মীজান রহমান
কানাডার মানুষ বহু বহু বছর সাধ্য সাধনার পর একটি মানবতাভিত্তিক সংবিধান দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছে, যার মূল মন্ত্রই হল সমান অধিকার, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, জাতি, গোত্র, ভাষা, কৃষ্টি নির্বিশেষে। ‘সবার চেয়ে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’, এই সনাতন বুলিটি আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত কেবলি বুলি, কিন্তু এদেশে সেটা বাস্তবে পরিণত হয়েছে। ক্যানাডার ‘চার্টার অব রাইটস’ ধর্মগ্রন্থের মতই পবিত্র। চার্টারের পবিত্রতা রক্ষার জন্যে এদেশের মানুষ সরকারের পতন ঘটায়, উত্থান “ঘটায়, এমনকি প্রয়োজন হলে যুদ্ধে যেতেও প্রস্তুত হবে। মানবাধিকারের এই সনদটিকে তারা জাতীয় পরিচয়পত্র বলে সম্মান করে বলেই পৃথিবীর নানা দেশ থেকে নানাপ্রকারের মানুষ (বাংলাদেশের খুনি, রোয়ান্ডার খুনি বা যেকোন দেশের খুনিরাও) এখানে এসে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করে এবং প্রার্থী হওয়ার পরমুহূর্ত থেকে নিষ্পত্তির আগ পর্যন্ত সরকারের আতিথেয়তা ভোগ করে। এই সনদের আকর্ষণেই মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু মেয়ে শরিয়ার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ক্যানাডায় চলে এসেছে। শরিয়া সম্বন্ধে পশ্চিমের কোন ধারণাই ছিল না আগে । ৯/১১’র পরে কারো কারো চোখ খুলতে শুরু করেছে। শরিয়া যে কোন নারীবাদী মতাদর্শ নয় সেটি অনেকেই টের পেয়েছে। তবে বেশিরভাগই পায়নি। অন্তত অন্টারিওর বর্তমান সরকার যে এখনো পায়নি তার লক্ষ্মণ পরিষ্কার হয়ে উঠছে। ১৭ই জানুয়ারির Ottawa Citizen’র প্রথম পৃষ্ঠায় বব হার্ভের (Bob Harvey) কলাম পড়ে আমার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে গেল । বলে কি? সত্যি সত্যি শরিয়া এসে যাচ্ছে এখানে? সরকারের চোখে ধুলো দিতে পারল তারা? হার্ভে সাহেবের কলাম পড়ে তো তাই মনে হল। ঘটনা হল এরকমঃ অন্টারিওর কতিপয় শরিয়াপন্থী ধর্মীয় নেতা সরকারের কাছে আবেদন করেছিলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের বৈবাহিক, পারিবারিক ও অন্যান্য ছোটখাটো বৈষয়িক বাদ-বিসংবাদগুলো তাদেরই ধর্মীয়, অর্থাৎ শরিয়া আইন অনুসারে নিজেদের সম্প্রদায়ের ভেতরে সালিশ আদালতের (Arbitration Court) মাধ্যমে মীমাংসা করার অধিকার দেওয়া হোক। দুর্ভাগ্যবশতঃ ধর্মীয় আদালতের নজির সরকার নিজেই সৃষ্টি করেছিল আগে। ক্যাথলিক ও মেননপন্থীরা অনেকদিন থেকেই এ সুবিধা ভোগ করে আসছে । হার্ভের লেখা পড়ে জানলাম যে ইসমাইলী মুসলমানদেরও সে অধিকার আছে । বলা বাহুল্য যে ইহুদী সম্প্রদায়ও তা থেকে বঞ্চিত নয়। সুতরাং আমাদের শরিয়াবাদীরাও যে একই দাবি তুলবেন তাতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই। আবেদনপত্র পাবার পর প্রাদেশিক সরকারের আইনমন্ত্রী মাইকেল ব্রায়ান্ট একটি কমিশন গঠন করলেন বিষয়টি আদ্যোপান্ত বিচার যাচাই করে রিপোর্ট তৈরি করার জন্যে। কমিশনের ভার যিনি দেওয়া হল মেরিয়ন বয়ড (Marion Boyd) নামক এক মহিলার ওপর, এককালীন (NDP) সরকারের নারী বিষয়ক দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন। শ্ৰীমতী বয়ড সম্প্রতি তার রিপোর্ট পেশ করেছেন। এবং দুঃখের বিষয় যে তিনি শরিয়ার কোন কোন বিধান সম্পর্কে কিঞ্চিৎ উদ্বেগ প্রকাশ করলেও মোটামুটিভাবে তার পক্ষেই রায় দিয়েছেন । সরকার যদি তার সুপারিশ মেনে নেয় তাহলে এ প্রদেশের মুসলিম সম্প্রদায় ইচ্ছে করলে তাদের পারিবারিক মামলার নিষ্পত্তির জন্যে প্রাদেশিক জজের আদালতে না গিয়ে ধর্মীয় আদালতে যাবার অধিকার পাবে । শরিয়া আইনের অন্যতম প্রধান প্রবক্তা হলেন টরন্টোর এক অবসরপ্রাপ্ত আইনজীবী- তার নাম সৈয়দ মোমতাজ আলী। ক্যানাডিয়ান ইসলামিক কংগ্রেসের সহসভাপতি ওয়াহিদা ভ্যালিয়ান্তে নিজে নারী হওয়া সত্ত্বেও শরিয়ার প্রচণ্ড সমর্থক । অন্যদিকে ক্যানাডিয়ান কাউন্সিল অব মুসলিম উইমেনের নির্বাহী পরিচালক আলিয়া হোনাবেন পোষণ করেন সম্পূর্ণ ভিন্ন মত । তিনি বলছেনঃ ‘মুসলিম আইন পুরুষতান্ত্রিক রীতিনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এ আইন পুরুষকে নারীর ওপর কর্তৃত্ব স্থাপনের অধিকার দেয়। পুরুষের বিচারই শেষ বিচার, অলঙ্ঘ বিচার। মুসলিম নারীর কর্তব্য হল পুরুষকে মান্য করা, পুরুষের বিধানকে অকাট্য বলে গণ্য করা।’
