দরিদ্র ও উন্নতশীল দেশে, যেখানে জীবন বারণের ক্ষেত্রে প্রতিটি পদক্ষেপে জড়িয়ে রয়েছে বঞ্চনা ও অনিশ্চয়তা, সেখানে মানুষের জীবনে আর্থ-সামাজিক পরিবেশের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। এ-সব দেশের সংখ্যাগুরু জনসাধারণের হাতে নেই জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় নূন্যতম অর্থ, নেই চিকিৎসার সু্যোগ, নেই শিক্ষা লাভের সুযোগ, আছে অপুষ্টি, আছে রোগ, আছে পানীয় জলের অভাব, আছে লজ্জা নিবারণের বস্ত্রটুকুরও অভাব, আছে বঞ্চনা, আছে দুর্নীতি, আছে শোষণ।

শৈশবে সন্তানের সবচেয়ে কাছের মানুষ মা। মায়ের স্বাস্থ্য, মায়ের মানসিকতার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে সন্তানের স্বাস্থ্য ও মানসিকতা। মায়ের অপুষ্টি, মায়ের বুকের দুধ দানের অক্ষমতা, শিশু পরিচর্যার ক্ষেত্রে অক্ষমতা; যে অক্ষমতার কারণ মাকে বেঁচে থাকার ভাত রুটি জোগাড়েই জেগে থাকা সময়ের পুরোটাই প্রায় ব্যয় করতে হয়। সময়ের অভাব ছাড়াও থাকে অর্থের অভাবজনিত অক্ষমতা। মায়ের দরিদ্র রুগ্ন স্বাস্থ্য ও মানসিক অবস্থার ওপর বিশাল প্রভাব ফেলে।

শৈশবে ও কৈশোরে শিশুরা ভোগে অপুষ্টিতে। খাদ্যাভাবে যথেষ্ট পরিমাণ প্রোটিন ও ক্যালোরির অভাবে আমাদের দেশে কিশোর-কিশোরীরা বেশিরভাগই অপরিণত দুর্বল দেহ ও মনের অধিকারী। এরা স্নায়ু দুর্বলতায় ভোগে, বোধ-শক্তি কম। আমাদের দেশে প্রতিবছর আড়াই লক্ষ শিশু ও কিশোর-কিশোরী দৃষ্টি শক্তি হারায় স্রেফ ভিতামিন ‘এ’-র অভাবে।

‘ইউনিসেফ’-এর হিসেব মত এই দুনিয়ায় প্রতি বছর উদরাময়ে মৃত্যু হয় চল্লিশ লক্ষ শিশুর, নিউমোনিয়ায় বাইশ লক্ষ, হামে পনের লক্ষ, ম্যালেরিয়ায় দশ লক্ষ, ধনুষ্টঙ্কারে আট লক্ষ। অনাহারের তীব্র অসহনীয় যন্ত্রণায় শিকার পনের কোটি শিশু- যাদের বয়স পাঁচ বছরের নিচে। ক্ষুধা ও রোগের আক্রমণে মৃত্যু পরোয়ানা লেখা জীবন্ত কঙ্কাল এইসব শিশুদের প্রায় সকলেই ভারতীয় উপমহাদেশ, লাতিন আমেরিকা এবং আফ্রিকার সাহারা মরু সন্নিহিত অঞ্চলের অধিবাসী।

বর্তমানে আমাদের দেশে দশ কোটি শিশু কোনদিনই স্কুলের মুখ দেখেনি ও দেখবেও না- যাদের বয়স পাঁচ থেকে পনেরোর মধ্যে। ৯০সালে যে দশ কোটি শিশু প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হয়েছে, তাদের মধ্যে চার কোটি শিশুই প্রাথমিক শিক্ষুটুকুও শেষ করতে পারবে না স্রেফ দারিদ্রতার কারণে।

