“যুক্তিবাদ দিয়ে কি মারাদোনার পায়ের জাদু ব্যাখ্যা করা যায়? যায় না।” কথাগুলো আমাকে বলেছিলেন ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবল ফরোয়ার্ড অসীম মৌলিক। মারাদোনা, জিদান, বেকহ্যাম থেকে রোনাল্ডো কেউ-ই হঠাৎ করে পায়ের জাদু অর্জন করেননি। এঁরা ফুটবলকে জীবনের শ্বাস-প্রশ্বাস করে নিয়েছিলেন। এঁরা প্রত্যেকেই ছ-সাত বছর বয়স থেকে ফুটবল শিখতে শুরু করেছেন বিভিন্ন ক্লাবের শিক্ষণকেন্দ্রে বা আকাদেমিতে। এঁদের কোচরা ফুটবল খেলার বিবর্তনের খুঁটিনাটি খবর রাখেন। বিভিন্ন ক্লাব, ইউরোপিয়ান বা লাতিন আমেরিকান সার্কিটের ফুটবল প্রতিযোগিতার ভিডিও ক্যাসেট দেখেন বারবার। স্পোর্টস মেডিসিনের সাহায্য নেন। প্রয়োজনে সাহায্য নেন মনোবিদের। আর সবচেয়ে বড় কথা যে বয়সে যেগুলো শেখালে ভাল, সে বয়সে সেগুলোই শেখান ।
বিশ্ব-স্তরের ফুটবলাররা প্রত্যেকেই ছ-সাত বছর বয়েস থেকে চেষ্টা করেছেন যত বেশি সম্ভব বলের সঙ্গে পায়ের চেটো, থাই, মাথা, কাঁধের সম্পর্ক গড়ে তুলতে। এইসব প্রত্যঙ্গ যত বেশি বলের স্পর্শ পাবে, বল ততই বাধ্য হবে। বল নিয়ে কিশোর মারাদোনারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা নাচিয়ে গেছেন চেটো, থাই ও মাথার আলতো স্পর্শে। এই বয়সে ছোট-ছোট স্ট্রোকে বল নিয়ে দৌড়নো অভ্যেস করেছেন। এ সবে ‘টাচ’ বেড়েছে। খুদে খেলোয়াড়রা বুঝতে শিখে গেছে, কতটা জোরে মারলে বল কোথায় যাবে। এইভাবে তৈরি করা হয় বছর পাঁচেক ধরে। তারপর আসে বল কন্ট্রোল, ট্যাকলিং, শুটিং, পাসিং, সেন্টার, ড্রিবলিং, ভলি, ফ্রি-কিক, গোলকিপিং, অ্যান্টিসিপেশন গড়ে তোলার পর্যায়। একজন ভাল হেডার জানেন, ঠিক কখন লাফালে বলটা ছুঁতে পারবো। সেকেন্ডের ভগ্নাংশে বুঝে নিতে হবে এবার কী করতে হবে, বলটা মাটিতে ড্রপ খেয়ে যাবে, না-কি অরক্ষিত জায়গা দিয়ে গোলে ঠেলতে হবে। ফ্রি-কিক টেকারকে বুঝতে হবে কোন জায়গায় সোয়ার্ভ করালে গোলকিপার হতচকিত হবেন। এমন ফ্রি-কিকের জন্যেই তো বেকহ্যাম ও কার্লোসের এতো নাম। একজন ভাল পাসারকে জানতে হবে ছোট ছোট পাস খেলে দলকে কীভাবে আক্রমণে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, কখন ডিফেন্স চেরা পাস বাড়াতে হয়। সুইং-মেশান-পাস