সুমিত্রা পদ্মনাভন
ধর্ম নিয়ে আমি একটা খুব সহজ লেখা লিখতে চাই, যেটা সবাই পড়ে বুঝতে পারবে। ধর্ম যেহেতু সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকেই প্রভাবিত করে, তাই ধর্মকে একটা কঠিন গবেষণার বিষয় হিসেবে দেখা উচিত নয় । জন্ম, মৃত্যু বা ভালোবাসার মত বিশ্বজনীন এবং সর্বজনগ্রাহ্য বিষয় হিসেবেই দেখা উচিত, দেখান উচিত।
কিন্তু সব সময় তো তা হয় না। আমরা প্রায়শই দেখি ধর্মবিষয়ক আলোচনা হয় কিছুটা গবেষণামূলক, কিছুটা উপদেশমূলক। তার ভাষাও হয় সাধারণের ধরা ছোঁয়ার বাইরে । এই দুর্বোধ্যতাই ধর্মতত্ত্বকে সাধারণের চোখে রহস্যময় (mystic) করে তোলে । ধর্মগুরুদের করে দেয় অতিমানাব । মন্ত্রোচ্চারণের আলো-আঁধারি যে ধর্মীয় বাতাবরণ তৈরি করে, তাতে সাধারণ মানুষের মনে যে ভয়-ভক্তির সঞ্চার হয়, তার অনেকটাই না বোঝার কারণে । অর্থাৎ একটা বিষয়কে ভালো করে জানি না, বুঝি না বলেই তাকে ভক্তি করি তাতে আকৃষ্ট হই। এই যে উল্টো কারণে আকৃষ্ট হওয়া এতেই যুক্তিবাদী আধুনিক মানুষের আপত্তি । এখানেই বিজ্ঞানের সঙ্গে ভক্তিবাদের বিরোধ । একটি সহজ উদাহরণ দেই : একেক পূজোর প্রচলিত সংস্কৃত মন্ত্র যদি সোজা বাংলায় অনুবাদ করে গড় গড় করে পড়ে যাওয়া যায়- তাহলেই তার সব রহস্যময়তা ঘুচে যাবে। তখন তার আকর্ষণ কমে যেতে বাধ্য। অনেক সময় কিছুটা হাস্যকর ও অপ্রাসঙ্গিকও মনে হতে পারে। আবার তার মধ্যে কিছু চিরন্তন সত্যও পাওয়া যেতে পারে। আর সেটি জেনে বেছে নেয়ার জন্যেই দরকার আগে বুঝে নেয়া । প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের অপ্রয়োজনীয় বাহ্যিক রীতি নীতিকে বাদ দিতে হলে তাই প্রথমে ধর্ম কি ও কেন এটা সহজ ভাবে বুঝতে হবে। এখানে আমি ধরে নিচ্ছি আমরা সবাই বর্তমান সামাজিক অবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের যে ভূমিকা তাতে খুশি তো নইই বরং কিছু পরিবর্তন ও বিকল্প চাইছি । চাইছি যুক্তিবোধ ও ন্যায়বিচার।
প্রথমে দেখা যাক ধর্ম কথাটার অর্থ কি? চলন্তিকা বাংলা অভিধানে এর মানে করা হয়েছে সৎকর্ম, সদাচার, পুণ্যকর্ম, কর্তব্যকর্ম, সমাজ হিতকর বিধি।
আরেকটি অর্থ হল— পরম্পরাগত সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান, উপাসনা পদ্ধতি, সংস্কার রীতিনীতি এবং ঈশ্বর পরকাল ইত্যাদি বিষয়ক মতামত ।
তৃতীয় অর্থে বস্তু বা ব্যক্তি নির্বিশেষে- স্বভাব, গুণ বা শক্তি ।
এই শেষ প্রসঙ্গটি বস্তুর উপর যেভাবে প্রযোজ্য অর্থাৎ পদার্থের ধর্ম, আগুনের ধর্ম, তরল বা মৌলিক পদার্থের ধর্ম, সেই অর্থে মানুষের উপর প্রয়োগ করলে পাই মানুষের বিশেষ স্বভাব বা গুণ। যদিও আমরা জানি মনুষের গুণের বদলে মেলা দোষও থাকতে পারে- আমরা তাকে ধর্ম বলবো না। ধর্ম বলবো সেই সব বিশেষত্বকে যা আদর্শ মানুষের গুণাবলী, যা মানুষকে সভ্যতার পথে এতদূর এগিয়ে নিয়ে এসেছে-মানুষকে মানুষ করেছে। অর্থাৎ প্রথম সংজ্ঞানুযায়ী সৎকর্ম, সদাচার, কর্তব্যকর্ম সমাজহিতকারিতা ইত্যাদি ।
