সুইটি বিয়ের পর স্বামীর ঘর করতে ঢাকা এসেছে। তার বয়স একুশ। সে ইন্টার পাশ করা মেয়ে। গায়ের রঙ ময়লা হলেও দেখতে সুন্দর। রূপচর্চার দিকে তার বিশেষ ঝোঁক আছে। সপ্তাহে একদিন সে হাতে এবং মুখে কাঁচা হলুদ বাটা মেখে বসে থাকে। মাসে একটা ফেয়ার এন্ড লাভলী ক্রিম তার লাগে।
সুইটির স্বামীর নাম আবুল কাশেম। সে ঢাকায় ব্যবসা করে। কী ব্যবসা সুইটি জানে না। মাসের শুরুতেই মানি অর্ডারে তার নামে সাতশ টাকা হাতখরচা আসে। এতেই সে খুশি। স্বামীর সংসার করতে আসার সময় সে কিছু উদ্বেগের মধ্যে ছিল। হাতখরচের টাকাটা বন্ধ হয়ে যায় কি-না।
আবুল কাশেম কাওরান বাজারে দুই কামরার ঘর ভাড়া নিয়ে থাকে। সুইটি স্বামীর সংসার দেখে ধাক্কার মতো খেল। ঘরে কোনো আসবাব নেই। দুটা তোশকের ওপর শোবার ব্যবস্থা। কাপড় রাখার আলনা নেই। দড়িতে কাপড় ঝুলিয়ে রাখার ব্যবস্থা। ড্রেসিং টেবিল নেই। বড় আয়না নেই। ক্ষণে ক্ষণে আয়নায় মুখ দেখা সুইটির ছোটবেলার অভ্যাস।
আবুল কাশেম বলল, সংসার শুরু করেছি। আস্তে আস্তে হবে। মুখ ভোতা করে থাকবা না।
সুইটি বলল, আয়না ছাড়া মুখ দেখব কীভাবে?
আবুল কাশেম বলল, বাথরুমে আয়না আছে। মুখ দেখতে চাইলে বাথরুমে চলে যাবে।
সুইটি বলল, বাথরুমের আয়নায় তো কিছুই দেখা যায় না।
কিছুই না দেখা গেলে আমি রোজ শেভ করি কীভাবে? এইটা লাগবে সেইটা লাগবে বলে আমাকে অস্থির করবা না। এমনিতেই ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে বিরাট টেনশনে আছি।
সুইটি বলল, রান্নাঘরে কোনো হাঁড়িপাতিলও তো নাই।
আবুল কাশেম বলল, রান্না নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। হোটেলের সঙ্গে ব্যবস্থা করা আছে। তিনবেলা খানা চলে আসবে।
আমি কিছু রানব না?
রান্ধার কিছু জানো? খামাখা প্যাচাল। একটা জিনিস রানবা, মুখে দিতে পারব না। হবে ঝগড়া। আমি ঝগড়ার পাবলিক না। বিরাট চিন্তায় থাকি। আমার দরকার শান্তি। বুঝেছ?
আবুল হাশেম বিরাট চিন্তায় থাকে–এটা সুইটির মনে হলো না। যে মানুষ এত চিন্তায় থাকে সে সারাদিন ঘুমাতে পারে না। সকালের নাশতা খেয়ে খবরের কাগজ পড়তে পড়তে সে ঘুমিয়ে পড়ে। দুপুরের আগে তার ঘুম ভাঙে না। ব্যবসার কাজে সে সপ্তাহে এক-দুই দিনের বেশি বের হয় না। কী রকম ব্যবসা কে জানে। একদিন সুইটি জিজ্ঞেস করেছিল। আবুল কাশেম খবরের কাগজ পড়তে পড়তে বিরক্ত মুখে বলেছে, কিসের ব্যবসা জেনে কী করবা? ব্যবসার পার্টনার হবা? তুমি তোমার কাজ করবা, আমি করব আমার কাজ।
সুইটি মিনমিন করে বলল, আমার আবার কী কাজ?
