এবার যে ঘটনাটা বলছি, সেটা ঘটেছিল আমার স্কুল জীবনে। সালটা সম্ভবত ১৯৫৭। বাবা রেলওয়েতে চাকরী করতেন, সেই সুবাদে আমরা তখন খঙ্গপুরের বাসিন্দা। পড়ি কৃষ্ণলাল শিক্ষানিকতনে। একদিন হঠাত খবর পেলাম, পাঁচবেড়িয়া এক এঞ্চলের বাড়িতে খুব ভূতের উপদ্রব হচ্ছে। তার দিন কয়েক পরেই খবর পেলাম, বাড়ির মালিক ভূত তাড়াতে কোথা থেকে যেন এক বিখ্যাত তান্ত্রিককে নিয়ে এসেছেন। তারপরেই যে খবরটা পেলাম, সেটা ভুতের চেয়েও অদ্ভুত। তান্ত্রিক প্রতিদিনই যজ্ঞ করছেন এবং যজ্ঞের আগুন জ্বালছেন মন্ত্র দিয়ে, দেশলাই দিয়ে নয়।
এমন এক অসাধারণ ঘটনা নিজের চোখে দেখতে পরদিনই স্কুল ছুটির পর দৌড়ালাম। গিয়ে দেখি শয়ে শয়ে লোকের প্রচন্ড ভীর। ভীর ঠেলে যখন ভিতরে ঢোকার সুযোগ পেলাম, তখন দেখি যজ্ঞ চলছে। যজ্ঞের তান্ত্রিককে সেদিন অবাক চোখে দেখেছিলাম। তাকে কেমন দেখতে ছিল তা মনে নেই। তবে, এটুকু মনে আছে, সেদিন তান্ত্রিক ছিল আমার চোখে ‘হিরো’।
পরের দিন পেটের ব্যথা বা ঐ জাতীয় একটা কোন অযুহাতে স্কুলে গেলাম না। দু’পুরে মাকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে যাওয়ার অনুমতি পেলাম। সেদিন যজ্ঞ শুরুর আগেই পৌঁছেছিলাম। ইট দিয়ে একটা বড়-সড় যজ্ঞের জায়গা করা হয়েছিল, তাতে সাজানো ছিল অনেক কাঠ। পাশে স্তুপ করা ছিল প্রচুর কাঠ, পাটকাঠি, একধামা বেলপাতা ও একটা ঘিয়ের টিন। একসময় তান্ত্রিক এসে বসলেন। তাঁর সামনে ছিল একটা কানা উঁচু তামার বাটি। বাটিতে কয়েকটা পাটকাঠি রয়েছে। তান্ত্রিক আসনে বসে ‘মা, মা’ বলে বার কয়েক হুঙ্কার ছাড়লেন। তারপর বাটিটার ওপর ডান হাতের আঙ্গুলগুলো নিয়ে আরতি করার ভঙ্গিমায় নাড়তে লাগলেন।
একসময় অবাক হয়ে দেখলাম, শূন্য তামার বাটিতে রাখা পাটকাঠি দপ করে জ্বলে উঠল। বিস্মিত ভক্তেরা তান্ত্রিকের জয়ধ্বনি করে উঠল। জয়ধ্বনির মধ্যেই তান্ত্রিকবাবাজি ওই জ্বলন্ত পাটকাঠি থেকে যজ্ঞের আগুন জ্বালালেন।
সেই দিনের সেই বিস্ময় আজ আর আমার মধ্যে নেই। সেদিনের হিরো আজ আমার চোখে নেহাতই এক প্রবঞ্চক মাত্র। জানি ঐ তান্ত্রিকও সেদিন বিজ্ঞানেরই সাহায্য নিয়ে আগুন সৃষ্টি করেছিল। সেদিন তান্ত্রিকের বাটিতে ছিল কিছুটা পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট। আর, তান্ত্রিকের ডান হাতের আংটির খাঁজে লুকানো ছিল গ্লিসারিন ভর্তি ড্রপার। হাত নাড়তে নাড়তে আমাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে কয়েক ফোঁটা গ্লিসারিন বাটিতে ফেলে দিয়েছিল। পটাশিয়াম পারম্যাংগানেট গ্লিসারিনের সংস্পর্শে এসে তাকে অক্সিডাইজড করে ফেলেছিল। এই ইক্সিডেশনের ফিজিক্যাল পরিবর্তন হিসেবে ঐ রাসায়নিক উত্তাপ বেড়ে গিয়ে দপ করে আগুন জ্বলে উঠেছিল।
