সমিতির স্কুলের ছাত্রদের আমি শুধু শিক্ষক ছিলাম না, ছিলাম বন্ধুও। অন্যান্য শিক্ষকের ন্যায় আমি শিক্ষা দানের সঙ্গে “বেত্র দান” করি নাই, করেছি স্নেহ, মমতা ও উৎসাহ দান। ছাত্রদের অভিভাবকদের নিকট আমি এই বলে ওয়াদা করেছিলাম যে, ছাতদের যাতায়াতের সুযোগ-সুবিধা করে দেব, গরীব ছাত্রদের বেতন রেয়াত দেব এবং অত্যন্ত গরীব ছাত্রের বই-শ্লেটও কিনে দেব। বস্তুতঃ আমি সমিতিভুক্ত থাকা অবধি যথাসম্ভব ও সমস্ত পূরণ করেছি। কিন্তু আমি সমিতি ত্যাগ করায় ওসমস্ত হল অনিশ্চিত।

দক্ষিণ লামচরি কাজেম আলী সরদারের বাড়ির মক্তবে আমাকে শিক্ষক পদে নিয়োগের প্রস্তাব করলে, আমি ২রা পৌষ (১৩৩৭) তারিখে সে মক্তবে শিক্ষকতা করতে শুরু করি। ক্রমে স্কুলের সমিতির বহু ছাত্র ওখানে চলে যায়। পক্ষান্তরে- উঃ লামচরিবাসী হিন্দুগণ হিন্দু বিদ্বেষী মৌলুবীদের কাছে তাঁদের ছেলে পড়তে না দিয়ে করিমদ্দি মৃধার বাড়িতে একটি পাঠশালা খোল্লেন। ফলে সমিতির স্কুলের ছাত্র সংখ্যা কমে গিয়ে সাবেক পর্যায় দাঁড়ালো। অপরদিকে আদায়কারী অভাবে সমিতির মুষ্টি-ভিক্ষা, ও চাঁদাদি বন্ধ হয়ে গেল। তিনজন শিক্ষকের মধ্যে মৌলুভী দু’জন উঠিয়ে দেওয়া হল এবং বেতন না পেয়ে শেষে (১৩৩৯ সালে) মুন্সি সেকান্দার আলী চলে গেলেন। সমিতির ও স্কুলের অস্তিত্ব লুপ্ত হ’ল। (স্কুল গৃহের ভিটির উপর বর্তমানে মরহুম কদম আলী মাতুব্বর সা’বের দেওয়াল ঘেরা মাজার অবস্থিত)।

দঃ লামচরির মক্তবটিতে এ যাবত সরকারের অনুমোদন ছিল না। মক্তবের ছাত্র বৃদ্ধি ও যথারীতি শিক্ষাদানের ফলে অচিরেই সরকারী অনুমোদন লাভ করলাম এবং সাহায্য মঞ্জুর হল মাসিক ৬ টাকা। ১৩৩৯ সালে সরকার পক্ষ মক্তব খানার জন্য একজন জি, টি পাস মাষ্টার রাখার আদেশ দেন। মক্তবটির সাবেক শিক্ষক মুন্সি আপছার উদ্দিন সা’বকে সহ আমাদের তিন জন শিক্ষকের বেতন পোশাবে না বলে – সিংহের কাঠী নিবাসী মাষ্টার আঃ কাদের খাঁ সা’বকে ওখানে রেখে ২৫শে আশ্বিন (১৩৩৯) তারিখে আমি ওখান থেকে উঠে আসি। দঃ লামচরি মক্তবে আমার শিক্ষকতার কার্যকাল ১ বছর ৯ মাস ২৩ দিন।

