অদিতি কবির খেয়া

মুক্তমনা যখন অভিজিৎদার জন্মদিন উপলক্ষে লেখা আহ্বান করল, প্রথমে লেখার কথা ভাবলেও লেখার বেলায় দেখি হাত সরছে না। তবু লিখি সামান্য একটু। অভিজিৎ রায় গুল্লু কে চিনি অনেক ছোটবেলা থেকেই। আমার দুই ভাই অভীক আর সেতুর উনি ভাল বন্ধু। ওনারা থাকতেন ব্রিটিশ কাউন্সিলের পরের বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকায়, সম্ভবত ১৩ নম্বর ভবনে। আমরাও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতেই থাকতাম আম্মার চাকুরির সুবাদে, তবে একটু দূরে। ওনার সাথে উল্টা দিকে সুজন- বিজুদের পাড়ায়, আমাদের বাসায় আর ওনাদের আবাসিক এলাকায় দেখা হত সবসময়ই। সে সময় আমাদের বড় হয়ে ওঠার বয়স, ফেলু’দা থেকে কালবেলায় যাবার বয়স।

টুকরো টুকরো ঘটনা মনে পড়ে কত! এরশাদীয় ভ্যাকেশনের সময় আমরা শামসুন নাহার হলের ভেতরে দিব্যি চলে যেতাম। একবার বিজুদের সঙ্গে করে অভিজিৎ দা এলেন, আমি তো ওনাকে দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি। যাঁরা ওনাকে ১৪/১৫ বছর বয়সে দেখেছেন, তাঁরা জানেন উনি ভয়ানক ফর্সা, chubby ফ্যারেক্স বেবির মত ছিলেন। ওনার তখন কুট্টি কুট্টি ছোট্ট চুল আর সিন্ধুঘোটকের মত ঝোলা গোঁফ! আমি জিজ্ঞেস করলাম- কি এই অবস্থা আবার কেন? সে যা বলেছিল তা ছিল মোটামুটি এমন- কেউ তাকে সিরিয়াসলি নেয় না, সবাই গুল্লা-গুল্লু ভাবে। তাই এই ব্যাবস্থা ।

আরেকবার আমি পম্পা’দিদের বাসা থেকে বের হয়ে নামছি, অভিজিৎদা আর কে কে যেন উঠছে। আমরা থেমে কথাবার্তা বলছি, কি একটা কথায় আমি বললাম- তুমি দুনিয়া উল্টায় ফেলো। আমরা তখন হাততালি দেব। আমার ঐ কটকটা কথায় কিন্তু উনি রাগ করেননি মোটেই। আমার জীবনের শেষ সুন্দর বছর ২০১২। ঐ বছর বইমেলায় আমার অনূদিত একটা বই বের হয়। অভিজিৎ‍দার সাথে দেখা হয়েছিল, পুরানো কথা নিয়ে অনেক হাসাহাসি হয়েছিল। বই কিনে আমাকে বললেন- অটোগ্রাফ দাও দেখি। সেটা নিয়ে আরেকপ্রস্থ হাসাহাসি হল।

অনেকেই লিখবেন কীভাবে তাঁর আলোয় আলোকিত হয়ে তাঁদের জীবন বদলে গেছে। আমিও বদলে গেছি। ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫-এর পর থেকে হাসিখুশী মানুষ থেকে ভয়ানক রকম খিটখিটা – মেজাজি হয়ে পড়েছি। আমার কিছু ভাল লাগে না। মনটাকে টেনে হিঁচড়ে দূরে সরাতে চাই, বিশ্বাসঘাতক মন আমার জেদী ঘোড়ার মত এক জায়গায় স্থির থাকে।

error: Content is protected !!