একটি মানুষের শিশু বয়স থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত মানবিক গুণের ক্রমবিকাশের বিষয়ে উন্নততর দেশগুলোতে বহু পরীক্ষানিরীক্ষা চালান হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। ওইসব দেশের মনোবিজ্ঞানী ও চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এখন স্বীকার করেই নিয়েছেন—মানুষের বংশগতি সূত্রে প্রাপ্ত অধিকাংশ অবৈশিষ্ট্যই পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত। সেই কারণে “মানবিক গুণের বিকাশে কার প্রভাব বেশি—বংশগতি অথবা পরিবেশ?” এই জাতীয় শিরোনামের বিতর্কে ওসব দেশের বিজ্ঞানীরা আজকাল আর অবতীর্ণ হন না, এককালে যেমনটি হতেন। তবে এখনও এদেশের বহু চিকিৎসা বিজ্ঞানী বংশগতিকে অধ্যধিক বা চূড়ান্ত গুরুত্ব দিতে গিয়ে আধুনিক বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে যে সব তথ্য সংগ্রহ করেছেন তাকেই অস্বীকার করে বসেন, নাকচ করে দেন। এমনটা করার কারণ সম্ভবত, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতি বিষয়ে খোঁজখবর না রাখা। এক সময় বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করার পর প্রতিষ্ঠা পেতেই নিশ্চল হয়ে যাওয়া।

বিজ্ঞানীরা কিন্তু বর্তমানে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন, বিগত বহু হাজার বছরের মধ্যে মানুষের শারীরবৃত্তিক কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়নি।

এই কম্পিউটার যুগের আধুনিক সমাজের মানবশিশুর

সঙ্গে বিশ হাজার বছর আগের ভাষাহীন,

কাঁচামাংসভোজী সমাজের মানবশিশুর

মধ্যে জিনগত বিশেষ কোনও

পার্থক্য ছিল না।

অর্থাৎ সেই আদিম যুগের মানবশিশুকে এযুগের অতি উন্নততর বিজ্ঞানে অগ্রবর্তী কোনও সমাজে বড় করতে পারলে ওই আদিম যুগের শিশুটি আধুনিকতম উন্নত সমাজের গড় মানুষদের মতোই বিদ্যে-বুদ্ধির অধিকারী হতো। হয় তো গবেষণা করত মহাকাশ নিয়ে অথবা সুপার কম্পিউটার নিয়ে, অর্থাৎ অনুকূল পরিবেশে শিশুকাল থেকে বেড়ে ওঠার সুযোগ পেলে এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকান দেশের নিরন্ন, হতদরিদ্র, মূর্খ মানুষগুলোও হতে পারে ইউরোপ, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র বা জাপানের উন্নত প্রযুক্তি বিদ্যার মধ্যে গড়ে ওঠা মানুষগুলোর সমকক্ষ। অবশ্য ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের জন্য স্বাতন্ত্র্যতা নিশ্চয়ই থাকতো, যেমনটি এখনও থাকে।

বর্ণপ্রাধান্য, জাতিপ্রাধান্য, পুরুষপ্রাধান্য বজায় রাখতে বিজ্ঞানের

বিরুদ্ধে বিজ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে এক ধরনের প্রচার চালান

হয়, উন্নত দেশের উন্নতির মূলে রয়েছে তাদের বর্ণের,

তাদের জাতির মেধাগত, বুদ্ধিগত উৎকর্ষতা

ও বৈশিষ্ট্য। পুরুষরাও একইভাবে প্রচার

করে নারীর চেয়ে তাদের মেধাগত,

বুদ্ধিগত উৎকর্ষতার।

বুদ্ধি মাপের নামে বুদ্ধ্যাঙ্ককে কাজে লাগিয়ে অনেক সাদা-চামড়াই প্রমাণ করতে চায় কালো চামড়ার তুলনায় তাদের মেধা ও বুদ্ধির উৎকর্ষতা। আবারও বলি এ যুগের বিজ্ঞানীরা কিন্তু যে বংশগতির তথ্য হাজির করেছেন, তাকে স্বীকার করলে বলতেই হয়, অনুকুল সুযোগ-সুবিধে না পাওয়ার দরুনই নিপীড়িত, নির্যাতিত মানুষগুলো অনুকূলতার সুযোগ পাওয়া মানুষের মতো মানবিক গুণগুলোকে বিকশিত করার সুযোগ পায়নি ।

এ কথাও সত্যি সামান্য অনুশীলনেই কিন্তু বুদ্ধ্যাঙ্ক প্রচুর বাড়ানো সম্ভব—প্রজ্ঞা বা মেধাকে আদৌ না বাড়িয়েই।

