যাজকের পোশাক
১. প্রভু মোশিকে বললেন, “তোমার ভাই হারোণ ও তার পুত্রগণ নাদব, অবীহূ, ইলীয়াসর এবং ঈথামরকে তোমার কাছে আসতে বলো। তারাই যাজকরূপে ইস্রায়েলের লোকদের হয়ে আমাকে সেবা করবে।
২. “তোমার ভাই হারোণের জন্য একটি বিশেষ ধরণের পোশাক বানাবে। ঐ পোশাক হারোণকে বিশেষ সম্মান ও গৌরব প্রদান দেবে।
৩. কয়েকজন দক্ষ দর্জি সেই পোশাক তৈরী করবে। আমি সেই দর্জিদের বিশেষ জ্ঞান ও দক্ষতা প্রদান করেছি। সেই দর্জিদের বলো হারোণের জন্য বিশেষ পোশাক তৈরী করতে। এই পোশাকই প্রমাণ করবে সেই যাজক আমাকে বিশেষ ভাবে সেবা করছে। তখন সে আমাকে যাজকের মতোই সেবা করবে।
৪. তাদের যে পোশাকগুলি বানাতে হবে তা হল এই : একটি বক্ষাবরণ, একটি এফোদ, একটি নীল রঙের পরিচ্ছদ এবং একটি সাদা বোনা বস্ত্র, একটি পাগড়ি এবং একটি কোমর বন্ধনী। এই বিশেষ পোশাক পরিচ্ছদগুলি বানানো হবে হারোণ ও তার পুত্রদের জন্য। এই পোশাক পরার পরেই ওরা আমায় যাজক হিসেবে সেবা করতে পারবে।
এফোদ এবং কোমর বন্ধনী
৫. পোশাকগুলিতে ব্যবহার হবে সোনার জরি, মসৃণ মসীনা এবং লাল, নীল, বেগুনী সুতো।
৬. “এফোদ বানাতে সোনার জরি, মসৃণ শনের কাপড় ও লাল, নীল, বেগুনী সুতো ব্যবহার করবে। দক্ষতার সঙ্গে অতি যত্নে তা তৈরী করতে হবে।
৭. এফোদের প্রতিটি কাঁধে একটি করে কাঁধ পট্টি থাকবে। এফোদের দুই কোণার সঙ্গে কাঁধ পট্টি সংযুক্ত হবে।
৮. “এফোদের জন্য কোমর বন্ধনী তৈরীর সময় দর্জীদের সতর্ক থাকতে হবে। এফোদের মতো কোমর বন্ধনীতেও সোনার জরি, মসৃণ শণের কাপড় ও লাল, নীল, বেগুনী সুতো ব্যবহার করা হবে।
৯. “দুটো গোমেদমনি নাও এবং তার ওপর ইস্রায়েলের পুত্রদের নাম খোদাই কর।
১০. ছয় জনের নাম এক মণিতে ও অন্য ছয় জনের নাম অপর মণিতে খোদাই করবে। নাম খোদাই করার সময় বযস অনুযায়ী বড় থেকে ছোট এইভাবে পর পর সাজাবে।
১১. শীলমোহরের মতো নামগুলো খোদাই করে সোনা দিয়ে বাঁধিয়ে নেবে।
১২. এবারে ঐ দুটি মণি এফোদের দুই কাঁধে লাগাবে। হারোণ যখন প্রভুর সামনে দাঁড়াবে তখন সে ইস্রায়েলের পুত্রদের নামের স্মারক হিসেবে ঐ বিশেষ আচ্ছাদনটি পরবে।
১৩. এফোদের দুই কাঁধে যাতে খোদাই করা মণি দুটি সঠিকভাবে আটকে থাকে তার জন্য খাঁটি সোনা ব্যবহার করবে।
১৪. খাঁটি সোনার দুটি শিকল তৈরী কর, প্রত্যেকটি দড়ির মত পাকানো এবং তাদের ঐ মণি দুটির সঙ্গে আটকে দাও।
বক্ষাবরণ