আবুল কাশেম বলল, কাজের কি অভাব আছে? মুখে ক্রিম ঘষবা। চুলে তেল দিবা। চুল আঁচড়াইবা। আমি যখন ঘুমায়ে থাকব তখন মাথা টিপ্যা দিবা। স্বামীর সেবা করবা। স্ত্রীর এইটাই সবচেয়ে বড় কাজ। স্বামীর সেবা।
আবুল কাশেমের ব্যবসার পার্টনার হরুিন নামের একজন একদিন বাসায় এল। ধূর্ত চেহারা। বেঁটেখাটো মানুষ। নীল রঙের পাঞ্জাবি পরে এসেছে। ক্ষণে ক্ষণে কারণ ছাড়াই পাঞ্জাবি দিয়ে নাক ঘষে। নাকের দুপাশ এই কারণেই হয়তো লাল হয়ে আছে। লোকটির চোখের দৃষ্টিও ভালো না। সুইটি লক্ষ করল, লোকটা কথা বলছে তার সঙ্গে, কিন্তু তাকিয়ে আছে তার বুকের দিকে। একবারও চোখ নামাচ্ছে না। এবং তার জন্যে কোনো অস্বস্তি বোধ করছে না।
আবুল কাশেম তার পার্টনারকে খুবই যত্ন করল। মোৰাইলে টেলিফোন করে রেস্টুরেন্ট থেকে পরোটা-কাবাব আনাল। মুরগির রোস্ট আনাল। আবুল কাশেমের মুখে সারাক্ষণই ওস্তাদ, ওস্তাদ। সুইটি ভেবেই পেল না একজন পার্টনার অন্যজনকে ওস্তাদ কেন ডাকবে?
হারুন চলে যাবার পর সুইটি বলল, লোকটা ভালো না।
কাশেম বলল, ভালো না বুঝলে কীভাবে?
সুইটি গলা নিচু করে বলল, সারাক্ষণ আমার বুকের দিকে তাকায়ে ছিল।
আবুল কাশেম বলল, কদুর মতো বুক বানায়েছ। বুকের দিকেই তো তাকাবে। ঢেকে চুকে বসবে না?
উনারে আমার পছন্দ হয় নাই।
পছন্দ হওয়ার দরকার কী? তুমি তো তার সাথে হাঙ্গা বসবা না।
সুইটি কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, এইসব কী কথা বলেন?
আবুল কাশেম মুখের ওপর পত্রিকা ধরতে ধরতে বলল, কান্দনের চেষ্টা করবা না। আমার কাছে চোখের পানির ভাত নাই। তারপরেও যদি কাঁদতে মন চায়–বাথরুমে দরজা বন্ধ কইরা কান্দ। আমার কানে শব্দ না আসলেই আমার দিলখোশ।
বাথরুমে ঢুকে অনেক চেষ্টা করেও সুইটি কাঁদতে পারল না। তবে এই ঘটনার দিন দশেক পর সুইটি খুবই কাদল। পত্রিকায় আবুল কাশেমের ওস্তাদ হারুনের ছবি দেখে কাঁদল। হারুনকে পাবলিক পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। সেই ছবি ছাপা হয়েছে। ছবিতে সে হা করে আছে। চোখ খোলা। অবাক হয়ে কী যেন
দেখছে।
হারুনের মৃত্যুশোকে অধীর হয়ে সুইটি কেঁদেছে তা কিন্তু না। সে কেঁদেছে হারুনের মৃত্যু-বিষয়ক খবরের শিরোনাম পড়ার পর।
মলম পার্টির মূল নেতা
হারুন মিয়া জনতার হাতে নিহত।
হারুন মিয়া যদি মলম পার্টির নেতা হয়, তাহলে তার স্বামী কী? সে তো তাকে ওস্তাদ ওস্তাদ ডাকত।
আবুল কাশেম কয়েকদিন ধরে ঘরেই আছে! ঘর থেকে বের হচ্ছে না। তাকে দেখে মনে হচ্ছে না সে চিন্তিত। খবরের কাগজ পড়ে এবং ঘুমিয়ে সময় কাটাচ্ছে। মাঝে মাঝে চা খাচ্ছে। ঘরে এখন চা বানানোর সরঞ্জাম আছে। সুইটি চা বানাচ্ছে। তার চা নাকি ভালো হয়। আবুল কাশেম বলেছে, তোমার চা বানানোর হাত ভালো। জগতের সবচেয়ে জটিল রান্না চা। যে চা রানতে পারে সে কোপ্তা কালিয়া সবই পারে। আমি ঘরে রান্নার ব্যবস্থা করব। অবসর পেলেই তোমাকে নিয়ে নিউমার্কেট কাঁচাবাজারে চলে যাব। রান্নার জন্যে যা যা লাগে কিনে নিয়ে আসবা। খুশি?