রাশিয়ার শিক্ষাসংক্রান্ত আকাদেমির (Pedagogical Acedemy)-র পূর্ণ সদস্য এ পেট্রোভস্কি (A. Petrovsky)-র প্রবন্ধ থেকে জানতে পারছি—স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগেই শিশুদের অনেক বিষয়ে বিশেষ শিক্ষাদানের কার্যক্রম রাশিয়ায় গ্রহণ করা হয়েছে যাতে বিস্ময়কর শিশু প্রতিভা সৃষ্টি করা যায়। দু-সপ্তাহের শিশুকে সাঁতার শেখান হচ্ছে, স্কুলে ঢোকার আগেই তিন মিটার স্প্রিং বোর্ড থেকে ডাইভিং শিখছে। অনুকূল সুযোগ অনেককেই বহুদুর পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যায়। অনেকে প্রতিভাকে পরিপূর্ণভাবে বিকশিত করে পরিণত বয়সে।

পরিবেশকে আমরা প্রথমিকভাবে দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি। এক : প্রাকৃতিক পরিবেশ, দুই : সামাজিক পরিবেশ। মানবজীবনকে এই দুই পরিবেশই প্রভাবিত করে।

 

প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নতি প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিজেদের অনুকূলে আনতে সক্ষম হলেও পৃথিবীর প্রতিটি প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাহায্যে অনুকূলে আনার চেষ্টা কষ্টকল্পনা মাত্র। প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব আমাদের বিভিন্ন শারীরিক বৈশিষ্ট্য দিয়েছে। আমরা যে অঞ্চলে বসবাস করি তার উচ্চতা, তাপাঙ্ক, বৃষ্টিপাত, জমির উর্বরতা ইত্যাদির উপর আমাদের বহু শারীরিক বৈশিষ্ট্য নির্ভরশীল। তাইতেই গ্রামবাংলার মানুষের সঙ্গে পাঞ্জাবের মানুষের, হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের মানুষদের সঙ্গে দক্ষিণ ভারতের মানুষদের, আফ্রিকার দক্ষিণবাসী মানুষদের সঙ্গে ইউরোপের মানুষদের, মেরু অঞ্চলের মানুষদের সঙ্গে মরু অঞ্চলের মানুষদের শারীরিক বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য দেখতে পাই।

বিজ্ঞানীরা স্বীকার করেন—চুলের রঙ, দেহের রঙ, দেহ গঠন,

ইত্যাদির মতো অনেক কিছুর পিছনেই যদিও জিন বা

বংশগতির অবদান যেমন আছে, তেমনই এও

সত্যি—দীর্ঘকালীন প্রাকৃতিক পরিবেশের

প্রভাব শরীরগত নানা বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি

করে এবং সেই বৈশিষ্ট্যই আবার

জিনকে প্রভাবিত করে।

বিজ্ঞানীরা এও স্বীকার করেন—অতি বিস্ময়কর জটিল আধুনিক কম্পিউটারের চেয়েও ডি এন-এর ক্ষমতা ও কার্যকলাপ অনেক বেশি জটিল এবং অনেক বেশি বিস্ময়কর।

প্রকৃতির প্রভাব যে দেহগত বৈশিষ্ট্য, দেহ বর্ণের উপর প্রভাব ফেলে থাকে, এই বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনায় যাওয়ার সুযোগ আমাদের নেই। পরিবর্তে বিষয়টা বুঝতে আমরা একটি দৃষ্টান্তকে ধরে নিয়ে আলোচনা করতে পারি।

যে মনুষ্যগোষ্ঠী বংশ পরম্পরায় আফ্রিকার উষ্ণ অঞ্চলে বসবাস করে, তাদের ক্ষেত্রে দেখতে পাই ধীরে ধীরে এই অঞ্চলের অধিবাসীদের চামড়ার নীচে ঘোর কৃষ্ণ রঞ্জক পদার্থের উপস্থিতি ঘটেছে তীব্র তাপ থেকে দেহের ভেতরের যন্ত্রপাতিকে রক্ষা করতে। শরীরের ভেতরে যন্ত্রপাতিকে বাঁচানোর প্রয়োজনেই দেহ বর্ণের এই পরিবর্তন বংশ পরম্পরায় ধীরে ধীরে সূচিত হয়েছে।

প্রাকৃতিক পরিবেশ শুধু আমাদের শরীরবৃত্তির ওপর নয়, মানসিকতার ওপরও প্রভাব বিস্তার করে। যে অঞ্চলের চাষী উর্বর জমির মালিক, সহজেই সেচের জল পায়, সে অঞ্চলের চাষীরা আয়াসপ্রিয় হয়ে পড়ে। হাতে বাড়তি সময় থাকার জন্য গ্রামীণ নানা সাংস্কৃতিক কাজ কর্মের সঙ্গে যুক্ত হতেই পারে। এমনি ভাবেই তো বঙ্গ সংস্কৃতিতে এসেছে ‘বারো মাসে তের পার্বণ’। আবার একই সঙ্গে আয়াসপ্রিয়তা আমাদের আড্ডা প্রিয়, পরনিন্দা প্রিয়, ঈর্ষাকাতর, তোষামোদ প্রিয় ইত্যাদির মতো বদদোষের পাশাপাশি বড় বেশি নিরীহ, আপোষমুখি করতেই পারে, দূরে সরিয়ে রাখতে পারে লড়াকু মানসিকতাকে, যদি না সামাজিক পরিবেশের প্রভাব তাদের এইসব দোষ থেকে মুক্ত করে।

