শিশুকালে আমাদের প্রভাবিত করে মা-বাবা, পরিবারের বড়রা। কর্মব্যস্ত মা-বাবা, এবং ছোট পরিবার হলে অনেকটা সময় কাটে কাজের লোকের কাছে অথবা ক্রেসে। চেতনার স্ফুরণ ঘটে তাদের হাত ধরে। তারা কী খাওয়াচ্ছে, কী ধরনের পোশাক পরাচ্ছে, কী ধরনের ব্যবহার ও ভাষা শেখাচ্ছে-সবই ছাপ ফেলে শিশু মনে।

স্কুলে ভর্তির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষিকা, স্কুলের বন্ধু, খেলার সঙ্গীদের আচার, ব্যবহার, খাদ্যাভাস, পোশাক, অন্ধবিশ্বাস, মুক্তচিন্তা, বিভিন্ন বিষয়ে নানা ধরনের মূল্যবোধ গড়ে উঠতে থাকে। কেউ জেনে বুঝে, কেউ বা না জেনে প্রভাবিত হতে থাকে। গড়ে উঠতে থাকে ঈশ্বর ও জ্যোতিষে বিশ্বাস অথবা মুক্তচিন্তার ধারণা। গড়ে ওঠে রাজনৈতিক মতাদর্শ সমর্থন অথবা রাজনীতিতে বিরাগ। খেলা, সাহিত্যে, নাটকে বা অন্য কোনও বিষয়ে অনুরাগ।

শিশুকাল থেকে আমাদের মগজে গুঁজে দেওয়া হচ্ছে নানা ধ্যানধারণা-মূল্যবোধ। মা-বাবা গুরুজন-শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করবে। ভাই-বোনদের ভালোবাসবে। দেশের মাটিকে শ্রদ্ধা করবে। দেশের অখণ্ডতা রক্ষা করবে। পুরুষদের চোখের জল শোভা পায় না। মেয়েরা দুর্বল, ‘অবলা’। ছেলেরা সংসারের কর্তা হবে (কর্তৃত্ব করবে), স্বামী (প্রভু) হবে। মেয়েদের সবচেয়ে বড় গুণ সহনশীলতা। নারীত্বের চরম বিকাশ মাতৃত্বে। পতিকে দেবতা জ্ঞানে পুজো করবে। পতির পরিবারের সকলের সেবা করবে। সন্তানের জন্য ত্যাগ-ই মাকে মহান করে। সাধু-সন্তদের ‘মনীষী’ বলে। ‘ধর্ষিতা’ পরিবারের কলঙ্ক ; তাই এমন ঘটনা চেপে যেতে হয়। প্রকাশ হয়ে গেলে ধর্ষণকারীর সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেওয়াটাই সঠিক পুনর্বাসন।

এমনই হাজারো লাখো ধারণা, মূল্যবোদ আমাদের মগজে গুঁজে দেয় সমাজের মাথা বুদ্ধিজীবী, সাহিত্যিক, রাজনীতিক, ধর্মগুরু ইত্যাদিরা। এটাকেই বলে ‘ব্রেন প্রোগ্রামিং’। ‘ব্রেন’ বা মগজ হল এক বিশাল প্রাকৃতিক কম্পিউটার। এই কম্পিউটার-ই মানুষকে চালনা করে।

 

‘ব্রেন ওয়াশিং’ বা মগজধোলাইঃ

‘ব্রেন ওয়াশিং’ বা মগজধোলাই হল পুরোন ‘ব্রেন প্রোগ্রামিং’-কে মুছে নতুন ভাবে ‘প্রোগ্রামিং’ করে দেওয়া।

