আমার পিতার ভূসম্পত্তির মোট পরিমাণ ছিল ১২.০২ শতাংশ। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পরে আমার শৈশব কালেই উহার মধ্যে ৭.০২ শতাংশ ভূমি বাকি করে নীলাম হয়ে যায়। (১৩১৬) এবং অন্যান্য দেনার দায়ে ১.৫০ শতাংশ ভূমি বিক্রি করতে বাধ্য হন। অবশিষ্ট থাকে মাত্র ৩.৫০ শতাংশ ভূমি। কিন্তু স্বেচ্ছাকৃত ভাবে নীলামে দিয়ে উহার (১.৭৫ শতাংশ) অংশ ভূমি মোল্লা সাহেব তাঁর মাতা মেহেরজান বিবির বেনামীতে কর্য কবুলিয়া দিয়ে নিজ সত্ব করে নেন এবং আমি নাবালক বিধায় আমার পক্ষ হয়ে মাতা সাহেবানী কুলিয়ত দিয়ে আনেন অবশিষ্ট ১.৭৫ শতাংশ ভূমি (১৩২০)।
উক্ত ১.৭৫ শতাংশ ভূমির মধ্যে- বাস্তু-বাগান ও বেড়-পুকুরাদির পরিমাণ .৩৬৫ শতাংশ এবং নাল জমি ১.৩৮৫ শতাংশ। এর মধ্য হতে আবার জমিদারের নালিশী ও বেনালিশী খাজানা পরিশোধের জন্য মাতা সাহেবানীকে (আমার জ্ঞাতি ভ্রাতা হামজে আলী মাতুব্বরের কাছে) জায় সুদী বন্ধক রাখতে হ’ল (দ’শ টাকার দায়) ১.০০ একর জমি (১৩২৩)। সুতরাং ১৩২৬ সালে আমাকে কৃষি কাজ শুরু করতে হয়ে ছিল অবশিষ্ট মাত্র .৩৮৫ শতাংশ জমি নিয়ে। অতঃপর ১৩২৭ সালে আলোচ্য জায় সুদী জমি টুকু উদ্ধার করা হলে আমার নাল জমির রিমাণ দাঁড়ায় ১.৩৮৫ শতাংশ। অর্থাৎ নাল বাস্তু মোট ১.৭৫ শটাংশ বা প্রায় এক কানি।
অতঃপর ১৩২৯-১৩৭৯ সাল পর্যন্ত আমি অন্যান্য যে সমস্ত ভূসম্পত্তি উপার্জন করতে পেরেছি, এখানে তার একটি তালিকা দিলাম।
আমার নিজ উপার্জিত জমির পরিমাণ ২৩.৩০ শতাংশ। কিন্তু উহার সবটুকু জমিই বর্তমানে আমার অধিকারে নাই। কেননা- ১নং দফে হতে .৬০৫, ২নং দফের .৯৪, ৩নং দফের .৫৪ এবং ৬নং দফে .26 একুনে ২.৮৮ শতাংশ ভূমি খানা ২০ নং দফে .৫৩৫ দফের কারনে আমাকে বিক্রয় করতে হয়েছে এবং ১২ নং দফে হতে ১.১৮, ১৪নং দফে হতে .৮৩, ১৬নং দফে হতে ২.২৮ ও ২০নং দফে হতে ১.৫৪, একুনে ৫.৮৩ অংশ ভূমি পশুরী
কাঠী নিবাসী আঃ ছোমেদ খাঁ গং দুখানা ভাক্ত কবুলিয়াতের অনুবলে ১০৩ (ক) ধারা মামলা করে অন্যান্য বহু লোকের জমি সহ আমার নামের রেকর্ড ভেঙ্গে অসদুপায়ে রেকর্ড করায়ে নেয় (৪/৩/৪৮) এবং ঐ জমি বলপূর্বক দখল করে।
খান সাহেবদের উক্ত কবুলিয়াত দুখানা ছিল একান্তই বঞ্চনামূলক, ভাক্ত। আলোচ্য জমি সমূহ ছিল ১৬৬৭ নং প্রতাপপুর মৌজায় অবস্থিত, হাল রেকর্ডে (আর, এস) ঐ মৌজাটি ৯৪ নং লামচরি মৌজার সামিলে রেকর্ড হয়েছে। প্রতাপপুর মৌজাটির ০.৫ অংশের মালিক ছিলেন ১৭২০ নং তৌজির জমিদার মাধব পাশা স্টেট এবং ০.৫ অংশের মালিক ১৭২১-২২ নং তৌজির জমিদার লাহারাজা স্টেট (কেহ কেহ মনে করেন যে, মাধব পাশা স্টেট//১০ আনির জমিদার এবং লাহারাজ স্টেট/১০ আনির জমিদার ছিলেন। কথাটা সত্য। কিন্তু অংশটি “চন্দ্রদ্বীপ পরগনা” এর অংশ, কোন মৌজার অংশ নয়। তৌজির মালিক বা জমিদার দেয় ঐ হিসাব মতে পরগনা বাটারা করতে গিয়ে মৌজার অংশ যে কোন রূপ হতে পারে হয়ত বা কেহ কোনও মৌজা না পেতেও পারেন। চন্দ্রদ্বীপ পরগণার মালিক লাহারাজ স্টেট/১০ এবং ১৭২৩ নং তৌজির জমিদার বর্মণ স্টেট নং; একুন১/। পরগনা বাটারায় ২৭২৩ নং বর্মণ স্টেট প্রতাপপুর মৌজা আদৌ পায় নাই এবং মাধব পাশা স্টেট ও লাহারাজ স্টেট পেয়েছিল সমান অংশ।