১৫. “মহাযাজকের জন্য বক্ষাবরণ তৈরী করবে। দক্ষ দর্জিরা এফোদের মতোই যত্ন করে বক্ষাবরণ তৈরী করবে। বক্ষাবরণ তৈরী হবে সোনার জরি, মসৃণ মসীনা কাপড় ও লাল, নীল, বেগুনী সুতো দিয়ে।
১৬. বক্ষাবরণটিকে চারকোণা করবার জন্য অবশ্যই দুবার ভাঁজ করতে হবে। এর দৈর্ঘ্য হবে ১ বিঘত ও প্রস্থ হবে ১ বিঘত।
১৭. বক্ষাবরণে চার সারিতে মণিমানিক্য বসাও। প্রথম সারিতে থাকবে চূনী, পীতমণি ও মরকত।
১৮. দ্বিতীয় সারিতে থাকবে পদ্মরাগ, নীলকান্ত ও পান্না।
১৯. তৃতীয় সারিতে থাকবে পোখরাজ, যিস্ম ও কটাহেলা।
২০. চতুর্থ সারিতে থাকবে বৈদুর্য্য, গোমেদ ও সূর্য্যকান্ত মণি। এই মণিগুলি নিজের নিজের সারিতে সোনায় আঁটা থাকবে।
২১. বারোটি মণির ওপর ইস্রায়েলের সন্তানদের নাম আলাদা আলাদা করে খোদাই থাকবে। সীলমোহরের মতো ঐ মণিগুলিতে বারোজনের নাম খোদাই করা থাকবে।
২২. “বক্ষাবরণের ওপরের অংশটির জন্য খাঁটি সোনা দিয়ে প্রত্যেকটিকে দড়ির মত পাকিয়ে শেকল তৈরী কর।
২৩. দুটো সোনার আংটা লাগানো থাকবে বক্ষাবরণের দুই কোণে।
২৪. দুটো সোনার চেন বক্ষাবরণের দুপাশের আংটায় লাগাবে।
২৫. পাকানো শেকল দুটির অন্য প্রান্ত এফোদের কাঁধের পট্টিগুলোর সঙ্গে অবশ্যই সামনে দিয়ে জোড়া থাকবে।
২৬. আরও দুটো সোনার আংটা বানিয়ে বক্ষাবরণের অন্য দুই প্রান্তে লাগাবে। এফোদের পরে বক্ষাবরণের ভিতর ভাগে এই আংটা থাকবে।
২৭. আরও দুটো সোনার আংটা এফোদের সামনের দিকে কাঁধের পট্টির নীচে লাগাবে। এফোদের কোমর বন্ধনীর ওপরে এই আংটা স্থাপন করতে হবে।
২৮. বক্ষাবরণ থেকে এফোদ যাতে খসে পড়ে না যায় তার জন্য বক্ষাবরণের আংটার সঙ্গে এফোদের আংটা নীল রঙের ফিতে দিয়ে বেঁধে নেবে। এইভাবে বক্ষাবরণ কোমর বন্ধনীর কাছাকাছি থেকে এফোদকেও ধরে রাখতে সক্ষম হবে।
২৯. “হারোণ পবিত্র স্থানে প্রবেশ করলে তাকে বক্ষাবরণ পরতেই হবে। এইভাবে যখন সে প্রভুর সামনে দাঁড়াবে তখন সে তার বক্ষের ওপর স্মারক হিসেবে ইস্রায়েলের বারোজন সন্তানের নাম পরে থাকবে।
৩০. আর সেই বক্ষাবরণের অভ্যন্তরে উরীম ও তূম্মীম রাখবে। প্রভুর সামনে গেলে সর্বদা সেগুলি হারোণের হৃদয়ের ওপর থাকবে। এইভাবে হারোণ প্রভুর সামনে ইস্রায়েলের সন্তানদের বিচার প্রতিনিয়ত নিজের হৃদয়ের ওপর বয়ে নিয়ে বেড়াবে।
যাজকদের অন্যান্য পোশাক
৩১. “এফোদের জন্য একটি সম্পূর্ণরূপে নীল রঙের আলখাল্লা তৈরী করবে।