গ্রীষ্মপ্রধান দেশের বা মরু অঞ্চলের মানুষ নিজেদের ন্যূনতম খাদ্য পানীয় সংগ্রহেই, বেঁচে থাকার সংগ্রামেই দিন-রাতের প্রায় পুরোটা সময়ই ব্যয় করতে বাধ্য হয়। ফলে তাদের পক্ষে বুদ্ধি, মেধাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিনিয়োগ করার মতো সময়টুকুও থাকে না।

আবার যে অঞ্চল পেট্রলের ওপর ভাসছে, সে অঞ্চলের মানুষদের পায়ের তলাতেই তো গলানো সোনা। আয়াসহীনভাবে কিছু মানুষ এত প্রাচুর্যের অধিকারী যে ফেলে ছড়িয়েও শেষ করতে পারে না তাদের সুবিশাল আয়ের ভগ্নাংশটুকুও। শ্রমহীন, প্রয়াসহীন মানুষগুলো স্রেফ প্রকৃতির অপার দাক্ষিণ্যে ধনকুবের বনে গিয়ে ভোগ সর্বস্ব হয়ে পড়ে। ভোগ থেকে কিছু সময় বুদ্ধি মেধাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পিছনে খরচ করতেও এদের অনীহা। কী প্রয়োজন শ্রমে, বুদ্ধি মেধা বাড়াবার শ্রমে? জীবিকার জন্যেই তো? প্রাচুর্য যেখানে অসীম, ফুরিয়ে দেওয়ার ফুরসৎ নেই, সেখানে শ্রম একান্তই নিষ্প্রয়োজন। পেট্রলখনির মালিকদের অর্থ প্রাচুর্য এদের ভোগ-সর্বস্ব করে। ফলে মানসিক প্রগতি এই অঞ্চলের মানুষদের কাছে অধরাই থেকে যায় ৷

বনে-বাদাড়ে, পাহাড়ে যাদের বাসভূমি তাদের না আছে আবাদী জমি, না আছে শিল্প-কারখানা, না আছে কাজ পাওয়ার সুযোগ। বেঁচে থাকার জন্য একান্তভাবে প্রয়োজনীয় সামান্যতম খাদ্য পানীয় যোগাড় করতে এরা প্রতিটি দিন যে সংগ্রাম করে, সেই সংগ্রামই এদের অনেক বেশি অনমনীয় করে তোলে। আবার যে সব পাহাড়ি অঞ্চল ঘিরে ভ্রমণ ব্যবসা জমে উঠেছে, সে অঞ্চলে মানুষরা ভিন্নতর মানসিকতার দ্বারা পরিচালিত হয়।

প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে বেড়ে ওঠা মানুষদের যে কোনও প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেবার ক্ষমতা অন্যদের তুলনায় বেশি থাকে।

বন্যা, খরা, ভূমিকম্প ইত্যাদি মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় দীর্ঘস্থায়ী হলে বিপর্যয়ে বিপন্ন মানুষদের অনেকেই কষ্টকর এই চাপের মুখে মানসিক রোগের শিকার হয়ে পড়ে না এবং মানসিক রোগের কারণেই রক্তচাপ বৃদ্ধি, হাঁপানি, আন্ত্রিক, ক্ষত, বুক ধড়ফড়, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি রোগও অনেকেই ভোগ করেন ।

মানবিক গুণের বিকাশে জনসংখ্যার ঘনত্বেরও কিছু প্রভাব আছে। ঘনবসতি অঞ্চলে বেড়ে ওঠা কিশোর-কিশোরীরা না পায় খেলার মাঠ, না দেখে মুক্ত আকাশ । বিরল বসতি বা পরিকল্পনা মাফিক গড়ে ওঠা অঞ্চলে যে সব ছেলে মেয়েরা বড় হয়, তারা পার্কে ঘোরে, মাঠে খেলে, নদীতে বা পুকুরে সাঁতার দেয়, নীল আকাশ, সবুজ গাছ, সবই তাদের ভিন্ন ভাবে গড়ে উঠতে সাহায্য করে। এখান থেকেই দেশের ভবিষ্যৎ সাঁতারু, ভবিষ্যৎ ফুটবলার, ক্রিকেটার কি অ্যাথেলিট তৈরি হয় ।

