মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদা খানমের জন্ম লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর থানার কেয়ারপুর গ্রামের এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে ১৯৪০ সালে। তাঁর বাবা আশাদ আলী মোল্লা কৃষক এবং মা রোকেয়া বেগম গৃহিণী। সাত ভাইবোনের মধ্যে মাহমুদা তৃতীয়। তিনি ছোটবেলা থেকেই অত্যন্ত হাসিখুশি ও পরিশ্রমী প্রকৃতির নারী। কৈশোর থেকেই লেখাপড়া ছেড়ে তিনি পিতার সংসারে বিভিন্ন উপার্জন কর্মে সহযোগিতা করতেন। হাঁস-মুরগি প্রতিপালন, তরিতরকারির আবাদ, বাবার সাথে কৃষিকাজ করা ছিল তাঁর নিয়মিত কাজ। আত্মীয়স্বজনের সহযোগিতায় যশোর জেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের মধুগ্রামে খোরশেদ আলীর সাথে তাঁর বিয়ে হয় ১৯৫৫ সালে। স্বামী খোরশেদ আলী পারিবারিকভাবেই অত্যন্ত গরিব ছিলেন। নিয়মিত দিনমজুরি দিয়ে সংসার চালাতে হতো তাঁকে। মাহমুদা খানম স্বামীর সংসারে এসে স্বামীকে বিভিন্নভাবে অর্থনৈতিক সহযোগিতা করতেন। তিনি নিজের কাজ ছাড়াও এলাকার অন্য পরিবারের কাঁথা সেলাই, ধানভানার কাজ করতেন। এছাড়া খেজুরের পাটি বুনে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করতেন। এ কারণে তিনি তাঁর এলাকার অনেক গ্রাম চিনতেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ সম্পর্কে তাঁর নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন— যশোর শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে বুড়িভৈরব নদীর পাশে, যশোর ক্যান্টনমেন্টের পিছনের দিকে তাঁদের মধুগ্রামটি অবস্থিত। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে গ্রামটির অবস্থান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর-পরই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের জন্য প্রচুর লোক এই এলাকায় অবস্থান নেয়া শুরু করে। কারণ গ্রামটি নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন এবং অনেকটা নিরিবিলি। এ সময়ে মাহমুদা ছয় সন্তানের জননী। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি যশোর এলাকায় পাকবাহিনী নির্বিচারে হত্যা করে নিরীহ বাঙালিদের। তখন বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন মধুগ্রামে এসে আশ্রয় নেয়। তাদের নিকট থেকে পাকবাহিনীর ভয়াবহ নির্যাতনের কথা জানতে পারেন মাহমুদা দিনে দিনে পাকবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদরদের অত্যাচার বাড়তে থাকে। মাহমুদারও ক্ষোভ এবং ঘৃণা বাড়তে থাকে পাকবাহিনীর প্রতি । এক সময়ে সমস্ত পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ও ঘৃণা মাহমুদাকে প্রতিবাদী করে তোলে। সুযোগ খুঁজতে থাকেন মাহমুদা ও তাঁর স্বামী মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের জন্য। কিন্তু মে মাস পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের তেমন সুযোগ পান নি তাঁরা।

মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে রবিউল আলম ওরফে গাজী এবং আবুল কালাম ওরফে কালু নামে দুইজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এবং কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা দুপুরবেলা মাহমুদার বাড়িতে আসেন। তাঁরা দুপুরে তাঁদের বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করেন। তাদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে মাহমুদার স্বামী প্রথমে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। মুক্তিযোদ্ধারা মে মাসের শেষদিকে মাহমুদার বাড়িতে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করেন। নিজ বাড়িতে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপিত হলে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সুযোগ হয় মাহমুদার। মাহমুদা খানম জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। ক্যাম্পে তিনি সশস্ত্র প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেন। মাহমুদাকে প্রশিক্ষণ দেন তাঁর স্বামী খোরশেদ আলী। এছাড়া কমান্ডার রবিউল আলম ও কমান্ডার কালামের নিকট থেকেও তিনি প্রশিক্ষণ পান ছদ্মবেশ ধারণ সম্পর্কে। তিনি যে সমস্ত আগ্নেয়াস্ত্রের প্রশিক্ষণ পান তার মধ্যে গ্রেনেড ও রাইফেল অন্যতম। তবে রাইফেলের চেয়ে তাঁর নিকট গ্রেনেড ছোড়া সহজ ছিল। এই অস্ত্রের প্রশিক্ষণটি তাঁকে যে-কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য দেয়া হয়েছিল।

ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের রান্না করাসহ তাদের খাদ্য সংগ্রহ করার দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিনিধি হিসাবে এলাকার প্রতিটি পাড়ায়, বাড়ি বাড়ি ঘুরে খাদ্য সংগ্রহ এবং ইনফর্মার হিসেবে কাজ করতেন। তিনি কখনো ভিক্ষুক, কখনো কুলবধূ, কখনো পাগলিনী, কখনো বা ফেরিওয়ালা হিসেবে তথ্য সংগ্রহ, অস্ত্র ও গোলাবারুদ আনা-নেয়ার কাজ করেছেন। তাঁর বিচক্ষণতা ও দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে কমান্ডার তাঁকে ক্যাম্পের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিতেন। কমান্ডারের নির্দেশে বিভিন্ন সময় ক্যাম্পে অস্ত্রশস্ত্র রক্ষণাবেক্ষণ এবং যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহের দায়িত্বও অত্যন্ত নিখুঁতভাবে পালন করেছেন তিনি। দেশ স্বাধীনের আগে পর্যন্ত তিনি তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব অতিশয় বিচক্ষণতার সাথে পালন করেছেন।