এই বিশ্বাসকে ‘Absolute nonsense’ বা চরম প্রলাপ বলে উড়িয়ে দিতে চাইছেন ওয়াহিদা ভ্যালিয়ান্তে। অটোয়া-গ্যাটিনোর মুসলিম কমিউনিটি কাউন্সিলের সভাপতি মোমতাজ আক্তার সাহেব তার সঙ্গে সুর মিলিয়েছেন বলেছেনঃ “শরিয়াবিরোধীদের ধারণাই নেই তারা কি নিয়ে কথা বলছে’।
উক্তিটা আমার গায়ে লাগল, কারণ আমি নিজে শরিয়াবিরোধী । আমি কি নিয়ে কথা বলছি সেটা আমার জানা উচিত। পুরো আইনগ্রন্থ নিয়ে বলা সম্ভব নয়, শুধু কয়েকটি নমুনা পেশ করব শরিয়া আইনের, যা থেকে আমার উদ্বেগ ও আশঙ্কার কারণটা অনুমান করা যাবে। হার্ভে সাহেবের কলাম থেকে জানলাম যে ইসমাইলী সম্প্রদায়ের শরিয়া যুক্তির অন্যতম ভিত্তি কোরানেরই একটি উক্তিঃ
“If you fear a breach between them twain, appoint arbiters, one from his family, and the other from hers; if they wish for peace, Allah will cause their conciliation.”
ধর্মগ্রন্থ নিয়ে যারা ঘাঁটাঘাঁটি করেন তারা জানবেন যে এই উদ্ধৃতিটি আবদুল্লাহ ইউসুফ আলীর তরজমা থেকে নেয়া (৪:৩৫)। খুবই যুক্তিসঙ্গত উক্তি সন্দেহ নেই, কিন্তু এর ঠিক আগের আয়াতটিতে (৪:৩৪) কি লেখা আছে সেটাও বোধহয় উদ্ধৃতির দাবি রাখেঃ
“As to those women on whose part ye fear disloyalty and illconduct, admonish them, refuse to share their beds, beat them…”
উক্তিটির তাৎপর্য এতই সুদূরপ্রসারী যে ইউসুফ আলী সাহেবের অনুবাদে কোন ভুল ত্রুটি আছে কিনা সেটা তলিয়ে দেখা প্রয়োজন। তাই আমি এন. জে. দাউদ অনুদিত এবং ইসলামিক বুক সার্ভিস প্রকাশিত মুহাম্মদ মার্মাদুকে পিকথলের (Pickthall)-এর তরজমা দুটোই মিলিয়ে দেখলাম তার সঙ্গে।
দাউদের অনুবাদে আছেঃ (4:34)
“Men has authority over women because God has made the one superior to the other, and because they spend their wealth to maintain them, Good women are obedient. They guard their unseen parts because God has guarded them. As for those from whom you fear disobedience, admonish them, forsake them in beds apart, and beat them…”
ওদিকে পিকথল বলেছেনঃ (3:34)
“Men are in charge of women, because Allah hath made the one of them to excel the other, and because they spend of their property (for the support of women). So good women are s obedient, guarding in secret that which Allah ath guarded. As forthose from whom ye fear rebellion, admonish them and banish them in beds apart, and scourge them … ” ১
অর্থাৎ একটু হেরফের হলেও, মূল বক্তব্য একটিই। এতে কি এই প্রমাণ হয় না যে, আলিয়া হোগবেন (Hogben) যা বলেছেন আসলে সেটাই কোরানসম্মত কথা ? সুতরাং ওয়াহিদা ভ্যালিয়ান্তের “Absolute nonsense” অভিযোগটা মনে হয় উল্টো তার নিজের বেলাতেই প্রযোজ্য। আটোয়া-গ্যাটিনোর মাননীয় মোমতাজ আক্তারও সম্ভবত জানেন না তিনি কি বলছেন ।
আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস এ দুজনের কেউ কোরান ভাল করে পড়েননি । পড়লেও বোঝেননি কিছুই। বুঝলে এসব ছ্যাবলা অপবাদ দিতেন না শরিয়াবিরোধীদের। উপর্যুক্ত আয়াতটির পরিপ্রেক্ষিতে বা এর মদদেই হয়ত শরিয়া’তে বিধিবদ্ধ হয়েছে তথাকথিত Shafi’i Law (#m.10.12,p-541 ও 0.17.4p.519):
“A Muslim man is allowed to beat his wife or wives.”