যেমন ধরুন, যুক্তি দিয়ে এক সময় বোঝানো হয়েছিল,

যারা ঘৃণ্য অপরাধী তারাও কারও মা-বাবা হতে পারে।

এমন অপরাধীর সন্তান মা-বাবাকে শ্রদ্ধা না করে

অশ্রদ্ধা করলে সমাজটা সুন্দর হবে।

অপরাধী মা-বাবাকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিলে, সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতাই প্রমাণিত হবে। একই নিয়মে গুরুজন ও শ্রদ্ধেয় পেশার মানুষদের প্রশ্নাতীতভাবে শ্রদ্ধা জানান ঠিক নয়। শ্রদ্ধেয় পেশা বলতে আমরা বুঝি বিচারক, উপাচার্য, অধ্যাপক, আই এ এস, আই পি এস, আই আর এস ইত্যাদিকে। বিচারক টাকার বিনিময়ে রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তারের আদেশে স্বাক্ষর করছেন, টাকার বিনিময়ে অপরাধীকে মুক্তি দিচ্ছেন—এসবই আমরা খবরে দেখেছি পড়েছি। শাসক দলের জুতোর শুকতলা হয়ে ‘উপাচার্য’ পদ বাগালে কি তাঁকে শ্রদ্ধা করা উচিৎ? অধ্যাপকরা যত না পড়াচ্ছেন তারচেয়ে বেশি রাজনীতি করছেন, তারচেয়েও বেশি টিউশনি করেন, কোশ্চেন আউট করেন, নাম্বার বাড়িয়ে রোজগার করেন—এমন সংখ্যাটা উত্তরোত্তর বাড়ছে।

‘ভাই-বোন’ শুধু এই সম্পর্কের জোরে কোনও বিবাদে ওদের পক্ষ নেব, প্রয়োজনে ওদের জন্য দাঙ্গা-খুন করে বসব—এটা কখনই সুন্দর সমাজ গড়তে সাহায্য করবে না। বরং অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়া ভ্রাতৃপ্রেম ও ভগ্নীপ্রীতি সমাজকে দূষিত করবে।

সন্তানের প্রতি যে প্রেম অন্ধ, তা কখনই কাম্য নয়। হাজার হাজার বছর ধরে ‘ব্রেন প্রোগ্রামিং’ করে আমাদের মধ্যে ছেলে ও মেয়ে সম্বন্ধে এমন কতকগুলো ধারণা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, যে এগুলো ছেলে-মেয়েদের স্বাভাবিক বা সহজাত প্রভৃতি বলে আমরা ভাবতে শুরু করেছি। এটা যেমন পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মানসিক চিন্তাভ্যাস, তেমনই নারীতান্ত্রিক সমাজে উল্টো চিন্তাভ্যাস প্রচলিত। ভারতের পার্বত্য এলাকার অনেক জনগোষ্ঠীর নারীরাই রোজগেরে, পুরুষরা ঘরকন্না সামলায়। আবার অর্থনৈতিকভাবে উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকান। ওখানে ছেলে-মেয়েদের বিভেদ গেছে ঘুচে।

সাধু-সন্ত-ঈশ্বর দেখার দাবিদাররা প্রত্যেকেই হয় প্রতারক, নতুবা মানসিক রোগী। তাদের ‘মনীষী’ অর্থাৎ বিশাল মাপের জ্ঞানী ভাবনার মধ্যেই রয়েছে বড় রকমের ভুল।

‘ধর্ষণ’ একটা শারীরিক অত্যাচার, শারীরিক নির্যাতন চালাবার

প্রক্রিয়ার নাম। ধর্ষণে ধর্ষিতা ও তার পরিবারের সম্মানহানি

ঘটে—এই প্রচলিত অন্যায় ধারণা পাল্টানো সুন্দর সমাজ

গড়ার জন্যই প্রয়োজন। তার জন্য ধর্ষণের ঘটনাকে

চাটনি না করে, ধর্ষককে ঘৃণা

করতে শিখুন ও শেখান।”

আজ এই ধারণাগুলো বহু মানুষকেই প্রভাবিত করছে। আগেকার মূল্যবোধ মগজ থেকে সরিয়ে দিয়ে এই নতুন বক্তব্যকে স্থান দিতে পেরেছে। একে আমরা বলতে পারি—পুরোন প্রোগ্রামিং মুছে নতুন প্রোগ্রামিং ঢুকিয়ে দেওয়া। নতুন ব্রেন প্রোগ্রামিং-কে আমরা বলতে পারি ‘ব্রেন ওয়াশিং’।