 

সামাজিক পরিবেশের প্রভাব

সামাজিক পরিবেশের প্রভাব মানুষের জীবনে প্রাকৃতিক পরিবেশের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী।

সামাজিক পরিবেশকে দু’ভাগে ভাগ করলে সুবিধে হয়। এক : আর্থ-সামাজিক, দুই : সমাজ-সাংস্কৃতিক।

 

আর্থ-সামাজিক পরিবেশের প্রভাব

দরিদ্র ও উন্নতিশীল দেশে, যেখানে জীবন-ধারণের ক্ষেত্রে প্রতিটি পদক্ষেপে জড়িয়ে রয়েছে বঞ্চনা ও অনিশ্চিয়তা, সেখানে মানুষের জীবনে আর্থ-সামাজিক পরিবেশের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। এসব দেশের সংখ্যাগুরু জনসাধারণের হাতে নেই জীবন-ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম অর্থ, নেই চিকিৎসার সুযোগ নেই শিক্ষা লাভের সুযোগ আছে, অপুষ্টি, আছে রোগ, আছে পানীয় জলের অভাব, আছে লজ্জা নিবারণের বস্ত্রটুকুরও অভাব, আছে বঞ্চনা, আছে দুর্নীতি, আছে শোষণ।

শৈশবে সন্তানের সবচেয়ে কাছের মানুষ মা। মায়ের স্বাস্থ্য, মায়ের মানসিকতার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে সন্তানের স্বাস্থ্য ও মানসিকতা। মায়ের অপুষ্টি, মায়ের বুকের দুধ দানের অক্ষমতা, শিশু পরিচর্যার ক্ষেত্রে অক্ষমতা ; যে অক্ষমতার কারণ মাকে বেঁচে থাকার ভাত রুটি যোগাড়েই জেগে থাকা সময়ের পুরোটাই প্রায় ব্যয় করতে হয়। সময়ের অভাব ছাড়াও থাকে অর্থের অভাবজনিত অক্ষমতা। মায়ের দরিদ্র রুগ্ন স্বাস্থ্য ও মানসিক অবসাদ শিশুর শারীরিক স্বাস্থ্য ও মানসিক অবস্থার ওপর বিশাল প্রভাব ফেলে।

শৈশব ও কৈশোরে শিশুরা ভোগে অপুষ্টিতে। খাদ্যাভাবে যথেষ্ট পরিমাণ প্রোটিন ও ক্যালরির অভাবে আমাদের দেশে কিশোর-কিশোরীরা বেশির ভাগই অপরিণত দুর্বল দেহ ও মনের অধিকারী। এরা স্নায়ু দুর্বলতায় ভোগে, বোধশক্তি কম। আমাদের দেশে প্রতি-বছর আড়াই লক্ষ শিশু ও কিশোর-কিশোরী দৃষ্টিশক্তি হারায় স্রেফ ভিটামিন ‘এ’-র অভাবে।

ইউনিসেফ’-এর হিসেব মতো এই দুনিয়ায় প্রতিবছর উদরাময়ে মৃত্যু হয় চল্লিশ লক্ষ শিশুর, নিউমোনিয়ায় বাইশ লক্ষ, হামে পনের লক্ষ, ম্যালেরিয়ার দশ লক্ষ, ধনুষ্টঙ্কারে আট লক্ষ। অনাহারের তীব্র অসহনীয় যন্ত্রণায় শিকার পনের কোটি শিশু—যাদের বয়স পাঁচ বছরের নিচে। ক্ষুধা আর রোগের আক্রমণে মৃত্যু পরোয়ানা লেখা জীবন্ত কঙ্কাল এইসব শিশুদের প্রায় সকলেই ভারতীয় উপমহাদেশ, লাতিন আমেরিকা এবং আফ্রিকার সাহারা মরু সন্নিহিত অঞ্চলের অধিবাসী ।

বর্তমানে আমাদের দেশে দশ কোটি শিশু কোনও দিনই স্কুলের মুখ দেখেনি ও দেখবেও না—যাদের বয়স পাঁচ থেকে পনেরোর মধ্যে। ‘৯০ সালে যে দশ কোটি শিশু প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হয়েছিল তাদের মধ্যে চার কোটি শিশুই প্রাথমিক শিক্ষাটুকুও শেষ করতে পারেনি স্রেফ দারিদ্র্যতার কারণে।