যে বয়সের শিশুরা পড়ে খেলে, আবদার করে, অনুন্নত বা উন্নতিশীল দেশের শিশুরা সেই বয়সেই নিজের পেট চালাতে, পারিবারকে সাহায্য করতে শ্রম বিক্রি করে। এরা কাজ করে ক্ষেতে, ইট ভাটায়, চায়ের দোকানে, মুদির দোকানে, গাড়ি সারাইয়ের গ্যারেজে, বিড়ি তৈরির কারিগররূপে, গৃহভৃত্যরূপে, বাস, লরীর ক্লিনাররূপে, ফেরিওয়ালারূপে, দোকানীরূপে, ঠোঙ্গা তৈরির শ্রমিকরূপে; আরও বহু বহু রূপে। আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থার দ্বারা প্রকাশিত ১৯৭৯-এর তথ্য অনুসারে ভারতবর্ষে শিশু-শ্রমিকের সংখ্যা ১১ কোটির কাছাকাছি।

এর বাইরেও আরও কয়েক কোটি শিশু ও কিশোর-কিশোরী আছে জীবন ধারণের জন্য পাচার করে চোলাই মদ, অন্যান্য মাদকদ্রব্য, বেআইনি বিদেশী দ্রব্য, বেআইনি খাদ্যশস্য। কয়েক লক্ষ কিশোরী বেঁচে থাকার তাগিদে দেহ বিক্রি করে।

এরাই যখন বড় হয়, হয়ে ওঠে সমাজবিরোধী শক্তি। চুরি, ডাকাতি, লুঠ-পাঠ, ওয়াগান ভাঙ্গা, ছিনতাই করা, দোকান-বাজার থেকে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করা, সাট্টা, জুয়া, চোলাই-হেরোইন ইত্যাদির ব্যবসা করা, নির্বাচনে বুথ দখল করা, লালসা মেটাতে ধর্ষণ করা ইত্যাদি নানা সমাজবিরোধী কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে। যে কোনও উপায়ে জৈবিক প্রয়োজন মেটানোই এদের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়।

গ্রামের কিশোরী-যুবতীদের চেয়ে শহর ও শহরতলী বস্তিবাদী ও ঘিঞ্জি এলাকার বস্তিবাসী কিশোরী ও যুবতীদের অবস্থা অনেক বেশি খারাপ। এখানে একটি ছোট্ট ঘরে বহু মানুষকে গাদাগাদি হয়ে ভোরের সূর্যের প্রতীক্ষা করতে হয়। অনেক সময়ই এরা নারী-পুরুষের গোপন ক্রিয়াকলাপ দেখে যৌন আবেগ দ্বারা চালিত হয়। ফুটপাতবাসী কিশোরীদের অবস্থাও একই রকম। অনেক সময় ইচ্ছে না থাকলেও এবং অনেক সময় অপরিণত যৌন আবেগে এরা যৌনজীবনে প্রবেশ করে মস্তান্ম, আত্মীয় বা পরিচিতদের হাত ধরে। বহুক্ষেত্রেই কর্মজীবনে ঠিকাদারদের কাছে কাজ করতে গিয়ে, পরের বাড়ি রাঁধুনি বা দাসীর কাজ করতে গিয়ে, অনেকের লালসা মেটাতে বাধ্য হয়।

এ দেশের রাজনৈতিক নেতারা নির্বাচনে জিতে জনগণের চেয়ে পেশী শক্তির ওপর উত্তরোত্তর নির্ভরতা বাড়িয়েই চলেছেন। এই নির্ভরশীলতা যত বাড়বে, সমাজে সমাজবিরোধীদের অত্যাচারও ততই বাড়বে। কারণ সামজবিরোধীরা জানে- আমরা হত্যাই করি আর ধর্ষণই করি রাজনৈতিক দাদারা তাদের স্বার্থেই, এলাকা দখলের স্বার্থে আমাদের উদ্ধার করতে বাধ্য।

আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক কাঠামোয় স্রেফ বেঁচে থাকার তাগিদে অসামাজিক কাজে নামতে হয়, মেয়েদের নিজেকে ও সংসারকে বাঁচাতে ইজ্জত বেচতে হয়। হরিজন নারীকে বিয়ে করার অপরাধে বর্ণহিন্দুর চাকরী হারাতে হয়। রয়েছে অস্পৃশ্যতা। রয়েছে বেগার-শ্রম। রাজনীতিকদের আশীর্বাদধন্য না হলে ‘ঋণ-মেলা’য় ঋণ মেলে না। চাকরীর সুযোগ সীমিত, বেকার অসীম। ফলশ্রুতি প্রায়শই ‘খুঁটির জোর’ই প্রধান যোগ্যতা বলে বিবেচিত হয়। তাই যে মুষ্টিমেয়রা শেষ পর্যন্ত তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা চালিয়ে (তা সে ‘খুঁটি’ পাকড়াবার হলেও) জীবন ধারণের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয় একটা কোনও চাকরী জোটানোই বিবেচিত হয় ‘অপার ভাগ্য’, ‘মানতের ফল’, ‘গুরুদেবের আশীর্বাদ’, ‘গ্রহরত্নের ভেল্কি’ ইত্যাদি বলে। দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য ‘কাজের অধিকার’-এর ফাঁকা আওয়াজের পরিবর্তে যত বেকার তত কাজ থাকলে এমনটা ভাবার কোনও সুযোগ বা কারণ ঘটতো না। এটাও তো সত্যি, –

মানুষগুলো শুধু
খাওয়ার জন্য মুখ আর পেট
নিয়ে জন্মায় না, কাজের জন্য
দুটো হাত আর মগজও
নিয়ে জন্মায়।

ওদের হাত ও মগজকে কাজে লাগিয়ে দেশকে সমৃদ্ধ করার দায়িত্ব যদি শাসক শ্রেণী পালন না করে, তবে অবশ্যই আমরা ধরে নিতে পারি- শাসক শ্রেণী এমনটা করছে অক্ষমতা থেকে, নতুবা শোষণের স্বার্থে। সমাজে ‘ধনী’ আর ‘গরিব’ এই ধরণের দুটি শ্রেণীর মানুষ যদি থাকে, তবে ধনীরা তো নিজেদের স্বার্থেই গরিবদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য যতটুকু নিতান্তই দেওয়া প্রয়োজন, তার বেশি দিতে চাইবে না। ছলে, বলে, কৌশলে গরীবদের ন্যায্য পাওনাটুকু থেকে বঞ্চিত করবে। শোষণ না করলে কাকে বঞ্চিত করে ধনী হবে? আবার গরিবদের বাঁচাতেও হবে নিজেদেরই প্রয়োজনে। গরিবরা না বাঁচলে কাদের শ্রমে ধনী হবে? কাদের শোষণ করবে? ওরা জোঁকের মতই এমন চতুর সারল্যে নিঃশব্দে গরীবদের শোষণ করতে চায়। তাই কতই না ব্যাপক ব্যবস্থা, কতই না অসাধারণ প্রচার। ওরা আমাদের ঢালাও অধিকার দেয় চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের, শিক্ষা গ্রহণের এবং আরও অনেক কিছুর, কিন্তু অধিকার রক্ষার কোনও ব্যবস্থা করে না। গরীব ঘরের মানুষের বিনে মাইনের স্কুলে সন্তান পড়াবার স্বাদ থাকলেও সাধ্যে কুলোয় না। ঘরের ছেলে মেয়ে পড়তে গেলে রোজগার করবে কে? শিশু শ্রমের ওপর প্রায় সমস্ত দরিদ্র পরিবারকেই কিছুটা নির্ভর করতে হয়। এটাও কঠিন সত্য যে আব্রুরক্ষা করে স্কুলে যাওয়ার মত সাধারণ পোশাকটুকুও অনেকের জোটে না। এখন এইসব নির্যাতিত মানুষদের গরিষ্ঠ অংশই মনে করেন- এসবই গত জন্মের পাপের ফল। এখনও অচ্ছুৎ-রক্তে হোলি খেলা হয়। এখনও ওঁরা পানীয় জলের ছিটে-ফোঁটা পেতে কুয়োর কাছে অপেক্ষা করে। উচ্চবর্ণের কেউ কৃপা করে তাদের পাত্রে সামান্য জল ঢেলে দিলেই ওঁরা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করেন। নতুবা পান করেন খাল বিল-ডোবার দূষিত জল।