ধর্মের এই বিস্তৃত সংজ্ঞা থেকে এসেছে দ্বিতীয় সংজ্ঞা, যাকে আমরা বলতে পারি ধর্মের সংকীর্ণ সংজ্ঞা। সংকীর্ণ কারণ এটা স্থান কাল ভেদে পাল্টেছে, পাল্টাচ্ছে। বিভিন্ন ধর্মের উপাসনা পদ্ধতি আচার অনুষ্ঠান কতটা আলাদা তা তো আমরা জানি, ঈশ্বর সম্পর্কে মতও হরেক রকম। বৌদ্ধধর্মে ঈশ্বর নেই। হিন্দুদের আছে তেত্রিশ কোটি দেবতা আর ব্রাহ্মধর্মে পরমপিতা হচ্ছে নিরাকার ব্রহ্ম। তাহলে এই দ্বিতীয় সংজ্ঞা থেকেই আমরা পাচ্ছি বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের রূপগুলো। অথচ ‘সমাজহিতকর পুণ্যকর্ম বা কর্তব্যকর্ম’ সংজ্ঞাটি কিন্তু বিশ্বজনীন রূপ নিতে পারতো- হতে পারতো সকলের জন্য এক ধর্ম। কিন্তু তা তো হয়নি। স্থানকাল ভেদে আচার অনুষ্ঠান পরম্পরাগত বিশ্বাস পাল্টে গেছে। কারণ প্রতিটি আলাদা গোষ্ঠীপতি বা গ্রামের মোড়ল যেমন তার নিজের মতো করে নিয়মাবলী তৈরি করে, ধর্মের প্রবর্তকরাও তাই করেছে। প্রতিষ্ঠাতার রচনায় ও প্রচারে তাই পৃথক পৃথক রূপ নিল প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলো। আর নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে সচেষ্ট হল ধর্মের মোড়লরা ও তাদের অনুসরণকারীরা তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে। প্রতিটি ধর্মগুরু তাই আজও সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা ও উদার প্রগতিবাদী কথার ফাঁকে ফাঁকে নিজের ধর্মমতটির শ্রেষ্ঠত্বের কথা মনে করিয়ে দিতে ভোলেন না। অনুগামীরা ক্রমশই ভুলে যেতে থাকলো ধর্মের আসল সমাজহিতকর উদ্দেশ্য । প্রকট হতে থাকল আচার বিচার প্রকরণ পদ্ধতি। মাঝে মাঝে প্রতীকী সমাজসেবা করে পুণ্যার্জন করার মধ্যে আবদ্ধ রইলো তাদের সদাচার। বাড়তে লাগল বিভেদ। শুরু হল মৌলবাদীদের তাণ্ডব বিশ্বজুড়ে। মৌলবাদীরা তো ধার্মিকই। অতিমাত্রায় ধার্মিক।
এখন আর পৃথিবী পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন ছোট ছোট গোষ্ঠীতে বিভক্ত নয় । এখন তাই আলাদা আলাদা নিয়মকানুনগুলো সমন্বয়ের চেয়ে বেশি সংঘর্ষের কারণ হয়ে উঠেছে স্বাভাবিকভাবেই । শিক্ষিত মহলের একটি প্রিয় উক্তি হচ্ছে— ‘কেন? সব ধর্মেই তো ভালোবাসার কথা, সহনশীলতার কথা বলা হয়েছে— তাহলে ধর্ম কি দোষ করলো? থাক না প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলো মিলেমিশে।’ তারপর একটু গভীরে গেলেই উদারতার মুখোশ ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে আসল চেহারা। তখন দেখা যায় প্রতিটি তথাকথিত ধার্মিক মানুষই কি মমতায় আঁকড়ে থাকে বাপ ঠাকুর্দার ধর্মটিকে, কি সযত্নে এড়িয়ে যায় বা ভুলে যায় জন্মসূত্রে পাওয়া ধর্মটির দোষত্রুটিগুলোকে। কি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বিশ্লেষণ করে পরধর্মের ত্রুটি বা ভ্রান্তিবিশ্বাসকে। ভুলে যায় তার ধর্মটি সে নেহায়তই উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছে— দেখে শুনে বেছে নেয়নি। তাই শ্রেষ্ঠ বলে গর্ব করা সাজে না ।
অর্থাৎ বিরোধ যতো তা সবই মূলত আচার-অনুষ্ঠান, উপাসনা পদ্ধতি, ঈশ্বর সম্পর্কিত মতামত- এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। মিল যেখানে তা হলো ন্যায়বোধ, কর্তব্যকর্ম, সৎগুণ, সমাজ কল্যাণ ইত্যাদি বিষয়ে। তাহলে আজ এই বিজ্ঞানের যুগে দাঁড়িয়ে আমরা কেন ভুলে যাবো ধর্মের আসল উদ্দেশ্য? কেন আচার-অনুষ্ঠান, বাহ্যিক পদ্ধতি প্রকরণকে ছেঁটে ফেলতে পারব না? কেন মেনে নেব না মানবিক গুণকেই ধর্ম বলে?