প্রসঙ্গত উল্লেখ না করে পারা গেল না যে, কোরানের এই আয়াতটিতে নারী- পুরুষের আপেক্ষিক মান বা গুরুত্ব সম্বন্ধে যা বর্ণিত হয়েছে তা কানাডার ‘লিঙ্গনির্বিশেষে সমান অধিকার’ সূত্রের সম্পূর্ণ বিপরীত। সুতরাং অন্টারিওর প্রাদেশিক কর্তৃপক্ষের ভেবে দেখা উচিত যে শরিয়ার সঙ্গে আমাদের চার্টারেরই একটা মৌলিক বিরোধ রয়ে গেছে। মুসলিম সমাজ সম্বন্ধে পশ্চিমের লোক আর কিছু জানুক বা না জানুক একটা জিনিস কারও অজানা নয় যে, মুসলিম পুরুষের জন্যে চারটি বিয়ের অধিকার আছে। কার্যত হয়ত সেটা বিরল, কিন্তু আইনত একসাথে চার বিবি থাকা সম্ভব। ২১শে জানুয়ারি Ottawa Citizen’র আরেকটি খবরে পড়লাম। এটিও প্রথম পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে যে ক্যানাডিয়ান ইসলামিক কংগ্রেসের সভাপতি জনাব মোহাম্মদ এলমাসরি ক্যানাডার সাম্প্রতিক সমকামী বিবাহের ওপর কটাক্ষ করতে গিয়ে বলেছেন যে, তার চেয়ে বরং বহুবিবাহ (অর্থাৎ ইসলাম সম্মত) অনেক হিতকর। তার মতে গোপন প্রেমিকার চাইতে দ্বিতীয় বিবাহ নৈতিকভাবে শ্রেয় কারণ এতে প্রথম স্ত্রীর সম্মতি আছে। এই বলেই তিনি ক্ষান্ত হননি, পশ্চিম সমাজের অজ্ঞ ও অর্বাচীন পাঠকদের অবগতির জন্যে তিনি এ’ও বলছেন : ‘দ্বিতীয় স্ত্রী, এবং স্ত্রীদের ছেলেমেয়েরা, একই পরিবারের ছত্রছায়ায় সমান অধিকার ও সমান ব্যবহার ভোগ করে।” যুগপৎ একাধিক স্ত্রীর মত ন্যাক্কারজনক অমানবিক প্রথাটির আলোচনায় না গিয়ে আমি শুধু তার ‘সমান’ শব্দটির ওপর মন্ত ব্য করব। ‘সমান ব্যবহার’ কথাটা যে কোরানবিরোধী সেটা বোধহয় এলমাসরি সাহেব ভেবে দেখেননি। তাহলে আমি একটি আয়াতের দুটি অনুবাদ পেশ করবঃ Abdullah Yusuf Ali : (4:129)
“You are never able to be fair and just, as between women, even if it is your ardent desire ….”
Dawood বলছেন : ( 4:129 )
“Try as you may, you cannot treat all your wives impartially. Do not set yourself altogether aginst any of them, leaving her, as it were, in suspence.”
অর্থাৎ কোরান যা বলছে, সাধারণ বুদ্ধিতে সেটাই বাস্তব। এলমাসরি যা বলছেন, তা শুধু কোরানবিরোধীই নয়, যুক্তি হিসেবে উদ্ভট ও অবাস্তব। তাছাড়া একটা জিনিস তার মাথায় ঢুকছে না যে, একাধিক স্ত্রীর ধারণাটিই চার্টারের পরিপন্থী। লোকটি সম্বন্ধে আমার এই ধারণা জন্মেছে যে, তিনি চার্টার তো বোঝেনই না, কোরানও বোঝেন না।
অন্টারিওতে শরিয়া আইন চালু করার আগে প্রাদেশিক সরকারের আরো ক’টি বিষয় বিবেচনা করে দেখা উচিত। যথাঃ
(১) উত্তরাধিকার আইনঃ পুরুষের অর্ধেক পাবে মেয়ে ড. আবদুর রহমান দোয় পৃ: ২৯৯,
(২) পরকীয়া প্রেম এবং ধর্ষণ, যা দণ্ডনীয় অপরাধ (হাদ, অর্থাৎ আল্লার শাস্তি),
তার প্রমাণের জন্য প্রয়োজনঃ
(ক) হয় দোষী তার দোষ স্বীকার করবে, নয়ত (খ) কমপক্ষে চারজন প্রত্যক্ষদর্শী পুরুষকে সাক্ষ্য দিতে হবে। এ আইনটি শুধু (Shafi’i Law# 0.24.9 তেই নয়, কোরানেও আছে।)
(৩) স্ত্রীকে স্বামীর তালাক দেওয়ার অধিকার আছে, এবং তার জন্যে শুধু মুখের উচ্চারণই যথেষ্ট। সে উচ্চারণ রাগের মাথায় হোক, গাঁজার নেশায় হোক, কারো জোরজবরদস্তিতে হোক বা ঠাট্টা করেই হোক। সে যে উচ্চারণ করেছে তার সাক্ষী থাকলেই হল। বলাবাহুল্য যে এ অধিকারটি স্ত্রীদের নেই। মুখের কথা দূরে থাক প্রাণের ভয়েও কোন স্ত্রী তার স্বামীকে তালাক দিতে পারবে না এত সহজে। দ্রষ্টব্য : ( Shafi’i Law# n3.5, p.560; Hanafi Law, p. 81, 523; Deen Ki Binate, Maolana Ashraf Ali, Thanvi p.254, Law 1537, 1538, 1546 and 2555.)