এ সময় উঃ লামচরি করিমদ্দি মৃধার বাড়ির স্কুলটির শিক্ষক ছিলেন সাহেব রামপুর নিবাসী মুন্সি আঃ মজিদ। তিনি চরমোনাই মৌজায় একটি বিয়ে করে তার শ্বশুরালয়ে চলে গেলে আমি ২৩শে পৌষ (১৩৩৯) তারিখে ঐ স্কুলে যোগদান করি। এ স্কুলটি এর পূর্বেই সরকারী অনুমোদন ও সাহায্য প্রাপ্ত হয়েছিল।

আমার বস্ত্রবয়ন ও শিক্ষকতা করার একমাত্র কারণ হ’ল স্বাস্থ্যহীনতা বা দুর্বলতাজনিত কৃষি কাজে অপরাগতা। ইদানিং আমার স্বাস্থ্যের উন্নতি লক্ষ্য করে পুনঃ কৃষিকাজ শুরু করার মানসে ১৬ই কার্তিক (১৩৪১) তারিখ পর্যন্ত ১ বছর ৯ মাস ২৩ দিন শিক্ষকতা করে আমি উঃ লামচরি স্কুল হতে বিদায় গ্রহণ করি। সর্বসাকুল্যে আমার শিক্ষকতা কাজ করা হ’ল ৪ বছর ২ মাস ১০ দিন মাত্র।

কিছু স্মৃতি, কিছু কথা

নিবেদন

ভিখারীর আত্মকাহিনী- প্রথম খন্ড

চর পূর্বাভাস ও জন্ম (১১৫৮-১৩০৭)

ছবি ও জলের কল (১৩২২)

মুন্সি আহম্মদ দেওয়ান (১৩২৩

পলায়ন (১৩২৪)

মুন্সি আপছার উদ্দিন (১৩২৫)

আরবী শিক্ষায় উদ্যোগ (১৩২৬)

চিকিৎসা শিক্ষা (১৩৩০)

জীবন প্রবাহের গতি (১৩৩১)

ছুতার কাজ শিক্ষা (১৩৩১)

জরীপ কাজ শিক্ষা (১৩৩৩)

বস্ত্র বয়ন শিক্ষা (১৩৩৫)

উচ্চ শিক্ষার প্রচেষ্টা (১৩৩৫)

জাল বুনা শিক্ষা (১৩৩৬)

ভিখারীর আত্মকাহিনী- দ্বিতীয় খন্ড

জাল বোনা ও মৎস্য শিকার

মোসলেম সমিতিঃ স্কুল প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষকতা (১৩৩৬-১৩৪১)

মোসলেম সমিতিরঃ ভাঙ্গন

পাঠাগার স্থাপন (১৩৩৭)

পাখা তৈয়ার (১৩৩৯)

ইঞ্জিনিয়ারিং শিখার উদ্যোগ ও মাতৃবিয়োগ (১৩৩৯)

সীজের ফুল রচনা (১৩৪০)

বিশ্বাসের বিবর্তন (১৩৪১)

ডাইনামো তৈয়ার (১৩৪১)

ভিখারীর আত্মকাহিনী- তৃতীয় খন্ড

কৃষি বিদ্যা শিক্ষা 

জলঘড়ী তৈয়ার

বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরীর শিক্ষা 

সাইক্লোন

দুর্ভিক্ষ

অধ্যাপক কাজী গোলাম কাদিরের সান্নিধ্যে

লাল গোলা যাতায়াত

ভিখারীর আত্মকাহিনী- পঞ্চম খন্ড

“ক্ষেত্র-ফল” রচনা

স্টেট বাটারা

আদেশাবলী

“সৃষ্টি – রহস্য” রচনা

“সত্যের সন্ধান” এর পান্ডুলিপ

সত্যের সন্ধান প্রকাশ

সন্তান-সন্ততি

ভূসম্পত্তি

দেশ সেবা

খোরাক-পোসাক

জীবন বাণী

“আরজ আলী মাতুব্বর” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ

⇒অভিযোগ বা মন্তব্য⇐

 

error: Content is protected !!
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x