নারী-পুরুষের মিলনের ইচ্ছা সহজাত প্রবৃত্তি। অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে এগিয়ে থাকা দেশগুলোতে কয়েক’শ বছর আগেও নারী-পুরুষের সম্পর্ক ছিল আজকের তুলনায় অন্য রকম। পতি-পত্নীর দেহমিলন ছিল একান্তভাবেই শারীরী উত্তেজনা নির্ভর। এই যৌন-উত্তেজনায় ভালোবাসার বোধ জারিত থাকত না। সমস্ত প্রক্রিয়াই ছিল অতিমাত্রায় যান্ত্রিক। আদিম সমাজে সব নারী-পুরুষই ছিল সবার জন্যে। একটা সময় নারীতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা ছিল। অর্থাৎ নারীরাই সমাজের প্রধান চালিকা শক্তি। পরবর্তীকালে পুরুষতান্ত্রিকতার রমরমার সময় শুরু হল। সমাজে শৃঙ্খলা আনতে সমাজপতিরা বিয়ের প্রচলন করলেন। বিবাহসম্পর্কের বাইরের কারও সঙ্গে যৌনসম্পর্ককে অনৈতিক ঘোষণা করলেন।

তাতেও সহজাত কামপ্রবৃত্তিকে লাগাম পড়ান গেল না। প্রেম বিষয়ে উন্নত মূল্যবোধ এখনও আমাদের আমজনতার মগজে ঢোকেনি। আমরা এখনও প্রেমহীন কামনায় ডুবে আছি। এ দেশে বিয়ে হয় প্রায়শই অপরিচিত নারী-পুরুষদের মধ্যে। “প্রেম করে বিয়ে নয়। সম্বন্ধ করে বিয়ে” এমন দাবি করার মধ্যে পাত্র-পাত্রীর মা-বাবার গর্ব বিচ্ছুরিত হয়। তারপর দুই অপরিচিত নারী-পুরুষ বর-বউ হওয়ার সুবাদে ফুলশয্যার রাতেই হামলে পড়ে সঙ্গমে। এই যান্ত্রিক ক্রিয়ায় উত্তেজনা আছে, কিন্তু প্রেম নেই। ‘প্রেম’ তাই একটা সুক্ষ্মতর, উন্নততর চিন্তা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মূল্যবোধ পরিবর্তিত হচ্ছে। এগিয়ে থাকা মানুষরা, বুদ্ধিজীবী সাহিত্যিক শিল্পী রাজনীতিক ব্যবসায়ী ধর্মগুরুরা বুঝে নিয়েছেন ধর্ষণের চেয়ে সমর্থন আদায় করে মিলিত হলে তা আরও সুখকর ও রুচিসম্মত হয়। নাম ও ক্ষমতার জোরে আজ তারা নারীকে প্রোমোট করে বা সম্পদের বিনিময়ে তার সমর্থন আদায় করে নিয়েছে। অনেক সময় নারী নিজেই রূপের জালে, কামের ফাঁদে ফেলে কাজ গুছিয়ে নিয়েছে।

আবার এই দেশেই ব্যতিক্রমী মানুষ আছেন, যাঁদের কাছে দেহমিলনের সঙ্গে গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। খাদ্য-খাদকের সম্পর্ক নেই, এক্সপ্লয়টেশন নেই। গভীর বন্ধুত্বের সম্পর্কে জারিত হয়ে সমাধা হয় শরীরবৃত্তীয় কাজটি।

প্রেম থাকলে মিলন অনিবার্য এবং সুন্দর। দুটি সুস্থ শরীর

কিন্তু দেহমিলন নেই—এমন ‘প্লেটনিক প্রেম’ অসুস্থ

মানসিকতার লক্ষণ।

প্রেম ও দেহমিলন নিয়ে কত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ধারণা আছে, তার ইয়ত্তা নেই। “প্রেম তো রেশনের চাল নয় যে, আরও কয়েক জনের মধ্যে বিলি করলে কমে যাবে।” কথায় ও কাজে এই নীতিতে বিশ্বাসী বুদ্ধিজীবীও আছেন।