(৪) স্ত্রীর পক্ষে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটানোর একমাত্র উপায় শরিয়া আদালতকে রাজি করানো । শুধু তাই নয়, স্বামীকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। দ্রষ্টব্য: (Hanafi Law, p.112; Shafi’i Law, # n.50, w.52-1-253-255; Sharia the Islamic Law by Dr. Abdur Rahman Doi, p. 192 )
(৫) মনে করুন রাগের মাথায় বউ তালাক দেওয়ার পর স্বামী জিভ কেটে বউকে আবার ঘরে ফিরিয়ে আনতে চাইছে। উঁহু, এত সহজ নয় বাবা। মুখের কথায় তালাক হয়, মুখের কথায় পুনর্মিলন হয় না। অনেক ঝামেলা আছে । তবে স্ত্রীর ঝামেলার সঙ্গে স্বামীর ঝামেলার কোন তুলনাই হয় না। তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীকে প্রথমে অন্য কোন পুরুষের স্ত্রী হতে হবে। না, শুধু কাগজে কলমে হলে চলবে না, শয্যাসঙ্গিনী হয়ে বসবাস করতে হবে, অন্তত একবার। তারপর নতুন স্বামী যদি দয়া করে তাকে আবার তালাক দেয়, তাহলেই তার মুক্তি। কেবল এই শর্তেই স্ত্রী তার আগের স্বামীর কাছে ফিরে যেতে পারবে। মুসলিম আইনে এর নাম হল ‘হিল্লা বিয়ে।’ দ্রষ্টব্যঃ Islamic Laws by Ayatollah Seestani, Law# 2536, p.469; Hanafi Law, p.15; Shafi’i Law# p.29.1.p.673.
আমি প্রশ্ন না করে পারছি না যে শরিয়া সমর্থকরা কি এখানেও এ আইনটিও অন্টারিওর মুসলিম সমাজে চালু করার কথা ভাবছেন? যদি না ভেবে থাকেন তাহলে জানতে চাইব, কেন না? শরিয়া আইন যদি এতই মহৎ, এতই পবিত্র জিনিস হয়ে থাকে তাহলে একটাকে বাদ দিয়ে আরেকটা কেন। ক্যানাডিয়ান ইসলামিক কংগ্রেসের ওয়াহিদা ভ্যালিয়ান্তেকেও আমি জিজ্ঞেস করব, এ আইনটি জেনেও কি তিনি আলিয়া হোগবেনের যুক্তিকে “Absolute nonsense” বলে উড়িয়ে দেবেন। খোদা না করুন, তার ভাগ্যে যদি এধরনের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটনা ঘটে যায় কোনদিন তাহলে কি তিনি নিজে হিল্লা প্রথাতে পরপুরুষকে একরাতের জন্যে বিয়ে করতে সম্মতি দেবেন?
(৬) মুসলিম আদালতে কোন দাসদাসী (বর্তমান যুগের চাকর চাকরাণীও নিশ্চয়ই তার অন্তর্ভুক্ত), মেয়ে গায়িকা বা কোন নিচু শ্রেণীর লোক (মেথর, ঝাড়ুদার ইত্যাদি), এদের সাক্ষ্যের কোন দাম নেই। (Hanafi Law, p. 361; Shafi’i Law# 0.24.3.3 p.636.)
লক্ষ্য করুন যে এ আইনে সাধারণ শ্রমজীবী মানুষকেই খাটো করে দেখা হচ্ছে না শুধু, গান গাওয়া মেয়েদেরও সেই দলে ফেলা হচ্ছে। এতে অনুমান করা যায়, শিল্পকলা, বিশেষ করে কণ্ঠসঙ্গীতের প্রতি শরিয়াবাদীদের কি হীন মনোভাব । আফগানিস্তানের তালেবানরা যে গানবাজনা নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল তার পেছনে ইসলামী আইনের সমর্থন ছিল বৈকি ।
(৭) হুদুদ মামলাতে মেয়েদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য বলে গণ্য করা হয় না । (Hanafi Law, p.353; Shafi’i Law# 0.24.9, p.638; penal Law of Islam, p.44,45 )
(৮) ব্যবসা বাণিজ্যের কথাবার্তায় মেয়েদের কথার দাম পুরুষের অর্ধেক। (Hanafi Law p.353; Shafi’i Law# 0.24.7, p.637)
(৯) বিচ্ছেদের পর বাচ্চাদের ওপর মায়ের দাবি অগ্রগণ্য। তবে একটা শর্ত আছে: মেয়েকে নামাজী হতে হবে এবং অবিবাহিত থাকতে হবে। বাচ্চারা যখন বড় হয় (ছেলে হলে ৯ বছর, মেয়ে হলে ৭) তখন সে-অধিকারটা চলে যায় বাবার কাছে। (Hanafi Law, p. 138, 139; Shafii Law#m. 13.0,p.550)
(১০) স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবে স্বামীর- আহার, বস্ত্র ও বাসস্থান । তবে প্রসাধন দ্রব্য বা চিকিৎসার খরচ বহন করার কোন বাধ্যবাধকতা নেই । অবশ্য স্ত্রী অবাধ্য হলে তাকে কিছুই দেওয়ার প্রয়োজন নেই। ( Hanafi Law, p.140; Shafi’i Law# m.11, p. 644, Tafsier of Translation of the Qura’an by Muhiuddin Khan, p.867).
