শ্লোকঃ ১০

ন দ্বেষ্ট্যকুশলং কর্ম কুশলে নানুষজ্জতে ৷

ত্যাগী সত্ত্বসমাবিষ্টো মেধাবী ছিনসংশয়ঃ ॥ ১০॥

ন—না; দ্বেষ্টি—বিদ্বেষ করেন; অকুশলম্—অশুভ, কর্ম—কর্মে, কুশলে—শুভ কর্মে, ন–না; অনুযজ্জতে—আসক্ত হন; ত্যাগী — ত্যাগী; সত্ত্ব—সত্ত্বগুণে; সমাবিষ্টঃ — আবিষ্ট মেধাৰী — বুদ্ধিমান ছিন্ন — ছিন্ন: সংশয়ঃ— সমস্ত সংশয়।

গীতার গান

কর্তব্যের অনুরোধে অকুশলও করে ।

আসক্তি নাহি সে কুশল কর্মের তরে ॥

মেধাবী যে ত্যাগী সত্ত্ব সমাবিষ্ট হয় ৷

ছিন্ন তার হয়ে যায় সকল সংশয় ॥

অনুবাদঃ সত্ত্বগুণে আবিষ্ট, মেধাবী ও সমস্ত সংশয়-ছিন্ন ত্যাগী অশুভ কর্মে বিদ্বেষ করেন না এবং শুভ কর্মে আসক্ত হন না।

তাৎপর্যঃ যে মানুষ কৃষ্ণভাবনাময় বা সত্ত্বগুণময়, তিনি কাউকে বা শরীরের পক্ষে ক্লেশদায়ক কোন কিছুকেই ঘৃণা করেন না। তিনি শারীরিক দুঃখ-কষ্টের পরোয়া না করে যথাস্থানে ও যথাসময়ে তাঁর কর্তব্য পালন করে চলেন। ব্রহ্মভূত স্তরে অধিষ্ঠিত এই সমস্ত মানুষদের সবচেয়ে বুদ্ধিমান এবং তাঁদের কার্যকলাপ সর্ব প্রকারেই সন্দেহাতীত বলে জানতে হবে।

শ্লোকঃ ১১

ন হি দেহভৃতা শক্যং ত্যত্ত্বং কর্মাণ্যশেষতঃ ।

যস্তু কর্মফলত্যাগী স ত্যাগীত্যভিধীয়তে ॥ ১১॥

ন—নয়; হি—অবশ্যই; দেহভৃতা – দেহধারী জীবের, শক্যম্—সম্ভব: তাজুম্— পরিত্যাগ করা: কর্মাণি—কর্মসমূহ: অশেষতঃ – সম্পূর্ণরূপে ; যঃ – যিনি; তু—কিন্তু; কর্ম—কর্ম; ফল—ফল; ত্যাগী — পরিত্যাগী; সঃ— তিনি; ত্যাগী – ত্যাগী, ইতি- এরপ; অভিধীয়তে—অভিহিত হন।

গীতার গান

দেহধারী জীব কর্মত্যাগ নাহি করে ।

কর্মফল ত্যাগ করি ত্যাগী নাম ধরে ॥

অনুবাদঃ অবশ্যই দেহধারী জীবের পক্ষে সমস্ত কর্ম পরিত্যাগ করা সম্ভব নয়, কিন্তু যিনি সমস্ত কর্মফল পরিত্যাগী, তিনিই বাস্তবিক ত্যাগী বলে অভিহিত হন।

তাৎপর্যঃ ভগবদ্গীতায় বলা হয়েছে যে, কেউ কখনও কর্ম ত্যাগ করতে পারে না। তাই, কর্মফল ভোগের আশা না করে যিনি শ্রীকৃষ্ণের জন্য কর্ম করেন, যিনি সব কিছুই শ্রীকৃষ্ণকে অর্পণ করেন, তিনিই হচ্ছেন প্রকৃত ত্যাগী। আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘের বহু সভ্য আছেন, যাঁরা অফিসে, কলকারখানায় অথবা অন্য জায়গায় খুব কঠোর পরিশ্রম করছেন এবং তাঁরা যা রোজগার করছেন, তা সবই সংঘকে দান করছেন। এই সমস্ত মহাত্মারাই যথার্থ সন্ন্যাসী। এঁরাই যথার্থ ত্যাগের জীবন যাপন করছেন। এখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কিভাবে কর্মফল ত্যাগ করতে হয় এবং কি উদ্দেশ্য নিয়ে সেই কর্মফল ত্যাগ করা উচিত।

শ্লোকঃ ১২

অনিষ্টমিষ্টং মিশ্রং চ ত্রিবিধং কর্মণঃ ফলম্ ।

ভবত্যত্যাগিনাং প্রেত্য ন তু সন্ন্যাসিনাং ক্বচিৎ ৷৷ ১২ ৷৷

—নরক প্রাপ্তিরূপ, ইষ্টম্ — স্বর্গ প্রাপ্তিরূপ, মিশ্রম্—মিশ্র; চ–এবং; ত্রিবিধম্—তিন প্রকার; কর্মণঃ -কর্মের ফলম্ — ফল: ভবতি — হয়, অত্যাগিনাম- ত্যাগরহিত ব্যক্তিদের; প্রেত্য— পরলোকে; ন-না; তু—কিন্তু, সন্ন্যাসিনাম – সন্ন্যাসীদের; ক্বচিৎ—কখনও।

গীতার গান

অনিষ্ট ইষ্ট বা মিশ্র কর্মফল হয় ।

কিন্তু সন্ন্যাসীর সেই কিছু ভোগ নয় ॥

অনুবাদঃ যাঁরা কর্মফল ত্যাগ করেননি, তাঁদের পরলোকে অনিষ্ট, ইষ্ট ও মিশ্র—এই তিন প্রকার কর্মফল ভোগ হয়। কিন্তু সন্ন্যাসীদের কখনও ফলভোগ করতে হয় না।

তাৎপর্যঃ শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা অবগত হয়ে যে মানুষ কৃষ্ণভাবনাময় কর্ম করছেন, তিনি সর্বদাই মুক্ত। তাই তাঁকে মৃত্যুর পরে তাঁর কর্মফল স্বরূপ সুখ বা দুঃখ কিছুই ভোগ করতে হয় না।

error: Content is protected !!