নিশ্চয়ই পারব। পুরোনো ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মগুরুদের আদেশকে অভ্রান্ত বলে মেনে না নিলেই পারব। সমাজবিজ্ঞানে, প্রকৃতিবিজ্ঞানে যা পরীক্ষিত সত্য তা নিয়ে খোলা মনে পড়াশোনা করে নিলেই পারব ন্যায়-অন্যায়ের, ঠিক-ভুলের বিচার করতে। বেরিয়ে আসতে পারব ভয় ও অজ্ঞতাজনিত অন্ধভক্তির গণ্ডি থেকে। তখন আর মন্ত্রকে যাদুশক্তি বলে ভুল হবে না, কষ্টকর অমানবিক আচার বিচারকে আদর্শ ধর্মাচরণ বলে ভুল হবে না। সত্যকে এড়িয়ে না গিয়ে তাকে জানার চেষ্টাই সঠিক ধর্মাচরণ। এই জানার চেষ্টায়ই মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। মানবধর্ম।
১৯৮২ সালের জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে রাষ্ট্রসংঘ ঘোষণা করেছে— ‘প্রতিটি মানুষের স্বাধীনতা আছে ব্যক্তিগতভাবে বা সংঘবদ্ধভাবে নিজের পছন্দমত বিশ্বাস বা ধর্মকে অনুসরণ করার।’ অর্থাৎ একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তার নিজের পছন্দমত ধর্মমত বা বিশ্বাস গ্রহণ করতেই পারেন। পিতামাতার ধর্মকেই মেনে নিতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। অথচ অনেকেই এই সহজ কথাটা জানেন না । সেই ছোট বেলায় চাপিয়ে দেয়া, না বুঝে মন্ত্রোচ্চারণ করা, ভয়-ভক্তি মেশানো ধর্মের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে তাই অনেকেই এখনও মনে করেন অসম্ভব বা অন্যায়।
প্রথম মানবধর্ম সমাজের ধারণা অবশ্য প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৯ সালে নিউইয়র্কে। অর্থাৎ রাষ্ট্রসংঘের অধিকার ঘোষণার অনেক আগে। তাই মানবধর্মীরা তখন ধর্মগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি পাননি। কিন্তু আজ UNO-এর ধারা অনুযায়ী স্বীকৃতি না পাওয়ার কোন কারণ নেই । ১৯২৯ এ পাশ্চাত্যে ‘Humanism’ নামে যে নতুন মতবাদের জন্ম হয়েছিলো সেটি ছিলো ইহুদী-খ্রিস্টান কট্টরপন্থীদের অবিরাম সংঘর্ষের একটা ফলস্বরূপ। তখনকার গণ্যমান্যরাই ছিলেন এই দলে । প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে ছিলেন একজন ইহুদী (জন্মসূত্রে) ধর্মযাজক ও কয়েকজন একেশ্বরবাদী পাদ্রী। তখনকার সমাজে সমস্ত ব্যাপারে ধর্মীয় ধ্বজাধারীদের খবরদারির অবশ্যম্ভাবী প্রতিক্রিয়া হিসেবেই এই নতুন আদর্শ, নতুন জীবন দর্শন উঠে এসেছিল। এরা মানবধর্মকে অন্য সমস্ত প্রচলিত ধর্মের বিকল্প হিসাবে দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন । এদের উপদেষ্টামণ্ডলীতে ছিলেন আলবার্ট আইনস্টাইন, উইল ডুরান্ট, থেমাস ম্যান, জুলিয়ান হাক্সলি প্রমুখ জ্ঞানী গুণী বোদ্ধারা। এদের পথপ্রদর্শক ছিল আধুনিক প্রকৃতিবিজ্ঞান। এদের আস্থা ছিল, প্রত্যয় ছিল । ছিল না অন্ধবিশ্বাস। এদের আস্থা ছিল গণতন্ত্রে, বিজ্ঞানে, সব মানুষের সমান অধিকারে। সে যুগে ধর্ম হিসেবে এটি স্বীকৃতি পায়নি ।
এখন এই ধর্মীয় স্বাধীনতার যুগে অনেক বিশ্বাস যা Cult বা ধর্মীয় গোষ্ঠী হিসেবে উঠে এসেছে, তার আলাদা স্বীকৃতি চাইছেন। যেমন রামকৃষ্ণ-ভক্তরা রামকৃষ্ণপন্থী (Ramkrishnaite) হিসেবে আলাদা ধর্মীয় স্বীকৃতি চাইছিলেন বেশ কিছু বছর ধরেই, কিন্তু তারা মূলত হিন্দু বলেই তাদের এই আবেদন বাতিল করে দেয় সরকার ।
