২ জুন, বুধবার, ২০০৪-এ আনন্দবাজার পত্রিকায় একটা সাড়া ফেলে দেওয়া বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হল। ছাত্র-ছাত্রীদের পাগল করে দেওয়ার মতোই বিজ্ঞাপন।

সকাল থেকে গাদা গাদা ফোন আসতেই লাগল। এই বিষয়ে আমার বক্তব্য কী—জানতে চান অনেকেই। মানুষের স্মৃতি বাড়িয়ে দেবে ‘ম্যাজিক’ করে?

সত্যিই এ যেন গ্যারান্টি দিয়ে ফটো সম্মোহনের বিজ্ঞাপন পড়ছি। ‘নেমনিক’ পেন আবিষ্কার করেছেন বিশ্বরূপ রায়চৌধুরী। সেটা কী? স্মৃতি বৃদ্ধির যন্ত্র? হাজার বছরের ক্যালেন্ডারের মতো কোনও কলম—যা প্রতি বছরই বিক্রি করতে দেখি কলকাতা বইমেলায়?

এসবের উত্তর পেতে ইউনির্ভাসিটি ইন্সটিটিউট হলে একবার হাজির হওয়াটা জরুরি। ঠিক করলাম আমরা যাব দেখতে। চ্যালেঞ্জ জানাতে নয়। নিরপেক্ষভাবে পরীক্ষা নিতে হাজির হব আমরা। ‘লিমকা বুক অফ রেকর্ড হোল্ডার’ হওয়ার অর্থ এই নয় যে সত্যিই পরীক্ষাটা হয়েছিল নিখুঁত। এর আগে দাঁত দিয়ে প্লেন টানার এমনই কোনও এক ‘বুক অফ রেকর্ড হোল্ডার’-এর বুজরুকি ফাঁস করেছিলাম । সে আর এক গল্প, আর এক সময় বলা যাবে। টেলিপ্যাথি ক্ষমতা দেখিয়ে দীপক রাও আই আই টি খড়্গপুরে আলোড়ন তুলে, ক্লিনচিট পেয়েছিল। তার বুজরুকিও যুক্তিবাদী সমিতি ফাঁস করেছে (অলৌকিক নয়, লৌকিক, ১ খণ্ডে পাবেন)। রুশ সায়েন্স আকাদেমি মাদাম কুলাগিনাকে টেলিপ্যাথি ক্ষমতার অধিকারী বলে ঘোষণা করার পর সেই একই ধরনের তথাকথিত টেলিপ্যাথি ক্ষমতার প্রদর্শন করেছিলাম আমি ও পিনাকী (আমার ছেলে)। ব্যবস্থাপক ছিল ‘পরিবর্তন’ সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন। সময়টা ৩ ডিসেম্বর, ১৯৮৫ সাল। গোটা টেলিপ্যাথি অনুষ্ঠানই করেছিলাম লৌকিক কৌশলে। ওই প্রদর্শনীর শেষে জানিয়ে ছিলাম লৌকিক কৌশলটা। এমন ঘটনা বহু আছে। আমরা জানি, বিজ্ঞানাচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসু আচার্য গৌরাঙ্গ ভারতীকে অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার অধিকারী বলে সার্টিফিকেট দিলেও অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার প্রমাণ হয় না। ‘লিমকা বুক অফ রেকর্ডস’ কাউকে বিশ্বসেরা স্মৃতিধর বললেই তা সত্যি হয়ে যায় না।

যুক্তিবাদীরা প্রশ্ন তোলেন, দ্বিমত হন। কে বললেন, সেটা বিচারে আনেন না৷ কী বললেন— সেটাই বিচার্য।

মনে রাখার সহজ-সরল কিছু পদ্ধতি আপনি-আমি ছোটবেলায় শিখেছি। যেমন—অঙ্কের জন্য শুভঙ্করের ছড়া। রামধনুর সাতটি রঙ মনে রাখতে ‘বেনীআসহকলা’। শব্দগুলোকে ভাঙলে পাব—বে = বেগুনি, নী নীল, আ = আকাশি, স = সবুজ, হ = হলদে, ক = কমলা, লা = লাল।

রামধনুর রঙ মনে রাখার আরও একটি শব্দ হল VIBGYOR— ‘ভিজিওর’। কথাটা মনে রাখলেই রামধনুর সাতটা রঙ পরপর মনে পড়ে যাবে।

V – Violet = বেগুনী

I – Indigo = ঘন নীল

B – Blue = আকাশি

G – Green = সবুজ

Y – Yellow = হলুদ

O – Orange = কমলা

R – Red = লাল

সরল অঙ্ক করার ধাপগুলো মনে রাখার সরল উপায় BODMAS ‘বদমাশ’ শব্দটি মনে রাখা।

B – ব্রাকেট

O – অফ

D – ডিভিশন

M – মাল্টিপ্লিকেশন

A –  অ্যাডিশন

S – সাবট্রাকশন

এইসব মনে রাখার পদ্ধতি আদৌ সামগ্রিকভাবে স্মৃতিশক্তির পরিচয় নয়। মনে রাখার জন্য নতুন নতুন নানা পদ্ধতি বা ফরমুলা তৈরি করা চলছে। এর কোনও বাঁধা-ধরা নিয়ম নেই। ধরুন, আপনাকে বেশ কয়েকটা জিনিস মনে রাখতে হবে। প্রত্যেকটা জিনিসকে মনে মনে দেখুন। তারপর কল্পনাকে কাজে লাগিয়ে পরের জিনিসকে মনে মনে দেখে আগের জিনিসটার সঙ্গে যুক্ত করুন। উদাহরণ দিলে সুবিধে হবে। যেমন, বউ বললেন, ইলেকট্রিক বিলটা অবশ্যই আজই দিও। লাস্ট ডেট। মাটন আনবে, লন্ড্রি থেকে শাল-ব্লেজারগুলো এনো। আর হ্যাঁ ‘মেডিকাসে’ ওষুধের লিস্টটা দিয়ে এস।

আসুন এবার দেখুন, কীভাবে মনে মনে দেখব বা ‘ভিস্যুয়ালাইজ করব, তারপর কল্পনা বা ইমাজিনেশনের সাহায্য নেব। শেষে একটার সঙ্গে আর একটাকে যুক্ত করব বা অ্যাসোসিয়েশনের কাজটা সমাধা করব।

প্রথমে ইলেকট্রিক বিল। ভাবতে থাকুন, টিভি খুলেছেন। টিভিটায় দেখা যাচ্ছে একটা লোকের মুখ থেকে বিশাল একটা বিলের লিস্ট বেরিয়েই চলেছে। এবার মাটন। বিলগুলো খেতে শুরু করল কয়েকটা ছাগল ও ভেড়া। লন্ড্রি। ভেড়াগুলোর লোম কেটে নিচ্ছে কয়েকজন। লোমগুলো মেশিনে দিতেই শাল ও ব্লেজার তৈরি হয়ে বের হচ্ছে। ওষুধ। লোমের গুঁড়ো নাকে যেতেই অ্যালার্জির কাশি শুরু হল। ওষুধ না খেলে কাশি চলবেই।

এটা একটা পদ্ধতি। কিন্তু একমাত্র পদ্ধতি নয়। আপনি ইলেকট্রিক, মাংস, লন্ড্রি, ওষুধ চারটে শব্দকে আরও বিচিত্র ও সুন্দর করে দৃশ্যে আনতে পারবেন। তারপর কল্পনার সাহায্যে পরের শব্দের সঙ্গে যুক্ত করতে পারবেন। কিন্তু এরও একটা লিমিটেশন আছে। এভাবে একটা গোটা অক্সফোর্ড ডিকশনারি একবার শুনেই মুখস্থ করে ফেলার দাবি করলে আমাদের বিদ্যেবুদ্ধিতে হোঁচট খেতেই হয়। বিশ্বরূপের নাকি দাবি, একবার শুনেই একটা গোটা ডিকশনারি স্মৃতিতে ধরে রাখতে পারেন ।

আসুন বিশ্বরূপ দর্শনের আগে স্মৃতি নিয়ে একটু আলোচনা সেরে নিই ।

বিস্ময়কর স্মৃতি নিয়ে দু-চার কথাঃ

বেদ রচিত হয়েছিল ১৫০০ থেকে ১০০০ খ্রিস্টপূর্বে। সে-যুগের ঋষিরা বেদকে লিপিবদ্ধ না করে কণ্ঠস্থ করে রাখতেন। বিপুল সংখ্যক শ্লোকগুলো তাঁরা যে অসাধারণ স্মৃতির মাধ্যমে বিশুদ্ধ উচ্চারণে, সুর ও ছন্দ বজায় রেখে কণ্ঠস্থ রেখেছিলেন, তা বাস্তবিকই অতি-বিস্ময়কর। সুর ও ছন্দ মনে রাখতে সাহায্য করে।

প্রাচীন যুগে স্মৃতির সাহায্যেই গুরু শিক্ষাদান করতেন। শিষ্যরাও তা স্মৃতিতেই ধরে রাখতেন এবং পরবর্তীকালে স্মৃতিকে কাজে লাগিয়েই শিক্ষা দিতেন। স্বভাবতই সে যুগের পণ্ডিত ও শিক্ষাগুরুদের স্মৃতিচর্চার মধ্যে দিয়ে হয়ে উঠেছিল অসাধারণ। তাঁদেরই কিছু কিছু প্রচ্ছন্নভাবে উপস্থিত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ (recessive) জিন বিবর্তন পরম্পরায় বাহিত হয়ে বহু প্রজন্ম পরে কোনও ব্যক্তির মধ্যে এসে থাকতে পারে। কিন্তু এই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ জিন ঋষিরা পেয়েছিলেন কোন্ পূর্বপুরুষের থেকে? আসলে ওঁরা শ্লোকগুলো স্মৃতিতে ধরে রাখতে তীব্রভাবে আগ্রহী ছিলেন এবং প্রয়োজনে স্মৃতিতে ধরে রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন।

এত দীর্ঘ সময় কি জিন প্রচ্ছন্নভাবে নিজ বৈশিষ্ট্যকে বজায় রাখতে সক্ষম? এই প্রশ্নের উত্তরে এই তত্ত্বে বিশ্বাসী মনোবিজ্ঞানীরা উদাহরণ হাজির করেন—অনেক শিশু জন্মায় মনুষ্যেতর প্রাণীর অঙ্গ নিয়ে—যেমন ছোট্ট ‘লেজ’। এটি একটি দৃষ্টান্ত। তাঁদের মতে মনুষ্যেতর যে প্রাণীটি অতীতে ছিল, তারই প্রচ্ছন্ন জিনের বর্তমান উপস্থিতিই এর জন্য দায়ী ।

