বাঙালি জাতির সর্বকালের শ্রেষ্ঠ গৌরব একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ । ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত এবং আড়াই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের মহান স্বাধীনতা । সুদীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম করে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এদেশের বীর যোদ্ধারা ছিনিয়ে এনেছে আমাদের স্বপ্নের স্বাধীনতা। যে স্বপ্ন ও আদর্শ নিয়ে আমরা স্বাধীনতার জন্য জীবনপণ করে যুদ্ধ করেছিলাম, সে স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় নি। দিনে দিনে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তিসমূহ সক্রিয় হয়ে উঠেছে এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনাকে নস্যাৎ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বিকৃত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস। তাদের প্রভাব ও আগ্রাসন থেকে নতুন প্রজন্মকে রক্ষা করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে উজ্জীবিত করতে না পারলে পূর্বপুরুষদের ত্যাগ ও সংগ্রামের সঠিক মূল্যায়ন এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ও চেতনাভিত্তিক সমাজ গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে না। মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে হলে জানা দরকার মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ যে প্রকৃত অর্থেই ছিল জনযুদ্ধ, সেই সত্য সম্পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বারবার আঘাত আসবে, ছোবল আসবে।

প্রশিকার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সেলের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ২৬ মার্চ, ২০০৩-এ ৩৯জন নারী মুক্তিযোদ্ধাকে জাতীয় পর্যায়ে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছিল। একই আদলে আসন্ন স্বাধীনতা দিবস ২০০৪ উপলক্ষে ১২জন নারী মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দেয়া হবে। এই ৫১জন নারী মুক্তিযোদ্ধার জীবনভিত্তিক প্রোফাইল নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে— ‘আমি নারীঃ আমি মুক্তিযোদ্ধা’ শীর্ষক একটি বই। স্বাধীনতা দিবসে নারী মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ সম্মান প্রদানের লক্ষ্যে ‘আমি নারী : আমি মুক্তিযোদ্ধা’ শীর্ষক যে বই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে, তা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি গ্রহণযোগ্য প্রকাশনা হিসেবে বিবেচিত হবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

স্বীকার্য যে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে এদেশের নারীরা মুক্তিযোদ্ধাদের স্নেহ, মমতা ও সেবা প্রদানের পাশাপাশি সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের জন্য সহায়তা করেছেন নানাভাবে। নারী-পুরুষের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো জনযুদ্ধ সফল হতে পারে না। আর সঙ্গতকারণে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ যুদ্ধের মতো বড় অর্জনে নারীর সার্বিক মূল্যায়ন করতে চায় না। পিছিয়ে পড়া নারী সমাজের অবমূল্যায়ন ঘটে তাদের হাতে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত ধারণায় একই মানসিকতা থেকে নারীকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে নানাভাবে। তাই প্রকৃত চিত্র উদ্ঘাটনের জন্য আমাদের এ প্রয়াস।

প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শে বিশ্বাসী বলে এই গৌরবময় অধ্যায়ের নানা বিষয় জনগণকে জানাতে চেষ্টা করছে। ‘আমি নারীঃ আমি মুক্তিযোদ্ধা’ এরই অন্যতম পদক্ষেপ। এ প্রচেষ্টা সফল করার জন্য আমার সহকর্মীবৃন্দ নিরলস পরিশ্রম করেছেন। তাঁদেরকে শুধু ধন্যবাদ জানালে কম বলা হবে। দেশের বিশিষ্ট কথাশিল্পী সেলিনা হোসেনকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই বইটি সম্পাদনা করে দেওয়ার জন্য। বইটি প্রকাশের দায়িত্ব গ্রহণ করার জন্য অন্যপ্রকাশের মাজহারুল ইসলাম ও আবদুল্লাহ্ নাসেরকে আমি ধন্যবাদ জানাই।

আমাদের এ প্রচেষ্টার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসের কিছু উপাত্ত প্রকাশিত ও প্রতিষ্ঠিত হলে প্রশিকার শ্রম সার্থক হবে বলে মনে করি।

ড. কাজী ফারুক আহম্মদ

প্রেসিডেন্ট

প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্ৰ

error: Content is protected !!