অবাক লেগেছিল যখন একজন সফল আবেদনকারীর চাকুরীতে ঢোকা নাকচ হয়ে যায় শুধু ‘ধর্ম’ কলামে ‘মানবতাবাদ’ লেখার জন্য। যেন মানবিক হওয়াটা খুব গর্হিত কোন ব্যাপার। সেটা ১৯৯২-১৯৯৩ সাল। তখন যুক্তিবাদী আন্দোলন তুঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গের ছেলেমেয়েরা আবেদনপত্রে ‘ধর্ম’ কলাম তুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছে। ‘ধর্ম’ যেহেতু ব্যক্তিগতব্যাপার তাই ধর্মনিরপেক্ষ দেশে ধর্মীয় পরিচয় জানানো জরুরি নয়। যারা কোন ধর্ম মানেন না তারা কলামটা খালি রাখতে চাইলেও আপত্তি উঠেছে নানা জায়গায়। ফর্ম বাতিল করা হয়েছে অসম্পূর্ণ বলে । সেই সময় বহু মানুষ দ্বারস্থ হয় মানবতাবাদী সমিতির। এ সময় Humanists Association of India, সংস্থাটি সক্রিয় হয় মানবতাকে ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে। দেশের রাজনৈতিক, নেতাদের কাছে ও সংবাদপত্রের দপ্তরে যোগাযোগ করে ঘটনাটি জানানো হয়। যাতে একজন মানুষ নিজের ধর্ম ‘মানবতা’ বলতে পারে তার জন্য সরকারি কোনও নিয়মাবলী বা Guideline আছে কি না তা স্পষ্টভাবে জানতে চাওয়া হয় । উত্তরে রামকৃষ্ণ মিশনের ঘটনার উল্লেখ করে সবাই বলেন যে এভাবে নতুন ধর্ম তৈরি করা সম্ভব নয় ।
তারপর মানবতাবাদী সমিতি সরাসরি চিঠি পাঠায় রাষ্ট্রসংঘের অফিসে। উত্তর আসে দেরি না করেই । UNO তাদের Human rights এবং Religious rights সংক্রান্ত যাবতীয় বই ও কাগজপত্র পাঠিয়ে স্পষ্ট জানিয়ে দেয় ‘১৯৮১’ এর জেনারেল অ্যাসেম্বলিতে রাষ্ট্রসংঘ ঘোষণা করেছে প্রতিটি মানুষের যে কোন ধর্মমত গ্রহণ ও চর্চা করার স্বাধীন অধিকার আছে ।
তারপরই এই আইনি লড়াইতে যৌথভাবে নেমে পড়ে মানবতাবাদী সমিতি ও যুক্তিবাদী সমিতি। রাষ্ট্রসংঘকে চিঠি দিয়ে জানানো হয় যে ভারত UNO-র সদস্য দেশের অন্যতম হওয়া সত্ত্বেও প্রচলিত ধর্মের বাইরে অন্য ধর্মকে এখানে স্বীকৃতি দেয়া হয় না। মানবতাকেও (Humanism)ধর্ম বলে স্বীকার করা হয় না। কিন্তু UNO তার Guideline পাঠিয়ে দিয়েছে, আমরা UNO এর অন্তর্গত দেশ হিসেবে মনে করি মানবতা আমাদের ধর্ম হতে কোন বাধা নেই । এবং আইনিভাবে এই ধর্মমতকে গ্রহণ করার অধিকার আমরা প্রতিষ্ঠা করব। এই চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হয় রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী, সংসদবিষয়ক মন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও বিদেশী দূতাবাসগুলোতেও । তারপর ভারতের মানবতাবাদী সমিতির সহায়তায় কোর্টে গিয়ে ঘোষণা দিয়ে (affidavit) দলে দলে ছেলেমেয়ে মানবতাকে ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করে (১৯৯৩, ১০ ডিসেম্বর)।
১৯৯৩ এর ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস’ এ প্রথম ৫৪ জন সদস্য সদস্যা আইনিভাবে মানবধর্মী বা (Humanist) হন। এই কঠিন লড়াইটা জেতার পর এখন আর কোন বাধা নেই যে কোন রাষ্ট্রসংঘের সদস্য দেশে এই একইভাবে যে কেউ প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। আইনি কাগজে মানবধর্ম (Humanism) ঘোষিত হওয়ার পর তাকে অস্বীকার করার অর্থ কোর্টের অবমাননা করা। তারা মানবতাবাদীদের (Humanist) কার্যকলাপ শাখা বিস্তার করেছে নানাভাবে। বিভিন্ন বিজ্ঞান ক্লাব ও সাংস্কৃতিক