শ্লোকঃ ২৮

অযুক্তঃ প্রাকৃতঃ স্তব্ধঃ শঠো নৈষ্কৃতিকোহলসঃ ।

বিষাদী দীর্ঘসূত্রী চ কর্তা তামস উচ্যতে ॥ ২৮ ॥

অযুক্ত:—অনুচিত কার্যপ্রিয়; প্রাকৃতঃ — জড় চেষ্টাযুক্ত; স্তব্ধঃ—অনম্র, শঠঃ –বঞ্চক, নৈষ্কৃতিকঃ— অন্যের অবমাননাকারী; অলসঃ – অলস; বিষাদী — বিষাদযুক্ত; দীর্ঘসূত্রী— দীর্ঘসূত্রী; চ–ও, কর্তা–কর্তা, তামসঃ – তামসিক, উচাতে বলা হয় ।

গীতার গান

অযুক্ত প্রাকৃত স্তব্ধ নৈষ্কৃতি অলস ৷

দীর্ঘসূত্রী বিষাদী বা কর্তা সে তামস ।।

অনুবাদঃ অনুচিত কার্যপ্রিয়, জড় চেষ্টাযুক্ত, অনম্র, শঠ, অন্যের অবমাননাকারী, অলস, বিষাদযুক্ত ও দীর্ঘসূত্রী যে কর্তা, তাকে তামসিক কর্তা বলা হয়।

তাৎপর্যঃ শাস্ত্রীয় অনুশাসন অনুসারে আমরা জানতে পারি কি ধরনের কর্ম করা উচিত এবং কি ধরনের কর্ম করা উচিত নয়। যারা এই সমস্ত অনুশাসন মানে না, তারা অনুচিত কর্মে প্রবৃত্ত হয়। এই ধরনের মানুষেরা সাধারণত বিষয়ী হয়। তারা প্রকৃতির গুণ অনুসারে কর্ম করে, কিন্তু শাস্ত্রের অনুশাসন অনুসারে কাজ করে না। এই ধরনের কর্মীরা সাধারণত খুব একটা ভদ্র হয় না। সাধারণত তারা অত্যন্ত ধূর্ত -এবং অপরকে অপদস্থ করতে খুব পটু। তারা অত্যন্ত অলস, তাদেরকে কাজ করতে দেওয়া হলেও ঠিকমতো করে না এবং পরে করব বলে তা সরিয়ে রাখে। তাই তাদের বিষণ্ণ বলে মনে হয়। তারা যে-কোন কার্য সম্পাদনে বিলম্ব করে; যে কাজটি এক ঘণ্টার মধ্যে করা সম্ভব, তা তারা বছরের পর বছর ফেলে রাখে। এই ধরনের কর্মীরা তমোগুণে অধিষ্ঠিত।

শ্লোকঃ ২৯

বুদ্ধের্ভেদং ধৃতেশ্বৈব গুণত্রস্তিবিধং শৃণু।

প্রোচ্যমানমশেষেণ পৃথক্তেন ধনঞ্জয় ॥ ২৯ ॥

বুদ্ধেঃ—বুদ্ধির; ভেদম্― ভেদ; ধৃতেঃ – ধৃতির; চ–ও; এব–অবশ্যই, গুণতঃ — জড়া প্রকৃতির গুণ দ্বারা; ত্রিবিধম্—তিন প্রকার: শৃণু—শ্রবণ কর; প্রোচ্যমানম্— যেভাবে আমি বলছি; অশেষেণ — বিস্তারিতভাবে; পৃথত্বেন – পৃথকভাবে; ধনঞ্জয়— হে ধনঞ্জয়।

গীতার গান

বুদ্ধির যে তিন ভেদ ধৃতি আর গুণ ৷

ধনঞ্জয় অশেষ বিচার তার শুন ॥

অনুবাদঃ হে ধনঞ্জয় ! জড়া প্রকৃতির ত্রিগুণ অনুসারে বুদ্ধির ও ধৃতির যে ত্রিবিধ ভেদ আছে, তা আমি বিস্তারিতভাবে ও পৃথকভাবে বলছি, তুমি শ্রবণ কর।

তাৎপর্যঃ জড়া প্রকৃতির গুণ অনুসারে তিনটি ভাগে বিভক্ত জ্ঞান, জ্ঞেয় ও জ্ঞাতা সম্বন্ধে বর্ণনা করে, ভগবান এখন একইভাবে কর্তার বুদ্ধি ও ধৃতি সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করছেন।

শ্লোকঃ ৩০

প্রবৃত্তিং চ নিবৃত্তিং চ কার্যাকার্যে ভয়াভয়ে ৷

বন্ধং মোক্ষং চ যা বেত্তি বুদ্ধিঃ সা পার্থ সাত্ত্বিকী ॥ ৩০ ॥

প্রবৃত্তিম্ – প্রবৃত্তি; চ–ও, নিবৃত্তি — নিবৃত্তি, চ–ও; কার্য—কার্য; অকার্যে—অকার্য, ভয়—ভয়; অভয়ে—অভয়; বন্ধম্ — বন্ধন; মোক্ষম — মুক্তি; চ—ও; যা — যে; বেত্তি—জানতে পারা যায়, বুদ্ধিঃ বুদ্ধি; সা – সেই, পার্থ হে পৃথাপুত্ৰ, সাত্ত্বিকী—সাত্ত্বিকী ।

গীতার গান

প্রবৃত্তি নিবৃত্তি কার্য অকার্য বিচার।

ভয়াভয় বন্ধ মুক্তি সত্ত্ববুদ্ধি তার ॥

অনুবাদঃ হে পার্থ। যে বুদ্ধির দ্বারা প্রবৃত্তি ও নিবৃত্তি, কার্য ও অকার্য, ভয় ও অভয়, বন্ধন ও মুক্তি—এই সকলের পার্থক্য জানতে পারা যায়, সেই বুদ্ধি সাত্ত্বিকী।

তাৎপর্যঃ কর্ম যখন শাস্ত্রনির্দেশ অনুসারে অনুষ্ঠিত হয়, তখন তাকে বলা হয় প্রবৃত্তি বা করণীয় কর্ম এবং যে কর্ম করার নির্দেশ শাস্ত্রে দেওয়া হয়নি, তা করা উচিত নয়। যে মানুষ শাস্ত্রের নির্দেশ সম্বন্ধে অবগত নয়, সে কর্ম এবং তার প্রতিক্রিয়ার বন্ধনে তা আবদ্ধ হয়ে পড়ে। বুদ্ধির দ্বারা পার্থক্য নিরূপণের যে উপলব্ধির বিকাশ হয়, হচ্ছে সত্ত্বগুণাশ্রিত।

error: Content is protected !!