১. তারপর প্রভু মোশিকে বললেন,

২. “ওদের বলো, মিগদোল এবং সূফ সাগরের মাঝখানে বাল্সফোনের সামনে রাত্রিযাপন করতে।

৩. তাহলে ফরৌণ ভাববে যে ইস্রায়েলের লোকরা মরুভূমিতে হারিয়ে গেছে। ওদের আর কোথাও যাবার জায়গা নেই।

৪. তখন আমি ফরৌণকে সাহসী করে তুলব যাতে সে তোমাদের তাড়া করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমি ফরৌণ ও তার সেনাদের পরাজিত করব। এটা আমার সম্মান বাড়াবে। এবং মিশরের লোকরা তখন জানতে পারবে যে আমিই প্রভু।” ইস্রায়েলের লোকরা ঈশ্বরের কথামতোই কাজ করল।

ফরৌণ ইস্রায়েলীয়দের তাড়া করলেন

৫. মিশরের রাজা খবর পেলেন যে ইস্রায়েলীয়রা পালিয়েছে। এই খবর শুনে ফরৌণ ও তাঁর সভাসদরা আগের মত মন পরিবর্তন করলেন। ফরৌণ বললেন, “আমরা কেন ইস্রায়েলীয়দের যেতে দিলাম? কেন ওদের পালাতে দিলাম? এখন আমরা আমাদের ক্রীতদাসদের হারালাম।”

৬. সুতরাং ফরৌণ তাঁর রথে চড়ে লোকজন সমেত ফিরে গেলেন।

৭. ফরৌণ তাঁর সব চেয়ে ভালো ৬০০ জন সারথীকে নিলেন। প্রত্যেকটি রথে একজন করে বিশিষ্ট সভাসদ ছিল।

৮. ইস্রায়েলীয়রা তাদের যুদ্ধ জয়ে উঁচু করা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ছেড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু মিশরের রাজা ফরৌণ, য়াঁর হৃদয় প্রভুর দ্বারা উদ্ধত হয়েছিল, ইস্রায়েলীয়দের তাড়া করলেন।

৯. মিশরীয় সৈন্যরা তাদের তাড়া করল। ফরৌণের সমস্ত অশ্বারোহী, রথারোহী এবং সৈন্য ইস্রায়েলীয়দের ধরে ফেলল যখন তারা সূফ সাগরের কাছে বাল্সফোনের পূর্বে পী-হহীরোতে শিবির করেছিল।

১০. ইস্রায়েলের লোকেরা দেখতে পেল ফরৌণ এবং তাঁর সেনারা তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। তখন তারা ভয় পেয়ে প্রভুর কাছে সাহায্যের জন্য চিৎকার করে উঠল।

১১. তারা মোশিকে বলল, “কেন তুমি আমাদের মিশর থেকে বের করে আনলে? কেন মরার জন্য তুমি আমাদের এই মরুভূমিতে নিয়ে এলে? আমরা অন্ততঃ মিশরে তো শান্তিতে মরতে পারতাম। সেখানে আর কিছু থাক না থাক প্রচুর কবর ছিল।

১২. এরকম যে ঘটতে পারে তা কিন্তু আমরা আগেই বলেছিলাম। আমরা বলেছিলাম, ‘অনুগ্রহ করে আমাদের বিরক্ত কোরো না। আমাদের এখানেই থাকতে দাও, মিশরীয়দের সেবা করতে দাও।’ এই মরুভূমিতে এসে মরার থেকে মিশরীয়দের দাসত্ব অনেক ভাল ছিল।”

১৩. কিন্তু মোশি উত্তরে বলল, “ভয় পেয়ে পালিয়ে যেও না। দেখো, প্রভু কিভাবে আজ তোমাদের রক্ষা করেন। তোমরা আর কোনও দিন মিশরীয়দের দেখতে পাবে না।

১৪. তোমাদের কিছুই করতে হবে না। শুধু শান্ত হয়ে দেখে যাও কি ঘটছে। প্রভুই তোমাদের হয়ে যুদ্ধ করবেন।”

১৫. সেই সময় প্রভু মোশিকে বললেন, “তুমি এখনও কেন আমার সামনে কাঁদছো! ইস্রায়েলীয়দের এগিয়ে যেতে বলো।

১৬. যখন তুমি সূফ সাগরের ওপর তোমার হাতের লাঠি তুলে ধরবে সূফ সাগর দুভাগ হয়ে যাবে। তখন লোকরা সমুদ্রের মাঝখানে তৈরি হওয়া সেই শুকনো পথ দিয়ে পায়ে হেঁটে যেতে পারবে।