সংস্থা স্বাধীনভাবে মানবতাবাদী আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। মানবতাবাদীদের সংখ্যা এখন আর কম নেই। তারা যেহেতু প্রচলিত ধর্মীয় রীতিনীতি মানেন না, ‘মরণোত্তর দেহদান’ কর্মসূচি তারাই এগিয়ে নিয়ে চলেছেন । মৃত্যুর পর দেহটাকে প্রচলিত প্রথায় সৎকার না করে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ব্যবহারে কাজে লাগানোর জন্য স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন স্বাস্থ্যদপ্তরের নিয়ম মত ।
তবু এখনও লক্ষ কোটি মানুষ আছেন যাঁরা এই আন্দোলন থেকে শতযোজন দূরে। অনেকে আছেন যাঁরা এতসব জানার পরও মনে করেন এই প্রচলিত ধর্মকে বাদ দেয়াটা এখনও সম্ভবপর নয়। চেষ্টা করাটা সময়ের অপচয়। মানবতাবাদী আন্দোলনের সাফল্যই তাদের সংশয়ের জবাব। অনেক শুভানুধ্যায়ী আছেন যারা মনে প্রাণে সত্যিকারের মানবতাবাদী কিন্তু খাতায় কলমে মানবধর্মী হননি । হয়তো তাদের কিছু দ্বিধা আছে। হয়তো আত্মীয় বন্ধুদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন মনে করে এগিয়ে আসতে সংকোচ বোধ করছেন। এরকম মানুষদের কাছ থেকে দুটো সুচিন্তিত মতামত বা প্রশ্ন পেয়েছি যেগুলোর উত্তর দেয়াটা জরুরি। প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে- এত ধর্ম থাকতে আবার একটা নতুন ধর্ম ‘মানবধর্ম’? তাহলে আবার বিচ্ছিন্ন হয়ে যাব না তো? মানবিক হতে হলে আবার কাগজে সই করতে হবে কেন? আবার একটি নতুন ধৰ্ম কেন?
এর উত্তরে একটা কথা বুঝতে হবে, প্রথম যারা মানবতাবাদী হয়েছেন— তারা সবাই জন্মসূত্রে কোন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মাবলম্বী ছিলেন। কিন্তু সেই উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া ধর্মটিকে তারা ত্যাগ করেছেন। যতটা নিরপেক্ষতা তাদের আছে পিতামাতার ধর্মের প্রতি ততটাই নিরপেক্ষতা আছে অন্যান্য সব ধর্মের প্রতি তাই তারা বিচার করে নির্দ্বিধায়, পক্ষপাতহীনভাবে। তারা কিন্তু কেউ সমাজবিচ্ছিন্ন নন । প্রত্যেক ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ছড়িয়ে আছেন এমন মানুষ যারা প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের ত্রুটি ও বিভ্রান্তিগুলোর সঠিক নিরপেক্ষ বিচার করেন নির্দ্বিধায়। নাকচ করেন হাসিমুখে । অসততা বা ভণ্ডামির গন্ধ পেলে বাতিল করেন সহজেই । এমন নিরপেক্ষ সৎ সাহসী মানুষেরা সর্বত্রই আছেন । তারা আত্মীয় বন্ধু পরিবৃত্ত হয়ে আছেন । তারা শারদীয় উৎসবে আনন্দ করেন, কিন্তু অঞ্জলি দেবার প্রয়োজন বোধ করেন না। ঈদের উৎসবে খাওয়া দাওয়া করেন, কোরবানির ধার ধারেন না। পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখতে কেদারনাথের পথে পাড়ি দেন, মন্দিরে পুজো দেন না । তারা কেউ আলাদা হননি। তারা নিজেদের পরিচয় দেন মানবতাবাদী, যুক্তিবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ বলে। তারা প্রভাবিত করেন বন্ধুদের। নিজেরা বর্জন করেন সমস্ত রকম অর্থহীন আচার- অনুষ্ঠানকে। ধর্মপরিচয় বহনকারী পদবী বা পোশাক বা স্টাইল বর্জন করেন। এদের অনেকেই পদবী ত্যাগ করেছেন, বিয়ে করেছেন Special Marriage Act- এর আইনে, মেয়েরা বিয়ের পরও স্বামীর পদবী নেননি, স্টাইল করেন নিজের রুচি অনুযায়ী, তবে কোথাও কোনা বাধ্যবাধকতা নেই । মানবতাধর্মী হতে গেলে কোন কঠিন পরীক্ষা দিতে হয় না, দীক্ষা নিতে হয় না, কোনও পুস্তক বা ধর্মগুরুর প্রতি আনুগত্য দেখাতে হয় না। কাজটা তাই খুব কঠিন নয়। চাই শুধু মানসিক দৃঢ়তা, সোচ্চার ঘোষণা— ‘আমি মানবতায় বিশ্বাসী। কোনও প্রচলিত ধর্ম মানি না।’