যে বয়সের শিশুরা পড়ে খেলে, আমাদের দেশের শিশুরা সেই বয়সেই নিজের পেট চালাতে, পরিবারকে সাহায্য করতে শ্রম বিক্রি করে। এরা কাজ করে ক্ষেতে, ইট ভাটায়, চায়ের দোকানে, মুদির দোকানে, গাড়ি সারাইয়ের গ্যারেজে, বিড়ি তৈরির কারিগররূপে, গৃহভৃত্যরূপে, বাস, লরির ক্লিনাররূপে, ফেরিওয়ালারূপে, দোকানীরূপে, ঠোঙা তৈরির শ্রমিকরূপে; আরও বহু বহু রূপে। আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংস্থার দ্বারা প্রকাশিত ২০০৩-এর তথ্য অনুসারে ভারতে শিশু-শ্রমিকের সংখ্যা ১১ কোটির কাছাকাছি।

এর বাইরেও আরো কয়েক কোটি শিশু ও কিশোর-কিশোরী আছে জীবন-ধারণের জন্য পাচার করে চোলাই মদ, অন্যান্য মাদকদ্রব্য, বেআইনি বিদেশী দ্রব্য, আড়াই কোটি কিশোরী বেঁচে থাকার তাগিদে দেহ বিক্রি করে।

এরাই যখন বড় হয়, হয়ে ওঠে সমাজবিরোধী শক্তি। চুরি, ডাকাতি, লুঠপাট, ওয়াগান ভাঙা, ছিনতাই করা, দোকান-বাজার থেকে ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করা, সাট্টা, জুয়া, চোলাই, হেরোইন ইত্যাদির ব্যবসা করা, নির্বাচনে বুথ দখল করা, লালসা মেটাতে ধর্ষণ করা ইত্যাদি নানা সমাজবিরোধী কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে। যে কোনও উপায়ে জৈবিক প্রয়োজন মেটানোই এদের একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় ।

গ্রামের কিশোরী-যুবতীদের চেয়ে শহর ও শহরতলী বস্তিবাসী ও ঘিঞ্জি এলাকার বস্তিবাসী কিশোরী ও যুবতীদের অবস্থা অনেক বেশি খারাপ। এখানে একটি ছোট্ট ঘরে বহু মানুষকে গাদাগাদি হয়ে ভোরের সূর্যের প্রতীক্ষা করতে হয়। অনেক সময়েই এরা নারী-পুরুষের গোপন ক্রিয়াকলাপ দেখে যৌন আবেগ দ্বারা চালিত হয়। ফুটপাতবাসী কিশোরীদের অবস্থাও একই রকম। অনেক সময় ইচ্ছে না থাকলেও যৌনজীবনে প্রবেশ করে মস্তান, আত্মীয় বা পরিচিতিদের হাত ধরে। বহু ক্ষেত্রেই কর্মজীবনে ঠিকাদারদের কাছে কাজ করতে গিয়ে, পরের বাড়ি রাঁধুনী বা দাসীর কাজ করতে গিয়ে, অন্যের লালসা মেটাতে বাধ্য হয়। পেটের তাগিদে যৌন-শোষণের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারে না। ভোগবাদী সংস্কৃতি অনেক মেয়ে বউকেও কলগার্ল তৈরি করছে। ছেলেরা যৌন উত্তেজনা কিনতে বেশ্যালয়ে যায়। মেয়েরা যৌন-উত্তেজনা মেটাবার পাশাপাশি টাকা রোজগারও করে। যৌন-উত্তেজনা ও টাকা—দু’টোই জবরদস্ত নেশা।

বেঁচে থাকার তাগিদে যখন যৌন-শোষণের শিকার হয় নারী বা

কিশোর (হ্যাঁ, অল্পবয়সী ছেলেরাও) তখন তাকে ‘আর্থ-সামাজিক

পরিবেশের শিকার’ বলে চিহ্নিত করতে পারি। কিন্তু যখন

নারী বাড়তি রোজগার ও যৌন-উত্তেজনা মেটাতে

নিজেদের যৌনতা বিক্রি করে, তখন সে

সমস্যাকে সমাজ-সংস্কৃতির পরিবেশের

প্রভাব বলতে পারি।

যখন একজন শুধুমাত্র বাঁচতে ও পরিবারকে বাঁচাতে চুরি করে, চোরাচালানে বাহকের কাজ করে ইত্যাদি, তখন আমরা বলতে পারি, ‘এসব অপরাধের কারণ আর্থ-সামাজিক’। কিন্তু সব অপরাধীদের বেলায় আমরা যদি বলতে থাকি, ‘ওর কোনও দোষ নেই, আর্থ-সামাজিক অবস্থাই ওকে অপরাধী করেছে’—তবে তা হবে অতিসরলীকরণ দোষে দুষ্ট।

