেই ধূলো মিশরের সর্বত্র উকুনে পরিণত হবে।”

১৭. হারোণ প্রভুর কথামতো ধূলোতে তার লাঠি আঘাত করতেই মিশরের সর্বত্র ধূলো উকুনে পরিণত হল। এবং সেই উকুনগুলো মানুষ ও পশুদের ঘায়ের ওপর চড়ে বসল।

১৮. রাজার যাদুকররা এবারও একই জিনিস করে দেখানোর চেষ্টা করল কিন্তু তারা কিছুতেই ধূলোকে উকুনে পরিণত করতে পারল না। কিন্তু সেই উকুনগুলো মানুষ ও পশুদের শরীরে রয়ে গেল।

মাছি

১৯. যাদুকররা এবারে ব্যর্থ হয়ে গিয়ে রাজা ফরৌণকে বলল যে ঈশ্বরের শক্তিই এটাকে সম্ভব করেছে। কিন্তু ফরৌণ তাদের কথাতে কান দিলেন না। প্রভুর ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারেই অবশ্য এই ঘটনা ঘটল।

২০. প্রভু মোশিকে বললেন, “সকালে উঠে ফরৌণের কাছে যাবে। ফরৌণ নদীর তীরে যাবে। তখন তাকে বলবে প্রভু বলেছেন, ‘আমার উপাসনার জন্য আমার লোকদের ছেড়ে দাও।

২১. যদি তুমি তাদের ছেড়ে না দাও তাহলে তোমার ঘরে মাছির ঝাঁক ঢুকবে। শুধু তোমার ঘরেই নয় তোমার সভাসদগণ ও তোমার প্রজাদের ঘরেও মাছির ঝাঁক ঢুকবে। মিশরের প্রত্যেকটি ঘর মাছির ঝাঁকে পরিপূর্ণ হয়ে উঠবে। মিশরের মাঠে ঘাটে সর্বত্র শুধু ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি উড়ে বেড়াবে!

২২. কিন্তু মিশরীয়দের মতো ইস্রায়েলের লোকদের আমি এই যন্ত্রণা ভোগ করাবো না। গোশন প্রদেশে, যেখানে আমার লোকরা বাস করে, সেখানে একটিও মাছি থাকবে না। কারণ সেখানে আমরা লোকরা বাস করে। এর ফলে তুমি বুঝতে পারবে য়ে এই দেশে আমিই হলাম প্রভু।

২৩. সুতরাং আগামীকাল থেকেই তুমি আমার এই বিভেদ নীতির প্রমাণ পাবে।”

২৪. সুতরাং প্রভু তাই করলেন যা তিনি বলেছিলেন। ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি মিশরে এসে গেল। ফরৌণের বাড়ী এবং তাঁর সভাসদগণের বাড়ী মাছিতে ভরে গেল। মাছিগুলোর জন্য সমগ্র মিশর ধ্বংস হল।

২৫. ফরৌণ মোশি এবং হারোণকে ডেকে বলল, “তোমরা তোমাদের ঈশ্বরকে এই দেশের মধ্যেই নৈবেদ্য উৎসর্গ করো।”

২৬. কিন্তু মোশি বলল, “না, তা এখানে করা ঠিক হবে না। কারণ প্রভু, আমাদের ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে পশু বলিদান মিশরীয়দের চোখে ভয়ঙ্কর ব্যাপার। আমরা যদি এখানে তা করি তাহলে মিশরীয়রা আমাদের দেখতে পেয়ে পাথর ছুঁড়ে হত্যা করবে।

২৭. তাই তিন দিনের জন্য আমাদের প্রভু ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য উৎসর্গ করার জন্য আমাদের মরুপ্রান্তরে যেতে দিন। প্রভুই আমাদের এটা করতে বলেছেন।”

২৮. সব শুনে ফরৌণ বলল, “বেশ আমি তোমাদের মরুপ্রান্তরে যাবার ছাড়পত্র দিচ্ছি। তোমাদের প্রভু ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য উৎসর্গ করার জন্য। কিন্তু মনে রেখো তোমরা কিন্তু বেশী দূর চলে যাবে না। এখন যাও এবং আমার জন্য প্রার্থনা করো।”

২৯. তখন মোশি ফরৌণকে বলল, “দেখুন, আমি যাব এবং প্রভুকে অনুরোধ করব যাতে আগামীকাল তিনি আপনার কাছ থেকে, আপনার লোকদের কাছ থেকে এবং আপনার সভাসদগণের কাছ থেকে মাছিগুলো সরিয়ে নেন। কিন্তু আপনি যেন আবার আগের মতো প্রভুকে নৈবেদ্য উৎসর্গ করার বিষয়টি নিয়ে পরে আপত্তি করবেন না।”

৩০. এই কথা বলে মোশি ফরৌণের কাছ থেকে ফিরে এল এবং প্রভুর কাছে প্রার্থনা করল।

৩১. এবং মোশির প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে প্রভু ফরৌণকে, সভাসদগণ ও প্রজাদের মাছির উপদ্রব থেকে রক্ষা করলেন। মিশর থেকে মাছিদের বের করে দিলেন। আর একটি মাছিও সেখানে রইল না।

৩২. কিন্তু ফরৌণ আবার জেদী হয়ে গেলেন এবং লোকদের যেতে দিলেন না।

error: Content is protected !!
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x