একান্ত প্রয়োজনে ঋষিরা বা গুরুরা শাস্ত্রকে স্মৃতিতে ধরে রাখতেন ; তেমন উদাহরণ এ যুগে আমাদের দেশে বিরল হলেও অসম্ভব নয়। বিদেশে প্রচুর উদাহরণ তো আছেই। গত শতকের আটের দশকে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে তুমুল আলোড়ন তুলেছিলেন কর্নাটকের যুবক রাজেন শ্রীনিভাসন মহাদেবন। অঙ্ক শাস্ত্রে ‘পাই’ (গ) এর অর্থ বৃত্তের পরিধিকে ব্যাস দ্বারা ভাগের ফল । এই ফল প্রায় ২২+৭ এবং মোটামুটি ধরে নেওয়া হয় সংখ্যাটি ৩.১৪। কারণ দশমিকের পর সংখ্যার শেষ নেই। ৩.১৪১৫৯২৬৫৩৫ এভাবে চলতেই থাকবে। রাজন ১৯৮১ সালে ৫ জুলাই গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড-এর নেওয়া পরীক্ষায় দশমিকের পর ৩১,৮১১ পর্যন্ত সংখ্যাগুলো একের পর এক বলে গেছেন নির্ভুলভাবে স্মৃতি থেকে। সময় লেগেছিল ৩ ঘণ্টা ৫৯ মিনিট। প্রতি মিনিটে রাজন বলেছিল গড়ে ১৫৬.৭টি করে সংখ্যা। কী অসম্ভব দ্রুতগতিতে বলেছিল, ভাবতে অবাক হতে হয়। এখানেই রাজনের বিস্ময়কর স্মৃতির শেষ নয়, ও উল্টো দিক থেকেও ‘পাই’ বলে যেতে পারেন।

রাজেন শ্রীনিভাসন মহাদেবন

রাজন-বিস্ময় এখানেও শেষ নয়। ‘গীতা’ রাজনের মুখস্থ। স্মৃতি থেকে বলে যেতে পারেন ব্র্যাডমানের লেখা ‘ফেয়ারওয়েল টু ক্রকেট’ বইটির প্রতিটি লাইন, ভারতীয় রেলওয়ের ‘টাইম টেবিল’ ওঁর কণ্ঠস্থ। দূরত্ব, ভাড়া ও অন্যান্য তথ্য সবই স্মৃতি থেকে যখন তখন আহরণ করতে পারেন।

বিদেশের প্রচুর উদাহরণ থেকে একটি দিই। জাপানের হিদেয়াকি টোমোওরি ১৯৮৭ সালে রাজনের গিনিস রেকর্ড ভেঙে বলেছেন দশমিকের পর ৪০ হাজার পর্যন্ত সংখ্যা।

সব কিছু ছাড়িয়ে বিশ্বরূপ দাঁড়িয়ে

বিস্ময়কর স্মৃতির কথা আলোচনা করতে গিয়ে যেসব উদাহরণ টেনে এনেছি, সে-সবেরও একটা পদ্ধতি আছে। বেদের যুগ থেকে দীর্ঘ কাল পর্যন্ত ছন্দ বা গানের মধ্য দিয়ে কাহিনি, নীতিজ্ঞান ইত্যাদি স্মৃতিতে ধরে রাখা হত। সুর-ছন্দ কোনও বিষয়কে স্মৃতিতে ধরে রাখার পক্ষে সহায়ক ভূমিকা নেয়। এ ছাড়াও কিছুটা করে অংশ মুখস্থ করতে করতে এক সময় পুরোটাই মুখস্থ করে ফেলা সম্ভব। তবে তার জন্য চাই মুখস্থ করার প্রতি আগ্রহ, প্রয়োজনীয়তা ও নিষ্ঠা। কিন্তু কেউ যদি দাবি করে, একবার শুনেই আশি হাজার শব্দ মুখস্থ করতে পারেন, তবে সন্দেহের চোখে দেখুন। নিশ্ছিদ্রভাবে, নিরপেক্ষতার সঙ্গে দাবিদারের পরীক্ষা নিন।

প্রশ্ন উঠতেই পারে, দুর্বল স্মৃতির মানুষও কি চেষ্টা করলে অনেক কিছুই মুখস্থ করতে পারবে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে ‘স্মৃতি’ নিয়ে আলোচনা জরুরি।

‘স্মৃতি’ বিষয়টা কী?—এ নিয়ে একটু আলোচনা করে নিলে বিশ্বরূপকে বুঝতেও সুবিধে হবে।

‘দুর্বল স্মৃতি’ বলে কিছু নেই, ঘাটতি শুধু স্মরণে

একটা কথা বলি। অনেকের কাছেই হয়ত অদ্ভুত শোনাবে—স্বাভাবিক মস্তিষ্ক কোষের অধিকারী মানুষদের ক্ষেত্রে ‘দুর্বল স্মৃতি’ বলে কিছু নেই। আমাদের স্মৃতি-শক্তির একটা পর্যায় ‘সংরক্ষণ’ (Retention)। শেষ পর্যায়ে আছে স্মরণ (Recall)। যা দেখি, যা শুনি সেসব সংরক্ষণের বিষয়ে আমাদের কারও কোনও ঘাটতি নেই। স্মরণের ক্ষেত্রেই দেখা যায় আমাদের নানা ধরনের ত্রুটি।

আমার কর্মক্ষেত্রে একটি ছেলে ঘুরে ঘুরে আমাদের চা দিত। নাম নির্মল। প্রতিদিন দেড়শো মানুষকে চা খাওয়াত। কেউ নিতেন এক কাপ, কেউ দু’কাপ, কেউ অভ্যাগতকে অভ্যর্থনা জানাতে নিতেন পাঁচ কাপ। প্রতিদিনই প্রায় সকলের ক্ষেত্রেই হিসেবেরও তারতম্য হত। কাল যিনি এক কাপ নিয়েছিলেন, আজ তিনি হয় তো নিয়েছেন তিন কাপ। ‘টি-বয়’ ছেলেটি প্রত্যেকের হিসেব স্মৃতিতে ধরে রাখত এবং প্রয়োজনের সময় স্মরণ করতে পারত। এমনকী সে পাঁচ কাপের হিসেব দিলে যদি কেউ অভ্যাগতের কথা ভুলে তিন কাপ নিয়েছেন বলে জানাতেন, ‘টি বয়’ ‘ছেলেটিই মনে করিয়ে দিত—‘এগারোটা নাগাদ নীলশার্ট সাদা প্যান্ট পরা এক ভদ্রলোককে এক কাপ চা খাওয়ালেন, দুটো তিরিশ নাগাদ একটা ঝাঁকড়া চুলো ইয়ং ছেলেকে খাওয়ালেন এক কাপ ৷’ এমন অসাধারণ স্মৃতির অধিকারী ছেলেটির দৃঢ় ধারণা, ওর স্মৃতি খুবই দুর্বল তাই লেখাপড়া শেখা হয়ে ওঠেনি।

আমার শৈশব কেটেছে পুরুলিয়া জেলার ছোট্ট রেল-শহর আদ্রার বড়-পলাশখোলায় । রোজকার দুধ নেওয়া হত একটি আদিবাসী প্রবীণার কাছ থেকে। তিনি ছিলেন নিরক্ষর। কিন্তু কবে কতটা বাড়তি দুধ রাখতাম, তার পাক্কা হিসেব রাখতেন। ওঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “তুমি তো আরও অনেক বাড়িতেই দুধ দাও, না লিখে সবার বাড়ির হিসেব রাখো কী করে।”

প্রবীণা জানিয়েছিলেন,“কী করে আবার? সে তো মনে থেকেই যায়।”

সে সময় প্রবীণার উত্তরে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম, ভেবেছিলাম মা মুদির দোকান থেকে সাতটা জিনিস আনতে বললে ছ’টা আনি, একটা ভুলে যাই, আর ও এত বাড়ির এত হিসেব মনে রাখে কী করে? এমন অনেক মা-বাবা সন্তানকে নিয়ে আমার কাছে কাউন্সেলিং-এর জন্য এসেছেন, সমস্যা—সন্তানের দুর্বল স্মৃতিশক্তি। প্রচুর পড়ে। কিন্তু মনে থাকে না। পরীক্ষার ফল খারাপ হচ্ছে।

সেইসব সন্তানদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, ওদের অনেকেই জীবন্ত তথ্যভাণ্ডার। কেউ হেডেন, ধোনি, যুবরাজ, সৌরভ, ব্রেট লি, পন্টিং-এর ব্যাটিং, বোলিং-এর তথ্য গড়গড় করে বলে চলেছে, কেউ বা ব্রুস লি, সিলভেস্টার স্ট্যালোন, রানি, ঐশ্বর্য, আমির ইত্যাদির হাঁড়ির খবর উগরে দিচ্ছে, কেউ বা ব্যারোটা জেমস, ভাইচুং-এর সব তথ্য ঠোটস্থ করে বসে আছে। এরপর ওদের কাউকেই কি আমরা দুর্বল স্মৃতির জন্য অভিযুক্ত করতে পারি? ওরা সেইসব তথ্যই মনে করে রাখে যা মনে রাখতে ভালোবাসে, অথবা প্রয়োজনে বাধ্য হয়। এমন নজির বহু সহস্র আছে। আপনাদের মধ্যে অনেকেই নিশ্চয়ই এমন উদাহরণ দেখেছেন।

স্বঘোষিত ‘মেমারিম্যান’-কে পরীক্ষা নেবার হোমওয়ার্ক

আমাদের সমিতির কয়েকজনকে ফোন করলাম। মেমারিম্যানের ৪ তারিখের ৩.৩০ মি.-এর শোতে হাজির হতে বললাম। স্থান : ইউনিভার্সিটি ইন্সটিটিউট হল। ওরা প্রত্যেকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসবেন। আমার আশেপাশে থাকবেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বারিদবরণ চক্রবর্তী, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জয়ব্রত ভাদুড়ি, মানসী মল্লিক, মেরিন ইঞ্জিনিয়র সৌরভ দাশগুপ্ত ও হিউম্যানিস্টস্ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুমিত্রা পদ্মনাভন

সুমিত্রা ও সৌরভকে ১৫ থেকে ২০টা অপ্রচলিত ইংরেজি শব্দ কাগজে লিখে রাখতে বললাম । বারিদবরণ অপ্রচলিত বাংলা শব্দ লিখে রাখবে গোটা পনেরো। আমি যখন বলব, তখন সেই শব্দ তালিকা বিশ্বরূপের হাতে তুলে দেবেন ওঁরা তিনজন।

‘আজকাল’ পত্রিকা অফিসে খবর দিয়েছি—বিশ্বরূপের স্মৃতিশক্তির পরীক্ষা নিতে যাচ্ছি। বিকেল তিনটে নাগাদ আমি, বারিদ ও সুমিত্রা ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটে পৌঁছালাম। টিকিট কাটার লাইনে দেখতে পেলাম আমাদের সমিতির রানা, মানসী,জয়ব্রত, প্রণব, সমীরদা, অরূপ, অনিন্দিতা ও বিপাশাকে। এখানে ওদের ভূমিকা অবজারভারের। আমি, বারিদ, সুমিত্রা ও সৌরভ প্রথম ও দ্বিতীয় সারিতে বসার চেষ্টা করব। অন্যরা হল জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসবে, যেন কেউ কাউকে চেনে না ।

