শ্লোকঃ ৬৯

ন চ তস্মান্মনুষ্যেষু কশ্চিন্মে প্রিয়কৃত্তমঃ ।

ভবিতা ন চ মে তস্মাদনাঃ প্রিয়তরো ডুবি ॥ ৬৯ ॥

ন—নেই: চ—এবং; তস্মাৎ—তার থেকে, মনুষ্যেষু — মানুষদের মধ্যে, কশ্চিৎ— কেউ; মে—আমার; প্রিয়কৃত্তমঃ- অধিক প্রিয়কারী; ভবিতা— হবে; ন–না, চ- এবং; মে—আমার; তস্মাৎ—তাঁর থেকে; অন্যঃ- অন্য; প্রিয়তরঃ- প্রিয়তর; ভুবি — এই পৃথিবীতে।

গীতার গান

তদপেক্ষা নরলোকে প্রিয় নাহি মোর ।

হয় নাই হবে নাই আনন্দে বিভোর ॥

অনুবাদঃ এই পৃথিবীতে মানুষদের মধ্যে তাঁর থেকে অধিক প্রিয়কারী আমার কেউ নেই এবং তাঁর থেকে অন্য কেউ আমার প্রিয়তর হবে না।

শ্লোকঃ ৭০

অধোষ্যতে চ য ইমং ধর্মং সংবাদমাবয়োঃ

জ্ঞানযজ্ঞেন তেনাহমিষ্টঃ স্যামিতি মে মতিঃ ॥ ৭০ ॥

অধ্যেষাতে—অধ্যয়ন করবেন; চও; যঃ – যিনি; ইস্‌—এই ধৰ্মম — পবিত্র সংবাদ—কথোপকথন; আবয়োঃ – আমাদের উভয়ের, জ্ঞান-জ্ঞান; যজ্ঞেন- যজ্ঞের দ্বারা; তেন—তাঁর অহম্ — আমি; ইষ্টঃ — পূজিত; স্যাম — হব; ইতি—এই মে— আমার; যতিঃ– অভিমত।

গীতার গান

আমার এ উপদেশ যেবা বিচার করিবে ।

তার জ্ঞানযজ্ঞে মোর উপাসনা হবে ॥

অনুবাদঃ আর যিনি আমাদের উভয়ের এই পবিত্র কথোপকথন অধ্যয়ন করবেন, তাঁর সেই জ্ঞান যজ্ঞের দ্বারা আমি পূজিত হব। এই আমার অভিমত।

শ্লোকঃ ৭১

শ্রদ্ধাবাননসুয়শ্চ শৃণুয়াদপি যো নরঃ ।

সোঽপি মুক্তঃ শুভাল্লোকান্ প্রায়াৎ পুণ্যকর্মণাম্ ॥ ৭১ ॥

শ্রদ্ধাবান—শ্রদ্ধাবান; অনসূয়ঃ চ–ও অসুয়া-রহিত; শূয়াৎ— শ্রবণ করেন, অপি— অবশ্যই; যঃ– যে; নরঃ—মানুষ; সঃ অপি— তিনিও; মুক্তঃ—মুক্ত হয়ে; শুভান্ শুভ; লোকান্ লোকসমূহ, প্রাগুয়াং – লাভ করেন; পুণ্যকর্মণাম্‌ — পুণ্য কর্মকারীদের।

গীতার গান

শ্রদ্ধাবান হয়ে যারা শ্রবণ করিবে ।

পুণ্যবান তার শুভ লোকপ্ৰাপ্তি হবে ॥

অনুবাদঃ শ্রদ্ধাবান ও অসূয়া-রহিত যে মানুষ গীতা শ্রবণ করেন, তিনিও পাপমুক্ত হয়ে পুণ্য কর্মকারীদের শুভ্র লোকসমূহ লাভ করেন।

তাৎপর্যঃ এই অধ্যায়ের সপ্তষষ্টিতম শ্লোকে ভগবান স্পষ্টভাবে ভগবৎ-বিদ্বেষী মানুষদের কাছে গীতার বাণী শোনাতে নিষেধ করেছেন। পক্ষান্তরে বলা যায়, ভগবদ্গীতা কেবল ভক্তদের জন্য। কিন্তু কখনও কখনও দেখা যায় যে, ভগবদ্ভক্ত জনসাধারণের কাছে গীতা পাঠ করছেন, যেখানে সব কয়টি শ্রোতাই ভক্ত নন। তাঁরা কেন প্রকাশ্যভাবে পাঠ করেন? সেই কথার ব্যাখ্যা করে এখানে বলা হয়েছে যে, যদিও সকলেই ভক্ত নয়, তবুও অনেকে আছেন যাঁরা শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ নন। তারা বিশ্বাস করেন যে, তিনি হচ্ছেন পরম পুরুষোত্তম ভগবান। এই ধরনের মানুষেরা সাধু-বৈষ্ণবের কাছ থেকে ভগবানের কথা শ্রবণ করার ফলে তৎক্ষণাৎ সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হন এবং তারপর যেখানে সমস্ত সাধু মহাত্মারা অবস্থান করেন, সেই লোক প্রাপ্ত হন। সুতরাং, কেবল ভগবদ্গীতা শ্রবণ করার ফলে, এমন কি যে ব্যক্তি শুদ্ধ ভগবদ্ভক্তি লাভের প্রয়াসী নন, তিনিও পুণ্যকর্মের ফল লাভ করেন। এভাবেই ভগবানের শুদ্ধ ভক্ত সকলকেই সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হওয়ার এবং ভগবন্তুক্ত হওয়ার সুযোগ দান করেন।

সাধারণত যাঁরা পাপমুক্ত, যাঁরা পুণ্যবান, তাঁরা সহজেই কৃষ্ণভাবনামৃত গ্রহণ করেন। এখানে পুণ্যকর্মণাম্ শব্দটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এর দ্বারা বৈদিক সাহিত্যে বর্ণিত অশ্বমেধ যজ্ঞের মতো মহাযজ্ঞ অনুষ্ঠানের উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন যাঁরা ভক্তিযোগ সাধন করে পুণ্য অর্জন করেছেন, কিন্তু শুদ্ধ নন, তাঁরা যেখানে ধ্রুব মহারাজ তত্ত্বাবধান করছেন, সেই ধবলোক লাভ করেন। ধ্রুব মহারাজ হচ্ছেন ভগবানের একজন মহান ভক্ত, তিনি যে গ্রহে বাস করেন, তাকে বলা হয় ধ্রুবলোক বা ধ্রুবতারা।

error: Content is protected !!