(১১) মুসলিম মেয়ে শুধু মুসলিম ছেলে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে পারবে না । তবে মুসলিম ছেলে ইচ্ছে করলে ইহুদী বা খ্রিষ্টান মেয়েকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। অবশ্য কোন মুসলিম মেয়ে যদি ধর্মান্তরিত হয়ে ইহুদী অথবা খ্রিষ্টান হয়ে যায় তাহলে মুসলিম ছেলের জন্য তাকে বিয়ে করা বারণ। (Tafsier of Quara’an, Muhiuddin Khan, P.120.)
(১২) কোন মহিলার পক্ষে সম্ভব নয় বিয়ের কন্যার অভিভাবক হওয়া। (Hanafi Law, p.138, 139; Shafi’i Law # m.3.4.1,p.518.)
(১৩) তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীর প্রাপ্য হল অনুর্ধ তিন মাসের ভরণপোষণের খরচ, বেশি নয়। (Hanafi Law, p. 145; Shafi’i Law # m.11.10.3, p.546.)
(১৪) শরিয়া আইন অনুযায়ী পালক সন্তান অবৈধ। (Sharia the Islami Law by Dr. Abdur Rahman Doi, p. 468.)
(১৫) কোন নারী নিহত হলে তার ক্ষতিপূরণের টাকা পুরুষের অর্ধেক, এবং ক্ষতিপূরণের টাকা দাবি করার অধিকার শুধু পুরুষেরই, নারীর নয় । (Sahi’i Law # 0.4.9, 0.590; Sharia the Islamic Law by Dr. Abdur Rahman Doi, p. 235.)
(১৬) ধর্ষিতা নারীকে বিয়ে করার বাধ্যবাধকতা নেই ধর্ষকের, শুধু ক্ষতিপূরণের টাকা দিয়েই খালাস পাবে ( Shafi’I Law # m. 8.10, p.535.)
এ ধরনের দৃষ্টান্ত আরো অনেক আছে। উপর্যুক্ত সূত্রগুলো হাতে পেলেই বুঝতে পারবেন। এখন আমি প্রশ্ন তুলবঃ এসব জেনেশুনেই কি অন্টারিও প্রদেশের কোন মুসলমান নারী শরিয়া কোর্টে গিয়ে বিচার প্রার্থনা করতে চাইবেন? ওয়াহিদা ভ্যালিয়ান্তে নিজেও কি চাইবেন?
ম্যারিয়ন বয়ডের সমর্থনসূচক রিপোর্ট থেকে মনে হচ্ছে শরিয়া বুঝি শেষ পর্যন্ত এসেই গেল অন্টারিওতে। এসে যদি যায়ই উত্তর আমেরিকাতে এই হবে তাদের প্রথম প্রদক্ষেপ। আর এই শরিয়ার বিজয়পতাকা আরও কোথায় কোথায় উড়বে কে জানে। অন্টারিও হল ক্যানাডার জনবহুল ও সবচেয়ে সমৃদ্ধ প্রদেশ। মৌলভী সাহেবরা যদি এখানে একবার নাক গলাতে পারেন তাহলে অন্য প্রদেশগুলোতে যেতে আর কত সময় লাগবে। যুক্তরাষ্ট্রে যেতেই বা কদ্দিন। মুসলমান তো এখন কম নেই কোথাও । নিজেদের দেশে টিকতে পারেনি, মারামারি কাটাকাটি হৈ হৈ রৈ রৈ তো লেগেই আছে সারাক্ষণ। বিশেষ করে শরিয়াশাসিত দেশগুলোতে । আমি বিশেষ করে ভাবছি সেইসব মুসলিম নারীর কথা যারা শরিয়ার কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে ক্যানাডা-আমেরিকাতে এসে আশ্রয় নিয়েছে । তারা কি স্বপ্নেও ভাবতে পেরেছে যে সেই শরিয়াই তাদের পিছু পিছু ধাওয়া করে চলে আসবে পশ্চিমে? তারা এখন কোথায় আশ্রয় নেবে? ম্যারিয়ন বয়ড কি একবার ভেবে দেখেছেন তাদের কথা? একবারও কি ইউরোপের উদাহরণ দেখবার চেষ্টা করছেন? নেদারল্যান্ডে বসবাসকারী আইরিস নামক একটি নিগৃহীত মুসলিম নারীর দুর্দশার কথা কি তিনি পড়েছেন সাপ্তাহিক গার্ডিয়ান’-এর পৃষ্ঠায়? পড়েননি নিশ্চয়ই। পড়লে বুঝতে পারতেন শরিয়াবাদী গোঁড়া মুসলমানরা কেমন করে ইঁদুরের মত ঢুকে কালে কালে সংখ্যায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়ে হিংস্র শ্বাপদের রূপ নেয় । পড়লে বুঝতে পারতেন কেন এবং কাদের চক্রান্তে ভ্যান গ’র মেধাবী বংশধরকে এমন নৃশংসভাবে হত্যা করা হল তার নিজেরই দেশের প্রকাশ্য রাজপথে। জানি, অন্টারিওর শরিয়াবাদীরা আজকে মুষিকের মত নম্রস্বরে বলছেন, শরিয়া কোর্টে যাওয়া কোন বাধ্যবাধকতা