টিকিট তিরিশ টাকা। শো দেখে যারা স্মৃতি প্রখর করতে চাইবেন, তাঁদের দক্ষিণা মাত্র আড়াই হাজার টাকা। হলের ভাড়া ১২ হাজার টাকা। প্রথম শোতে নাকি হাজার দর্শক হয়েছিল। তবে কি প্রতি শোতে আয় ৩০ হাজার টাকা? ৪টে শো থেকে আয় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা? শতকরা ২৫ জন দর্শক স্মৃতি প্রখর চাইলে ৪টে শো থেকে দক্ষিণা বাবদ আয় ২৫ লক্ষ টাকা। এক দিনের শো থেকে মোট আনুমানিক আয় ২৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। খরচ একদিনের শো-তে হল ভাড়া ১২ হাজার, বিজ্ঞাপনে ১ লক্ষ আনুমানিক, পুলিশ-মস্তান-নেপথ্যবাহিনী বাবদ খরচ প্রতিদিন ৩ লক্ষ ধরলেও আনুমানিক ব্যয় দাঁড়ায় ৪ লক্ষ ১২ হাজার।

একদিনের শো থেকে নিট আয় ২২ লক্ষ টাকা।

প্রায় সাড়ে-৩টে বাজে, কিন্তু টিকিট বিক্রি হচ্ছে না। কেন টিকিট বিক্রি বন্ধ? কাউন্টারের লোকদের নাকি কারণ জানা নেই। শুধু জানালেন-ব্যবস্থাপকদের তরফ থেকে টিকিট বিক্রি বন্ধ করতে বলা হয়েছে।

ওখানে দেখা পেলাম ‘আজকাল’ পত্রিকার সাংবাদিক অমিতাভ সিরাজ ও চিত্রসাংবাদিক শিখর কর্মকারের। অমিতাভ জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্যাপার, আপনি যে আসছেন এটা কী ঢাক-ঢোল পিটিয়ে প্রচার করেছেন? আপনার আসার খবর বোধহয় বিশ্বরূপ পেয়েছেন। আজ আর শো হয় কি না দেখুন।

ভাষা ও সাহিত্যের প্রকাশক স্বপন বিশ্বাস ইউনিভার্সিটি ইন্সটিটিউট হলেরও একজন কর্মকর্তা। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “গোলমাল-টোলমাল হবে নাকি?”

–“কেন এমনটা মনে হল? কোনও খবর আছে?”

-“কয়েকজন লোকাল মস্তান এসেছে, পুলিশও হাজির হয়ে যাবে আশা করছি। তোমাকেও এখানে দেখছি। তাইতেই মনে হল তোমাকে ‘রাফ ট্যাকেল’ করার ব্যবস্থা নিয়েছে স্মৃতি বাড়ানো পার্টিরা। এত লাইন, তাও প্রথম শোয়ের পর দ্বিতীয় শো’য়ের টিকিট বিক্রি করছে না। তোমার কি মনে হয় বিশ্বরূপ লোক ঠকাচ্ছে?” স্বপন বললেন।

–“আরে না না। বিশ্বরূপ লোক ঠকাচ্ছে এমন ভাবনা নিয়ে আসিনি। আমরা শুধু ওর শো দেখতে এসেছি।” বললাম।

ইতিমধ্যে আমাকে ঘিরে আরও কয়েকজন প্রকাশক ও বইবিক্রেতা হাজির। তাঁদের সবারই এক সুর—বিশ্বরূপ ফোরটুয়েন্টি হলে ওর বুজরুকি ফাঁস করুন। ওর ভাড়াটে মস্তানরা আপনার উপর হামলা চালালে কাউকে দিয়ে খবর পাঠান, অথবা মোবাইলে খবর দিন। আমরা এখানে কোনও মস্তানি করতে দেব না।

বিশ্বরূপের শো

শো শুরু হল নির্ধারিত সময়ের বহু পরে। বিশ্বরূপ এলেন এবং ট্রেনের সেলসম্যানের ঢংয়ে ইংরেজি-হিন্দি-বাংলা মিশিয়ে কথার ফুলঝুরি ফোটাচ্ছিলেন। বলছিলেন, শুনে স্মৃতি রাখার চেয়ে দেখে স্মৃতিতে রাখা অনেক সোজা।

একসময় নিজের ডান দিকের দ্বিতীয় ও প্রথম সারিতে বসা একের পর এক দর্শককে যে কোনও জিনিসের বা মানুষের নাম, ফোন নম্বর, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর বলে যেতে বললেন । একজন করে বলছেন এবং সেই কথাগুলো বা সংখ্যাগুলো মুখে উচ্চারণ করতে করতে হোয়াইট বোর্ডে দ্রুত লিখে ফেলছিলেন বিশ্বরূপ। বিশাল দুটি হোয়াইট বোর্ড লেখায় ভর্তি হয়ে গেল একসময়। এবার বোর্ডের দিকে পিছন ফিরে দাঁড়ালেন। বোর্ডের লেখাগুলো জায়েন্ট স্ক্রিনে ভেসে উঠল। না, সেই লেখা দেখার কোনও সুযোগ নেই বিশ্বরূপের। তারপর সেই বিশেষ সময় এল, যখন সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিশ্বরূপ একের পর এক শব্দ ও সংখ্যাগুলো ঠিকঠাক বলে গেলেন। এমনকী, বলে যেতে লাগলেন উল্টোদিক থেকেও। সত্যিই অবাক হওয়ার মতোই ঘটনা ।

একটা খটকা লাগল। ওর স্মৃতি বাস্তবিকই যদি এতই প্রবল হয়, তবে কেন আমার হাজির থাকার ঘটনায় ঘাবড়ে যাবেন! তবে কি যেমনটা দেখছি ও শুনছি, তেমনটা সত্যি নয়? কোনও একটা কৌশল রয়েছে? কৌশলটা আমার কাছে ধরা পড়ার ভয়েই কি ওর এত বেশি সতর্কতা?

স্মৃতি-শক্তি ও প্রতিভা এক নয়

কাশী থেকে ভাটপাড়া সর্বত্রই টোলে গেলে দেখা মিলবে বহু শ্রুতিধরের। ছাত্র জীবনেও অনেককে দেখেছি, যারা দারুণ মুখস্থ করতে পারত। পরীক্ষার খাতায় সেসব উগরে দিয়ে আসত। টোল থেকে কলেজ জীবনে দেখা ওদের ‘স্মৃতিধর’ বলে মেনে নিতে অসুবিধে নেই। কিন্তু ‘প্রতিভাধর’বলে মেনে নিতে অসুবিধে আছে। একজন স্মৃতিশক্তির অধিকারী ছাত্র যখন তার লেখায় মৌলিকত্ব হাজির করতে পারে, নতুন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিতে পারে, এগিয়ে থাকা চিন্তাশক্তির পরিচয় দিতে পারে, তখন তাকে প্রতিভার অধিকারী বলা যায়।

আবার অসাধারণ স্মৃতিশক্তির অধিকারী না হয়েও চিন্তাবিদ,

প্রতিভাধর হিসেবে পরিচিত হতে পারেন। সমরেশ বসু

থেকে ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় কেউ-ই অসাধারণ স্মৃতিধর

ছিলেন না। ডাঃ রায় তো পরিচিত জনদের ও

নাম ভুল করতেন। তারপরও তাঁদের

প্রতিভা ছিল প্রশ্নাতীত।

আমাদের আলোচনার প্রসঙ্গটা বেঁধে রেখেছি বিদ্যা-সংক্রান্ত প্রতিভা ও স্মৃতিশক্তির উপর আলোচনা যদি আরও একটু ছড়িয়ে দিই, তাহলে ব্যাপারটা কেমন দাঁড়ায় ?

মারাদোনার ফুটবল প্রতিভা, উত্তমকুমারের অভিনয় প্রতিভা, লতাজির সংগীত প্রতিভা, গণেশ পাইনের পেইন্টিং প্রতিভাকে মুখস্থ বিদ্যার সঙ্গে জুড়বেন কেমন ভাবে ?

শুধু মুখস্থ বিদ্যার উপর নির্ভর করে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডির মধ্যেও বেশি দূর এগোনো অসম্ভব। প্রচলিত শিক্ষার ক্ষেত্রেও কৃতী হতে গেলে বইয়ের লেখা ও নাটকে আত্মস্থ করার দরকার হয়। মৌলিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার মতো চিন্তাশক্তির অধিকারী হতে মনোযোগ ও বোঝার ক্ষমতাই হল প্রথাগত শিক্ষা থেকে জ্ঞানার্জনের পথ।

প্রতিভা বিকাশে মনোযোগ, বোধ ও প্রেরণার ভূমিকাঃ

মনোযোগ ও বোঝার ক্ষমতা-এর সঙ্গে প্রেরণা ( motivation) প্রতিভা তৈরিতে বড় ভূমিকা নেয়। এই তিনটি ক্ষেত্রেই প্রধানত অনেকগুলো বিষয় বা factor কাজ করে। যেমন : মনোযোগ আসে গভীরতর ভালোলাগা ও মানুষের প্রেরণা থেকে। আমার জন্ম সংগীত পরিবারে হলে সংগীতে আগ্রহ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। সচিনকে সচিন বানাবার জন্য ক্রিকেট গুরু রমাকান্ত আচরেকরের অবদান অনস্বীকার্য। সচিনের ক্রিকেটের প্রতি প্রেমের অন্যতম কারণ যদি হয় মুম্বাইবাসী হওয়া, প্রতিদিন ক্রিকেট প্র্যাকটিস দেখার সুযোগ পাওয়া, তবে আরও একটি অন্যতম কারণ অবশ্যই গুরু রমাকান্ত আচরেকর। সঙ্গে মোটিভেশন তাঁকে এই জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে। আপনি ইংরাজি সাহিত্যে অনার্স নিয়েছেন। ক্লাসের লেকচার শুনে আপনি নিরাশ। অধ্যাপক যা পড়াচ্ছেন, সে বিষয়ে তাঁর নিজের বিদ্যে-বুদ্ধি আদৌ পরিষ্কার নয়। প্রাইভেট টিউটরও তথৈবচ। ওঁদের বিদ্যে-বুদ্ধির উপর আপনি আস্থা রাখতে পারছেন না। ওঁদের মুখস্থ করে পড়ানো আপনার মনোযোগ টানতে পারছে না । আবার কোনও কোনও শিক্ষক বা অধ্যাপক বিষয়কে এমন প্রাঞ্জল করে, আকর্ষণীয় করে বোঝান যা ছাত্রদের মনোযোগ আকর্ষণ করে।

মোটিভেশন বা প্রেরণা এমন একটা বিষয় যার অনুপস্থিতিতে প্রতিভার বিকাশ অসম্ভব। উদাহরণ হিসেবে আমরা কয়েকটি বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে বেছে নিতে পারি। শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধি। রাজনৈতিক জীবনে তিনি ছিলেন একজন ‘ডিক্টেটর’। দলে ও সরকারে তাঁর ইচ্ছে-ই ছিল শেষ কথা ৷

শ্রীমতী গান্ধি গ্র্যাজুয়েটও ছিলেন না। কিন্তু রাজনীতিতে ‘ডিক্টেটর’