আবার এমন মানুষ আছেন যাঁরা মিলন মুহূর্তে যদি বোঝেন তাঁর সঙ্গী ও সঙ্গিনী মিলনে আন্তরিকভাবে অংশ নিচ্ছেন না, ওমনি উত্তেজনার পারদে ঠাণ্ডা জল পড়ে। অনেকের প্রেমিক সত্তা অন্য কোনও ‘আকর্ষণীয়’ সঙ্গী বা সঙ্গিনীর কোনও প্ররোচনাতেই সামান্যতম উত্তেজিত হন না। বরং বিরক্তই হন। উন্নত চেতনা আমাদের সহজাত যৌন প্রবৃত্তিকে মার্জিত, শোভন, সুন্দর ও সুসংস্কৃতিসম্পন্ন করে তোলে।

এই যে নিজেকে গড়ে তোলা, এই যে উত্তরণ, এর পিছনে রয়েছে ব্রেন প্রোগ্রামিং ও ব্রেন ওয়াশিং। চিন্তার আবর্জনা ঝেঁটিয়ে বিদায় করে এগিয়ে থাকা মূল্যবোধকে মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষে প্রোগ্রামিং করে রাখা।

বছর কয়েক আগের ঘটনা। আমার কাছে এক তরুণ এলেন। সুদর্শন, স্বাস্থ্যবান। সম্প্রতি বিয়ে করেছেন। স্ত্রীর অত্যন্ত আগ্রহ সত্ত্বেও দু’জনের মধ্যে এক দিনের জন্যেও স্বাভাবিক যৌন সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। তরুণটির লিঙ্গে স্ফীতি বা দৃঢ়তা আসছে না।

এই ধরনের যৌন অক্ষমতা বিভিন্ন কারণেই হতে পারে। এ বিষয়টা ডিটেলে জানা দরকার। যেমনঃ

(১) সমস্যাটা বিয়ের আগে থেকেই ছিল, না বিয়ের পরে হয়েছে?

(২) স্ত্রীর সঙ্গে ওঁর মানসিক সম্পর্ক কেমন? স্ত্রীকে পছন্দ করেন কি না? (৩) স্ত্রীর চেয়ে নিজেকে ছোট মাপের মানুষ মনে করেন কি না? (৪) যৌনতা বিষয়ে কোনও কারণে ঘৃণা আছে কি না?

(৫) সমকামী ছিলেন কি না?

(৬) ড্রাগ ও মদের প্রতি অতি আসক্তি আছে কি না?

(৭) সঙ্গমে আগ্রহ আছে কি না?

(৮) হস্তমৈথুন বা স্বপ্নদোষ বিষয়ে রোগীর ধারণা?

(৯) কিডনীর কোনও অসুখ আছে কি না? ইত্যাদি, ইত্যাদি।

তরুণটির সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা শুরু করলাম। জানালেন, বিয়ের আগে জানতেন না তাঁর লিঙ্গ স্ফীত বা দৃঢ় হয় কি না।

উত্তর শুনে অবাক হলাম। জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি হস্তমৈথুন বা স্বমৈথুন করেননি বিয়ের আগে?”

এরপর যা উত্তর পেলাম, তা আরও বিস্ময়কর। জানালেন, স্কুলের শুরু থেকে একটি মিশনের হোস্টেলে থেকে পড়াশুনো। স্কুল জীবনে শিক্ষকদের কাছ থেকে নাকি শুনেছেন—চল্লিশ দিনে মানুষের দেহে তৈরি হয় এক ফোঁটা রক্ত। আর চল্লিশ ফোঁটা রক্ত সমান এক ফোঁটা বীর্য। বীর্য ক্ষয়ে শরীর-স্বাস্থ্য-স্মৃতি নাকি নষ্ট হতে বাধ্য। বীর্য রক্ষাই নাকি পুরুষত্বের লক্ষণ। নারীদের নরকের দ্বার বলার কারণ নাকি এই যে—নারী পুরুষের বীর্য ধারণে পুষ্ট হয়, ও পুরুষ নারী-সঙ্গমে বার বার তার শরীর ও স্বাস্থ্য ভঙ্গ করে।