নেই, এটা পুরোপুরি স্বেচ্ছামূলক। কিন্তু একবার ক্ষমতা হাতে এলে সে ক্ষমতা তারা কিভাবে ব্যবহার করবেন সে কাহিনী এদেশের সরল বিশ্বাসী ন্যায়নিষ্ঠ শ্বেতাঙ্গদের জানার কথা নয়, কিন্তু আমরা জানি। আমরা মৌলভীসাহেবদের ভয়াবহ চেহারা দেখেছি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে। আফগানিস্তানের তালেবান মুজাহিদরা যখন শত্রুকে হারিয়ে বিজয় ঘোষণা করে কাবুলের নগরকেন্দ্রে তখন খুশির চোটে কাবুলবাসীরা মিষ্টির দোকানে ভিড় জমিয়েছিল। তারা কল্পনাও করেনি যে এই তালেবানরাই শরিয়ার ডাণ্ডা দেখিয়ে মেয়েদের স্কুল কলেজ বন্ধ করে দেবে, বোরখা না পরলে দোররা মারবে, পুরুষের দাড়ি না থাকলে অপমান করবে, টেলিভিশন বন্ধ হবে, শিল্পচর্চা বন্ধ হবে, নাচগান বন্ধ হবে। তাদের শরিয়া আর মোমতাজ আলী-ওয়াহিদ ভ্যালিয়ান্তের শরিয়া কি একই শরিয়া নয়? তারা কি একই শরিয়ার বই অনুসরণ করেন না? কেমন করে জানব যে শরিয়ার অধিকার পাওয়ার পর মওলানা সাহেবরা সামাজিকভাবে চাপ দিতে শুরু করবেন না মুসলিম কোর্টে যাওয়ার জন্যে? এরই মধ্যে একটি কাগজ বিলি হয়ে গেছে বলে শুনেছি যাতে লেখা আছে যে কোন ব্যক্তি বা পরিবার মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও যদি শরিয়া কোর্টে না গিয়ে অমুসলমান কোর্টে যায় বিচারের জন্যে তাহলে তাকে অমুসলিম বা মুরতাদ বলে ঘোষণা করা হবে। এটা তারা অস্বীকার করবে জানি, কিন্তু এর সম্ভাবনা যে আছে সেটা ভুক্তভোগীরা ভাল করেই জানে । আমার এই শরিয়াবিরোধী লেখাটি কি শরিয়ার পরও আমি লিখতে সাহস পাব? তারা কি আমাকে মুরতাদ আখ্যা দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করবে? তখন আমার স্বাধীনতার কি অবস্থা হবে, যে স্বাধীনতা আমি পরম নিশ্চিন্তে ভোগ করে এসেছি গত ৪৩ বছর ধরে? তাহলে বলুন, কেন আমি বা আমার মত সমমনা মানুষ, জেনেশুনে খাল কেটে কুমির আনার প্রস্তাবে একমত হব?
পশ্চিমের মুক্ত জগতেই যখন এই দুর্যোগ তখন আমাদের দেশে কি হচ্ছে তা একবার ভেবে দেখুন। জামাত ও তাদের দোসররা তো উঠেপড়ে লেগেছে বাংলাদেশকে ইসলামিক রাষ্ট্রে পরিণত করবে বলে । ইসলামিক রাষ্ট্র বলতে বোঝায় শরিয়ার শাসন, যার দৃষ্টান্ত সারা বিশ্বই স্তম্ভিত হয়ে দেখেছে আফগানিস্তানে। খেলার মাঠকে তারা বানিয়েছিল মুণ্ডপাতের মাঠ। প্রাচীন বুদ্ধমুর্তিকে কামান দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিল ওটা মুর্তি ছিল বলে। মেয়েদের করা হয়েছিল গৃহবন্দী। কারো বাড়িতে রেডিও বা ভিসিআর-এ গান শোনা গেলে গুরুতর শাস্তি হত গৃহকর্তার জানালার পর্দা খোলা থাকলে জবাবদিহি করতে হত। এরকম রাষ্ট্রই কি তারা বানাতে চায় আমাদের দেশে? একাত্তরে পাকিস্তানী ঘাতকদের সাহায্যে সারাদেশে রক্তগঙ্গা বইয়ে তাদের তৃপ্তি হয়নি, বন্য পশুদের কাছে স্বদেশের যুবতী মা- বোনদের লেলিয়ে দিয়ে ক্ষান্ত হয়নি, এখন সেই একই গোষ্ঠী দেশকে মানবতার শ্মশান বানাতে উদ্যত হয়েছে। দেশের যা কিছু সুন্দর, যা কিছু কোমল, মহৎ ও মাধুর্যময়, যা কিছু অগ্রমুখী ও সৃজনশীল তাকেই ধ্বংস করে তারা খাঁ-খাঁ মরুভূমি বানাতে চাইছে। তাদের এখুনি প্রতিহত করা দরকার আমাদের। নইলে আমাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে উঠবে। দেশের সাধারণ মানুষ অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ, তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে যে তাদের ধর্ম শান্তির