মহাগ্রন্থ আল-কুরআন সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর অবতীর্ণ এক অনন্য মু’জিযাপূর্ণ আসমানী কিতাব। আরবী ভাষায় নাযিলকৃত এই মহাগ্রন্থ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও ইঙ্গিতময় ভাষায় মহান রাব্বুল আলামীন বিশ্ব ও বিশ্বাতীত তাবৎ জ্ঞানের বিশাল ভাণ্ডার বিশ্ব-মানবের সামনে উপস্থাপন করেছেন। মানুষের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনসম্পৃক্ত এমন কোন বিষয় নেই, যা পবিত্র কুরআনে উল্লিখিত হয়নি। বস্তুত আল- কুরআনই সত্য ও সঠিক পথে চলার জন্য আল্লাহপ্রদত্ত নির্দেশনা, ইসলামী জীবন ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। সুতরাং পরিপূর্ণ ইসলামী জীবন গঠন করে দুনিয়া ও আখিরাতে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের পূর্ণ সন্তুষ্টি অর্জন করতে হলে পবিত্র কুরআনের দিক-নির্দেশনা ও অন্তর্নিহিত বাণী সম্যক অনুধাবন এবং সেই মোতাবেক আমল করার কোনও বিকল্প নেই। পবিত্র কুরআনের ভাষা, শব্দচয়ন, বর্ণনাভঙ্গী ও বাক্য বিন্যাস চৌম্বক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন, ইঙ্গিতময় ও ব্যঞ্জনাধর্মী। তাই সাধারণের পক্ষে এর মর্মবাণী ও নির্দেশাবলী অনুধাবন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এমনকি ইসলামী বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তিরাও কখনও কখনও এর মর্মবাণী সম্যক উপলব্ধি করতে সক্ষম হন না। এই সমস্যা ও অসুবিধার প্রেক্ষাপটেই পবিত্র কুরআনের বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ সম্বলিত তাফসীর শাস্ত্রের উদ্ভব। তাফসীর শাস্ত্রবিদগণ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর পবিত্র হাদীসসমূহকে মূল উপাদান হিসেবে গ্রহণ করে কুরআন ব্যাখ্যায় নিজ নিজ মেধা, প্রজ্ঞা ও বিশ্লেষণ দক্ষতা প্রয়োগ করেছেন এবং মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের শিক্ষা ও মর্মবাণীকে সহজবোধ্য করে উপস্থাপন করেছেন। এভাবে বহু মুফাসসির পবিত্র কুরআনের শিক্ষাকে বিশ্বব্যাপী সহজবোধ্য করার কাজে অনন্য সাধারণ অবদান রেখে গেছেন। এখনও এই মহৎ প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে।
এ তাফসীর গ্রন্থের অধিকাংশ প্রণীত হয়েছে আরবী ভাষায়। ফলে বাংলাভাষী পাঠক সাধারণ এ তাফসীর গ্রন্থ থেকে উপকৃত হতে পারেন নি। এদেশের সাধারণ মানুষ যাতে মাতৃভাষার মাধ্যমে পবিত্র কুরআনের মর্মবাণী অনুধাবন করতে পারেন, সেই লক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আরবী ও উর্দু প্রভৃতি ভাষায় প্রকাশিত প্রসিদ্ধ ও নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থ বাংলা ভাষায় অনুবাদ ও প্রকাশের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেকগুলো প্রসিদ্ধ তাফসীর আমরা অনুবাদ ও প্রকাশ করেছি।
আরবী ভাষায় রচিত তাফসীর গ্রন্থগুলোর মধ্যে আল্লামা ইসমাঈল ইব্ন কাছীর (রঃ) প্রণীত ‘তাফসীরে ইব্ন কাছীর’ মৌলিকতা, স্বচ্ছতা এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ-নৈপুণ্যে ভাস্বর এক অনন্য গ্রন্থ। আল্লামা ইব্ন কাছীর (র) তাঁর এই গ্রন্থে আল-কুরআনেরই বিভিন্ন ব্যাখ্যামূলক আয়াত এবং মহানবী (সাঃ)-এর হাদীসের আলোকে কুরআন-ব্যাখ্যায় স্বীয় মেধা, প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতাকে ব্যবহার করেছেন। এ যাবত প্রকাশিত তাফসীর গ্রন্থগুলোর মধ্যে আর কোন গ্রন্থেই তাফসীরে ইব্ন কাছীর-এর অনুরূপ এত বিপুল সংখ্যক হাদীস সন্নিবেশিত হয়নি। ফলে তাঁর এই গ্রন্থখানি সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থ হিসেবে মুসলিম বিশ্বে প্রসিদ্ধি অর্জন করেছে। এই গ্রন্থ সম্পর্কে আল্লামা সুয়ূতী (রঃ) বলেছেন, ‘এ ধরনের তাফসীর গ্রন্থ এর আগে কেউ রচনা করেন নি।’ আল্লামা শাওকানী (রঃ) এই গ্রন্থটিকে ‘সর্বোত্তম তাফসীর গ্রন্থগুলোর অন্যতম’ বলে মন্তব্য করেছেন। আল্লাহ তা’আলার অশেষ মেহেরবানীতে আমরা এই তাফসীর গ্রন্থের বাংলা অনুবাদের কাজ ১১ খণ্ডে সমাপ্ত করে বাংলাভাষী পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করতে পেরেছি। অনুবাদের গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন প্রখ্যাত আলিম, শিক্ষাবিদ, অধ্যাপক আখতার ফারূক। গ্রন্থটির প্রথম খণ্ডের পঞ্চম সংস্করণের সকল কপি ফুরিয়ে যাওয়ায় এবার এর ষষ্ঠ সংস্করণ প্রকাশ করা হলো ।
এই অমূল্য গ্রন্থখানির অনুবাদ, সম্পাদনা এবং প্রকাশনার বিভিন্ন পর্যায়ে জড়িত থেকে যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, তাঁদের সকলকে আন্তরিক মুবারকবাদ জানাই।
মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে এই তাফসীর গ্রন্থের মাধ্যমে ভালোভাবে কুরআন বোঝা এবং সেই অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দিন। আমীন।
সামীম মোহাম্মদ আফজাল
মহাপরিচালক
ইসলামিক ফাউন্ডেশন