দিলে অনেক সময় ডিফেন্ডারদের অ্যান্টিসিপেশনে গোলমাল হয়ে যায়। গোলকিপিং- এর বিজ্ঞান বলতে গেলে সবচেয়ে বেশি পাল্টেছে। এখন গোলকিপার শুধুমাত্র লাস্ট লাইন অফ ডিফেন্স নন, ফার্স্ট লাইন অব অ্যাটাকও। একই সঙ্গে গোলকিপারকে হতে হয় একজন ভাল জিমনাস্ট। অ্যান্টিসিপেশন অত্যন্ত জরুরি বুঝতে হবে ঠিক কখন বের হবো, সোয়ার্ভিং সেন্টারগুলো কোথায় আসতে পারে।
শুধু ফুটবল খেলার ক্ষেত্রে নয়, সমস্ত খেলার উন্নতির জন্যই যুক্তি
ও বিজ্ঞানকে বেশি বেশি করে কাজে লাগানো হচ্ছে।
কাজে লাগানো হচ্ছে মনোবিদদের।
এই ছোট্ট আলোচনা থেকে আমরা নিশ্চয়ই পেয়ে গেছি, মারাদোনার পায়ের জাদুর যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা।
“অলৌকিক নয়,লৌকিক- ৫ম খন্ড ” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ
অধ্যায়ঃ এক
ধর্মঃ সংজ্ঞায় গোলমাল
অধ্যায়ঃ দুই
উপাসনা ধর্মঃ প্রাচীন মত
♦ উপাসনা- ধর্মের (religion) উৎপত্তি
♦ একঃ দৈব-প্রত্যাদেশ বা অপৌরুষেয় প্রত্যাদেশ
♦ দুইঃ ঈশ্বরে বিশ্বাস; সহজাত প্রবৃত্তি
♦ তিনঃ ধর্মীয় আচরণ বাদে ঈশ্বর বিশ্বাস
♦ আধুনিক নাস্তিক্যবাদ ‘মার্কসবাদ’
অধ্যায়ঃ তিন
‘সমকালীন যুক্তিবাদ’ নাস্তিক্যবাদের সঙ্গে বাড়তি কিছু
♦ ‘সমকালীন যুক্তিবাদ’ চির নতুন
♦ তোমার আমার দুই চেতনার ভালো-খারাপ
♦ মারাদোনার পায়ের জাদু ও যুক্তিবাদ
♦ প্রেমের রহস্যময়তা ও যুক্তিবাদ
♦ ‘ঈশ্বরে বিশ্বাস’, ‘বিজ্ঞানের বিশ্বাস’ : আকাশ-পাতাল
অধ্যায়ঃ চার
উপাসনা ধর্মঃ আধুনিক মত
♦ উপাসনা-ধর্ম : নৃতত্ত্ব ও সমাজতত্ত্বের দৃষ্টিতে
অধ্যায়ঃ পাঁচ
ভারতবর্ষের জাদু সংস্কৃতি
♦ আদিম উপজাতি, আধুনিক উপজাতিঃ একই কথা
♦ ধর্মীয় জাদু বিশ্বাস ও ম্যাজিক শোঃ দুই পৃথিবী
অধ্যায়ঃ ছয়
তন্ত্রের প্রথম ধাপ যোগ, তারপর…
অধ্যায়ঃ সাত
বৈদিক সাহিত্য, জাদু-বিশ্বাস, যজ্ঞে যৌনাচার
♦ সত্য খোঁজে মুক্তমন, হিসেব কষে ভন্ড
♦ বৈদিক সাহিত্যের গপ্পো ও দুই ডাক্তার
♦ বৈদিক সাহিত্যে জাদু-বিশ্বাস, যজ্ঞের নামে যৌনাচার
অধ্যায়ঃ আট
হিন্দু উপাসনা-ধর্মে তন্ত্র
অধ্যায়ঃ নয়
শক্তিধর্মে তন্ত্র
অধ্যায়ঃ দশ
রেইকি গ্রাণ্ডমাষ্টার, ফেং শুই ক্ষমতার দাবিদার, জ্যোতিষী ও অলৌকিক ক্ষমতার দাবিদারদের প্রতি