ধর্ম। কিন্তু জামাতের ধর্ম শান্তির ধর্ম নয়, কেবলি শাস্তির ধর্ম, তাদের ধর্ম ধ্বংসের ধর্ম প্রতিহিংসার ধর্ম। তারা মানবজাতির স্বাভাবিক কোমলবৃত্তির শত্রু। তারা নিজেদের আল্লার সিপাই বলে দাবি করে, কিন্তু সত্যিকার অর্থেই তারাই ইসলামের শত্রু। পৃথিবীর কাছে তারাই ইসলামকে খর্ব করেছে। নিষ্ঠুর, হৃদয়হীন এক মধ্যযুগের মতবাদ হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। সাধারণ মানুষকে এখন বুঝতে হবে যে, ইসলামের মৌলিক বাণীতে নিষ্ঠুরতা নেই, নিষ্ঠুরতা আছে জামাতের হাতিয়ার শরিয়াতে। তাই জামাত আর শরিয়ার বিরুদ্ধে মানুষকে রুখে দাঁড়াতে হবে। ইসলামের সম্মানের খাতিরেই প্রতিটি নিষ্ঠাবান মুসলমানের জন্যে এটি এখন কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
আশার কথা যে প্রতিরোধের হাওয়া যেন বইতে শুরু করেছে আস্তে আস্তে। জঙ্গি মৌলবাদের ধ্বংসলিপ্সা থেকে মুসলমান জাতি ও মনুষ্যত্বকে রক্ষা করার জন্যে দেশে বিদেশের নানা জায়গায় গড়ে উঠছে মুক্তমনা চিন্তাবিদদের সংঘবদ্ধ প্রতিষ্ঠান । সংখ্যায় হয়ত এখনো নগন্য তারা, কিন্তু বিদ্যায় বুদ্ধিতে চিন্তায় চেতনায়, সর্বোপরি, মানবচিত্তের সার্বিক মুক্তিকামনায়, তারা উগ্রবাদীর চাইতে শতগুণ শক্তিমান। পাঠক যদি আগ্রহী হন এদের কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত খবর জানতে আর যদি বাংলাদেশের জামাতিদের পেটের কথা জানতে চান তাহলে নিয়মিত পড়ুন: www.mukto-mona.com এবং www.jamatepislami.com এতে ওরা তথ্যপ্রমাণ দিয়ে বোঝাচ্ছে যে জামাতের ধর্মান্ধ, অজ্ঞ, উগ্রবাদীরাই আসলে ইসলামের প্রতিপক্ষ। জামাতের কথাবার্তা ও আচার-আচরণ শুধু অনৈসলামিকই নয়, ইসলামবিরোধীও বটে। সুতরাং মুরতাদ আর অমুসলমান বলে যদি ফতোয়া দিতেই হয় কারো বিরুদ্ধে তাহলে জামাতের কর্তাদের ওপরই দিতে হবে। অত্যন্ত উদ্ধত উক্তি, সন্দেহ নেই। তবে খোলা মন নিয়ে যদি পরীক্ষা করে দেখেন এদের বক্তব্য তাহলে বুঝবেন যে, এরা যা বলছে তা ফেলে দেওয়ার মত নয় । প্রচুর যুক্তি আছে এদের। এরা উদ্ধত হতে পারে কিন্তু অযৌক্তিক নয়। এরা পড়াশুনা করে ।
তথ্যসূত্র
১। ৪-৩৪ ও ৩৫ আয়াত দুটির অনুবাদ নিচের অনুবাদগুলোর সাথেও তুলনা করে দেখা যেতে পারে ।
THE HOLY QUR-AN: English translation, Revised and Edited by Presidency of Islamic Researches, IFTA, Call and Guidance. (Saudi Arabia).
4-34:
Men are the protectors
And maintainers of women,
Because Allah has given
The one more (strength)
Than the other, and because
They suport them from their means. Therefore the righteous women Are devoutly obedient, and guard In (the husband’s) absence.
What Allah would have them guard.
As to Those women
On whose part ye fear
Disloyalty and ill-conduct, Admonish them (First),
(Next) refuse to share their beds,
( And Last) beat them (lightly) But if they return to obedience, Seek not against them Means (of annoyance): For Allah is Most High, Great (above you all).
4-35:
If you fear a breach
Between them twain, Appoint (two) arbiters, One from his family, And the other from hers;
If they seek to set things aright,
Allah will cause
their conciliation:
For Allah have full knowledge,
And is acquainted
With all things.