হয়ে ওঠার মোটিভেশন তাকে স্বজনপোষণ বা চাটুকার

পোষণের দিকে ঠেলে দিয়েছে। দলের ভিতর কোনও সৎ

বা ব্যক্তিত্বপূর্ণ রাজনীতিকের উত্থান দেখলে তাঁদের

ডানা হেঁটেছেন নির্দয়ভাবে। এইগুলো করতে

পেরেছেন সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত

করার মোটিভেশন থেকে।

২২ অক্টোবর ২০০৫। বিহারে লালু সাম্রাজ্যের পতন হল । জাল ভোটার লিস্ট, ছাপ্পা ভোট—ভোট কেন্দ্রে বাহুবলিদের দাপাদাপি—বুথ জ্যাম যুগের পতন ঘটল। বিহারের মানুষ দীর্ঘ বছরের পর এই প্রথম স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করলেন। জয়ী নীতীশ কুমারকে নিয়ে বিহার-জনতা যতটা উচ্ছ্বসিত, তার চেয়েও উচ্ছ্বসিত নির্বাচনের স্পেশাল অফিসার কে জে রাও-কে নিয়ে। বিহারের আকাশ-বাতাস সবচেয়ে বেশি মুখরিত হয়েছে কে জে রাও-এর জয়ধ্বনিতে। জনাদশের সঠিক প্রতিফলনের রূপকার কে জে রাও না থাকলে দুর্নীতি ও গণতন্ত্র লুটেরাদের রাজত্ব-ই চেপে বসে থাকত বিহারে—এমনটাই বিশ্বাস আমবিহারিদের।

কে এই কে জে রাও? নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পরামর্শদাতা। বৃদ্ধ। বিহারে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে যা করেছেন, তাকে অসাধ্য সাধন বললে একটুও বাড়াবাড়ি হয় না। রাত-দিন এক করে দিয়ে খেটেছেন। ১৮ লক্ষ জাল ভোটারের নাম বাতিল করেছেন। লালু-রাবড়ির ক্রীতদাস আমলাদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলেন। লালু-রাবড়ির অনুগত বিহার পুলিশের হাত থেকে বুথ পাহারার দায়িত্ব কেড়ে নিয়ে তা দিয়েছেন আধা সামরিক বাহিনীকে। পুলিশ ও প্রশাসনের খামতি দেখলে কড়া পদক্ষেপ নিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন দুর্নীতি আর বাহুবলিদের যুগ শেষ করতে চলেছেন। নির্বাচনের আগে বিহারের প্রচার-মাধ্যমগুলো সশস্ত্র ভোট-লুটেরাদের ব্যাপক প্রস্তুতির ছবি দেখিয়েছে। কিন্তু দেড় মাস ধরে ভাগে ভাগে চলা ভোটে ভোটলুটেরারা গর্তে ঢুকে গেছে কে জে রাওয়ের ভয়ে। হেলিকপ্টারে আধা-সামরিক বাহিনী নিয়ে চক্কর কেটেছেন বিভিন্ন বুথে। হেলিকপ্টার থেকে নেমেই দৌড়েছেন বুথে। এলাকার বাসিন্দারাই ‘হিরো’-কে মোটর বাইকের পিছনে বসিয়ে পৌঁছে দিয়েছেন গন্তব্যস্থলে।

বৃদ্ধ বয়সে এমন অসম্ভবকে সম্ভব করলেন কী করে? মোটিভেশন। দুঃশাসনের রাজত্বেও গণতন্ত্ৰ আনতে হবে—এই মোটিভেশন।

অপরাধী মানসিকতার কেউ যখন পৃথিবী কাঁপানো অপরাধী হয়ে ওঠে, তখন তার পিছনেও এক বা একাধিক মোটিভেশন থাকে।

রবীন্দ্রনাথের জীবনে অনেক নারী-ই তাঁর বিভিন্ন সৃষ্টির প্রেরণা ছিলেন ।

নারী অনেকের জীবনেই প্রেরণা হয়েছেন। প্রেরণা হয়েছেন পুরুষ। প্রেম অনেককেই মোটিভেট করেছে; তাঁরা শিল্পী, লেখক, চিন্তাবিদ, সমাজবিজ্ঞানী থেকে বিপ্লবী—সব-ই হতে পারেন।

ফিরে যাই বিশ্বরূপের শো-তে

বিশ্বরূপ এবার বললেন, তাঁর এক ছাত্রী এই হলে হাজির আছেন। মাত্র কিছুদিনের চেষ্টাতেই স্মৃতি কতটা বাড়াতে পেরেছেন, তারই নমুনা দেখাবেন।

আমি স্টেজে উঠে পড়লাম। খালি গলায় উঁচুস্বরে বিশ্বরূপকে বললাম, আপনার প্রদর্শনী যতটা দেখলাম, তা অবাক হওয়ার মতো। আমার একটি প্রশ্ন আছে। আপনি এতক্ষণ যা দেখালেন তা কি শুধুই বিশেষ কোনও পদ্ধতির অনুশীলনের ফল? নাকি কোনও যন্ত্রের সাহায্যে লোক ঠকাচ্ছেন?

আমার কথা পুরোটা শেষ করার আগেই বিশ্বরূপের কয়েকজন ষন্ডামার্কা ‘ভলেনটিয়ার’ স্টেজে উঠে পড়লেন আমাকে নামাতে। কিন্তু তাঁদের পক্ষে কাজটা কঠিন ছিল। কারণ দর্শকদের অনেকেই আমাকে চিনতে পেরেছেন। তাঁরা চিৎকার করতে লাগলেন, প্রবীর ঘোষের বক্তব্য আমরা শুনতে চাই। কয়েকজনের চিৎকারটা এতই দ্রুত গোটা হলের দর্শকদের চিৎকারে পরিণত হল যে বিশ্বরূপ ও তাঁর দলবল পিঠ বাঁচাতে আমার হাতে মাউথপিস তুলে দিতে বাধ্য হলেন।

আমি বললাম, সম্পূর্ণ খোলা মনে যুক্তিবাদী সমিতির তরফ থেকে আমরা দেখতে চাই বিশ্বরূপ যে স্মৃতিশক্তির দাবি করছেন, তা কতটা সত্যি। আপনাদের অনেকেরই নিশ্চয়ই মনে আছে ১৯৮৯ সালে ৭ বছরের মেয়ে মৌসুমী চক্রবর্তীকে নিয়ে কী বিশাল আলোড়ন তৈরি হয়েছিল। রেলশহর আদ্রার ওই ছোট্ট মেয়েটি গোটা ভারতের বিভিন্ন ভাষাভাষী পত্র-পত্রিকার হেডলাইন হয়ে উঠেছিল। সানন্দা’র ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯ সংখ্যায় মৌসুমী নিয়ে ‘বিশেষ রচনা’ প্রকাশিত হয়। রচনার শিরোনাম ছিল ‘অবাক পৃথিবীর অবাক মেয়ে’। রচনার রচয়িতা সুজন চন্দ জানিয়েছিলেন, মৌসুমী এখন গবেষণা করছে কয়লাকে সালফার মুক্ত করতে। এই কাজ সফল হলে বায়ুদূষণ থেকে মুক্ত হবে পৃথিবী। মৌসুমীর ধারণা ও সফল হবেই। নোবেল প্রাইজ পাবে সাড়ে ৯ বছর বয়সের মধ্যেই।

১৩ আগস্ট ১৯৮৯ আনন্দবাজার পত্রিকায় সাতটি ছবিসহ মৌসুমীকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন লেখেন বিশিষ্ট বিজ্ঞান লেখক বিমল বসু। লেখাটিতে লেখক মৌসুমীকে বিস্ময় বালিকা, এক কথায় ‘প্রডিজি’ বলে ঘোষণা করেন। তিনি লিখেছিলেন, “এখন তার বয়েস ঠিক সাত । কিন্তু ইতিমধ্যেই বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি—এই তিনটি ভাষায় যেমন বিস্ময়কর তার দক্ষতা, তেমনই পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত ইত্যাদি বিষয়েও সে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে।”

সে সময়কার বিখ্যাত বাংলা মাসিক ‘আলোকপাত’ মৌসুমীকে নিয়ে প্রচ্ছদকাহিনী প্রকাশ করে সেপ্টেম্বর ১৯৮৯ সালে। শিরোনাম—‘বিস্ময় বালিকা মৌসুমী: সাত বছরের সরস্বতী’। প্রতিবেদক জানিয়েছিলেন দু’দিনে দীর্ঘ ১৮ ঘন্টা ইন্টারভিউ নিয়ে এই লেখা তৈরি। সাহিত্য, সংস্কৃতি, সিনেমা, রাজনীতি, দর্শন, বিজ্ঞান, রাষ্ট্রনীতি, সমাজনীতি, চিত্রকলা, আধ্যাত্মবাদ—সবেই মৌসুমীর জ্ঞান ছিল প্রতিবেদকের চেয়ে অনেক উঁচুতে। টাইপে ইংরেজিতে ৯০ স্পিড।

দূরদর্শন থেকে ইংরেজি পত্রিকাগুলোতে ওকে নিয়ে হইচই। মৌসুমী বাংলা, হিন্দি, ইংরেজি, জার্মান ও ডাচ ভাষা জানে মাতৃভাষার মতোই।

আমি খোলা মনে মৌসুমীর প্রতিভার পরিমাপ করতে গিয়েছিলাম ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ পত্রিকার তরফ থেকে। নিরপেক্ষভাবে পরীক্ষা নিতে গিয়ে দেখলাম, মৌসুমীর গোটা ব্যাপারটাই বিশাল ধাপ্পা। ‘অলৌকিক নয়, লৌকিক’ বইয়ের দ্বিতীয় খন্ডে সেই ধাপ্পার সব কিছুই ডিটেলে দিয়েছি। এখানেও আমি চাই আপনাদের উপস্থিতিতে বিশ্বরূপবাবুর স্মৃতিশক্তির একটা পরীক্ষা নিতে।

কি, আপনারা রাজি ?

গোটা হল কাঁপিয়ে গর্জে উঠল—’হ্যাঁ রাজি।’

আমার আমন্ত্রণে উঠে এলেন সুমিত্রা। ইংরেজি ডিকশনারিতে আছে কিন্তু অপ্রচলিত এমন ১৭টি শব্দের লিখিত তালিকা আমার হাতে তুলে দিলেন।

বিশ্বরূপবাবুকে বললাম, আপনি বললেন, শুনে মনে রাখার চেয়ে দেখে মনে রাখা অনেক সহজ। আপনি যতক্ষণ খুশি এই তালিকার শব্দগুলো দেখুন। এগুলো জোরে উচ্চারণ করে পড়বেন না। তারপর তালিকার শব্দগুলো পরপর বলে যান। ৮০ হাজার না ৮০ লক্ষ শব্দ একবার শুনে মুখস্থ বলে রেকর্ড করেছেন কোনও একটা রেকর্ড বইয়ে। আর আপনাকে দিলাম মাত্র ১৭টা শব্দ। এগুলো বলতে আপনার একটুও অসুবিধে হওয়ার কথা নয় ৷

তালিকাটা বিশ্বরূপবাবুর হাতে তুলে দিলাম। অনেকেই আমার এমন সহজ সরল পরীক্ষায় হয় তো বিস্মিত হয়েছিলেন। তাঁদের বিস্ময় আরও বাড়ল, যখন দেখলেন একটা করে শব্দ মনে মনে অনেকক্ষণ ধরে উচ্চারণ করেই চলেছেন।

পাঁচ মিনিট কাটল, সাত মিনিট কাটল, দশ মিনিট পার হতেই হাতের থেকে তালিকাটা নিয়ে বললাম, “কী হল! এতক্ষণ শয়ে শয়ে শব্দ শুনে স্মৃতি থেকে শব্দের ফুলঝুরি ছোটাচ্ছিলেন। এখন কী হল?”

