নতুন প্রস্তর ফলক

১. তখন প্রভু মোশিকে বললেন, “পূর্ববর্তী দুটি প্রস্তর ফলকের মতো, যে দুটি তুমি ভেঙ্গেছিলে আরো দুটি প্রস্তর ফলক তুমি তৈরী কর। প্রথম ফলক দুটিতে যেসব কথা লেখা হয়েছিল সেইসব কথা আমি আবার এই ফলক দুটিতে লিখব।

২. কাল সকালে প্রস্তুত হয়ে নিও এবং আমার সঙ্গে দেখা করবার জন্য সীনয় পর্বতের চূড়ায় এসো।

৩. আর কেউ তোমার সঙ্গে আসবে না। অন্য কাউকে যেন পর্বতের কোথাও না দেখা যায়। এমনকি কোনও পশুর দল বা মেষের পালকেও পর্বতের নীচে চরতে দেওয়া যাবে না।”

৪. তাই মোশি প্রথম পাথরের ফলকের মতো আরও দুটি ফলক তৈরী করল। তারপর পরদিন সকালে উঠে সীনয় পর্বতের চূড়ায় গেল। মোশি প্রভুর আদেশ অনুসারে সব কিছু করল। সে পাথরের ফলক দুটি সঙ্গে করে নিয়ে গেল।

৫. অতঃপর প্রভু মেঘের মধ্যে মোশির কাছে নেমে এলেন এবং তার সঙ্গে দাঁড়ালেন এবং তাঁর নাম (প্রভুর) ঘোষণা করলেন।

৬. প্রভু মোশির সামনে দিয়ে গেলেন এবং বললেন, “যিহোবা, প্রভু হলেন দয়ালু ও করুণাময়। তিনি ক্রোধের ব্যাপারে ধৈরয্যশীল। তিনি পরমস্নেহে পরিপূর্ণ এবং বিশ্বস্ত।

৭. হাজার হাজার পুরুষ ধরে প্রভু তাঁর করুণা দেখান। তিনি ভুল কাজ, অবাধ্যতা এবং পাপ ক্ষমা করে দেন। কিন্তু তবু তিনি দোষীদের শাস্তি দিতে ভোলেন না। তিনি কেবলমাত্র দোষীদেরই শাস্তি দেন না, তাদের দণ্ডনীয অপরাধের জন্য তাদের তৃতীয় ও চতুর্থ পুরুষের উত্তরপুরুষদেরও শাস্তি দেন।”

৮. তখন মোশি সঙ্গে সঙ্গে হাঁটু গেড়ে বসল ও আভুমি মাথা নত করে প্রভুর কাছে প্রার্থনা করল এবং বলল,

৯. “প্রভু, আপনি যদি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হন তাহলে আমাদের সঙ্গে চলুন। আমি জানি আমরা জেদী কিন্তু আমাদের অপরাধ ক্ষমা করে দিন। আমাদের ওপর আপনার নিজের পূর্ণ অধিকার আছে বলে মনে করুন এবং আমাদের গ্রহণ করুন।”

১০. তখন প্রভু বললেন, “আমি তোমার লোকদের সঙ্গে এই চুক্তি করি যে আমি তোমার লোকদের সামনে এমন সব আশ্চর্য কার্য করব যা ইতিপূর্বে পৃথিবীর কোনও দেশে হয় নি। তখন তোমাদের চারপাশের সমস্ত জাতিসমূহ দেখতে পাবে আমি কত মহান। তারা এইসব আশ্চর্য জিনিস দেখবে যা আমি তোমাদের জন্য করব।

১১. আমি যা আদেশ দিচ্ছি, আজ তা পালন কর তাহলে আমি তোমাদের শত্রুদের তোমাদের দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করব। আমি ইমোরীয়, কনানীয়, হিত্তীয়, পরিষীয়, হিব্বীয় ও যিবূষীয়দের বিতাড়ন করব।

১২. সাবধান! তোমরা যেখানে যাচ্ছো সেখানকার লোকদের সঙ্গে কোনও চুক্তি কোরো না। তাহলে তোমরা বিপদে পড়বে।

১৩. তাদের বেদী ধ্বংস কর। যে পাথরকে তারা পূজো করে তা ভেঙ্গে ফেলো। তাদের পবিত্র দণ্ডগুলি ধ্বংস করো।

১৪. অন্য কোনও দেবতাকে পূজা করো না কারণ আমার নাম “ঈর্ষা।” আমি হলাম ঈর্ষাপরায়ণ ঈশ্বর।

১৫. “ঐ দেশের লোকদের সঙ্গে কোনও চুক্তি না করার ব্যাপারে সাবধান থেকো। কারণ তোমরা তাদের দেবতাদের পূজো করে এবং তাদের নৈবেদ্য উৎসর্গ করে ব্যভিচার করবে। তারা তাদের নৈবেদ্য ভক্ষণ করতে তোমাদের নিমন্ত্রণ করবে।

১৬. তোমরা যদি তাদের কন্যাদের পুত্রবধূরূপে গ্রহণ করো তাহলে ঐ মহিলারা তোমাদের পুত্রদের তাদের ঐ দেবতাদের পূজো করাবে এবং তারা তোমাদের পুত্রদের প্রভুর প্রতি অবিশ্বস্ত করে তুলবে।

১৭. “কোনও মূর্ত্তি তৈরী করবে না।

১৮. “খামিরবিহীন রুটির উৎসব পালন করবে। আমি তোমাদের যেমন আদেশ দিয়েছিলাম সেই মতো সাতদিন ধরে খামিরবিহীন রুটি খাবে। তোমরা এটা আবীব মাসে করবে কারণ ঐ মাসে তোমরা মিশর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলে।

