মনোহর মাহাতো বাঁকুড়ার গ্রামের ছেলে। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উচ্চমাধ্যবিক স্ট্যান্ড করে কলকাতায় এলো পড়তে। হাঁটায় চলায় কথা-বার্তায় গ্রাম্য-সরলতা; আমরা যাকে চলতি ভাষায় বলি গাঁইয়া। পরিশ্রমী, অধ্যবসায়ী। বই পড়তে ভালোবাসতো। আমার কথা শুনতে ভালোবাসতো। লক্ষ্য করেছি—চট্ করে বিষয়ান্তরে যেতে পারতো না।
তিন বছরের মধ্যেই শহর কলকাতার জল-হাওয়ায় রপ্ত হয়ে গেল। স্মার্ট ছেলে। এখনকার পড়াশুনা শেষ করে ইউ এস এ-তে গেল। দেখা হল দশ বছর পরে। ব্যক্তিত্ব-ই পাল্টে গেছে। অনেক কম কথা বলে, অহেতুক কৌতুহল নেই, জিজ্ঞাসা বেড়েছে, দ্রুত বিষয়ান্তরে মনসংযোগ করতে পারে স্বতঃস্ফূর্ততার সঙ্গে। এখন ইউ. এস. এর একটা বৃহৎ কোম্পানির অংশীদার। মনোহর এখন ‘মন’ নামে পরিচিত।
‘মন’ বা মনোহরের চরিত্রটিকে মনোবিদের দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ করতে আমরা কী পাব? আসুন দেখি ।
মনোহরের শৈশব কেটেছে গ্রাম বাংলার মধ্যবিত্ত পরিবারে। মা-বাবা, আত্মীয়-পড়শি, বন্ধু, শিক্ষকদের ভাষা-সংস্কৃতি, ধর্মীয় বিশ্বাস-চিন্তা-ভাবনা-সরলতা প্রভাবিত করেছে মনোহরকে। তার শেখা (learning) ও শিক্ষা (education) ছিল গ্রাম বাংলার মধ্যবিত্ত পরিবারের শ্রেণী চরিত্র দ্বারা প্রভাবিত।
শহর কলকাতায় আসার পর শহরের মধ্যবিত্ত ও শিক্ষিত শ্রেণীর সংস্কৃতি মনোহরকে তৈরি করেছে।
আমেরিকায় পাড়ি দেওয়ার পর সেখানকার রুচি, সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার তাকে আরও পাল্টে দিয়েছে।
গ্রাম বাংলার মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আমেরিকার বিশাল কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার হওয়া পর্যন্ত সবটাই একটু একটু করে হয়ে ওঠা। গ্রামের আবেগ-প্রবণ মানুষ থেকে উদ্দমী, প্রাণচঞ্চল, উচ্চাভিলাষী, পরিশ্রমী মানুষ হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তার শ্রেণী চরিত্র (class character) একটু একটু করে পাল্টাতে পাল্টাতে বর্তমান অবস্থায় এসেছে।
এ যেমন উত্তরণের কাহিনী, তেমনই এক তলিয়ে যাওয়ার কাহিনীও জানি, দমদম পার্কের শংকর সাহা উদ্যমী, পরিশ্রমী, ধীর-স্থির, যে কোনও কাজে লেগে থাকতে পারে। বড়বাজারে শাড়ি-কাপড়ের ব্যবসা। বিয়েতে বরযাত্রীরা গেলেন এলেন প্লেনে। শংকরের বাবা মারা যেতেই ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া, ব্যবসা গেল দাদার দখলে। শংকর দমদম পার্কের বিশাল বাড়ি ছেড়ে দমদমে একটা ছোট্ট বাড়ি ভাড়া করে টিকে থাকার চেষ্টা করতে লাগলো। মানসিকভাবে ধীর-স্থির শংকর ধীরে ধীরে ভেঙে পড়তে লাগলো। আবার ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করতে করতে ব্যর্থ হতে হতে উৎসাহ উদ্দীপনার অভাব দেখা দিল। বিষণ্ণ শংকর এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। বিষণ্ণ মানসিকতাই এখন ওর নিত্য সঙ্গী।