যুদ্ধ শেষ হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা ঘরে ফিরেছেন। মাহমুদাও আবার সংসার জীবন শুরু করেছেন। পাকিস্তানি আগ্রাসন ও নির্যাতন থেকে মুক্তি পেয়েছেন, কিন্তু মুক্তি পান নি দারিদ্র্য থেকে। দারিদ্র্যের সাথে আজও লড়াই করতে হচ্ছে মাহমুদাকে।

বর্তমানে তাঁর ৫ ছেলে ও ৫ মেয়ে। ছেলেমেয়েদের সবার বিয়ে হয়েছে। ছেলেরা পৃথক সংসার করছেন। তিনি তাঁর স্বামীকে নিয়ে অভাবের সংসারে হাবুডুবু খাচ্ছেন। তাঁর স্বামী বৃদ্ধ, কাজ করার শক্তি নাই বললেই চলে। বাড়ির সামনে একটি মুদি দোকান আছে তাঁর স্বামীর। মুদি দোকান থেকে যে সামান্য আয় হয় তা দিয়ে কোনোমতে চলে মাহমুদার সংসার।

বাড়তে থাকে। মাহমুদারও ক্ষোভ এবং ঘৃণা বাড়তে থাকে পাকবাহিনীর প্রতি । এক সময়ে সমস্ত পুঞ্জীভূত ক্ষোভ ও ঘৃণা মাহমুদাকে প্রতিবাদী করে তোলে। সুযোগ খুঁজতে থাকেন মাহমুদা ও তাঁর স্বামী মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের জন্য। কিন্তু মে মাস পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের তেমন সুযোগ পান নি তাঁরা।

মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে রবিউল আলম ওরফে গাজী এবং আবুল কালাম ওরফে কালু নামে দুইজন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এবং কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা দুপুরবেলা মাহমুদার বাড়িতে আসেন। তাঁরা দুপুরে তাঁদের বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া করেন। তাদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে মাহমুদার স্বামী প্রথমে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। মুক্তিযোদ্ধারা মে মাসের শেষদিকে মাহমুদার বাড়িতে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করেন। নিজ বাড়িতে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প স্থাপিত হলে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সুযোগ হয় মাহমুদার। মাহমুদা খানম জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। ক্যাম্পে তিনি সশস্ত্র প্রশিক্ষণও গ্রহণ করেন। মাহমুদাকে প্রশিক্ষণ দেন তাঁর স্বামী খোরশেদ আলী। এছাড়া কমান্ডার রবিউল আলম ও কমান্ডার কালামের নিকট থেকেও তিনি প্রশিক্ষণ পান ছদ্মবেশ ধারণ সম্পর্কে। তিনি যে সমস্ত আগ্নেয়াস্ত্রের প্রশিক্ষণ পান তার মধ্যে গ্রেনেড ও রাইফেল অন্যতম। তবে রাইফেলের চেয়ে তাঁর নিকট গ্রেনেড ছোড়া সহজ ছিল। এই অস্ত্রের প্রশিক্ষণটি তাঁকে যে-কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য দেয়া হয়েছিল।

ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের রান্না করাসহ তাদের খাদ্য সংগ্রহ করার দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিনিধি হিসাবে এলাকার প্রতিটি পাড়ায়, বাড়ি বাড়ি ঘুরে খাদ্য সংগ্রহ এবং ইনফর্মার হিসেবে কাজ করতেন। তিনি কখনো ভিক্ষুক, কখনো কুলবধূ, কখনো পাগলিনী, কখনো বা ফেরিওয়ালা হিসেবে তথ্য সংগ্রহ, অস্ত্র ও গোলাবারুদ আনা-নেয়ার কাজ করেছেন। তাঁর বিচক্ষণতা ও দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে কমান্ডার তাঁকে ক্যাম্পের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিতেন। কমান্ডারের নির্দেশে বিভিন্ন সময় ক্যাম্পে অস্ত্রশস্ত্র রক্ষণাবেক্ষণ এবং যুদ্ধক্ষেত্রে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহের দায়িত্বও অত্যন্ত নিখুঁতভাবে পালন করেছেন তিনি। দেশ স্বাধীনের আগে পর্যন্ত তিনি তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব অতিশয় বিচক্ষণতার সাথে পালন করেছেন।

যুদ্ধ শেষ হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা ঘরে ফিরেছেন। মাহমুদাও আবার সংসার জীবন শুরু করেছেন। পাকিস্তানি আগ্রাসন ও নির্যাতন থেকে মুক্তি পেয়েছেন, কিন্তু মুক্তি পান নি দারিদ্র্য থেকে। দারিদ্র্যের সাথে আজও লড়াই করতে হচ্ছে মাহমুদাকে।

বর্তমানে তাঁর ৫ ছেলে ও ৫ মেয়ে। ছেলেমেয়েদের সবার বিয়ে হয়েছে। ছেলেরা পৃথক সংসার করছেন। তিনি তাঁর স্বামীকে নিয়ে অভাবের সংসারে হাবুডুবু খাচ্ছেন। তাঁর স্বামী বৃদ্ধ, কাজ করার শক্তি নাই বললেই চলে। বাড়ির সামনে একটি মুদি দোকান আছে তাঁর স্বামীর। মুদি দোকান থেকে যে সামান্য আয় হয় তা দিয়ে কোনোমতে চলে মাহমুদার সংসার।

error: Content is protected !!