মিশনের লাইব্রেরি থেকে নিয়ে বইপত্তর পড়েও তরুণটি বীর্য সম্পর্কে একই ধরনের কথা জেনেছেন। ওসব বইপত্তর নামী-দামী স্বামীজীদের, আধ্যাত্মিক নেতাদের লেখা। ফলে কোনও দিন স্বমৈথুন বা হস্তমৈথুনের সাহায্যে বীর্যপাত ঘটাবার চেষ্টা করা তো দূরের কথা, নারীদের সংসর্গ থেকে দূরে থাকতেন। কঠোর ব্রহ্মচর্য পালনের ফলে স্বাভাবিক যৌন শরীবৃত্ত-সম্পর্কে ধারণাই হয়নি।

জিজ্ঞেস করলাম, “নারী-সঙ্গ যখন এতই অপছন্দ তাহলে আপনি বিয়ে করলেন কেন ?”

উত্তরে জানালেন, “বাবা-মা’র ইচ্ছেকে ঠেলতে পারিনি। কারণ তাঁরাই তো জীবন্ত দেবতা।”

তরুণটিকে দীর্ঘ সময় ধরে বোঝালাম, স্বামীজীদের বীর্য সম্পর্কে ওইসব বক্তব্য সম্পূর্ণ বিজ্ঞানবিরোধী। হস্তমৈথুন বা স্বপ্নদোষ অতিসাধারণ ও স্বাভাবিক ঘটনা, যেমন স্বাভাবিক ঘটনা স্ত্রী-পুরুষের মধ্যে গড়ে ওঠা যৌন সম্পর্ক। বীর্যপাতের কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার বীর্যভাণ্ড পূর্ণ হয়ে যায়। অতিমাত্রায় হস্তমৈথুন থেকে যৌন বিকার আসতে পারে, কিন্তু পরিমিতি রেখে যৌনমিলন যেমন মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তির প্রকাশ ও সুস্থতার লক্ষণ, তেমনই স্বমৈথুনও মানুষের জীবনের স্বাভাবিক ঘটনামাত্ৰ ।

মেয়েদের মধ্যেও হস্তমৈথুন বা স্বমৈথুন স্বাভাবিক ঘটনা।

দীর্ঘ আলোচনার মধ্য দিয়ে বীর্য সম্পর্কে তরুণটির হাজির করা নানা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মধ্য দিয়ে তরুণটির মন থেকে ভুল ধারণাগুলো তাড়াতে চেষ্টা করি। আলোচনা বা কাউন্সেলিং-এর সাহায্যে তরুণটির বীর্যপাত বিষয়ে ভয় দূর করতে সক্ষম হই। তরুণটি তার স্বাভাবিক জীবনে ফেরে।

তথাকথিত পূজ্য স্বামীজীর মুর্খতার ফসল ওইসব হিজিবিজি বিজ্ঞানবিরোধী বই। স্বামীজীর ‘পাণ্ডিত্য’ ছেলেটির মগজে যেভাবে প্রোগ্রামিং করেছিল, পরিণতিতে বেচারা তার সহজাত প্রবৃত্তি ভুলেছিল। বীর্য ক্ষয় নিয়ে এমন ভয় মগজে বাসা বেঁধেছিল যে মগজধোলাই ছাড়া উত্তরণের রাস্তা ছিল না।

 

সমকামিতা কি সহজাত প্রবৃত্তি ?

