দমদম জংশনের কাছে নিমাই হাজরার বাড়িতে মনসার থান। সেখানে ফি হপ্তার মঙ্গলবার নিমাইয়ের বিবাহিতা বোন লক্ষ্মী ময়রার ভর হয়। ভর করেন মা মনসা। ভিড় নেই-নেই করেও কম হয়না। ৭০ থেকে ১০০ ভক্তকে নানা সমস্যার বিধান দেন মা মনসা। ভর দুপুরে ভর লাগে। শেষ ভক্তটি বিদায় নিতে ঘণ্টা তিনেক সময় কেটে যায়।
আমাদেরই এক প্রতিবেশীর কাছে শুনেছিলাম লক্ষ্মীর অতিপ্রাকৃতিক সব ক্ষমতার কথা। তিনি বললেন, লক্ষ্মীকে দেখার আগে বিশ্বাসই করতেন না, ঈশ্বর সর্বত্রগামী, তাঁর অজ্ঞাত কিছু নেই। ভরে লক্ষ্মী এমন সব কথা বলেছে, যেগুলো সর্বত্রগামী ঈশ্বর ছাড়া কারও পক্ষেই বলা সম্ভব নয়। শুনলাম প্রতিবেশী স্বপ্নাদেশে মা মনসার ঘট পেতেছেন। ২৪ মার্চ ৯০-এ লক্ষ্মীমা ওঁর বাড়িতে পায়ের ধুলোদ দেবেন। দুপুরে গেলাম। লক্ষ্মীমা তখনও ভরে বসেননি। আলাপ করিয়ে দিলেন প্রতিবেশী। পাতলা, শ্যামা তরুণী। একমাথা বব করা চুলে আজ তেল ছোঁয়ানো হয়নি। ডাগর দুটি চোখ। কথা বলতে গিয়ে বুঝলাম ফুলঝুড়িতে আগুন দিয়েছি। অনেক অনেক অলৌকিক কাহিনী শোনালেন। শুনলাম, স্বামী রিক্সা চালান। পুজোর সঙ্গী হিসবে ভাই দেবাশিসও এসেছিলেন। বি কম পাশ। টিউশনি করে সামান্য রোজগার। লিখি শুনে তিনিও আমাকে শোনাতে লাগলেন দিদি ও মনসাকে ঘিরে অদ্ভুত সব ঘটনার বিবরণ। লক্ষ্মীকে জিজ্ঞেস করলাম, মা মনসাকে দেখছেন?”
লক্ষ্মীর জড়তাহীন উত্তর, “বহুবার।”
আমিঃ কেমনভাবে দেখেছেন, একেবারে স্পষ্ট?
লক্ষ্মীঃ “নিশ্চয়।”
আমিঃ ‘দেখতে কেমন?’
লক্ষ্মীঃ দারুন সুন্দরী। এক মাথা চুল প্রায় পায়ের হাঁটু ছুঁয়েছে।
আমিঃ ‘হায়ের রং কেমন?’
লক্ষ্মীঃ একটু শ্যামা, এই কিছুটা আমার মত, তবে এতো সুন্দরী যে বলার নয়।’
আমিঃ ‘ফিগার কেমন? দেখলে বয়স কেমন মনে হয়?’
