‘ভূতে ভর’ মানেই শ্বাশত আত্মার প্রমাণ। এমনও কিছু লোক আমি দেখেছি, যারা জ্যোতিষশাস্ত্র বিশ্বাস করেন না, সাধু-সন্তদের অলৌকিক ক্ষমতায় আস্থাশীল নন, কিন্তু ভূতের অস্তিত্বে পরম-বিশ্বাসী। কারণ এঁরা নিজেদের চোখে ভূতে পাওয়া মানুষের অদ্ভুত সব কান্ডকারখানা দেখেছেন।

এমনই একজন গোবিন্দ ঘোষ। কিছুদিন কলেজে অধ্যাপনা করেছেন। এখন স্টেট ব্যাঙ্কের অফিসার। তিনি সব কিছুকেই যুক্তি দিয়ে বিচার করে তারপর গ্রহণ করতে বা বর্জন করতে ভালোবাসেন। আর সেই কারণেই ভুতের অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে পারেন না। তারই সুবাদে আত্মার অমরত্বে বিশ্বাসী। তবু মনের কোণে কোথাও বোধহয় খটকা একটা ছিল। তাই আমাকে বলেছিলেন নিজের চোখে দেখা কাকিমাকে ভূতে পাওয়ার ঘটনা। আমার কাছে ব্যাখ্যার প্রত্যাশাতেই তিনি ঘটনাটা বলেছিলেন।

সালটা সম্ভবত ৫৬। স্থান-হাসনাবাদের হিঙ্গলগঞ্জ। গোবিন্দবাবু তখন সদ্য কিশোর। একান্নবর্তী পরিবার। গোবিন্দবাবুর কাকার বিয়ে হয়েছে বছর দেড়েক। কাকিমা সদ্য তরুণী এবং সুন্দরী। অনেকখানি জায়গা নিয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অনেক ঘর, ঠাকুরঘর, রান্নাঘর, আঁতুড়ঘর নিয়ে বাড়ির চৌহদ্দি। বাড়ির চৌহদ্দি ছাড়িয়ে কিছুটা দূরে পুকুরপাড়ে পায়খানা। পায়খানার পাশেই একটা বিশাল পেয়ারাগাছ। গাছটায় ভূত থাকত বলে বাড়ির অনেকেই বিশ্বাস করতেন। তাই সন্ধের পর সাধারণত কেউই, বিশেষ করে ছোটরা ও মেয়েরা প্রয়োজনেও পায়খানায় যেতে চাইত না।  এক সন্ধ্যের ঘটনা, কাকিমা পায়খানা থেকে ফেরার পর অস্বাভাবিক ব্যবহার করতে লাগলেন। ছোটদের দেখে ঘোমটা টানতে লাগলেন, কথা বলেছিলেন নাকি গলায়। বাড়ির বড়রা সন্দেহ করলেন কাকিমাকে ভূতে পেয়েছে। অনেকেই কাকিমাকে জেরা করতে লাগলেন, ‘তুই কে? কেন ধরেছিস বল?’ ইত্যাদি বলে। একসময় কাকিমা বিকৃত মোটা নাকি গলায় বললেন, ‘আমি নীলকান্তের ভুত। পেয়ারা গাছে থাকতাম। অনেক দিন থেকেই তোদের বাড়িতে ছোট বউয়ের ওপর আমার নজর ছিল। আজ সন্ধ্যেরাতে খোলা চুলে পেয়ারাতলা দিয়ে যাওয়ার সময় ধরেছি। ওকে কিছুতে ছাড়ব না।’

পরদিন সকালে এক ওঝাকে খবর দেওয়া হল। ওঝা আসবে শুনে কাকিমা প্রচণ্ড রেগে সক্কলকে গাল-মন্দ করতে লাগলেন, জিনিস-পত্র ভাঙতে লাগলেন। শেষে বড়রা কাকিমাকে থামের সঙ্গে বেঁধে রাখলেন।

ওঝা এসে মন্ত্রপড়া সরষে কাকিমার গায়ে ছুঁড়ে মারতে লাগলেন, সেই সঙ্গে বেতের প্রহার। কাকিমার তখন সম্পূর্ণ অন্যরুপ। মুখে অশ্রাব্য গালাগাল। প্রায় ঘণ্টা তিনেক পরে ক্লান্ত নীলকান্তের ভুত কাকিমাকে ছেড়ে যেতে রাজি হল। ওঝা ভূতকে আদেশ করল, ছেড়ে যাওয়ার প্রমাণ হিসেবে একটা পেয়ারাডাল ভাঙতে হবে, আর একটা জলভরা কলসি দাঁতে করে পাঁচ হাত নিয়ে যেতে হবে।

সবাইকে তাজ্জব করে দিয়ে বিশাল একটা লাফ দিয়ে কাকিমা একটা পেয়ারাডাল ভেঙ্গে ফেললেন। একটা জলভরা কলসি দাঁতে করে পাঁচ হাত নিয়ে গেলেন। তারপর পড়ে গিয়ে অজ্ঞান। যখন জ্ঞান এল তখন কাকিমা আবার অন্য মানুষ। চিঁ চিঁ করে কথা বলছেন, দাঁড়াবার সাধ্য নেই।

এরপর অবশ্য কাকিমার শরীর ভেঙ্গে পড়েছিল। বেশিদিন বাঁচেননি।

এই ধরনের ভূতে পাওয়ার কিছু ঘটনা আমি নিজেই দেখেছি। আপনাদের মধ্যেও অনেকেই নিশ্চয়ই এই ধরনের এবং আরও নানা ধরনের ভূতে পাওয়ার ঘটনা নিজের চোখে দেখেছেন বা শুনেছেন। এ সব ঘটনাগুলোর পিছনে সত্যিই কি ভূত রয়েছে? না, অন্য কিছু? বিজ্ঞান কি বলে? এই আলোচনায় আসছি।

error: Content is protected !!