—“এই শব্দগুলো মানে, ইয়ে…

—“ইংরেজির অন্য একটা তালিকা দিলে পারবেন? অথবা বাংলা তালিকা দিলে?”

—“আমি সৌরভ ও বারিদকে ডাকতেই তাঁরা উঠে এসে দুটি তালিকাই তুলে দিলেন বিশ্বরূপের হাতে। আমি শর্তটা মনে করিয়ে দিলাম, “আপনি কোনও শব্দই চিৎকার করে উচ্চারণ · না করে চোখ বুলিয়ে স্মৃতি থেকে বলুন। এতে ২০টা করে শব্দ আছে।

ইতিমধ্যে অনেক দর্শকই কাগজে শব্দ তালিকা তৈরি করতে শুরু করেছেন। প্রমাদ গুনলেন বিশ্বরূপ। রণে ভঙ্গ দিলেন তিনি। তাঁর বিপর্যস্ত অবস্থা দেখে বিশ্বরূপের মাসলম্যানেরা মঞ্চে উঠে এল। মঞ্চে তখন দর্শকরাও দ্রুত উঠে আসছেন। সে এক লন্ড-ভন্ড অবস্থা

দর্শকদের ক্ষোভ বিস্ফোরিত হল হলেই। টিকিটের টাকা ফেরত দিতে হবে। বিশ্বরূপকে গ্রেপ্তার করতে হবে।

আমি আবার মাইকে। বললাম, টিকিটের টাকা ফেরত পাবেন। বিশ্বরূপকে প্রতারণার অভিযোগ যেন গ্রেপ্তার করা হয়—সেটা আমাদের সকলেরই দাবি। ‘আজকাল’ পত্রিকার সাংবাদিক ও চিত্রসাংবাদিক এই অনুষ্ঠানে হাজির আছেন। কালকের ‘আজকাল’ অবশ্যই পড়ুন। মনে রাখবেন যেখানে প্রতিদিনের রোজগার ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা সেখানে একটা চক্র কাজ করছে। ওরা সত্যিকে ‘মিথ্যে’ আর মিথ্যেকে ‘সত্যি’ বলে চালাতে চাইবে। ওরা পত্রিকাগুলোকে প্রভাবিত করতে চাইবে নানা ভাবে। আপনি আমি যদি মিথ্যের বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়ে রুখে দাঁড়াই তবে জয় আমাদের হবেই। এবার একটু শান্ত হয়ে শুনুন, কীভাবে প্রতারিত করে স্মৃতিধর হিসেবে নিজেকে হাজির করা যায়।

ডঃ অ্যানড্রিজা পুহারিক আমেরিকার বিশিষ্ট বিজ্ঞানী। একশোর উপর নানা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের পেটেন্ট আছে তাঁর। তিনি একটা ছোট্ট যন্ত্রের পেটেন্ট করিয়েছিলেন। একটা দাঁত ভুলে সেই জায়গায় যন্ত্রটি বসানো হয়। যন্ত্রটি বাইরে থেকে পাঠানো তড়িৎ চুম্বকীয় সংকেত ধরে শ্রবণযোগ্য তরঙ্গে পরিণত করে। এই শ্রবণযোগ্য তরঙ্গ দাঁতের স্নায়ুর সাহায্যে মস্তিষ্কে তড়িৎ সংকেত পাঠায়। ফলে কানের সাহায্য ছাড়াই শোনা যায় ।

ইউরি গেলার এক সময় তাঁর তথাকথিত অলৌকিক ক্ষমতা দেখিয়ে পৃথিবীকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন। তাও আবার এক ধরনের ক্ষমতা নয়, নানা ধরনের ক্ষমতা। তারই একটা হল টেলিপ্যাথি। ইউরির সাথি শিপি একটা ঘরে কোনও একটা করে জিনিস দেখতেন, আর ইউরি সেসব জিনিসের নাম বলে যেত।

দু’জনের আত্মবিশ্বাস-ই ওদের বুজরুকি ধরিয়ে দেয়। ইউরির একটা দাঁতের বদলে একটা শ্রবণযন্ত্র ও শিপির কাছে একটা প্রেরক যন্ত্র পাওয়া যায়। শিপি যা দেখতেন তা উচ্চারণ করলে ইউরি শুনতে পেতেন এবং শোনা কথাটাই বলে যেতেন।

একই কৌশল বিশ্বরূপ গ্রহণ করে থাকতেও পারেন। সেই ক্ষেত্রে বিশ্বরূপ জোরে উচ্চারণ করছেন তা রেকর্ড করা হতে পারে। সেই রেকর্ড বাজিয়ে প্রেরক যন্ত্রের সাহায্যে পাঠালে বিশ্বরূপ তা শুনে বলে যেতেই পারবেন। অথবা জায়েন্টস্ক্রিনে দেখে লেখা ও সংখ্যাগুলো প্রেরক যন্ত্রের সাহায্যে কেউ পাঠালে বিশ্বরূপ তা ধরে ঠিকঠাক বলে যেতেই পারবেন!

জোরে জোরে পড়ার সুযোগ দিইনি, লেখার সুযোগও ওঁর ছিল না। ফলটা কী দাঁড়াল দেখলেন তো! ১৭টা শব্দ অনেকক্ষণ দেখেও বলতে পারলেন না।

পাবলিক ডিমান্ডে শো বন্ধ হল। টিকিটের দাম ফেরত দিতে হল। পরের দিন আজকালের প্রথম পৃষ্ঠায় বড় খবর।

লাভের আশায় ওই কৌশল দেখতে ছুটে এসেছিলেন অনেকেই – হলদিয়া কিংবা বর্ধমান থেকেও। ছিলেন ছোটদের সঙ্গে মায়েরাও। হল কর্তৃপক্ষ জানান, ১২ হাজার টাকায় দুটি শোয়ের সময় ভাড়া করেছিল ‘এডুগাইড’ নামে ওই সংস্থা। প্রথম শো অবশ্য নির্বিঘ্নে হল। দ্বিতীয় শো-র শুরুর কিছুক্ষণ পরেই প্রতারণার অভিযোগ তুলে মঞ্চেই প্রতিবাদ জানাতে উঠে পড়েন প্রবীর ঘোষরা এর আগে শুরুতেই নিজেকে দেশের সেরা ‘মেমোরিম্যান’ একটি নামী পানীয় সংস্থায় ‘রেকর্ড হোল্ডার’ ইত্যাদি আখ্যা দিয়ে ফেলেছেন বিশ্বরূপ। হাতে জাদু কলম ‘নেমনিক’। তাই দিয়েই লেখা হচ্ছিল। কখনও মুখে মুখে বলছেন দর্শক শ্রোতাদের জন্মের তারিখ ছিল কী ‘বার’। বিশ্বরূপের নিজের কথায়, ‘৬০০ বছরের ক্যালেন্ডার আমি বলতে পারি। এটা কোনও অসাধারণ ব্যাপার নয়। আপনারাও পারবেন। শুধু একটি কৌশল জানা দরকার।’ কী সেই কৌশল? স্মৃতিকে প্রখর করতে হবে। আর এ জন্য দক্ষিণামাত্র আড়াই হাজার টাকা। গন্ডগোলের শুরু এর পরেই।

বিক্ষোভকারীদের কবলে ‘বুজরুক' বিশ্বরূপ। ছবিঃ শিখর কর্মকার

যুক্তিবাদী সমিতির প্রবীর ঘোষ, বারিদবরণ চক্রবর্তী, জয়ব্রত ভাদুড়ি, মানসী মল্লিক প্রমুখ সদস্য আসন ছেড়ে এগিয়ে আসেন মঞ্চের দিকে। প্রবীর বলেন, আমরা এটাকে ধাপ্পা বলছি না। কিন্তু প্রতারিত হতে চাই না। স্মৃতি বাড়ানো যদি যায়, ভালো কথা। কিন্তু বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণ চাই । লেক টাউনের গৃহবধূ সুমিত্রা দ্মনাভন তখন এগিয়ে এসে ১৭টি ইংরেজি শব্দের চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে বিশ্বরূপকে বলেন, মনে মনে পড়ে আমাদের বলুন। তাহলে বুঝব আপনার ক্ষমতা। নিমেষে ব্লটিং পেপার দিয়ে কেউ যেন শুষে নিয়েছে এমনই মুখ হল বিশ্বরূপের। আমতা আমতা করতে থাকলেন তিনি। আসলে সব ভোঁ-ভোঁ তা বোঝাই গেল। দর্শকরাও ততক্ষণে বুঝে গিয়েছেন বিশ্বরূপের চালাকি। তুমুল চিৎকার, কেউ কেউ বাংলায় কথা বলার দাবিতেও তুমুল হই-চই শুরু করে দিল বিশ্বরূপের উদ্দেশে। না, যুক্তিবাদীদের চ্যালেঞ্জ নিতে পারেননি দেশের সেরা ওই মেমোরিম্যান। বিশ্বরূপের নিজের কথায়, ‘এটা একটা পদ্ধতি। শিখতে হবে। যদি বলেন, আমি পারব কিনা। সত্যি বলছি, আমি নিজেও পারব না।’ শুনেই ক্ষোভে ফেটে পড়লেন দর্শকরা। এতক্ষণ মন্ত্রমুগ্ধের মতো যাঁরা শুনছিলেন, সেই দর্শকরাই এবার টাকা ফেরতের দাবি তুললেন। বিশ্বরূপের দাবি ছিল, তাঁর দেখানো স্মৃতি বাড়ানোর সহজ পদ্ধতি নাকি এক ছাত্রী কোমল শিখে ফেলেছে। দর্শকদের হই-চইয়ে সেই ছাত্রীও পিঠটান দিয়েছে ততক্ষণে। তুমুল হাততালিতে অভিনন্দন কুড়োলেন যুক্তিবাদী প্রবীর ঘোষ। এদিকে, রাতে আজকাল দপ্তরে প্রায় পঁচিশজন লোক এসে জানান, তাঁরাও বিশ্বরূপ রায়চৌধুরির ওই অনুষ্ঠান দেখেছেন। এঁদের অভিযোগ, অনুষ্ঠান ভেস্তে দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রবীর ঘোষ গিয়েছিলেন। স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর এই পদ্ধতি দেখে তাঁদের মোটেও অবৈজ্ঞানিক বলে মনে হয়নি ।

শেষ করা সহজ নয়

৫ জুন। সাত সকালে আমার মোবাইলে ফোন এল এক স্বনামধন্য সাংবাদিকের। একটি নামী বাংলা দৈনিক পত্রিকার সহ-সম্পাদক। পরিচয় অনেক বছরের। তিনি খুব একটা ভণিতা না করেই বললেন, আমি যেন বিশ্বরূপের প্রতি বিরূপ না হয়ে সহযোগিতা করি। বিনিময়ে বিশ্বরূপও আমাকে দেখবেন ।

আমি চালাক হয়ে উঠতে পারলাম কই। ছোট্ট একটা ভাড়া বাসায় থাকি। এরচেয়ে বেশি আর্থিক উচ্চাশাও নেই। সুতরাং বিশ্বরূপ আমাকে আর দেখবেন কী?