আজকে যারা পরিবারের পেটে একবেলা ভাত জোটাতে ‘সমাজবিরোধী’ কাল তারাই রাজনৈতিক নেতা-মন্ত্রীদের পোষা মস্তান। খুন, তোলাবাজি, প্রোমোটিং-এর পাশাপাশি বুথ দখল, বা রিগিং করে, পার্টির সিট জিতিয়ে দেয়। মন্ত্রী থেকে পুলিশ সব্বাইকে দিয়ে থুয়েই এদের এক এক জনের আয় মাসে ৩ লাখ থেকে ৩০ লাখ। কখনও বা এরাই হয়ে ওঠে মন্ত্রী-সাংসদ বা বিধায়ক। তেমনটা একবার হতে পারলে এক লাফে আয়টা ১০০ গুণ বাড়বে।

১৯৮৯ সালে গিয়েছিলাম সিংভূম জেলার বান্দিজারি গ্রামে। চাইবাসা থেকে মাত্র পঁয়ত্রিশ কিলোমিটারের পথ। কিন্তু বেশ দুর্গম। গ্রামটি জঙ্গলের ভেতর। জঙ্গল ভেদ করে আলো আসে না, সবসময় অন্ধকার ঘেরা। ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসতি এলাকা। গ্রামে শ’দুই ঘর—শ’দুই পরিবার। গত এক মাসে ১০০ জনের উপর অজানা মারণ ব্যাধির শিকার। খাওয়ার জল চাওয়াতে যে জল এনে দিলেন সে জলের রঙ কালচে শ্যাওলার মতো, তীব্র দুর্গান্ধ। জল খেতে পারিনি। শুনলাম এ জলই ওরা পান করেন। সংগ্রহ করেন একটা প্রাচীন কুয়ো থেকে। এক বাড়ির জলের হাঁড়িতে উঁকি মারতেই দেখতে পেলাম জলের পোকা ও বেঙাচি।

অবাক বিস্ময়ে এও জানলাম, এও শুনলাম, উপজাতি বা অনুপজাতীয় কোনও নেতাই এই মারণ রোগের প্রসঙ্গ বিধানসভায় তুলে তুচ্ছ কারণে ব্যতিব্যস্ত করতে চাননি সভার শ্রদ্ধেয় প্রতিনিধিদের।

বান্দিজারি গ্রামের মোনল লুগদি মুণ্ডার সঙ্গে কথা বলেছি। ওর নিজের ছেলেটিও এই অজানা রোগে মারা গেছে দিনকয়েক আগে। লুগদির ধারণা, বোঙ্গার অভিশাপেই এই মড়ক। দূরের হাসপাতালে রোগী পায়নি। কারণ পাঠিয়ে লাভ নেই। যাদের মারবার, বোঙ্গা তাদের মারবেই। এই বিপদ থেকে উদ্ধার পাবার একটিই পথ, তা হলো বোঙ্গাকে সন্তুষ্ট করা। তুষ্ট করতে তাই বোঙ্গার পুজো দেওয়া হয়েছে, বলি দেওয়া হয়েছে ছাগল-মুরগী।

বান্দিজারির কাছেই মনোহরপুর অঞ্চল। মনোহরপুর ব্লকের বারোটি গ্রামই আক্রান্ত। মনোহরপুরের আদিবাসীদেরও ধারণা বান্দিজারির আদিবাসীদের মতোই। তারাও বোঙ্গার রোষ কমাতে পুজো দিয়েছে। বাড়ি বাড়ি মরার খবর দিতে গিয়ে তাঁরা কাঁদছিলেন। না দোষারোপ করেননি সরকারের উদাসীনতার। দোষ দেননি বোঙ্গাকে পর্যন্ত। দোষ দিয়েছেন নিজেদের ভাগ্যকে।

দূরদর্শনের পর্দায় বা বাণিজ্যিক সিনেমায় আমরা যে সুন্দর শান্ত ছবি দেখি, তা নিয়ে কিন্তু আমাদের দেশ নয়। আমাদের দেশ লক্ষ বান্দিজারি গ্রাম নিয়েই । এত সব আর্থ-সামাজিক পরিবেশেরই ফল।

এই পরিবেশের চাবিকাঠি যাদের হাতে তারা চায় না ওইসব

বঞ্চিত মানুষগুলোর নেশা কাটুক, ঘুম ভাঙুক, নিজেদের

অধিকার বিষয়ে সচেতন হোক। এই সচেতনতা

আনতে পারে অনুকূল, সুস্থ সমাজ-

সাংস্কৃতিক পরিবেশ।

আর এও চরমতম সত্য—অর্থনৈতক স্বাধীনতা না থাকলে চিকিৎসা লাভের স্বাধীনতা, শিক্ষাগ্রহণের স্বাধীনতা, জীবিকার স্বাধীনতা ইত্যাদি সব স্বাধীনতাই অর্থহীন রসিকতা মনে হয় ৷

 