সুইটি বলছে, জি খুশি। আপনার অবসর নাই এইটা বুঝলাম না। দিনরাত তো শুয়েই থাকেন। আপনার কাজটা কী?
একেকজনের কাজের ধারা একেকরকম। কবি-সাহিত্যিকরা কী করে? ঘরে বইসা থাকে। তারার কোনো অফিস নাই। আমারও অফিস নাই।
সুইটি ক্ষীণগলায় বলল, আপনের ওস্তাদ হারুন মিয়ার খবরটা পত্রিকায় পড়েছি।
আবুল কাশেম বলল, পড়েছ ভালো করেছ। তুমি খুশি তো? এখন আর কেউ তোমার বুকের দিকে তাকায়ে থাকবে না।
সুইটি বলল, কিছু মনে নিয়েন না। আপনেও কি মলমপার্টির লোক?
আবুল কাশেম বলল, আমি মলম পার্টি না ট্যাবলেট পার্টি এটা জানার তোমার প্রয়োজন নাই। আমি স্বামী হিসাবে রোজগার করে তোমার হাতে দিব। তুমি খরচ করবা। সংসার চালাবা।
সুইটি বলল, আমারে দেশে পাঠায়ে দেন।
আবুল কাশেম বলল, স্যুটকেস গোছাও আজই পাঠায়ে দিব। নিজে যেতে পারব না। বাসে তুলে দিব। আগের মতো মাসে মাসে হাতখরচা পাইবা। কোনো অসুবিধা নাই। এখন এককাপ চা বানায়া আন। তোমার হাতের চা ভালো।
সুইটির শেষ পর্যন্ত যাওয়া হলো না। বাপের বাড়িতে তার বাবাও নেই মাও নেই। ভাইয়ের সংসারে ফিরে যাওয়া। ভাই গাঁজা খায়। গাঁজার সঙ্গে আরো কী কী যে খায়। সংসারে বিরাট অশান্তি। প্রতি রাতেই তাদের স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া। একবার তার ভাই চ্যালাকাঠ দিয়ে ভাবির মাথায় বাড়ি দিল। মাথা ফেটে রক্তারক্তি। হাসপাতালে নিতে হলো। পুলিশ কেইস হতে গিয়েও হয় নি, কারণ সুইটির ভাবি সবাইকে বলেছে–কলঘরে পা পিছলে মাথা ফাটছে। সেই সংসারে ফিরে যাওয়ার কোনো মানে হয়?
আবুল কাশেম স্ত্রীকে রান্নাবান্নার সব সরঞ্জাম কিনে দিয়েছে। এমনকি একটা প্রেসার কুকারও কিনেছে। একটা কাজের মেয়ে জোগাড় করেছে, নাম মিনু। মেয়েটার বয়স বারো-তেরো, কিন্তু বড়ই লক্ষ্মী। কাজে-কর্মেও পাকা। বাসা ঝাট দিয়ে মুছে ঝকঝকে করে রাখে।
স্বামীর সঙ্গে সুইটির যথেষ্ট ভাব হয়েছে। আবুল কাশেমের নিয়ে আসা মানিব্যাগ, ব্রিফকেইস, ব্যাগ এইসব প্রথম খুলে দেখতে সুইটির ভালো লাগে। সে বলেই দিয়েছে, আমারে আগে দেখাবেন।
ব্রিফকেস ভেঙে একবার একটা স্বর্ণের চেইন পাওয়া গেল। হাতে নিয়ে মনে হলো এক ভরির চেয়ে কম ওজন না। সুইটি সঙ্গে সঙ্গে তা গলায় পরে ফেলল। আবুল কাশেম কিছুই বলল না। তাকে দেখে মনে হলো সে খুশি।
আরেকবার চামড়ার কালো ব্যাগ খুলে পাওয়া গেল চারটা পাঁচশ টাকার। বান্ডেল। আনন্দে সুইটির যখন দম বন্ধ হয়ে আসছিল তখন দেখা গেল প্রতিটি বান্ডেলের প্রথম নোটটাই শুধু আসল। বাকি সব নোটের আকারে কাটা কাগজ।
সুইটি বলল, এর মানে কী?