আমার অবস্থানটা বোঝাবার চেষ্টা করলাম। এবং শেষ পর্যন্ত ফোনটা কাটতে বাধ্য হলাম।

বর্ধমানে বিশ্বরূপের বুজরুকি বানচাল

সঞ্জয় কর্মকারের জবানিতেঃ ২২ জুলাই ২০০৪। বর্ধমান শহরে আর একবার প্রমাণ হয়ে গেল, বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে (বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ করে) কীভাবে মানুষকে প্রতারিত করা হয়। আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল পুলিশ-অপরাধীর আঁতাতের।

২২ জুলাই দিনটি সকাল থেকে দুপুর দুটো পঁয়তাল্লিশ পর্যন্ত বর্ধমান শহর চলছিল আর পাঁচটা দিনের মতোই, নিজের ছন্দে। হয়ত বাকি দিনটাও চলত এই ভাবেই। কিন্তু

১৬ জুলাই ২০০৪, আনন্দবাজার পত্রিকা-য় ৫ ইঞ্চি x ৭ ইঞ্চি মাপের একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞাপনের বিষয়, “ভারতের সবচেয়ে প্রখর স্মৃতি শক্তিধর শ্রীবিশ্বরূপ রায়চৌধুরী-এর স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির এক অভিনব উপায়, এই বিষয়ের উপর বিশেষ শো দেখুন” তারিখ ২২.৭.২০০৪, টাউন হল, বর্ধমান। শো বিজ্ঞাপনটিতে আরও বলা হয়েছে, “পেশায় Memory Man of India” (Limca Book of World Records-এর শংসাপত্র দ্বারা সম্মানিত, এছাড়াও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির ওপর ৮ খানা বই-এর সফল লেখক শ্রী রায়চৌধুরী Mnemonic pen’ – এর আবিষ্কর্তা হিসেবে ভারত বিখ্যাত।” কারা উপকৃত হবেন? তাও লেখা আছে বিজ্ঞাপনে প্রতিযোগিতামূলক যুগে প্রত্যেকেই তীক্ষ্ণ ছাত্রীরাই নয় সমস্ত প্রতিযোগিতা মূলক বা ইঞ্জিনিয়ার তথা সমস্ত Professionals এবং স্মৃতিশক্তির অধিকারী হতে পারবেন।” শো দেখতে টিকিটের দাম ২০ টাকা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে হলে দিতে হবে। ২৫০০ বিজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়নি । বিজ্ঞাপনটি আমাদের সমিতির এক সদস্যর চোখে পড়ামাত্র অন্যান্যদের জানান। আমাদের মনে পড়ে যায় ৪ জুন ২০০৪-এর কথা। সেদিন এই বিশ্বরূপ রায়চৌধুরীই কলকাতার ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে স্মৃতি বিষয়ের উপর শো করতে যান এবং তার প্রতারণা ধরা পড়ে যায় আমাদের সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে। সে খবর পরের দিন ৫ জুন ‘আজকাল’ পত্রিকার ছবিসহ প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়। শুরু হয়ে যায় বর্ধমানেও বিশ্বরূপ রায়চৌধুরীর প্রতারণা ধরার প্ল্যান তৈরির কাজ। আমরা টার্গেট করলাম প্রথম শোটিকে।

২২ জুলাই ২০০৪, দুটো বাজতে পাঁচমিনিট বাকি। আমরা টিকিট কেটে ঢুকে পড়লাম হলে। দুপুর দুটোয় শুরু হল বিশ্বরূপ রায়চৌধুরীর প্রদর্শনী। ঝাঁ-চকচকে পোশাক পরা বিশ্বরূপ রায়চৌধুরী ইংরাজি বাংলা মিশিয়ে বলতে শুরু করলেন স্মৃতি সম্বন্ধে নানা কথা। বললেন স্মৃতির ক্ষেত্রে কোনও কিছু শোনার থেকে দেখার গুরুত্ব আরও বেশি। শুরু করলেন দর্শকদের তার কথার জালে জড়ানোর কাজ। শুধু কথায় তো আর দর্শকদের মন জেতা যায় না, তাই দেখাতে শুরু করলেন তার প্রখর স্মৃতিশক্তি। হলে ঢোকার পর থেকে আমাদের প্রত্যেক সদস্যের মনে হালকা উত্তেজনা, ধরতে পারব? কৌশল বদলে দেননি তো? হলভর্তি দর্শক বিশ্বরূপের কথার জালে জড়িয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের মঞ্চে উঠে ভুল করা মানে সেটা যুক্তিবাদী সমিতির বর্ধমান শাখার উপর বিরাট বড় আঘাত হবে এবং সেই সঙ্গে আঘাতটা আমাদের শরীরের উপরও পড়বে। কিন্তু শো শুরু হতেই আমাদের চিন্তা দূর হল। না, বিশ্বরূপ পরিবর্তন করেননি দর্শকদের সামনে দেখানোর পদ্ধতি। তবু আমাদের সদস্যদের মনে রয়েই গেল হালকা একটা উত্তেজনা, এত দর্শকের সামনে একজন প্রতারকের প্রতারণা ধরার উত্তেজনা ৷

মঞ্চে দুটি বড় মাপের হোয়াইট বোর্ড। বিশ্বরূপ রায়চৌধুরী একে একে দর্শকদের উঠতে বলেন এবং যে কোনও নাম, রাসায়নিক সমীকরণ, অঙ্কের সূত্র বলতে বলেন। দর্শকরা একে একে উঠে বলতে শুরু করেন এবং বিশ্বরূপ রায়চৌধুরী সেই নাম বা রাসায়নিক সমীকরণ বা সূত্রটি নিজে একবার জোরে চেঁচিয়ে বলেন ও বোর্ডে লিখতে থাকেন। এভাবে দুটি বোর্ড ভর্তি হওয়ার সঙ্গে বিশ্বরূপ রায় চৌধুরী বোর্ডের দিকে পিছন ঘুরে দর্শকদের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকেন দুটি বোর্ডে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত কী লেখা আছে। এমনকি শেষ থেকে প্রথম পর্যন্তও বলে দেন।

ঘড়িতে তখন দুপুর দুটো পঁয়তাল্লিশ। পূর্বপরিকল্পনা মতো ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি-র সদস্য এবং হাটেবাজারে পত্রিকার সাংবাদিক চন্দ্রচূড় দাস একজন সাধারণ দর্শক হিসেবে ২০টি শব্দের লিস্ট তুলে দেন বিশ্বরূপ রায়চৌধুরীর কাছে এবং বলেন, আপনি নিজেই কিছুক্ষণ আগে বললেন, আমাদের স্মৃতির ক্ষেত্রে শোনার থেকে দেখার গুরুত্ব বেশি। আপনি এই ২০টি শব্দ একবার চোখ বুলিয়ে নিন বা মনে মনে পড়ুন। মুখে যেন সামান্য আওয়াজও না হয় । তারপর না দেখে বলুন। ওই ২০টি শব্দ একবার দেখে তারপর না দেখে বলে দিতে পারলে আমরা আপনার কাছে ও সমস্ত দর্শকের সামনে ক্ষমা চাইব। আমাদের এই ছোট পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলে বা এড়িয়ে গেলে ধরেই নেব আপনি দর্শকদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন ।

বিশ্বরূপ রায়চৌধুরী নিজের দৌড় ভালোভাবেই জানেন। তাই চ্যালেঞ্জে না নিয়ে মারমুখী হয়ে ওঠেন। চন্দ্রচূড় দাসকে হুমকি দিয়ে বলেন, মঞ্চ থেকে নেমে যেতে। চন্দ্রচূড়কে দাসকে ধাক্কা মেরে স্টেজে ফেলে দেন। হলের মধ্যে দর্শকদের হিসেবে ছড়িয়ে থাকা আমাদের সমিতির সদস্য প্রহ্লাদ, সাগর, বাপী, রজত, শম্ভু প্রমুখেরা দর্শকদের বোঝাতে থাকেন, বিশ্বরূপ রায়চৌধুরী সম্ভবত তার একটি দাঁত তুলে সেখানে একটি মাইক্রোচিপ্স লাগিয়ে রেখেছেন, যা সংকেত গ্রহণ করতে পারে। বিশ্বরূপ কোনও শব্দ স্ক্রিনে লেখার সময় মুখে আওয়াজ করে লেখেন ফলে ওই শব্দটি চলে যায় আড়ালে তার থাকা সহকারীর কাছে। সহকারী তখন সেটি লিখে নেন। এভাবে প্রতিটি শব্দ বা সূত্র বা সমীকরণ লিখে ফেলেন। এরপর যখন বিশ্বরূপ রায়চৌধুরীর না দেখে বলার পালা, তখন তার সহকারী একে একে বলতে থাকেন শব্দগুলি, সেই শব্দগুলি রায়চৌধুরী চিপ্সের মাধ্যমে শুনতে থাকেন এবং দর্শকদের বলতে থাকেন।

বিশ্বরূপের ভাড়াটে গুণ্ডারা চন্দ্রচূড়কে ঘিরে ধরে মারতে শুরু করে। চন্দ্রচূড়কে এই অবস্থা থেকে উদ্ধার করতে সাংবাদিক, সাধারণ দর্শক এবং অন্যান্য সাংবাদিক, যুক্তিবাদী সমিতির সদস্য চিত্রদীপ, অনাবিল এবং আমি মঞ্চে উঠি। আমরা উঠতেই বিশ্বরূপ ও তার দলবল আমাদেরও মারধর করেন। চিত্রদীপকে মেরে চশমা ভেঙে দেন। আমাকে মেরে মঞ্চ থেকে নিচে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন এবং অনাবিল সেনগুপ্তের গায়েও হাত দেন। সমস্ত দর্শক বিশ্বরূপের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। এমন সময় বর্ধমান সদর থানার আই. সি. তাপস বসু বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে টাউন হলে হাজির হন। বিশ্বরূপ রায়চৌধুরী এই সময় পুলিশের সহযোগিতায় দর্শকদের কিছু সংখ্যা বলতে বলেন। দর্শকরা সংখ্যা বললে বিশ্বরূপ সেই সংখ্যা না দেখে বেশ কিছু ভুল সমেত সংখ্যাগুলি বলেন। কিন্তু দর্শক এবং আমরা বিশ্বরূপের স্মৃতির এই পরীক্ষায় সন্তুষ্ট হতে পারি না। কারণ এখানে শব্দ করে উচ্চারণ করা হয়েছিল। এদিকে টাউন হলের বাইরে অপেক্ষারত পরের শো-এর দর্শকরা এবং ঝামেলার খবর পেয়ে আসা মানুষেরা উৎসুক, ভিতরে কী হচ্ছে জানার জন্য। পুলিশ বিশ্বরূপকে ও তার তিন সহযোগীকে এবং মালপত্রসহ থানায় নিয়ে যান। এরপর আমরাও থানায় যাই বিশ্বরূপের নামে ডায়েরি করতে। পুলিশ অনেক টালবাহানার পর আমাদের বোঝাতে থাকে—কেস করলে কী কী অসুবিধা হবে আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে। কেস চলবে বেশ কয়েক বছর ধরে এবং ওরাও পাল্টা কেস করবে। এমনকী ভবিষ্যতে নানা হয়রানির মুখে পড়তে হতে পারে আমাদের (জানি না, বিশ্বরূপের হয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে এটা প্রচ্ছন্ন হুমকি কি না)। এসব সত্ত্বেও আমরা কেস করব এই সিদ্ধান্তে অটুট থাকি ও সমিতির প্যাডের কাগজে লেখা প্রতারণার অভিযোগ তুলে দিই পুলিশের হাতে। ডি. এস. পি. ‘প্রতারণা’ শব্দটা কেটে দিতে বলেন। এবং বার বার বলতে থাকেন প্রতারণার কথা এভাবে লেখা যায় না। এরপর ডি. এস. পি. নিজে বয়ান বলে দিয়ে আমাদের দিয়ে প্রতারণার অভিযোগ বাদ দিয়ে অভিযোগ পত্র লেখান। পরিস্থিতির চাপে আমরা প্রায় বাধ্য হই সেই মতো অভিযোগ দায়ের করতে। আমাদের অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্বরূপকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারপরই পুলিশ জানায়, বিশ্বরূপ আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে, তাই আমাদেরও প্রেপ্তার করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত পুলিশের সাজেশন ছিল, তোমরা অভিযোগ তুলে নাও, ওকেও তুলে নিতে বলছি। আমরা তা করিনি। রাত প্রায় বারোটায় আমরা সাংবাদিকদের সহযোগিতায় থানা থেকে বের হলাম। বিশ্বরূপ ভিতরেই রইলেন।