এই ‘মানি না’ বলাটা সকলের পক্ষে সহজ হয় না। কারণ মেনে চলারাই দলে ভারি, তারা সংগঠিত। তাই মানবতাবাদীদেরও সংগঠিত হওয়ার সময় এসেছে। যাঁরা প্রতিকূল পরিবেশে একা লড়ছেন, তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেই এই সংগঠিত আন্দোলন আজ দানা বাধছে। তাদেরকে শুধু ‘নাস্তিক’ পরিচয় আশ্রয় দিতে পারে না। তাই যতদিন না ধর্ম পরিচয় অবান্তর বা অপ্রয়োজনীয় বলে স্বীকৃত হচ্ছে ততদিন বিকল্প হিসেবে মানবতাই শ্রেষ্ঠ ধর্মমত। সমস্ত বঞ্চিত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে, সমাজে মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে এই মানবতাবাদীদের একজোট হতে হবে। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে দেখা যাবে সমস্ত পৃথিবীতে যত মানবতাবাদী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তারা সম্মিলিতভাবে অন্য সব ধর্মাবলম্বীদের ছাড়িয়ে যাচ্ছে। যেদিন পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ যুক্তিবাদী ও মানবতাবাদী হয়ে উঠবেন- সেদিন আর প্রয়োজন হবে না সংগঠন গড়ার বা সই করে ‘মনুষ্যধর্মাবলম্বী’ হওয়ার।
দ্বিতীয় প্রশ্নটি হচ্ছে- ধর্মকে ঘিরেই আমাদের যত উৎসব, শিল্প, সংস্কৃতি, আনন্দানুষ্ঠান। প্রচলিত ধর্মকে বাদ দিয়ে কি করে হবে উৎসব? ছুটি হবে কি উপলক্ষে? একেবারে যান্ত্রিক হয়ে যাবে যে সমাজজীবন!
এখন দেখা যাক ধর্মাচরণকে বাদ দিয়ে কী কী উৎসব-অনুষ্ঠান পালন করা যায়? রবীন্দ্রনাথ তার বিশ্বভারতীতে তো আজীবন চেষ্টা চালিয়ে গেলেন প্রচলিত মূর্তিপূজা আচার-বিচার বাদ দিয়ে কিভাবে উৎসবে মাতিয়ে রাখা যায় আশ্রমিকদের। আজকের মানবতাবাদীদেরও তাই বারো মাসে তেরো পার্বণ না থাকলেও চৌদ্দরকম কর্মসূচি থেকেই যায়। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়, তাছাড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিজ্ঞানমেলা রক্তদান-চক্ষুদান- দেহদান শিবির তো আছেই বছরের যেকোনও সময়ে।
সত্যিই কি ধর্ম ছাড়া অনুষ্ঠান হয় না? ছুটি হয় না?
ভেবে দেখুন তো? শিশুর জন্মের পর তার নাম হবে। সে প্রথম ভাত খাবে । তার হাতেখড়ি হবে । এগুলো সবই তো আনন্দের একেকটা উপলক্ষ । সবাই মিলে উৎসব করাই যায়, তার জন্য ঈশ্বর বিশ্বাস, পূজা প্রার্থনা, মন্ত্রোচ্চারণের কি প্রয়োজন? তাছাড়া জন্মদিন, পরীক্ষা পাস, বিবাহ (অবশ্য আইনি মতে) এ সবেই তো সাধ্য মতো আনন্দ উৎসব করা যায়। কিন্তু যুক্তিবাদী, মানবধর্মীদের কাছে কোনটাই বাধ্যতামূলক নয়। না করলেই সাংঘাতিক কিছু ক্ষতি হয়ে যাবে না। আর সময়মতো মরণোত্তর দেহদানকে সার্থক করতে হলে যথেষ্ট কাঠ-খড় পোড়াতে হয়। শ্মশান যাত্রা নাই বা হলো- আত্মীয় বন্ধুদের ডাক পড়বেই দেহ দানের ব্যবস্থাপত্র করতে। তারপর সবাই মিলে স্মরণসভার আয়োজন করাটাই শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের সবচেয়ে ভাল উপায় নয় কি? একটা ছুটির দিন