বাংলা অনুবাদ
কোরআন শরীফঃ ভাই গিরীশ চন্দ্র সেনের অনুবাদ (খোশরোজ কিতাব মহল, ঢাকা )
৪-৩৪ : পুরুষ স্ত্রীলোকের উপর কর্তৃত্ব রাখে, ঈশ্বর তাহাদের একজনকে অন্যজনের উপর শ্রেষ্ঠতা দান করিয়াছেন বলিয়া, এবং তাহারা (পুরুষেরা) নিজের ধন ব্যয় করে বলিয়া; পরন্তু সাধ্বী নারীগণ বাধ্যা হয়, তাহারা গোপনীয়তার (দাম্পত্য ধর্মের) সংরক্ষিকা ঈশ্বর সংরক্ষণ করিয়াছেন বলিয়া; এবং তোমরা যে সকল নারীর অবাধ্যতা আশঙ্কা করিয়া থাক তাহাদিগকে উপদেশ দান কর ও শয়নাগারে তাহাদিগকে যাইতে বারণ কর, এবং তাহাদিগকে প্রহার কর, যদি তাহারা তোমাদের অনুগত হয় তবে তাহাদের প্রতি কোন পথ অন্বেষণ করিও না; নিশ্চয়ই ঈশ্বর শ্রেষ্ঠ ও মহান ।
৪-৩৫ : এবং যদি (হে বিচারকগণ) তোমরা উভয়ের মধ্যে বিরুদ্ধ ভাব আশঙ্কা কর তবে পুরুষের স্বগণ হইতে একজন মীমাংসাকারী ও স্ত্রীর স্বগণ হইতে একজন মীমাংসাকারী নিযুক্ত করিবে, যদি তাহারা মীমাংসা করিয়া দিতে ইচ্ছা করে তবে ঈশ্বর উভয়ের প্রতি অনুকূল হইবেন।
আল কোরআনের বাংলা অনুবাদ : এ কে এম আশরাফুল ইসলাম, বিশ্ব সাহিত্য ভবন, ২০০১, ঢাকা।
৪-৩৪ : পুরুষ নারীর কর্তা, আল্লাহই তাদের একজনকে অন্যের উপর মর্যাদা দিয়েছেন। কারণ পুরুষ তাদের জন্য অর্থ ব্যয় করে। সুতরাং সতী নারীরা তাদের অনুগত হবে এবং তাদের অনুপস্থিতিতে আল্লাহ যা হেফাজত করতে বলেছেন তা হেফাজত করবে; তাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা করলে সদুপদেশ দাও, বিছানা ভিন্ন কর এবং তাদের মার দাও । তারা অনুগত হলে তাদের বিরুদ্ধে আর কিছুই কর না। আল্লাহ মহান, শ্ৰেষ্ঠ ।
৪-৩৫ : তাদের মধ্যে বিরোধ আশঙ্কা করলে তোমরা স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে। তারা নিষ্পত্তি চাইলে আল্লাহই তার অনুকূল পথ করে দিবেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে অবহিত।
২। ১২৯ আয়াতটির অনুবাদ নিচের অনুবাদগুলোর সাথেও তুলনা করে দেখা যেতে পারে ।
4-129
You are never able
To do justice
Between wives
Even if it is
Your ardent desire.
But tum not away
(From a Woman) altogether, So as to leave her (as if were ) Hanging (in the air)
If ye come to a friendly
Understanding and practice Self-restraint, Allah is
Off-forgiving. Most merciful.
(THE HOLY QUR-AN: English translation, Reviesed and Edited by Presidency of Islamic Researches, IFTA, Call and Guidance, Saudi Arabia)
বাংলা অনুবাদ
৪-১২৯ : এবং যদি তোমরা ইচ্ছা কর তথাপি নারীগণের সম্বন্ধে ন্যায়াচরণ করিতে সক্ষম হইবে না, অন্তত সম্পূর্ণ অনুরাগে (প্রিয়তমার প্রতি) অনুরাগ প্রকাশ করিও না, অবশেষে তাহাদিগকে শূন্যে লম্বিত স্ত্রীবৎ ছাড়িয়া দেও এবং যদি সম্মিলন স্থাপন কর ও ধর্মভীরু হও তবে নিশ্চয় ঈশ্বর দয়ালু ও ক্ষমাশীল
(ভাই গিরীশ চন্দ্র সেনের অনুবাদ, খোশরোজ কিতাব মহল, ঢাকা ।
৪-১২৯ : শত ইচ্ছাতেও তোমরা স্ত্রীদের সাথে সমান ব্যবহার করতে পারবে না। তাই তোমরা একদিকে ঝুঁকে পড় না, আবার কাউকে ঝুলিয়েও রেখ না। তোমরা যদি সৎকর্ম কর, মুত্তাকী হও তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
(এ. কে. এম আশরাফুল ইসলামের বঙ্গানুবাদ, বিশ্ব সাহিত্য ভবন, ২০০১, ঢাকা)।
প্রথম অধ্যায়ঃ যুক্তিবাদ মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্কতা
♦ মন্দের যুক্তি ও ঈশ্বরের অস্তিত্ব
♦ বিজ্ঞান মনস্কতা ও বিজ্ঞানমনস্ক সমাজনির্মাণ
♦ ইন্টিলিজেন্ট ডিজাইন নিয়ে কূটকচাল
♦ ব্রুনোর আত্মত্যাগ ও যুক্তিবাদ
♦ ইহজাগতিকতা ও আরজ আলী মাতুব্বর- একজন যুক্তিবাদী দার্শনিক
♦ বাংলাদেশে চেতনা-মুক্তির লড়াই
♦ ইসলাম যেভাবে নিজের পথ থেকে সরে গেছে
♦ বিজ্ঞান, বিজ্ঞানমনস্কতা বনাম কোরানিক বিজ্ঞান
দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ ধর্ম ও নৈতিকতা
♦ জীবিত ইসলামের মৃত গৌরবের কথা
♦ রামায়ণ কাহিনীর ঐতিহাসিকতা একটি একাডেমিক আলোচনা
♦ মানবতাভিত্তিক সংবিধান এবং অমানবিক বিধান
♦ ধর্মের উপযোগিতাঃ জনৈক বিবর্তনবাদীর দৃষ্টিতে
♦ ধর্মরাষ্ট্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম
♦ মানুষের জন্য ধর্ম, না ধর্মের জন্য মানুষ?
♦ বিজ্ঞান কি উপাসনা-ধর্মের প্রতিদ্বন্দ্বী
তৃতীয় অধ্যায়ঃ অন্যান্য প্রসঙ্গ
♦ হাইপেশিয়াঃ এক বিস্মৃতপ্ৰায় গণিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান
♦ শাশ্বত এথেন্সের নারী ও তার বিপর্যস্ত ধারাবাহিকতা
“স্বতন্ত্র ভাবনাঃ মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