আবুল কাশেম সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলল, জগতে কত কিসিমের কত ধান্ধার মানুষ যে আছে তুমি বুঝবা না। চাইরটা আসল নোট পাওয়া গেছে, এতেই আমি খুশি।
সুইটি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলল, সত্যি সত্যি যদি সবগুলি পাঁচশ টাকার নোট হইত!
আবুল কাশেম বলল, হবে ধৈর্য ধরতে হবে। আমাদের কাজ ছিপ দিয়ে মাছ ধরার মতো। বেশির ভাগ সময় পুঁটি, খইলসা, টেংরা উঠে। হঠাৎ হঠাৎ বিশাল বোয়াল। আমার ওস্তাদ হারুন মিয়া একবার দশ লাখ টাকা পেয়েছিলেন। তার দলে ছিল চাইরজন। প্রত্যেকে সমান ভাগ পাইছে। দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার। ওস্তাদ নিজের জন্যে এক টাকাও বেশি রাখেন নাই। মানুষ তো এমনে এমনে ওস্তাদ হয় না। ভিতরে জিনিস থাকতে হয়।
আপনে দুই লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা পাইছিলেন?
না। আমি তখন উনার দলে ছিলাম না। পরে যোগ দিয়েছি। বউ শোন, তুমি আমারে আপনে আপনে কর, এইটা ভালো লাগে না। এখন থেকে তুমি না বললে আমি জবাব দিব না। ছবি দেখবা?
দেখব।
সিনেপ্লেক্স নামে ভালো ছবিঘর বানায়েছে। দেশে উন্নতি হচ্ছে না কথাটা ভুল। যাও সাজগোজ কর।
মিনুরে সাথে নিয়া যাই।
নাও সাথে নাও। মিনু হলো তোমার ডিপার্টমেন্ট। তোমার ডিপার্টমেন্ট নিয়ে তুমি কী করবা সেইটা তোমার ব্যাপার। আমার ডিপার্টমেন্ট আমার।
সুইটি সাজতে বসল। এখন আর বাথরুমের ঝাপসা আয়নায় মুখ দেখতে হয়। নতুন ড্রেসিং টেবিল কেনা হয়েছে। আয়নাটা ভালো। একটা মানুষ যত সুন্দর আয়নায় তারচেয়ে সুন্দর লাগে। এটা হলো আয়নার গুণ।
শ্রাবণ মাসের কথা। সুইটির সন্তান হবে। পরীক্ষায় পাওয়া গেছে সন্তান মেয়ে। সুইটি তার নামের সঙ্গে মিলিয়ে মেয়ের নামও ঠিক করে রেখেছে–সুরভী।
সুইটি এখন বেশির ভাগ সময়ই মেয়ের জন্যে কাঁথা বানিয়ে কাটায়। প্রতিটি কাথায় নানান ডিজাইন এবং এক কোনায় লেখা–মা সুরভী।
রাত প্রায় একটা। আবুল কাশেম রাতে বের হলে এগারোটার মধ্যে ফেরে। খুব দেরি হলে বারোটা। আজ এত দেরি হচ্ছে কেন? সুইটি অস্থির বোধ করছে। মানুষটা মহাবিপদের কাজ করে। একটু উনিশ-বিশ হলে জীবন নিয়ে টানাটানি। পাবলিক হয়ে গেছে পিশাচের মতো। মলম পার্টির একজনকে ধরেছিস, খুব ভালো কথা। পুলিশের কাছে দে। তোরা পিটিয়ে মেরে ফেলার কে? কোর্ট কাছারি হবে, তারপর সিদ্ধান্ত হবে।
রাত দেড়টায় সুইটি নফল নামাজে বসল। তার হাত-পা কাপছে। একটু আগে একটা ছোট্ট দুর্ঘটনা ঘটেছে। কাঁথা সেলাইয়ের একটা সুঁচ আঙুলে ঢুকে রক্তারক্তি হয়েছে। এইসব লক্ষণ খুবই খারাপ। যে মানুষ বারোটার মধ্যে ঘরে ফিরে সে কেন আসছে না?