লক্ষ্মীঃ ‘একেবারে সিনেমার হিরোইনের মত। দেখলে মনে করবেন সদ্য যুবতী। উনি যখনই আসেন, তখন অদ্ভুত একটা মিষ্টি গন্ধ সারা বাড়ি ছড়িয়ে থাকে।’
প্রতিবেশীর উচ্চ-শিক্ষিতা স্ত্রী জানালেন, তিনিও মায়ের শরীরের অদ্ভুত গন্ধ পেয়েছেন।
এক সময় পুজো শুরু হল। পুজোয় সময় লাগে খুবই কম। ইতিমধ্যে বহু ভক্ত মানুষই হাজির করলেন পেন, ডটপেন। এগুলো দিয়ে লিখলে নাকি কৃতকার্য অনিবার্য, দেবাশিস জানালেন।
তৃতীয় ও শেষবার পুষ্পাঞ্জলি দিয়েই লক্ষ্মী মা শরীরে বার কয়েক দুলুনি দিয়ে দড়াম করে আছড়ে পড়লেন মেঝেতে। তারপর কাটা মুরগীর মত ছটফট করতে লাগলেন, সঙ্গে দুহাতে চুল ধরে টানাটানি।
শিক্ষিত-শিক্ষিতা ভক্তেরা লক্ষ্মীমাকে না ছুঁয়েই গদ্গদ ভক্তিতে প্রণাম জানাতে শুরু করলেন। কাঁসার ঘণ্টা, শাঁখ উলু বেজে চলল, সেই সঙ্গে ভক্তরা জোর হাত করে প্রার্থনা জানাতে লাগলেন, ‘মা তুমি শান্ত হও মা, মা তুমি শান্ত হও।’
মা এক সময় শান্ত হলেন। উপুড় হয়ে পড়ে রইলেন। গৃহকর্তী পরম ভক্তিভরে মাকে নানা সমস্যার কথা বলছিলেন। উত্তরণের উপায় হিসেবে মা মনসা ব্যবস্থাপত্র দিচ্ছিলেন, কখনো পুজোর ফুল ছুঁড়ে দিয়ে সঙ্গে রাখতে বললেন, কখনো দিলেন ঘটের জল পানের বিধান, কখনো বা অদেখা মানুষটির রোগ মুক্ত করতে বিষহরি মা মনসা হঠাৎ হঠাৎ মাথা তুলে বড় বড় পাগল পাগল চোখে তাকিয়ে তিন বার ফুঁ দিয়ে ঝেড়ে দিলেন।
এক সময় আমাকে প্রশ্ন করতে বললেন গৃহকর্তী। মা মনসার পাশে বসলাম। আমার সম্বন্ধে লক্ষ্মীমা এবং দেবাশিস কেউই বোধহয় কিছু জানতেন না। হাতে গ্রহরত্নের রুপোয় বাঁধান আংটি গলায় ঝোলান একটা তাবিজ দেখে সন্দেহের ঊর্ধ্বেই রেখেছিলেন। এটা-সেটা জিজ্ঞেস করার পর বললাম, “আমার ছোট বোনের গলায় ক্যান্সার ধরা পড়েছে। চিকিৎসা চলছে। ভাল হবে মা?”
বহু ভক্ত কলরোল তুললেন, “বোনের নাম বলুন।”
বললাম, “রঞ্জিতা রুদ্র।”
মা মনসা বললেন, “ভাল হবে না। এই বৈশাখের আগেই মারা যাবে।”
আরও কিছু কথা-বার্তার পর ফিরে এসেছিলাম।
সে-রাতেই প্রতিবেশী আমার ফ্ল্যাটে এসেছিলেন। আমার বোনের ক্যান্সারের কথা লক্ষ্মীমা কেমন অদ্ভুত রকম বলে দিলেন, সেই প্রসঙ্গ প্রতিবেশী উত্থাপন করতে জানালাম, “বোন রঞ্জিতা বহাল তবিয়তেই আছে ক্যান্সার তো হয়নি। বৈশাখে গিয়ে দেখেও আসতে পারেন। এতদিন মা লক্ষ্মীর কথা শুধু শুনেছিলাম। ওর ভরের মহিমা পরীক্ষা করতেই মিথ্যে বলেছিলাম। আপনারা শিক্ষিত হয়েও এত আবেগতাড়িত হয়ে ঠকতে চান কেন বলুন তো?”
