মহারাষ্ট্রের কোকন জেলায় মীরার আদি নিবাস। আঠারটি বসন্ত অতিক্রম করার আগেই মীরা বালোবেসে বিয়ে করেন মেহেমুদকে। মেহেমুদ যখন শেষ নিঃশ্বাস ফেলেন, তখন মীরা ছ-মেয়ের মা। মীরা এই সময় সিরডী’র সাঁই-এর ভক্ত হয়ে ওঠেন। সাঁই ভক্তদের সঙ্গে গড়ে ওঠে পরিচয় ও সম্পর্ক। সাঁই ভক্তদের সামনেই একদিন মীরার ভর হয়। ভরে মীরা জানান, তিনি সিরডীর সাঁই। এরপর থেকে মাঝে মাঝেই মীরার ওপর সাঁইয়ের ভর হতে থাকে। দ্রুত ভক্ত সমাগমও বাড়তে থাকে। ভক্তরাই মীরার নতুন নাম রাখেন মীরা সাঁই, মীরা ভক্তদের পদযাত্রায় তীর্থভ্রমণ করলেন, মীরা সাঁইয়ের খ্যাতি এতই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল, একটি সেবা সংস্থা তাঁকে দিল দু-একর জমি ও একটি বাংলো।
এই সময় মীরা বিয়ে করেন চন্দ্রকান্তকে। চন্দ্রকান্ত মীরা সাঁইয়ের নামে করে দিলেন তাঁর নাসিকের কারখানা। চন্দ্রকান্ত ও মীরার নতুন আবাস হয় ৫৫ আরামনগর কাফেরী কমপ্লেক্সে। মীরার ভর ও ভক্ত সমাগম বাড়তেই থাকে।
এই সময় নরেশ মাগনামী ডি এম নগর থানায় এফ আই আর করেন, মীরা সাঁই তাঁর স্ত্রী পুনমকে প্রতারণা করে আড়াই লক্ষ টাকার গয়না আত্মসাৎ করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে থানা একটি মামলা রুজু করে। পুলিশ কেসের তদন্তের দায়িত্ব এসে পড়ে সাব-ইন্সপেক্টর রাজা সন্তের উপর। সন্তের নেতৃত্বে পুলিশ প্রথমেই মীরা সাঁইয়ের কাকোরী কমপ্লেক্সের বাড়িতে হানা দেন। বাড়িতে মীরা ছিলেন না, ছিলেন তাঁর দুই মেয়ে। বাড়ি সার্চ করার সময় ঠাকুর ঘরে একটি মাঝারি আকারের তালাবদ্ধ বাক্স দেখতে পান। মেয়েরা জানান, বাক্সের চাবি মায়ের কাছে আছে। মা আছেন সরডীর কোপর গাঁও-এর বাড়িতে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সামনে তালা ভাঙ্গা হয়। বাক্সে ছিল দু’লক্ষ টাকার গয়না। বাক্সে একটি কাগজে ‘উষা’ লেখা ছিল, তলায় ঠিকানা।
বাক্স নিয়ে পুলিশ বাহিনী থানায় ফেরে। কাগজের ঠিকানায় পুলিশ পাঠান হয়। পুলিশ সেখানে উষা নামের এক বিবাহিত মহিলার খোঁজ পেয়ে তাঁকে থানায় আনেন।
থানায় জেরার জবাবে তিনি জানান, আবার স্বামী মদ ও জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়েন। স্বভাবতই তাঁর খরচের বহরও দিন দিন বেড়েই চলেছিল। আমি মীরা সাঁই-এর কথা শুনে তাঁর কাছে হাজির হই এবং তার উপর সাঁইয়ের ভর দেখে বাস্তবিকই ভক্তি আপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম। আমাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে মীরা সাঁইয়ের শরণাপন্ন হই। মীরা সাঁই আমাদের গয়নাগুলো আমার স্বামীর হাত থেকে বাঁচাতে সেগুলো তাঁর কাছে রাখতে বলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে বিভিন্ন সময়ে মীরা সাঁইয়ের কাছে গয়নাগুলো ফেরত চাই লে তিনি প্রতিবারই নানা বাহানা বানিয়ে আমাকে ঘুরিয়েছেন। আজ পর্যন্ত সে গয়না আর ফিরিয়ে দেননি, ফিরে পাব এ আশাও ছেড়েছি।
থানায় কেন অভিযোগ করেননি, গয়নার মূল্য কত হবে বলে উষার ধারণা, ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তরে উষা জানান, তাঁর হাতে লিখিত কোন প্রমাণ না থাকায় তিনি মীরা সাঁইয়ের মত প্রচণ্ড প্রভাবশালী মহিলার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে গিয়ে আরও বেশি বিপদে জড়িয়ে পড়তে চাননি। গয়নার আনুমানিক মূল্য ছিল দু থেকে আড়াই লাখ টাকা। কিছু কিছু গয়নার খুঁটিনাটি বিবরণও উষা দেন। বিবরণ মিলে যাওয়ায় উষাকে বাক্সের গয়নাগুলো দেখান হয়। তিনি জানান এগুলোই মীরা সাঁইয়ের হাতে তুলে দিয়েছিলেন।