১৯. “কোনও নারীর প্রথম গর্ভজাত পুত্র সন্তান হবে আমার। এমনকি গবাদি পশুর অথবা মেষের প্রথমজাত পুরুষশাবকও আমার অধিকারভুক্ত।

২০. তোমরা যদি গাধার প্রথমজাত পুরুষশাবককে রাখতে চাও, তবে তোমরা একটি মেষশাবকের বিনিময়ে তা রাখতে পারো। কিন্তু তোমরা যদি ঐ গাধার শাবকটিকে একটি মেষের বিনিময়ে না কেনো তাহলে তোমাদের ঐ গাধার ঘাড় মটকাতে হবে। তোমাদের সমস্ত প্রথমজাত পুত্র সন্তানদের আমার কাছে থেকে ফেরত নিতে হবে। কিন্তু কোনও লোকই উপহার ছাড়া আমার কাছে আসবে না।

২১. “তোমরা ছয়দিন যাবত পরিশ্রম করবে ও সপ্তম দিনে বিশ্রাম নেবে। চাষের বীজ রোপন ও ফসল কাটার সময় তোমরা অবশ্যই বিশ্রাম নেবে।

২২. “সাত সপ্তাহের উৎসব পালন করবে। গম কাটার পর প্রথম কাটা ফসলের দানাগুলো এই উৎসবের জন্য ব্যবহার করবে এবং বছরের শেষে ফসল কাটার উৎসব পালন করবে।

২৩. “বছরে তিনবার তোমাদের সমস্ত লোক সর্বশক্তিমান প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বরের সামনে উপস্থিত হবে।

২৪. “তোমরা যখন তোমাদের দেশে যাবে তখন আমি তোমাদের শত্রুদের সেখান থেকে বিতাড়িত করতে বাধ্য করব। আমি তোমাদের দেশের সীমা বিস্তার করে দেব যাতে তোমরা আরও বেশী জমি পাও। তোমাদের অবশ্যই প্রতি বছরে তিনবার প্রভু, তোমাদের ঈশ্বরের সামনে যেতে হবে। এবং তখন কেউ তোমাদের দেশ অধিকার করার চেষ্টা করবে না।

২৫. “যখন তোমরা আমাকে নৈবেদ্য হিসাবে রক্ত উৎসর্গ করবে তখন তার সঙ্গে খামির দেবে না।“নিস্তারপর্বে উৎসর্গীকৃত মাংস পরদিন সকাল পর্যন্ত রাখা উচিৎ হবে না।

২৬. “তোমাদের ক্ষেতের প্রথম ফসল প্রভুকে দেবে। ঐ ফসল প্রভু, তোমাদের ঈশ্বরের গৃহে নিয়ে আসবে।“কখনও কোনও ছাগশিশুকে তার মায়ের দুধ দিয়ে রান্না করবে না।”

২৭. তারপর প্রভু মোশিকে বললেন, “তোমাকে আমি যা বলেছি সব কিছু লিখে রাখো। এইগুলিই হল তোমার এবং ইস্রায়েলের লোকদের মধ্যে চুক্তির দলিল।”

২৮. মোশি সেখানে প্রভুর সঙ্গে ৪০ দিন ও ৪০ রাত বাস করেছিল। মোশি ৪০ দিন কোন কিছু ভোজন করল না বা জল পান করল না। মোশি দুটি পাথরের ফলকের ওপর চুক্তির কথাগুলি লিখেছিল।

মোশির উজ্জ্বল মুখ

২৯. তারপর মোশি সীনয় পর্বত থেকে নেমে এল। সে সেই চুক্তি লেখা পাথরের ফলক দুটি বয়ে নিয়ে এল। প্রভুর সঙ্গে কথা বলার পর মোশির মুখ জ্বলজ্বল করছিল। কিন্তু মোশি নিজে তা জানত না।

৩০. হারোণ ও ইস্রায়েলের অন্য সব লোকরা তার উজ্জ্বল মুখ দেখে তার কাছে যেতে ভয় পাচ্ছিল।

৩১. তখন মোশি তাদের ডেকে পাঠাল। মোশি হারোণ এবং দলপতির সঙ্গে কথা বলল।

৩২. তারপর সমস্ত ইস্রায়েলবাসী মোশির কাছে এল। সীনয় পর্বতে প্রভু যেসব আদেশ দিয়েছেন মোশি সেই আদেশের কথা তাদের শোনাল।

৩৩. মোশি তার কথা শেষ করে নিজের মুখ আবরণ দিয়ে ঢেকে ফেলল।

৩৪. কিন্তু মোশি যখনই প্রভুর সঙ্গে কথা বলতে য়েত তখন সে যতক্ষণ না বাইরে আসত ততক্ষণ সেই আবরণ খুলে রাখত। মোশি যখন প্রভুর সান্নিধ্য থেকে বেরিয়ে আসত এবং ইস্রায়েলের লোকদের প্রভুর আদেশসমূহ বলত,

৩৫. তখন তারা মোশির মুখমণ্ডলের ওপর একটি দীপ্তি দেখতে পেত। তাই সে আবার তার মুখ ঢেকে ফেলত, পরের বার প্রভুর সঙ্গে কথা বলতে না যাওয়া পর্যন্ত সে ঐভাবেই মুখ ঢেকে রাখত।

error: Content is protected !!