ভিখারীর আত্মকাহিনী

তৃতীয় খন্ড

উপরোক্ত সূত্র ধরে আমি- একটি বাঁকানো কোমল লোহার গায়ে তামার তার জড়িয়ে একটি ম্যাগনেট (চুম্বক) বানালাম, একটি কোমল লোহার চাকার গায়ে (দশ প্যাঁচের তের দফে) তামার তার জড়িয়ে একটি আর্মেচার বানালাম, বানালাম- কমিউটেটর, ব্রস ইত্যাদি সবই। কাঠের দ্বারা একটি “চড়কা যন্ত্র” বানালাম, যার সাহায্যে চড়কার টাকু ঘোড়াবার মত আর্মেচারটিকে ঘোড়ানো যায়। চড়কা যন্ত্রটি যাতে কখনো বেশি আবার কখনো কম না ঘোরে, সে জন্য ওর সঙ্গে একটা ফ্লাই হুইল যুক্ত করলাম। অল্টারনেট কারেন্টকে ডাইরেক্ট কারেন্টে পরিণত করার জন্য একটা কমিউটেটর ও এক জোড়া ব্রস বানালাম এবং ব্রস দুটো হতে বাইরে নিলাম দুটো তার। এই তার দুটোর দুপ্রান্ত টর্চের বাল্বের নেগেটিভ ও পজিটিভ প্রান্তে যোগ করতে বাল্বটি জ্বলবার কথা।

ডাইনামো ও তার পরিচালক চড়কা যন্ত্রটি এমনভাবে স্থাপন করলাম যে, সিঙ্গার মেশিনের মত পাদানীতে পা রেখে চাপ দিলে যেন চড়কা যন্ত্রটি (ফ্লাই হুইলসহ) ঘোড়তে থাকে এবং এর একটি চাকার সঙ্গে বেল্টের সাহায্যে আর্মেচারটি যুক্ত থাকায় আর্মেচার ও কমিউটেটর ঘোরতে থাকে। কমিউটেটরের সহিত ব্রসের ও ব্রসের সহিত তারের মাধ্যমে বাল্বের যোগ আছে। যন্ত্রটি পরিচালিত করলে আর্মেচারে যে অল্টারনেট কারেন্ট জন্ম হবে তা, কমিউটেটরে গিয়ে ডাইরেক্ট কারেন্টে পরিণত হয়ে ব্রস সংলগ্ন তার বেয়ে বাল্বে গিয়ে উহাকে জ্বালাবে। সব ঠিকঠাক করে ডাইনামো যন্ত্রটি বানাতে প্রায় দুমাস কেটে গেল।

৯ই কার্তিক (১৩৪১) আনুষ্ঠানিকভাবে আমি আমার তৈরি ডাইনামো যন্ত্রটি পরিচালনা করলাম। যন্ত্রের প্রত্যেকটি অংশই আশানুরুপ কাজ করল। কিন্তু বিদ্যুৎ জন্মিল মাত্র দুভোল্ট। বিদ্যুৎবাহী তারের সহিত একটি বাল্ব যোগ করা হলে, সেটি জ্বলে ওঠল। কিন্তু উহা লালচে বর্ণ ধারণ করল মাত্র, সাদা হয়ে আলো প্রদানে সক্ষম হ’ল না।

এ যন্ত্রে উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ বৃদ্ধি করবার তিনটি উপায় আছে। যথা- (১)আর্মেচারের ঘূর্ণনের মাত্রা বৃদ্ধি করা। (২)আর্মেচারের গায়ে জড়ানো তারের প্যাঁচের সংখ্যা বৃদ্ধি করা। (৩) ম্যাগনেটের গায়ে জড়ানো তারের প্যাঁচের সংখ্যা বৃদ্ধি করা।

উপরোক্ত তিনটি উপায়ের মধ্যের প্রথম উপায়টি কার্যকরী করা ইঞ্জিনচালিত ডাইনামো যন্ত্রে সম্ভব, কায়িক শক্তিতে চালিত যন্ত্রে সম্ভব নয়। কেননা কায়িক শক্তি সীমাবদ্ধ শক্তি। হস্ত বা পদ চালিত যন্ত্রে আর্মেচারের ঘূর্ণনবেগ সীমাবদ্ধ থাকতে বাধ্য। দ্বিতীয় ও তৃতীয় উপায় অবলম্বন করতে হলে তামার তার বৃদ্ধি করা দরকার। কিন্তু বহু চেষ্টা সত্ত্বেও অতিরিক্ত তামার তার সংগ্রহ করতে না পারায় এ যন্ত্রটি আর উন্নতি করা সম্ভব হল না। মূলতঃ ডাইনামো যন্ত্রটি বানাবার আসল উদ্দেশ্য- নতুন কিছু উদ্ভাবন করা নয়, নিজ হাতে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করার কৌতূহল নিবৃত্তি করা।

কিছু স্মৃতি, কিছু কথা

নিবেদন

ভিখারীর আত্মকাহিনী- প্রথম খন্ড

চর পূর্বাভাস ও জন্ম (১১৫৮-১৩০৭)

ছবি ও জলের কল (১৩২২)

মুন্সি আহম্মদ দেওয়ান (১৩২৩

পলায়ন (১৩২৪)

মুন্সি আপছার উদ্দিন (১৩২৫)

আরবী শিক্ষায় উদ্যোগ (১৩২৬)

চিকিৎসা শিক্ষা (১৩৩০)

জীবন প্রবাহের গতি (১৩৩১)

ছুতার কাজ শিক্ষা (১৩৩১)

জরীপ কাজ শিক্ষা (১৩৩৩)

বস্ত্র বয়ন শিক্ষা (১৩৩৫)

উচ্চ শিক্ষার প্রচেষ্টা (১৩৩৫)

জাল বুনা শিক্ষা (১৩৩৬)

ভিখারীর আত্মকাহিনী- দ্বিতীয় খন্ড

জাল বোনা ও মৎস্য শিকার

মোসলেম সমিতিঃ স্কুল প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষকতা (১৩৩৬-১৩৪১)

মোসলেম সমিতিরঃ ভাঙ্গন

পাঠাগার স্থাপন (১৩৩৭)

পাখা তৈয়ার (১৩৩৯)

ইঞ্জিনিয়ারিং শিখার উদ্যোগ ও মাতৃবিয়োগ (১৩৩৯)

সীজের ফুল রচনা (১৩৪০)

বিশ্বাসের বিবর্তন (১৩৪১)

ডাইনামো তৈয়ার (১৩৪১)

ভিখারীর আত্মকাহিনী- তৃতীয় খন্ড

কৃষি বিদ্যা শিক্ষা 

জলঘড়ী তৈয়ার

বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরীর শিক্ষা 

সাইক্লোন

দুর্ভিক্ষ

অধ্যাপক কাজী গোলাম কাদিরের সান্নিধ্যে

লাল গোলা যাতায়াত

ভিখারীর আত্মকাহিনী- পঞ্চম খন্ড

“ক্ষেত্র-ফল” রচনা

স্টেট বাটারা

আদেশাবলী

“সৃষ্টি – রহস্য” রচনা

“সত্যের সন্ধান” এর পান্ডুলিপ

সত্যের সন্ধান প্রকাশ

সন্তান-সন্ততি

ভূসম্পত্তি

দেশ সেবা

খোরাক-পোসাক

জীবন বাণী

“আরজ আলী মাতুব্বর” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ

⇒অভিযোগ বা মন্তব্য⇐

 

error: Content is protected !!