কেউ কেউ মনে করেন ‘সমকামিতা’ সহজাত প্রবৃত্তি। এদের মধ্যে বুদ্ধিজীবী, বিজ্ঞান পেশার মানুষও আছেন। এ বিষয়ে একটু খেটে ওয়েবসাইট ঘাঁটলে এমন বিজ্ঞানবিরোধী কথা তাঁরা নিশ্চয়ই বলতেন না। বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের একটি বড় দোষ হল—অহংভাব যতটা বেশি, জানার আগ্রহ ততটাই কম।

মৈথুন ইচ্ছা ‘সহজাত’, সমকামিতা সহজাত প্রবৃত্তি নয়। বিপরীত লিঙ্গের অভাব মেটায় সমলিঙ্গেরা। মিলিটারি ব্যারাকে, পুলিশ ব্যারাকে, কলেজ হোস্টেলে, জেল কয়েদিদের মধ্যে ব্যাপকতা পেয়েছে সমকামিতা। ব্যারাকে, হোস্টেলে পর্ণোবই . ও ব্লু-ফিল্মের রমরমা যৌন প্রবৃত্তিকে উস্কে দেয়। অনুসঙ্গ হিসেবে রয়েছে মাদক। ওরা যৌন উত্তেজনার উপসম ঘটায় সমকামির সঙ্গে মৈথুন করে।

কট্টর অপরাধীদের মধ্যে মাদক আসক্তি এবং সঙ্গমলিপ্সা অতি তীব্র। বেশ্যালয়ে যাওয়া নিত্যরাতের ঘটনা। জেলে বিপরীত লিঙ্গের কারুকে আনা সাধারণভাবে সম্ভব হয় না বলেই সমকামিতার চল। যেসব মাফিয়া ডন টাকার জোরে, দুর্নীতির তাগতে নিজের জেলখানায় ফাইভ স্টার হোটেলের স্বাচ্ছন্দ্য আনতে পারে, স্কচ হুইস্কির ফোয়ারা বওয়াতে পারে, তারা কলগার্ল এনে চুটিয়ে ভোগও করে। তারা কোন্ দুঃখে সমকামি হতে যাবে?

সমকামী সেনা, পুলিশ, হোস্টেলজীবন কাটানো ছেলে ও মেয়েরা পারিবারিক জীবনে এলে বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গেই সহবাস পছন্দ করে। এটাই মূল স্রোত।

দেহে পুরুষ, মনে মেয়ে, অথবা শারীরিকভাবে মেয়ে কিন্তু মানসিকভাবে ছেলে এমন কিছু মানুষ আছে। তাদের এই অবস্থার জন্য মা-বাবা আত্মীয় পড়শিদের মানসিকতাই মূলত দায়ী। শিশু বয়সে ছেলেকে মেয়ে সাজিয়ে বা মেয়েকে ছেলে সাজিয়ে বার-বার যদি সেই শিশুকে সুন্দর দেখাচ্ছে বলে প্রশংসা করতেই থাকা হয়, তা শিশু মনে গভীর দাগ কাটে। এর ফলে সে নিজেকে অন্য লিঙ্গের মানুষ ভাবতে ভালোবাসে, ভাবতে শুরু করে।

কাউন্সেলিং করতে গিয়ে দেখেছি, সমকামিতার শিকার কিছু গোঁড়া পরিবারের কিশোর-কিশোরী। বিপরীত লিঙ্গের সমবয়স্কদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ার সুযোগ নেই ; খোলামেলা মেলামেশার সুযোগ নেই। কিশোরীদের পাকাবার জন্যে বৌদিরা আছেন। কিশোরদের পাকাবার জন্যে দুপুরের ভিডিও শো-ই যথেষ্ট। স্কুল ফাঁকি দিয়ে ব্লু-ফিল্ম দেখা আজ এই বাংলার লাখো গ্রামের সমস্যা। এইসব কাম-পাগলা-পাগলীদের কাম নিবারণের একমাত্র রাস্তা প্রায়শই সমকামিতা, বিকল্পে অজাচার।

 