মাধব পাশা স্টেটের মালিক বাবু রাধ্যবয়ন ও হিরালাল তাঁদের ঐ মৌজার সম্যক ভূমিতে হরেন্দ্র নাথ বক্সী ও শোনাউল্লা হাওলাদারের কাছে ১৩২৬ সালের ৭ই আশ্বিন তারিখে রেজিস্ট্রিকৃত কবুলিয়ত মূলে পত্তন করেন এবং তাঁরা বক্সী মশায়ের নিকট হতে স্বহস্তে দাখিলা দিয়ে ঐ জমির খাজানা আদায় করেন প্রায় ৩০ বছর। অতঃপর মূল জমিদারগণের মৃত্যুর পরে স্টেটের আমলা-কর্মচারীদের যোগাযোগে জমিদারদের স্থলবর্তিগণকে ঐ জমিতে পুনঃ দুখানা কবুলিয়ত দেন খান সাহেবরা ১৩৫৩ সালের ৩রা আশ্বিন তারিখে। এর বহুপূর্বে হতে আমরা উক্ত ভূমিতে হরেন্দ্র নাথ বক্সী গং ও লাহারাজ স্টেটে কবুলিয়ত প্রদানে খাজানা প্রদান পূর্বক জমি ভোগদখল করিতেছিলাম। বিশেষতঃ জমির দখল মোতাবেক আমাদের নামে (আর, এস) খানাপুরী রেকর্ড হয়েছিল। ভেবে পাওয়া যায় না যে, ১০৩ (ক) ধারার হাকিম — সাহেব কোন আইনের বলে (একই জমির উপর আরোপিত দু’দফে কবুলিয়তের মধ্যে) পিতার গৃহীত কবুলিয়াতের পুত্রের গৃহীত কবুলিয়ত এবং ৩০ বছর আগের (৭/৬/২৬ তারিখের) কবুলিয়তের পরিবর্তে পরের (৩/৬/৫৩ তারিখের) কবুলিয়ত গ্রাহ্য করে আমাদের নামের রেকর্ড কর্তন করার আদেশ দিলেন। শোনা গেছে যে, খান সাহেবদের এই “আদেশ” খানার মূল্য নাকি চারশ টাকা।
উপরোক্ত ভূমি পুনরোদ্ধার কল্পে আমাদের মালিক পক্ষ হরেন্দ্র নাথ বক্সী গং ১৩৫৫ সালের কার্তিক মাসে একটি দেওয়ানী মামলা দায়ের করেন (বরিশাল ১ম সাব জজ আদালত, মোং নং ১২৩/৪৯ এবং পরে কোর্ট ট্রান্সফার হয়ে ৩য় সাব জজ আদালত মোং নং ৬৭/৫৭)। দীর্ঘ ১৬ বছর মামলা পরিচালনা করে ৮৮ বছর বয়স্ক সুবৃদ্ধ হরেন্দ্র নাথ বক্সী ১৩৭১ সালের ২৯শে ফাল্গুন মৃত্যুবরণ করেন। অতঃপর বাদী পক্ষের অন্যান্য শরীকগণ মামলা আর পরিচালনায় অপারগ হয়ে ১৩৭৩ সালের ২২শে চৈত্র তারিকহে মামলাটি তুলে আনেন। উক্ত ৫.৮৩ শতাংশ জমি আর পুনরোদ্ধার হয় না। এর ফলে আমার বিক্রিত ২.৮৮ ও খান সাহেবদের ভাক্ত রেকর্ডীয় ৫.৮৩, একুনে ৮.৭১ শতাংশ জমি হস্তান্তরিত হয়ে যায়। সুতরাং আমার বর্তমানে স্বোপার্জিত ভূসম্পত্তির পরিমাণ হ’ল (২৩.৩০-৮.৭১) ১৪.৫৯ শতাংশ এবং পৈত্রিক সত্বের ১.৭৫ সহ মোট ১৬.৩৪ শতাংশ মাত্র।
ভিখারীর আত্মকাহিনী- প্রথম খন্ড
♦ চর পূর্বাভাস ও জন্ম (১১৫৮-১৩০৭)
♦ উচ্চ শিক্ষার প্রচেষ্টা (১৩৩৫)
ভিখারীর আত্মকাহিনী- দ্বিতীয় খন্ড
♦ মোসলেম সমিতিঃ স্কুল প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষকতা (১৩৩৬-১৩৪১)
♦ ইঞ্জিনিয়ারিং শিখার উদ্যোগ ও মাতৃবিয়োগ (১৩৩৯)
♦ ভিখারীর আত্মকাহিনী- তৃতীয় খন্ড
♦ বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরীর শিক্ষা
♦ অধ্যাপক কাজী গোলাম কাদিরের সান্নিধ্যে
♦ ভিখারীর আত্মকাহিনী- পঞ্চম খন্ড
“আরজ আলী মাতুব্বর” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