ছোটবেলা থেকেই ঠাকুর-দেবতা ও সাধু সন্ন্যাসীদের নানা অলৌকিক ঘটনার কথা অনবরত পড়ে ও শুনে আমাদের মনের মধ্যে একটা যুক্তিহীন অন্ধ বিশ্বাসের সৃষ্টি হচ্ছে। এই মানসিকতার সুযোগ নিয়ে একদল প্রতারক অলৌকিক ক্ষমতার নামে লৌকিক যাদু দেখিয়ে ধর্মের নামে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
খবরের কাগজগুলোতে অলৌকিক ক্ষমতার গপ্পো-কথা পড়েছি, ভূতের গপ্পো পড়েছি, টিভি-তে দেখেছি। বিভিন্ন মিডিয়ার হয়ে সে’সবের অনুসন্ধানে দেখেছি- প্রত্যেকটি মিথ্যে। ভাববাদীরা অবশ্য বলবেন, আমি যাদের নিয়ে লিখছি, তাদের বাইরেও আরও অনেক সাধু-সন্ন্যাসী এসেছিলেন বিশেষত ভারতবর্ষে। যাঁদের অলৌকিক ক্ষমতা ছিল। অতীতের ওইসব সাধু-সন্ন্যাসীদের নিয়ে গড়ে ওঠা কাহিনী বা কল্পকাহিনীর ব্যাখ্যা তথ্যের অভাবেই বর্তমানে অনুসন্ধান করা সম্ভব নয়। ‘সত্যি’ বলে প্রমাণ করাও সম্ভব নয়।
বিজ্ঞান অলৌকিক বা অপ্রাকৃত কোন ঘটনা বা রটনাতে বিশ্বাস করে না। অলৌকিক কোন কিছু ঘটেছিল এটা প্রমান করার দায়িত্ব সাধু-সন্ন্যাসীদের বা তার ভক্তদের। কোনো ক্ষেত্রেই তারা এই ধরণের কোনো প্রমাণ দিতে সক্ষম হননি।
১. অধ্যায়ঃ এক
১.৩ যুক্তিবাদী, মুক্তচিন্তার সেইসব মানুষ
২. অধ্যায়ঃ দুই
২.১ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিজ্ঞান
২.২ শাসক শ্রেণির স্বার্থে কুসংস্কার পুষ্ট হচ্ছে
৩. অধ্যায়ঃ তিন
৩.২ বিখ্যাত মহারাজের শূন্যে ভাসা
৩.৩ ব্ল্যাক আর্ট ছাড়া সাধিকার শূন্যে ভাসা
৩.৪ লাঠিতে হাতকে বিশ্রাম দিয়ে শূন্যে ভাসা
৩.৫ বেদে-বেদেনীদের শূন্যে ভাসা
৩.৭ সাঁই বাবাঃ সাঁইবাবার অলৌকিক ঘড়ি-রহস্য
৩.১১ শূন্য থেকে হার আনলেন ও হার মানলেন সাঁই
৩.১২ সাঁইবাবার চ্যালেঞ্জঃ পেটে হবে মোহর!
৩.১৬ যে সাধকরা একই সময়ে একাধিক স্থানে হাজির ছিলেন
৩.১৭ অতিন্দ্রীয় ক্ষমতার তান্ত্রিক ও সন্ন্যাসীরা
৩.২০ অবতারদের নিজদেহে রোগ গ্রহণ
৩.২৬ বকনা গরুর অলৌকিক দুধ ও মেহবেব আলি
৩.২৭ বাবা তারক ভোলার মন্দির ও শ্রীশ্রীবাসুদেব
৩.২৮ যোগে বৃষ্টি আনলেন শিববাল যোগী
৩.২৯ চন্দননগরে সাধুর মৃতকে প্রাণ-দান
৩.৩০ ভগবান শ্রীসদানন্দ দেবঠাকুর
৪. অধ্যায়ঃ চার
৫. অধ্যায় পাঁচ
৬. অধ্যায়ঃ ছয়
৬.১ হিস্টিরিয়া, গণ-হিস্টিরিয়া, আত্ম-সম্মোহন, নির্দেশ
৭. অধ্যায়ঃ সাত
৭.২ সম্মোহনে আত্মা এলো ‘সানন্দা’য়
৭.৩ সম্মোহন নিয়ে নানা ভুল ধারণা
৮. অধ্যায়ঃ আট
৮.১ Illusion (ভ্রান্ত অনুভূতি)