সমকামিতা মগজধোলাই থেকেই এসেছে

‘সমকামিতা’ প্রকৃতির নিয়ম বিরুদ্ধে, সাংস্কৃতিক পরিবেশ দ্বারা চালিত কাম-এর বিকৃত রূপ। ‘সমকামিতা’ সহজাত প্রবৃত্তি নয়, নয় জিন নির্ধারিত সমলিঙ্গের মধ্যে যৌনলিপ্সা ।

সময়মত কাউন্সেলিং করালে, মনোবিদদের সাহায্য নিলে এই মনোরোগকে সারিয়ে তোলা সম্ভব।

সমকামিতাকে উৎসাহিত করতে অতি মাত্রায় সচেষ্ট হয়ে উঠেছে কিছু প্রাচর-মাধ্যম। তারা যে ভাবে বিষয়টাকে ‘প্রমোট’ করতে মগজ ধোলাইয়ে নেমেছে, তাকে ‘উদ্দেশ্যহীন পাগলামো’ বলে ধরে নিলে বোধহয় ভুল হবে।

প্রথম পর্বঃ মনের নিয়ন্ত্রণ

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ বুদ্ধি, স্মৃতি, প্রতিভা নিয়ে বিভ্রান্তি বেচে খাচ্ছে অনেকে

অধ্যায়ঃ দুই

♦ প্রচুর পড়েন মানে-ই মস্তিষ্কচর্চা করেন?

অধ্যায়ঃ তিন

♦ স্মৃতি-শক্তি ও প্রতিভা এক নয়

অধ্যায়ঃ চার

♦ জ্ঞান (wisdom) ও শিক্ষা (education) এক নয়

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ মস্তিষ্ক ও তার কিছু বৈশিষ্ট্য

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ পাভলভ-তত্ত্বে মস্তিষ্কের ‘ছক’ বা type

অধ্যায়ঃ সাত

♦ আচরণগত সমস্যা

অধ্যায়ঃ আট

♦ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কত কিছু পাল্টে যায়

অধ্যায়ঃ নয়

♦ অলজাইমারস সৃষ্টিশীল মেধায় ভয়ঙ্কর অসুখ

অধ্যায়ঃ দশ

♦ ‘আই কিউ’ কি বাড়ানো যায়?

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ জিন বা বংশগতি-ই ঠিক করে মেধা-বুদ্ধি?

অধ্যায়ঃ বারো

♦ বংশগতি গবেষণা ও স্নায়ুবিজ্ঞানের অগ্রগতি

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ মানবগুণ বিকাশে পরিবেশের প্রভাব

অধ্যায়ঃ চোদ্দ

♦ মগজ কম্পিউটারে প্রোগ্রামিং

অধ্যায়ঃ পনেরো

♦ মগজধোলাই-এর প্রয়োজনীয়তা বেড়েই চলেছে

দ্বিতীয় পর্বঃ ধ্যাণ-যোগ-সমাধি মেডিটেশন

অধ্যায়ঃ এক

♦ যোগ নিয়ে যোগ বিয়োগ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ যোগ কি? যোগ নিয়ে গুলগপ্পো

অধ্যায়ঃ তিন

♦ যোগ

অধ্যায়ঃ চার

♦ যোগের সে’কাল এ’কাল

অধ্যায়ঃ পাঁচ

‘রজনীশ’ এক শিক্ষিত যোগী, বিতর্কিত নাম

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !

অধ্যায়ঃ সাত

♦ শ্রীমাতাজী নির্মলা দেবীর সহজযোগ

অধ্যায়ঃ আট

♦ রিল্যাক্সেশন, মেডিটেশন নিয়ে বাংলাদেশের যোগী মহাজাতক

অধ্যায়ঃ নয়

♦ ‘যোগ’ মস্তিষ্ক-চর্চা বিরোধী এক স্থবীর তত্ত্ব

অধ্যায়ঃ দশ

♦ ‘মেডিটেশন’, ‘রিলাক্সেশন’, বা ‘স্বসম্মোহন’

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ বিশ লক্ষ টাকার চ্যালেঞ্জ

“মনের নিয়ন্ত্রণ যোগ-মেডিটেশন” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ

⇒ মন্তব্য করুন⇐

error: Content is protected !!