১৭. আমিই মিশরীয়দের সাহসী করে তুলেছি। তাই ওরা তোমাদের তাড়া করছে। কিন্তু আমি তোমাদের দেখাব যে আমি ফরৌণ, তার সমস্ত সৈন্য, তার অশ্বারোহীসমূহ এবং সারথীদের চেয়ে অনেক বেশী শক্তিশালী।

১৮. তখন মিশরও জানবে যে আমিই প্রভু। মিশরীয়রাও আমাকে সম্মান জানাবে যখন আমি ফরৌণ, তার অশ্বারোহীগণ এবং সারথীদের পরাজিত করব।”

প্রভু মিশরের সেনাদের পরাজিত করলেন

১৯. এরপর প্রভুর দূত, যে সামনে থেকে ইস্রায়েলীয়দের নেতৃত্ব দিচ্ছিল, সে ইস্রায়েলীয়দের পিছন দিকে চলে এলো। তাই এক লম্বা মেঘস্তম্ভ মুহুর্তের মধ্যেই লোকদের সামনে থেকে পিছনে চলে এল।

২০. এইভাবে ঐ মেঘস্তম্ভ মিশরীয়দের মাঝখানে বিরাজ করতে থাকল। তখন মিশরীয়দের জন্য অন্ধকার থাকলেও ইস্রায়েলীয়দের জন্য আলো ছিল। তাই ঐ রাত্রে মিশরীয়রা ইস্রায়েলীয়দের কাছে আসতে পারল না।

২১. মোশি সূফ সাগরের ওপর তার হাত মেলে ধরল। প্রভু পূর্ব দিক থেকে প্রবল ঝড়ের সৃষ্টি করলেন। এই ঝড় সারারাত ধরে চলতে লাগল। দু’ভাগ হয়ে গেল সমুদ্র। এবং বাতাস মাটিকে শুকনো করে দিয়ে সমুদ্রের মাঝখান বরাবর পথের সৃষ্টি করল।

২২. ইস্রায়েলের লোকরা ঐ পথ দিয়ে হেঁটে সূফ সাগর পেরিয়ে গেল। তাদের দুদিকে ছিল জলের দেওয়াল।

২৩. পিছনে ফরৌণের সমস্ত অশ্বারোহী সেনা ও রথ ধাওয়া করল।

২৪. পরদিন সকালে মেঘস্তম্ভ ও অগ্নিশিখার ওপর থেকে প্রভু মিশরীয় সেনাদের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন। তখন প্রভু ইস্রায়েলীয়দের পক্ষ নিয়ে মিশরীয় সৈন্যবাহিনীকে আতঙ্কে ফেলে দিলেন।

২৫. রথের চাকা আটকে গিয়ে রথ চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়ালো। মিশরীয়রা চিৎকার করে উঠল, “চলো এখান থেকে বেরিয়ে যাই। প্রভুই ইহুদীদের হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন।”

২৬. তখন প্রভু মোশিকে বললেন, “সমুদ্রের ওপর তোমার হাত তুলে ধর। দেখবে তীব্র জলোচ্ছ্বাস গ্রাস করছে মিশরীয়দের রথ ও অশ্বারোহী সেনাদের।”

২৭. মোশি তার হাত সমুদ্রের ওপর মেলে ধরলো। তাই দিনের আলো ফোটার ঠিক আগে সমুদ্র তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে গেল। মিশরীয়রা জলোচ্ছ্বাস থেকে বাঁচার তাগিদে প্রাণপনে দৌড়তে লাগল। কিন্তু প্রভু তাদের সমুদ্রের জলে ঠেলে দিলেন।

২৮. জলোচ্ছ্বাস গ্রাস করল রথ ও অশ্বারোহী সেনাদের। ফরৌণের যে সমস্ত সেনারা ইস্রায়েলীয়দের তাড়া করে আসছিল তারা সব ধ্বংস হল। কেউ বেঁচে থাকল না।

২৯. ইস্রায়েলের লোকরা সমুদ্রের মাঝখানে তৈরি হওয়া পথ দিয়ে সূফ সাগর পেরিয়ে গেল। তাদের পথের দুপাশে ছিল জলের দেওয়াল।

৩০. সুতরাং সেইদিন এইভাবে প্রভু মিশরীয়দের হাত থেকে ইস্রায়েলীয়দের রক্ষা করলেন। পরে ইস্রায়েলীয়রা সূফ সাগরের তীরে মিশরীয়দের মৃত দেহের সারি দেখতে পেল।

৩১. মিশরীয়দের সেই পরিণতি দেখার পর থেকে ইস্রায়েলের লোকরা প্রভুর শক্তি সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হল। তারা প্রভুকে ভয় ও সম্মান করতে শুরু করল। তারা বিশ্বাস করতে শুরু করল প্রভুকে এবং তাঁর দাস মোশিকে।

error: Content is protected !!
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x