জানি না আমার কথাগুলো উনি কিভাবে গ্রহণ করেছিলেন।
“অলৌকিক নয়,লৌকিক- ২য় খন্ড ” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ
♦ কিছু কথাঃ যুক্তিবাদ প্রসঙ্গে
একঃ ভূতের ভর
♦ ভূতের ভরঃ বিভিন্ন ধরন ও ব্যাখ্যা
♦ গুরুর আত্মার খপ্পরে জনৈকা শিক্ষিকা
♦ প্রেমিকের আত্মা ও এক অধ্যাপিকা
ভূতে পাওয়া যখন ম্যানিয়াস ডিপ্রেসিভ
♦ সবার সামনে ভূত শাড়ি করে ফালা
♦ গ্রামে ফিরলেই ফিরে আসে ভূতটা
♦ একটি আত্মার অভিশাপ ও ক্যারেটে মাস্টার
দুইঃ পত্র পত্রিকার খবরে ভূত
♦ ট্যাক্সিতে ভূতের একটি সত্যি কাহিনী ও এক সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিক
♦ এক সত্যি ভূতের কাহিনী ও এক বিজ্ঞানী
♦ বেলঘরিয়ার গ্রীন পার্কে ভূতুরে বাড়িতে ঘড়ি ভেসে বেড়ায় শূন্যে
♦ দমদমের কাচ-ভাঙ্গা হল্লাবাজ-ভূত
তিনঃ যে ভূতুরে চ্যালেঞ্জের মুখে বিপদে পড়েছিলাম
চারঃ ভূতুরে চিকিৎসা
♦ ফিলিপিনো ফেইথ হিলার ও ভূতুরে অস্ত্রোপচার
♦ ফেইথ হিলার ও জাদুকর পি.সি. সরকার (জুনিয়র)
♦ পরকাল থেকে আসা বিদেহী ডাক্তার
♦ বিদেহী ডাক্তার দ্বারা আরোগ্য লাভ
♦ ডাইনী সম্রাজ্ঞী ঈপ্সিতার ভূতুরে চিকিৎসা
পাঁচঃ ভূতুরে তান্ত্রিক
♦ গৌতম ভারতী ও তাঁর ভূতুরে ফটোসম্মোহন
♦ ভূতুরে সম্মোহনে মনের মত বিয়েঃ কাজী সিদ্দীকির চ্যালেঞ্জ
ছয়ঃ ডাইনি ও আদিবাসী সমাজ
বাঁকুড়া জেলা হ্যান্ডবুক, ১৯৫১ থেকে
♦ ডাইনি, জানগুরু প্রথার বিরুদ্ধে কি করা উচিৎ
♦ ডাইনি হত্যা বন্ধে যে সব পরিকল্পনা এখুনি সরকারের গ্রহণ করা উচিৎ
♦ জানগুরুদের অলৌকিক ক্ষমতার রহস্য সন্ধানে
সাতঃ আদিবাসী সমাজের তুক-তাক, ঝাড়- ফুঁক
♦ ‘বিষ-পাথর’ ও ‘হাত চালান’এ বিষ নামান
আটঃ ঈশ্বরের ভর
♦ ঈশ্বরের ভর কখনো মানসিক রোগ, কখনো অভিনয়
♦ কল্যাণী ঘোষপাড়ায় সতীমা’ইয়ের মেলায় ভর
♦ হাড়োয়ার উমা সতীমার মন্দিরে গণ-ভর
♦ আর একটি হিস্টিরিয়া ভরের দৃষ্টান্ত
♦ একই অঙ্গে সোম-শুক্কুর ‘বাবা’ ও মা’য়ের ভর
♦ অবাক মেয়ে মৌসুমী’র মধ্যে সরস্বতীর অধিষ্ঠান (?) ও প্রডিজি প্রসঙ্গঃ
♦ প্রডিজি কি? ও কিছু বিস্ময়কর শিশু প্রতিভা
♦ বংশগতি বা জিন প্রসঙ্গে কিছু কথা
♦ বিস্ময়কর স্মৃতি নিয়ে দু-চার কথা
♦ দুর্বল স্মৃতি বলে কিছু নেই, ঘাটতি শুধু স্মরণে
♦ মানবগুণ বিকাশে বংশগতি ও পরিবেশের প্রভাব
♦ মানবগুণ বিকাশে পরিবেশের প্রভাব
♦ মানব-জীবনে প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব
♦ মানব-জীবনে আর্থ-সামাজিক পরিবেশের প্রভাব
♦ মানব জীবনে সমাজ-সাংস্কৃতিক পরিবেশের প্রভাব
♦ অবাক মেয়ে মৌসুমীর রহস্য সন্ধানে
♦ বক্সিংয়ের কিংবদন্তী মহম্মদ আলি শূন্যে ভাসেন আল্লা-বিশ্বাসে!