সমাজ-সাংস্কৃতিক পরিবেশের প্রভাব

মানুষ সৃষ্ট যা কিছু, সবই সংস্কৃতি। সংস্কৃতির মূল উপাদান দু-রকম। বস্তুগত ও অবস্তুগত। গৃহ থেকে গৃহ-সামগ্রী, যানবাহন থেকে যুদ্ধাস্ত্র—সবই মানব সংস্কৃতির বস্তুগত উপাদান। অবস্তুগত উপাদান হল—নীতিবোধ থেকে নীতিহীনতা, স্পষ্টবাদীতা থেকে চাটুকারিতার মতো বিভিন্ন মানসিকতা ।

এই বস্তুগত ও অবস্তুগত অর্থাৎ মনন-জগতের উপাদান নিয়েই চলমান একটি জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানের উন্নতি হতে থাকে, পাল্টে যেতে থাকে বস্তুগত সংস্কৃতির জগৎ। সময়ে পরিবর্তিত হতে থাকে মানুষের চিন্তা-চেতনা। পাল্টে যেতে থাকে অবস্তুগত সাংস্কৃতিক উপাদান। এই পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী।

সংস্কৃতির বস্তুগত ও অবস্তুগত উপাদানগুলোর প্রধান নিয়ন্ত্রক ধনকুবের হুজুরের দল। তাদের সহায়ক শক্তি যো-হুজুরের দলে আছে গদি দখলের প্রতিযোগিতায় নামা রাজনৈতিক দলগুলো, প্রশাসন, পুলিশ, সেনা, প্রচার মাধ্যম, বুদ্ধিজীবী। দেশ চালাতে বেয়াদপদের শায়েস্তা করতে পুলিশ-সেনার দরকার হয়। শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা যেন ফুলে ফুলে ভরে ওঠে—তা দেখভালের বনিময়ে প্রশাসনও হাতে হাতে ফল পায়। শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের স্বার্থে নানা ভোগ্যপণ্যের প্রতি তীব্র ক্ষুধা জাগিয়ে তোলে বিজ্ঞাপন সংস্থা-বুদ্ধিজীবী-প্রচার মাধ্যমের যৌথ উদ্যোগ। এই ক্ষিদে জাগিয়ে তোলার জন্য যে মগজধোলাইয়ের প্রক্রিয়া চলছে, তা অবস্তুগত সংস্কৃতি। ফলে একটি মধ্যবিত্ত ঘরের ছাত্র বা বেকার ছেলেটিরও মোটরবাইক চাই, সেল-ফোন চাই, পিটার ইংল্যান্ডের সার্ট চাই, অ্যাভিসের প্যান্ট চাই, ওয়াকম্যান চাই, রে-ব্যান সানগ্লাস চাই, কিংফিসার বিয়ার চাই। চাই চাই যতই বাড়ছে ততই ভোগ্যপণ্যের বাজার বাড়ছে। বাড়ছে বস্তুগত সংস্কৃতির রমরমা।

আমরা কী ধরনের কবিতা-গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ পড়ব, তা ঠিক করে দিচ্ছে, বৃহৎ পত্রিকাগোষ্ঠী ও প্রকাশক। খুল্লামখুল্লা মেয়েরা হল ‘সাহসী’ মেয়ে —এই প্রচার গত কয়েক বছর ধরে একটা বড় পত্রিকা চালিয়ে যাচ্ছে। কোন্ ধরনের সিরিয়াল দেখবো, কোন্ ধরনের সিনেমা – সবই ঠিক করে দিচ্ছে কোটিপতি চ্যানেল মালিক ও সিনেমার প্রডিউসর। কাকে ‘উগ্রপন্থী’ বলব, কাকে ‘নকশালপন্থী’ কে ‘দেশপ্রেমিক’ কে ‘দেশদ্রোহী’ সবই ঠিক করে দিচ্ছে পোষা বুদ্ধিজীবীরা। কোনও কুকুরকে গুলি করে মারার আগে ‘পাগলা কুকুর’ বলে ছাপ মেরে দেওয়া হয়। তাতে পশুপ্রেমিকদের কাছেও হত্যাটা অনুমোদন পায়। ঠিক তেমনই ঘটে হতদরিদ্র, প্রতারিত, নির্যাতিত মানুষগুলোর চোখে প্রতিবাদের আগুন জ্বলে উঠলো। সবাই তার ন্যায্য অধিকার চাইলে কি দেশ চালানো যায় !

এইসব হতদরিদ্র ‘ছোটলোক’রা উদ্ধৃত হলে তাদের

‘নকশাল’ বা ‘উগ্রপন্থী’ বলে দেগে দেওয়া হয়।

যদিও ওইসব শীর্ণ, অভুক্ত মানুষরা জানেই

না ‘মার্কসবাদ’ খায় না মাথায় মাখে।

এ দেশের মাতঙ্গিনী হাজরাদের সাহস গুঁড়িয়ে দিতে এ দেশের পুলিশ ও মিলিটারিরা গণধর্ষণ করে আসছে গত শতকের ছ’য়ের দশক থেকে। সেই ট্রাডিশন আজও বহন করে চলেছে আমাদের মহান ভারত?

মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবীদের মগজধোলাইয়ের কল্যাণে ‘নকশাল’ও ‘বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হত্যা আমাদের ষোল আনা অনুমোদন পেয়ে বসে আছে। ‘নকশাল’ বা ‘উগ্ৰপন্থী’ মেয়েদের উপর পুলিশ সেনার গণ ধর্ষণ আমাদের মনে একটিও আঁচড় কাটে না।

আমাদের মূল্যবোধ, রুচি, চাহিদা, চেতনা, জীবনধারা সবই নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের আশেপাশে মানুষজন, প্রচারমাধ্যম, সিনেমা-থিয়েটার-যাত্রা-টিভি, রাজনৈতিক নেতাদের দলবাজি ইত্যাদি হাজারো বিষয় ।

একটি জরুরি তথ্যঃ মানুষ যেমন সাংস্কৃতিক পরিবেশ দ্বারা প্রভাবিত হয়, তেমনি মানুষ সাংস্কৃতিক পরিবেশকে প্রভাবিতও করে। সেই প্রভাব ভালো হতে পারে, খারাপও হতে পারে।

মার্কস, লেনিন, মাও, গান্ধি, রবীন্দ্রনাথ, শ্যামাপ্রসাদ, চারু মজুমদার-এর চিন্তাধারা এ দেশের লক্ষ কোটি মানুষকে প্রভাবিত করেছে। সমাজ ও সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করেছে। সমাজ ও সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করার, আন্দোলিত করার ক্ষমতা সবার নেই। তবে কারও কারও আছে।

প্রথম পর্বঃ মনের নিয়ন্ত্রণ

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ বুদ্ধি, স্মৃতি, প্রতিভা নিয়ে বিভ্রান্তি বেচে খাচ্ছে অনেকে

অধ্যায়ঃ দুই

♦ প্রচুর পড়েন মানে-ই মস্তিষ্কচর্চা করেন?

অধ্যায়ঃ তিন

♦ স্মৃতি-শক্তি ও প্রতিভা এক নয়

অধ্যায়ঃ চার

♦ জ্ঞান (wisdom) ও শিক্ষা (education) এক নয়

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ মস্তিষ্ক ও তার কিছু বৈশিষ্ট্য

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ পাভলভ-তত্ত্বে মস্তিষ্কের ‘ছক’ বা type

অধ্যায়ঃ সাত

♦ আচরণগত সমস্যা

অধ্যায়ঃ আট

♦ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কত কিছু পাল্টে যায়

অধ্যায়ঃ নয়

♦ অলজাইমারস সৃষ্টিশীল মেধায় ভয়ঙ্কর অসুখ

অধ্যায়ঃ দশ

♦ ‘আই কিউ’ কি বাড়ানো যায়?

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ জিন বা বংশগতি-ই ঠিক করে মেধা-বুদ্ধি?

অধ্যায়ঃ বারো

♦ বংশগতি গবেষণা ও স্নায়ুবিজ্ঞানের অগ্রগতি

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ মানবগুণ বিকাশে পরিবেশের প্রভাব

অধ্যায়ঃ চোদ্দ

♦ মগজ কম্পিউটারে প্রোগ্রামিং

অধ্যায়ঃ পনেরো

♦ মগজধোলাই-এর প্রয়োজনীয়তা বেড়েই চলেছে

দ্বিতীয় পর্বঃ ধ্যাণ-যোগ-সমাধি মেডিটেশন

অধ্যায়ঃ এক

♦ যোগ নিয়ে যোগ বিয়োগ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ যোগ কি? যোগ নিয়ে গুলগপ্পো

অধ্যায়ঃ তিন

♦ যোগ

অধ্যায়ঃ চার

♦ যোগের সে’কাল এ’কাল

অধ্যায়ঃ পাঁচ

‘রজনীশ’ এক শিক্ষিত যোগী, বিতর্কিত নাম

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !

অধ্যায়ঃ সাত

♦ শ্রীমাতাজী নির্মলা দেবীর সহজযোগ

অধ্যায়ঃ আট

♦ রিল্যাক্সেশন, মেডিটেশন নিয়ে বাংলাদেশের যোগী মহাজাতক

অধ্যায়ঃ নয়

♦ ‘যোগ’ মস্তিষ্ক-চর্চা বিরোধী এক স্থবীর তত্ত্ব

অধ্যায়ঃ দশ

♦ ‘মেডিটেশন’, ‘রিলাক্সেশন’, বা ‘স্বসম্মোহন’

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ বিশ লক্ষ টাকার চ্যালেঞ্জ

“মনের নিয়ন্ত্রণ যোগ-মেডিটেশন” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ

⇒ মন্তব্য করুন⇐

error: Content is protected !!