ঘড়িতে তখন রাত বারোটা। সমস্ত কাজ শেষ করে এবার আমাদের বাড়ি ফেরার পালা । পরের কিছুদিন ধরে সমস্ত দৈনিক সংবাদপত্রে এবং টিভির মাধ্যমে প্রচণ্ড গুরুত্বের সাথে সংবাদটি প্রকাশিত হয়। আর এরপর থেকেই গোটা রাজ্য থেকে একের পর এক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দনের প্লাবন আছড়ে পড়তে থাকে আমাদের ওপর। এত মানুষের ভালোবাসাই আবার নতুন করে অক্সিজেন জোগায় আমাদের, যা বুকে নিয়ে আবার নতুন করে পথ চলার প্রেরণা পাই।

তারা জানান যে, বিশ্বরূপবাবু তাঁর দাঁতের মধ্যে শল্য চিকিৎসার সাহায্যে ট্রান্সমিটার বসিয়ে রেখেছেন, যার সাহায্যে তিনি বোর্ডে, লেখা শব্দগুলিকে জোরে জোরে পড়ে রেকর্ড রিপিট করে শোনান। তাঁরা আরও জানান যে, তাঁদের (যুক্তিবাদীদের) চ্যালেঞ্জ বিশ্বরূপবাবু গ্রহণ করতে পারেননি, কারণ চ্যালেঞ্জের একটা শর্ত ছিল মনে মনে পড়া চাই ফলে রেকর্ড করতে পারবেন না বলে বিশ্বরূপবাবু পিছিয়ে আসেন। যাই হউক, শেষমেশ জনসাধারণের ও যুক্তিবাদীদের চাপে পুলিশ বিশ্বরূপকে ধরে নিয়ে যেতে বাধ্য হয়। সত্যের উন্মোচন ঘটানোর জন্য এবং প্রতারিত হবার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আমরা যুক্তিবাদীদের ধন্যবাদ জানাই। এবং কপটতা ও প্রতারণার জন্য বিশ্বরূপবাবুর প্রতি ছুঁড়ে দিচ্ছি একরাশ ঘৃণা। কারণ তাঁর এই প্রতারণার ফলে আমাদের মতো সাধারণ ছাত্ররা তার জীবনের এক ঘণ্টা সময়কে হারাল।

তাই আমি, জনতার পক্ষ থেকে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করছি (১) প্রতারণা, (২) অভদ্র ব্যবহার ও (৩) শারীরিক অত্যাচারের জন্য যোগ্য ও কঠিনতম শাস্তি দেওয়া হউক বিশ্বরূপবাবুকে ও তাঁর অনুচরদের, যাতে ভবিষ্যতে আমার মতো আর কোনও ছাত্রকে এভাবে প্রতারিত হতে না হয় ।

সৌমেন প্রামাণিক ইছলাবাদ

হাইস্কুল (ছাত্র)

বর্ধমান ।

গত কয়েকদিন যাবৎ বর্ধমানে যুক্তিবাদী সমিতি বনাম ‘মেমোরিম্যান’-এর যুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে কিছু বলতে চাই। গত ২২ জুলাই বর্ধমান টাউন হলে আয়োজন করা হয়েছিল ‘লিমকা বুক অব রেকর্ড’ ধারী ‘মেমোরিম্যান’ বিশ্বরূপ রায়চৌধুরির তাক লাগানো প্রদর্শনী। আমি ২০ টাকার টিকিট কেটে সেই প্রদর্শনী দেখতে যাই। কিন্তু ৩০ মিনিট পর ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদীর একজন সদস্য সেখানে উঠে যান। তিনি বিশ্বরূপবাবুকে প্রথম অনুরোধ জানান যে, আপনি বোর্ডে লেখা রাসায়নিক সংকেত, সংজ্ঞা ও অমিতাভ বচ্চনের নাম বলেছিলেন। এবার আমাদের দেওয়া ১৫টি ইংরেজি অক্ষর মুখ বন্ধ করে মনে মনে পড়ে সবার সামনে বলে দিন। এটা আমাদের চ্যালেঞ্জ।’ কিন্তু দুঃখের বিষয়, বিশ্বরূপ সেই সদস্যকে ঠেলে ফেলে দিতে চান। তারপর আরও কিছু সদস্য উঠে পড়ায় তাঁদের মধ্যে একজনের চশমা ভেঙে ফেলেন। এরপর পুলিশ উপস্থিত হলে প্রথমদিকে নিষ্ক্রিয় থাকে। এরপর উপস্থিত লোকজন বিশ্বরূপ রায়চৌধুরির ওপর চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে মারে। কিন্তু তিনি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পারেননি। পরে পুলিশ তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। আমি বিশ্বরূপ রায়চৌধুরির বুজরুকির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এবং এই ঘটনার তীব্র নিন্দার কথা আমি জেলা প্রশাসনের কাছে জানাচ্ছি।

প্রহ্লাদ দেবনাথ

বড়নীলপুর, মেঘনাদ কলোনি

শ্রীপল্লী, বর্ধমান

২৩ জুলাই ‘সংবাদ’-এ প্রকাশিত ‘যুক্তিবাদী সমিতির চ্যালেঞ্জ…’ শীর্ষক সংবাদের প্রেক্ষিতে এই চিঠি। গত ২২ জুলাই বর্ধমানের টাউন হলে যে সুপার পাওয়ার মেমোরি’ অনুষ্ঠান হয়েছিল, সেই অনুষ্ঠানে ২০ টাকা মূল্য দিয়ে টিকিট কেটে আমি বিশ্বরূপ রায়চৌধুরীর ‘সুপার পাওয়ার মেমোরি’ অনুষ্ঠান প্রথম থেকেই দেখছিলাম। প্রথমে বিশ্বরূপ রায়চৌধুরি এসে দর্শকদের কথার জালে ফাঁসান। তারপর সামনের দিকের দর্শকদের নিজের লেখা বিভিন্ন রাসায়নিক ফরমুলা লেখা কার্ড প্রত্যেককে দিলেন। আমিও একটি কার্ড পেলাম। যাতে লেখা ছিল Mg+O,। এরপরে প্রত্যেককে তিনি সেই কার্ডের লেখা এবং তাদের ফোন নম্বরের শেষ দুটি ডিজিট বলতে বলেন। কাউকে প্রিয় সিনেমা বা কাউকে প্রিয় খেলোয়াড়ের নাম বলতে বলেন। এরকম অনেক কিছু তিনি মুখে উচ্চারণ করে দুটো বিশালাকৃতি বোর্ডে লিখে ভর্তি করেন। এরপর তিনি অন্যদিকে তাকিয়ে সব প্রথম ও শেষদিক থেকে বলে দেন। তার কিছুক্ষণের মধ্যে ‘ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি’র এই চ্যালেঞ্জ না মেনে সমিতির সদস্যদের উপর হাত চালাতে থাকেন। এবং কয়েকজন সদস্যকে মঞ্চ থেকে ফেলে দেন। এরপরে ঝামেলা শুরু হলে পুলিশ আসে এবং বিশ্বরূপ রায়চৌধুরির পক্ষ নেয়। এই বিশ্বরূপ রায়চৌধুরির লোক ঠকানো মেমোরি পাওয়ার এবং পুলিশ বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে আমি প্রতিবাদ জানাচ্ছি। যদিও পুলিশ পরে তাঁকে গ্রেফতার করেছে, আমি এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের কাছে জবাবদিহি করছি।

রোহিত সমাদ্দার

৩ নং ইছলাবাদ, শ্রীপল্লী, বর্ধমান

প্রত্যেকটি শো-তে যদি ১০০ বা ১২৫ জন করে লোক আসে তাকে ২৫০০ দিয়ে গুণ করলে তাহলে ৩৭৫ বা ৪০০ গুণ ২৫০০ হাজার কত হয়? প্রায় ৯ লক্ষ টাকার মতো প্রতিদিন যদি তার আয় হয় তাহলে খরচ তো সে কিছু করবেই। সে এই খরচটা কোথায় করছে এবং সরাসরিভাবে যে কোনও একজন ভালো প্রতারককে পুলিশের সাথে গাঁটছড়া বেঁধেই প্রতারণা করতে হয় এটা আমরা জানি। সুতরাং এই পুলিশের ভূমিকাটা আমাদের ভালো লাগছে না । এটাও আমরা জানি যে, এই প্রতারণাটা চালাতে দিলে সে আই এ এস বা আই পি এস বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কেন ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হল না। সে বলছে যে ৮০ হাজার শব্দ সে মুখস্থ বলে দিতে পারে। আশি হাজার কেন? মাত্র ১৭টা শব্দ তিনি বলতে চান না। যেগুলো সে হাতে ধরে আছে সেগুলো বলে যাচ্ছে। বর্ধমানে হাটেবাজারে পত্রিকার সাংবাদিক ছেলেরা ২০টা শব্দ দিয়েছিল। তখন সেখানে সে বলছে—আমি লাতিন জানি না। এই ২০টা শব্দই আপনারা যদি কোনও মেডিকেল জার্নাল দেখেন সেখানে দেখবেন। আমরা প্রতিদিন অনেক লাতিন শব্দ বলছি। সুতরাং লাতিন জানেন না সেটা কোনও ব্যাপারই হল না। মেডিকেল জার্নালে কেন, আমাদের বাংলার মধ্যেও বহু শব্দ ইংরেজি ভাষা থেকে ঢুকেছে। ইংরেজি শব্দ যদি লাতিন থেকে না আসে তবে তো সেটা ইংরেজি শব্দই নয়। সে ডাক্তারি পরিভাষা জানবে না এবং বলছে যে পুরো ‘অভিধান মুখস্থ করে ফেলেছে একবার দেখেই—অথচ অভিধানের সব শব্দের মানে মনে রাখা যায় না। এখানে এসবের খবর পেয়ে আমি এস.পি.-কে ফোন করেছিলাম। এস. পি. আমাকে বলেন, আমরা বিশ্বরূপকে কিছু সংখ্যা বলে যাচ্ছি। উনি যদি বলে দিতে পারেন, আমরা কি সেটাতে রাজি হব? আমি বললাম অদ্ভুত কাণ্ড। বলে দিলে তো শোনাই হয়ে গেল, অপারেশনটা কমপ্লিট হয়ে গেল। এই প্রতারণা ধরা তো খুব সোজা। ওখানে আর একজন কেউ আছে যে কিছু দূর থেকে টেপ করে নিয়ে পরে বাজাতে পারে। সুতরাং বলার কোনও ব্যাপারের মধ্যেই যাওয়া চলবে না। সবাই সমস্ত কিছু পরীক্ষা করে প্রমাণ করতে পারে না, তাই সাধারণ মানুষকে সহজে প্রতারণা করা যায়।

