মানসিক শক্তি দিয়ে রেল রোখার কাহিনী অনেকের কাছেই বোধহয় নতুন নয়। বিভিন্ন পরিচিত, অপরিচিত সাধু-সন্ন্যাসী-পীরদের ঘিরে এই ধরনের কিছু কাহিনী প্রচলিত রয়েছে।
প্রখ্যাত তান্ত্রিক, ‘সিদ্ধপুরুষ’, আদ্যামার ভক্ত, আদ্যাপীঠের প্রতিষ্ঠাতা অন্নদাঠাকুরের শ্যালক শ্রীপরেশ শ্যালক শ্রীপরেশ চক্রবর্তী। সালটা ১৯৯০। শ্রী চক্রবর্তী আমাকে জানালেন, একবার তান্ত্রিক ও আদ্যামার পরমভক্ত, সিদ্ধপুরুষ শ্রীসুদীনকুমার মিত্র তাঁর মানসিক শক্তি প্রয়োগ করে একটা ট্রেনকে স্টেশনে আটকে রেখেছিলেন। ঘটনাটি ঘটেছিল এই ধরনেরঃ সুদীনকুমার মিত্র কোথায় যেন যাবেন বলে ট্রেন ধরতে শিয়ালদহ যাচ্ছিলেন। পথে গাড়ির ভিড়ে তাঁর গাড়ি যায় আটকে। জ্যামে আটকে পড়ে শ্রীমিত্রের সঙ্গীরা উদ্বিগ্নভাবে ঘন ঘন ঘড়ি দেখছেন। ট্রেন ছাড়ার সময় হয়ে যাচ্ছে। স্টেশনে যখন গাড়ি পৌঁছল তার কিছু আগেই ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। তবে, সুদীনকুমার মিত্রের ইচ্ছেয় তাঁর সঙ্গীরা মালপত্র নিয়ে হাজির হলেন প্লাটফর্মে। অবাক কান্ড! ট্রেন তখনও দাঁড়িয়ে আছে!
আমি প্রশ্ন করেছিলাম, “ট্রেনটা এমনিতেও তো লেট থাকতে পারতো? আপনি কি করে ধরে নিলেন ট্রেন থাকার কারণ সুদীন মিত্রের ইচ্ছাশক্তি?
“আমাদের অনেকেরই বোধহয় এই ধরনের দেরি করে স্টেশনে পৌঁছেও ট্রেন পাওয়ার অভিজ্ঞতা অল্প-বিস্তর আছে। আমাদের দেশে ট্রেন সময় মেনে চলে না, সুতরাং এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটা আদৌ অলৌকিক বা অসম্ভব পর্যায়ে পড়ে না।“
আমার মন্তব্যে শ্রীপরেশ চক্রবর্তী বলেছিলেন, তিনিই তাঁর অতীন্দ্রিয় শক্তির পরিচয় দিতে পারেন চলন্ত ট্রেন আটকে দিয়ে।
আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, “চলন্ত ট্রেন আটকাতে হবে না, আমি একটা সাইকেল চালাব। আপনি আপনার অতীন্দ্রিয় শক্তিতে সাইকেলটা থামাতে পারবেন?”
-“না, সাইকেল নয়, ট্রেন থামিয়েই তোমাদের আমি দেখাব।“ শ্রীচক্রবর্তী বলছিলেন। আমি বলেছিলাম, “আমি যে পদ্ধতিতে ট্রেন থামাবেন, আমিও সেই পদ্ধতিতেই ট্রেন থামাব। কারণ, জানেনই তো, আমার একটা বিশ্রী অভ্যেস আছে, কেউ অলৌকিক কিছু দেখালে আমিও সেটা দেখাবার চেষ্টা করি।“
না; আজ পর্যন্ত পরেশ চক্রবর্তী ট্রেন বা সাইকেল কোনটারই গতি ইচ্ছাশক্তিতে রুদ্ধ করে দেখাননি। তবে আমি কিন্তু একবার ছোট্ট একটা কৌশলে ট্রেন থামিয়ে অলৌকিক বিশ্বাসী বন্ধুদের চমকে দিয়েছিলাম। কৌশলটা হল, পরীক্ষক বন্ধুদের অপরিচিত আমার এক বন্ধু ট্রেনের কম্পার্টমেন্ট থেকে একটা সুটকেশ বাইরে ফেলে দিয়ে চেন টেনেছিল।
আর একবার কলকাতার বুকে আমার ইচ্ছাশক্তিতে মোটর গাড়ি থামিয়ে বন্ধুদের বিস্মিত করছিলাম, কেউ বুঝতেই পারেননি, চালকের সঙ্গে আমার বোঝাপড়া ছিল।