একজন উদ্যমী, অধ্যবসায়ী ব্যবসায়ী আর্থিক বিপর্যয়ে, ভাইয়ের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত আঘাতে একটু একটু করে উদ্যম হারিয়েছে, বিষণ্ণতার শিকার হয়েছে, এসবই একটা শ্রেণী চরিত্র থেকে (class character)-এ নেমে যাওয়ার পরিণতি। উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণী থেকে নিম্নবিত্ত শ্রেণীতে নেমে যাওয়ার পরিণতি। শংকর যদি একজন রিক্সাওয়ালা বা কুলীর জীবনযাপনে শুরু থেকে অভ্যস্ত হতো, তাহলে আর্থিক অবস্থার জন্য মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার প্রশ্ন-ই ছিল না। শংকরের আর্থিক বর্তমান বিপর্যয়-ই তার বিষণ্ণতার প্রধান কারণ। ভাইয়ে ভাইয়ে ব্যবসা পৃথক করে নেওয়ার ঘটনায় সাধারণভাবে ব্যবসায়ী শ্রেণীর মনে এতটা আঘাত তৈরি করে না। বাবার মৃত্যুর পর এমনটা আকছার ঘটেই থাকে। ধীরুভাই আম্বানীর মৃত্যুর পর অনিল ও মুকেশ দুই ছেলে সম্পত্তি ভাগ নিয়ে অনেক তিক্ত অধ্যায় অতিক্রম করেছেন—ঠিক ঠাক থেকেই।
ভাইয়ের তরফ থেকে শংকরকে যত-ই আঘাত দিক, তারপরও সে যদি আগের স্বচ্ছল অবস্থায় থাকতে পারতো, তাহলে ব্যবসায়ী শ্রেণীচরিত্রের মানুষ শংকর বিষণ্ণতা ও নিস্তেজনার শিকার হতো না।
আধুনিক মনোবিজ্ঞান মনে করে, মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষকে কখনই
নির্দ্দিষ্ট কোনও ছকে (type) বাঁধা যায় না। মন
গতিশীল। যার জীবনে উত্থান-পতন বেশি,
তার মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষও সেই পরিবেশে
সঙ্গে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করে।
অর্থাৎ তথাকথিত ‘ছক’ বা
‘type’ বদলাতে থাকে ।
প্রথম পর্বঃ মনের নিয়ন্ত্রণ
অধ্যায়ঃ এক
♦ বুদ্ধি, স্মৃতি, প্রতিভা নিয়ে বিভ্রান্তি বেচে খাচ্ছে অনেকে
অধ্যায়ঃ দুই
♦ প্রচুর পড়েন মানে-ই মস্তিষ্কচর্চা করেন?
অধ্যায়ঃ তিন
♦ স্মৃতি-শক্তি ও প্রতিভা এক নয়
অধ্যায়ঃ চার
♦ জ্ঞান (wisdom) ও শিক্ষা (education) এক নয়
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦ মস্তিষ্ক ও তার কিছু বৈশিষ্ট্য
অধ্যায়ঃ ছয়
♦ পাভলভ-তত্ত্বে মস্তিষ্কের ‘ছক’ বা type
অধ্যায়ঃ সাত
অধ্যায়ঃ আট
♦ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কত কিছু পাল্টে যায়
অধ্যায়ঃ নয়
♦ অলজাইমারস সৃষ্টিশীল মেধায় ভয়ঙ্কর অসুখ
অধ্যায়ঃ দশ
অধ্যায়ঃ এগারো
♦ জিন বা বংশগতি-ই ঠিক করে মেধা-বুদ্ধি?
অধ্যায়ঃ বারো
♦ বংশগতি গবেষণা ও স্নায়ুবিজ্ঞানের অগ্রগতি
অধ্যায়ঃ তেরো
♦ মানবগুণ বিকাশে পরিবেশের প্রভাব
অধ্যায়ঃ চোদ্দ
অধ্যায়ঃ পনেরো
♦ মগজধোলাই-এর প্রয়োজনীয়তা বেড়েই চলেছে
দ্বিতীয় পর্বঃ ধ্যাণ-যোগ-সমাধি মেডিটেশন
অধ্যায়ঃ এক
অধ্যায়ঃ দুই
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦ ‘রজনীশ’ এক শিক্ষিত যোগী, বিতর্কিত নাম
অধ্যায়ঃ ছয়
♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !
অধ্যায়ঃ সাত
♦ শ্রীমাতাজী নির্মলা দেবীর সহজযোগ
অধ্যায়ঃ আট
♦ রিল্যাক্সেশন, মেডিটেশন নিয়ে বাংলাদেশের যোগী মহাজাতক
অধ্যায়ঃ নয়
♦ ‘যোগ’ মস্তিষ্ক-চর্চা বিরোধী এক স্থবীর তত্ত্ব
অধ্যায়ঃ দশ
♦ ‘মেডিটেশন’, ‘রিলাক্সেশন’, বা ‘স্বসম্মোহন’
অধ্যায়ঃ এগারো
“মনের নিয়ন্ত্রণ যোগ-মেডিটেশন” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