সুইটির কাছে একটা মোবাইল টেলিফোন আছে। অনেকবার সে টেলিফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে। যতবারই সে টেলিফোন করে ওপাশ থেকে একটা মেয়ে মিষ্টিগলায় বলে, সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। পরে আবার চেষ্টা করুন।
সুইটির ইচ্ছা করছে মেয়েটাকে থাপড়াতে। আবুল কাশেম তাকে sms করাও শিখিয়েছে। সুইটি দুটা sms করেছে। একটাতে লিখেছে–
Tumi Ashchona Keno?
(তুমি আসছ না কেন?)
আরেকটাতে লিখেছে—
Voi Lagche. Telephone Koro.
(ভয় লাগছে। টেলিফোন কর।)
sms-এর কোনো জবাব আসে নি।
সুইটি দশ রাকাত নফল নামাজ পড়ার জন্যে দাঁড়িয়েছিল। তিন রাকাত শেষ হতেই আবুল কাশেম ঘরে ঢুকে বলল, মিনু, গরম পানি দাও, গোসল করব।
সুইটি নামাজ ছেড়ে উঠে পড়ল। পরে পড়লেই হবে। মানুষটাকে ঠিকঠাকমতো গরম পানি দেয়া দরকার। মিনু পারবে না। গোসল শেষ করেই সে ভাত খেতে চাইবে। তরকারি গরম করতে হবে। আজ তার পছন্দের রান্না হয়েছে। কলিজা ভুনা।
ভাত খেতে খেতে আবুল কাশেম বলল, আজ ভালো বিপদে পড়েছিলাম। এক হারামজাদা মহাবিপদে ফেলেছিল। অল্পের জন্যে রক্ষা পেয়েছি।
সুইটি আতঙ্কিত গলায় বলল, ঘটনা কী?
আবুল কাশেম বলল, হারামজাদাটা ব্যাগ, মোবাইল, মানিব্যাগ ঘড়ি সবই দিয়েছিল। চোখে মলম দিতে যাচ্ছি তখন বলল, ভাই, আপনার পায়ে ধরি, এই কাজটা করবেন না। আমি একটা কলেজের অংকের শিক্ষক, তারপরেও আপনার পায়ে ধরছি।
বলে সে সত্যি সত্যি পায়ে ধরতে এসেছে। আমার মনে মায়া হলো। চোখে মলম না দিয়েই সিএনজি গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে তাকে নিচে ফেললাম। এমনই কপাল, তখন গাড়ির স্টার্ট হয়ে গেল বন্ধ। এইদিকে হারামজাদা কলেজের প্রফেসারটা শুরু করেছে চিৎকার–মলম পার্টি! মলম পার্টি! চারদিক থেকে লোক আসা শুরু করেছে।
সুইটি নিঃশ্বাস বন্ধ করে বলল, তুমি কী করলা?
আবুল কাশেম বলল, আমি মানিব্যাগ আর মোবাইলটা পকেটে নিয়ে গাড়ি থেকে নামলাম। হারামজাদা প্রফেসরটাকে ধরলাম। বললাম, ভাই, কী হয়েছে? জায়গাটা অন্ধকার। সে আমি কে বুঝতে পারল না। শুধু বলল, ঐ গাড়িতে মলম পার্টি।
এর মধ্যে লোক জমা হয়ে গেছে। আমার দুই অ্যাসিসটেন্ট আর CNG-র ড্রাইভার গাড়ি ফেলে দিয়েছে দৌড়। তাদের পিছনে পাবলিক।
ধরা পড়েছে?
জানি না। আমি বেশিক্ষণ থাকি নাই। চলে এসেছি।
সুইটি বলল, বিরাট ভুল করেছ। চউখে মলম দেয়া উচিত ছিল।
আবুল কাশেম বলল, অবশ্যই উচিত ছিল।
সুইটি বলল, এরকম ভুল আর করবা না।
আবুল কাশেম বলল, না, এই ভুল আর হবে না। বৌ, কলিজা ভুনা অসাধারণ হয়েছে।
সুইটি স্বামীর পিঠে হাত রাখল। ভালোবাসায় তার চোখ ভিজে উঠতে শুরু করেছে।
“আজ দুপুরে তোমার নিমন্ত্রণ” সমগ্র সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