৮৯ মার্চের একটি ঘটনা। আমাদের সমিতির চাইবাসা ও জামশেদপুরের সদস্য মারফৎ খবর পেলাম বিহারের সিংভূম, গুমলা ও সাহেবগঞ্জ জেলায় এক অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে গত এক মাসের ভিতর মারা গেছে একশোর ওপর মানুষ। এটা অবশ্য সরকারি মত। আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে বহু গবাদি পশু। ইতিমধ্যে এই অসুস্থতার খবর এসেছে সংলগ্ন ওড়িশা ও মধ্যপ্রদেশের অঞ্চল সমূহ থেকে। সিংভূম জেলার ওপর একটা বিস্তৃত রিপোর্ট পেলাম। রোগাক্রান্তরা সকলেই আদিবাসী, দরিদ্র, নিরক্ষর ও সংস্কারাচ্ছন্ন। রোগটা এই ধরনের- রোগীর ধুম জ্বর হচ্ছে, গাঁটে গাঁটে ব্যথা, মাথায় যন্ত্রণা, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, গলা বুঁজে যাওয়া এবং তিনচার দিনের মধ্যে মৃত্যু। অজানা রোগটি সম্পর্কে আদিবাসীদের ধারণা- এসবই রোঙ্গার অভিশাপের ফল। রোগের শিকার যেহেতু অতি অবহেলিত সম্প্রদায় এবং এই মৃত্যুর জন্য, রোগ-ভোগের জন্য তাদের সরকার ও সরকারি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই, অভিযুক্ত করেছে নিজেদের ভাগ্যকেই, তাই ওসব ব্যাপার নিয়ে আর মাথা ঘামাবার প্রয়োজনবোধ করেননি কোনও বিধানসভার প্রতিনিধি বা সাংসদ। স্থানীয় সংবাদ বাগুণ সমব্রই মারণ রোগের খবর পেয়ে একবারের জন্যেও ওসব অঞ্চলে যাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেননি। যে বিষয়টির প্রতিকারের সোচ্চারে কোনও দাবি ওঠেনি, ওঠেনি প্রতিবাদের ঝড়, সেখানে হেতুহীন সময় নষ্ট না করে কংগ্রেস সাংসদ নয়াদিল্লির আসল খুঁটির আশেপাশে থাকা ও তোষামোদ করাকে অনেক বেশি প্রয়োজনীয় মনে করেছিলেন। তাঁর এই মনে করার পিছনেও ছিল আমাদের আর্থ-সামাজিক পরিবেশেরই প্রভাব।

গিয়েছিলাম পিনাকীকে সঙ্গী করে সিংভূম জেলার বান্দিজারি গ্রামে। চাইবাসা থেকে মাত্র পয়ত্রিশ কিলোমিটারের পথ। কিন্তু বেশ দুর্গম। গ্রামটি জঙ্গলের ভেতর। জঙ্গল ভেদ করে আলো আসে না, সব সময় অন্ধকার ঘেরা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসতি এলাকা। গ্রামে শ’দুই ঘর- শ’দুই পরিবার। প্রত্যেক পরিবারেই কেউ না কেউ মারণ ব্যাধির শিকার। খাওয়ার জল চাওয়াতে যে জল এনে দিলেন সে জলের রং কালচে শ্যাওলার মতো, তীব্র দুর্গন্ধ। জল খেতে পারিনি। শুনলাম এ জনই ওরা পান করেন। সংগ্রহ করেন একটা প্রাচীন কুয়ো থেকে। এক বাড়ির জলের হাঁড়িতে উঁকি মারতেই দেখতে পেলাম জলের পোকা ও বেঙ্গাচি।