বেছে নিয়ে প্রয়াত মানুষটির ছবি ও স্মৃতিকে ঘিরে গান, আলোচনা, জীবনী পাঠ সবই চলতে পারে । দিনক্ষণ দেখে গঙ্গাস্নান, যজ্ঞ, মন্ত্র, মাথা নেড়া করে অদ্ভূত পোষাক পরে কৃচ্ছ্রসাধন— এ সবই অর্থহীন আর হাস্যকর। আত্মাই যেখানে নেই সেখানে ‘আত্মার শান্তি’ ইত্যাদি অর্থহীন কল্পনা। মৃত্যুতেই জীবনের শেষ তাতে কী জীবন অর্থহীন হয়ে যায়? এক শ্রদ্ধেয় মানুষের স্মৃতি, কর্ম ও শিক্ষাই তো তাকে অমর করে। তাহলে স্মৃতিচারণই তো সবচেয় ভালো উপায় শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের । আর সাধ্য না থাকলেও কারুর মৃত্যু উপলক্ষে বহু মানুষকে ডেকে ভুরিভোজন করানোও একরকমের অশ্লীল মূর্খতা মনে কর মানবধর্মীরা। তাদের প্রতিবাদকে সোচ্চার করতে তাই মানবতাবাদীরা সবচেয়ে মারাত্মক আর অর্থহীন দুটো ভুরিভোজের নিমন্ত্রণকে সামাজিকভাবে বয়কট করে । একটি শ্রাদ্ধের খাওয়া, আরেকটি পৈতে বা উপনয়ন। একটি কিশেরাকে পৈতে পরিয়ে তাকে দ্বিজত্বে উত্তীর্ণ করা হচ্ছে জঘন্য জাত প্রথাকে স্বীকার করে নেয়ার অমানবিক প্রথা। এই অনুষ্ঠান শিক্ষিত সমাজের লজ্জা। বাকি সব প্রচলিত অনুষ্ঠানে ধর্মীয় আচার পালন বাদ দিয়ে প্রীতিভোজে অংশগ্রহণ করতে মানবধর্মীদের আপত্তি নেই। তবে কেন বিবাহে পণের ব্যাপার জানা থাকলে তাও অবশ্যই বর্জনীয় হবে ।
এইভাবে সমাজে অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে থেকেও মানবতাবাদীরা আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে এবং সুযোগ মত মানবতার প্রচার ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে থাকে। মানুষের সাম্যে বিশ্বাসী যুক্তিবাদী আন্দোলনও তো আনন্দ উৎসব ।
এতক্ষণ তো গেল পারিবারিক অনুষ্ঠানগুলো, এরপর দেখা যাক সামাজিক অনুষ্ঠান। সমস্ত রকম পুজো প্রার্থনা মন্ত্রোচ্চারণ, অলীক ঈশ্বর ভক্তি, অমানবিক ব্যয়সাপেক্ষ আচার বিচার ও পুরোহিত-নির্ভরতা বাদ দিয়ে অর্থাৎ যুক্তিহীন সমস্ত কিছু বাদ দিয়ে শুধুমাত্র আনন্দের উৎসবগুলোর একটা তালিকা করলে আমরা কি পাই?
নতুন ধান কাটার সময় ঘরে ঘরে পিঠেপুলির উৎসব দিয়ে শুরু করা যাক কোন ধর্মীয় গন্ধ ছাড়াই এটি সারা ভারতে ও দুই বাংলায় জনপ্রিয় উৎসব । শীতের পর যুক্তিবাদী দিবস ১লা মার্চ, গ্রীষ্মে নববর্ষ। বর্ষায় বৃক্ষরোপণ, তারপর শরতে আকাশ পরিষ্কার হতেই শারদীয় মেলা। তারপর ঝকঝকে আকাশে ঠাণ্ডার ছোঁয়া লাগতেই বাজি আর আলোর খেলা। মূর্তিপুজো আর পুরোহিতন্ত্র বাদ দিয়ে কি এগুলো উপভোগ করা যায় না? ১০ই ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস আর তারপরই বই মেলার তোড়জোড়। এটা একটা উদাহরণ কলকাত আর তার আশেপাশের মনুষের জন্য । এই ভাবে সময় ঋতু ও আবহাওয়া ভেদে প্রচলিত সব অনুষ্ঠানই রাখা যায়, মানুষের ঈশ্বর ভীতিকে বাদ দিয়ে। যে অর্থ ব্যয় হয় শুধু দুর্গাপূজায় তাই দিয়ে বিগত বর্ষায় বন্যা পীড়িতদের সাহায্য করেও খরচ করা যায়, প্রতি এলাকায় স্থায়ী কিছু গঠনমূলক কাজ করতে পার্ক, লাইব্রেরি, হাসপাতাল ইত্যাদি । নতুন কিছু মানেই তো কিছু মানুষের কর্ম সংস্থান, কিছু প্রতিভার বিকাশ । ছুটির দিনগুলোকে একটু অদল বদল করে নিলে কতগুলো নতুন ছুটি পাওয়া যাবে যেমন বিজ্ঞান দিবস, যুক্তিবাদী দিবস, মানবাধিকার