এই প্রতারণার বিরুদ্ধে আমাদের ছেলেরা থানায় ডায়েরি করতে গেলে পুলিশ তা নেয়নি। তারা বলে, অভিযোগ থেকে প্রতারণা শব্দটি কাটতে হবে, আই পি সি ৪২০ ধারা কাটতে হবে—এসব হাজার বায়নাক্কা।

‘আজকাল’ পত্রিকার সাংবাদিক চন্দ্রকান্ত তেওয়ারি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি পুলিশের এই আচরণের প্রতিবাদ করেন। তা সত্ত্বেও, ছেলেদের ডায়েরি বাতিল করে, ডি এস পি নিজে ডিকটেশন দিয়ে নতুন ডায়েরি লিখতে আমাদের ছেলেদের বাধ্য করেন। এ-তো অদ্ভুত ব্যাপার। আমি একটা কমপ্লেন লিপিবদ্ধ করতে চাইছি,সেই কমপ্লেন থানা রিসিভ করবে, কিন্তু তা না করে ডি এস পি ডিকটেশন দিচ্ছেন যাতে কমপ্লেনে প্রতারক বিশ্বরূপের কিছু অসুবিধে না হয় । এটা খুব সাংঘাতিক অন্যায়। এখানেই মনে হয় পুলিশের সাথে প্রতারকের একটা যোগসাজশ আছে। পুলিশের রোলটা আমাদের খুব খারাপ লেগেছে।

শেষ হয়ে তবু শেষ হতে যে চায় না

আগস্ট ২০০৪। এক শনিবার আমাদের ৩৩-এ ক্রিক রো, মৌলালির আড্ডায় এলেন একটি শক্তিমান দৈনিক পত্রিকার এক উচ্চপদাধিকারী সাংবাদিক। তিনি যে বিশ্বরূপ নিয়ে কথা বলতে আসবেন এ’কথা জানিয়েছিলেন আমার-ই বন্ধু ইমানুল হক। অনুরোধ করেছিলেন, আমি যেন ওঁর কথা শুনি। অনুরোধটা ছিল—আমি যেন পত্রিকাটির অফিসে আসি। আমি পাল্টা অনুরোধ রেখেছিলাম, উনি যেন আমাদের শনিবারের আড্ডায় আসেন।

এলেন, বিশ্বরূপের লেখা একটা বই উপহার দিলেন। বললেন, বিশ্বরূপ আবার কলকাতায় আসছেন। সেইদিন বিশ্বরূপের স্মৃতিশক্তির পরীক্ষা নেবেন ৫-৭ জনের একটা কমিটি। তাঁদের নামও জানালেন। অনুরোধ করলেন, আমিও যেন অবশ্যই কমিটির একজন হিসেবে হাজির থাকি। এই কমিটি যে রায় দেবেন, তা নিশ্চয়ই যুক্তির খাতিরে মেনে নেব আমিও ।

বললাম, কেন আপনার পত্রিকা বা পার্টি বিশ্বরূপের স্মৃতিশক্তির পরীক্ষা নিতে একটা কমিটি গড়ছে? আগের থেকেই কি ঠিক করা আছে—বিশ্বরূপকে অসাধারণ স্মৃতিধর বলে ঘোষণা করবেন কমিটির সদস্যরা? সত্যিই যদি বিশ্বরূপের ক্ষমতার সত্যি-মিথ্যে জানতে চান, তবে এমনটা করুন—গোটা ২০ অপ্রচলিত শব্দ একটা কাগজে লিখে তাঁকে মনে মনে পড়ে লিখে দিতে বলুন। তিনি পারলে প্রমাণিত হবে স্মৃতিধর, না পারলে বুজরুক। আপনারাই পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন। আমরা পরীক্ষা করেছি। নিশ্চিত হয়েছি। সুতরাং, আবার পরীক্ষা নিতে যাব না ।

সাংবাদিক এবার একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদের নাম করে বললেন—ঠিক আছে, উনি কমিটির তরফ থেকে ২০টা শব্দের তালিকা বিশ্বরূপকে দেবেন। বিশ্বরূপ সবগুলো ঠিক-ঠাক বললে তো মেনে নেবেন ?

উঁহু। মানব না। আমরা দিলে বিশ্বরূপ পারছে না। আর আপনার লোক দিলে পারছে। এটা তখনই হতে পারে, যখন বিশ্বরূপ তালিকার শব্দগুলো আগাম জানতে পারবে। দুর্নীতির সাহায্য না নিয়ে বিশ্বরূপ তার স্মৃতিশক্তি প্রমাণ করতে পারবে না।

আমার কথা শুনে ডিপ্লোম্যাট সাংবাদিক বললেন, ঠিক আছে, আপনি না গেলেও প্রকাশ্যে বিশ্বরূপের ক্ষমতার পরীক্ষা নেবেন বিশিষ্ট বিজ্ঞানীদের একটা কমিটি। পরিণতিতে আপনার ও আপনাদের সমিতির গ্রহণযোগ্যতাই নষ্ট হবে।

শেষ পর্যন্ত কোনও কমিটিই বিশ্বরূপকে ‘ক্লিনচিট’ দিতে এগিয়ে আসেনি। এটা আমার ও আমাদের সমিতির গ্রহণযোগ্যতারই ফল।

♦ কিছু কথা

প্রথম খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ মার্কিন গডম্যান মরিস সেরুলোঃ একটি ইতিহাস

অধ্যায়ঃ দুই

♦ যোগী-জ্যোতিষী হরেকৃষ্ণবাবা !

অধ্যায়ঃ তিন

♦ পঞ্চাশ বছর আগের বালক ব্রহ্মচারী এবং…

অধ্যায়ঃ চার

♦ মেঠাইবাবার রহস্যভেদ

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ হাড় ভাঙ্গার দৈব-চিকিৎসা

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ কাকদ্বীপের দৈব-পুকুর

অধ্যায়ঃ সাত

♦ আগরপাড়ায় ‘ভূতুরে’ আগুন

অধ্যায়ঃ আট

♦ প্রদীপ আগরওয়ালের সম্মোহনে ‘পূর্বজন্মে’ যাত্রা

অধ্যায়ঃ নয়

♦ কামধেনু নিয়ে ধর্মব্যবসা

অধ্যায়ঃ দশ

♦ বরানগরের হানাবাড়িঃ গ্রেপ্তার মানুষ- ভূত

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ এফিডেভিট করে ডাক্তারের প্রশংসাপত্র নিয়ে ওঝাগিরি !

অধ্যায়ঃ বারো

♦ ‘গ্যারান্টি চিকিৎসা’র নামে হত্যাকারীর ভূমিকায় সর্পবিদ হীরেন রায়

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ চলো যাই ফকিরবাড়ি

অধ্যায়ঃ চোদ্দ

♦ সাঁইবাবার চ্যালেঞ্জঃ পেটে হবে মোহর !

অধ্যায়ঃ পনেরো

♦ হুজুর সাইদাবাদীঃ মন্তরে সন্তান লাভ !

অধ্যায়ঃ ষোলো

♦ জলাতঙ্ক ও দৈব-চিকিৎসা

অধ্যায়ঃ সতেরো

♦ বিশ্বাসের ব্যবসায়ীরা ও নপুংসক আইন

দ্বিতীয় খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ খেজুর তলার মাটি সারায় সব রোগ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ পক্ষিতীর্থমের অমর পাখি

অধ্যায়ঃ তিন

♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !

অধ্যায়ঃ চার

♦ নাকালের দৈব-পুকুরঃ হুজুগের সুনামী

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ সায়েব যখন রেইকি করে রাঘব বোয়াল চামচা ঘোরে

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ লক্ষ্মীমূর্তি কালি হলেন আপন খেয়ালে

অধ্যায়ঃ সাত

♦ পাথর যখন কথা বলে

অধ্যায়ঃ আট

♦ ফাঁদে পড়ে জ্যোতিষী শ্রীঘরে

অধ্যায়ঃ নয়

♦ বিশ্বের বিস্ময় অলৌকিক মাতা জয়া গাংগুলী’র বিস্ময়কর পরাজয় এবং…

অধ্যায়ঃ দশ

♦ আই আই টিতে টেলিপ্যাথি দেখালেন দীপক রাও

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ জন্ডিস সারাবার পীঠস্থান ইছাপুর

অধ্যায়ঃ বারো

♦ মালপাড়ার পেশা দাঁতের পোকা বের করা

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ নিমপীঠের গুগি মা

তৃতীয় খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ ওঝার ঝাড়ফুঁক আর টেরিজার লকেটে মণিহার রোগমুক্তিঃ কুসংস্কারের দু’পিঠ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ ‘মেমারিম্যান’ বিশ্বরূপ-এর একটি বিশুদ্ধ প্রতারণা

অধ্যায়ঃ তিন

♦ কোটিপতি জ্যোতিষী গ্রেপ্তার হলেন

চতুর্থ খন্ড

অধ্যায়ঃ এক

♦ কিস্যা অক্টোপাস পল বিশ্বকাপ ফুটবলের ভবিষ্যৎ বক্তা

অধ্যায়ঃ দুই

♦ কিস্যা জ্যোতিষী বেজান দারওয়ালা

অধ্যায়ঃ তিন

♦ সাধারণ নির্বাচন ২০০৯ নিয়ে সব জ্যোতিষী ফেল

অধ্যায়ঃ চার

♦ মা শীতলার পায়ের ছাপ পুকুরঘাটেঃ রহস্যভেদ

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ যিশুর মূর্তি থেকে রক্তপাত

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ সত্য সাঁই-এর সত্যি-মিথ্যে

অধ্যায়ঃ সাত

♦ অলৌকিক উপায়ে সন্তান দেন ডা. বারসি

অধ্যায়ঃ আট

♦ জ্যোতিষীর বাড়িতে অলৌকিক আগুন

অধ্যায়ঃ নয়

♦ সম্মিলিত দুর্নীতির ফসল ‘মোবাইলবাবা’

অধ্যায়ঃ দশ

♦ জাতিস্মরঃ রাজেশ কুমার

♦ অলৌকিক শক্তিধরদের প্রতি চ্যালেঞ্জ

“যুক্তিবাদীর চ্যালেঞ্জাররা” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ

⇒ মন্তব্য করুন⇐

error: Content is protected !!