শ্লোকঃ ৩১

যয়া ধর্মমধর্মং চ কার্যং ঢাকাৰ্যমেব চ ।

অযথাবৎ প্রজানাতি বুদ্ধিঃ সা পার্থ রাজসী ৷। ৩১ ।৷

যয়া—যার দ্বারা; ধর্মম্—ধর্ম; অধর্ম —অধর্ম, চ–৩; কার্য—কার্য; চ—ও; অকার্যম্—অকার্য; এব—অবশ্যই: চ–ও; অযথাবৎ অসম্যক রূপে, প্রজানাতি — জানতে পারা যায়; বুদ্ধিঃ – বুদ্ধি; সা— সেই; পার্থ—হে পৃথাপুত্র; রাজসী— রাজসিকী।

গীতার গান

ধর্মাধর্ম কার্যাকার্য অযথাবৎ জানে ৷

রাজসিক সেই বুদ্ধি শাস্ত্রের প্রমাণে ৷।

অনুবাদঃ যে বুদ্ধির দ্বারা ধর্ম ও অধর্ম, কার্য ও অকার্য আদির পার্থক্য অসম্যক্ রূপে জানতে পারা যায়, সেই বুদ্ধি রাজসিকী।

শ্লোকঃ ৩২

অধর্মং ধর্মমিতি যা মন্যতে তমসাবৃতা ৷

সর্বার্থান্ বিপরীতাংশ্চ বুদ্ধিঃ সা পার্থ তামসী ॥ ৩২ ॥

অধর্মম্—অধর্মকে; ধর্মম্—ধর্ম; ইতি—এভাবেই; যা — যে; মন্যতে—মনে করে; তমসা — মোহের দ্বারা; আবৃতা – আবৃত; সর্বার্থান্ — সমস্ত বস্তুকে, বিপরীতার্— বিপরীত; চ–ও; বুদ্ধিঃ — বুদ্ধি; সা— সেই পার্থ- হে পৃথাপুত্র; তামসী — তামসিকী।

গীতার গান

ধর্মকে অধর্ম মানে অধর্মকে ধর্ম ।

বিপরীত সে তামস বুদ্ধি আর কর্ম ৷।

অনুবাদঃ হে পার্থ ! যে বুদ্ধি অধর্মকে ধর্ম এবং সমস্ত বস্তুকে বিপরীত বলে মনে করে, তমসাবৃত সেই বুদ্ধিই তামসিকী।

তাৎপর্যঃ তমোগুণাশ্রিত বুদ্ধিবৃত্তি সব সময়ে যেভাবে কাজ করা উচিত, তার বিপরীতটাই করে। যেগুলি আসলে ধর্ম নয়, সেগুলিকেই তারা ধর্ম বলে মেনে নেয়, আর প্রকৃত ধর্মকে বর্জন করে। তামসিক লোকেরা মহাত্মাকে মনে করে সাধারণ মানুষ, আর সাধারণ মানুষকে মহাত্মা বলে মেনে নেয়। সকল কাজেই তারা কেবল ভুল পথটি গ্রহণ করে। তাই, তাদের বুদ্ধি তমোগুণে আচ্ছন্ন।

শ্লোকঃ ৩৩

ধৃত্যা যয়া ধারয়তে মনঃপ্রাণেন্দ্রিয়ক্রিয়াঃ ।

যোগেনাব্যভিচারিণ্যা ধৃতিঃ সা পার্থ সাত্ত্বিকী ॥ ৩৩ ॥

ধৃত্যাবৃত্তির দ্বারা; যয়া— যে; ধারয়তে ধারণ করে; মনঃ — মন; প্রাণ প্রাণ; ইন্দ্রিয়—ইন্দ্রিয়ের ; ক্রিয়াঃ—ক্রিয়াসকলকে, যোগেন — যোগ অভ্যাস দ্বারা: অন্যভিচারিণ্যা অব্যভিচারিণী; ধৃতিঃ ধৃতি; সা— সেই; পার্থ—হে পৃথাপুত্ৰ, সাত্ত্বিকী — সাত্ত্বিকী।

গীতার গান

যে ধৃতির দ্বারা ধরে প্রাণেন্দ্রিয় ক্রিয়া ।

অব্যভিচারিণী ভক্তি সাত্ত্বিকী সে ধিয়া ॥

অনুবাদঃ হে পার্থ। যে অব্যভিচারিণী ধৃতি যোগ অভ্যাস দ্বারা মন, প্রাণ ও ইন্দ্রিয়ের ক্রিয়াসকলকে ধারণ করে, সেই ধৃতিই সাত্ত্বিকী।

তাৎপর্যঃ যোগ হচ্ছে পরমাত্মাকে জানার একটি উপায়। ধৃতি বা দৃঢ় সংকল্পের সঙ্গে যিনি পরম আত্মাতে একাগ্র হয়েছেন এবং মন, প্রাণ ও সমস্ত ইন্দ্রিয়গুলিকে পরমেশ্বরে একাগ্র করেছেন, তিনি ভক্তিযোগে কৃষ্ণভাবনার সঙ্গে যুক্ত। এই ধরনের ধুতি সত্ত্বগুণাশ্রিত। এখানে অব্যভিচারিণ্যা কথাটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই শব্দটির দ্বারা সেই সমস্ত মানুষদের কথা বলা হচ্ছে, যাঁরা কৃষ্ণভাবনাময় ভক্তিযোগে যুক্ত হয়েছেন, তাঁরা আর অন্য কোন কার্যকলাপের দ্বারা কখনই পথভ্রষ্ট হন না।

error: Content is protected !!