গাঁয়ের অধিকাংশ লোকজনই দেখলাম নেশাগ্রস্থ। হাঁড়িয়ার নেশা আর কুসংস্কারের নেশায় ওদের ডুবিয়ে রেখে রাজনীতিকদের যখন ভালোই চলে যাচ্ছে, তখন নেশা কাটাবার চেষ্টায় নামবে, এমন আকাঠ বোকা তাঁরা নন। অবাক বিস্ময়ে এও জানলাম, এও শুনলাম, উপজাতি বা অনুপজাতীয় কোনও নেতাই এই মারণ রোগের প্রসঙ্গ বিধানসভায় তুলে তুচ্ছ কারণে ব্যতিব্যস্ত করতে চাননি সভার শ্রদ্ধেয় প্রতিনিধিদের। ওঁরা তোলেননি কারণ ওঁরা শাসক শ্রেণী ও শোষক শ্রেণীরই প্রতিনিধি হিসেবেই নিজেকে তৈরি করে নিয়েছিলেন, ওইসব বঞ্চিত আদিবাসীদের আদৌ আপনজন ওঁরা কেউ নন। পদবি ভাঙ্গিয়ে উপজাতি, অনুপজাতির প্রতিনিধি সেজে বিধানসভা, লোকসভা, রাজ্যসভা ইত্যাদিতে স্থান করে নিয়েছেন মাত্র।

বান্দিজারি গ্রামের মোড়ল লুগদি মুন্ডার সঙ্গে কথা বলেছি। ওর নিজের ছেলেটিও এই অজানা রোগে মারা গেছে দিনকয়েক আগে। লুগদির ধারণা, বোঙ্গার অভিশাপেই এই মড়ক। দূরের হাসপাতালে রোগী পাঠায়নি। কারণ পাঠিয়ে লাভ নেই। যাদের মারবার, বোঙ্গা তাদের মারবেই। এই বিপদ থেকে উদ্ধার পাবার একটিই পথ, তা হল বোঙ্গাকে সন্তুষ্ট করা। তুষ্ট করতে তাই বোঙ্গার পুজো দেওয়া হয়েছে, বলি দেওয়া হয়েছে ছাগল-মুরগী।

বান্দিজারির কাছেই মনোহরপুর অঞ্চল। মনোহরপুর ব্লকের বারোটি গ্রামই আক্রান্ত। মনোহরপুরের আদিবাসীদেরও ধারণা বান্দিজারির আদিবাসীদের মতই। তারাও বোঙ্গার রোষ কমাতে পুজো দিয়েছে। বাড়ি বাড়ি মরার খবর দিতে গিয়ে তাঁরা কাঁদছিলেন। না দোষারোপ করেননি সরকারের উদাসীনতার। দোষ দেননি বোঙ্গাকে পর্যন্ত। দোষ দিয়েছেন নিজেদের ভাগ্যকে।

এরকম গ্রাম আমাদের দেশে একটি দুটি বা দশটি বিশটি নয়, আছে লক্ষ লক্ষ। এমন বঞ্চিত মানুষ কোটি কোটি। গ্রামে গ্রামে বিদ্যুতের আলো আর স্যাটেলাইটের মাধ্যমে টি ভি যোগাযোগের বিজ্ঞাপনের বা তথ্যচিত্রে যে ছবি দূরদর্শনে প্রচারিত হয়, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি গ্রাম দূরদর্শনে হাজির হয়না, আপনার আমার কাছে অধরাই থেকে যায়।

দূরদর্শনের পর্দায় বা বানিজ্যিক সিনেমায় আমরা যে সুন্দর শান্ত গ্রামের ছবি দেখি, তা নিয়ে কিন্তু আমাদের দেশ নয়। আমাদের দেশ লক্ষ বান্দিজারি গ্রাম নিয়েই।

এত সবই আর্থ-সামাজিক পরিবেশই ফল।

এই পরিবেশের
চাবিকাঠি যাদের হাতে
তারা চায় না ওইসব বঞ্চিত
মানুষগুলোর নেশা কাটুক, ঘুম
ভাঙ্গুক, নিজেদের অধিকার বিষয়ে সচেতন
হোক। এই সচেতনতা আনতে পারে
অনুকূল, সুস্থ সমাজ-
সাংস্কৃতিক পরিবেশ।

আর এও চরমতম সত্য- অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না থাকলে চিকিৎসা লাভের স্বাধীনতা, শিক্ষাগ্রহণের স্বাধীনতা, জীবিকার স্বাধীনতা ইত্যাদি সব স্বাধীনতাই অর্থহীন রসিকতা মনে হয়।

error: Content is protected !!