৮.২ Hallucination (অলীক বিশ্বাস)
৮.৩ Delusion মোহ, অন্ধ ভ্রান্ত ধারণা
৯. অধ্যায়ঃ নয়
৯.২ ধর্মের নামে লোক ঠকাবার উপদেশ কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে
৯.৩ সোমনাথ মন্দিরের অলৌকিক রহস্য
৯.৪ প্রাচীন মিশরের ধর্মস্থান রহস্য
৯.৫ কলকাতায় জীবন্ত শীতলাদেবী ও মা দুর্গা
৯.৭ খেজুরতলার মাটি সারায় যত রোগ
৯.১৩ বার্মুডা ট্র্যাঙ্গেল রহস্য
১০. অধ্যায়ঃ দশ
১১. অধ্যায়ঃ এগারো
১১.২ ডুবোজাহাজে টেলিপ্যাথির পরীক্ষা
১১.৩ টেলিপ্যাথির সাহায্যে নোটের নম্বর বলা
১১.৪ টেলিফোনে টেলিপ্যাথিঃ আয়োজক লন্ডনের ‘সানডে মিরর’
১১.৭ টেলিফোন টেলিপ্যাথির আর এক আকর্ষণীয় ঘটনা
১১.৮ এমিল উদ্যা ও রবেয়ার উদ্যা’র টেলিপ্যাথি
১১.৯ অতীন্দ্রিয় ইউরি গেলারকে নিয়ে ‘নেচার’ (Nature)-এর রিপোর্ট
১১.১০ আই আই টি-তে টেলিপ্যাথি দেখালেন দীপক রাও
১১.১১ তবু প্রমাণ করা যায় তেলিপ্যাথি আছে
১২. অধ্যায়ঃ বার
১২.২ নায়াগ্রা জলপ্রপাত ভেঙ্গে পড়ার ভবিষ্যদ্বাণী
১৩. অধ্যায়ঃ তের
১৩.২ সাধু-সন্ন্যাসীদের অতীন্দ্রিয় দৃষ্টি
১৩.৩ ইউরি গেলারের অতীন্দ্রিয় দৃষ্টি
১৪. অধ্যায়ঃ চোদ্দ
১৪.২ মানসিক শক্তিতে রেলগাড়ি থামানো
১৪.৪ স্টীমার বন্ধ করেছিলেন পি.সি. সরকার
১৪.৬ লিফট ও কেবল-কার দাঁড় করিয়েছিলেন ইউরি গেলার
১৪.৭ মানসিক শক্তি দিয়ে গেলারের চামচ বাঁকানো
১৪.৯ ‘নিউ সায়েন্টিস্ট’ –এর পরীক্ষায় ইউরি এলেন না
১৫. অধ্যায়ঃ পনের
১৬. অধ্যায়ঃ ষোল
১৬.১ অধ্যায়ঃ ভাববাদ বনাম যুক্তিবাদ বা বস্তুবাদ
১৬.২ মুক্ত চিন্তার বিরোধী ‘মনু সংহিতা’
১৬.৩ আধ্যাত্মবাদ ও যুক্তিবাদের চোখের আত্মা
১৬.৪ আত্মা, পরলোক ও জন্মান্তর বিষয়ে স্বামী অভেদানন্দ
১৬.৫ স্বামী বিবেকানন্দের চোখে আত্মা
১৬.৬ আত্মা নিয়ে আরও কিছু বিশিষ্ট ভাববাদীর মত
১৬.৭ আত্মা প্রসঙ্গে চার্বাক বা লোকায়ত দর্শন
১৭. অধ্যায়ঃ সতের
১৭.১ জাতিস্মররা হয় মানসিক রোগী, নয় প্রতারক
১৮. অধ্যায়ঃ আঠারো
১৮.১ জাতিস্মর তদন্ত-১: দোলনচাঁপা
১৮.২ জাতিস্মর তদন্ত ২: জ্ঞানতিলক
১৮.৩ জাতিস্মর তদন্ত ৩: ফ্রান্সিস পুনর্জন্ম
১৮.৪ জাতিস্মর তদন্ত ৪: সুনীল দত্ত সাক্সেনা
১৮.৬ জাতিস্মর তদন্ত ৬: কলকাতায় জাতিস্মর
১৯. অধ্যায়ঃ ঊনিশ
১৯.২ উনিশ শতকের দুই সেরা মিডিয়া ও দুই জাদুকর
১৯.৩ প্ল্যানচেটের ওপর আঘাত হেনেছিল যে বই
১৯.৪ স্বামী অভেদানন্দ ও প্রেত-বৈঠক
১৯.৫ বন্ধনমুক্তির খেলায় ভারতীয় জাদুকর
১৯.৬ রবীন্দ্রনাথের প্ল্যানচেট-চর্চা
২০. অধ্যায়ঃ বিশ
“অলৌকিক নয়,লৌকিক- ১ম খন্ড ” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