৩২. আলখাল্লার মাঝখান দিয়ে মাথা ঢোকানোর জন্য একটি ছিদ্র করবে এবং এই ছিদ্রটির চারধার জুড়ে একটি বোনা কাপড়ের টুকরো সেলাই করে দাও যাতে এটি ছিঁড়ে না যায়। এই কাপড় ছিদ্রটির চারদিকে গলাবন্ধনীর কাজ করবে, ফলে তা ছিঁড়ে যাবে না।
৩৩. লাল, নীল, বেগুনী সুতো দিয়ে ডালিমের মতো সুতোর গোলা তৈরী কর এবং আলখাল্লার নীচে ঝুলিয়ে দেবে আর সুতোর বলের মাঝখানে সোনার ছোট ছোট ঘন্টা লাগাবে।
৩৪. পুরো আলখাল্লার নীচের চারিদিকে এই রকম একটা করে সুতোর গোলা ও একটা করে সোনার ঘন্টা লাগানো হবে।
৩৫. যাজকরূপে প্রভুকে সেবা করার সময় হারোণ এই আলখাল্লাটি পরবে। প্রভুর সামনে দাঁড়ানোর জন্য হারোণ পবিত্র স্থানের দিকে এগোলে ঐ ঘন্টাগুলি বাজবে এবং পবিত্র স্থান ছেড়ে বেরনোর সময়ও ঘন্টাগুলি বাজবে। এইভাবে হারোণ কখনও মারা যাবে না।
৩৬. “নির্মল সোনার ফলক বানিয়ে তাতে শীলমোহরের মতো জনগণের উদ্দেশ্যে খোদাই করবে এই কথাগুলি: এটি প্রভুর কাছে উৎসর্গীকৃত।
৩৭. সোনার ফলকটিকে নীল ফিতেতে আবদ্ধ করবে। পাগড়ির ওপর চারিদিকে নীল ফিতে বাঁধা থাকবে। পাগড়ির সামনের দিকে থাকবে সোনার ফলকটি।
৩৮. হারোণ পাগড়ি সমেত ঐ সোনার ফলকটি মাথায় পরবে। আর তা সবসময় হারোণের মাথায় থাকবে। তার ফলে ইস্রায়েলের লোকরা প্রভুকে যে সমস্ত উপঢৌকন দেবে হারোণ তা দোষ মুক্ত করে সব কিছু পবিত্র করে তুলবে যাতে সেই সমস্ত উপঢৌকন প্রভু গ্রহণ করতে পারেন।
৩৯. “মসৃণ সাদা মসীনা সুতো দিয়ে আরও একটা আলখাল্লা বুনবে। পাগড়িও বানাবে মসৃণ মসীনা কাপড়ের। চিহ্নিত কোমর বন্ধনী বানাবে।
৪০. হারোণের পুত্রদের জন্যও গায়ের পোশাক, কোমর বন্ধনী ও পাগড়ি বানাবে। এই পোশাকই তাদের গৌরবান্বিত ও সম্মানিত করবে।
৪১. এই পোশাকগুলি তোমার ভাই হারোণ ও তার পুত্রদের পরাবে। যাজক হিসেবে অভিষেকের জন্য তাদের গায়ে বিশেষ সুগন্ধি তেল ছেটাবে। এইভাবে তারা পবিত্র হবে এবং প্রভুর সেবা করার যোগ্য যাজক হয়ে উঠবে।
৪২. “যাজকদের নগ্নতা ঢাকার জন্য শরীরের ভেতরের পোশাক মসৃণ মসীনা কাপড়ে তৈরী হবে। এই ভেতরের পোশাক তাদের জঙঘা থেকে কোমর পর্যন্ত ঢেকে রাখবে।
৪৩. সমাগম তাঁবুতে প্রবেশের সময় হারোণ ও তার পুত্রদের অবশ্যই এই পোশাকগুলি পরাতে হবে। পবিত্র স্থানে প্রভুর সেবার উদ্দেশ্যে বেদীর কাছে আসতে হলে তাদের এই পোশাক পরতে হবে। তারা যদি এই পোশাক না পরে তাহলে তাদের মরতে হবে কারণ তারা অপরাধী। এই পোশাক পরার বিধি হারোণ ও তার পরবর্তী বংশধরদের চিরস্থায়ীভাবে মেনে চলতেই হবে।”