মীরা সাঁইয়ের দুই মেয়েকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে থাকে। পুলিশবাহিনী সেদিনই রওয়ানা হন কোপ গাঁও-এ। ভোর রাতে মীরা সাঁইকে গ্রেপ্তার করা হয়। থানায় নিয়ে এলে মীরা সাঁই জেরার উত্তরে কোনও কথা বলতে অস্বীকার করেন। ১০ জানুয়ারী ৮৬ পুলিশ মীরা সাঁইকে আন্ধেরীর মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজির করেন, এবং ১৪ দিন পরে তাঁকে আবার পুলিশ হাজতে ফিরিয়ে আনা হয়। দু-দিনের একটানা জেরায় মীরা সাঁই শেষ পর্যন্ত ভঙ্গে পড়েন এবং তাঁর অপরাধ স্বীকার করে জানান পুনমের আত্মসাৎ করা গয়না রয়েছে তাঁর মেয়ে জামাই ফতিমা ও বুল্লু শেখের কাছে। পুলিশ ফতিমা ও বুল্লুর হেফাজত থেকে পুনমের গয়না উদ্ধার করেন।
“অলৌকিক নয়,লৌকিক- ২য় খন্ড ” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ
♦ কিছু কথাঃ যুক্তিবাদ প্রসঙ্গে
একঃ ভূতের ভর
♦ ভূতের ভরঃ বিভিন্ন ধরন ও ব্যাখ্যা
♦ গুরুর আত্মার খপ্পরে জনৈকা শিক্ষিকা
♦ প্রেমিকের আত্মা ও এক অধ্যাপিকা
ভূতে পাওয়া যখন ম্যানিয়াস ডিপ্রেসিভ
♦ সবার সামনে ভূত শাড়ি করে ফালা
♦ গ্রামে ফিরলেই ফিরে আসে ভূতটা
♦ একটি আত্মার অভিশাপ ও ক্যারেটে মাস্টার
দুইঃ পত্র পত্রিকার খবরে ভূত
♦ ট্যাক্সিতে ভূতের একটি সত্যি কাহিনী ও এক সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিক
♦ এক সত্যি ভূতের কাহিনী ও এক বিজ্ঞানী
♦ বেলঘরিয়ার গ্রীন পার্কে ভূতুরে বাড়িতে ঘড়ি ভেসে বেড়ায় শূন্যে
♦ দমদমের কাচ-ভাঙ্গা হল্লাবাজ-ভূত
তিনঃ যে ভূতুরে চ্যালেঞ্জের মুখে বিপদে পড়েছিলাম
চারঃ ভূতুরে চিকিৎসা
♦ ফিলিপিনো ফেইথ হিলার ও ভূতুরে অস্ত্রোপচার
♦ ফেইথ হিলার ও জাদুকর পি.সি. সরকার (জুনিয়র)
♦ পরকাল থেকে আসা বিদেহী ডাক্তার
♦ বিদেহী ডাক্তার দ্বারা আরোগ্য লাভ
♦ ডাইনী সম্রাজ্ঞী ঈপ্সিতার ভূতুরে চিকিৎসা
পাঁচঃ ভূতুরে তান্ত্রিক
♦ গৌতম ভারতী ও তাঁর ভূতুরে ফটোসম্মোহন
♦ ভূতুরে সম্মোহনে মনের মত বিয়েঃ কাজী সিদ্দীকির চ্যালেঞ্জ
ছয়ঃ ডাইনি ও আদিবাসী সমাজ
বাঁকুড়া জেলা হ্যান্ডবুক, ১৯৫১ থেকে
♦ ডাইনি, জানগুরু প্রথার বিরুদ্ধে কি করা উচিৎ
♦ ডাইনি হত্যা বন্ধে যে সব পরিকল্পনা এখুনি সরকারের গ্রহণ করা উচিৎ
♦ জানগুরুদের অলৌকিক ক্ষমতার রহস্য সন্ধানে
সাতঃ আদিবাসী সমাজের তুক-তাক, ঝাড়- ফুঁক
♦ ‘বিষ-পাথর’ ও ‘হাত চালান’এ বিষ নামান
আটঃ ঈশ্বরের ভর
♦ ঈশ্বরের ভর কখনো মানসিক রোগ, কখনো অভিনয়
♦ কল্যাণী ঘোষপাড়ায় সতীমা’ইয়ের মেলায় ভর
♦ হাড়োয়ার উমা সতীমার মন্দিরে গণ-ভর
♦ আর একটি হিস্টিরিয়া ভরের দৃষ্টান্ত
♦ একই অঙ্গে সোম-শুক্কুর ‘বাবা’ ও মা’য়ের ভর
♦ অবাক মেয়ে মৌসুমী’র মধ্যে সরস্বতীর অধিষ্ঠান (?) ও প্রডিজি প্রসঙ্গঃ
♦ প্রডিজি কি? ও কিছু বিস্ময়কর শিশু প্রতিভা
♦ বংশগতি বা জিন প্রসঙ্গে কিছু কথা
♦ বিস্ময়কর স্মৃতি নিয়ে দু-চার কথা
♦ দুর্বল স্মৃতি বলে কিছু নেই, ঘাটতি শুধু স্মরণে
♦ মানবগুণ বিকাশে বংশগতি ও পরিবেশের প্রভাব
♦ মানবগুণ বিকাশে পরিবেশের প্রভাব
♦ মানব-জীবনে প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব
♦ মানব-জীবনে আর্থ-সামাজিক পরিবেশের প্রভাব
♦ মানব জীবনে সমাজ-সাংস্কৃতিক পরিবেশের প্রভাব
♦ অবাক মেয়ে মৌসুমীর রহস্য সন্ধানে
♦ বক্সিংয়ের কিংবদন্তী মহম্মদ আলি শূন্যে ভাসেন আল্লা-বিশ্বাসে!