দিবস। কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে দেশ শুদ্ধ সকলের ছুটি চলবে না। তার বদলে আপৎকালীন বিশেষ ঘটনার প্রেক্ষিতে ছুটি ঘোষণা করা হবে। যেমন বন্যাত্রাণে সাহায্য করার জন্য শহরের মানুষের ছুটি, মহামারী বা বড় রকমের দুর্ঘটনা ঘটলেও ছাত্রছাত্রীদের স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার জন্য ছুটি। তাছাড়া খুব বর্ষা বা খুব শীত বা খুব গরমে টানা ক’দিন ছুটি দিলে কাজের একঘেঁয়েমি কাটে- সময় ও শক্তির অপচয় বন্ধ হয়। অথবা রক্তদানের ছুটি, বিশ্বকাপ খেলা দেখার ছুটি ইত্যাদি কিছু নতুন যোগ করা যায় যেগুলো ধর্মনিরপেক্ষভাবে প্রতিটি মানুষই কাজে লাগাতে পারে। অবাঞ্ছিত রীতিনীতি বাদ দিলে বাদ হয়ে যাবে অনেক কিছুই, বাদ হয়ে যাবে নিষ্ঠুর বলি প্রথা, যা কোন সুস্থ মনের মানুষের অঙ্গ হতে পারে না। বাদ হয়ে যাবে দিনের পর দিন চলতে থাকা বিসর্জনের হামলা, যানজট, বাদ হয়ে যাবে অনাবশ্যক উপবাস- এটা খেও না, সেটা খেতে নেই যা অধিকাংশ ভারতীয় মহিলার পেটের রোগের গোপন রহস্য, বাদ হয়ে যাবে বহু অর্থ ও সময়ের অপচয় যে অর্থ ও সময় কাজে লাগবে সুস্থ পরিবেশ গড়তে- শিক্ষার প্রসার ঘটাতে । তাই টানা সাত দিন ছুটি বরাদ্দ থাকে বইমেলা আর সাক্ষরতা প্রসারের কাজে ।
এসবই কি মানবতাবাদীদের দিবাস্বপ্ন? নাঃ, বোধহয় এরকম দিন আসতে আর বেশি দেরি নেই ।
দেরি যে নেই, তারই সংকেত মিলছে ‘৯৯ এর শিশু অধিকার সপ্তাহতে । হায়দ্রাবাদের পঞ্চাশটি স্কুলের পাঁচ হাজার ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একটা সমীক্ষা চালিয়েছিল ‘দিব্য দিশা’ ও ‘প্রেরণা’ নামের দুটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং স্কুলগুলোর মিলিত উদ্যোগ। তাতে ৬৫ শতাংশ ছাত্রছাত্রী জানিয়েছে, ধর্মভিত্তিক অনুষ্ঠানের জন্য ছুটি বাতিল করা উচিত, সে ক্রিসমাসই হোক বা গণেশ পুজোই হোক। তাদের এই মতামত জমা পড়েছে স্কুল শিক্ষিকা দফতরের অধিকর্তা মনমোহন সিং এর কাছে।
প্রথম অধ্যায়ঃ যুক্তিবাদ মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্কতা
♦ মন্দের যুক্তি ও ঈশ্বরের অস্তিত্ব
♦ বিজ্ঞান মনস্কতা ও বিজ্ঞানমনস্ক সমাজনির্মাণ
♦ ইন্টিলিজেন্ট ডিজাইন নিয়ে কূটকচাল
♦ ব্রুনোর আত্মত্যাগ ও যুক্তিবাদ
♦ ইহজাগতিকতা ও আরজ আলী মাতুব্বর- একজন যুক্তিবাদী দার্শনিক
♦ বাংলাদেশে চেতনা-মুক্তির লড়াই
♦ ইসলাম যেভাবে নিজের পথ থেকে সরে গেছে
♦ বিজ্ঞান, বিজ্ঞানমনস্কতা বনাম কোরানিক বিজ্ঞান
দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ ধর্ম ও নৈতিকতা
♦ জীবিত ইসলামের মৃত গৌরবের কথা
♦ রামায়ণ কাহিনীর ঐতিহাসিকতা একটি একাডেমিক আলোচনা
♦ মানবতাভিত্তিক সংবিধান এবং অমানবিক বিধান
♦ ধর্মের উপযোগিতাঃ জনৈক বিবর্তনবাদীর দৃষ্টিতে
♦ ধর্মরাষ্ট্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম
♦ মানুষের জন্য ধর্ম, না ধর্মের জন্য মানুষ?
♦ বিজ্ঞান কি উপাসনা-ধর্মের প্রতিদ্বন্দ্বী
তৃতীয় অধ্যায়ঃ অন্যান্য প্রসঙ্গ
♦ হাইপেশিয়াঃ এক বিস্মৃতপ্ৰায় গণিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান
♦ শাশ্বত এথেন্সের নারী ও তার বিপর্যস্ত ধারাবাহিকতা
“স্বতন্ত্র ভাবনাঃ মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